বেলাদোনা (৭)

0
271

#বেলাদোনা (৭)
#ফাতেমা_তুজ

” তোমার কি মনে হয় আমি তোমার পিছু নিচ্ছি বেলা? যদি এমন টাই মনে হয় তবে আমি বলবো হ্যাঁ সত্যিই আমি তোমার পিছু নেই রোজ। কারন আমি তোমার পিছু নিতে মজা পাই আমি আনন্দ পাই এতে। আমার খুব ভালো লাগে তোমার আশে পাশে থাকতে। এগুলো কে তুমি কি বলবে আমি জানি না তবে আমার খুব সুখ সুখ অনুভূতি হয় বেলা। মনের কোনে হাওয়া বয়। আর আমি এই হাওয়া তে হারিয়ে তাই বহুদূর। ”

বেলা নিজেকে কঠোর করে কিছু বলবে তখনি অট্টহাসি তে ফেটে পরলো ইথান। ওর হাসি দেখে ভরকে গেল বেলা। বেলা কে বিরোধিতা করতে না দেখে নিজ হাসি থামিয়ে আবার বলল–
” কি ভেবেছো এসব বলবো আমি? উহু একদম ই নয়।আরে এগুলো কিছু ই না। হ্যাঁ তবে আমি মানছি কাল রাতে আমিই ছিলাম ড্রয়িং রুমে। আর তুমি আমার পিছু নিয়েই রসুই ঘর অব্দি গিয়েছিলে, সেখানেই একটা ড্রাম এর পেছনে লুকিয়ে ছিলাম আমি। তবে বিশ্বাস করো এই কাজে কোনো বাজে উদ্দেশ্য ছিলো না। আর হ্যাঁ আগের ঘটনার সাথে এর কোনো যোগসূত্র ও নেই। আমি দুদিন পূর্বে একটি বিষয় লক্ষ্য করি। আর সেই কারনেই কাল লুকিয়ে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করেছি। আমি নিশ্চয়ই চোর নই? এটা ছিলো তোমাদের বাঁচানো, স্রেফ তোমাকে প্রহরা দেওয়ার লক্ষে আমি উপস্থিত ছিলাম। ”

” মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? ”

বেলার দৃষ্টি তে অবাক। ইথানের কথার অংশ বিশেষ তাঁর অন্তরে যাচ্ছে না। নিজেকে মানিয়ে নিলো ইথান। যদি ও এই সময়ে এসব বলতে চাচ্ছে না তাঁর মন। তবে বেলার হৃদয় কে শান্তি দিতে হলে সত্য টা জানাতেই হবে। সাথে আজ লুসি নেই। তাড়াহুড়ো করে আসায় বিড়াল টাকে রেখেই চলে এসেছে ইথান। দ্রত ফিরতে হবে। না হলে লুসি খাবার মুখে ও তুলবে না। ঝামেলা এখন এড়ানো দরকার। তবে বেলা যে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। ইথান বলল–
” কাল রাতে আমি গিয়েছিলাম তোমার বাসা তে সেটা স্পষ্ট দেখলে অথচ ড্রয়িং রুমে আমি ছাড়া ও অন্য কেউ ছিলো সেটা দেখলে না। হয়তো অন্যমনস্ক ছিলো তাই তুমি দেখো নি।
ভুলবশত একটা এন্টিক শো পিস পরে যায় আমার বাহু তে ধাক্কা লেগে। আর সে শব্দেই ছুটে আসেন তোমার মা। আর আমার ভাগ্য দেখো সেই সময় টা তেই এলিজা কোকো বীজ নেওয়ার জন্য এসেছিল। শো পিস পরার আওয়াজে তুমি আর তোমার মা দুজনেই চলে আসো। তবে তুমি আগে আসাতে আমাকে দেখে ফেলো আর পিছু নেও। আমি ঐ রসুই ঘরে গিয়ে ই লুকাই। সুযোগে পালিয়ে যায় আমি ব্যতীত তোমাদের বাসায় অবস্থিত আরেক টি লোক। সেই লোক টাকে ধরার জন্য ই আমি ফাঁদ পেতে রেখেছিলাম। তুমি হয়তো জানোই না কেউ তোমাকে মা’রতে চায় বেলা। ”

” আপনি মিথ্যে বলছেন রাইট? আমি বিশ্বাস করছি না আপনাকে। ”

” জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না। আমার কাছে প্রমাণ আছে বেলা। আমি মিথ্যে বলছি না। মিথ্যে বলে কোন লাভ টাই বা হবে?”

ফোন বের করলো ইথান। কাল রাতের করা ভিডিও টা দেখাতেই আঁতকে উঠলো মেয়েটা। এই লোক টা কে এর আগে ও দেখেছে। আর এই লোকটা অন্য কেউ নয় বরং প্রথম দিনের হামলাকারী। যাকে বাগানের স্টোর রুমে বেঁধে রেখেছিলো বেলা। কিন্তু পরেরদিন আর নজরে আসে নি ব’দমাশ কে । ভেবেছিল কোনো ভাবে পালিয়ে গেছে। হয়তো বা কিছু চুরি করাই উদ্দেশ্য ছিলো। তবে ইথানের কথা শুনে নিজ পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছে না। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কে আর কেন ই বা মা’রতে চায় ওকে?

সেদিনের পর বেলা আজ দুদিনের জ্বরে আক্রান্ত। ভয়ে আতঙ্কে পরদিন ই গাঁয়ের তাপমাত্রা হু হু করে বেড়ে গেছে কয়েক ফারেনহাইট। কোনো ভাবেই নামে নি আর। এদিকে হেবা জড়িবুটি দিয়ে ও জ্বর নামাতে পারছেন না। চিন্তিত হয়েই স্বামী কে ফোন করেছেন। মানুষ টা গাছ গাছালির গবেষণা নিয়ে দেশের বাহিরে আছেন আজ বছর খানেক। মেয়ের কঠিন জ্বরের কথা শুনতে পেয়ে চিন্তায় পরেছেন। তবে তিনি বললেন ডাক্তার দেখাতে। সঠিক সময়ে সঠিক জড়িবুটি না দিতে পারলে আরেক ঝামেলা পোহাতে হবে। বমি করে প্রায় তিনবেলাই পেটের খাবার ফেলে দিচ্ছে বেলা। একদানা খাবার সইছে না ভেতরে।ভয়ে তটস্থ হয়ে গেছে এলিজা। বোনের কাছে আসার সাহস অব্দি পাচ্ছে না।
সব কাজকর্মের ইস্তফা ঘটিয়ে হেবা দিন রাত সেবা করে যাচ্ছেন। কখনো বা চোখের পানি ফেলছেন। সেগুলো দেখতে পায় বেলা। বুক ভারী হয় তাঁর। কষ্ট হয় খুব। কে বলবে এই মানুষ টি ওর মা নয়?

তিন দিন পর বেকারি তে আসার সুযোগ হয়েছে হেবার। বেলাই জোড় করে পাঠালো। মারিয়া একা সামলাতে পারবে বলেই তিন দিন উপস্থিত না থেকে ও নিশ্চিন্তে থাকতে পেরেছে। এতো টাই বিশ্বাস। যদি ও এই নিয়ে বেলার সাথে মনোযুদ্ধ চলেছে অনেক টা সময়। বেলার মতে মারিয়া আন্টি কে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। মানুষ টা মুখ না খুললে ও কষ্ট হয় নিশ্চয়ই। কথায় না পেরে হেবা আজ বেকারি তে এসেছে। হেবা কে দেখেই মারিয়া বলল–
” বেলার শরীরের কি অবস্থা? ”

” ভালো না মারিয়া। মেয়ে টা জ্বরে কাহিল হয়ে গেছে। ”

” ওকে রেখে আসলে কেন? ”

” আসতে চাইলাম কোথায়। জোর করে পাঠালো যে। ”

” আচ্ছা তুমি বসো আমি তিনদিনের হিসেবের খাতা দেখাচ্ছি। ”

” প্রয়োজন নেই মারিয়া। তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই এতো নিশ্চিন্তে থাকি। হিসেব দেখিয়ে দয়া করে লজ্জা দিও না। ”

নিশব্দে কৃতজ্ঞতা জানালো মারিয়া। হেবা একটা টেবিলে বসে রইলো। লুসি কে নিয়ে বেকারি তে এসেছে ইথান। তিন দিন ধরেই আসা যাওয়া করে একটি বার বেলার স্বাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য। তবে প্রতি বার ই আশাহত হয়ে ফিরে যেতে হয়। হেবা এগিয়ে এলো। ইথান আর লুসি কে দেখে বলল–
” কি লাগবে তোমার? ”

” না কিছু না। ”

কয়েক পা গিয়ে আবার ফিরে এলো ইথান। কে জানে কি মনে করে এলো। লুসির গাঁয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল–
” দু বক্স প্যান কেক পার্সেল করে দিন। ”

সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরেছে হেবা। দু দিন ধরেই এলিজা বেলার ধারে কাছে ও ভিরে না। মেয়েটার অসুস্থতায় ভয় পেয়ে গেছে বোধহয়। বেলার পানি লাগলে পানি টা এগিয়ে দিবে নাকি সেটা ও অনিশ্চিত। তাই দ্রুত চলে এসেছেন। বেলা একটু সুস্থ বোধ করায় পড়ার ঘর টায় এসেছে। বহু দিন পর আবার মন দিয়ে বসেছে পড়াশোনায়। বিষয় টা ভালো লাগলো হেবার। তবে হঠাৎ ই লক্ষ্য হলো বেলার হাতে পড়ার বই নয় বরং নীল রঙের এক টি ডায়েরী। স্পেনীয় ভাষায় লেখা চমৎকার এই ডায়েরী তে রয়েছে বেলার আসল পরিচয়। হেবা দীর্ঘশ্বাস লুকালেন। নাক বরারবর মিররে হেবা কে দেখতে পেয়ে বেলা বলল
” কিছু প্রশ্ন ছিলো মা। ”

” হ্যাঁ ফ্লাওয়ার বলো না কি বলবে। ”

” আমার নাম বেলাদোনা কেন রেখেছো মা? আর এ নামের অর্থ কি। ”

” বেলাদোনা নামের অর্থ সুন্দরী মহিলা। আর এটা একটি ফুলের নাম। তাই আমি তোমাকে ফ্লাওয়ার বলে ডাকি সোনা। ”

” আর বিষাক্ততা। বেলাদোনা নামের অর্থ তো বিষাক্ততা ও তাই না? ”

প্রশ্ন টি এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন হেবা। তবে বেলা একে বারে চেপে ধরেছে যেন। মেয়েটির নেত্র দ্বয় পানি তে ঝলমল করছে। হেবা বুকে পাথর চেপে আছেন। বেলার কপালে শুষ্ক চুম্বন এঁকে বললেন–
” তুমি সুন্দর, তুমি বিষাক্ত, যে তোমাকে ভালোবেসে গ্রহন করবে তার কাছে তুমি সুন্দর আর যে ব্যক্তি তোমাকে আঘাতের পরিকল্পনা করবে তাঁর কাছে তুমি বিষাক্ত, বিষধর কাঁটার মতো। বুঝেছো এবার? ”

বেলা মাথা ঝাঁকালো। অর্থাৎ বুঝেছে। হেবা কে পূর্ন দৃষ্টি তে দেখতে লাগলো। সত্যিই কি এমন টা নাকি এর পেছনে লুকায়িত আছে অন্য কোনো রহস্য। হয়তো আছে কিংবা নেই।

যারা গল্প টা নিয়ে আলোচনা করতে চান তাঁরা জয়েন করুন গ্রুপে। আর মতামত দিন নিজের মতো করে।
Fatema’s story discussion

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here