বেলাদোনা (৪)

0
304

#বেলাদোনা (৪)
#ফাতেমা_তুজ

ম্যাও ম্যাও করে ডাকছে বিড়াল টা। নিজ মালিকের হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে যাচ্ছে বেলার উদ্দেশ্যে। তবে বেলা, সে ভাষা শ্রবণে সক্ষম হলে ও বুঝতে শক্তিহীন। লুসি কে কোলে করে ঘরে প্রবেশ করলো ইথান। ছেলেটা বার বার লুসির গাঁয়ে হাত বুলাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কোমল তুলতুলে তুলা কে স্পর্শ করে যাচ্ছে পরম আনন্দে। প্রথম কয়েক সেকেন্ড বেলা নিশ্চুপ। তবে পরমুহূর্তেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় কেন এসেছে এই রাতের অন্ধকারে। প্রতিউত্তরে ইথান বলল গরম গরম স্যুপ করে দিতে। আশ্চর্য হয়ে ধপ করে কাউচে বসলো বেলা। সে দিকে তাকানোর বিন্দু মাত্র প্রয়োজন বোধ করলো না ইথান। এমন কি বিড়াল টি ও অবজ্ঞা করলো তাকে। বেলার সাড়া না পেয়ে ইথান নিজেই রন্ধনশালা খুঁজে নিলো। গরম গরম স্যুপ আর বক্স ভর্তি করে নিয়ে এলো কুকিজ। বেলা কে পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে গেল তাঁরা। যাওয়ার পূর্বে অবশ্য বলে গেল ভালো মতো দ্বার লাগিয়ে দিতে।

দোতলা থেকে ইথান আর লুসি কে দেখে চলেছে বেলা। সত্যি বলতে ছেলেটার উদ্দেশ্য সমন্ধে বিন্দু মাত্র অবগত নয় সে। তবে এখন জানা প্রয়োজন বলে হলো। বাড়ির উপবনে হঠাৎ কেন ই বা এক ছেলে বসে থাকবে?

লুসি কে নিয়ে মজা করছিলো ইথান। বেলা কে দেখে ও না দেখার ভান করে রইলো। লুসি ম্যাও ম্যাও করে বেলার আগমন জানান দিলো। ইথান সামান্য ঝুঁকে প্রতিবাদ করে বলল–
” আই স হীম লুসি। ইউ ডোন্ট মেইক নয়েজ নাও। ”

লুসি চুপ হয়ে রইলো। স্বকীয় কর্তার সাথে খেলায় মত্ত হলো পুনরায়। বেলা ডাকলো এবার।
” আপনি এই রাতের বেলা আমার বাসার উদ্যানেই কেন উপস্থিত হয়েছেন? ”

” মন চেয়েছে তাই। ”

” মন চেয়েছে! তবে এখানেই কেন? ”

” মন কে জিজ্ঞাসা করো। ”

” আমি রসিকতায় নেই। মানছি আমাকে অনেক টা সাহায্য করেছেন তাই বলে তো মাথা কিনে নেন নি। ”

” বেশি কথা বলো তুমি। ”

” আপনি বেশি কথা বলেন, তবে সেটার বেশির ভাগ ই অপ্রয়োজনীয় আর উদ্ভট। ”

” হা, ঘরে গিয়ে ঘুমাও। আমি আর লুসি বিরক্তি হচ্ছি খুব। কি লুসি হচ্ছি তো? ”

ম্যাও ম্যাও করে দু বার ডেকে উঠলো বিড়াল টা। মতবাদ দৃঢ় করতে লেজ ও নাড়ালো সামান্য। বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই এই লুসি নামক বিড়াল টি কতো টা কর্তা ভক্ত। বেলা ফিরেই যাচ্ছিলো তবে ইথানের ডাকে পিছু হটলো। লুসি কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে ইথান বলল–
” আমি জানতাম না এটা তোমার বাড়ি। যাই হোক, আমি আর লুসি প্রায় রাতে ভ্রমণে বের হই। তোমাদের উদ্যান টা খুব ই সুন্দর বুঝেছো? সেই কারনেই আমার লুসি মনোস্থির করেছে এখানে সময় কাঁটাবে। ”

” আপনি মিথ্যে বলছেন। ”

” মিথ্যে বলবো কেন? তুমি বড্ড অধৈর্য বেলা। পুরো ঘটনা তো শোনো। ”

” আপনার কথার মাঝে যুক্তি নেই। ”

” সব খানে যুক্তি কেন থাকতে হবে মিস বেলাদোনা? শোনো লাইফ টা ডিবেট এর মঞ্চ নয় যে তর্ক করে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। সব কিছুর মানে হয় না। কিছু কিছু বিষয় কারন ছাড়াই হয়। বিশ্বাস না হলে লুসি কে জিজ্ঞাসা করো। ”

” হা বিশ্বাস করেছি আপনি আর আপনার লুসি কে। তবে ঘরে গিয়ে ওমন আচারণ কেন করলেন! এটার জন্য কি কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে? ”

” কোন টার কথা বলছো? তোমাকে পাত্তা না দেওয়া নাকি রসুইঘর থেকে খাবার নিয়ে আসা? ”

” দুটোই। ”

” অহ খুব ই স্বাভাবিক এটা। প্রথমতো কারো বাসার ত্রি সীমানায় থাকার জন্য হলে ও অনুমতির প্রয়োজন। আই থিংক এক সভ্য মানুষ হিসেবে তো বটেই। তাই অনুমতি নিতে কলিং চেপেছিলাম আমি। যখন তুমি বেরিয়ে এলে তখন মনে হয়েছে কি দরকার সারা রাত অভুক্ত থাকা। তাই ওমন করেছি। তবে সব টাই সাধারণ ভাবে নিয়েছি আমি, কোনো ভাবে তোমার কাছে অস্বাভাবিক অথবা অশোভন মনে হলে দুঃখিত। ”

একটু থামলো ইথান। লুসি লেজ নাড়িয়ে তাকে কোলে নেওয়ার কথা জানান দিচ্ছে।
” তুমি কি এতে রাগ করেছো বেলা? রাগ করে থাকলে আমি আবারো দুঃখিত। তুমি ভেবো না এটা নিয়ে, আমি অবশ্যই খাবারের বিল পরিশোধ করবো। ”

” এটা বাসা বেকারি নয় যে দাম নিবো। অন্য কিছুর প্রয়োজন হলে জানাবেন। ”

” একটা বালিশ দিয়ে যেও তাহলে। ”

পেছন না ঘুরেই সম্মতি জানালো বেলা। ইথানের মুখে এক চিলতে হাসি বিদ্যমান। কথায় আছে মানুষ বসতে পেলে খেতে চায় আর খেতে পেলে শুতে চায়। ইথান আর তাঁর স্বকীয় বিড়াল টার অবস্থা এখন তদ্রুপ।

পাটের তৈরি দোলনায় বেশ আরাম করেই শুয়েছে প্রিয় লুসি আর তাঁর মালিক ইথান। ওর বক্ষঃস্থলের পাশ টায় বসে আছে লুসি। বালিশের সাথে সাথে চাদর ও দিয়েছে বেলা। রাতের দিক টায় ঠান্ডা পরে কিছু টা। ইথান আর লুসি কে দেখে মনে হচ্ছে বেশ মজা পাচ্ছে ওরা। কিছুক্ষণ পর পর কুকিজ মুখে দিচ্ছে ইথান। ওদের দেখে মন ভালো হয়ে গেল বেলার। বহু দিন ধরে ঠিক মতো ঘুম হয় না চিন্তার কারনে। আজ শান্তি তে ঘুম দেওয়া যাবে। তবে ভালোই হয়েছে বিনা বেতনে একটা, উহু দুটো গার্ড পাওয়া গেল। বিছানা ঠিক ঠাক করেই লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরলো বেলা। আজ কতো দিন পর নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়া যাবে।

স্বভাববসত কাক ভোরে ঘুম ভেঙেছে বেলার। হাতে তাঁর মাফিনস আর কফি। মৃদু স্বরে ডাকলো সে। বেলার কন্ঠে লুসির নাম খুব দ্রুত কর্ণপাত হলো ইথানের। হালকা হাতে চোখ খুলে তাকালো বেলার পাণে। ফর্সা মুখের সাথে আদুল হওয়া চুল গুলো কে পাখির বাসার মতো লাগছে। চোখ দুটো গহ্বরে হাড়িয়ে গেছে যেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মশার কামড় খেতে হয়েছে খুব। তবে বেলা কে ডাকতে পারতো একবার। বেলার প্রশ্নবিদ্ধ মুখের পানে তাকিয়ে অভিযোগ টানলো ইথার
” কাল কতো বার ডেকেছি তোমায়। তুমি নিদ্রা তে এতো টাই বিভোর যে একটি বার সাড়া অব্দি পেলাম না।দেখো মশা কি করেছে আমায়। ভাগ্যিস লুসি কে চাদরে নিচে রেখেছিলাম। ”

” আমি দুঃখিত। এখন দয়া করে খাবার টা খেয়ে উপবন ত্যাগ করুন। ”

” তাড়িয়ে দিচ্ছো? ”

” যেমন টা ভাবেন। ”

বেলার ব্যবহারে অপমান বোধ হলো না ইথানের। সে বুঝতে পেরেছে বেলার কথার মর্মার্থ। চট জলদি নাস্তা শেষ করে ফেললো। তবে প্রশংসা করলো না মেয়েটির। বরং রুষ্ট কন্ঠে বলল–
” কফি টা ঠিক ঠাক তবে মাফিনস টা ভালো বানাও না তুমি। মারিয়ার থেকে শিখে নিও। তাঁর হাতের মাফিনস খুব ই সুস্বাদু হয়। ”

ইথান রসিকতা করছে নাকি সত্যি বলছে বেলার ঠাওর হলো না। বহু কাল পূর্বে মারিয়ার তৈরি মাফিনস খাওয়া হয়েছিলো । তেমন আহামরি স্বাদ তো ছিলো না। তাছাড়া একটু আগে নিজে টেস্ট করে দেখেছে মাফিনস গুলো খুব ই সুস্বাদু হয়েছে। তবে কি মিথ্যে বলছে ইথান?

আজ তিন দিন পর হেবার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে বেলার। খুব ই মন খারাপ তাঁর। হেবা নাকি আরো সপ্তাহ খানেক পর বাড়ি ফিরবে। কড়া করে নির্দেশনা দিয়ে দিলো যাতে করে স্কাফ না খুলে বেলা। অবশ্য বেলা নিজে ও সম্মতি জানালো এই বিষয়ে। মারিয়ার সাথে কিছু ক্ষণ কথা হলো হেবার। কোন বিষয়ে কথা হলো জানা নেই। তবে মুখের ভঙ্গিমা বলছে বেকারি নিয়েই যতো আলোচনা। এলিজার সাথে কথা হয় নি। বাচ্চা মেয়ে, মায়ের কন্ঠ শুনে কেঁদে না ফেলে। চকলেট সিরাপ এর শেষ ফোঁটা অব্দি নেই। হেবা যেহেতু আসবে সাত দিন পর তাই বাধ্য হয়েই গ্রসারি শপে যেতে হচ্ছে মারিয়া কে। বিপাক টা হলো শহরের এই দিকে ভালো কোনো শপ নেই। সে হিসেবে অনেক টা সময় লাগবে মারিয়ার। সন্ধ্যা হয়ে যেতে ও পারে। তাই আজ সকাল থেকেই বেলার অনেক দায়িত্ব। কর্মচারী দের নিয়ে কাজে বসে পরেছে। ফ্রুট কেক বানানো হচ্ছে আজ। চকলেট সিরাপ কেকের অর্ডার ছিলো তিনটে। এক সমুদ্র মন খারাপ নিয়ে স্টক আউট জানানো হয়েছে ক্রেতাদের। তবে কিছু ফ্রুট কেক সাথে সুগার ডোনাট আর টোস্টার পেস্ট্রির অর্ডার এসেছে। সব গুলোই পার্সেল করে ডেলিভারি দিতে হবে। এই একটা বিষয় বড় বিরক্তিকর। সকল কে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো বেলা। এখন খুব বেশি সকাল নয়। তবে এই সময়ে কিছু ব্যস্ত মানুষ আসেন সকালের নাস্তা অথবা লাঞ্চ হিসেবে কেক পেস্ট্রির পার্সেল নিতে।

হেবার গড়া কুকিং এন্ড বেকিং খুব বেশি বড় না হলে ও এই বেকারির পেস্ট্রির স্বাদ যারা নিয়েছে তাঁরা সবাই বার বার ফিরে এসেছে। সেই হিসেবে শপের ক্রেতার সংখ্যা ও মোটামুটি ভালো।

ডেলিভারির জন্য বের হবে ঠিক তখনি ইথানের বিড়াল টা পায়ের কাছে এসে ম্যাও করে উঠলো। আজকাল বিড়ালের ডাক শুনলেই ছুটে আসে এলিজা। প্রচন্ড বকা ঝকা করে আবার চলে যায়। আজ ও ব্যতিক্রম ঘটলো না। তবে আজ কড়া ভাবে বাঁধা দিলো বেলা। এলিজা সামান্য কষ্ট পেয়ে ভেতরে চলে এলো। লুসি খুশি হয়ে লেজ নাড়াচ্ছে। আশ পাশে তাকিয়ে লুসি কে শুধালো বেলা–
” আপনার কর্তা কোথায় লুসি ক্যাট? ”

ম্যাও করে ডাকলো লুসি। বেলা হেসে উঠলো। লুসির সামনে এক টুকরো ব্রাউন ব্রেড রেখে আদর করে দিলো। তারপর ই সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু। এক মাইল এর মতো যেতেই বেলা লক্ষ্য করলো তাঁর পাশে ইথান ও সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার মনোযোগ ভঙ্গ হওয়ার কারনে সাইকেল নিয়ে পরে গেল। মাথার স্কাফ পেরিয়ে এক গাছি এলোচুল এসে গেল কপালের দিকে। সাইকেল থামিয়ে ছুটে এলো ইথান। বেলা কে সাহায্য করে বলল
” কি করছিলে কি তুমি? এভাবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে। ”

” আমি ঠিক আছি। শুধু হাতে সামান্য ব্যাথা পেয়েছি। বেকারি তে ফিরে এন্টি সেপটিক লাগিয়ে নিবো। ”

” ততক্ষণে ইনফেকশন হয়ে যাবে। ”

” ডেলিভারি দিতে লেট হয়ে যাবে। তখন পার্সেল ফেরত নিয়ে ফিরবো বেকারি তে। এতে মারিয়া আন্টি খুব রাগ করবেন। ”

” কিছু হবে না। তুমি আসো তো আমার সাথে।”

মেয়েটির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু বেলার কি হলো জানে না ইথান। এক ঝটকা মেরে নিজের হাত টা সরিয়ে নিলো বেলা। পেছন ঘুরে মাথার স্কাফ ঠিক ঠাক করতে লাগলো। এই ধারার অদ্ভুত আচরণের সাথে পূর্ব পরিচিত নয় ইথান। সেই কারনেই কয়েক মুহূর্ত চুপ হয়ে রইলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here