#বিষ_করেছি_পান(৪৬)
(কপি করা নিষেধ)
শালিকের জোড়া বন্ধ খুপরিতে মৌনতা পালনে ব্যস্ত। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সোহাগ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে রিতীর পানে তাকিয়ে। হোটেল বয় একটু আগে সফট ড্রিংকস দিয়ে গেছে। গোলাপী পাইপে চুমুক দিতে ব্যস্ত রিতী। ধরনেই প্রকাশ পাচ্ছে ড্রিংকসটা সে ভালোই ইনজয় করছে। গ্লাসটা খালি হতেই টক করে স্টেচারে রাখে। আড়চোখে সোহাগকে পরখ করেই জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো। সোহাগের চোখে আলো পড়তেই চোখ দুটো কুঁচকে বন্ধ করে নেয়। দাঁড়িতে আঙুল চালিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে । রিতী এসে মাথায় হাত রাখে। সোহাগ চোখ মেলে তাকায় না। চোয়াল শক্ত হয়ে ফুলে উঠেছে। রিতী সরে দাঁড়ায়। মারবে নাকি? এতো রাগ! বুঝে উঠতে পারে না । রিতী সোহাগের কাঁধে হাত রাখে। ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দেয় সোহাগ। মুখে উচ্চারিত হয়, ‘ অসহ্য ‘ ।
— এতো রেগে আছেন কেনো মিস্টার?
— কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। আমার চলে যাবো।
— চলে যাবার জন্য ডেকেছি আমি? এতো রাগ দেখানোর মানে কি?
— তোমাকে দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বাইরে দেখা করা যেতো না? হোটেলে ডাকার মানে কি?
— শুনলাম আপনি নাকি উম্মাদপনা দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন? মদে ডুবে থাকেন। আমার ছোট্ট বোনটাকেও আটক করেছিলেন । নাকে কালসিটে পড়ে গেছে। ঘা শুকায়নি? বাঁধন ভাই মেরেছে বুঝি?
— ঐ হারামীর নামটাও শুনতে চায়না আমি।
— ছুটির সাথে এটা কেনো করলে?ছুটি কারো সাথে কথা বলছে না।
— আমি কিচ্ছু করিনি। ছুটি আমার একমাত্র শালী। আমার কাজ কর্মে সে আগে থেকেই অবগত। ঐ বাঁধনের বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করো ও ছুটির সাথে কি করেছে। শালার হাব ভাব কথা বার্তা একদম পছন্দ হয়নি আমার । আমার থেকেও খারাপ ওর মুখের ভাষা।
সোহাগ উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে গালা গালি করতে থাকে। রিতী ধমক দেয়। সোহাগ শোনে না । মাইর গুলো এখনো তাজা আছে।রক্ত তিড়িৎ বিডিৎ করে লাফাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যায়। দরজার কাছে যেতেই রিতী শার্ট টেনে ধরে। সোহাগ রাগান্বিত কন্ঠে বলে, ‘ ছাড়ো।’
— কোথায় যাচ্ছো? তোমার সাথে আমার কথা আছে।
— আমার কোন কথা নেই। ভুলটা আসলে আমার ই । তোমাকে চিনতে ভুল করে ফেলেছি আমি। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই তুমি ছলনাময়ী। বাবার বাড়ি শ্বশুরবাড়ি থেকে আমার থেকে এজন্য দূরে আছো তাইনা যাতে বাইরে রাত কাটাতে পারো।
— সোহাগ! মুখ সামলে কথা বলো। আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলছো। আমি নিশ্চয় তোমার অচেনা নয়?
— সস..সরি ।
রিতী ফুঁসছে রিতীমত। সোহাগের শার্ট টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
— বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
— এখানে আসার মানে কি?
— হলে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছি। ভেবে দেখলাম আমার হাজব্যান্ড এর তো অনেক টাকা। ফাইফ স্টার হোটেলে কিছুদিন থাকতেই পারি।
— হেয়ালির একটা সীমা আছে। ঢাকা শহরে এক একর জমির উপর আমার একটা বাড়ি আছে। লাক্সারিয়াস হোটেলের থেকে কোন অংশে কম নয়।
— এতো রেগে কথা বলছো কেনো বউয়ের সাথে?
— যে বউ খনিকের দেখা মিলে আবার ভেনিস হয়ে যায় লুকোচুরি খেলে এরকম অবাধ্য বউ আমার চাইনা।বউ ছাড়া দিব্যি আছি আমি।
— তা তো দেখতেই পাচ্ছি। থাকো। আমি ফ্রেস হয়ে আসি।
রিতী বোরখা টা এক টানে খুলে ফেলে। গোলাপী শরীরে গোলাপী প্লাজু সাথে লাল টিশার্টে রিতীকে হা করে সোহাগ দেখতে থাকে। একমাসে বউটাকি তার কোন পরিবর্তন হয়েছে? হ্যা হয়েছে। রিতী শুকিয়ে গেছে। অনেক টা চাপা লাগছে। ঠিক মতো কি খাওয়া দাওয়া করেনি সে? লাগেজ থেকে শাড়ি ব্লাউজ বের করে সোহাগের সামনে আসে।
— তোমার কি ফ্রেস হতে হবে? গোছল করেছো সকালে?
— আমি এখানে সংসার করতে আসিনি।
— তো? তোমার ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি ড্রেস দিয়ে যাবে।
— এতো শুকিয়ে গেছো কেনো ? খাওনা ঠিকমতো।
— ভাবছি এবার থেকে তোমার সাথে মদ খাবো। মদ খেলে নাকি মানুষ হেলদী হয়? তুমিতো সুন্দর হয়ে গেছো। ভূড়ি বেরিয়েছে দেখছি।
— মদ খেতে হবেনা। আমার সাথে থাকলে এমনিতেই তোমার ওয়েট বাড়বে। সুন্দরীও হয়ে যাবে।
— চলো ফ্রেস হবে।
— গোছল করেই বেরিয়েছি আমি ।
রিতী নিজের কোমল গালটা সোহাগের গালে ঘসে দেয়। ব্যথায় চোখ মুখ খিচে ধরে। স্বর নামিয়ে বলে,
— ইটস হার্ট মি না…?
সোহাগ যা বুঝার বুঝে নেয়। ফিচেল হেসে প্রশ্ন করে,
— তুমি সেভ করে দিবে? আমি পারবোনা। ব্যথা আছে।
রিতী সম্মতি দিতেই সোহাগ রিতীকে কোলে তুলে নেয়। রিতী জাপটে ধরতেই পেছনে হেলে যায়।
— ধরোনা ব্যথা আছে।
রিতী হি হি করে হেসে উঠে। হাসি থামিয়েই বলে,
— আরো করবে শালীকে কিডনাপ? হিরোর কাছে এভাবেই মাইর খেতে হবে। ছুটি বাঁধন ভাইকে ভালোবাসে।
— বাঁধনকেও তো দেখলাম ভালোই সিরিয়াস। তবে ছুটি রাণী এটা বোকামোই করেছে। পস্তাতে হবে।
— আমিও তো সেটাই করছি।
— তোমার কিসের পস্তানি? কি নেই আমার? সব ভুলে গেছি তো। যা চাও সব দিবো।
— সব?
— হ্যা। সব।
— রাগ কমেছে?
— একবার আদর করে নেই তারপর বোঝা যাবে।
সোহাগের শার্ট খুলতেই রিতী আকুলি বিকুলি করে দাগ গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। রিতী ছুতেই সোহাগ চোখ গরম করে তাকায়। মুচকি হেঁসে সোহাগকে শুইয়ে দিয়ে নিজে উবু হয়ে শোয়। নাকে নাক ঘষে বলে,
— খুব মিস করেছো আমায়?
— না। পাগলামিটা শুধু বেড়ে গেছিলো। কন্ট্রোল করতে পারিনি।
— শালির ক্রাসের কাছে মার খেয়ে কন্ট্রোল ফিরে এসেছে। হা হা হা।
সোহাগ রিতীকে চেপে ধরে। আগুন চক্ষু দিয়ে যেনো খেয়ে ফেলবে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
— তোমার কারণেই এসব হয়েছে। ইচ্ছে করছে শালাকে গিয়ে পিটিয়ে পাটক্ষেতে ফেলে আসি। বোকা শালিটার জন্য পারছিনা। আমার জন্য দরদ নেই । সব দরদ ঐ বাঁধনের জন্যে। রিতী হাসি থামিয়ে সোহাগের বুকের পাশে চুমু আঁকে। দাগের উপরে ঠোঁট বুলাতে বুলাতে বলে,
— সব ব্যথা দুর করে দিবো। তবুও এসব মারামারিতে আর যেও না।
— কতদিন থাকার প্ল্যান এখানে?
— ভার্সিটি ছুটি।হরতালের জন্য বাড়ি যাবোনা। আপাতত আছি তোমার বুকে।
— বাড়ি চলো জান। তুমি ছাড়া আমি ভীষণ একা। সঙ্গী সাথী সব তোমার এককথায় ছেড়ে এসেছি। আর তুমি কিনা আমাকেই ছেড়ে আছো। য়্যু নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ না?
— বাবা মানবে না।বাবা না চাইলে আমি তোমার থাকতে পারবোনা। আমার হাত পা বাঁধা।
— আমার তোমাকে ছাড়া চলবেনা। বাবার মেয়েটাকে আমার চাই চাই।
— চেয়ে নিয়ে আসো। আছে তোমার সেই ক্ষমতা? একটা বাবা কখনোই চাইবেনা তার মেয়েকে মাতাল একটা ছেলের হাতে তুলে দিতে। একটা উম্নাত! হুস জ্ঞানহীন কারো হাতে তুলে দিতে। তোমার মেয়েকে তুমি পারবে? সব বাবাই চায় তার মেয়ের জন্য বেস্ট কাউকে। তুমি কি বেস্ট? ভালোও তো না। ভালো হতে বললাম তাও তো হলে না। মদের ঘরে ঢুবে কাটাও। কি দেখে দিবে তোমার হাতে আমাকে? চারটা টাকা তো রোজগার ও করতে পারোনা। পরনির্ভরশীল একজন মানুষ। সে কিভাবে নিবে আমার দায়িত্ব? যদি কখনো আমাকে চাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারো প্লিজ আমার বাবার সামনে গিয়ে হাতটা চেও। আমি নিজে তোমাকে সাপোর্ট দিবো। সোহাগ তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো? সংসার করতে চাই তোমার সাথে। তোমার সন্তানের মা হতে চাই। তুমি যদি ভেবে থেকো বাবার থেকে আমাকে আলাদা রাখবে সেটা কখনোই সম্ভব না। আমি এখনো চুপ আছি কারণ আমি আমার বাবাকে হার্ট করতে পারবোনা। আমি কোনো বস্তু নয় যে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে। আমি মানুষ সোহাগ। নিজ যোগ্যতায় তোমাকে আমার দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক অনেক ভালোবাসতে হবে। তুমি কি তা পারবে?
— জানিনা।
— তাহলে আমাকে ভুলে যেতে হবে।
— কখনোই না। তোমার জন্য আমি সব করতে পারবো।
— তাহলে প্লিজ সব ছেড়ে একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠো। আমার গর্ব হয়ে উঠো। আমার স্বামী সব থেকে ভালো মানুষ এই কথাটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
— উঠবো।
_______________
হরতালের জন্য ছুটির পরিক্ষা পিছিয়েছে। বৈরী পরিবেশ। ঠান্ডা বাতাস জানান দিচ্ছে আশেপাশে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। ছুটির হাতে ধোঁয়া উঠা গরম গরম খিচুড়ি। ফু দিচ্ছে আর খাচ্ছে।প্লেটের খিচুড়িটা প্রায় ঠান্ডা হয়ে এসেছে। বাঁধনের অফিসে তাড়া আছে। ডাইনিং এ এসে দেখে টা টা গরম খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা করা হয়েছে। ঠান্ডা হতে হতেই একবার খাওয়া হয়ে যাবে। বাঁধন না খেয়েই বেরিয়ে যেতে নেয়। বীণা চেঁচিয়ে উঠে। ছুটি অবস্থা বেগতিক দেখে বাঁধনের সামনে নিজের প্লেটটা রাখে। বাঁধন ছুটিকে একবার দেখেই প্লেটে স্পুন গলিয়ে দেয়। মৃদু আওয়াজে বলে,
— অন্য প্লেট নিয়ে বসে পড়।
ছুটি ফু দিয়ে একটু ঠান্ডা করতে করতেই বাঁধন অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
সন্ধ্যায় ছুটি বাঁধনের আসার অপেক্ষা করছে। একটা বিষয় বুঝতে পারছেনা। ঝিমা বুঝিয়ে দিলেও বুঝতে পারেনা। স্যার যখন পরিয়েছে তখন ফাঁকিবাজি করার পরিণতিই এটা। আজ হঠাৎ করে দেখে সাজেশনে থ্রি স্টার দেওয়া। শিখতেই হবে। বারান্দা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বাঁধন বাড়ি ফিরছে। আধাঘণ্টা পরে বই নিয়ে হাজির। বাঁধন ছুটিকে দেখে মুচকি হাসে। ইশারায় বুঝায় ‘বস’। হাতের কাজ সেরে বাঁধন এসে বসে। কি প্রবলেম দেখে ছুটিকে বুঝিয়ে দেয়। ছুটি মাথা নিচু করে এক মনে পড়া বুঝে নিচ্ছে। হটাৎ ই মুখ তুলে বাঁধন ছুটির দিকে তাকায়। মাথায় মাঝখান বরাবর সিথি করে দুপাশে ঝুট্টি করা। কপালটা বাঁধনের কপাল ছুঁই ছুঁই। বাঁধন চোখ না তুললে এখনি লেগে যেতো। বাঁধন ফিসফিসিয়ে বলে,
— পিচ্চি!
চকিতেই ছুটি চোখ তুলে। শোনার পরেও প্রশ্ন করে বসে,
— হ্যা?
— কিছুনা। পর। এতো চুপচাপ হয়ে গেছিস কেনো?
— হ্যা?
— আমার থেকে দূরে দূরে থাকছিস।
— হ্যা?
— মিথ্যা বললাম?
ছুটি কাঁচুমাচু করে বলে,
— আপনি ভালো না বাঁধন ভাই। কেমন কেমন করেন।
বাঁধনের চোখ উপরে,
— কি করেছি আমি?
— আমার কামিজ তুলে পেট দেখেছেন। সেলোয়ার ও তুলেছেন। পা দেখেছেন। স্কার্ফ টেনেছেন। গলা বু__
— ছুটি! চুপ। টেনশনে ছিলাম। তুই বুঝবিনা। মাথা কাজ করছিলো না। তাছাড়া অন্ধকার ছিলো কিছুই দেখিনি।
— তাহলে ছুঁয়ে দিলেন কেনো? এবার আমার কাঁপা থামিয়ে দিন।
— ছুটি? ছুটি! তুই কি সত্যিই কাঁপছিস?
ছুটির উপর দৃষ্টি রেখেই বাঁধন হালকা ঢুক গিলে।
পেইজের এবং গল্পের রিচ একদমি কম। সাইলেন্ট এবং একটিভ রিডার্স দের বলছি। আপনাদের রিয়েক্ট এবং কমেন্ট ছাড়া রিচ বাড়ানো অসম্ভব। নিজেরাও পড়বেন অপরদের ও পড়তে বলবেন। গল্প যদি ভালো না লাগে তাও বলবেন লেখা বাদ দিয়ে দিবো। প্রথম দিকে ১k রিড়ারস পড়লেও এখন প্রায় চারশত জন ই হারিয়ে গেছে। শুধু শুধু কষ্ট করে লিখতে চাইনা যদি আপনারা হারিয়েই যান। আশা করি আমাকে এপ্রিশিয়েট করবেন সবাই। পার্ট ছোট হোক বড় হোক প্রতিদিন দেবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
চলবে,