মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২৮

0
251

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৮

সারাদিন অনেক প্রেশার ছিল রুদ্রর। ইন্টারমিডিয়েট এর রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকেই দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।ভাগ্যিস স্কলারশিপ পেয়েছে তাই ব্যাপারটা একটু সহজ হলো ওর জন্য।তবুও অনেক টাকার ব্যাপার।কিভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।তখন গ্রামের বাড়িটা বন্ধক রেখে কিছু টাকা ম্যানেজ করলো।রেহানা মাহমুদ আর ওর কিছু জমানো টাকা ছিল আর সাথে রেহানা মাহমুদ এর অবশিষ্ট গয়না বিক্রি করে দিলো।তাও পুরো টাকা যোগাড় হচ্ছিল না।তখন রেহানা মাহমুদ রুদ্রকে না জানিয়ে মুবিন হাসান এর সাথে যোগাযোগ করে সব বলেন।মুবিন হাসান অত্যন্ত খুশি মনে নিজে ঢাকায় এসে তার সমস্ত সঞ্চয় রুদ্রর হাতে তুলে দেন।কিন্তু রুদ্র নিবে না মানে নিবেই না পণ করে বসে রইল।কিন্তু মুবিন হাসানও নাছোড় বান্দা তিনি দিবেনই।অবশেষে রুদ্র ধার হিসেবে টাকাটা নিল।

আজ ভোরেই ওর ফ্লাইট।তাই সমস্ত কাজ শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে নিল।ভাড়া বাসাটা ছেড়ে দিয়েছে।রুদ্রকে এয়ারপোর্টে বিদায় দিয়ে রেহানা মাহমুদ গ্রামে চলে যাবেন।সবকিছু কাজ কর্ম,ফর্মালিটিস চুকিয়ে দিয়ে এইবার রুদ্র গোসলে করে রেডী হবে শুধু।

সবে শাওয়ার এর নিচে দাড়িয়েছে।শাওয়ারের পানির সাথে কিছু নোনা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।এক মেঘলাকে ভুলতে ছোট্ট সেই প্রিয় মফস্বল শহরটা ছেড়ে এই ব্যস্ত শহরে পা রাখলো।তবুও তাকে ভুলতে পারলো না।কোনোভাবেই ওর স্মৃতিগুলো ভুলতেই পারছে না।আজ সে এই দেশটাকেই ছেড়ে দিচ্ছে।না ছেড়ে দিচ্ছে না পালিয়ে যাচ্ছে।নিজের থেকে নিজের প্রিয় মানুষগুলোর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।সে যে এক পরাজিত পথের পথিক।তবুও কি পারবে পালিয়ে বাঁচতে??অজানা এ উত্তর নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে অচেনা এক দেশে অজানা এক শহরে।যেখানে তার পরিচিত কেউ নেই।রোজ পরিচিত মুখগুলো আর দেখতে পাবে না।ভুল করেও সেই পরিচিত নামটা আর শুনতে হবে না মায়ের মুখ থেকে।তবুও কি পারবে তাকে ভুলে যেতে??তার জন্য বুকের বা পাশটা গভীর যন্ত্রণায় চিনচিন করে উঠবে না??হয়তো উঠবে হয়তো না।তবুও পালিয়ে বাঁচার নিছক চেষ্টা।

রুদ্রকে রেহানা মাহমুদ ও মুবিন হাসান এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়ে ফিরে গেলেন।রেহানা মাহমুদ খুব কাদছেন।একমাত্র ছেলেকে ছেড়ে কখনো থাকেননি আর সেখানে বছরের পর বছর না দেখে কি করে থাকবেন??মুবিন হাসান অনেক শান্তনা দিয়ে বুঝিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন রেহানা মাহমুদকে।এইবার উনি উনার গন্তব্যে ফিরবেন।তিনিও তার এই গন্তব্য থেকে দূরে চলে যেতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি পারেননি।মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা ক্ষীণ আশা পুষে রেখেছেন,মেঘলা একদিন ফিরে আসবে।সে আশাতেই মেঘলার স্মৃতি আকড়ে উনারা দুইটি মানুষ বেচেঁ আছেন।

প্লেন যত উপরে উঠছে সবকিছু চোখের সামনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে উঠেছে।একসময় সবকিছু একদম মিলিয়ে যাচ্ছে।শুধু শুভ্র মেঘের ভেলা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।এত লম্বা জার্নি সময়ই কাটছে না।তাই রুদ্র কানে ইয়ারফোন গুঁজে নিল।সেই গানটা বেজে উঠলো কানে।যেটা অবসরে শুনে রুদ্র।

কষ্ট পাবে জানি
মেনে নিতে পারছিনা
এই ঠোঁটের অভিমান,
কান্না পাবে জানি
চলে যাওয়ার ফলক
বলবে দূরত্বের বয়ান।

শোনো আমি আবার জন্ম নেব
হব সবার শেষে বাড়ি ফেরা
তোমার জাতিস্বর,
শোনো আমি আবার জন্ম নেব
এই মুখের আদল বদলে গেলেও
চিনবে গলার স্বর।

তুমি আমায় তখন দুঃখ বলে ডেকো
তুমি আমায় তখন দুঃখ হতে দাও,
তুমি আমায় তখন দুঃখ বলে ডেকো
তুমি আমার কেন দুঃখ হতে চাও?

ডুবে যাওয়া নৌকা সব
তুলবে না পাল অসম্ভব,
স্মৃতি ভীষণ বয়স্ক।
তুমি না হয় স্পষ্ট হও
গল্প হয়েও কষ্ট হও,
ভীষণ তোমারি মতো।

শোনো আমি আবার জন্ম নেব
শোনো আমি আবার জন্ম নেব
শোনো আমি আবার জন্ম নেব
শোনো ..

চলবে………….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here