মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৪০

0
273

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু

পার্ট:৪০

মেঘলার শরীরটা বেশ খারাপ।হয়তো এত ধকল থেকে।
কিন্তু এখন একটু বেশিই খারাপ।খবরটা শুনে নাকি শুধুই ধকল না নিতে পেরে।

নিজের বাড়িতে আছি আজ প্রায় সপ্তাহখানেক।এর মধ্যে বাবা আমার সাথে একটাও কথা বলেনি।সাবিবা আপুর সাথে কথা বলে।আমার কি প্রয়োজন না প্রয়োজন সব খোঁজই রাখে তবু কথা বলে না সামনেও আসে না।
এর মধ্যে একদিন হসপিটালেও নিয়ে গেলো বাবা।পুরো প্রেগনেন্সি টাইমে এই একবারই ডক্টর দেখানো হলো।
প্রেগনেন্সিটা খুব রিস্কি।মা ও বেবি দুইজনই উইক,দুইজনের লাইফ রিস্ক আছে ডক্টর বলেছেন।
এতকিছু শুনেও বাবা কথা বলেন নি।কিন্তু তিনি অনেক বেশি চিন্তা করছেন বিষয়টা নিয়ে।ওর এক্সট্রা যত্নেরও ত্রুটি করছেন না।

সাবিবা আপুর ও একই অবস্থা।
তবে এই কয়দিনে আপু আমাদের বাড়িটাকে নিজের সংসারের মত সাজিয়ে নিয়েছে।মাকে তো রান্নাঘরে যেতেই দেয় না।
আপু পারেও।একাই একশো।

কিন্তু রুদ্র কোথায়??এতদিন হলো এখনো কি ও জানে না আমি ফিরে এসেছি তবে এলো না কেনো??এখনো কি রেগে আছে??
পুরো এলাকার মানুষ খবর পেয়ে এসেছে দেখতে।খোঁজা দিয়ে অনেক কথা শুনিয়েও দিচ্ছে।সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন আমার সন্তানের দিকে আঙ্গুল তুলে বাজে ইঙ্গিত দেয়।
তবুও মেঘলা কিছু বলে না।ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্য ওর মা বাবাকে এর চেয়ে বেশি কিছু সহ্য করতে হয়েছে।
এই ভেবে সব সহ্য করে নিচ্ছে মুখ বুজে।
এতকিছু কি রুদ্রর কানে যায় না??এত অভিমান আমার উপর???
মেঘলার খুব কান্না পায়।কিন্তু কাদতে পারে না।কাদতে দেয় না ওর মা।
মানুষটা ওর ফিরে আসায় কি যে খুশি চোখে না দেখলে বর্ণনা করাও যাবেনা।
আসার পর ওর প্রেগনেন্সির ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারছিল না।উনার বাচ্চা মেয়ের আবার বাচ্চা হবে কি করে??
তারপর মুবিন হাসান কি বুঝলেন ব্যাস তিনি আরো আনন্দে আত্মহারা।তিনি নানু হবেন।তুলতুলে একটা বাবু আসবে এ বাড়িতে।কি যে খুশি উনি।
ওর মায়ের তো দুনিয়ার কোনো খোঁজ নাই।তবু একবার জিজ্ঞেস করেছিল রুদ্রর কথা।
মা কি বলল কিছুই বুঝলো না।
মমতা হাসান এর বক্তব্য এমন ছিল,ওহ রুদ্র!!সেতো রোজই আসে।যেদিন তুই চলে গেলি সেদিন ওর মাকে আমার কাছে রেখে গেলো।তারপর যখন ফিরে এলো তারপর..তারপর আর আমার সাথে দেখা বা কথা কোনটাই বলে নাই।তোর বাবার সাথে মনে হয় কথা বলে।তোর বাবা তো আর কিছু জানায় না কাউকে।হয়তো বলে নাই রুদ্রকে।চলে আসবে জানলে।এবাড়িতে তো আর এখন আসতেই দেখি না ছেলেটাকে।বুঝলি মেঘলা আমার না প্রায়ই রুদ্রকে দেখতে ইচ্ছা করে।আচ্ছা তুই বল আমাদের বাড়িতে আসার জন্য কি রুদ্রকে খবর পাঠানো লাগে??কেনো যে আসে না ছেলেটা…..
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মা তো এইটাই বুঝতে পারছে না মাঝে অনেকগুলো বছর চলে গেছে।অনেক কিছু বদলে গেছে।তবে এইটা বুঝলো রুদ্র অভিমান করে আসেনি।শেষবার আমাকে আনতে যখন সীমান্তের বাড়ি গিয়েছিল সেদিনই হয়তো শেষ এসেছিল আমাদের বাড়ি।

সকাল সকাল এমন খবর পেয়ে সাবিবা এবং মুবিন হাসান থম দিয়ে বসে আছে।
পুলিশ জানিয়েছে সীমান্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে।তবে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে ওই বাড়ি থেকে।
সীমান্ত একটা রেকেট এর সাথে জড়িত।নারী পাচার চক্র।সীমান্ত একটা এজেন্ট মাত্র।ওর কাজ বিভিন্ন মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়ে সংগ্রহ করা।আরও অনেক তথ্য পাওয়া যেত যদি ওর স্মৃতি থাকতো।মাথায় আঘাতটা ভালোই পেয়েছিল।
তবে একটা প্রশ্ন হলো সাবিবা এবং মেঘলাকে তো ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে।তারপর বিয়ে করে নিজের কাছে আটকে কেনো রাখলো??এই দুইজনকে কেনো বিক্রি করলো না??যেখানে নিজের সন্তানকে বিক্রির প্ল্যানিংও করে ফেলেছিল!!এই প্রশ্নের উত্তর শুধুই সীমান্ত দিতে পারে।

সাবিবা ভেবেছিল মেঘলাকে এইসব নিয়ে কিছু বলবে না।
কিন্তু মুবিন হাসান অন্য কথা বলছেন।উনার কথা সবটা মেঘলার জানা দরকার।সময়ের জিনিস সময়ে জানা ভালো।না হয় পরে জানলে আর গুরুত্ব থাকে না।
বাধ্য হয়েই মেঘলাকে সবটা বললো।
কিন্তু মেঘলার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।শুধু ক্ষীণ স্বরে বলল,
আপু শোনো সবাইকেই যদি পণ্যের মত বিক্রি করে দেয় তবে নিজের ভোগের জন্য কি থাকবে??
মেঘলা বোকার মতো কথা বলিস না।ভোগ করার হলে আমাদের ফেলে রাখতো না রোজই ভোগ করতে পারতো।কিন্তু এমনটা তো করেনি।
তবে কি বলতে চাও সে আমাদের ভালোবাসতো??দুইজনকে একসাথে ভালবাসা যায় আপু!!মেঘলা খলখলিয়ে হাসতে লাগলো।
সাবিবা মেঘলার হাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ভুলতো কিছু বলেনি!!একসাথে দুইজনকে কি ভালোবাসা যায়!??

অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করলো কিছু একটা লিখার।
বহুদিনের চর্চার অভাবে সেটুকু ক্ষমতাও আজ বিলুপ্ত প্রায়।
তবুও আনকোড়া হাতে অনেকটা সময় নিয়ে টুকটুক করে কিছু একটা লিখলো ডাইরিতে।
তারপর লিখা পাতা ভাঁজ করে আবার ডাইরির ভাজেই রেখে দিল মেঘলা।

বহুদিন পর এই পড়ার টেবিলটায় বসলো।
বই খাতাগুলো হাতে নিয়ে ঘেঁটে ঘেঁটে একের পর এক দেখছে।
পুরনো বই তবুও ঠিক সেরকমই আছে যেরকমটা মেঘলা রেখে গেছে।
অঙ্ক বইটা হাতে নিতেই কত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে।
বাবা কি বকাটাই না বকতো।
কত সময় নিয়ে বাবা দেখিয়ে দিতো,বুঝিয়ে দিতো।
যখন বুঝাতো তখন বুঝতো কিন্তু পরে সব ভুলে যেত।
আর পরীক্ষার সময় তো মনে হতো এই জীবনে কখনো এই অঙ্কগুলো দেখেই নাই।
মেঘলা আপন মনে হেসে উঠলো।
শেষে তো রুদ্র দায়িত্ব নিল অঙ্ক মাথায় ডুকিয়েই ছাড়বে।
অনেকটা উন্নতি হয়েও ছিল।
কিন্তু কি থেকে কি হলো…..
এসএসসি টাও পাস করতে পারলো না।
সেই গনিতেই ফেইল করে গেল।

কেনো যে অঙ্কটা বুঝতো না…..
অঙ্কের জটিলতারই সমাধান করতে পারলো না আর জীবনের…..জীবনের এত জটিল সিদ্ধান্ত কি করে নিয়ে বসেছিল??
গণিতের সমীকরণ কি জীবনের চেয়েও জটিল??
তাই তো জীবনযুদ্ধে হেরে গেল।
ওর জীবনটাই বৃথা।
না হলো ভালো সন্তান না ভালো ছাত্রী না ভালো বউ আর না পারলো ভালো বন্ধু হতে।
ভালো মা কি হতে পারব!!মেঘলা আলতো করে পেটে হাত রাখলো।
তুই কি আমার মত হবি?নাকি তোর ওই অমানুষ বাপটার মত?
শোন তুই কিন্তু একদম আমার কিংবা তোর বাবার মতো হবি না।চেষ্টাও করবি না।
তুই হবি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মত।তোর মামার মত।রুদ্র মামার মত।
রুদ্রর মত ভালো সন্তান,ভালো ছাত্র,ভালো বন্ধু,ভালো বরও হবে নিশ্চয়ই।
আচ্ছা রুদ্র কি ভালো বর হবে??ওর জীবনে কি কেউ এসেছে??কি জানি।আসতেও পারে।
না জানি কত পরিবর্তন হয়েছে!!
কত অভিমান আমার উপর।একটাবার এলো না??
খাটের উপর আয়েশ করে বসে আবারও পেটে হাত দিয়ে বললো,এই যা একটা ভুল বলে ফেললাম।তুই কিন্তু ভালো ছাত্র হবি না।তুই হবি ভালো ছাত্রী।মেঘলা এক গাল হাসলো।
মেঘলা জানেনা ডক্টর কি বলছে,রিপোর্ট কি কোনো কিছুই জানেনা।কিন্তু ওর খুব করে মনে হয় ওর একটা মিষ্টি মেয়ে হবে।মনে মনে একটা নামও ঠিক করে রেখেছে।
মেঘলার ঠোঁট থেকে যেনো হাসিরা সরছেই না।
ওর শরীরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু মনে যেনো তার রঙিন বসন্ত।
মেয়ের সাথে প্রায়ই একা একা কথা।কি যে ভালো লাগে।
ওর মনে হয় ওর মেয়েটা ওর সব কথা শুনছে,ওর সব কথা বুঝে।
মেঘলার মনটা তৃপ্তিতে ভরে যায়।
মনের কোথাও একটা অজানা ভয় থাকে।ওর সুখ তো ক্ষণস্থায়ী হয়।
যদি আবার কোনো ঝড় ওঠে??
তবু ও দমে না।যেটুকু সময় ভালো থাকা যায় ভালো থাকবে।
কষ্টকে ছুঁতে দিবে না।
ওকে ভালো থাকতে হবে মেয়ের জন্য।
পিছনের সব ভুলে শুধু মেয়ের জন্য ভালো থাকতে হবে।

চলবে…….

(গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ😇)

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=169467331959466&id=140699218169611

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here