বিষ_করেছি_পান(১০)

0
611

#বিষ_করেছি_পান(১০)

(কপি করা নিষেধ)
— ঐ খাড়াও। এক পা আগাবানা। কই ছিলা পিরিতী? তোমারেনা বলছি প্রেম পিরিতি একসাথে থাকবো। তো উধাও হয়ছিলা কেন? কলেজ তো আর বন্ধ না।
রিতী দাঁড়ায় না। বরং জোরে জোরে পা চালায়। সোহাগ পিছু পিছু বড় বড় কদম ফেলে আসে।
— ঐ তোমারে কইছিনা দাড়াইতে। কথা কানে যায়না?
রিতী উত্তর দেয়না। সোহাগ গিয়ে সামনে দাঁড়ায়। রিতী মাথা তুলে তাকিয়ে ও দেখেনা। পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যায়। সোহাগ আবার পথ আটকায়।
— খুব তেজ তোমার দেখি পিরিতী! তা থাকবোই তো। তেজি না হয়লে কি আর আমার সাথে টক্কর চলতো?
— পথ ছাড়েন সোহাগ ভাই। ক্লাসে যেতে হবো।
— আমার মুখে কি কালি মাখি আসছি? তাকাও না কেন? এত্তো সুন্দর খোমা দেখে মেয়েরা টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে থাকে আর তুমি মাথাই উঠাও না।
— ঐ মেয়েদের রুচি খারাপ।
— পিরীতি মুখে মুখে তর্ক করবানা। চলো আমার সাথে।
— না। আমি কোথায় যাবোনা। হাত ছাড়েন। হাত ধরছেন কেনো?
— তোমারে নিয়া বাইকে ঘুরতে মন চায়তেছে।
— কেনো? আমাকে নিয়ে ঘুরতে মন চায় কেনো?
— আরে বোকা মেয়ে..কিচ্ছু বুঝেনা। এই কলেজে তোমার মতো সুন্দরী আমার চোখে একটারেও লাগেনা। আমার বাইকের পেছনের সিট তোমার জন্যই ধার্য।
— যাবোনা আমি। হাত ছাড়েন। সিনিয়র রা তাকায়ে আছে।
— থাকুক। চলো আমার সাথে। চলো।
— যাবোনা আমি।
— একটা কথা বলবানা। আসো।
সোহাগ জোর করেই রিতীকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যায়।

সুনশান একটা রাস্তার মাঝদিয়ে যাচ্ছে সোহাগ রিতী।রিতী সোহাগের কাঁধের শার্ট খামচে ধরে বসেছে। বাইকে উঠার অভিজ্ঞতা খুবই কম। হাতে গুনা দু তিন দিন মনে পড়ে বাইকে চাপা হয়েছে। যদিও রাস্তা একদম প্লেইন তবুও সোহাগ দু মিনিট পর পর ব্রেক কষছে। সোহাগ ইচ্ছা করেই কষছে। প্রতিবারই রিতী সোহাগের দিকে হেলে যাচ্ছে। তবুও গাঁয়ের সাথে গা যেনো না লাগে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখছে। তবুও গাঁয়ের সাথে গা লাগছে। রিতীর খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।চোখে পানি টলমল করছে।
— তিব্বত ডিটার্জেন্ট দিয়ে ঘসে ঘসে শার্ট ধুয়েছে আম্মা নিজে। তারপর ডলে ডলে আয়রন করেছে। সেই শার্ট সকালে গোসল দিয়ে পরে আসছি। এমন ভাব লইতাছো কেনো? আমার গায়ে কি দুর্গন্ধ আছে পিরিতী?
— তো কি চেপে বসবো? জামাই লাগেন আমার?
রিতীর গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে।
— আরে আরে কান্দ কেন? জামাই কেন হয়তে যামু? প্রেমিক লাগি তোমার? কি লাগিনা?
— জীবন থাকতে না।
— তাহলে আমার সাথে বাইকে ঘুরো কেন?
— আমি কোথায় ঘুরছি? আপনি জোর করে নিয়ে আসছেন। আমাকে নামিয়ে দেন। আমি বাড়ি যাবো।
— আগে বলবানা? তোমার জন্যে বাড়ি বানাইতেও তো সময় লাগবো।
— কথা ঘুরাবেন না। নামায়ে দেন আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
— বড্ড বেশী কথা বলবানা। ভাবছিলাম একটা রোমান্টিক ড্রাইভ দিমু তা না ফ্যাস ফ্যাস করে নাক টানার শব্দে মুডের উপর ঠাডা ফেলসো। চুপ করে শক্ত করে ধরো। তোমার গরম শরীরটার ছোঁয়া লাগাও।
— সোহাগ ভাই আমি আপনার সাথে যাবোনা। আমাকে নামিয়ে দেন।
— এত কথা বলতে পারিনা। মেজাজ কিন্তু খারাপ হয়তেছে এবার।
— নামিয়ে দিতে বলছি নামিয়ে দেন।
— ধুর শালি নাম তুই।
সোহাগ ধাক্কা দিয়ে রিতীকে বাইক থেকে ফেলে দেয়। পিচঢালা রাস্তার উপরে চলন্ত বাইক থেকে পড়তেই রিতী ‘ওমাগো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে। সোহাগ একটু সামনে গিয়ে বাইক থামায়। পেছনে তাকিয়ে রিতীকে শুয়ে ব্যথায় কাতরাতে দেখে হো হো করে হেসে উঠে। রিতী শব্দ করে কাঁদতে থাকে। সোহাগ হাসতে হাসতেই রিতীর সামনে এসে এক হাঁটুর উপর ভর করে বসে।
— কি সোনা পিরিতী? নামায়ে দেওয়ার জন্য কানতাছিলা এখন নামায়ে দিলাম তাও কানতাছো কাহিনী কি? কাছেও থাকতে চাওনা আবার দূরে গেলেও কান্না কাটি করো আমি কিন্তু নাদান পুরুষ।ওসব জাদু টোনা কিন্তু আমি করতে জানিনা।

দুহাত তুলে জিহবায় কামড় দিয়ে মুখটা ইনোসেন্ট করে বলে সোহাগ। রিতী চোখ বন্ধ করে রাগ সামলাচ্ছে। এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা করছে সোহাগের পশ্চাতদেশে কষে একটা লাথি দিতে। বেটা হারামজাদা! ইচ্ছা পূরণের উদ্দ্যেশে রিতী পা দুটো নাড়ায়।সাথে সাথে তার কোমর দেশে মরণ ব্যথা খামচি দিয়ে ধরে। রিতী আরো জোরে
‘ ওমাগো মরলাম গো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে। সোহাগ আরো জোরে হাসতে থাকে।হাসির রেশ একটু কমে এলে হাসতে হাসতেই রিতীকে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। রিতী হাত সরিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— একদম ছোঁবেন না আমাকে। আমি একাই উঠতে পারি। আল্লাহ যেনো আজকের পর থেকে আপনার মুখ আর আমাকে না দেখায়।
— আল্লাহ তোমার প্রিয় বান্দীর দোয়া কবুল করে নিও। আমিন।
বলেই সোহাগ আরো হাসতে থাকে। রিতী কষ্ট করে কোনমতে উঠে দাঁড়ায়। কোমরের পেছন সাইড পুরো অবশ হয়ে গেছে। হাড়ে ব্যথা লেগেছে। অন্য কোন সময় হলে রিতী চেগিয়ে পরে থাকতো। নড়তো না চড়তো না। কান্নাকাটি করে পুরো কলোনী এক করে নিতো। কিন্তু এখন সে নড়ছে। শরীরে জোড় না থাকলেও মনের জোরে সে এই বখাটে টার সামনে থেকে যেতে চাইছে। আশেপাশে লোকজন নেই। একা পেয়ে না জানি কখন কোন সুযোগ গ্ৰহন করে। এই চিন্তা মাথায় আগেই এসেছে। সোহাগের সাথে না আসলেই পারতো। কিন্তু ঐযে মেয়ে মানুষের ইজ্জতের মান সবার থেকে বেশী। কলেজে চেঁচামেচি করলে সবাই ব্যাপারটা জেনে যাবে। প্রশ্ন উঠবে এতো দিন কেনো রিতী সিনিয়রদের জানায়নি যে তাদের কলেজে এসে একটা বখাটে জুনিয়রকে এতো দিন থেকে ডিস্টার্ব করছে? সিনিয়রদের জানানো মানে স্যারদের কানে যাওয়া। স্যারদের কানে যাওয়া মানে বাবার কানে যাওয়া। বাবার কানে যাওয়া মানে রিতীর পড়াশোনার সপ্ন এখানেই মাটি চাপা দেওয়া। বাবা শিক্ষক, আধুনিক, প্রতিবাদী ঠিক আছে তবুও তিনি গ্ৰামের মানুষ। গ্ৰাম থেকে অনেক বছরের দুরত্ব থাকলেও গ্ৰাম্য মনোভাব এখনো কোথাও তার মাঝে বসবাস করে। সেটা রিতী বুঝতে পেরেছে বাবার সাথে থেকে ধীরে ধীরে। সোহাগ হাসি থামিয়ে রিতীর সামনে এসে দাঁড়ায়। ছুটির দিকে ঝুঁকে বলে,
— তোমার যে আমার অন্যকিছু দেখতে ইচ্ছে করে সেটা তো আগে বলবা। তোমার জন্যে জামা কাপড় নয় খুলেই দিলাম। সত্যিই তো এই একটা খুমা আর কতোই দেখবা?
আবার সেই দৃষ্টি,আবার সেই মনোভাব,আবার সেই অশ্লীল বাচ্য। ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠে রিতীর। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায়।‌ সোহাগ কে কিছুই বলেনা। অশ্লীল ব্যক্তির সাথে আর কোন কথা না।

রিতী হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে । সাথে সোহাগ নেই। সোহাগ হেল্প করতে চাইলেও রিতী সেই হেল্প নেয়নি। কারন হেল্প করার ইচ্ছেটা ছিলো কম গায়ে হাত দেওয়ার ইচ্ছেটা ছিলো বেশী। এক রিকশাওয়ালার রিকশায় সুয়ে হসপিটালে এসেছে রিতী। মিনিট দুয়েক আগে সে এক্সরে রুম থেকে বেরিয়েছে।‌ রিপোর্ট দিতে ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। রিতী রিপোর্ট নিয়েই বাড়ি ফিরবে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে পারে। তবে দোয়া করছে বিকেলের মধ্যেই যেনো রিপোর্ট হাতে পায়। আপাতত সুয়ে থাকা যাক।

রিপোর্ট বিকালেই হাতে এসেছে।‌ ডাক্তার জানিয়েছে হাড়ের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে যেভাবে পরেছে হাড় ভেঙে যাবার সম্ভাবনাই ছিলো বেশী। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ যাত্রাই বেঁচে গেছে।‌ তবে কয়েকদিন ব্যথা থাকবে। ঔষধ ও প্রেসক্রাইব করেছে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রিতীর শরীরটা আর যেনো চললো না।বেঞ্চিতে আধ শোয়া হয়ে বাড়িতে কল দিলো। যদি মা ফোন ধরে তাহলে বলবে ছুটিকে দিতে। ছুটি ফোন ধরলে বলবে
— আমি গ্ৰীন লাইফ হসপিটালের সামনে আছি। আমার কোমড় ভেঙেছে। ভাঙা কোমড় নিয়ে একা একা বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। তুই একটা ট্যাক্সি নিয়ে আয়। ট্যাক্সিতে শুয়ে বাড়ি যাবো। রিকশাতে ঠিকমতো শুতে পারিনা।
তের বার কল হবার পরেও যখন রিসিভ হলোনা তখন রিতী ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।লোকজনকে পাত্তা না দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। আকাশটাও কয়েক মিনিটের মধ্যে গুড় গুড় করে উঠলো। একটু পর কাঁদতে শুরু করবে। রিতী কাঁদতে কাঁদতেই আকাশের কান্নার অপেক্ষা করতে লাগলো। আকাশ এই মুহূর্তে তার বন্ধু। দুই বন্ধু আজ একসাথে কাঁদবে।
___________________

উত্তরে মেঘ করেছে। ছুটি ছেলেমেয়েদের সাথে ক্রিকেট খেলতে খেলতেই দেখলো মেঘ দ্রুত ধেয়ে আসছে। ঝিমা চিৎকার করলো,
— এইইইই ছক্কা।
ছুটির ধ্যান ছেড়ে গেলো। ঝিমা মলিদের সাথে সেও উল্লাসে মেতে উঠলো। বলিং এবার ছুটির হাতে। ব্যাটাং করবে রতন। গাধাটা ব্যাটিং করতেই জানেনা। অন্যান্য খেলায় পারদর্শী হলেও এই ব্যাটিং টা সে ঠিকমতো আজো করে উঠতে পারেনা। তাই ক্রিকেটে তাকে কেউ খেলতে নিতে চায়না। সে জোর করে খেলে। তার উপর জোর দেখাতে গেলে জ্ঞানীদের মতো ডায়লগ দেয় ,
— Always remember that, ‘ practice makes a man perfect ‘. যতই ব্যাটিং করিবে ততোই শিখিবে। এই অপরচুনিটি যে কেড়ে নিবে, বুড়ো বয়সে সে সন্তানের মুখ দেখিবে।
ছুটি দুর্দান্ত বলিং করছে। আর প্রত্যেকটা বল ফ্লপ করছে রতন। রতনের মুখ পাংশুটে দেখাচ্ছে। কপালে দুশ্চিন্তার ভাব। মুখে ফুটে উঠেছে অস্থিরতা। সবাই পরলে সে কেনো পারবেনা। এমন অবস্থা কেঁদে দিবে। মেঘে তখন আকাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। কিচেনের জানালা থেকে রুম্পা জোরে ডেকে বললো,
— ছুটি.. বৃষ্টি এলো। ছাদে কাপড় আছে। নিয়ে আয়।
ক্রিকেট খেলা স্থগিত হলো। শিপ্রু মৃদু হেসে বললো,
— বৃষ্টি হবে। রতন মন খারাপ করছিস? ফুটবল খেলি চল।
ছুটি বললো,
— আমি আসি।
— আরে বৃষ্টিতে ভিজবো তো। ফুটবল খেলবো। আসবিনা?
— কাপড় গুলো তুলে আসি।
ছুটি কাপড় তুলে ফিরে এলো। রুম্পা ঘর থেকেই চেঁচাতে লাগলো। ছুটি কানেই নিলো না। ছুটির লেজ ধরে তমাল ও শার্ট প্যান্ট খুলে হাফপ্যান্ট পরে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এলো। এতোক্ষনে ফুটবল খেলা জমে উঠেছে। মাঠের জমা পানিতে ফুটবলে কিক করতেই একেকজনের চোখে মুখে লাগছে। ল্যাং খেয়ে একের পর একজন চিৎপটাং হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের কাউ কাউ আওয়াজ মিশে যাচ্ছে বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দে।
রাস্তায় কাকভেজা হয়ে ছাতা মাথায় অফিস থেকে ফিরছে বাঁধন। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি। দশটা টু পাঁচটা রেগুলার ডিউটি। বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখে ক্লান্ত দেহ বৃষ্টিতে ঢুবাবে। পথিমধ্যে ই পানির ছিটায় যে পুরোটা ভিজে যাবে সেটা ভাবতে পারেনি। বাদরগুলো পানি মেরে মুখ টিপে হাসছে। বাঁধন চেঁচিয়ে উঠলো,
— আরে কি করলি এইটা?
— বলে কিক দিতেই লেগেছে। ইচ্ছে করে করিনি। সরি।
— বলে কিক দিতেই আমি পুরোটা ভিজে যাবো?
— এতোগুলো পা তো কি করবো?
বাঁধন দেখে সত্যিই এতোগুলো পা।সব একসাথে। ঝিমা বলে,
— ভাইয়া ছাতা দিয়ে কি কাজ? আসো ফুটবল খেলি।
রতন বলে,
— ঐ ঝিমা তুই ভাইয়ের ব্যাগ ছাতা এক দৌড়ে রেখে আয়।
বাঁধন সেখানেই শার্ট প্যান্ট সহ খুলে ঝিমার হাতে ধরিয়ে দেয়। হাটু অব্দি শর্ট প্যান্টটাই শুধু পরনে। ত্রিশ বছরের তাগড়া যুবকের প্রশস্ত কাঁধ বেয়ে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির পানি। বুকের উপর লোম গুলো ভিজে শুয়ে আছে চেপ্টে। ছুটির দৃষ্টি হলো বেহায়া, নির্লজ্জ। সবার সাথে ফুটবল নিয়ে দৌড়াচ্ছে বাঁধন। ছুটির আর খেলা হলোনা। সে যেখানে ছিলো সেখানেই থমকে গেলো। কাদা পানির মাঠে সটানে শুয়ে পড়লো। বৃষ্টির ঝাপে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। কালচে গোলাপি ঠোঁট দুটো বিরবির করে উঠলো,

‘বাঁধন ভাই, আপনি কী মোহনীয়!
বার বার শত নারী হতে বাধ্য অভিভুত। ‘

চলবে,

#লাবিবা_তানহা_এলিজা ~

ছবিয়াল: তরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here