কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৩৪

0
727

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৩৪
কলমে:ইয়াসমিন

কহিনুরের অচেতন শরীর বিছানায় লেপ্টে আছে। ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে গেছে। ফ্যাকাশে মুখটা দেখে মধ্যে হচ্ছে র/ক্ত শূন্যতার কারণে বহুদিন ধরে ভুগছে। পাথর দরজা হেলান দিয়ে পা ভাজ করে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। এতোদিন পরনারী ভেবে মনের বিরুদ্ধে নজর ঘুরিয়ে রেখেছিল কিন্তু আজ কোথাও কোনো বাঁধা নেই। নিষেধের প্রাচীর নেই। কি যে আনন্দ হচ্ছে পাথর নিজেকে স্থির করতে পারছে না। এতো সুন্দর পুতুলের মতো মেয়েটা শুধুমাত্র ওর নিজের। যাকে ইচ্ছে করলে কাছে নিতে পারে ছুয়ে দেখতে পারে। হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারবে। পাথরের ধ্যান ভাঙলো সাঈদের কাজকর্ম দেখে। ছেলেটা আবারও সেই তরল ওষুধের জোগাড় করে ফেলেছে। সেটাই ফোঁটা ফোঁটা কহিনুরের ঠোঁটে চামচ দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে পাথর হন্তদন্ত হয়ে ছেলেটার হাত থেকে পাত্রটা ছিনিয়ে নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলল,
> মানা করেছিলাম তবুও এসব ওকে খেতে দিচ্ছ ছেলে? ওর সঙ্গে কিছু হয়ে গেলে প্রমিজ তোমাকে আমি ছাড়বো না।
সাঈদ কেঁপে উঠলো। কাচুমাচু মুখ করে বলল,
> জনাব এটা খুবই উপকারী ওষুধ। মালকীন নিজে হুকুম দিয়েছিলেন আপনি আপত্তি করবেন না।
পাথর ভ্রু কুচকে কহিনুরের কপালে হাত রেখে বলল
> এরকম প্রথমবার নাকি আরও এমন হয়েছে?
> প্রথমবার না আরও এমন হয়েছে। ওষুধটা দিলে ঠিক হয়ে যাবে। অযথা চিন্তা করবেন না।

পাথর কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে কহিনুরের মুখে ওষুধটা দিয়ে চুপচাপ তাঁকিয়ে থাকলো। মেয়েটা কখন যে চোখ খুঁলে তাঁকাবে কে জানে। পাথরের খুব করে ইচ্ছা হলো অচেতন মেয়েটার কপালে নিজের উত্তপ্ত ওষ্ঠদ্বয় রাখতে কিন্তু সাঈদ ওর দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে। এই ছেলেটাকে ওর সহ্য হচ্ছে না। তৃতীয় পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাথর মুখ পূর্বের তুলনায় আরও খানিকটা গম্ভীর করে বলল,
> আমার দিকে এভাবে তাঁকিয়ে আছো কেনো? আমি ছেলে কোনো মেয়ে না বুঝতে পেরেছো? কক্ষের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করো। নূরের জ্ঞান ফিরলে জানাবো।
সাঈদ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
> মালকীনের হুকুম সঙ্গে থাকতে হবে।
পাথরের ভীষণ রাগ হলো। হাতের মুঠো শক্ত করে ওর দিকে তাঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।নিজেকে শান্ত করা জরুরী। ভেতরের প/শুটা বারবার জানান দিচ্ছে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিছুক্ষণ ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে পাথর ঘুমন্ত কহিনুরের কপালে চুমু দিয়ে দিলো। সাঈদের চোখ কপালে। তারপর লজ্জা পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে কক্ষের বাইরে বেরিয়ে গেলো। পাথর বাঁকা হেসে কহিনুরের কপালে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে দিলো। চুলগুলো কানের মধ্যে গুজে আবারও চুমু দিতে গিয়ে থমকে গেলো। কারণ ঘুমন্ত মেয়েটা হঠাৎ চোখ খুলে তাঁকিয়ে আছে।। দুজনের চোখাচখি হয়ে গেলো। পাথর লজ্জা পেলো কিন্তু কহিনুরের চোখেমুখে কৌতূহল। গতকাল এই ছেলেটা ওকে হোটেল কক্ষে ফেলে রেখে এসেছিল। একদিন রক্ষা করেছে বলে খোটা পযর্ন্ত দিয়েছে। তাহলে এখানে কি করছে? কহিনুর দ্রুত উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পাথর বাঁধা দিয়ে ওকে উঠতে সাহায্য করলো। কহিনুর বিস্মত হয়ে তাঁকিয়ে আছে। পাথর কহিনুরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> সরি আসলে তোমার পরিচয় আমি জানতাম না। তাছাড়া এটাও জানতাম না তুমি কথা বলতে পারোনা। খুব সরি প্লিজ রাগ করোনা।
কহিনুরের মুখের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হলো না। নিজের হাতটা টেনে নিয়ে আশেপাশে তাঁকালো। সাঈদ কোথায় কে জানে। ও সম্পূর্ণ পাথরকে ইগনোর করলো। পাথর টেবিল উপর থেকে খাতা আর কলম গিয়ে দিয়ে বলল,
> তোমার কি দরকার বলো আমি এখুনি নিয়ে আসবো।
কহিনুর খাতায় বড়বড় করে লিখে দিলো,” আমি নিজের বাড়িতে ফিরতে চাই। আপনার থেকে কিছু পাওয়ার আশা আমি রাখি না। গতকালের কথা ভূলিনি। পাষাণতুল্য পাথর হৃদয় আপনার। বড়ই নিষ্ঠুর আপনি।”
পাথর লেখাটা পড়ে হতাশ হলো এমনটাই আশা করেছিলো। কিন্তু সেসব পাত্তা দিলে চলবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা অতি জরুরি। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
> থাকতে হবে না চলে যাবে কিন্তু যাওয়ার আগে আমার সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাবে।
পাথর কথাটা বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। কহিনুরের হাতটা খানিক চেপে ধরে আবারও বলল,
> গতকাল রাতে সমুদ্রের তীরে তুমি ছিলে না? শুধুমাত্র গতকাল না আরও একদিন এসেছিলে বলো?
পাথর ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। উত্তেজনাতে গলা কাঁপছে কিন্তু কহিনুর নির্বাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাঁকিয়ে নিজের বাহু থেকে হাতটা সরিয়ে দিলো। কাগজের উপরে লিখে দিলো,” আমি বলতে ইচ্ছুক না”
পাথরের হঠাৎ রাগ হলো। মেয়েটা ওর থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইছে কিন্তু কেনো? ও নিজের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। কহিলের দুবাহু ধরে একদম নিজের কাছে টেনে নিলো। হঠাৎ আক্রমনে কহিনুর নিজের সামলাতে পারলো না। আছড়ে পড়লো ওর বুকে। তারপর দ্রুত উঠে বসতে চাইলো কিন্তু হলো না। পাথর ওকে শক্ত মুঠোয় বন্ধি করে নিয়েছে। তারপর কহিনুরের চোখের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
> যতদিন বলবে না ততদিন শশুর বাড়িতে থেকে বরের আদর খাবে আমার সমস্যা নেই। কতদিন থাকবে ভেবে দেখো! আমার অসুবিধা হবে না বরং ভালো লাগবে। বউকে অন্ততপক্ষে কাছে পাবো কি বলো?
কহিনুর চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে । পাথর সেসব পাত্তা দিলো না। মূদু হেসে বলল,
> শশুর মহাশয় মেয়েকে শর্ত দিয়ে বিয়ে তো দিলেন কিন্তু লাভটা কি হলো? সেই তো মেয়ে এখন জামাইয়ের হাতে বন্দি। কি হবে এখন?

কহিনুর ছটফট করতে শুরু করলো। এই লোকটার বলা কথাগুলো ওর মাথায় ভালো করে ঢুকে গেছে। মনে মনে ভাবলো বিয়ের জন্য চাচ্চু আর ছেলে পেলো না। হঠাৎ কহিনুরের মধ্যে পরিবর্তন হতে শুরু করলো। মনের মধ্যে কুটিল বুদ্ধি জাগ্রত হলো। হৃদয়ের লেনাদেনা নিশ্চয়ই হবে তবে। কহিনুর ফারুকী এবার নিজের নাম এই পতি দেবেন হৃদয়ে খুব যত্ন করে নিঠুর ভাবে খোদাই করে দিবে তারপর? কথাটা ভেবেই ওর হাসিটা আরও প্রশস্ত হলো। পাথরের অগোচরে সেই হাসি ও লুকিয়ে চেহারায় ফের ইনোসেন্ট ভাব ফুটিয়ে তুলল। শরীরের উত্তাপ কমে আসছে। পাথর ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
> কথার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করবে না। আমি বাইরে যাচ্ছি।
কথাটা বলে ও আর অপেক্ষা করলো না। বেরিয়ে আসলো কক্ষ থেকে। কহিনুর সেদিকে তাঁকিয়ে বিছানায় জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়লো। হঠাৎ হঠাৎ শক্তির ব্যবহারের জন্য শরীরের উপরে প্রভাব পড়ছে। অভ্যস্ত হতে না জানি কতটা সময় লাগে।
**************
সকাল সকাল খাবারের টেবিলে বসে আছে মীরা। জামসেদ ওয়াশরুমে আছে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। কাজের মেয়েটা ছুটিতে আছে বিধায় জামসেদ আজ দুদিন মীরার সঙ্গে থাকছে। সারাদিন গল্প আড্ডা আর ভালোবাসাময় জীবন অতিবাহিত করেছে। এর জন্য অবশ্যই দাদুকে ওর মিথ্যা বলতে হয়েছে। তবুও আফসোস হচ্ছে না। মীরা নিজের হাতে সকালের নাস্তা তৈরী করেছে যদিও জামসেদ ওকে মানা করেছিল । তবু প্রিয় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আলাদা রকমের ভালোলাগা কাজ করে। জামসেদ শার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে টেবিলে গিয়ে বসে পড়ল। সকালে খাওয়ার অভ্যাস নেই ওর তবুও মীরাকে খুশি করতে আসতে হলো। এক টুকরো কাবাব মুখে তুলে মৃদু হেসে বলল,
> ঠিক কতদিন পরে তোমার রান্না খেলাম বলোতো? আগে এটা সেটা রেসিপি তৈরী করে আমার পিচু পিচু ঘুরতে মনে আছে? উপর থেকে বিরক্ত হলেও মনে মনে কিন্তু খুব খুশী হতাম। মম ড্যাড প্রচুর ঐশ্বর্য অর্থ সম্পদের মধ্যে আমাকে মানুষ করেছে কিন্তু জানতাম সেটা সম্পূর্ণ ফেক। নিজের বাবা মা যেখানে আমার থেকে বাঁচতে এতিমখানায় রেখে আসতে পারে সেখানে আঙ্কেল আন্টি কি করবে বলো? পরের ছেলেকে এতোটা আদর যত্ন করে মানুষ করেছে এটাই অনেক। ভালোবাসাহীন আমি হঠাৎ ভালোবাসা পেয়ে কতটা আনন্দ পেয়েছিলাম সে শুধুমাত্র আমি জানি। কিন্তু ভাগ্য আমার সঙ্গে প্রতারণা করলো। তোমাকে পেয়েও হারিয়েছি। আমার মন্দ ভাগ্যের জন্য তুমি কষ্ট পেলে। ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ নেই তবুও ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
জামসেদ একদমে কথাগুলো বলে থামলো। মীরার দিকে তাঁকালেই ওর আগেকার দিনের কথা মনে পড়ে যায় । কষ্ট লাগে। নিজের উপরে রাগ হয়। মীরা ওর কথা শুনে মলিন হেসে বলল,
> যা হয়ে গেছে সেতো বদলানো যাবেনা তবে কেনো সেসব ভেবে আমরা কষ্ট পাচ্ছি? আসুন না নতুন করে শুরু করি। কহিনুরের খোঁজ জানেন? মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে। জার্মানির কোথায় আছে ওরা?
জাসদের জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
> খোঁজ পেয়েছি জুবায়ের কফি হাউজ খুলেছে। যাবে ওদের কাছে? তোমাকে ওদের সঙ্গে রাখতে পারলে একটু স্বস্তি পেতাম। মাঝেমাঝে আমি গিয়ে দেখা করে আসবো। জুবায়েরের স্ত্রী অধরা চমৎকার একজন মেয়ে। ভীষণ সাহসী। কহিনুর যেমন ওর মা কিন্তু ওর থেকে কোনো অংশে কম না। সুলতান পরিবারের রহস্য প্রথম ওই মেয়েটার নজরে আসে। অনেক ভয় দেখিয়েও দমন করতে পারিনি।
মিরী জামসেদের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে বলল,
> নিশ্চয়ই যাবো। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামি। আচ্ছা কহিনুরের বিয়ের কথা বলেছিলেন পরে কি হলো?
জামসেদ কুটিল হাসলো। খাবার মুখে নিয়ে পা নাচিয়ে বলল,
> কহিনুর আপাতত পাথরের কাছেই আছে। গুপ্তচর খবর পাঠিয়েছে। তাছাড়া যা যা দেখছো সব কিছু কিন্তু এমনি এমনি ঘটেনি। অর্ধমানবের ধ্বংস করতে হলে ওদের কাছাকাছি থাকাটা জরুরী। কহিনুরের বিয়ে হঠাৎ জার্মানি আসা সব কিছু আমার ইশারায় হয়েছে। পাপের ধ্বংস করতে আমি জটিল পরিকল্পনার বিজ বপন করেছি। সময় লাগবে কিন্তু সফল হবেই। দাদুর উপরে আমি টেক্কা দিয়েছি। কেউ ভাবতেও পারবেনা কি থেকে কি হয়ে গেলো। বোঝার আগেই সব খতম।

মীরা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। জামসেদ ওকে থামিয়ে দিলো। ফোন এসেছে কথা বলতে বলতে ও বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে মীরাকে রেডি হতে বলল। মীরাকে ও আর একা রাখবে না। মেয়েটা ভীরু। তাছাড়া ভাইয়ের সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে। সেখানে মীরা ভালো থাকবে।
************
পৃথিবী ভালো খারাপ উভয়ের আবাসস্থল। এখানে যেমন ভালো মানুষ আছে তেমনি খারাপ মানুষ আছে। খারাপের মধ্যে ভালো থাকে আবার ভালোর মধ্যে খারাপ থাকে। একজনের দোষে সবাইকে খারাপ ভাবাটা যেমন অনুচিত তেমনই সবাইকে ভালো ভেবে বিশ্বাস করাটাও বোকামি। এতদিনের উত্তাল সমুদ্র হঠাৎ আজ থমকে গেছে। আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি নামবে ধরণী জুড়ে। ঘনঘন মেঘের গর্জন আর বিদ্রুৎ চমকানোর জন্য পাথরের মাথাটা কেমন ভারি হয়ে উঠলো। কহিনুরের পরিচয় পাওয়ার পর থেকে অদ্ভুত আনন্দ দোলা দিচ্ছে হৃদয়ে। মেয়েটা এখনো অবুঝ নয়তো কি আর স্বামীকে উপেক্ষা করে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও সমুদ্রের তীরে হাটতে শুরু করলো। আকাশে আজ অর্ধেক চাঁদ উঠেছে মাঝেমাঝে মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছিল সেটা ক্ষণিক সময় আগে তার চিহ্ন পযর্ন্ত নেই। তীরে ঘেঁষে ডলফিন লাফালাফি করছে। এর মধ্যেই ফোটা ফোটা বৃষ্টি শুরু হলে। পাথর দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে হঠাৎ থমকে গেলো। দূরে একজন নারী অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। পাথর যতই এগিয়ে গেলো ততই সবটা পরিস্কার হলো। কাছাকাছি আসতেছি ও এক রাশ বিস্ময় নিয়ে চমকে গেলো। কহিনুর দাঁড়িয়ে আছে। পাথর আনমনেই বিড়বিড় করে বলল,
> কহিনুর তুমি এখানে কি করছো?
নির্জনতা ছেয়ে আছে চারপাশ। রাজধানী থেকে সমুদ্র অনেক দূরে। এই মেয়ে এতোটা রাস্তা কিভাবে আসলো ভাবতে পারছে না। তাই হুটকরে কহিনুরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> কার সঙ্গে এসেছো? বেয়াদব মেয়ে একা একা এতোটা রাস্তা চলে এসেছো? থা/প্পড় দিব একটা। ভালোবাসি আমি তোমাকে। তুমি আমার স্ত্রী বুঝেছো? এখুনি চলো।
পাথর হাত ধরে টানতে থাকলো কিন্তু চুল পরিমাণ নড়াতে পারলো না।পাথরের রাগ হলো হুঙ্কার দিয়ে বলল,
> পাথরের স্ত্রী হয়ে এতোটা বেপরোয়া ভাব তোমার মানাচ্ছে না। ভদ্র হয়ে থাকো হৃদয়ের যত্ন নিয়ে তুলে রাখবো।চলো এখুনি।
পাথর উত্তর পেলো না। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুজন ভিজে একাকার অবস্থা। কহিনুরের খোলা চুলগুলো মুখের উপর লেপ্টে আছে। কালো গাউনে মেয়েটাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে। পাথর থমকে গেলো। অনমনে নিজের হাতটা কহিনুরের মুখে রেখে ওর দিকে এগিয়ে আসলো। ওর নিশ্বাস পড়ছে কহিনুরের মুখে। দুজনের মধ্যে কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান। পাথর একপা তুলে কহিনুরকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়ার আগেই বাঁধা পেয়ে থেমে গেলো। কহিনুর ওর বুকে হাত রেখে ওকে পিছিয়ে দিলো। একে একে মুখ থেকে পাথরের রাখা হাতটাও সরিয়ে দিলো। পাথর ঘোরের মধ্যে ছিল হঠাৎ ঘোর কেটে যাওয়ার দরুন ওর রাগ হলো। চাপা কণ্ঠে বলল,
> এভাবে সরিয়ে দিয়ে আমাকে অপমান করার সাহস কোথায় পেলে? ভূলে যাবে না আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কেমন।আমি ইচ্ছে করলেই তোমাকে ছুয়ে দেখতে পারি।
পাথর রাগে হিসহিস করছে। ও যেনো অধৈর্য হয়ে উঠেছে। ভেতর থেকে কিছু একটা ওকে নিজের বসে নিতে চাচ্ছে। পাথর দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে কারণ আর একটু রাগলেই ওর পশু সত্তা বেরিয়ে আসবে। পাথর আবারও কহিনুরের হাতটা ধরতে অগ্রসর হতেই রিনরিনে কণ্ঠে উচ্চারিত হলো,
> আপনার দেখি ধৈর্য একদম নেই। আর কথায় কথায় চমকালে ভড়কালে হার্ট দুর্বল হয়ে পড়বে। সুস্থ থাকতে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন।

পাথরের মনে হলো পৃথিবী দুলে উঠলো। এতোদিন শুনেছিলো কহিনুর বোবা বধির কিন্তু এতো কথা বলতে জানে। কিভাবে কি? পাথর উত্তেজিত হয়ে বলল,
> তুমি কথা বলতে পারো? তবে মিথ্যা কেনো বলে সবাই? আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। আমাকে ঠকানোর চিন্তা করোনা।

পাথরের কথায় কহিনুর মৃদু হাসলো। চোখের পাতা নাড়িয়ে বলল,
> রূপের ঝলকে ঝলসে গেছেন। বোবা বধির বলে যেখানে আপনি আমাকে দেখার অভিপ্রায় বন্ধ করেছিলেন। তবে এখন কেনো?
পাথর সামান্য এগিয়ে এসে বলল,
> সত্যিই ভালোবাসি তোমাকে। তুমি আমার হৃদয়ের সঙ্গে মিলে গেছো।
কহিনুর হাসলো। তীক্ষ্ম সেই হাসি। তারপর পাথরকে চমকে দিয়ে উচ্চারণ করলো,

>হৃদয়ের লেনাদেনা অবশ্যই হবে, নিবিড়ভাবে মিশে যাবো আপনার ফেলা প্রতিটা নিশ্বাসের সঙ্গে।কিন্তু ওই যে, কহিনুর ফারুকী হৃদপিণ্ড নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। আজ এই মূহুর্তে নিজের পতি দেবের হৃদপিণ্ডে অতিসুক্ষ আর কারুকার্যমণ্ডিতভাবে আমার নামটা লিখে দিতে চাই। দেখি আপনার হৃদয়ের ধারণ ক্ষমতা কেমন । আমি নিষ্ঠুর জলন্ত তল্লা, নিজের সঙ্গে সবাইকে জ্বলালিয়ে নিভে যেতেই আমার জন্ম।

পাথর নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়েটা যে সাধারণ না এটা ওর অজানা নেই। কি করতে চাইছে বোঝার জন্য উত্তর দিলো,
> লিখে দাও যেখানে ইচ্ছে সেখানে তোমার নাম। পাথর প্রস্তুত।
কহিনুর দ্বিতীয়ত কোনো শব্দ উচ্চারণ করলো না। নিজের হাতটা আলগোছে পাথরের বুকের উপরে রাখলো। ধুকপুক করছে হৃদপিণ্ড। কহিনুর আঙুল উঠিয়ে সত্যিই সত্যিই লিখতে শুরু করলো। প্রচণ্ড যন্ত্রণার পাথর কুকড়ে গেলো তবে টু শব্দ পযর্ন্ত করলো না। ঠোঁটে চেপে যন্ত্রণা সহ্য করলো। অচেতন হওয়ার আগে কহিনুরের মুখে হাত রেখে উচ্চারণ করলো “এতোটা নিষ্ঠুরতা তোমাই মানাই না। সৌন্দর্যের পেছনে সত্যিই কাটা থাকে। বেঁচে থাকলে দেখা হবে নিশ্চয়ই। সেদিন তুমি আমার হবে।
কথাটা বলেই পাথর ধুপ করে বালুচরে পড়ে গেলো। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে শরীর হিম হয়ে আসছে। কহিনুর এক দৃষ্টিতে নির্জীব পাথরের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ করেই হৃদয়ের কোণে সুক্ষ ব্যাথার উদয় হলো। কহিনুর পাত্তা দিলো না। কঠোরতা ওর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এইটুকুতে থমকে গেলে সামনের দিনগুলো কঠিন হয়ে উঠবে।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। বোনাস পর্ব ইনশাআল্লাহ রাতে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here