যখন_দুজনে_একা ৮ম পর্ব

0
598

#যখন_দুজনে_একা

৮ম পর্ব

রুবার দিকে তাকিয়ে মাহি বলল , একটা কাজ করো তাহলে ভয় লাগবে না!
রুবা চাদরের নিচ থেকে মুখ বের করে বলল, কি কাজ?
তুমি আমার মোবাইল এর হেড ফোন কানে লাগাও জোরে সাউন্ড দিয়ে গান শুনতে থাকো তাহলে থান্ডারিং এর শব্দ শুনতে পাবে না তোমার ভয় ও লাগবে না!
রুবা অবাক হয়ে বলল, সত্যিই!
হুম!
মাহি বিছানা থেকে নেমে হেড ফোন এনে রুবাকে দিল!
রুবা গান শুনতে শুরু করলো!
এখন রুবাকে নরমাল লাগছে! মাহি কিছুক্ষণ রুবার দিকে তাকিয়ে থেকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো! অনেক বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । খুব বাতাস বাহিরে ! তার মাথার যন্ত্রণা টা অনেকক্ষানি কমে গেছে এখন!
এই বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে তার খুব ভালো লাগছে! বাজ পড়ার শব্দ কমে গেছে কিন্তু বাতাসের তিব্রতা আছে ।
কালকে থেকে তার হসপিটাল আবার শুরু দুটো দিন ছুটি নিতে হয়েছে! নিঝুম এর সঙ্গে দেখা হবে কালকে আবার! নিঝুম তার সঙ্গে কথা বলবে না আর, সে জানে !
থাক কথা না বলাই ভালো! ওর কষ্ট আরো বাড়বে ! তারচেয়ে আমাকে ঘৃণা করুক তাহলে হয়তো ও জীবনে এগিয়ে যেতে পারবে! মনে মনে ভাবছে মাহি।
রুবা কখন কাছে এসে দাঁড়ালো টের‌ই পায়নি মাহি!
রুবা বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মাহি ঘাড় ঘুরিয়ে রুবাকে দেখে অবাক হয়ে গেল!
তুমি আসলে কেন? অনেক বাতাস এখানে!ভয় লাগছে না এখন!
রুবা মাথা নেড়ে বলল না!
যাও ভেতরে যাও! বৃষ্টি আসছে!
একটু দাঁড়াই !
বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে ঠান্ডা লেগে যাবে!
রুবা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, জানো বৃষ্টি আমার অনেক প্রিয় ! ছাদে ভিজতে এত ভালো লাগে ! সবচেয়ে ভালো লাগে রিক্সায় হুড নামিয়ে ভিজতে!
তাই?
মাহি তাকিয়ে আছে রুবার দিকে আর কি পছন্দ তোমার?
আরো একটা জিনিস খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু কখনো সেই ইচ্ছা টা পূরন হয়নি।
কি শুনি রুবা?
রুবা মুখে একটা স্মিত হাসি দিয়ে বলল, আমার বাইকে চড়তে খুব ইচ্ছা করে ! কিন্তু কারো বাইকের পিছনে ই চড়া হয়নি কখনো!
মাহি হেসে বলল, ঠিক আছে তুমি একটু সুস্থ হ‌ও তোমাকে আমি বাইকে চড়াব! হুড নামিয়ে রিক্সায় ভিজব!
এক কাজ করব আমরা বৃষ্টিতে বাইক নিয়ে বের হব কেমন! চড়বে আমার সঙ্গে?
সত্যি!
কিন্তু তোমার তো বাইক নাই !
আমার নাই তো কি হয়েছে আমার বন্ধুদের আছে! না হয় তোমার জন্য কিনলাম একটা বাইক বলেই হেসে দিল মাহি!
রুবাও হাসছে ! কোন দরকার নাই কেনার! অহেতুক টাকা নষ্ট হবে।
ঠিক আছে তুমি এখন ঘরে যাও শুয়ে পড়ো রাত অনেক হচ্ছে রুবা!
তুমি আসবে না?
আমি আসছি তুমি যাও!
রুবা ঘরে ঢুকলো!
মাহি আরো কিছু সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। এবার ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে!
ও ভেতরে চলে এলো !
রুবা বিছানায় শুয়ে আছে !
মাহি বলল আলো নিভিয়ে দাও! বলে মাহি ইজি চেয়ারে শুয়ে পড়লো!
আমি কিন্তু সকাল সকাল উঠবো ! তুমি তখন উঠতে পারবে ?
রুবা বলল ডাক দিও !
আগে তো সব সময় সকালেই উঠে যেতাম!
তাহলে এখন থেকে সকালে ই উঠবে কেমন!
ঠিক আছে!
মাহি ইচ্ছা করেই ইজি চেয়ারে শুয়ে আছে! সে জানে রুবা র পাশে বিছানায় শুয়ে পড়লে রুবা অস্বস্তি বোধ করবে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না !
আর নিজের‌ই একটু অস্বস্তি লাগছে!
রুবা আলো নিভিয়ে দিয়েছে ঘর এখন পুরোপুরি অন্ধকার! দুজনের কেউ কোন কথা বলছে না। দুটো মানুষ এক ঘরে থাকছে , কথা হচ্ছে কিন্তু একটা সময় গিয়ে সব কথা থেমে যায়। দুজনের মাঝে এসে যায় কবরের নিস্তব্ধতা।
মাহি তাকিয়ে আছে তার হাতের ঘড়িটার দিকে!
এই ঘড়িটা নিঝুম তার জন্মদিনে দিয়েছিল ! ঘড়ির কাটা গুলো টিকটিক করে তার বুকের ভেতরটা তে খোঁচা দিচ্ছে!
অন্য হাত দিয়ে ঘড়িটা স্পর্শ করলো সে!
মনে হচ্ছে নিঝুমের হাতের স্পর্শ টা পাচ্ছে! কত স্মৃতি,কত কথা সব আজ অর্থহীন। না জানি কত কষ্ট হচ্ছে নিঝুমের। আজ ওদের দুজনকে দেখে হয়তো কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল।
চোখ বন্ধ করলো মাহি!
কত কিছু ভেবেছিল দুজন ! কত স্বপ্ন ছিল তাদের!
দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মাহি!
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো! বারান্দার আলো টা জ্বালিয়ে দিল । এত অন্ধকার থাকলে অপরিচিত রুমে রুবা রাতে উঠলে দিশা খুঁজে পাবে না।
হাত থেকে ঘড়িটা খুলে ফেলল সে আলমারি খুলে ড্রয়ারে রেখে দিল!
রুবা ঘুমিয়ে গেছে!
আচ্ছা এভাবে কত রাত তার ঘুম আসবে না ?
মেডিসিন বক্স খুলে একটা রিবোট্রিল খেয়ে নিল আজ তাকে একটু ঘুমাতেই হবে কালকে একটানা ওটি থাকবে!
তার নিজের জীবনের ঝামেলা র জন্য রোগীর জীবন নিয়ে গাফিলতি করা যাবে না !
আবার এসে ইজি চেয়ারে শুয়ে পড়লো মাহি!
চোখ বন্ধ করে ঘুমের চেষ্টা করছে!

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here