#বেলাদোনা (২২)
#ফাতেমা_তুজ
ধবধবে সাদা মুখাশ্রি। এমন উজ্জ্বলতা সচরাচর চোখে আসে না। বেলার মুখে কোন মায়া লেপন করেছেন সৃষ্টিকর্তা! চুল গুলো দূর্বল করে দেয় ইথান কে। এমন ধারার চুল কোনো মানুষের হয় নাকি? ছবি টা বহু দিন পূর্বের। তখন হয়তো বেলা অষ্টম কি নবম শ্রেণির ছাত্রী। চোখে মুখে কিশোরী ভাব। বেশ নতুনত্ব জেগেছে মাত্র। ইথান তাকিয়ে থাকে বেশ অনেক টা সময়।এই ছবি টা পেয়েছে বেলার ঘর থেকে। হেবা নাকি দেশ ছেড়েছেন কিছু দিন আগে। কোন দেশে গিয়েছে তা জানা নেই। জানবেই বা কি করে? নদী পথে পলায়ন করেছে যে। ইথান চোখ মেলে তাকায়। চার পাঁচ বছর পূর্বে ও বেলা মাথায় স্কাফ পরে নি। হঠাৎ কি এমন ঘটে যাতে নিত্য সঙ্গী হয় স্কাফ। তাছাড়া কোন কারনে বেলার আসল পরিচয় সকলের সামনে আসে? ষোলো বছর যখন লুকিয়ে রেখেছিলো বিষয়টা তখন তো বেলা নিজেকে খ্রিষ্টান বলেই জানতো। হাজার হাজার প্রশ্ন আসে মন পাজরে। তবে উত্তর নেই কোনো টির। প্লেন এসে ল্যান্ড করে বাংলাদেশের মাটি তে। বুক পকেটে ছবি টা লুকিয়ে রাখে ইথান। বড় অদ্ভুত লাগে সব। বুলেট এসে থামলো ইথানের নিকট। ব্যাগ পত্র নিয়ে নেয় নিজের হাতে। হাসে ঠোঁট বাকিয়ে।
” কয়েক দিনে সুন্দর হয়ে গেছো ইথান। ”
” তোমার ভ্রম সেটা। আমি আগের মতোই আছি। ”
” সত্যি বলছি। হয়তো এ দেশের গরম আবহওয়া তোমার সৌন্দর্য্যে প্রভাব ফেলেছিলো। ”
” আচ্ছা শোনো, বেলার সাথে যোগযোগ করতে পেরেছিলে? ”
” না। ও বাড়ি তে যাওয়া হয় নি আর। এতো চাপ কি বলবো। ”
” ঠিক আছে। তুমি গাড়ি নিয়ে এসো। ”
বুলেট চলে গেলে ইথান নিজের সিম কার্ড ফোনে লোড করলো। তারপর কল দিলো বেলার ফোনে। নাম্বার টা বন্ধ বলছে। দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে ইথান। বেলার সাথে দেখা করা আজকাল মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তবে নিজেকে প্রমান না করে হাল ছাড়বে না। কিন্তু প্রমান করবে যে সে সময় ই বা কোথায়!
গাড়ির গতি মাঝামাঝি। এসি অন। তবুও ঘামছে ইথান। কপাল বেয়ে নেমে যাচ্ছে সেই নোনা জল। বুলেট এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। কয়েক মুহূর্ত পর ঠান্ডা হলো শরীর। ইথান নড়ে চড়ে বসে। বুলেট তখন মনোযোগ হারিয়েছে।
” সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করো। আমি ঠিক ই আছি। তুমি টেনশন করো না আর। ”
” কিছু বলতে চাই ইথান। ”
” বলো। ”
সিটে মাথা এলিয়ে বসে ইথান। এক হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে।
” হেবা, স্মিথ সবাই কে চেপে ধরলে হয় না? ”
” বোকার মতো কথা বলো না বুলেট। তুমি জানো এটা সম্ভব না। ”
” চাইলেই সম্ভব। তুমি একটু ভেবে দেখো।সব টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ”
” আমি ভাবতে চাই না। ”
” ঠিক আছে। তো এখন কি করবে?”
” জানি না। শুধু জানি বেলা কে চাই আমার। আই লাভ হার। ”
বুলেট নিশ্চুপ। ইথান ধরমরিয়ে উঠে বলল ” আচ্ছা বুলেট আমরা তো এডাল্ট। হেবা, স্মিথ ব্লা ব্লা যেই হোক না কেন, কারো অধিকার নেই আমাদের মাঝে আসার। এখন শুধু বেলা। ”
” বেলা কে মানাতে পারবে? না পারলে এতো সহজ ভেবো না। হাতে সময় নেই ইথান। ”
” হুম। গাড়ি পার্ক করো। ”
” কেন? ”
” গাড়ি পার্ক করতে বলেছি। ”
সাইট করে গাড়ি রাখে বুলেট। ইথান নেমে যায়। বুলেট নামতে চাইলে বাঁধা দেয়।
” তুমি যাও আমি আসছি। ”
” কিন্তু ইথান। ”
” আমি একা থাকতে চাই বুলেট। ”
” এই জায়গা টা সেফ না। ”
” জানি। ”
” নিজের খেয়াল রেখো ইথান। সময় কিন্তু তোমার ফর এ নয়। ”
” কল করলে গাড়ি পাঠিয়ে দিও অথবা নিজেই এসো। ”
সামনে যেতে লাগলো ইথান। টলটল করছে দীঘির জল। সুন্দর চাঁদ টা আলো ফেলেছে সেই পানিতে। কি সুন্দর বাকিয়ে বাকিয়ে প্রবাহিত হয় পানি। মনোরোম নজর কাড়া দৃশ্য উপভোগ করতে চায় ইথান। সব সৌন্দর্য্য সবার জন্য না। ইথান কে বিমোহিত করলে ও মনের শান্তি দিতে পারছে না এই প্রকৃতি। ওর সকল চিন্তা চেতনার একটাই কথা, নিজের জন্য চাই বেলা কে। শুধুই বেলা কে। যাকে বহু দিন আগেই অজান্তে অষ্টাঙ্গে ভালোবেসে ফেলেছে।
বেলা কে পুরো বাড়ি খুজে অস্থির হয়ে পরলেন রিমা বেগম। দুঃখে ওনার কান্না আসে। ছেলের বউ করার আগেই তিনি পাগল হয়ে গেছেন। মেয়েটা কে দেখলে কেমন মায়া হয়। সরল মনের মানুষ। তবে এই সরলতা কে চোখে দেখেন না স্বামী জুলফিকার সাহেব। ভদ্রলোক মনে করেন রিমা বেগম অকর্মা। তাই জীবনের কোনো সিদ্ধান্তে তিনি রিমা বেগম কে সাথে নেন না। রিমা বেগম চিন্তিত মনে কাজ করছেন আর ভাবছেন বেলার কথা।
” এদিকে আসো রিমা। ”
” জী, বলো। ”
” বসো পাশে। ”
রিমা বসলেন। আবার চিন্তায় বুদ হলেন। জুলফিকার সাহেব একটু কেশে মনোযোগ নিলেন।
” শোনো, বেলার মা হেবা বিয়ে তে উপস্থিত থাকবেন না। তবে মিস্টার স্মিথ থাকবেন। আর বিয়ে তে বেলার মা কে নিয়ে কোনো কথা বলবে না তুমি। ”
” সেকি কথা। বিয়ে তে থাকবেন না কেন?এটা টা শুভ নয়। ”
” বাদ দাও সেসব। এমনি তে ও ওনারা তো বেলার নিজের বাবা মা নয়। ”
” তাতে কি? এতো দিন যাবত নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করেছেন। মেয়েই তো। এই ভালোবাসা কজন দিতে পারে। আমি বলি কি বিয়ের ডেট না হয় পিছিয়ে দাও। ”
জুলফিকার সাহেব গম্ভীর মুখে উত্তর করলেন–
” বিয়ে পিছিয়ে নিলে আরেক সমস্যা। যা বলছি তাই যেন হয়। ”
” জী। ”
রিমা বেগমের মনক্ষুন্ন হলো। তবে সে সময় দীর্ঘ হলো না বেলা আর শাফায়াত কে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে। তবে মেয়ে টা শাফায়াতের সাথেই ছিলো। রিমা বেগম এক নজরে তাকালেন। বড় মিষ্টি দেখাচ্ছে দুজন কে।
” শুভ সন্ধ্যা আঙ্কেল, শুভ সন্ধ্যা আন্টি। ”
” শুভ সন্ধ্যা। কোথায় গিয়েছিলে দুজনে?”
” এই তো পাশেই বাবা। ”
” বসো তোমরা। রিমা তুমি ওদের কে চা দাও। ”
” দিচ্ছি। ”
” তা বেলা, মা বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ তো? বাঙালি বিয়ের ধরন পছন্দ হয়েছে তো? ”
” খুব পছন্দ হয়েছে আঙ্কেল। ”
” বাহ তাহলে তো হয়েই গেল। আচ্ছা আমি ভাবছিলাম কি বিয়ের আগে একবার মায়ের সাথে কথা বলে নাও। পরে হয়তো ”
” জী আঙ্কেল। ”
” মন খারাপ করো না। তিনি সমস্যায় না থাকলে নিশ্চিত ভাবে উপস্থিত থাকতেন।তুমি আমার থেকে ভালো জানবে। ”
বেলার চোখ ছলছল করে উঠলো। এক হাতে শাফায়াত জড়িয়ে নিলো ওকে। বেলা ও গুটি শুটি মেরে বসে রইলো।
নিজের ব্যক্তিগত কিছু জিনিসে অন্যের অধিকার ফলানো পছন্দ নয় ইথানের। তদ্রুপ বেলা কে নিজের বিশেষ অংশ বলে মনে হয়। সেই বেলা কে অন্যের সাথে মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবু ও ইথান চুপচাপ। এ যেন মেঘ আসার আগের গুমোট অবস্থা।
” কল করতে বারন করেছিলাম। ”
” আর তো মাত্র কয়েক দিন বেলা। ”
” রাখুন এখন। ”
” কখন কল করবো তাহলে? ”
” আর কখনোই না। ”
হাল্কা হাসলো ইথান। একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিলো। বেলা কেমন করে যেন বুঝতে পারলো। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলো–
” আপনি জানেন না সিগারেট খাওয়া মানে নিজ হাতে বি’ষ পান?”
” জানি। ”
” তাহলে খান কেন। ”
” সব সময় খাই না তো। ”
” কখন খান? ”
” যখন খুব কষ্ট হয় তখন খাই। ”
বেলা নিশ্চুপ। ইথান আরেক বার টান দিলো। মুখে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর ধোয়া ছাড়লো। ফর্সা মুখের সাথে ধোয়া টা মিলিয়ে যাচ্ছে। বেলার ভারী নিশ্বাস গুলো ছন্দ তুলছে। ইথান হঠাৎ ই বললো জানালা দিয়ে তাকাতে। বেলা তাকালো। ইথান গাছের গুড়ি তে বসে ছিলো। বেলা কে দেখে হাত নাড়ালো।
” মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার? বাড়ির কাছে চলে এসেছে! ”
” হু মাথা নষ্ট তো হয়েছে অনেক আগেই। তবে আমি বুঝেছি কিছু দিন পূর্বে আর তুমি বুঝলে আজ। উহু আজ না, তুমি তো বুঝোই না আমাকে। ”
” আপনি উপায় রাখলেন টা কোথায়। ”
” ভুল করে সুযোগ না পাওয়ার মতো যন্ত্রণা আমায় দিও না বেলা। পায়ে পরি তোমার। ”
” লুসি কে এনেছেন? ”
” উহু। রেখে এলাম। না হলে তুমি আবার সন্দেহ করবে। আর বলবে ঐ টা রোবট।”
” তাচ্ছিল্য করেন? ”
” তুমি করো। আমার মিথ্যের আড়ালে থাকা ভালোবাসা কে তাচ্ছিল্য করো তুমি। বড় নিষ্ঠুর তুমি। ”
” তাহলে কল করেন কেন। আমি তো বলি না কল করুন। ”
” এটাই আমার দোষ। ”
” রাখুন এখন। ”
” কাঁদছো তুমি? ”
বেলা কন্ঠ লুকিয়ে বলল–
” আমার কান্না তে কারো যায় আসে নাকি? ”
**শনি বার থেকে মিড টার্ম এক্সাম। এদিকে ফোন নেই। এক্সাম শেষ না হওয়া অব্দি কিনে দিবে না। গল্প লেখার সময় সুযোগ টা ই কোথায়? তবে আমি যথাসম্ভব দিবো ইনশাআল্লাহ। ধৈর্য্য ধরুন। এক্সামের প্রিপারেশন শূন্য। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। **
চলবে……?