#বিষ_করেছি_পান(৪৯)
(কপি করা নিষেধ)
বাঁধনের জীবনে একেরপর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেই চলেছে। জীবনে নারী ঘটিত বিষয় গুলো অন্তরীক্ষে খুব গভীরেই আঘাত হানে। সুমির সাথে ডিভোর্স হলেও তাঁদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক। কোথাও যেনো একটা বন্ধুতের দেখা পায়। বাঁধনের কাছে মাঝে মাঝে ই মনে হয় সুমি নামের মেয়েটা তার জীবনের একটা ঝড়। তারপর ই ভাবে দোষ টা কার? কারোনা। বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। ছুটির সংস্পর্শে এসে বাঁধন যেনো এই বাস্তবতার কাছে আরো বেশী পরিচিত হয়। ছুটি নামক কিশোরী তার হৃদয়কে দেহ থেকে ছুটির ব্যবস্থা করে গেছে। বড্ড কষ্টে আঁকড়ে রাখলেও ছুটানোর জন্য ক্রমশ চেষ্টা করে যাচ্ছে সুমি। সুমির মতামত ছুটি বাঁধন কে ভালোবাসে। আবেগ ভেবে ভুল না করে ছুটিকে তার জীবনে জায়গা দেওয়া উচিত। উত্তরে বাঁধন হেসে উঠে। সুমির কথাকে হালকা বিদ্রুপ ও করে।
” ছুটি! পাশের বাসার ফুটফুটে মেয়েটি যখন জম্ম নিলো…তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আমার চোখে তখন রঙিন আকাশের আনাগোনা। বান্ধুবী তমাকে ঘিরে প্রথম ভালোলাগার পরিচিতি। বাড়ী ফিরে শুনি কলোনীতে আগমিত নতুন অতিথি! আর সেই অতিথি…. দুরন্ত কিশোরী মেয়ে আলোচ্য ছুটি!”
বাঁধনের হাসি থামে। শুকিয়ে আসে জিহ্বা। পানির বোতল টেনে ঢকঢক করে জল খায়। তবুও সুমি বাঁধনকে ছুটির কথা মনে করিয়ে দিতে ভুলে না। বাঁধন সুমির সাথে আর যোগাযোগ করে না। যদিও মাঝে মাঝে ফোন দেওয়া হয় বাঁধন সুমির মধ্যকার আলোচ্য ছুটি।
বাঁধনের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে। মন থেকে নামটা মুছে নি ছুটির। মনের উপর জোড় খাটিয়ে বাঁধন শান্ত রাখে নিজেকে। নিজ থেকেই মার থেকে চেয়ে নেয় হবু স্ত্রীর ফোন নাম্বার। প্রথম কথপোকথন এই মেয়েটাকে ভালো লাগেনা। তবে সময় আছে। ভালো লাগতেও পারে। দিনে পাঁচ ছয় মিনিটের বেশি কথা হয়না। এর ই মধ্যে একদিন রাতে মেয়েটি কল দিয়ে কান্নাকাটি করে। বাঁধন কে জানায় তার আগের স্বামী তার লাইফে ফিরে আসতে চায়। নিজেদের মধ্যকার সব ভুল ত্রুটি মিটমাট হয়ে গেছে। ভালোবাসার জোরে তারা এক হতে চায় যদি বাঁধন একটু সাহায্য করে।
বিয়ে সংক্রান্ত এসবে বাঁধনের এবার বাঁধ ভাঙে। পেয়েছেটাকি সবাই? বাঁধনের কোন চাওয়া পাওয়া নেই? সবাই সবার মতো বাঁধনকে চালিয়ে নিচ্ছে। কেউ ইগনোর করছে, অভিমান করছে, নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিচ্ছে, ভালোবাসা জাহির করছে আবার একজন সাহায্য ও চেয়ে বসেছে তাও নিজের ক্ষতির মাধ্যমে। বিয়ের কথা সবাই জানাজানি হয়ে গেছে। বাঁধনের কি মিনিমাম মান সম্মান টুকুও নেই? সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। রুমের অবস্থা নাজেহাল করে ছেড়েছে। বাবা মা বোন কেউই বাঁধনকে আটকাতে পারছে না। বীণা কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বাঁধন জানায়,
— এই বিয়ে হবেনা। এক্ষুনি কমিটমেন্ট ব্রেক করো ফোন লাগিয়ে। আমি কোন হাতের পুতুল নয় যে সবাই এক এক করে আমাকে এইভাবে হেনস্তা করে যাবে। আমার চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব কে দেয়? কেউ লোভে পড়ে আমাকে নাচাচ্ছে,কেউবা নিরবে আমাকে দোষী বানিয়ে রেখেছে,কেউ চায় আমাকে জেলে পুরতে,কেউ চায় ব্যবহার করতে।
— আব্বা কি বলছো এসব?
— তুমি মা আর একটা কথাও বলবেনা। একবার তোমার কথায় পুকুরে ঢুবেছি আরেকবার ঝাপ দিতে চাইনা। আমার লাইফ আমার ডিসিশন। আমার যদি কোনদিন মনে হয় আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই তবেই আমি বিয়ে করবো। তুমি আর আমার ব্যপারে নাক গলাবেনা।
ঘটনা আকষ্মিকে তবধা খেয়ে বসে পড়ে বীনা। ঝিমা কল ধরিয়ে দেয়। বিয়েতে না করে দেয়। কিন্তু মেয়ের ফ্যামিলি মানতে চায়না। কোনভাবেই আগের স্বামীর কাছে তারা মেয়েকে পাঠাবে না। বাঁধনের কাছেই মেয়ে বিয়ে দিবে। একদিন দুইদিন তিনদিনের দিন মেয়েকে জোর করে নিয়ে বাঁধনের বাড়িতে উপস্থিত হয় এলাকার সন্ডাপান্ডা লোক নিয়ে। বীণা ভয়ে চুপসে যায়। বাঁধন মেয়ের বাড়ির সামনে না বলার পরেও তারা বাঁধনকে বোঝাতে থাকে। সাথে যোগ হয় বীণা। ভয়ে ভয়ে বলে,
— ” বাবা বিয়েটা করে নে প্লিজ।”
— ” তারপর নিশ্চয় বউকে সারাজীবন পাহারা দিবো বসে বসে যাতে কারো হাত ধরে না পালিয়ে যায়?
বাজখাই গলায় বকে ঝেকে রেগে মেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বহু কষ্টে মাস খানেক পর ছেলেকে বাড়ি ফেরাতে সক্ষম হয়। তারপর আর কেউ কখনো বাঁধনকে জোর করেনি। তবে মুখে অনেকবারই বলেছে।
ছুটির সাথে দেখা হয় বাঁধনের মাস চারেক পরে। দেখে প্রথমে মুখটা চেনা যায়নি। ছানোয়ারকে দেখে সিউর হয়েছে। ছুটিকে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে। বাঁধন ও এসেছে। এক্সিডেন্টের পর ব্যথাগুলো মাঝে মাঝেই চাড়া দিয়ে ওঠে। একেবারে নিস্পত্তি হবার উপায় খুঁজতেই আজ বাঁধন হসপিটালে। ছানোয়ার বলে ছুটির স্কুল থেকে প্রত্যয়ন পত্র নিতে এসেছে। এসেছে যখন ছুটিকে একটু ডাক্তার ও দেখিয়ে যেতে চায়। মেয়েটা খেতে চায়না। পেটে গ্যাস হয়েছে। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কদিন পর তো রক্ত শূন্যতাও দেখা দিবে। বাঁধন ভালোভাবে খেয়াল করে। সত্যিই ছুটি অনেক শুকিয়ে গেছে। মলিন চেহারা প্রাণোচ্ছল ভাবটা ঢাকা পড়েছে। বাঁধনের নিজেকে এই মুহূর্তে অপরাধী মনে হয়। আর কেউ না জানুক সে জানে তার জন্য ই আজ ছুটির এই অবস্থা। বাঁধন ছুটির সাথে কথা বলতে চায়। অনেক কথাই বলে। কিন্তু ছুটি ফ্যালফ্যাল করে বাঁধনের দিকে তাকিয়ে থাকে। হুস হতেই চোখ নামিয়ে নেয়। অবাধ্য মনটা আজো বেহায়া পনা দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছে। অন্যের মানুষটাকে দেখার মতো পাপ ছুটি করতে চায়না। যদি ছুটি অপয়া হয়! তাহলে যে অন্যের সংসারে নজর লেগে যাবে। ছুটি চায় বাঁধন ভালো থাকুক। কোন প্রকার সম্পর্ক না থাকলেও এই মানুষটার নাম ছুটির মোনাজাতে উঠে আসে। ডাক্তার দেখিয়ে যখন বিদায়ের পালা বাঁধন তখন ছুটিকে প্রশ্ন করে ঝিমার সাথে কেনো যোগাযোগ রাখে না? ছুটির জন্য ঝিমা মাঝেমাঝে কান্নাকাটি করে। আর চুপ থাকেনা ছুটি। ঝিমার কথা মনে পড়তেই ছুটির বুক কেঁপে উঠে। পায়ের স্লিপার দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে যাবার আগে বাঁধন কে বলে যায়,
— যেদিন থেকে আপনার বিয়ে হয়ে গেছে সেদিন থেকে আমি আর ঝিমার সাথে যোগাযোগ রাখার জরুরী বোধ করিনি। ওকে বলে দিবেন আমাকে যেনো ক্ষমা করে দেয়। আমি আমার কথা রাখতে পারিনি। প্রিয়মানুষ হয়ে ওকে সবসময় সঙ্গ দেবার কখনো আলাদা না হবার কমিটমেন্ট রাখতে পারিনি। আমাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে। আপনার স্ত্রীর মাঝে যেনো আমাকে খোঁজে নেবার চেষ্টা করে।
ছুটির উত্তরে অনেক টা জ্ঞানশূন্য মাথায় দাঁড়িয়ে থাকে বাঁধন। ছুটির শেষ অবয়ব পর্যন্ত হড় হামেশায় তাকিয়ে থাকে। এসবের মাঝে ঝিমাও আছে? ঝিমা জানতো? ঝিমা কি ছুটিকে একসাথে রাখার জন্য প্রমিজ করেছিলো? এরজন্য ঝিমা বাঁধনকে এড়িয়ে চলে? ছোট বোনটার মুখে কতদিন ভাইয়া ডাকটা শুনেনা বাঁধন। চোখের সামনে থেকেও অচেনা মানুষ হয়ে থাকে। এটাযে বাধনকে কতোটা পোড়ায় তা একমাত্র বাঁধন ই জানে। ঝোঁকের মুখে বাঁধনের মনে হয় ছুটিকে আটকাতে হবে। ছুটিকে ছাড়া তার চলবেনা। তৎক্ষনাৎ বাড়ি ফিরে। বীণাকে বলতে গিয়েই বাঁধনের ঘোর কাটে। কি করতে যাচ্ছিলো সে? বীণাকে বলেছে একটা মেয়েকে সে পছন্দ করে। তা শুনেই বীণা খুশিতে প্রায় কেঁদে ফেলেছে। আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলে,
— আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে এতো দিনে তুমি তাকিয়েছো। আমার ছেলের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। এবার তাকে ঘরে তুলে আমার সংসার তার হাতে তুলে দিতে পারবো। শেষ বয়সে নাতি নাতনির মুখ দেখতে পাবো। এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে?
বাঁধন আর বলতে পারেনা ছুটির নামটা। ছুটিকে নিয়ে সাহসী পুরুষের দৌড় এখানেই থেমে যায়। ঝিমাকেও বলতে পারেনা ছুটির কথা।ছুটির নামটি নিলে ঝিমা যে দুঃসাহসী হয়ে উঠবে তা বাঁধনের অজানা না। মাঝখান থেকে ছুটির জীবনটা ভরে উঠবে নানা রকম জটিলতায়। ডিভোর্সী, অসম, পারিবারিক ভাবে যেখানে ভাই বোন পরে পরিচয় দেওয়া হয় সেখানে বিয়ে নামটাই বিষাক্ত হয়ে উঠে। বাঁধন ম্যাচিউর। না পারবে ছুটিকে নিয়ে পরিবার থেকে আলাদা হতে আর না পারবে পরিবার সমাজকে এই মুহূর্তে মানাতে। যেখানে রিতীই এখনো আনমেরিড লেখা পড়া করছে। আরো আরো প্রবলেম মস্তিষ্কে একের পর এক জায়গা করে নিতে থাকে। বাঁধনের ছটফটানি বাড়তে থাকে। মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেললেও জানতে ইচ্ছে করে ছুটি ভালো আছে?
সুমির সাথে বাঁধনের আবার যোগাযোগ হয়। সুমিকে প্রশ্ন করে,
— ছুটি কেমন আছে?
— আমি কিভাবে জানবো ছুটি কেমন আছে?
— আমি জানি ছুটির সাথে তোমার ভালোই যোগাযোগ আছে।
— তা আছে বটে।আমি হুইল চেয়ারে বসেই যেনো জীবনে এগিয়ে যেতে পারি সেজন্য ছুটি আমাকে ভীষণ সাপোর্ট দেয়।
— তুমিও তো পারো ছুটিকে একটু সাপোর্ট দিতে। ছুটি ভালো নেই সুমি। ওকে আমার হয়ে একটু ভালো রাখার চেষ্টা করো।
বাঁধনের দিকে তাকিয়ে থেকে সুমি প্রাণখোলা হাসে। এ হাসি থামার নাম নেয়না। বাঁধন কে যেনো সেইদিন হাসিটার উত্তর দিয়ে দেয়।
— ছুটি ভালো আছে। এখন ভীষণ ভালো আছে। কিছুদিন আগে এতোটাও ভালো ছিলোনা। কেনো খারাপ রেখেছিলে ওকে?
— কি করবো? ও যেভাবে ভালো থাকতে চায় তাই কি দিবো? তুমি বলো।
— নাহ। সেটা ঠিক হবেনা। জীবন কারো জন্য পিছিয়ে থাকে না। তুমি ভীষণ ম্যানেজেবল। আমি হলে পারতাম না।
সুমির মতামত শুনে মুচকি হাসে বাঁধন। সুমি আরো বলে,
— ছুটি একদিন সব বুঝতে পারবে। তখন এই একটুখানি পাগলামির জন্য লজ্জা পাবে। তুমি তার লজ্জাটা এড়িয়ে যেও। তোমাদের ফ্যামিলির বন্ডিং ভালো। দূরে থেকেও একসাথে থাকা হবে। স্বাভাবিক সম্পর্ক বিলং করা খুব জরুরি ।
রিতীর সামনে এক বক্স ব্রেকফাস্ট। স্যান্ডুইচ, ব্রেড, ভেজিটেবল, মাটন কারি। এতো এতো খাবার যে কেনো পাঠায় রিতী বুঝেনা। নিজে তো কাবার করতে পারেনা রুমমেট দের সাথে নিয়েই শেষ করে। সোহাগ ও যেনো একটু বেশিই পাঠায়। দৈনন্দিন অরুচিকর খাবার খেয়ে খেয়ে যখনি বলে আর পারছিনা তখনি হুটহাট টেস্ট চেঞ্জ করার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়। রুমমেট রা সব সোহাগের দলে । দুলাভাই বলতেই পাগল। কিভাবে যে এদের ফ্যান বানিয়েছে সেই জানে। আজতো এমন একজন কে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছে যেই কিনা একদিন তার নামে উল্টা পাল্টা বাবাকে নালিশ করে অসুস্থ বানিয়ে দিয়েছিলো ।এতো এতো পাগলামি এতো ভালোবাসা রিতী কবে না ডুবে মরে যায়। পাগলটা দেখা না করেই চলে গেছে। রিতী ফোনে কল করে সোহাগকে। রিসিভ হতেই অভিমানী গলা ব্যক্ত হয়।
— দেখা না করেই চলে গেলে যে?
— ঐ একটু ব্যস্ত ছিলাম।
— আচ্ছা! তো কি এতো ব্যস্ততা শুনি।
সোহাগ হাসে। মাথা চুলকিয়ে বলে,
— তোমার থেকে না । প্রয়োজন ছিলো আর কি।
— তাহলে তোমার সাথে আগামী পনের দিন আমার কোনো দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছেনা।
— মানে কি?
— রাতের ট্রেইনে বাড়ি যাচ্ছি। যেতেই হবে। অনেক মাস যাইনা।
— এই একদম না। রাতে ট্রেইনে কেনো কেনো? বাসে যাও। রাতের বেলা ট্রেইন সেফ না।
— কত লোক যাতায়াত করছে.. আমার টিকেট কাটা হয়ে গেছে। আটটায় ট্রেইন। হয়তো তোমার সাথে এভাবে কথাও বলতে পারবোনা। সময় করে আমিই ফোন করবো। এখন রাখি গোছগাছ করতে হবে।
সোহাগকে কিছু না বলতে দিয়েই ফোন কেটে ব্রেকফাস্ট শেষ করে গোছগাছের কাজে লেগে পড়ে।
স্টেশনে গাড়ির বুগি নাম্বার খোজতে এদিক ওদিক চলছে রিতী। মেলাতে পারছেনা তাই দাঁড়িয়ে পড়ে। হুট করে কেউ হাত থেকে টিকেটটা টেনে নেয়। রিতী চমকে আরে… বলে পেছন তাকাতেই চুপ হয়ে যায়।
— ঝ বগি তাইনা? ঐদিকে তো। চলো।
লাগেজটা একহাতে নিয়ে আরেকহাতে রিতীর হাতটা পুরে নেয়। ভিড়ের মধ্যে একপ্রকার যুদ্ধ করেই উঠে। সিট নাম্বার বের করে রিতীকে বসিয়ে দিয়ে লাগেজ উপরে তুলে দেয়। মিনিট খানেক পরেই গাড়ি চলতে শুরু করে। সোহাগের নামার কোন তাড়াহুড়ো দেখা যায় না। রিতী মুচকি হাসে। বোরিং জার্ণিটা তার কতো আনন্দের হতে যাচ্ছে ভেবেই আকাশে ডানা মেলতে ইচ্ছে করছে। মিনিট পাঁচেক পর সোহাগের কোমড়ে রাখা হাতে নিজের হাত গলিয়ে দেয়। আলতো ভাবে মুঠো পুড়ে নেয় হাত। এভাবেই একের পর এক স্টেশন পার হতে থাকে । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা লেগে যায়। অভ্যাস না থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব।রিতী উঠে দাঁড়ায়। ইশারায় সিট দেখিয়ে বলে,
— বসো এখানে।
— তুমি বসো। আমি দাঁড়িয়ে যেতে পারবো।
— বসতে বলছি বসো।
— কোমড় ধরে গেছে?
— বসো।
সোহাগ প্যান্টটা একটু উপর দিক উঠিয়ে বসে পড়ে। উফফ একটু যেনো ভালো লাগছে বসতে পেরে। কিছুক্ষণ বসেই আবার উঠে পড়বে ভাবে। সে সুযোগটা আর পাওয়া হয়না। দু উরুতেই জায়গা করে নেয় রিতী। আশেপাশে সবাই ঝিমুচ্ছে দেখে গলা জড়িয়ে নেয় সোহাগের। দাঁড়িতে হাত বুলায়। সোহাগ হালকা হেঁসে কোমড় জড়িয়ে নেয়।
— তুমি যাবে বললেনাতো।
— একা ছাড়তে ভয় হয়।
— এর পর কি করবে তাহলে?
— আল্লাহ স্কলারশীপটা যেনো না পায় আমার বউ। আমিন।
আকাশের দিকে হাত তুলে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে সোহাগ। রিতী দেয় পিঠে দু চারটে কিল। দুষ্টু হেসে বলে,
— শয়তান।
— সিরিয়াসলি দোয়া দিলাম।
— দোয়া দিলে এই দোয়া করো তোমার বউয়ের সপ্ন যেনো পূর্ণ হয়।
— বিদেশ গিয়ে কি লাভ? সেইতো বসবে আব্বার অফিসেই।
— তুমি জানো আব্বার ক্লাসিফিকেশন কি? কোন ইউনি থেকে স্টাডি কমপ্লিট করেছে? আমাকেও তো তার যোগ্য হতে হবে। ভাবছি পিএইচডি ও কমপ্লিট করে আসবো।
— আরেকটা বিয়ে করবো।
— সোহাগ..!
— কথা বলো না চুপ থাকো।
রিতী আর কিছু বলতে পারলো না। গাল ফুলিয়ে টম বানিয়ে রাখলো। এই বুঝি কেঁদে দিবে ভাব। সোহাগ দেখলেও কিছু বললোনা। সে যেনো রিতীকে কাদাতেই চায়।
রিতীকে নিতে এসেছে তমাল আর ছুটি। সোহাগকে দেখেই ছুটি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তমালের সাথে কথা বললেও ছুটির সাথে কথা বলেনা সোহাগ। রিকশায় তুলে দেবার সময় ছুটির হাতে হাজার টাকার নোট গুঁজে দেয়। সীনা টান টান করে বলে,
— আমি কিন্তু তোমার রাগ ভাঙাতেই এতোদূর এসেছি ছুটি রাণী। আমার একমাত্র রাণী আমার থেকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখবে সেটা কিভাবে মেনে নিতে পারি?
— আমি রাণী হলে আপু কী? দাসী?
— উহু! বিবি। সহধর্মিণী।
— দুলাভাই আমি আপনার সাথে মোটেই রাগ করেই আছি। আপনার হাজার টাকাতে কি আমার আত্মসম্মান আমি ফিরে পাবো? নাকি বাঁধন ভাইকেই ফিরে পাবো?
— বাহ! কি তেজ! এর জন্যই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চুর। আরে আমি বুদ্ধিটা দিয়েছি জন্য ই তো বেঁচে গেছো। ঐযে বলেনা আশায় বাঁচে চাষা! তোমার ও সেরকম অবস্থা হতো। ভাই বেঁচে গেছো নতুন করে কাউকে বেঁছে নাও।
— সেইতো।
— কলেজে কাউকে পছন্দ হলো?
— না।
— তা হবে কেনো? কি খেয়ে যে বুড়ো দেখে তোমার প্রাণ ফাটে আল্লাই জানে।
— আপনি খাইয়েছেন না যত খাবার রেস্টুরেন্টে।ঐসব খেয়ে।
— রাগ কমাও রাণী। বউটাকে রেখে যাচ্ছি খেয়াল রেখো। আমি যেমন রেখে যাচ্ছি তেমনি যেনো ফিরে পাই। শুকনো চেহারা একদমি সহ্য করবোনা। মনে থাকবে শালাবাবু?
তমাল দাঁত বের করে হাসে। আপাতত সে কোণ খেতে ব্যস্ত। সোহাগ দু হাতে দুটো ধরিয়ে দিয়েছে। ঘাড় নাড়িয়ে জানায় — থাকবে।
— বাবাকে কিছু বলোনা কেমন?
— একদম না।
চলবে,