বেলাদোনা (১৩)

0
233

#বেলাদোনা (১৩)

কারো সাথে কথোপকথন শেষ করে বড় বিল্ডিং টা থেকে চোরা ভঙ্গিমায় চলে এলেন মারিয়া। ভদ্র মহিলার শরীর থেকে ঘামের শীতল স্রোত নেমে যাচ্ছে বিরতহীন। দৃষ্টি অবনমিত রেখে হাঁটতে লাগলেন তিনি। বার বার রুমাল দ্বারা কপালের ঘাম মুছে যাচ্ছেন। বেকারি তে পৌছে অস্থির হয়ে গেলেন। ঢগঢগ করে শেষ করলেন কয়েক গ্লাস পানি।
” মারিয়া আন্টি! আপনাকে অসুস্থ লাগছে। আপনার কি হয়েছে। ”

” আমি ঠিক আছি বেলা। হেবা এসেছে কি?”

” না মা তো দুদিন পর থেকে আসবেন। চকলেট নিয়ে কাজ করছেন। ”

” আচ্ছা তুমি বসো আমি করছি সব টা। একটু লেট হয়ে গেল। ”

মারিয়া ভেতরে চলে গেলেন। বেলা যেন কিছু একটা ভাবছে। মারিয়া কে এমন চিন্তিত দেখায় নি কখনোই।

ক্রেতা আসাতে বেলার ভাবনা দীর্ঘ হলো না। বেলা এগিয়ে এলো ক্রেতার নিকট। ভদ্রমহিলা কে এক দেখা তেই চিনতে না পারলে ও পরমুহূর্তেই চিনে ফেললো। ওনি যে ইথানের মা! বেলার মাঝে সংকোচ নেমে এসেছে। বেলার এমন অবস্থা দেখে ভিকা বললেন–
” হোয়াট হ্যাপেন গার্ল! এনি থিংক ইলস?”

” স্যরি আন্টি। নো অল ইজ ওয়েল। ”

” ওকে সুইট হার্ট। আমাকে প্লাম কেক আর চিজ কেক পার্সেল করে দাও। ”

” জাস্ট আ মিনিট। আপনি বসুন আমি এখনি প্যাক করে নিয়ে আসছি। ”

বেলা চলে যেতেই ভিকা এক নজর বুলিয়ে বসলেন। খুব সুন্দর পরিপাটি বেকারি টা। মনে মনে তিনি কিছু একটা ভেবে ও বসলেন। সেই কারনেই বেলা পার্সেল দিতে এলে বললেন–
” তোমার মম কোথায় সুইট হার্ট?”

” সে বাসায় রয়েছেন। দুদিন পর আসবেন। ”

” ওও। তুমি কি আমায় ঠিকানা দিতে পারো? ”

বেলা দ্বিধায় পরে গেল। ভিকা সেটা বুঝতে পেরে বলল–
” ইটস ওকে সুইট হার্ট। আজ আমি আসি, পরে দেখা হবে। ”

ভিকা চলে গেলেন। বেলা কাজে ব্যস্ত হলো। সব টা কেমন যেন লাগছে তাঁর।

টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে এলেন হেবা। শরীর কাঁপছে ওনার। কপাল বেয়ে নেমে গেল স্রোত। মনে মনে প্রার্থনা করলো যাতে সব কিছু ঠিক থাকে। বেলা কে খুব ই ভালোবাসেন তিনি। বেলার জন্য দুনিয়া এফোর ওফোর করতে ও রাজি। ধীরে ধীরে কিছু দূর যেতেই একটা কালো মিশেলে রঙের অবয়বের দেখা মিললো। অবয়ব টি অনুসরণ করে কিছু দূর গেল। পর পর দুটো ঘরের কাছে এসে থমালেন তিনি। অবয়ব টির গাঁয়ে হাত ছোঁয়াতেই অবয়ব টি মিলিয়ে গেল। হেবা চারপাশে চোখ বুলিয়ে ডান পাশের ঘরে প্রবেশ করলেন।

বেলার সাথে এসেছেন ভিকা। ভদ্র মহিলা হেবার সাথে দেখা করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। বেলা একবার ভাবলো জানতে চাইবে পর মুহুর্তেই আর বললো না। কলিং চাপার পর ও ডোর খুললেন না হেবা। বেলার দিকে তাকিয়ে ভিকা বললেন–
” আর ইউ সিউর তোমার মম বাসায় আছেন। ”

” হ্যাঁ। না থাকার কোনো প্রশ্ন ই নেই। ”

বেলা আরো কয়েক বার কলিং চাপলো তবে কোনো প্রতিক্রিয়া এলো না। ভিকার একটা আর্জেন্ট কল আসায় ভিকা বললেন–
” সো স্যাড সুইট হার্ট। আমাকে যেতে হচ্ছে। আমি তাহলে এখন আসি, পরে কথা বলবো তোমার মায়ের সাথে। ”

” ওকে আন্টি। ”

ভিকা চলে গেলেন। বেলা আরো কয়েক বার কলিং চাপলো। উপায় না পেয়ে পেছনের দরজায় গেল। সেখানে ও কলিং চাপলো কোনো সাড়া নেই। চিন্তার এক পর্যায়ে বেলা ফোন করার সিদ্ধান্ত নিলো। ঠিক তখনি হেবা বেরিয়ে এলেন গার্ডেন এর দিকের দরজা দিয়ে। শীতল আবহাওয়া তে ও ঘেমে নেয়ে একাকার। বেলার সামনে যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বললেন–
” কখন এসেছো ফ্লাওয়ার। ”

” একটু আগেই এসেছি। মাত্র ই কল করবো বলে ভেবেছি। ”

” দুঃখিত ফ্লাওয়ার। আমি আসলে ওয়াসরুমে ছিলাম। ”

” ইটস ওকে। ”

” ভেতরে আসো। ”

বেলা কে বলে হেবা নিজেই ভেতরে চলে গেলেন। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি পান করে বললেন–
” এলিজা কে নিয়ে আসো নি? ”

” আমি তো আবার বেকারি তে যাবো। ”

” তাহলে এই অসময়ে এসেছো কেন? ঐ দিকে সব ঠিক ঠাক তো।”

” আসলে একজন তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। ”

” কে? ”

” একজন মহিলা। হয়তো কোনো দরকার হবে। ”

” কোনো নাম্বার দিয়েছেন? ”

” হ্যাঁ। ”

বেলা স্কার্ট এর পকেট থেকে কাগজ টা বের করে দিলো। হেবা সেটার দিকে এক বার চোখ বুলিয়ে বেলা কে বেকারি তে যেতে বললেন। বেলা সোজা বেকারির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

ভিকার সাথে কথা বলে খুশিই হলেন হেবা। এই সময়ে বিজনেস পার্টনার পাওয়া টা খুব ই দরকারি। দুদিন বাদেই চকলেট ডেলিভারি দেওয়া হবে পুরো দেশ জুড়ে। আর তারপর আরেক টা বেকারি তৈরি করা হবে। এর জন্য টাকা জায়গা সব ই প্রয়োজন। ভিকার দেওয়া প্রস্তাবে খুশি হলেন তিনি। মনে মনে ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানালেন এমন সুযোগ করে দেওয়ায়।

বেলার মন দুরু দুরু করছে। ভেতর টা কে ছিন্ন ভিন্ন করতে চায়। অসহ্য লাগছে সব টা। আকাশ টা মেঘলা হয়ে আছে। বেলা দ্রুত পা চালালো। যদি বৃষ্টি নেমে যায় তাহলে সত্যিই বিপাকে পরতে হবে। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বেলার ভাবনায় আসার সাথে সাথে মেঘ গর্জন তুলে বৃষ্টি নামিয়ে দিলো। বেলা আশে পাশে তাকিয়ে ছুটে গেল এক ছাউনি তে। আকাশ টা লাল হয়ে আসছে। ফোন ও নেই সাথে। ভারী চিন্তিত হয়ে বেলা যেই না নামতে যাবে ওমনি করে পেছন থেকে হাত আঁকড়ে ধরলো ইথান। শাসন করে বলল–
” পাগল নাকি? বৃষ্টির মাঝে নেমে যাচ্ছো হনহনিয়ে। বহু দিন পর বৃষ্টি এসেছে এই পানি ভালো নয়। শরীরে লাগলে রোগে আক্রান্ত হবে নিশ্চিত। ”

বেলা বিস্মিত কন্ঠে শুধালো–
” আপনি? এখানে কখন এলেন। ”

” আমি আশে পাশেই ছিলাম। তোমায় দেখে ছুটে এলাম। ”

” ওও। কিন্তু এখন বাসায় যাবো কি করে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি যে থামবে না বলে সংকল্প করেছে। ”

” অধৈর্য হইয়ো না বেলা। মাত্র ই তো বৃষ্টি এলো। একটু তো দেখো। ”

বেলার মুখ ভার। ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে এসে লাগে। তীব্র ভালোলাগা কাজ করে হঠাৎ। অধরের কোনে এক চিলতে হাসি এসে জুড়ে যায়। বেলার ভয় ডর সব লোপ পেয়েছে। পরিবেশ টা দৃষ্টিনন্দন করতে এক হাতে কিছু টা পানি নিয়ে বেলার দিকে ছিটিয়ে দেয় ইথান। মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলো। শীতল পানির স্পর্শে যেন মাদকতা মিশ্রিত। ইথান ছোট করে তাকালো বেলার পানে। সেটা লক্ষ্য হতেই বেলার বুকে ধিম ধিম আওয়াজ শুরু হলো। বেলা নজর সরালো। ইথান আবারো একি কাজ করলো। মেয়েটির মনোযোগ পাওয়ার আশায় তর মন যেন ছটফট করছে। বেলা এবার সত্যিই রেগে গেল। দু হাত ভর্তি পানি তুলে ইথানের মুখে ছুঁড়ে ফেললো। পরক্ষণেই খিলখিল করে হাসতে শুরু করেছে। ইথান মৃদু হেসে কাছে এগোলো। বেলা তখনো হাসি তে মজে। ওদের মাঝের দূরত্ব যখন কয়েক ইঞ্চি তখন মেয়েটির টনক নড়লো। ইথান এর চোখের আকর্ষণ বেলার অন্তরে নামিয়ে দিলো ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জে উঠা অনাকাঙিক্ষত বৃষ্টি। তাঁর ই সাথে মনে হলো কিছু অন্যায় হতে চলেছে। হাতের সাহায্যে ইথান কে আটকালো বেলা। এবার ইথান সত্যিই হেসে কুটি কুটি। মেয়েটির কপালে টোকা দিয়ে বলল
” ভয় পেয়েছো? ”

বেলা নিশ্চুপ। ইথান এবার নড়ে চড়ে উঠলো। বেলার থেকে দূরে সরে আবার হাসি তে মজে গেল। অনেক টাই বোকা বনে গেছে বেলা। মেয়েটির নাকের ঢগা লাল হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি নিজের দিকে নিতে ভাব নিয়ে বলল–
” আমি ভয় টয় পাই নি। শুধু আপনাকে

” শুধু আমাকে কি? ”

বেলার কথা হারিয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারে না। আসলে তো সে ভয় ই পেয়েছিলো। কিন্তু এ কথা স্বীকার করবে না কোনো মূল্যে। ইথান আবারো কাছে এসে দাঁড়ালো। বেলার শ্বাস ভারী হয়ে যায় যায়। হৃদপিন্ড ফাঁসের দড়িতে দাঁড় করানো যেন। ইথান আবারো হেসে কুটি কুটি। মেয়েটি কে লজ্জা দিতে ভালোই লাগছে।
বৃষ্টি কমে গেছে ততক্ষণে। তবে এখন যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বেলা কে একা ছাড়তে চাচ্ছে না ইথান। এই নিয়ে দুজনের মাঝে কিছু কথা হলো। অবশেষে বেলা নিজে ও অনুভব করলো একা যাওয়া রিক্স।

অনেকক্ষণ যাবত দুজনে হেঁটে চলেছে তবে কথা বলছে না। বেলা নিজ থেকেই প্রশ্ন করলো–
” এখানে কেন এসেছিলেন? ”

” প্রয়োজনে। ”

” কি প্রয়োজনে? ”

” আছে কিছু একটা। ”

” সেটা কি? ”

বেলার প্রশ্ন শুনে ইথান ঘুরে তাকালো। নিজ কার্যক্রম বুঝতে পেরে লজ্জায় পরলো বেলা। মাথা টা নিচু করে বলল–
” স্যরি। ”

” এখানে এসেছিলাম তোমার পিছু নিতে।”

” বুঝতে পেরেছি। আর মিথ্যে বলা লাগবে না। আমি আপনাকে সন্দেহ করি নি। ”

” সত্যিই তোমার পিছু নিতে এসেছি। ”

” হয়েছে। ”

ইথান গা দুলিয়ে হেসে উঠলো। বেলা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে হাঁটছে। বেলা কে বোকা ই মনে হয় ইথানের। সত্যি বলার পর ও বিশ্বাস করলো না। হাউ সুইট। এমন টাই হওয়া উচিত। ইথানের পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। এই না হলে জীবন।

পার্সোনাল আইডি
https://www.facebook.com/fatema.tuz.9469

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here