মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৪১
স্যার!
হ্যা মা বলো।
মেঘলা আপনার সাথে কথা বলতে চাইছে।সাবিবা মাথা নিচু করে এইটুকু বলে মুবিন হাসান এর দিকে ভীত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল।
মুবিন হাসান কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।
উনার মেয়েটা ওটি তে যন্ত্রণায় ছটফট করছে।এই অবস্থায় তিনি মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন কি করে!!
মুবিন হাসান কিছু না বলে ওটি রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
ওটির পাশেই একটা ওয়েটিং জোনের একটা চেয়ারে পাগলপ্রায় হয়ে বসে আছেন মমতা হাসান।
স্বামীকে দেখেই তার কাছে ছুটে এলেন।
আমার মেয়েটার এত কেনো কষ্ট হচ্ছে??চোখে দেখা যায় না এই কষ্ট…বলেই ঝরঝর করে কেঁদে উঠলেন।
মমতা হাসান এর মাথায় হাত রেখে বললেন,আল্লাহ ভরসা।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
মমতা হাসান বিড়বিড় করতে শুরু করলেন,আল্লাহ ভরসা!আল্লাহ ভরসা……
মুবিন হাসান আর দাড়ালেন না।ওটি রুমের ভেতর প্রবেশ করলেন।
বাবার উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘলা যেনো আকাশের চাঁদ পেল।
মুবিন হাসান বেড থেকে কিছুটা দূরে দাড়ালেন।কি বলবেন তিনি??খুব বেশি ইতস্তত করছেন।
বাবা আমার পাশে একটু বসবে??
মুবিন হাসান মেঘলার গলার স্বরে স্মিতিতে ফিরে এলেন।মেঘলার পাশে বসলেন।কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা ভেবে মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত রাখলেন।
মেঘলার চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল যা মুবিন হাসান এর দৃষ্টির আড়াল হলো না।
মারে….
এইবার মেঘলা অঝোরে কেঁদে উঠলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই মুবিন হাসান বলেন,কাদিস না মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।সব মেয়েদেরই এই কষ্ট পাওয়া লাগে।আর একটু সহ্য কর।
বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সন্তানের কোনো ভুলই মা বাবা ধরে থাকে না।সব কিছুই ক্ষমা করে দেয়।আর তোর ভুলের শাস্তি তুই এমনিতেই পেয়েছিস।এইসব নিয়ে ভাবিস না।আমি তোর মা দুইজনই ক্ষমা করে দিয়েছি তোকে।
মেঘলা অঝোরে কাদঁছে তো কাদঁছেই।
মারে এইভাবে কাদিস না।আর এইসব নিয়ে ভাবিস না তো।
আমি মনে হয় বাঁচবো না বাবা।
মুবিন হাসান আতকে উঠলেন,এইসব কি কথা…
বাবা ডক্টর বলেছেন,অনেক কম্প্লিকেশন আছে।হয়তো যেকোনো একজনকে বাঁচানো যাবে….
ডক্টররা এমন অনেক কথাই বলে।তোকে এইসব ভাবতে বলি নাই।
ভাবতে হবে বাবা…আমি চাই এমন পরিস্থিতিতে তোমরা আমার মেয়েটাকেই বাঁচাবে।
মুবিন হাসান এর গলা কেপে উঠল।কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না।কথার গলার কাছে এসে জট পাকিয়ে গেলো।
মমতা হাসান থেকে থেকে কাদঁছেন।উনার দুধের বাচ্চার এত কষ্ট তিনি আর নিতে পারছেন না।
সাবিবা উনার পাশে বসে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।
তিনি থেমে থেমে হিচকি তুলছেন আর সকালে কি হয়েছিল তাই বলার চেষ্টা করছেন।তিনি বারংবার শুধু বলছে আমি তখন কাজ না করে মেঘলার পাশে থাকেলই হতো।তাহলেই আমার মেয়েটা সুস্থ থাকতো।
সাবিবা বারবার বুঝাতে চাইছে এতে উনার কোনো হাত নেই।উনার কোনো দোষ নেই।
তবুও তিনি বুঝছেন না।
সকাল বেলা সকলের নাস্তা শেষ করে যে যার কাজে বেরিয়ে পড়লো।
মুবিন হাসান কলেজ গেলেন।সাথে সাবিবাকেও নিয়ে গেলেন।ওর একটা কিছু কাজ দরকার।
তারপর উন্মুক্ত হয়ে পড়াশুনাটাও শেষ করাবেন বলে জানিয়েছেন মুবিন হাসান।মেঘলাকেও আবার পড়াবেন বলে ঠিক করেছেন।
সকলে বেরিয়ে যাওয়ার পরই সব কিছু গুছিয়ে রাখছিলেন মমতা হাসান।
ঠিক তখনই কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলেন।সাথে স্পষ্ট শুনলেন মেঘলা মাগো বলে আর্তনাদ করে উঠেছে।
মমতা হাসান সব কিছু ফেলে ছুটলেন মেঘলার ঘরের দিকে।
মেঘলার রুমে গিয়ে দেখেন মেঘলা ফ্লোরে বসে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না।চাপা আর্তনাদ করছে।
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
পাশ দিয়েই ফ্লোরে পানির উপস্থিতিতে তিনি যা বুঝার বুঝে গেলেন।
তিনি এই মুহূর্তে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।উনার হাত পা অবশ হয়ে আসছে।
কোনো রকমে মেঘলার পাশে বসে বললেন,কিচ্ছু হয়নি মা আমার।কিচ্ছু না।আমি এক্ষুনি তোমার আব্বুকে ফোন দিচ্ছি।তোমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে তুমি।
একটু সহ্য করো মা।আর একটু।
মমতা হাসান দ্রুত মুবিন হাসানকে ফোনে সবটা জানালেন।
মুবিন হাসান তক্ষুনি অ্যাম্বুল্যান্স এ খবর দিয়ে সাবিবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন।
সল্প সময়ের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল।
সাবিবা মমতা হাসান এর মাথাটা কাধে রেখে উনাকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এই মানুষটার কাছে এলে কেমন যেনো মা মা একটা গন্ধ অনুভূত হয়।
মানুষটার অস্তিত্বেই মা মা অনুভূতিটা যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে রয়েছে।
মেঘলাকে যখন বুকে নিয়ে আদর করে তখন ওরও খুব স্বাদ হয় মায়ের আদর খাওয়ার।
খুব করে ইচ্ছা করে মা বলে ডাকতে।কিন্তু কেনো যেনো ডাকা হয়ে উঠে না।
অনেকটা সময় ধরে বাবা মেয়ে চুপ করে রইলো।
এইভাবে কিছুটা সময় যাওয়ার পর মেঘলাই কথা বললো।
বাবা!
হ্যাঁ মা বল।
বাবা রুদ্র কি জানে না আমি ফিরে এসেছি??
নাহ।
ওহ।
তার নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
বাবা!
বল।
আগের বাড়িতেই আছে??
না।
রুদ্র কোথায় এখন??
দেশের বাইরে।পড়াশুনা করতে গেছে।
ওহ।
….
তাহলে আণ্টি একা একা আছেন??
ওর মাকেও নিয়ে গেছে।
ওহ।
এত কথা বলিস না তো।
আর একটা কথা বলবো বাবা।
কি??
আমাকে একবার রুদ্রর সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারবে?
রুদ্র তো মেঘলার নামও শুনতে চায় না।তাহলে কি কথা বলবে??
ও বাবা কি ভাবছো??
কিছুনা।
বাবা আর কিছু বলবো না।এইটাই শেষ চাওয়া।দেও না বাবা।
মুবিন হাসান পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে রুদ্রর নম্বর খুচ্ছেন আর ভাবছেন মেঘলার এই অবস্থার কথা শুনলে নিশ্চয়ই কথা বলবে রুদ্র।ভাবতে ভাবতেই ডায়াল করলেন রুদ্রর নম্বর।
মেঘলা আগ্রহ ভরে তাকিয়ে আছে।উত্তেজনায় বলেই বসলো।
বাবা স্পিকার অন করো।
মুবিন হাসান কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
মেঘলা আবার তাড়া দিতেই স্পিকার অন করলেন।
ওপাশে রিং হচ্ছে।
মেঘলার ভিতরে অদ্ভুত একটা অনুভুতি হলো।কতদিন পর প্রিয় বন্ধুর সাথে কথা হবে।মাতৃত্বের ব্যাথাটা হটাৎই যেনো কম অনুভূত হচ্ছে।দম বন্ধ করা এক শিহরণ খেলে যাচ্ছে।কান খাড়া করে সবটা শুনার চেষ্টা করছে।পরিচিত সেই কণ্ঠ কিছুটা রাশভারী শুনলেন চিনতে অসুবিধা হলো না।
আসসালামুয়ালইকুম।
ওয়ালাইকুমসালাম।
কেমন আছো রুদ্র!!
আলহাদুলিল্লাহ ভালো।আপনারা কেমন আছেন??
আল্লাহ যেমন রাখছেন।তোমার মায়ের শরীর কেমন??
জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তুমি এখন বাসায়??
জিনা আঙ্কেল,অফিসে।পার্টটাইম জব করছি একটা।
বাহ,বেশ ভালো।তুমি তো তবে ব্যস্ত??
আঙ্কেল সমস্যা নেই আপনি বলুন।
আসলে বাবা…কিভাবে শুরু করি….
আঙ্কেল ইতস্তত করবেন না একদম।আপনার যা বলার আছে বিনা দ্বিধায় বলুন।আপনার কাছে আমার অনেক ঋণ।প্লিজ আঙ্কেল মনে দ্বিধা না রেখে বলুন।
মুবিন হাসান ক্ষানিকটা কেশে নিয়ে গলা পরিষ্কার করার বাহানায় কথা গুছিয়ে নিচ্ছেন।তিনি রুদ্রকে কথা দিয়েছেন ওর সামনে মেঘলার নামও নিবেন না।আবার এইদিকে মেয়ের এই অবস্থায় মানাও করতে পারছেন না।
মেঘলা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।বাবা বলবে মেঘলা ফিরে এসেছে।আর তারপরই কোনোকিছু বুঝার আগেই রুদ্রকে বলবে সারপ্রাইজ বন্ধু!!!
চলবে…….
(গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ😊)
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=169467331959466&id=140699218169611