#বিষ_করেছি_পান(১৭)
(কপি করা নিষেধ)
— এই ছুটি কি করলি তুই? আল্লাহ এটা তুই কি করলি? জলদি হসপিটালে চল। চল আমার সাথে। চোখ দুইটা নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ কত রক্ত! বন্ধ হয়না কেনো? মা বাবাকে আমি কি জবাব দিবো? কি বলবো আমি? আমার সামনে বসে চোখ দুইটা নষ্ট করছে। এই ছুটি? ছুটি? কথা বল?উঠ। ছুটি। ছুটি…….
রিতীর চিৎকারে ছুটি হালকা কেঁপে উঠে। চোখ দিয়ে তার ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত বেরোচ্ছে। রিতী বার বার উড়না দিয়ে মুছে দিচ্ছে। ক্ষনিকের মাঝে আবার জড়ো হচ্ছে। রিতী হাউমাউ করে কাঁদতে বসেছে। ছুটিকে ধাক্কাচ্ছে রেসপন্স পাবার জন্যে। ছুটি কোন রেসপন্স দিচ্ছে না। রিতী ছুটিকে ছেড়ে ফ্লোরে মাথা চেপে বসে পড়েছে। কেঁদে কেঁটে আবার গিয়ে রিতীকে ধরে বিলাপ করছে। অনেক ক্ষন রিতীর কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ছুটি শুকনো হাসে। ধীরে ধীরে বলে,
— কানদুটোও নষ্ট করে দেওয়া উচিত তাইনা? কিছু শুনবোনা। কিছু দেখবোনা। কিছু জ্বলবেও না।
— কি বলিশ এগুলা? পাগল হলি নাকি? আমার তোকে সুবিধার লাগছে না। আমি বীনা কাকিকে ডেকে আনি।
রিতী দৌড় লাগায়। দরজা অব্দি যেতেই ছুটি বলে উঠে,
— বাঁধন ভাই কেনো বিয়ে করবে? যদি বিয়েই করবে তাহলে আমাকে ছেড়েই কেনো বিয়ে করবে? আপু?এখন আমার কি হবে?
রিতীর পা আটকে গেছে। দেয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেছে। হা করে ছুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বাঁধন ভাই বিয়ে করবে! এখানে ছুটি কি করবে? ছুটির কি হবে মানে? বাঁধন ভাইয়ের বিয়ে তো ছুটি কেনো নিজের চোখ নষ্ট করবে?কেনো কান নষ্ট করতে চাইবে?তার মানে কি ছুটি বাঁধন ভাইকে…?এতো উচ্ছাস এতো আনন্দ সব লোক দেখানো? এর জন্য কি বিয়েতে গেলো না? কিশোরী মনে এতো বড় এক অস্বাভাবিক চাওয়া দিনের পর দিন বৃহদাকার ধারন করেছে একসাথে থেকে বড় বোন হয়েও জানতে পারলো না? রিতী শুকনো ঢুক গিলে। গলা শুকিয়ে গেছে। মাথাটা মনে হয় দুবার চক্কর দিয়ে ফেলেছে। থপ থপ পা ফেলে ছুটির সামনে আসে। চোখ বুজে থাকা ছুটিকে অবাক স্বরে ডাকে, — ছুটি?
ছুটি তৎক্ষণাৎ রিতীর বুকে হামলে পড়ে। ফুফাতে ফুফাতে চিৎকার করতে থাকে,– বাঁধন ভাই কেনো বিয়ে করবে? ছুটির কি হবে? ছুটির কথা কেনো ভাববে না? ছুটি মরে যাবে। এবার ছুটি মরে যাবে। চোখের সামনে বউ নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকবে। বেস্ট কাপল হবে ছুটি দেখবেনা। ছুটি শুনবে না। ছুটি কিছুতেই সহ্য করতে পারবেনা। আপু আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে আপু।
ছুটি ছুটতে চেষ্টা করে রিতী আরো জোরে চেপে ধরে। কাপা ঠোঁটে বলে,
— এ তুই কি করলি ছুটি? তুই তো অনেক দূর!বাঁধন ভাই যে আমার জন্যেও বেমানান!
দুই বোনে একসাথে চোখের জ্বল ফেলতে থাকে। ছুটির গা ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। উষ্ণতায় রিতীর দেহও গরম হয়ে আসছে। ছুটি হাউমাউ করে বলছে,
— আল্লাহ তুমি আমাকে তুলে নাও। আমি সহ্য করতে পারবোনা। বাঁধন ভাইকে অন্য কারো সাথে আমি সহ্য করতে পারবোনা। আর পারছিনা।
রিতী ছুটিকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ছুটির শরীর ব্যালেন্স করছেনা। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
— আবেগের বসে ভূল করিসনা। বাঁধন ভাই তোর জন্য না। চুপ কর প্লিজ। বাবা মার সম্মানের দিকে তাকিয়ে সহ্য করে যা।
— আবেগে এতো কষ্ট কেনো আপু? আবেগে তো কষ্ট থাকে না। আমার তো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আপু। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আপু প্লিজ আমাকে মেরে ফেল না… ।
বলতে বলতেই রিতী খেয়াল করে ছুটি কাঁপছে। হাত পায়ে খিঁচুনি উঠেছে। রিতী কি করবে ভেবে পায়না। দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতে নেয়। অনেক গুলো মিসকলড। পুরোপুরি এভোয়েড করে রিতী মায়ের ফোনে কল দেয়। একবার দুইবার তিনবারেও যখন কল না ধরে তখন ছুটির দিক তাকিয়ে রিতী কান্না কম বেশি চিল্লাতে থাকে। আবার বাইরে শোনা যাবে ভেবে মুখ চেপে ধরে। বীনা কাকিকে কিছুতেই এদিকে পা দেওয়ানো যাবেনা। সব শেষ হয়ে যাবে। রিতী পাগলের মতো মা বাবার ফোনে কল দিতে থাকে । সাতবারের মাথায় বীনা কল ধরে রিতী কিছু বলার আগেই ভগ্নস্বরে বলে,
— রিতীরে বাঁধন টা মনে হয় বাঁচবে নারে । ফেরার সময় ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে। মায়ের বুকটা মনে হয় খালি হলোরে। তোর কাকীকে কিছু জানাসনারে।
রিতীর দুনিয়া থেমে গেছে। একবার এটাও জিজ্ঞেস করতে পারলোনা মা বাবা তমাল তোমরা ঠিক আছো কিনা?ফোনটা হাত থেকে পায়ের উপর পড়ে গেছে। নিজেও শরীরটা ধরে রাখতে পারেনা। মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ে। এভাবে কত সময় গেছে জানেনা। চোখের সামনেই ছুটির খিঁচুনি ইতি টেনেছে। ছুটি জ্ঞান হারিয়েছে। এদিকে রিতী হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। যখন একটু একটু হুস আসে তখন বিরবিরিয়ে বলে, — তোর দোয়া মনে হয় কবুল হলোরে ছুটি। যা দেখতে চাসনি তা দেখতে হবেনা। কিন্তু যা দেখবি সহ্য করতে পারবিতো?
রিতীর মনে পড়ে ছুটির চোখের কথা। ছুটির দিকে তাকিয়েই ফোনটা হাতিয়ে নেয়। সোহাগের আরেকটা নতুন নাম্বার! আগের টা সন্ধ্যায় ব্রাকলিস্টে রেখেছে। আত্ত্বীয় ব্যতীত একমাত্র সোহাগ ই আছে। সাত পাঁচ না ভেবে রিতী ডায়াল করে। প্রথমবারেই রিসিভ হয়। প্রথমেই সোহাগের ব্যঙক্তি !
— কী পিরিতি! খুব তো ভাব দেখাও। রাত বাড়লেই কথা বলতে ইচ্ছে করে বুঝি?
— সোহাগ ভাই! বাড়িতে আসেন।
— বাড়িতেই তো যাইতেছি। বাইকের সাউন্ড পাওনা পিরীতি।
— আমার বাড়িতে আসেন।
— বাড়িতে কেউ নেই বুঝি?
— নাহ।
রীতীর নির্লিপ্ত গলা।
— এতো মেঘ না চাইতেই জল! ওকে ডার্লিং আম কামিং। সারারাত মাস্তি হবে!
সোহাগ যখন আসে তখন বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে আসে। মুখে দুষ্টু হাসি লেগে আছে। মনে মনে কি কি করবে সেসব ভাবতে থাকে। এতোদিনের আকাঙ্খিত বস্তু হাতে পেতে চলছে।কল্পনায় আকাশে ডানা মেলছে। রিতীর অশ্রু ভেজা চোখ দেখে ঠেস দিয়ে বলে,
— নিজের জ্বালা মেটানোর জন্য বাসায় ডাকবে আবার চোখের জ্বলেও ভাসবে। ওয়েট পিরীতি। তোমার যদি এই ধরনের কোন ইন্টেসি থাকে যে আমি তোমাকে যেনো আর না জ্বালাই সেজন্য বাসায় ডেকে পুলিশে ধরিয়ে দিবে তাহলে এটা তোমার বোকামী। তুমি হয়তো জানো আমি কার ছেলে? আমার আব্বা বাংলাদেশের সব এমপি মন্ত্রী দের সাথে উঠবস করে।
কি খারাপ কথা ! তবুও কত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বলছে। কথা খারাপ হোক বা ভালো। ব্যাক্তিত্বের সাথে নিজের নোংরা মনকে কত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে কত স্টেট ভাবে! সোহাগকে না দেখলে রিতী জানতেই পারতো না।একহাত পকেটে হাত গুঁজে আরেকহাতে জলন্ত সিগারেট নিয়ে মুখ থেকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলছে। ইস্ত্রি করা শার্টের বোতাম পর পর তিনটি খোলা রয়েছে। লোমশ বুকটা অর্ধেক ই শো করছে। রিতী চোখ বুজে সোহাগকে সহ্য করে নেয়। ‘আসুন’ বলে সিড়ি বেয়ে ছুটির কাছে যায়। সোহাগ দেখে ছুটি বিছানায় শুয়ে আছে। গায়ে মোটা কম্বল চেপে দিয়েছে। চোখের সাইডটা ফুলে রয়েছে।শুকনো রক্ত চটচট করে। সোহাগ ধপ ধপ পা ফেলে ছুটির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আতঙ্কিত হয়ে বলে,
— ছুটির কি হয়েছে?
— ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান সোহাগ ভাই। আমি একা পারলামনা।
সোহাগ ছুটির হাত ধরতেই ছেড়ে দেয়। অস্বাভাবিক গরম। এরকম টেম্পারেচার যে ধরাই যাচ্ছে না। একবার রিতীর দিকে তাকিয়েই ছুটিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
— আসো।
ভাগ্যক্রমে আজ সোহাগ তার বাইক ছেড়ে গাড়িটা নিয়ে এসেছে। ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা আঠারো। সোহাগ ছুটিকে নিয়ে ইমারজেন্সি তে ভর্তি করেছে। এটা ওটা দৌড়াদৌড়ি সে নিজেই করছে। রিতী ছুটির পাশে বসে আছে। ছুটিকে জর কমার ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। চোখ দুটো ওয়াশ করছে। সোহাগ ব্যস্ত গলায় বলে,
— ডক্তর? চোখের আঘাতটা কতটুকু হয়েছে?
— এতোক্ষন রক্ত পড়েছে বুঝে নিন কতোটা হয়েছে? ভাগ্য ভালো চোখ দুটো বেঁচে গেছে।বেশীরভাগ সময় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। ড্রপ লিখে দিচ্ছি টানা পনের দিন তিনবেলা দিবেন ঠিক হয়ে যাবে।
রিতী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সোহাগের দিকে তাকায়। সোহাগকে ছুটির বড় ভাই মনে হচ্ছে। ভাই যেমন বোনের কিছুতে অস্থির হয়ে উঠে সব এক করে ফেলে সোহাগ ঠিক তাই তাই করছে। এতো রাতে ডক্টর ডেকে এনে ছয়তলায় ছুটিছুটি করে সত্যিই হাঁপিয়ে গেছে। রিতীর ছুটির একটা কথা মনে পড়ে যায়। সেদিন ছুটি বলেছিলো রিতীকে।
“শোনো আপু যে ব্যক্তি আমাকে একদমি সহ্য করতে পারেনা তার কাছে আমি আমার বোন দিবোনা। আমার বোনকে তার কাছে দিবো যার কাছে আমার বোনের পর পরই আমার প্রায়রিটি থাকবে। ”
আচ্ছা সোহাগের কাছে কি রিতীর প্রায়রিটি আছে? নাকি তাকে শুধুমাত্র ফ্যান্টাসিই মনে করে? বেচারা কি করতে এসেছিল আর কি করছে! মনে মনে রিতী প্রমোদ গুনে।
(একটু ছোট হয়ে গেলো 😐)
চলবে,
লাবিবা_তানহা_এলিজা~
ছবিয়াল: তরু