মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৬

0
461

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৬

আমি মনে হয় প্রেমে পড়ছি….
কিইইই……
এত অবাক হচ্ছিস কেন?
(বিস্ময়ে রুদ্রর মুখ হা হয়ে আছে)
মুখটা নরমাল কর না।(ধমকের সুরে বলল) সিরিয়াস কথা বলছি তো নাকি??
রেগে যাচ্ছিস কেনো?
এইরকম মুখ করে থাকলে রাগ করবো না??
তোর যে হুটহাট রেগে যাওয়ার বাতিক সেটা জানলে তোর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ,বলেই ফিক করে হেসে দিল রুদ্র।
মেঘলা এইবার মুখ গোমড়া করে বসে রইল।
আহা সদ্য প্রেমে পড়া মেয়ের মুখ এমন হয় নাকি??
কেমন হয়?
সদাহাস্য…
রুদ্রর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।হ্যাঁ রে তুই একদম ঠিক বলেছিস।
আমি আবার কি বললাম?
ওই যে সদাহাস্য।জানিস আমি ইদানিং কারণ ছাড়াই খুশি থাকি তাইতো বুঝলাম আমি প্রেমে পড়ছি।
ও আচ্ছা এই তাহলে তোর খুশির কারণ???
হুঁ..
এইবার বলতো কোন সেলিব্রিটির প্রেমে পড়লি??
রুদ্র I am not joking..seriously I am in love…
রুদ্র এইবার নড়ে চড়ে বসলো।ঠিক কি বলছে মেঘলা?? সেটা খুব সহজ সাবলীল আর স্পষ্ট।তবুও ওর যেনো বোধগম্য হচ্ছে না।
তোর খালি মনে হয় আমি ফাজলামি করি?
….
চুপ মেরে গেলি নাকি??
তুই সবসময় বোকা বানানোর জন্য আমাকেই পাস??
বিশ্বাস কর আমি মজা করছি না।
কি করছিস??
সবটা শুন তাহলেই বুঝবি।
বল….
হাতে থাকা পকোড়াটা অর্ধেক খেয়ে বাকিটুকু বাটিতে রেখে দিয়ে অস্ত যাওয়া সূর্যের ঈষৎ অবশিষ্ট আলোর দিকে তাকিয়ে বুক ভরে একবার নিশ্বাস নিয়ে ছেড়ে দিল।মেঘলা এবার বলতে শুরু করল।

তোর মনে আছে কয়েকদিন আগে তোর সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম??
হুঁ মনে আছে।সেই ছেলেকে শাসাতে গিয়ে নিজের পায়ের ১২টা বাজিয়েছিলি।খুব মনে আছে।(অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে রুদ্র)
মেঘলাও স্মিত হাসলো।
তুই হাসছিস যে??(হাসতে হাসতেই বললো)
তাকে শাসানোর আগেই আমি ফেঁসে গেলাম।বলেই আবার হাসলো।
রুদ্র হাসি থামিয়ে মেঘলার সে হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।বড্ড রহস্যময়ী মনে হচ্ছে মেঘলাকে।সে দিকে তাকিয়েই রুদ্র বললো,
তোকে কেমন যেন খুব রহস্যময়ী লাগছে।
আমারও মাঝে মাঝেই এখন তাই মনে হয়।
হুহ!তোরতো কত কীই মনে হয়…কি হইছে সেটা বল।
কি আর হবে ফেঁসে গেছি তার প্রেমে।
কিহহ??ব্রু কুচকে এলো রুদ্রর।
এত অবাক হচ্ছিস কেন?
তোর থেকে কত বড় দেখছিস??
খুব বেশি না ৭/৮বছরের বড় হবে হয়তো।
আবারও ব্রু কুচকালো,Clear করে সবটা বল।
বলছি তো।কোনো প্রশ্ন না করে শুন।
হুঁ…
জানিসইতো পায়ে ব্যাথা পাওয়ার জন্য বাড়িতেই থাকতে হতো তখন।তখন সাবিবা আপু আমাদের বাসায় আসত পড়তে।
সবীবা আপুটা কে??
সীমান্তর ছোট বোন।
সীমান্ত কে??
যার সাথে ধাক্কা খেলাম।
সীমান্তর ছোট বোন তোর আপু আর সীমান্তকে নাম ধরে বলছিস??
ওই আরকি….মেঘলা যেনো লজ্জা পেলো।
কি এমন বললাম যে এত লজ্জা পেলি??
তুই কি আমাকে বলতে দিবি??
হুহ বল…
সাবীবা আপুকে সীমান্ত সপ্তাহে ৩দিন বিকেলে নিয়ে আসে আমাদের বাসায়।আপু উপরে চলে আসতো আর সীমান্ত আমাদের গেটের বাইরে অপেক্ষা করত।আর ওই সময় আমার নড়াচড়া বারণ ছিল তাই বিকেলের সময়টা বারান্দায় বসে থাকতাম।তখন প্রায়ই আমাদের দুজনের চোখাচোখি হত।আমার কেনো যেনো মনে হতো আমি যতক্ষণ বসে থাকি ওই পুরোটা সময়ই আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।আর আমি তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়।প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগতো।একে তো তার জন্য আমি পায়ে ব্যাথা পেয়ে বাসায় বন্দী তারউপর আমার দিকে ঐভাবে তাকিয়ে আছে।খুব রাগও হতো।দুইদিন এমন হওয়ার পর আমি চোখ মটকে তাকাই।বুঝাই বিরক্ত হচ্ছি।কিন্তু হলো উল্টা।সীমান্ত তখন আমাকে ইশারায় sorry বললো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।আমিও তাকে ইশারায় বললাম,sorry কেনো বলছে।তখন সে আমার পায়ের দিকে ইশারা করলো।আমার খুব হাসি পেলো তখন ওর মুখটা দেখে।এত বড় একটা মানুষ ওমন বাচ্চাদের মত মুখ করে আছে…বলেই মেঘলা হাসলো।
রুদ্র একদম চুপ করে আছে।বহু কষ্টে ধরে আসা গলায় বলল,ব্যাস এতেই ফেসে গেলি??
নাহ তখনি কিছু বুঝিনি।তখন থেকে ইশারায় একটু আধটু কথা হতো।কেমন আছি?পায়ের কি অবস্থা?এইসব টুকটাক কথা।
ফাসলি কখন??
তুই এইভাবে কথা বলছিস কেন??
আমি ঠিকভাবেই বলছি।তুই পরে বল।
মেঘলা আর রুদ্রকে ঘাটলো না।ওর মত করে আবার বলতে শুরু করল।
আমার পা তখন অনেকটাই ভালোই ছিল।স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারি।তখনও বিকেলে বাইরে বের হতে পারতাম না মা বকাবকি করতো।তবুও মাঝেমাঝে জোর করে বের হতাম।বেশি দূরে না বাড়ির সামনে হাটাহাটি করতাম।আর তখন ওর সাথে সামনাসামনি টুকটাক কথা হতো।
এক সেকেন্ড….. ও টা কে?
সীমান্ত…..বলেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
এক পলক দেখে চোখ সরিয়ে নিল রুদ্র।বড্ড বেশী মায়াবী লাগছে।তবুও খুব অসহ্য লাগছে মেঘলাকে।কিন্তু কেনো?
আস্তে আস্তেই যেনো তার প্রতি ভালো লাগাটা বাড়তে লাগল।আপন মনেই বলল মেঘলা।সীমান্তর কথা ভাবতে যেমন ভালো লাগে বলতেও ভালো লাগে।আমার কাছে সীমান্ত মানেই একটা ভালো লাগার নাম,একটা ভালো লাগার অনুভূতি।এইটা কি ভালোবাসা??
শুণ্যদৃষ্টিতে অদূরে অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভার দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্র।ওর এইসব কথা শুনতে একদমই ভালো লাগছে না।মেঘলাকেও সহ্য হচ্ছে না।এইখানে বসে থাকাটাও যেনো অসহ্য লাগছে।
বলনা রুদ্র এইটাই কি ভালোবাসা???
রুদ্র যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বলল,আমি এইসব জানি না তুই তোর ওকে জিজ্ঞেস করিস।রুদ্র আর বসলো না।দাড়িয়ে পড়লো।
মেঘলা কিছুই বুঝতে পারছে না এতটা রেগে কেনো যাচ্ছে রুদ্র।
তুই রাগ করছিস নাকি?
আমি রাগ করলে তোর কি?
রুদ্রর চোখে চোখ পড়তেই আতকে উঠলো মেঘলা।অসম্ভব লাল হয়ে আছে।এত বছরের বন্ধুত্ব ওদের কখনো এত টা রাগতে দেখেনি রুদ্রকে।তবে আজ কি হলো??
তুই এমন কেনো করছিস?আমার ভয় লাগতেছে।
ভয় লাগলে আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস কেন??
তোর কি হইছে আমাকে বল…
আমার কিছু হয়নি।তুই এক্ষুনি চলে যা।
আমার কথা তো শে…….
তোর কথা শুনার সময় আমার নেই।আমাকে প্যাকিং করতে হবে।
তুই আমার সাথে রাগ কেনো করছিস??
এইবার রুদ্র ঘুরে একদম মেঘলার চোখ বরাবর দাড়ালো।মেঘলার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলল,তুই আমার কে?তোর সাথে রাগ করতে কেনো যাবো??
রুদ্রর কথায় কিছু একটা ছিল ফলে মেঘলা ভয় কেপে উঠলো।কাপা কাপা গলায় বললো,
আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড…
রুদ্র মেঘলার বাহু ছেড়ে দিয়ে যতটা সম্ভব নিচু গলায় বলল,তুই চলে যা এক্ষুনি…..
কিন্তু……
তুই এক্ষণ এইখান থেকে চলে যাবি…..প্রচন্ড জোড়ে ধমকে বলল রুদ্র।
সেই ধমকে কেপে উঠে মেঘলা।সেখানে আর এক সেকেন্ডও দাড়ালো না।কাদতে কাদতে নিচে নেমে গেলো।
রুদ্র ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেভাবেই।

রুদ্রর জোরে ধমকের শব্দ শুনে রেহানা মাহমুদ দ্রুত বেরিয়ে এলেন।আর তখনই দেখলেন মেঘলা কাদতে কাদতে নেমে যাচ্ছে।পিছন থেকে ডাকলেন তিনি,
মেঘলা…
……..
মেঘলা দাড়া…
………..
কি হইছে মা….
মেঘলা একবারও পিছন ফিরল না।তাই তিনি ছাদে চলে গেলেন।পকোড়ার বাটিটা মাটিতে পড়ে আছে।রুদ্রকে ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে খুব অবাক হলেন।রুদ্রর সামনে গিয়ে বললো,
মেঘলার কি হইছে??
……..
ঐভাবে চলে গেল??
……..
তুই নিশ্চয়ই কিছু বলছিস…
……..
মেয়েটা ঐভাবে একা একা বেরিয়ে গেলো
….
তুই দাড়িয়ে না থেকে যা মেয়েটাকে বাসায় দিয়ে আয়।ভড় সন্ধাবেলা বাচ্চা মেয়েটা একা একা কি করে যাবে??
তোমাকে ভাবতে হবে না ও একাই যেতে পারবে।অনেক বড় হয়ে গেছে….পাশ থেকে রুদ্র বলল।এখনো একই ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে।

রেহানা মাহমুদ ছেলের কথার মানে বুঝলেন না।তিনি রুদ্রর দিকে একবার তাকালেন।ওকে আর না ঘাটিয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলো।মেঘলা কতদূর গেলো দেখতে।কিন্তু ততক্ষণে মেঘলা চলে গেছে।তিনি নিরাশ হয়ে ফিরে এলেন।কিছুক্ষণ বাদে ফোন করে খোঁজ নিবেন না হয় শান্তি লাগবে না।

চলবে…….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here