#বেলাদোনা (২০)
#ফাতেমা_তুজ
চোখ মুখ খিচে আছে বেলা। ইথান সরে এসেছে ওর থেকে। মেয়েটির শ্বাসের গতি কম হলে ও ইথানের শ্বাস বেড়েছে কয়েক গুন। বার বার শুকনো ঢোক গিলে। ললাট খানা ঘামে চুপচুপ। এভাবে অযাচিত অস্থিরতা যেন ভাবনার অতীত! বেলা এবার চোখ খুলে। ইথানের দিকে তাকিয়ে বলে–
” মুক্তি দিন আমায়। আর জ্বালাবেন না প্লিজ। ”
” আমি তোমায় বন্দি করে রেখেছি বেলা?”
বেলা চমকালো। সত্যি ই তো ইথান ওকে বন্দি করে রাখে নি। তবে কিসের মুক্তি চাইলো সে?
” বিয়ে করছো শুনলাম। তা ও বাঙালি আবার মুসলিম ছেলে! ”
” কারন আমি — ”
” থামলে কেন?বলো কি। ”
” কিছু না। চলে যান আপনি। শাফায়াত এসে পরলে সমস্যা। ”
” ভয় পাচ্ছো? ”
” কেন? ভয় কেন পাবো? ”
একটু হাসলো ইথান। বেলার নিকটে এসে নাক ছুইয়ে দিলো।
” বললাম তো স্পর্শ করবেন না। ”
” স্পর্শ কোথায় করলাম বেলা। আজ বাদে কাল তো তোমার বিয়ে। একটু কাছ থেকে অনুভব করতে দাও প্লিজ। ”
” ছিইই। ”
” ছিইই কি জিনিস? হোয়াট কাইন্ড অফ ল্যাঙ্গুয়েজ? ”
” নাথিং। আপনি যান এখন। ”
” তুমি খুব স্বাভাবিক বেলা। আমায় দেখে ভয় পাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তুমি ভয় পাচ্ছো না। রহস্য কি বলো তো? ”
ভরকালো বেলা। একটু দূরত্ব নিয়ে বলো–
” কোনো রহস্য নেই। সরুন বলছি। ”
” সরেই তো আছি। ”
চুপ থাকলো বেলা। বিরক্ত হচ্ছে ঠিক তবে পা চলছেই না। ইথান পাশ ঘুরে পাইন গাছ টার দিকে তাকালো। সা সা গতিতে বহিছে হাওয়া। ভালো লাগছে। বোধহয় বৃষ্টি হবে। হলে অবশ্য মন্দ হয় না। আবহওয়া অনুভবের অদম্য শক্তি যেন ইথান কে প্রাণ ভরে দিয়েছে অসীম শক্তির এক মাত্র সৃষ্টিকর্তা। সত্য ই বৃষ্টি এলো। বেলা চলে যেতে চাইলে আটকালো ইথান। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে মুখ গুজে দিলো গলায়। শ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন। গলা কাঁ’টা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলো মেয়েটি। অবশ্য এর মাঝে বার কয়েক ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা ও করলো। তবে লাভের লাভ শূন্য। কয়েক সেকেন্ড সময় ব্যয় করে ইথান আরো চেপে ধরলো। গালে চিকন নাক টা ঘষতে ঘষতে বলল–
” স্থির থাকো বেলা। আমি তোমায় অনুভব করবো। ”
” কি ধরনের অসভ্যতামু ইথান? আপনি এতো খারাপ! ”
দাঁত কিড়মিড় করে বললো বেলা। ইথান নড়লো না এক চুল। মেয়েটির স্কাফ টেনে ফেলে দিলো। বৃষ্টির পানি তে কোমর অব্দি চুল গুলো ভিজে একাকার। থেকে থেকে কালো সোনালি রঙা চুলের ধার বেয়ে নামছে টপটপ করে স্বচ্ছ জল। ইথানের শরীরের উষ্ণতা বেলা কে স্পর্শ করে। ফিস ফিস করে ইথান বলে —
” প্রিয় বেলা তোমার সোনালি কেশে কত ছেলের হৃদয় যে থমকে যেত তুমি কল্পনা ও করতে পারো না। ”
স্বীয় কক্ষে এসে বেলা দরজা বন্ধ করে দিলো। ইথানের বলা ঘোর লাগা কথা গুলো কেমন যেন উন্মাদ করে দেয় ওকে। মাথা চেপে ধরে বেলা বসে পরলো বেডের এক কোনে। শরীরে ভেজা কাপড়। কিচ্ছু ঠিক লাগছে না বেলার। চোখ দুটি ভিজে যাচ্ছে হুট হাট। দরজায় নক পরলো। বেলা ভাঙা কন্ঠে বলল–
” কে? ”
” আমি বেলা। তুমি এখন এলে ছাদ থেকে? ”
” হু। ”
” ভিজে গেছো নিশ্চয়ই। ”
” হু। ”
” দ্রুত চেঞ্জ করে নাও। আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। ”
” ঠিক আছে। ”
ওয়াসরুম থেকে চেঞ্জ করে এসে আয়নার সামনে দাড়ালো বেলা। মাথায় স্কাফ নেই। খোলা চুল বেয়ে টপ টপ করে ঝরছে পানি। নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হলো।এতো সুন্দর কোনো মানুষ হয়?
চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে শাফায়াত শুধালো–
” মন খারাপ তোমার? ”
” কই না তো। ”
” মুখ টা ওমন লাগছে কেন? ”
” এমনিই হয়তো। ”
” আচ্ছা শোনো, যা বলতে এসেছিলাম আমরা তাহলে এ মাসেই বিয়ে করছি। মা বললো বাবা চাচ্ছেন যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ে টা করিয়ে দিতে। ”
” হু। ”
” আচ্ছা তাহলে কাল শপিং করতে যাই কি বলো? ”
” হু। ”
চায়ের কাপ রাখলো শাফায়াত। বেলা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল–
” কি হয়েছে বেলা? ”
” না না কিছু না। আমি ঠিক আছি। ”
” সত্যি তো? ”
” একদম। ”
বেলার কপালে চুমু আকলো শাফায়াত। মেয়েটিকে দু হাতে আগলে রাখতে মন চায় সব সময়। শাফায়াত সব সময় অনুভব করে বেলার জন্য এ বুকে মধ্যে অনেক জায়গা।
শপিং করতে ঢাকা শহরে যাবে। রিমা বেগম সকাল থেকেই করেছেন নানান আয়োজন। বেলা কে নিজের ছেলের থেকে বেশি ভালোবাসে যেন। বেলা নিজে ও ভদ্রমহিলার সাথে জড়িয়ে গেছে আগা গোড়া। স্মিথ ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়েছেন। হয়তো বা দেশের বাহিরেই গিয়েছেন।
” বেলা কে দেখে নিয়ে যাবি বুঝেছিস? ”
” আচ্ছা। ”
” আর রাস্তায় খাবার খেয়ে নিবি। মেয়েটা ঝাল খেতে পারে না।মরিচ দেখে দিবি। ”
” আচ্ছা দিবো। ”
” রাস্তা ঘাটে সাবধান। ”
” বুঝলাম তো। ”
” মনে করে বেলার জন্য স্লিপার আনবি। ”
” আহ রিমা। বের হওয়ার আগে কথা কম বলো। যাচ্ছে এক জায়গায়। ”
রিমা বেগম স্বামীর কথা কানে নিলেন না। ছেলে কে বুঝ দেওয়া হলে বেলার কাছে এলেন। তবে ঐ যে ভাষাগত সমস্যা! শাফায়াত এসে পাশে দাঁড়ালো।
” বলো আমি সব বুঝিয়ে দিচ্ছি। ”
প্রায় দশ মিনিট বেলা কে বুঝ দিয়ে ক্ষান্ত হলেন রিমা বেগম। জুলফিকার সাহেব স্ত্রী কে ধমকালেন। বড্ড চিন্তা করেন এই মহিলা।
ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে গাড়ি পার্ক করলো ইথান। সাথে রবার্ট ও রয়েছে।
” বেলা কে ভালোবাসি রবার্ট। বুঝতে পেরেছো বেলা কে ভালোবাসি আমি। ”
” ইথান! তুমি ভুলে যাচ্ছো আমরা বেলা কে তুলে নিতে এসেছি। ”
” ভুলে যাও সেসব। বেলা শুধুই আমার। আমি তাকে কিছু হতে দিবো না। ”
রেগে গেল রবার্ট। বললেই হলো? আজ এতো গুলো দিন ধরে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে আজ বলে সব বাদ। পকেট থেকে রিভলবার বের করতেই ইথান গা দুলিয়ে হাসলো।
” আমাকে শেষ করার আগে তোমাকে শেষ হতে হবে রবার্ট। ”
বুলেট কে দেখে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো করে শ্বাস নিলো ইথান।
” তোমাকে দেখে ভালো লাগছে ইথান। ”
” তুমি তো আমার প্রাণ ই ফিরিয়ে দিলে বুলেট। ”
” রবার্ট কে দেখছি না? ”
” সে আমার সিদ্ধান্ত কে অগ্রাহ্য করেছে। আর তাই– ”
” ক্লোজ দ্যা ম্যাটার। আমি ও চাই বেলা কে নিয়ে ভালো থাকো তুমি। ”
বুলেট কে জড়িয়ে নিলো ইথান। একে অপর কে আলিঙ্গন শেষে ইথান বলল
” আমাদের কিছু করতে হবে বুলেট। বেলার সাথে অন্য কারো বিয়ে হতে চলেছে। আমি সেটা মানতে পারবো না। ”
” আগে বেলা কে বোঝাতে হবে। ”
” কিন্তু কি করে? ”
” তোমার অনুভূতি তো জানাও তাকে। ”
” যদি না মানে। ”
” থিংক বি পজিটিভ ইথান। ”
সরল চোখে তাকালো ইথান। বেলার জন্য বুকের ভেতর খা খা করছে। মাছ যেমন জল ছাড়া অস্তিত্ব হীন ইথান ও বেলা কে ছাড়া তেমন।
শপিং করা প্রায় শেষ। শাফায়াত আর বেলা যেহেতু মুসলিম সেহেতু সমস্ত টা মুসলিম দের বিয়ের মতোই হবে। সেই অনুযায়ী সমস্ত কস্টিউম কিনেছে শাফায়াত। বিয়ের বেনারসি টা ও কেনা হয়েছে টকটকে লাল রঙে। খ্রিষ্টান রা সচরাচর হালকা রঙ তথা সাদা রঙে বিয়ে করে। তবে বেলা যদি ও দীর্ঘদিন খ্রিষ্টান দের মতো করে থেকেছে তবু ও লাল রঙ এর বেনারসি কেনা হলো। বউ ভাত এর জন্য নেওয়া হলো গাঢ় পার্পল রঙের লেহেঙ্গা। সব মিলিয়ে বাঙালি বিয়ের আয়োজন।
” বেলা, বেলা, লাল রঙ নিয়েছি বলে রাগ করেছো? ”
” উহু। লাল রঙ তো খুব সুন্দর। ”
” বাঁচালে। আমি ভেবেছিলাম তুমি রাগ করেছো। ”
মৃদু হাসলো বেলা। শাফায়াত বিল পে করতে যেতেই পেছন থেকে এক হাত ওকে আঁকড়ে নিলো।ইথান কে দেখে ও কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না বেলা।
” কিছু কথা ছিলো বেলা। ”
” বলেন, শুনছি তো। ”
” এখানে নয়। ”
” না এখানেই বলতে হবে। ”
” প্লিজ বেলা। ”
” আমাকে মা’রার প্ল্যান করেছেন? ”
” সব সময় কেন এমন ভাবো বলো তো! ”
” মিথ্যে বুঝি? অস্বীকার করবেন আপনি আমাকে মা’রতে চান নি? বলুন, বলুন না। ”
” মানছি আমি, তবে সত্যিই আমি– ”
” সত্যি কি? ”
ইথানের রগ জেগে উঠলো। ম্যাও ম্যাও করে উঠলো লুসি। বিড়াল টা কে বুলেট এর কাছে রেখে এসেছিলো। বেলার রাগ হলো। লুসি বার বার ওর কোলে উঠতে চাইছে।
” আপনার বানানো রোবট বিড়াল? ”
” বেলা ”
” আই হেইট লুসি ক্যাট। বুঝতে পেরেছেন। আই হেইট অলসো ইউ। ”
বেলার চিৎকারের লুসি থেমে গেল। বড় বড় পা ফেলে চলে গেল বেলা। ইথানের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ইথান লুসি কে ফেলেই চলে যাচ্ছিলো। তবে কি মনে করে যেন ফিরে এলো। লুসি একদম চুপ হয়ে গেছে। কোলে তুলে নিলো ইথান। আলতো হাতে হাত বুলালো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এটা সত্যিই লুসি।
** পাঠক দের মন্তব্য চাচ্ছি। **
চলবে