বিষ_করেছি_পান(১৮)

0
614

#বিষ_করেছি_পান(১৮)

(কপি করা নিষেধ)
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে বাঁধন। পুরো বডি ব্যান্ডেজ করা। মুখখানি বেঁচে গেছে।কুমিল্লা হসপিটাল থেকে ঢাকায় রেফার্ড করেছে। বর্তমানে এ্যাপোলো হসপিটালে আছে। শরীর থেকে তাজা রক্ত প্রায় সব বেরিয়ে গেছে। তাকে বাঁচাতে ব্যাগে ব্যাগে রক্ত লাগছে। এ পজিটিভ রক্ত পাওয়া বড় দুষ্কর। তার মধ্যে আবার এতো! বাঁধনের নানুবাড়ির পরিবার ছোটাছুটি করে বাঁধনের দেখাশোনা করছে। সারা বাংলা দেশ রক্তের খোজ লাগাচ্ছে। যেখানেই পাচ্ছে মোটা অংকের টাকা খরচ করছে। বীনা ঝিমা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। বাঁধনকে গতকাল দেখে বীনা তিনবার জ্ঞান হারিয়েছে। ঝিমার মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। রুম্পার হাতের ছাল উঠে গেছে। তমাল কে বাঁচাতে গিয়েই সাদা মাংস বের করেছে। ছানোয়ার সুস্থ আছে। মুখে কাঁচ লেগে হালকা কেটে গেছে। সেই কাটাই এখন সবথেকে বেশি প্যারা দিচ্ছে। নিজেরা অসুস্থ থাকায় বাসায় ফেরেনি।‌ রিতী ছুটির খবর ও নেওয়া হয়নি। ছুটি আছে সিটি হসপিটালে। আজ সকালে তার জ্বর সেরেছে। বিশ মিনিট \ত্রিশ মিনিট একটানা তাকিয়ে থাকতে পারে। রিতী ছুটির খেয়াল রাখছে।বাবা মা বাড়িতে না ফেরায় বেঁচে গেছে। নয়তো তার জবাব দেওয়ার কোন পথ ছিলো না। তার পরিক্ষাটা হসপিটাল থেকেই দিয়েছে। কাল ও পরিক্ষা আছে। বিকালে ছুটিকে রিলিজ দিবে। সেই ভরসাতেই আছে। বাসায় গিয়ে রাতটা পড়েই কাটাবে। আপাতত সে ছুটির পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। বিকালে যখন ছুটিকে রিলিজ করে তখন রিসিভসনে বিলের ব্যাপারটা মিট করতে যায়। রিসিপসনিষ্ট কে জানালেই রিপ্লাই আসে বিল পে করা হয়ে গেছে। রিতী কি বলবে মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। সে রাতের পর আর সোহাগ আসেনি। তাহলে বিল কে দিলো? সোহাগ ছাড়া কারো দেবার সুযোগ নেই। কেনো দিলো? টাকা আছে বলেই দিতে হবে? ছুটির জন্য এতো টান? নাকি অন্যকিছু?

ছুটি বাসায় গিয়ে বাবা মার কথা জানতে চায়। তখন রিতীর টনক নড়ে। ফোন লাগায় বাবার কাছে। ছানোয়ার ফোন তুলে মেয়েকে ভালোভাবে বুঝায় যে তারা সুস্থ আছে। টেনশন না করতে। কাল ই বাসায় যাবে। তমাল ওদের সাথেই আছে। রিতী আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
— বাঁধন ভাই কেমন আছে?
— জীবন আছে।
— ওহ।

ছোট্ট করে ওহ শুনেই ছুটি তাকিয়ে থাকে। রিতী হসপিটালের নাম,রুম নম্বর জেনে নেয়। আগামীকাল পরিক্ষা শেষে ছুটিকে নিয়ে যাবে জানায়। ফোন রাখতেই দেখে ছুটি হা করে তাকিয়ে আছে। বরের গাড়ির এক্সিডেন্টের ব্যাপারে ছুটি কিছুই জানেনা। ছুটি তাকিয়ে আছে তো আছেই। জিজ্ঞেস ও করেনা। রিতীই নিজে থেকে বলে এক্সিডেন্টের কথা।মা বাবার কথা। বাঁধনের পরিস্থিতির কথা। সব কিছু শুনে ছুটির কোন হেলদোল হয়না। চুপ চাপ সোফায় গা এলিয়ে দেয়। রিতীর ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগলো। কাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে অকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে যেমনটা হয়। রিতীর মতে ছুটি এ খবরটা শোনা মাত্রই কেঁদে কেটে হসপিটালে যাওয়ার আবদার করে বসা। কিন্তু না ভাবটা এমন বাঁধনকে সে চিনে না । কোনদিন দেখাই হয়নি। পুরোপুরি অপরিচিত। আগ্ৰহ টা দেখা যায় পরদিন। রিতীর পরিক্ষা শেষ। বাসায় এসেই দেখে ছুটি রেডি হয়ে বসে আছে। রিতীকে বলে,
— এতো লেট করলে কেনো? পরিক্ষাতো অনেক আগেই শেষ। হসপিটালে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি চলো।

রিতী ছুটির দিকে তাকিয়ে থাকে।পরিক্ষা শেষে রিকশা পেতে দেড়ি হয়ে গেছে। কিছু একটা ভেবে বলে,
— বাবা মা তমাল বিকালে চলে আসবে। আমাদের যেতে হবেনা।

— বাঁধন ভাই ও আসবে?

— বাঁধন ভাই আসুক বা না আসুক তাতে কি আসে যায়? বাঁধন ভাইকে দেখার জন্য আমাদের যেতে হবেনা। এখন বাঁধন ভাইয়ের অনেক আত্ত্বীয় স্বজন হয়েছে, নতুন শ্বশুরবাড়িও হয়েছে দেখাশোনা করার জন্য। আর বাবা মাও তো ছিলো এই দুদিন। ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে নে।

— সব আত্ত্বীয় স্বজন আর আমি এক না।

রিতী গিয়ে ছুটির হাত ধরে। নিচু গলায় বলে,
— দেখ ছুটি। তোর পাগলামি বাড়ুক আমি আর চাইনা। আমার জানামতে তুই ছোট হলেও ভালোই ম্যাচিউর। সহজে ভেঙে পড়ার মানুষ তুই নস। কিন্তু তোর হটাৎ করা পাগলামি আমাকে অনেক কিছু বলতে চাইছে। অনেক দিকেই ইঙ্গিত করছে। বাঁধন ভাই আমাদের স্নেহ করে। সেই স্নেহ কে যদি তুই অন্য কোন দিকে টেনে নিস অথবা সত্যিই যদি বাঁধন ভাই তোর সাথে প্রণয়ঘটিত কোন আচরণ করে থাকে তাহলে বলবো সেদিকে আর পা মাড়াস না। সে অন্যের স্বামী। অন্যের সম্পত্তি।
— এরকম কিছুই না আপু।
— তাহলে কিরকম কিছু?
— আমার কাছে ব্যাখ্যা নেই।

রিতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছুটিকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। ছুটি রিতীর হাত ধরে।
— আম সরি আপু।
— এখন সরি বলছিস কেনো?বুঝতে পারছিস কি কান্ডটা ঘটাতে গিয়েছিলি? এতোটা পথ নিজে নিজে কিভাবে হাটলি? একবার কি আমার সাথেও শেয়ার করা যেতো না?
— সরি আপু। আমি অনেক স্ট্রং। একদম ভেঙে পড়বোনা। সব কিছু স্বাভাবিক হতে দাও।
রিতী মাথা নাড়ে।
— হুম। মনে থাকে যেনো। আবেগ থাকবেই এটা স্বাভাবিক। তবে আবেগ কন্ট্রোলের ক্ষমতাও থাকতে হবে। চল। হসপিটালে যাওয়া যাক।

হসপিটালের করিডোরে রিতীকে রেখেই আগে আগে হেঁটে চলছে ছুটি। রিতীর ডাক অগ্ৰাহ্য করে। কানদিয়ে যেনো কিছুই ঢুকছেনা। অস্থির হয়ে ছুটছে। রিতী দৌড়ে এসে হাত টেনে ধরে। চোখ রাঙিয়ে বললো,
— আস্তে হাট। উস্টা খাবি পড়ে। এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই।

ছুটি নিভলো। রিতীর সাথেই কেবিনের সামনে গিয়ে পৌছলো। ছানোয়ার তমালকে কোলে নিয়ে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রিতী ছুটি দুজনেই বাবা কে দেখে খ্যাক খ্যাক করে কেঁদে ফেলে। ছানোয়ার দুই মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। তার চোখ জোড়াও ছল ছল করছে। আজ তার কিছু হলে মেয়ে দুটোর কি হতো! ছোট ছোট মেয়ে তার! একেবারে একা হয়ে যেতো। কেবিনে রুম্পার কাছে নিয়ে যেতেই দু বোনে মাকে জাপটে ধরে। রিতী রুম্পার ব্যান্ডেজ হাতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। রুম্পা বেগম দুই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলে।‌ছুটি মাকে ছেড়ে ধীরে ধীরে ঝিমার কাছে গিয়ে বসে। ঝিমার একপায়ের হাড় ভেঙে গেছে। প্লাস্টার করে দড়ি দিয়ে উপর করে টাঙিয়ে রেখেছে। ঝিমা ছলছল চোখে ছুটির দিকে তাকিয়ে আছে। ছুটি ঝিমার হাত শক্ত করে ধরে। ঝিমা চোখের পানি ছেড়ে বলে,
— তুই বেঁচে গেছিস। যদি আমার সাথে যেতি তাহলে তোর ও এই অবস্থা হতো। আল্লাহ তোকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
— বাঁধন ভাই কে বাঁচিয়ে দিলো না।
ঝিমা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না থামিয়ে বলে,
— ভালো চিকিৎসা করলে হয়তো ভাইয়াকে আমরা ফিরে পাবো। কিন্তু ভাবীকে ফিরে পাবো কিনা জানিনা।

কথাটা শুনে চমকে উঠে ছুটি। অস্থির হয়ে বলে,
— কেনো? ভাবীর কি হলো?
— ভাবী জীবনের সাথে পাঙ্গা লড়ছে। গতকাল লেবু মামা এসে বলে গেলো ভাবী নাকি কোমাতে চলে গেছে। তার কোন রেসপন্স নেই।
— কোথায় সে?
— এই হসপিটালেই আছে। আইসিউ তে।
— কোন ফ্লোরে?চল যাই।
— আমি যেতে পারলে তো হলোই। শুয়ে থাকতাম নাকি এভাবে?
— ওহ।
— তোর যাওয়ার দরকার নেই সেখানে। যদিও বলতে হয়না তবুও বলছি। সেই মেয়ের জন্যেই আজ আমাদের এই অবস্থা। ও গাড়ি না চালালে আজ আমাদের এই এক্সিডেন্ট হতোনা।
— গাড়ি চালিয়েছে মানে?
— কি আর বলবো?নির্লজ্জ মেয়ে! নিজের বিয়েতে নিজেই কত নাচছে জানিস?প্রথমে আমার একটু ওড লাগছিলো। পরে ভাবলাম না থাক। আধুনিক মেয়ে নাচবেই। বিদায়ের সময় দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে যখন গাড়ি তে উঠবে তখন আবদার করে বসলো গাড়ি নাকি সে চালাবে। এটা তার ড্রীম। তার গাড়ি চালানো লাইসেন্স ও আছে। আপত্তি করলেও ভাইয়া পরে আর না করেনা। পাশে বসিয়ে ড্রাইভিং করতে দেয়। তারপর ব্রীজ পার হতেই মোরে ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করে বসে। নিজে তো কোমায় যাওয়ার পথ ধরে সাথে আমার ভাইটাকেও স্বর্গে যাবার টিকিট ধরিয়ে দেয়।

— ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। এর জন্য কাউকে দোষারোপ করিসনা ঝিমা।

— আমি এতো কিছু জানিনা। আমি তার সাথে জীবনেও কথা বলবোনা। মাতো বলে দিয়েছে এই মেয়ে বেঁচে ফিরলেও বাসায় তুলবেনা। অপয়া মেয়ে বিয়ের দিনেই এতোগুলো মানুষের জানের উপর গজব নামিয়ে ছেড়েছে। এই মেয়েকে ঘরে তুললে না জানি সব ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি একে কোনদিন মানবো না।

কথা বলতে বলতেই ঝিমা উত্তেজিত হয়ে গেছে। ভেতর থেকে ক্ষোভ বেরিয়ে আসছে। ছুটি ঝিমাকে রিলাক্স করেই ছুটে কেবিনের বাইরে। আইসিউতে বাইরে থেকে সুমিকে কিছুক্ষন দেখেই ঢুকে বাঁধনের কেবিনে। কেবিনে ঢুকেই দেখতে পায় অচেতন অবস্থায় বাঁধনকে। প্রায় পুরো শরীর যার ব্যান্ডেজে মোড়ানো রয়েছে। ক্যানেলা দিয়ে ফোটায় ফোটায় রক্ত শরীরে ঢুকছে। বাঁধনের অপারেশন হবে। সেজন্য পাংশুটে রক্তহীন শরীরে রক্তের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ডিউটিরত উপস্থিত নার্স ছুটিকে দেখেই হিসহিসিয়ে উঠে। কব্জি ধরে বলে,
— ছোট আপু এখানে কাউকে এলাও নয়। বাইরে যাও প্লিজ।
ছুটি বলে, — আমি জানি আপু। ডিস্টার্ব করবোনা।‌ কথা বলবোনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখবো প্লিজ।

— না না থাকা যাবেনা।কেউ এলাও করবেনা। চলে যাও তুমি।

ছুটি যায়না। জিদ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। টেনেও বাইরে বের করা যায়না। হার মেনে নেয় নার্স। কিছুক্ষন পর কি একটা ইনজেকশন আনতে বেরিয়ে যায়।এতোক্ষন রোগীর কাছে ঘেসতে দিচ্ছিলোনা। ছুটি সুযোগ পেয়েই পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টি পড়ে বাঁধনের মুখটার উপর। তাকিয়ে থাকে নিঃশব্দে। চোখের তৃষ্ণা মেটায়। বাঁধনের ব্যথায় পাংশুটে মুখটা দেখে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দেয় ক্লিন সেভ করা গালদুটো। বিয়ের জন্য সেভ করেছিলো। এতোদিনের সাজানো গোছানো চাপ দাড়ি জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিলো। আহা! কি সুন্দর ই না লাগতো চাপ দাঁড়িতে। সেই সৌন্দর্যে ভাটা পড়েছে। ছুটির খায়েশ মেটানোর বস্তুতে ধ্বংশলীলা চালানো হয়েছে। বিধাতা কি আদৌ মেনে নিবে?নিয়েছেতো। না নিয়ে কি উপায় আছে? সেইতো পর করে দিলো। যাকে আপন ভাবতে শুরু করেছিলো তাকেই পর করে দিলো। মাঝ খান থেকে দোষ পড়লো নির্দোষ মেয়েটার উপর। নাচবেইতো। বাঁধন ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে ছুটিও নাচতো। এইযে ছুটি ছোট বেলা থেকেই সপ্ন দেখতো সে বউ হবে। বড্ড আদুরে বউ। লাল শাড়ীর ঘোমটায় নিজেকে লুকাবে। বিশেষ ব্যাক্তিটির জন্য গাড় করে ঠোঁটে লাল লিপস্টিকে রাঙাবে। লজ্জায় আলতা পা দুটো তার হাতে তুলে দিবে। তিনদিন আগে সেই সপ্ন ছুটি মাটিতে পিষে ফেলে দিয়েছে। তার সপ্ন তো ভাঙেনি হৃদয় ভেঙেছে। বাঁধনের মতো কোন সুপুরুষ স্বামী পেলে যে কোন মেয়েই নাচবে। আর যার লাইসেন্স আছে সে নিশ্চয় ড্রাইভিং এ পটুই হবে। এক্সিডেন্ট টা কপালে ছিলো। তাই বলে মনে এতো ক্ষোভ পুষবে? ঝিমার কথা গুলো মনে পড়তেই ছুটির চোখ ভিজে উঠে। অভিমানী গলায় বলে,

— আমার সাথে আপনার জোড়া মিলিয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো বাঁধন ভাই? জোড়া না মিলিয়েও তো ভালো কিছুই হচ্ছে না। ঝিমা শুরু থেকেই কষ্ট পাচ্ছে। আপনি এভাবে হাত পা ভেঙে পড়ে রয়েছেন। কাকীমনি কত কষ্ট পাচ্ছে। কাকীমনি সুন্দর মেয়ে দেখে পাগল হয়ে গেছে। আমি কি খুব অসুন্দর বাঁধন ভাই? দেখতে কি একটুও ভালো না? আমাকে কি চালিয়ে নেওয়া যেতো না? আমি কি আপনার জন্য লক্ষী মেয়ে হয়ে সংসার করতে পারতাম না? ঝিমাকে আমি কোথায় রাখি আপনি জানেননা। আমার একান্তই প্রিয় সই সে। তাকে ছাড়া আমি একবেলা ভাত ও খেতাম না। দেখে নিতেন আপনি। আমি মিথ্যা বলছিনা। আমার বাড়ি থেকে আপনার বাড়ি যেতে কোন এক্সিডেন্টের ভয় থাকতো না। কয়েক কদম ফেললেই হতো। আপনার কষ্ট হলে আমি কোলে উঠার আবদারটাও করতাম না। বাঁধা তো এ জায়গাই। বাঁধন ভাই আপনি কেনো আমার যোগ্য বয়সী হলেন না?

ছুটির চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।উপরদিকে চোখ রেখে উদাস হয়ে কথা গুলো বলছিলো ছুটি। চোখ মুছে নিজেকে ধাতস্থ করে। বাঁধনের দিকে চোখ পড়তেই দেখে বাঁধন নিভু নিভু চোখে তাকিয়েছে। ছুটি বাঁধনের একেবারে কাছ ঘেঁষে। ব্যথাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে। দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞাসা করে,
— আপনার কষ্ট হচ্ছে বাঁধন ভাই?
বাঁধন কি যেনো বলবে এমন করে। কিন্তু পেরে উঠে না। শরীর সামর্থ্য তাকে সায় দেয় না। ছুটি আরেকটু কাছ ঘেঁষে। কানের কাছে গিয়ে বলে,
— আমারো খুব কষ্ট হয় যে বাঁধন ভাই। খুব কষ্ট। গলায় বিষকাটা বিধলে যেমন মানুষ ছটফট করে আমিও তেমনি ছটফট করি। আপনাকে দেখে ছটফট করি।

শুকনো হাসে ছুটি। বাঁধনকে আবার বলে,
— একটা কবিতা শুনবেন বাঁধন ভাই? রবীন্দ্রনাথের গান আমার কবিতা…
আমি জেনেশুনে
বিষ করেছি পান ।
প্রানের আশা ছেড়ে
সঁপেছি প্রাণ।
যতই দেখি তারে
ততই দহি।
আপন মনোজ্বালা
নীরবে সহি।

— এই মেয়ে! বলেছিনা কাছে যাবেনা। তবুও তুমি গিয়েছো?

নার্সের ধমকে ছুটি চমকে উঠে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। দু হাতে চোখ মুছে। নার্স বিরক্তি নিয়ে তাকায়। বাঁধনের জ্ঞান আছে দেখে ইনজেকশন পোস্ট করে দেয়। রক্তের ব্যাগটাও শেষ হয়ে এসেছে। সিরিজ বিনে ফেলে ছুটিকে জিজ্ঞেস করে,
— পেশেন্ট কে হয়?
ছুটির কানে যায়না। তাই আরেকবার একটু জোড়েই বলে,
— পেশেন্ট তোমার কে হয়?
ছুটি সময় নেয়। বাঁধনের দিকে তাকিয়ে থেকেই মিনমিনিয়ে বলে, — প্রাণ।
নার্স মুচকি হাসে।
— তাই বুঝি চোখে জল!
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ইনজেকশনের হাই ড্রোজে বাঁধন আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।

বাঁধনের অপারেশন হবে। সেজন্য রক্ত লাগবে। প্রয়োজনীয় রক্ত না থাকায় সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বীনা তো ভাইদের মাথা খাচ্ছে। বারবার বলছে,
— যেভাবেই জোগাড় করতে পারিস কর। যত টাকা লাগে দেবো। আমার গহনা সব দিয়ে দিবো।তবুও আমার কলিজাটাকে আমার বুকে ফেরানোর ব্যবস্থা কর।ব্লাডের যোগান পাওয়া গেছে। তবে তা পেতে প্রায় দেড় দিন লাগবে। বাঁধনের অপারেশনটা রাতে হবে। বাঁধনের কেবিনে সোফায় বসে এসবি চিন্তা করছিলো লেবু। তখন গুটি গুটি পায়ে ছুটি গিয়ে লেবু মামার পাশে বসে। লেবু একবার ছুটির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ বাসায় চলে যা ছুটি। তুইও তো চোখে ব্যথা পেয়েছিস দেখছি। রেস্ট নে বাড়ি গিয়ে যা। ‘
ছুটি কিছু বলবে। বাঁধনের ব্লাড গ্ৰুপ একটু আগে সে পেপারে দেখেছে। কিভাবে কথাটা পাতবে তা ভেবেই হাত চুলকাচ্ছে। লেবু আবার চলে যেতে বললে ছুটি সাহস করে কথাটা বলেই বসে।
— আমি ব্লাড দিবো মামা। আমার ব্লাড গ্ৰুপ এ পজিটিভ। লেবু কি বলবে বুঝতে পারেনা। ছুটির কথা শুনে আকাশ থেকে পরে।
— কি বলছিস এসব?ছুটি একদম না। যা বাড়ি যা।
— মামা তুমি বুঝতে পারছোনা। আপাতত আমার থেকে নাও তারপর অন্যকারো থেকে নিও। আশায় বসে থাকলে যে দেড়ি হয়ে যাবে।
— ছুটি তুই ছোট মানুষ। বাড়ি যা। এসব কথা আর বলিস না। তুই এমনিতেই অসুস্থ। আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন আমি ভাই ভাবীকে কি জবাব দিবো? তাদের মেয়ের অসুস্থ তা তারা মেনে নিবেনা।
— বাঁধন ভাইয়ের ক্ষতিও মেনে নিবে না। মা বাবা বাঁধন ভাইকে ছেলের মতো দেখে। তুমি কাউকে না বললেই তো হয়। আর আমি এতোটাও ছোট না। অসুস্থতা ব্যাপার না। এমনিতেই অসুস্থ বলে কাটিয়ে দেয়া যাবে।পারলে দু ব্যাগ ব্লাড নাও।আমি বেঁচে থাকবো সুস্থ ও হবো। কিন্তু আগে বাঁধন ভাইকে সুস্থ করো।প্লিজ।
লেবু ছুটির সাহস দেখে অবাক হয়ে যায়।ছুটির অনুরোধেই হোক কিংবা বাঁধনের জন্য ই হোক শেষ পর্যন্ত না করতে পারেনা।

সকালে দেবার কথা ছিলো দিতে পারিনি।ঘুম থেকে উঠেই ছুটতে হয়েছে। তাই একটু বড় করে দিয়ে পুষিয়ে দিলাম। সবাই আমার গ্ৰুপে Labiba’s Tale🧚‍♀ জয়েন হয়ে যাবেন ।ভূল ত্রুটি গুলো আমাকে ধরিয়ে দিয়ে শুধরে নেবার সুযোগ করে দিবেন। গঠনমূলক আলোচনা করবেন। আপনাদের আলোচনার মাধ্যমেই আমার লেখার প্রতি আগ্ৰহ বাড়বে। বেশী বেশী শেয়ার দিয়ে অনান্য রিডারসদের পড়ার সুযোগ করে দিবেন।
আসসালামুয়ালাইকুম।

চলবে,
~লাবিবা_তানহা_এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here