বেলাদোনা (১৬)

0
293

#বেলাদোনা (১৬)
#ফাতেমা_তুজ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে প্লেন টা ল্যান্ড করলো। বেলা তখন সিটে মাথা এলিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো থেকে থেকে পানি তে ভাসে। দীর্ঘ দিন যাবত মন খুলে কাঁদে না মেয়েটি। তবে এখন যে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। স্মিথ বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। হাল্কা মাথা ঘুরিয়ে তাকায় বেলা।
” প্লেন ল্যান্ড করেছে সুইট হার্ট। ”

” এটা কোন কান্ট্রি বাবা? ”

” বি ডি। ”

” ফুল মিনিং? ”

” বাংলাদেশ। ”

” আমি তো শুনি নি এই নাম। ”

” এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এটা। এখন চলো আমাদের লেট হচ্ছে।”

প্লেন থেকে নেমে বেলা চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলো। চারপাশে মানুষে কিলবিল করছে। এতো মানুষ কোনো ওকেশন ছাড়া এক সাথে দেখে নি বেলা। যাঁর ফলে ভ্রু দ্বয়ের মাঝের ভাগ কুঁচকে উঠলো। স্মিথ এর নিকট তাকালে দেখতে পেল লোকটার মাঝে বিরাজ করছে হাসি খুশি। বেলা নিচু হয়ে হাঁটতে লাগলো। কিছু মানুষ ওদের দিকে তাকাচ্ছে কেমন করে। ভীষণ আনইজি লাগছে ওর। স্মিথ সেটা লক্ষ্য করে বললেন
” ডোন্ট ওরি মাই ডিয়ার। ফরেনার দেখলে সবাই একটু অন্য ভাবে তাকায়। তবে এতে কিন্তু কোনো বাজে উদ্দেশ্যে থাকে না। ”

” হু। কিন্তু আমরা এই কান্ট্রি তেই কেন এলাম বাবা? ”

” বি কজ অন্য কান্ট্রির জন্য তোমার পাসপোর্ট তৈরি করা সহজ নয়। অনেক সময়ের ব্যাপার। আর তুমি তো জানো আমাদের কাছে সময় ছিলো না একদম। ওরা যে তোমার ক্ষতি করতে চায়। ”

আতঙ্কিত হলো না বেলা। বরং ওর মন টা ভীষণ ভাবে খারাপ হতে শুরু করেছে। চোখ টা বার বার পিট পিট করছে। সবাই কে ছেড়ে অজানায় থাকবে কি করে?

রোবট লুসি কে সাথে করে ইথান এসেছে আজ বেলার বাড়িতে। হেবা বার বার বাঁধা প্রদান করলে ও শুনছে না। অপর দিকে ইথান বেশ ক্ষিপ্ত ভাবে বলল–
” নিশ্চয় এই বাসা তে কোনো গন্ডগোল রয়েছে। আর সেই কারনেই আমাকে যেতে দিচ্ছেন না। আমি কিন্তু পুলিশের কাছে যাবো। ”

” সে তো আমি ও যাবো। আর তোমাদের মুখোশ খুলে ফেলবো এক টানে। ”

ইথান চুপ। হেবা নিজে ও আর কথা বলছেন না। ওরা দুজনেই জানে পুলিশের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশে যাওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। হেবা এবার গা ছেড়ে দিয়ে বসে পরলেন। এতো গুলো মানুষের সাথে তিনি একা পেরে উঠবেন না। ইথান আর রবার্ট দুটো লোক কে ইশারা করে স্টোর রুমে যেতে বললেন। রবার্ট নিজে ও তাঁদের পিছু পিছু গেল। শুধু গেল না ইথান।

” মিসেস হালদার তুমি কোন খেলা খেলছো বলো তো? ”

” খেলা আমি নই তুমি খেলছো। আগে বলো কেন মারতে চাও আমার মেয়ে কে।”

” সেটা তোমার না জানলে ও চলবে। এই বাড়িতে সুড়ঙ্গ তৈরি কেন করেছো? ”

” তোমাকে বলতে বাধ্য নই। ”

রেগে গেল ইথান। ভদ্র মহিলার মাথা ফাটিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো। তবে সেটা করার মতো উপায় নেই ওর কাছে। কতোক্ষণ পর ল্যাপটপ অন করলো। লুসি রোবট এর দ্বারা সব টা দেখতে পারছে ইথান। হেবা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ইথান চোখ না তুলেই বলল–
” সিট। লুকিয়ে লাভ নেই। ”

” লুকাচ্ছি না আমি। বরং তোমরা খেলা খেলেছো। যেই খেলা ধরে ফেলেছি আমি।”

বাকা হাসলো ইথান। হেবা মাথা ধরে বসে রইলেন। লুসি কে নিয়ে হেঁটে চলেছে রবার্ট। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। মাটির নিচে এমন সরু সুড়ঙ্গ তৈরি করা যে একদিনের কাজ নয় সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছে ইথান। রোবট টা অনেক টা দূর যাওয়ার পর দেখতে পেল রাস্তা আর নেই। ইথান হতাশ ভঙ্গিমায় তাকালো। হেবা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল–
” বললাম না আমি কিছু লুকাই নি। ”

” তবে কেন এই সুড়ঙ্গ তৈরি করেছো? ”

” সেটা তোমার না জানলে ও চলবে। বাসায় গিয়ে নাকে তেল দিয়ে রেস্ট নাও। খেলা ধরে ফেলেছি আমি। তোমার সাথে কে আছে সেটা ও আমি জানি। ”

চমচালো ইথান। হেবার মুখের কঠোরতা যেন ইথানের নিশ্বাস ভারি করে দেয়। ইথান ল্যাপটপ গুছিয়ে নিয়ে বলল–
” আমার সাথে যেই থাকুক না কেন। তবে জেনে রেখো তুমি গেইম হারবেই। আর এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইলো। মিলিয়ে নাও। ”

রবার্ট সহ সবাই কে আসতে বলে ইথান চলে গেল। মুখে যতোই বড় কথা বলুক না কেন ভেতরে ভেতরে বেশ চাপে আছে। এ খেলা সত্যিই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। না জানি কি হয়!

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসেছে বেলা আর স্মিথ। দুজনে এখন একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে। বেলা খুব অবাক হচ্ছে। স্মিথ কে দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘ দিন এ দেশে থেকেছে। বেলা প্রশ্ন করেই ফেললো। তবে স্মিথ বলল–
” আমি মাঝে মাঝে এসেছি বি ডি তে। তবে বেশির ভাগ সময় আমেরিকার অন্য কান্ট্রি তে জড়িবুটি নিয়েই গবেষণা করেছি। আর সেটা তো তুমি জানো। ”

” আমার ভালো লাগছে না বাবা। ”

” তুমি কি বিরক্ত আমার প্রতি? ”

” না। বিরক্ত কেন হবো! আমি আসলে এই চাপ নিতে পারছি না। ”

” কাম অন সুইট হার্ট। দেখবে এখানকার সবাই খুব ভালো। আসো আমার সাথে। ”

বাড়ি টা দোতলা। বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো। স্মিথ বেলা কে নিয়ে প্রবেশ করলো। একজন ভদ্রলোক এগিয়ে আসলেন। বয়স মাঝামাঝি বা তাঁর একটু বেশি হবে। সুঠাম দেহের অধিকারি। দেখে মনে হচ্ছে এক হাতে তিন চার জন কে কুপোকাত করে দিতে পারেন। একটু ভয় লাগলো বেলার। স্মিথ লোকটার সাথে হাত মিলিয়ে নিলো। পরে জানালো এই লোকটা স্মিথ এর দীর্ঘ দিনের বন্ধু।
” বেলা হাউ আর ইউ মাই চাইল্ড? ”

” ফাইন। ”

ছোট করে উত্তর করলো বেলা। ভদ্র লোকের নাম জুলফিকার লস্কর। নাম শুনেই বেলার চোখ চড়কগাছ। বেশ কয়েক বার চেষ্টা করে তারপর নাম টি উচ্চারণ করতে সক্ষম হলো সে। স্মিথ জুলফিকার এর সাথে কথা বলতে লাগলেন। জুলফিকার এর স্ত্রী লিমা এসে বেলার সম্মুখে দাঁড়ালেন। ওনার চোখ দুটো রসগোল্লার আঁকার ধারণ করেছে। পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বললেন–
” মাশআল্লাহ। মাইয়া দেহি রূপের বাহার লইয়া আইছে! এমন সুন্দর আমার চোখ আগে দেখে নাই। ”

ভদ্র মহিলার কথা শুনে বেলা হা করে তাকিয়ে রইলো। কি বলতে চাইছে কিছুই যেন মাথায় আসছে না। বেলার চাহনি দেখে লিমা বেগমের অবস্থার শোচনীয়। তিনি তাকালেন স্বামীর দিকে। অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে জুলফিকার বললেন–
” ও তোমার ভাষা বুঝবে কি করে? ”

” তাইলে আমি কেমনে বুঝামো ওরে। ”

” এখন যাও তো। ওরে ঘরে নিয়ে রেস্ট করতে দাও। ”

লিমা বেগম কথা বাড়ালেন না। ভেতরে ভেতরে বেলার সাথে কথা বলার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন তিনি। এমন সুন্দর মেয়ে তিনি জীবনে কখনোই দেখেন নি। চোখ দুটো যেন এক সমুদ্র মায়া দ্বারা গঠিত।

গরমে অভ্যাস রয়েছে বেলার। যদি ও এ বাড়ি তে এসি নেই তবে বেলার তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। ওর জন্য যে ঘর রাখা হয়েছে তাঁর ই পাশে রয়েছে বিশাল বড় নদী। জানালা খুলতেই সা সা গতিতে বাতাস এসে ঢুকে। আলো তে পরিপূর্ন ঘর টায় কোনো লাইট এর প্রয়োজন নেই। যদি ও তুলনামূলক ছোট ঘর তবু ও বেলার বেশ পছন্দ হয়েছে। দুপুরের খাবারের জন্য ডাকতে এলেন লিমা। তবে বেলা কিছুই বুঝতে পারছে না। অবশেষে লিমা মুখ টা ছোট করে হাত দিয়ে ইশারা করলেন। বেলা ফিক করে হেসে উঠলো। ভদ্রমহিলা বললেন–
” কি ঝামেলা কও তো মা। ইংরেজি না পারলে জীবনে বিরহের শেষ নাই। ”

” স্যরি! আপনি কি বললেন আমি বুঝি নি। ”

লিমা কিংবা বেলা কেউ কারো কথা বুঝতে পারলো না। দুজনে একি কথা বার বার বলে যাচ্ছে। বেলা হতাশ চোখ তাকিয়ে রইলো। লিমা ও বুঝতে পারলো বিষয় টা। হাতের ইশারায় খাবারে কথা বলে বের হলেন তিনি।

সেই যে সকালে স্মিথ কে দেখেছিলো বেলা তারপর আর দেখা হয় নি। বেলা চুপচাপ খেতে বসে পরলো। সব বাঙালি খাবার। বেলা অল্প অল্প করে খেলো। রান্নার স্বাদ বেশ ভালো। যদি ও এসবের নাম জানা নেই তবু ও খেতে দ্বিধা করলো না।

সন্ধ্যা হতেই বেলা নিজ রুম থেকে বের হলো। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো শাফায়াত। বেলা কে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। বেলা একটু আন ইজি ফিল করছে। কে জানে এই ছেলেটা ওর ভাষা বুঝতে পারবে কি না।
” হাই আম শাফায়াত লস্কর। ”

” হ্যালো। ”

” এনিথিং ইলস? ”

বেলা বুঝতে পারলো ছেলেটা ইংরেজি তে দক্ষ আছে। শ্বাস ফেললো বেলা।
” নো অল ইজ ফাইন। ”

” আপনি বোধহয় বিরক্ত হচ্ছেন এখানে। বসুন না প্লিজ। গল্প করলে ভালো লাগবে। ”

বেলা ভদ্রতায় বসলো। শাফায়াতের পাশে রাখা ছিলো ক্যারাম। সে খেলার জন্য অফার করলো। বেলা ও সায় জানালো। মুহুর্তেই দুজনের মাঝে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। মনে মনে স্বস্তি পেল বেলা। আর যাই হোক কাউ কে তো পাওয়া গেল যাঁর সাথে কথা বলা যাবে।

** আমার জানা মতে থ্রিলার কখনো গোছানো হয় না। এটা হলো ভীষণ ভাবে অগোছালো। কারণ এর প্রতি টি শব্দ মিথ্যে হয়। সর্বশেষ সত্য পাওয়া যায়। কাহিনী খুব ই ছোট তবে লেখা হয় প্রচুর। আর এটাই থ্রিলার। মানে আপনার মাইন্ড নিয়ে খেলা হবে। **

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here