বেলাদোনা (১৫) #ফাতেমা_তুজ

0
205

#বেলাদোনা (১৫)
#ফাতেমা_তুজ

তিন দিন পর
চোখ লাল করে ফেলেছে বেলা। হেবার শরীরের বিভিন্ন অংশ জুড়ে সাদা ব্যান্ডেজ করা। ডাক্তার বলেছেন গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। মানসিক ভাবে ও অনেক টাই অবসাদ। হেবা হালকা হাতে মেয়ে কে কাছে ডাকলেন। বেলা পাশে এসে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ভাঙা কন্ঠে বেলা বলল–
” তোমার সাথেই কেন এমন টা হলো মা? ”

” চিন্তা করো না। আম ওকে ফ্লাওয়ার। ”

” শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ডেজ আর তুমি বলছো তুমি ওকে? ”

” কষ্ট পেও না বেলা। তুমি যে আমার অন্তরের সবথেকে সুন্দরতম অংশ। ”

” মা। ”

আবেগ ধরে রাখতে পারছে না বেলা। হেবা হালকা হাতে হাত বুলিয়ে দিলেন। ভাঙা কন্ঠে বললেন–
” একটা কথা রাখবে ফ্লাওয়ার? ”

” হ্যাঁ বলো। ”

নাক টেনে উত্তর করলো বেলা। হেবা কিছু টা সময় নিয়ে বললেন
” তোমাকে দেশ ছাড়তে হবে ফ্লাওয়ার। ”

” মানে! ”

” আমার কথা শোনো ফ্লাওয়ার। যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আজ ই দেশ ছাড়বে তুমি। ”

” কেন? ”

” তোমার সামনে বিপদ ফ্লাওয়ার। আমি চাই না তোমার কিছু হোক। তোমার ক্ষতি আমি মেনে নিতে পারবো না। কোনো ক্রমেই সম্ভব না। ”

” কিসের কথা বলছো তুমি। ”

বেলা যেন আকাশ থেকে পরেছে। হেবা কথা বলতে পারছেন না। বার বার শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। বেলা ব্যস্ত হয়ে পরলো। হেবা তাগাদা দিয়ে বললেন
” বাইরে মারিয়া আছে। তোমাকে স্মিথ এর কাছে পৌছে দিবে। সময় নষ্ট করো না ফ্লাওয়ার। ”

” বাবা! কখন এলেন তিনি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না মা। সব টা গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ”

” বলবো বেলা। এখন যাও প্লিজ। ”

হেবার কষ্ট হলে ও তিনি উঠে বসলেন। দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই একদম। বেলার চোখ থেকে অজস্র ধারায় শীতল জল গড়িয়ে পরছে। মারিয়া আসতেই হেবা বললেন
” আমার আমানত রক্ষা করার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম মারিয়া। ”

” আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো হেবা। ”

বেলা কে টেনে নিয়ে গেল মারিয়া। মেয়ে টা যেন আকাশ থেকে পরেছে। হাসপাতালের অন্য গেট দিয়ে বের হলো ওরা। মারিয়া একটা গাড়ি তে উঠিয়ে নিজ থেকেই ড্রাইভ করতে লাগলেন। পথিমধ্যে বাঁধা হলো ইথান। মারিয়ার হাত কাঁপছে, চোখ বন্ধ করেই তিনি গাড়ি চালানো শুরু করলেন। ইথান সময় মতো সরে না গেলে আজ রক্ষা ছিলো না। হেলমেট লাগিয়ে ইথান আবার পিছু নিলো। বেলা নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে। ওর মগজে কিছু আসছে না। সব কেমন ঘোলাটে!
কয়েক মিনিটের মাঝেই নাগাল পেয়ে গেল ইথান। মারিয়া আর্তনাদ করে বলল
” পালাও বেলা, পালাও। ”

” মারিয়া আন্টি! ইথান আমার বন্ধু। পালাবো কেন? ”

” ও তোমার বন্ধু নয় বেলা। ও একটা শয়’তান। ”

বেলা প্রগাঢ় দৃষ্টি তে তাকালো। ইথান ধেয়ে আসছে ওদের দিকে। বেলার হাত কাঁপছে। তবে সত্যিই কি ইথান? বেলা আর ভাবতে পারছে না। দূর থেকে ইথান কিছু বলছে তবে বেলার কানে সেটা আসছে না। মারিয়া ঠিকানা হাতে দিতেই বেলা ছুট লাগালো।

ভরা জঙ্গলের স্তূপে এসে থেমে গেল বেলা। সারা শরীর তীর তীর করে ঘামছে। চোখ দুটো বিচলিত। অনুভূতি শূন্য। সব টা মিথ্যে, এই সব কিছু মিথ্যে। চিৎকার করে ক্লান্ত হয়ে গেল বেলা। ইথান সম্পর্কে আর ভাবতে পারছে না। দীর্ঘ কয়েক মাসে জমায়েত হওয়া অনুভূতি মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। বেলার জীবন টা ফুলে নয় বরং কাঁটায় সজ্জিত!

মারিয়া এসে বসলো পাশে। হেবা ধীরে ধীরে ব্যান্ডেজ গুলো খুলে ফেললেন। মারিয়ার চোখ দুটো ছলছল করছে। হেবা শান্ত গলায় বললেন
” এছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না মারিয়া। যে করেই হোক ঐ শ’য়তান টার হাত থেকে বেলা কে রক্ষা করতেই হবে। ”

” কিন্তু হেবা, আমরা

” স্মিথ এর কাছে ভালো থাকবে বেলা। আমাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম কখনোই পানি তে যাবে না। বেলা কে রক্ষা করতে হবে আমাদের। চিন্তা করো না ঐ ছেলে টা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

মাথা নিচু করে রইলেন মারিয়া। হেবা কে দেখে খুব ই স্বাভাবিক লাগছে। যেন কতো দিন পর আজ মাথার বোঝা নেমেছে। এক টা কথা বলতেই হয় হেবার অভিনয়ের দক্ষতা স্টার দের ও হার মানায়। দীর্ঘ তিন দিনে এমন ভাবে হসপিটালে ছিলো যেন সত্যিই অসুস্থ। অথচ সকল কে ফাঁকি দিয়ে তিন দিনে বেলার সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।

শুভ্র সকালে মারিয়ার দেওয়া ঠিকানায় পৌছালো বেলা। স্মিথ সেখানেই উপস্থিত ছিলো। বেলা কে দেখে এগিয়ে এলেন। আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন।
” মাই সুইট হার্ট। তুমি ঠিক আছো? ”

” ঠিক আছি বাবা। আমার মাথা কাজ করছে না। ”

” ভয় পেও না বেলা। তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না আমি। ”

” তবে সত্যিই ইথান–

শিউরে উঠলো বেলার দেহ।স্মিথ মেয়ে কে আগলে নিলেন মোলায়েম হস্তে। বেলা চোখ বুঁজে সব টা বোঝার চেষ্টা চালালো। কিছু তেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

সকাল নয়টা বাজতেই বেলা আর স্মিথ ফ্লাইটে চরে গেল। বেলা জানে না কোথায় গন্তব্য। বুক টা হু হু করছে কেবল। আনমোনা হয়ে সব টা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ করছে নিজের সাথে।

শক্ত পোক্ত দেয়ালে আঘাত করলো ইথান। এতো দ্রুত খেলা পাল্টে যাবে বুঝতেই পারে নি। হেবা অত্যন্ত ধূর্ত!
ইথানের সহযোগী বুলেট। বন্ধু ও বটে। সার্বক্ষণিক ইথানের সাথেই ছিলো। এই সমস্ত প্ল্যানের সহযোদ্ধা। বুলেট ধীর স্বস্তে ইথানের বাহু তে হাত রাখলো।
” ভেঙে পরো না ইথান। স্মরণে রেখো কঠিন কাজ সহজে হয় না। ”

” এতো সহজে হেরে যাবো ভাবতে পারি নি বুলেট। একটুর জন্য বেলা কে ধরতে পারি নি। এখন কি জবাব দিবো আমরা? ”

” এতো ভেবো না। ওরা খুব ভালো করেই জানতো তুমি জেনে যাবে বিষয় টা। সেই কারনেই বেলা কে সরিয়ে দিয়েছে। এর পেছনে ও কারণ রয়েছে নিশ্চিত। ”

” কিন্তু মারিয়া আমাদের সাথে প্রবঞ্চনা করেছে বুলেট! ”

বুলেট গা দুলিয়ে বসলো। একটা কলম হাতে নিয়ে খাতায় কিছু লিখলো। তারপর বলল–
” মারিয়া কে ব্যবহার করা হয়েছে কেবল। যেমন টা আমরা করেছিলাম। আমাদের চাল টাই খুব নিখুঁত ভাবে ঘুরিয়ে গ্রহন করেছেন হেবা। ”

” কি বলতে চাচ্ছো? ”

” ক্যাথি কে কিডন্যাপ করে মারিয়ার থেকে সত্য জেনেছি আমরা। বেলা যে হেবার সন্তান নয় সেটা বাহিরের মানুষ বলতে কেবল মারিয়াই জানতেন। আর একি ভাবে ক্যাথি কে বাঁচানোর লোভ দেখিয়ে মারিয়া কে দিয়ে কার্য হাসিল করেছেন হেবা। অথবা ভয় দেখিয়ে কাজ সম্পূর্ন করেছে। ”

ইথান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওর দৃষ্টি বার বার বদলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব বড় ভুল হয়ে গেল। সামনে কি হতে চলেছে? এতো সব ভাবতে পারলো না ছেলেটা। শরীর টা এলিয়ে দিলো কাউচে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বিফলে যেতে দেওয়া যায় না! বেলা কে খুঁজে বের করতেই হবে আর তাঁর পূর্বে জানতে হবে রহস্য। যা রয়েছে হেবার নিকট।

হেবা যেন ইথানের জন্য ই অপেক্ষা করছিলো। বেকারি থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো পাশাপাশি। একদম ই স্বাভাবিক তাঁর অঙ্গভঙ্গি।
” কাজ টা ঠিক করলে না হেবা। বলো বেলা কে কোথায় পাঠিয়েছো? ”

” হা তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। তবে মগজ টা একটু বেশিই অশান্ত। ”

” ভালো চাইলে ক্লিয়ার করো সব টা। না হলে আমি আঘাত করতে সংশয় করবো না। ”

হো করে হেসে উঠলেন হেবা। ইথানের ললাটে অন্যরকম রেখা চলে এসেছে। হাসি থামিয়ে একটু শান্ত হলেন।
” তুমি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ছেলে। সেটা তোমার সিডিউল এ নেই।”

” একটু বেশিই কনফিডেন্স মনে হচ্ছে। পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। ”

” আগে নিজের কথা ভাবো ছেলে। তোমার কি হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করো। আর সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও।আচ্ছা তোমার পরিচয় টা কি?
ড্যানি আর তোমার সম্পর্ক টা কিন্তু আমার কাছে রহস্য। কি বলো? ”

” মিসেস হালদার আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করছেন আপনি। মাথায় রাখবেন আমি একা নই আমার সাথে আরো–

ইথান একটু থামলো। চোখ মুখ শক্ত করে বলল–
” মনে হচ্ছে আপনি নিজেই তো বেলার ক্ষতি চান। ”

কটাক্ষ চোখে তাকালেন হেবা। ইথানের চোখে মুখে বিরক্তি। নিজেকে ধাতস্থ করে হেবা বললেন–
” আমার মেয়ে সম্পর্কে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। আর আমাকে ক্ষতি লাভ বোঝাতে এসো না। আমি কিছুতেই আমার বেলার দিকে তোমাদের শকুনি দৃষ্টি পরতে দিবো না। ”

” খেলার চাল সব সময় এক দিকে যায় না মিসেস হালদার। বেলা আপনার মেয়ে নয় এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। ”

” কি বলতে চাচ্ছো তুমি? ”

ব্যাগ থেকে নীল রঙের ডায়েরী টা বের করলো ইথান। রোবট লুসি কে দিয়েই এই ডায়েরী নিয়েছিলো সে।হেবা একটু ও চমকালেন না। বরং অত্যন্ত শীতল ভঙ্গিমায় ইথানের দিকে তাকালেন। ইথান ডায়েরী উল্টে পাল্টে বলল–
” এতে স্পষ্ট লিখা আছে বেলা একজন মুসলিম। ”

” বেলার আমার ই মেয়ে। একটা ডায়েরী কোনো কিছুর বদল ঘটাতে পারবে না। ”

” হু সেটাই। আর সুড়ঙ্গ নিয়ে আপনার কি মতামত? এটা কে কোন চালে খাটাতে চাচ্ছেন। নিয়মিত সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেন ই বা কেন! এসবের যথোপযুক্ত উত্তর আশা করছি আপনার নিকট রয়েছে। ”

** পাঠক রা গঠনমূলক মন্তব্য করুন। **

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here