মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৪৪

0
269

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু

পার্ট:৪৪

নানুমনি এত কিছু কখন করলে তুমি??
মমতা হাসান এই অল্প সময়ে এত আয়োজন করেছেন দেখে মাহার চক্ষু প্রায় চড়ক গাছ।
মাহার গলার স্বর পেয়ে মমতা হাসান পিছন ফিরে চাইলেন।মাহাকে আদর করে কাছে টেনে নিয়ে বললেন আপুমনিটা কত বছর পর এলো আর আমি এইটুকু করবো না!
ভাগ্যিস তোমাদের না জানিয়ে এসেছিলাম না হলে তুমিতো রান্না করেই অসুস্থ হয়ে যেতে আর আমি খাবারের বহরে হারিয়ে যেতাম।
মমতা হাসান শব্দ করে হাসলেন।বহুবছর পর তিনি আজ মন খুলে হাসলেন।
মাহাও হাসছে।
কিছুক্ষণ আগের গুমোট ভাবটা এখন অনেকটা স্বাভাবিক।
সাবিবা ওদের হাসতে দেখে নিজেও আপন মনে হাসলো।তারপর ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে টেবিলে একটা বাটি রাখতে রাখতে বললো,এতক্ষণে বাড়িটাকে বাড়ি মনে হচ্ছে।
মমতা হাসান দুই হাতে সাবিবা ও মাহাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আমার সোনার সংসার আবার ভরে উঠেছে।আমার মেয়ে,নাতনি আমার বুকে এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে!

মুবিন হাসান ও মমতা হাসান এর সাথে সাবিবার সম্পর্কটা স্যার আণ্টি থেকে মা বাবা তে চলে এসেছে।মানুষগুলো যেমন ওকে আপন করে নিয়েছে তেমন ও নিয়েছে।সাবিবাও তাদের জন্য জান প্রাণ উজাড় করে করছে।পড়াশুনা শেষ করেছে।একটা এনজিও তে চাকরি করছে।মুবিন হাসান রিটায়ার্ড করেছেন বহুবছর।তারপর থেকেই সংসারটা সাবিবা একাই টানছে।

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
মমতা হাসান রুদ্রর প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলল,তোমার মাকে নিয়ে এলে না কেনো??
আর বলবেন না আণ্টি মাহা আপনাদের সারপ্রাইজ দিতে এত তাড়াহুড়া করলো যে শেষ মুহূর্তে মা হাপিয়ে উঠেছিলেন।তাও নিয়ে আসতাম কিন্তু পাসপোর্ট নিয়ে একটু ঝামেলা হয়ে গেল।এত কম সময়ে এতকিছু ম্যানেজ করা…
তোমার অনেক প্রেশার গেলো তবে…
তা একটু যাবেই..আর মেয়ের আবদার বলে ওইটুকু তেমন কিছু না।
মাহা হেসে বলল,পাপা ইউ আর বেস্ট।
রুদ্রও তৃপ্তির নিশ্বাস নিয়ে খেতে শুরু করলো।
আহা কত দিন আপাকে দেখা হয় না।
কি বলো নানু??রোজই তো ভিডিও কল এ দেখো দাদুমনিকে।
ঐভাবে দেখা আর সামনে দেখা এক না তো আপুমনি।
হ্যাঁ তাও ঠিক।
এরপর আমরা না হয় সবাই গিয়ে আন্টিকে দেখে আসবো।আবার আমাদের ঘুরে আসাও হবে।
সাবিবার কথায় সবাই খুশি খুশি মেনে নিল।
মুবিন হাসান বললেন,এইটা কিন্তু তুমি বেশ ভালো বলেছ।
সাবিবা হাসলো।
কিন্তু বাবা এই মুহূর্তে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট কথা হচ্ছে রুদ্রর এইবার বিয়ে দেওয়া দরকার।
আপু কি যে বলেন এই বয়সে বিয়ে?
পুরুষমানুষের এইটুকু বয়সকে তো কেউ কিছু ভাবেই না।তার উপর তোমাকে দেখে বুঝা মুশকিল তোমার বয়স কত।আনুমানিক যে কেউ ত্রিশ এর কিছু বেশি বলবে।আর খুব বেশি হলে বলবে বত্রিশ কী তেত্রিশ।
সবাই হেসে দিল।সব চেয়ে বেশি হাসলো মাহা।
জানো মামনি আমার সব ফ্রেন্ডরা তাই বলে।এমনকি অনেক আন্টিরা ছোট থেকেই আমাকে এক্সট্রা কেয়ার করে শুধু মাত্র পাপার একটু ইন্টেনশন পাওয়ার জন্য।কিন্তু পাপা তো কাউকে পাত্তা দেয় না।এমনকি তাকায়ও না।পাপা একটা বিয়ে করলে কি হয়?আচ্ছা তোমরাই বলো আমার না হয় আরেকটা মাম্মা হতো।এতে কি ক্ষতি হতো??
তাই তো রুদ্র।তোমার কিন্তু মাহার আন্টিদের দিকে এট লিস্ট তাকানো উচিৎ।
সবাই আবার হাসলো।
রুদ্র বেশ লজ্জা পেলো এবার।
মাহা খাওয়ার সময় এত কথা বলতে হয় না।
মাহা ঠোঁট উল্টে আহ্লাদী ভঙ্গিমা করে বললো,আমি ভুল কিছু বলেছি??
আহা রুদ্র…না আপুমনি তুমি ভুল কিছু বলো নি।
মাহা বিশ্ব জয় করা হাসি দিল।
আঙ্কেল আপনিও..
আমিও কি??ওরা কেউই ভুল তো কিছু বলছে না।তোমার এইবার বিয়ে করা উচিৎ।আরও আগেই করা উচিৎ ছিল।
আঙ্কেল আমি বিয়ে করব না ঠিক করে নিয়েছি।
এইটা বললে তো হবেনা…
রুদ্রর চোখ মুখের ভাব ভঙ্গি বদলে যাচ্ছে।মাহা এতক্ষণে হুশে এলো।এইবার পাপা ভয়ংকর ক্ষেপে যাবে।কোনো অজ্ঞাত কারণে পাপা বিয়ে করতে চান না।টপিক এক্ষুনি বদলাতে হবে।

সবাই শোনো শোনো একটা কথা….
মাহার কথায় সবাই কথা থামিয়ে ওর দিকে তাকালো।
এইসব আলোচনা পরেও করতে পারবে আগে বলো আমাকে কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে??
রুদ্রর চট করে রাগটা মীয়ে গেলো।প্রসন্ন দৃষ্টিতে মাহার তাকিয়ে আছে।মেয়েটা মায়ের মত অবুঝ হলেও পরিস্থিতি বেশ সামাল দিতে পারে।মায়ের মত গাঁধী হয় নি।রুদ্রর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
সাবিবা বলল,তাই তো আমাদের মাথা থেকে তো সব বেরিয়ে গেছে।কোথায় কোথায় যাওয়া যায়??
হিস্টরিকাল প্লেসে তো অবশ্যই যাবো মামনি।আমি ফ্রেন্ডদের দেখাবো আমাদের দেশে কত কি আছে আর কত সুন্দর।
তা তো নিয়েই যাবো।আমাদের দেশ আসলেই অনেক সুন্দর।কিন্তু শুরুটা কোথা থেকে করা যায়??
শহীদ মিনার,স্মৃতিসৌধ,জাদুঘর….
গুড আইডিয়া!
কাল থেকেই কিন্তু আমাদের ঘুরে বেড়ানো শুরু করবো।
কিন্তু আমার তো ছুটি নেওয়া হয়নি।
নিবে ছুটি।মামুনি তোমাকে যেতেই হবে।
দেখি ম্যানেজ করতে পারি কিনা?এইভাবে সারপ্রাইজ দিবি জানতাম নাকি?না হয় আগেই ছুটি নিয়ে রাখতাম।
আমি কিছু জানি না মামনি তোমাকে যেতে হবে।আর বলে কয়ে কেউ সারপ্রাইজ দেয় না।
হ্যাঁ আপু এনজিও তে ফোন দিয়ে বলে দেখলে হয় না??
দেখছি।

সবাই টুকটাক কথা বলছে আর খাচ্ছে।
এর মধ্যে মমতা হাসান বলেন,আমাদের মাহা কিন্তু একদম বিদেশি মেম সাহেব হয়নি।কি সুন্দর বাংলা বলে।
রুদ্র হেসে বলল,আণ্টি ঐখানে আমরা বাংলা কথা বলি ঘরে।আর মাকে তো জানেনই ধরে ধরে ওকে বাংলা পড়িয়েছে।
সবার চোখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।

মামনি ও মামনি আমি কিন্তু তোমার সাথে ঘুমাবো।
তুই তো আমার সাথেই ঘুমাবি।
কিন্তু নানুমনি বলছে উনার সাথে শুতে।
হ্যা তো।
মাহা ঠোঁট গোচ করে প্রশ্নোত্তক চোখে তাকিয়ে রইল।
বুঝলি না তো??
উহু।
যতদিন আমার মাহা সোনাটা আছে ততদিন আমি,তোর নানুমনি আর মাঝে তোকে নিয়ে ঘুমাবো।
মাহা যেনো মহা খুশি।সত্যি মামনি!
হ্যাঁ রে পাগলি।তোকে কি আমরা কাছে পাই?আবার কবে পাবো ঠিক আছে??
জানো মামনি আমারও খুব ইচ্ছা হয় তোমাদের কাছে আসতে।কিন্তু পাপা রাজি হয় না আর তোমরাও বলো না তাই পাপা আরও বেকে বসে।তোমরা আমাকে ভালোই বাসো না।
সাবিবা স্মিত হেসে বলল,তোকে যে কতটা ভালোবাসি সেটা আমি তোকে বুঝাতে পারবো না।তোকে পেটে ধরিনি ঠিকই কিন্তু তুই আমার সন্তানের চেয়েও বেশি।আমার কলিজা আমার মা।ওর চোখে স্বচ্ছ পানিরা চিকচিক করছে।
এই মামনি….তুমি কিন্তু একদম কাদবে না।আমিও কিন্তু কেঁদে ফেলবো।
সাবিবা দুহাতে ওকে আগলে ধরলো।
ততক্ষণে ঠোঁট উল্টে কেঁদেই ফেললো।
বোকা মেয়ে কাদে না।
বিছানায় এক্সট্রা বালিশ রাখতে রাখতে মমতা হাসান বললেন,মা মেয়ের কান্নার পার্ট চুকে গেলে শুতে আসেন আপনারা।আমি বুড়ো মানুষ এত রাত জাগতে পারবো না।
মমতা হাসান এর তাড়া খেয়ে মা মেয়ে একজন আরেকজনের দিকে হাসি দিল।
আমার নানুমনিটার কি কষ্ট হচ্ছে….আহারে আমার নানাভাইটা একা আছে….
দেখ দেখ সাবিবা তোর মেয়ে কত পেকেছে…
একটু পাকবই….আমি অ্যাডাল্ট হয়েছি জানো না।
এহ মেয়ে কত বড় হয়ে গেছে..একটা বুড়ো ধরে বিয়ে দিয়ে দেই??কি বলো মা?
হ্যাঁ,ঠিক বলেছিস এইবার বিয়ে দিয়ে দিব।
ধ্যত,কি বলো না আমার লজ্জা করে।দুহাতে মুখ ডেকে বারান্দায় চলে গেল।
মমতা হাসান এর চোখ ভিজে উঠছে।মাহাকে দেখলেই মেঘলার কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে।মেয়েটা পুরোপুরি মায়ের মত হয়েছে।
মাহা বারান্দায় বসে না থেকে শুয়ে পর এত লজ্জার কিছু হয়নি।
মামনি পরে আসছি।
কোনো পরে নাই।এতটা জার্নি করেছিস আবার কাল সকাল সকাল বের হবো।অনেক প্রেসার যাবে।
ঠিক আছে মামনি যাচ্ছি।

বিছানায় শুয়ে মমতা হাসান এর দিকে তাকিয়ে বললো,নানুমনি কাল আমি তোমার মত শাড়ি পড়বো।একদম খাটি বাঙ্গালী ললনার মত।
শুনলি তো সাবিবা শাড়ি পড়তে চায়…তোর মেয়ের কিন্তু বিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
নানুমনি আবার..যাও আমি পড়বো না শাড়ি।
সাবিবা হাসতে হাসতে বলল,মা আর ক্ষেপিও না তো ওকে।
ঠিক আছে কিছু বলবো না।কিন্তু শাড়ি সামলাতে পারবি তুই???
খুব পারবো নানু।
ঠিক আছে কাল শাড়ি পরিয়ে দিবো পরেই দেখা যাবে কত পারবে!
আমি খাটি বাঙ্গালী ললনা নানুমনি।কালই বুঝিয়ে দিব।
মাহা ঠোঁটে ফুটে উঠল দুষ্ট মিষ্টি এক প্রানবন্ত হাসি।

চলবে……….

গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকুন।ধন্যবাদ💖

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/140699218169611/posts/346937844212413/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here