হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-২০

0
312

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২০

কিন্তু দশদিন পর তাদের সব মুখোশ আমার সামনে উন্মোচন হয়ে গেল।মমানুষ এতটা জঘন্য হতে পারে জানা ছিল না।এতটা ভালো মানুষের রুপ অমানুষগুলো ধরতে পারে তা চিন্তার বাইরে ছিল। ভয়ংকর একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম আমি।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করলাম তুর্জ ওয়াশরুমে।তাই ভাবলাম একটু তুরাকে কল দেওয়া যাক। এই ভেবে মোবাইলটা হাতে নিতে চাইলাম। কিন্তু বিছানার কোথাও মোবাইল পেলাম না। কিন্তু আমি তো মোবাইল বালিশের পাশেই রেখেছিলাম। সমস্ত ঘর খুঁজা শুরু করলাম। কিন্তু কোথাও মোবাইলটা পেলাম না। বেশ ঘাবড়ে গেলাম মোবাইলটা না পেয়ে। কারণ মোবাইলটা না পেলে তুরার সাথে যোগাযোগ করতে পারব না। হুট করে তুর্জের মোবাইলটা সামনে পেয়ে আমার মোবাইলে একটা কল করলাম। খেয়াল করলাম কলটা তুর্জের আলমিরার ড্রয়ার থেকে বাজতেছে।আমি আলমিরা খুলে ড্রয়ার খুলতে চাইলাম লক্ষ্য করলাম ড্রয়ারটা লক করা। সেই মুহুর্তে খেয়াল করলাম তুর্জ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে। তুর্জকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম-

“আমার মোবাইলটা এই ড্রয়ারের ভিতর গেল কীভাবে?”

তুর্জ আমার দিকে তাকিয়ে দায়সাড়াভাবে বলল-

“আমি কিছু না জানি না। মা কে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

তুর্জের কথাটা শুনে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললাম-

“আমার মোবাইল তোমার ড্রয়ারে রাখা আর তুমি দায়সাড়া ভাবে বলছো তুমি কিছু জানো না আর আম্মুকে জিজ্ঞেস করতে।ড্রয়ারের চাবি দাও মোবাইল বের করব?”

“চাবি দিতে পারব না মায়ের নিষেধ আছে। মোবাইল লাগলে মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নাও।”

আমি অবাক হয়ে বললাম-

“আম্মু আমার মোবাইল নিয়ে কী করবে?”

তুর্জ গা ছাড়া একটা ভাব নিল। ভাবটা এমন ধরল যে যা হচ্ছে তার ব্যপারে তুর্জ জানেই না কিছু।গা ছাড়া একটা ভাব নিয়ে বলল-

” আমি কিছু জানি না। যা বলার মাকে গিয়ে বলো।”

আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুর্জকে বলে কোনো লাভ হবে না।তাই আম্মুকে জিজ্ঞেস করতে রুম থেকে বের হতে নিব ঠিক এমন সময় দেখলাম আম্মু আমার রুমে ঢুকছে।রুমে ঢুকেই বলতেছে-
“এখানে এত কথা কিসের?”
“দেখুন না আম্মু আমার মোবাইলটা তুর্জ লক করে রেখেছে আমাকে দিচ্ছে না।”

আম্মু মুখটাকে গম্ভীর করে বলল-
” মোবাইল আমি লক করে রেখেছি।”
“কিন্তু কেন?”

তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল-

“তুমি মোবাইল দিয়ে কী করবে শুনি?”
“দরকার ছিল একটু।”
“কী দরকার? তুরার সাথে কথা বলে আমাদের কীভাবে ফাঁসানো যায় সে ব্যবস্থা করবে তাই তো?”

আমি আম্মুর কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। তার মানে ওরা সবটা জেনে গিয়েছে। এখন কী করব বুঝতে পারছিলাম না। নিজেকে একটু স্থির করে বললাম-

” নাহ মানে আম্মু….

এবার ঐ মহিলার আসল রুপটা বের হয়ে গেল। মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষটার বিকৃত রূপ প্রকাশিত হলো।

“চেনা মুখের আদলে অনেক অচেনা রূপ থাকে।সময়ের পরিক্রমায় তা প্রকাশিত হয়।”

আম্মু আমাকে বলল

“তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না? পেটে নিয়ে রেখেছ তো একটা মেয়ে বাচ্চা। তার উপর তুরার সাথে কথা বলে আমাদের ফাঁসাতে চাচ্ছ? সবটা তো জেনেই গিয়েছ আর লুকিয়ে লাভ কী? তোমাকে অনেক আগে থেকেই নজরে রেখেছিলাম। তোমার ব্যাগে লকারগুলোর দ্বিতীয় চাবি দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম তুমি তুর্জের তৃতীয় স্ত্রী এর মতো অধিক পাকনা মেয়ে।”

“তার মানে তুর্জ এর আগে তিনটা বিয়ে করেছে তাই তো?”

“হ্যাঁ তিনটা বিয়ে করেছে। জেনে গিয়েছ যেহুত সবটা বলে দেই। না হয় বেশি পাকনামি করবে। পাকনামির ফল আগের স্ত্রী দের সাথে কেমন হয়েছিল একটু জেনে রাখা ভালো।শুনো তুর্জের প্রথম স্ত্রী এর পেটে ছেলে বাচ্চায় ছিল তবে তার নামে বীমা করে রেখেছিলাম তাই ইচ্ছা করেই গর্ভপাত করাই। কিন্তু ঐ সময়ও মেয়েটা মরে নি। পরে ডাক্তারকে হাত করে চিকিৎসা বন্ধ করে দেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। বিনিময়ে আমরা পাই সত্তর লাখ টাকা। সেখান থেকে ডাক্তারকে দেই দশ লাখ টাকা। তারপর শুরু হয় মা আর ছেলের বিয়ে বিয়ে খেলা। তুর্জকে দ্বিতীয় বিয়ে করায়। সে মেয়ের পেটে ছিল মেয়ে বাচ্চা। ঐ মেয়েকে মারার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তবে মেয়েটা মেয়ে বাচ্চা নষ্ট করতে চাচ্ছিল না। কথায় কথায় পুলিশের হুমকি দিত। তাই বু্দ্ধি করিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলি। যদিও আমার ছেলেটার একটু কষ্ট হয়েছে। কারণ নাটকটা সাজাতে আমার ছেলেটার পা ইচ্ছা করে ভাঙ্গতে হয়েছে।”

মহিলার এ কথা টা শুনে চমকে গেলাম। কতটা হিংস্র হলে এভাবে নাটক সাজায় আর নিজের ছেলের পা, মা ভেঙ্গে নাটকের বাস্তবতার রুপ দেয় সেটা ওদের দেখে বুঝলাম । এর মধ্যেই মহিলা পুনরায় বলল

“তৃতীয় বিয়ে করালাম ঐ মেয়েকেও মারার কোনো শখ ছিল না। ইচ্ছা ছিল মেয়ে বাচ্চা নষ্ট করে দিব তারপর আবার বাচ্চা নিতে বলব। কারণ আমার বংশে প্রথম বাচ্চা ছেলে হোক এটা চাই। কিন্তু ঐ মেয়েটা তোমার মতো বেশ পাকনামি করে ফেলেছিল। সমস্ত বিষয় ঘেটে বের করে ফেলেছিল। তাই ওকে ফাঁপা ইনজেকশন পুশ করে মেরে ফেলেছি। সবাই তো ভেবেছে হার্ট এটাক করে মরে গিয়েছে। আর এ বাড়িটা তো অভিশপ্ত বাড়ি।”

এই বলে মহিলাটা একটা অট্ট হাসি দিল। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম

“আমি তেমন কিছুই করব না। আমার বাচ্চাটাকে খুন করবেন না। আপনিও আপনার মায়ের প্রথম মেয়ে সন্তান। আপনার মা তো আপনাকে খুন করে নি। মেয়ে হোক ছেলে হোক সন্তান তো আল্লাহর দান। এভাবে একটা বাচ্চার প্রাণ দুনিয়ায় আসার আগেই নষ্ট করে দিবেন না।”

মহিলাটা হুংকার দিয়ে বলল

“আমার বংশে ছেলে বাচ্চায় লাগবে। আর মেয়ে হলে তো তোমার মতো কালো হবে।মঅভিশাপ বয়ে আনবে। চিন্তা করো না বউমা এবার আমাদের কথা শুনে মেয়েটাকে নষ্ট করো। সব ঠিক হয়ে যাবে। পরের বার একটা ছেলে সন্তানেই হবে দেখো।”

আমার বাচ্চা আমি নষ্ট করব এটা ভেবেই আমি আঁৎকে উঠে তুর্জকে বললাম-

“দেখো আম্মু কী বলতেছে। তোমরা যা অন্যায় করেছ আমি সবটা গোপন রাখব তোমরা আমার মেয়েকে মেরে ফেল না।মাকে বুঝাও একটু।”

তুর্জ আমার দিকে রাগী চোখমুখ নিয়ে তাকিয়ে বলল-

” মা যা বলেছে তাই হবে, এ বংশে ছেলে সন্তানেই আসবে প্রথম।”

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম-
“আমার মায়ের সাথেও কী কথা বলতে দিবে না তোমরা।”

পাশ থেকে মহিলটা বলে উঠল-
“তোমার মাকে বলে রেখেছি তোমাকে ডাক্তার বিশ্রাম দিয়েছে, পাঁচদিন কথা বলতে পারবে না। সুতরাং তোমার মায়ের সাথে কথা বলার দরকার নেই। যা কথা বলার গর্ভপাতের পর বলবে।”

এবলে আম্মু চলে গেল। আম্মু চলে যাওয়ার পর তুর্জকে অনেক মানানোর চেষ্টা করলাম। তুর্জ কিছুতেই মানল না।বরং অফিসে চলে গেল। এদিকে তুরা বলেছিল তার সাথে যোগাযোগ যেন করি সবসময়। কিন্তু সেটাও করতে পারছি না। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুরার সাথে যোগাযোগ করা। কীভাবে কথা বলব তোরার সাথে। কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। কতবার তুর্জের ফোনটা লুকিয়ে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু ফোন লক করা ছিল। আমাকে ওরা শারিরীক কোনো যন্ত্রণা দেয় নি তবে মানসিক ভাবে পুরো মেরে ফেলেছে। আমার আত্ম চিৎকার শুনার মতো কেউ নেই।নীরবে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে আরও পাঁচটা দিন পার করলাম।

তুরার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারলাম না।
আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নিজের সন্তানকে বলি দিতে হবে।হয়তো আমার প্রাণটাকেও বলি দিয়ে দিবে তারা। এতটা অসহায় আগে কখনও লাগে নি। কিছুক্ষণ পর আমাকে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে। আমি কী সব আটকাতে পারব নাকি পারব না। জীবনের শেষ অধ্যায় হয়তো এটা। আজকেই হয়তো আমার ডায়রি লিখার শেষ দিন। আর কোনোদিন হয়তো ডায়রিটা লিখতে পারব না। লিখতে খুব হাত কাঁপছে।একটু পরেই হয়তো আমার জীবনের ইতি ঘটবে।

তুলি এ লেখাটা পড়ার পর কয়েক পৃষ্ঠা উল্টাল কিন্তু পরবর্তী লিখা আর পেল না। তুলি ভাবতে লাগল তাহলে কী নিরার সেদিন মৃত্যু হয়েছিল। অরন্যকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে। পরে কী হয়েছিল জানার জন্য তুলির মন ছটফট করতে লাগল। তুলি ডায়রিটা রেখে রান্না ঘরে গিয়ে অরন্যকে দেখে একটু থমকে গেল। কি এক মায়া যেন অরন্যের মুখে মেখে আছে। এ মায়ায় যেন বারবার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। তুলি নিজেকে সামলে নিল কারণ অরন্য বিবাহিত তার মায়ায় পড়লে চলবে না। তুলির মনে শুধু একটা প্রশ্ন অরন্যের বউ কোথায়? অপরদিকে নিরার কী হয়েছিল সেটা জানার জন্যও ছটফট করছিল। তুলি সরাসরি রান্না ঘরে ঢুকে গেল।

অরন্যকে তুলিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস কেটে বলল

“থাক আর সাহায্য করতে হবে না। বানানো তো শেষ। এখন এত ক্রেডিট নিতে হবে না।”

তুলি রাগী কন্ঠে বলল-
“আমি আপনাকে সাহায্য করতে আসি নি। আমি ডায়রিটা পুরো পড়েছি।”
“অহ! পড়ে ফেলেছেন, তাহলে আর কী চান?”
“তারপর নিরার কী হয়েছে বলবেন? নিরা কী বেঁচে আছে নাকি ঐ অপরাধীরা নিরাকে মেরে ফেলেছে?”

অরন্য তুলির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল
“এ কফির মগটা ধরুন তো একটু। আমি দুটা একসাথে ধরতে পারছি না। অনেক গরম তো তাই।”

তুলি রাগী চোখে অরন্যের দিকে তাকিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে বলল-

“আপনি বলেন না তারপর নিরার কি হয়েছিল?”

অরন্য পুনরায় তুলির কথা পাত্তা না দিয়ে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলল-
” একটু মিষ্টি কম হয়েছে। আপনি মিষ্টি কম খান নাকি বেশি খান?”

অরন্যের কথা শুনে তুলির শরীরটা রাগে গিজগিজ করতে লাগল। রাগে কফির মগটা রান্না ঘরে রেখে চলে আসলো।অরন্য কফির মগটা নিয়ে তুলির পেছন পেছন গেল আর বলতে লাগল

“আরে কফিটা নিয়ে যান।”

তুলি কোনো কথা না শুনে রুমে চলে আসলো। অরন্য কফির মগটা হাতে নিয়ে তুলির কাছে গিয়ে বলল-

“কফিটা খান সমস্ত ঘটনা খুলে বলছি।”

তুলি অরন্যের কথায় কফিতে একটা চুমুক দিল। কফিতে চুমুক দেওয়ার পর লোভনীয় স্বাদে কফির মগে যেন হাবুডুবু খেতে লাগল। নিজের লোভনীয় চেহারা অরন্যের কাছে অগোচর করে অরন্যেকে বলল-

” এবার বলুন তারপর নিরার সাথে কী হয়েছিল। আর নিরা কী বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে?”

অরন্য তুলির অস্থিরতা খেয়াল করল। অস্থিরতা দেখে অরন্য বলল-
” নিরার মতো দেখা যাচ্ছে আপনিও বেশ অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। এত অস্থির হলে চলবে?”

অরন্যের কথা শুনে তুলির শরীরে রাগের তীব্রতা বাড়তে লাগল। নিজের রাগকে নিবারণ করে বলল-
“আমি স্থির আছি এবার বলুন।”

অরন্য তুলির দিকে তাকিয়ে আবার চোখটা নীচে নামিয়ে ফেলল। কারণ তুলির দিকে তাকালে তুলির চোখ দুটো দেখলে অরন্যের অদ্ভুত অনুভূতি হয়। আর ঐ চোখে ভালো করে তাকালে অরন্য যে আবেগের সাগরে ডুবে যাবে সেটা অরন্য বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে। তাই অরন্য নিজেকে সংযত করে তুলিকে বলল-

“আপনার সাথে যেখানে দেখা, প্রতদিনের মতো আমিও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দাঁড়িয়ে আকাশটাকে উপভোগ করতে ছিলাম। রাত তখন এগারটা বাজে। ঠিক এ সময় নিরা নামের মেয়েটা আপনার মতোই আসে ব্রিজের উপর। মেয়েটা অবশ্য আপনার মতো মার্ডার করে আসে নি।”

এ বিষয়টা নিয়েও অরন্য বেশ মজা করছে দেখে তুলি রাগে অরন্যের দিকে তাকাল। অরন্য তুলির রাগী চোখ দেখে বলল-

“আরে এত রাগ করছেন কেন? আমি তো কথাটা আমি মজা করে বলছি।”

তখন নিরা আমার দিকে তাকিয়ে ওর ডায়রিটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলল-

“আমাকে একটু এ ঠিকানায় পৌঁছে দিন। আমার অনেক বিপদ। আমি বাসায় পৌঁছাতে না পারলে আমাকে আমার শ্বাশুড়ি এবং স্বামী মেরে ফেলবে। আমি অনেক দূর থেকে পালিয়ে এসেছি। আপনি একটু দয়া করুন। এ বলে নিরা অজ্ঞান হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব?মনে হলো আজকে উনার জায়গায় আমার বোন বা আমার প্রিয় সহধর্মিণী থাকলে আমি তাদের সাহায্য না করে থাকতে পারতাম না। আমি উনাকে নিয়ে আমি যে হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় আছি ঐ হাসপাতালের এক বিশেষ কেবিনে ভর্তি করালাম। এক তো নিরা গর্ভবতী ছিল তার উপর নিরার প্রেসার ছিল অনেক কম। নিরাকে ট্রিটমেন্ট দিতে লাগলাম।কেবিনের একটা চেয়ারে বসলাম। ডায়রিটা হাতে নিয়ে পড়ব কিনা চিন্তা করতে লাগলাম। অনেক ভেবে ডায়রিটা পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর ডায়রিটা খুলে পড়তে লাগলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ডায়রিটা পড়া শেষ হলো। ডায়রিটা পড়ে ভাবলাম মেয়েটা কতটা অসহায়। এত ভালোবাসার পর এমন একটা ধাক্কা খাবে কে জানত। আমি নিরার জ্ঞান ফিরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সারা রাত পার হয়ে গেল কোন সাড়াশব্দ ছিল না। নিরার ডায়রিতে শুধু বাসার ঠিকানা দেওয়া ছিল কোনো মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল না। তাই ঐ সময় কারও সাথে যোগাযোগ করার উপায় পেলাম না।

সকাল সাতটায় নিরা বাঁচাও বলে চিল্লানি দিয়ে উঠল। বুঝতে পারলাম নিরা এখনও ঐ ট্রমায় আছে। আমি নিরার কাছে গিয়ে বললাম-

“বিনা অনুমতিতে আপনার ডায়রি পড়ার জন্য দুঃখিত।আপনি চিন্তা করবেন না এখানে আপনাকে কেউ কিছু করবে না। আমি একজন ডাক্তার আর আপনি এ হাসপাতালে বেশ নিরাপদে আছেন। আমাকে বলুন আপনি এবার কি করতে চান । আমি কী কোনো আইনি ব্যাবস্থা নিব?”

নিরা আমার কথা শুনে একটু স্বস্তি পেয়ে বলল-

“আপনার মোবাইলটা একটু আমাকে দিবেন।
আমি নিরার দিকে আমার মোবাইল টা এগিয়ে দিলাম। নিরা আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বলল একটু ডাটা অন করে দিবেন। আমি একটু আমার মেসেন্জারে ঢুকব। আমি মোবাইলটা নিয়ে ডাটা অন করে দিলাম। নিরা তার মেসেন্জারে ঢুকল। নিরা মেসন্জারে ঢুকে আশ্চর্য হলো এটা দেখে যে তুরাকে অনেকগুলো মেসেজ এ পর্যন্ত করা হয়েছে যা নিরা করেই নি। নিরা খুব ভালো করে বুঝতে পারল এসব মেসেজ তুর্জ করেছে। তুর্জ এসব মেসেজ করে তুরার কাছ থেকে সব তথ্য কৌশলে জেনে নিয়েছিল। যখনেই তুরা কল দিয়ে কথা বলতে বলেছে তখনেই তুরাকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে যে বসায় সমস্যা যা বলার মেসেজে বল। আর সবচেয়ে বড়ল আশ্চর্যের বিষয় এটা যে তুরাকে মেসেজ করে একটা ঠিকানা দিয়ে বলা হলো আগের রিপোর্টের কাগজগুলো যেন ঐ ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। আর তুরাও তাই করবে বলল। নিরা মেসেজগুলে জোরে জোরে পড়ে ভয়ে ঘামতে লাগল। আমি নিরাকে একটু সাহস জুগিয়ে বললাম-

” আপনি আপনার বান্ধবীকে কল দিন। আপনার বান্ধবীত অনলাইনে আছে।”

নিরা নিজেকে সামলে তুরাকে কল দিল। ওপাশ থেকে তোরা কল দিয়ে বলল
” ক২ রে কল ধরছিলি না আমি তো চিন্তায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তুই কোথায় এখন?”
নিরা কাঁদতে কাঁদতে বলল-
“আমার হয়ে ওরা এতদিন মেসেজ দিয়েছে তোকে । তুই কী কাগজ গুলো পাঠিয়ে দিয়েছিস।ঐ কাগজগুলো প্রমাণ ছিল।”

তোরা নিরার কথা শুনে চমকে গেল। তুরা নিজেও চিন্তা করতে পারে নি যে এমন কিছু হচ্ছে। কারণ তারা এমন ভাবে মেসেজ করেছে যে বুঝার কোন উপায় ছিল না। তুরা কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে বলল-

“কাগজের কথা পরে ভাবা যাবে। তুই এখন কেমন আছিস সেটা আগে বল। এখন কোথায় আছিস আর মোবইল কোথায় পেয়েছিস।”

নিরা তুরাকে সবটা ঘটনা খুলে বলল। তোরা সবটা শুনে নিরাকে প্রথমে বলল-

“আগে তোর পাসওয়ার্ড বদলে ফেল।যাতে করে তোর আইডিতে যেন ঢুকতে না পারে। পাসওয়ার্ড বদলিয়ে আমাকে আবার কল দে।”

নিরা ফোনটা কেটে ফেসবুকে ঢুকে পাসওয়ার্ড বদল করল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here