মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৭

0
283

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৭

রুদ্র গ্রামে এসেছে আজ প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো।কিন্তু একবারও মেঘলার সাথে কথা হয়নি।না মেঘলা খোঁজ নিয়েছে না রুদ্র।রুদ্রর এই হটাৎ এতটা রেগে যাওয়ার কারণ মেঘলা জানে না।তবে সে খুব কষ্ট পেয়েছে।এতটা খারাপ ব্যবহার করার মতো তো কিছু হয়নি।তাহলে মেঘলা কেনো খোঁজ নিতে যাবে??কখনওই না।আর মেঘলার এখন এইসব নিয়ে ভাবার সময় কই?সেতো সীমান্তকে নিয়েই ভেবে কুল পায় না।ভালোবাসার অনুভূতি এত মধুর হয় কি করে??সীমান্ত যখনই ওর পাশে থাকে মনে হয় ও কোনো রূপকথার রাজ্যে আছে।যেখানে ও রাজকুমারী আর সীমান্ত রাজকুমার।এখন বসে বসে এইসবই ভাবছে মেঘলা।গতকাল বিকেলে এইসময়ের কথা মনে হলেই ভালো লাগার এক অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছে মেঘলাকে বারবার।এমন কিছু হবে কখনো ভাবেওনি মেঘলা।ইসসসসসস!কি যে ভালো লাগছে তবে লজ্জাটাই লাগছে খুব।আয়নায় নিজেকে দেখতেও লজ্জা লাগছে।দুহাতে মুখটা চেপে ধরে বসে আছে লজ্জায়।তবুও সে গতকালের কথাই ভেবে চলেছে।

আজও সাবিবা আপু পড়তে এসেছে বাসায়।সাবিবা বাসায় ডুকার পরপরই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।এইরকমই করে ইদানিং মেঘলা।কারণ ওই সময় সীমান্ত নিচে দাড়িয়ে থাকে।আজও সেই ভাবনায় মেঘলা বের হলো।কিন্তু আশেপাশে কোথাও সীমান্তকে দেখতে পেলো না।খুব মন খারাপ হচ্ছে।আজ ও এলো না??মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল।তবে কি আজ আর দেখতে পাবে না??আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগুতে লাগলো মেঘলা।ওদের বাড়ির থেকে অনেকটা সামনে চলে এসেছে।আর একটু সামনেই একটা পুকুর আছে।শানবাঁধানো ঘাট আছে।এইখানে প্রায়ই বসে থাকতো মেঘলা আর রুদ্র।এইদিকে পরিবেশটা অনেক সুন্দর।শান্ত নির্জন,কিছুটা কোলাহলবিহিন।

আপন মনেই মেঘলা ঘাটের মাঝের দিকে একটা সিড়িতে বসলো।ভালো লাগছে না কিছু।পুকুরের পানির দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঠিক কি দেখছে বুঝা যাচ্ছে না।তখনই মেঘলার গালে কারও ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই ভয়ানক চমকে উঠলো।ঘাড় ফিরিয়ে দেখার আগেই ওর পাশে কেউ বসলো।প্রচন্ড আতঙ্কে সেদিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে সামনে বসে থাকা মানুষটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে চোখ খুলে আরেক দফা চমকে উঠলো।একবার সামনে থাকা মানুষটাকে দেখছে আর একবার নিজের গালে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে।খুব কান্না পাচ্ছে।সীমান্ত ওর সাথে এমনটা করতে পারলো??মাথা নিচু করে বসে রইল।সীমান্ত মেঘলার অবস্থা দেখে মেঘলার হাতটা নিজের হাতে নিল।
এইটুকুতেই এতটা ঘাবড়ে গেলে হবে?
………
তুমি কি রাগ করেছো?
………
কথা বলবে না??
………
আমিতো তোমাকে ভালোবাসি।আমারতো ইচ্ছা হয় তোমাকে একটু আদর করতে????
তাই বলে চুমু…..
তাহলে কিভাবে আদর করবো ভাবছো?ব্রু নাচিয়ে হেসে হেসে বললো।
জানি না…বলেই মেঘলা সরে বসলো।খুব কান্না পাচ্ছে ওর।
সীমান্ত মেঘলার দিকে এগিয়ে একদম কাছ ঘেঁষে বসলো।একহাতে মেঘলার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।মেঘলা কেপে উঠলো তখনই।কোমড় থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।উল্টে সীমান্ত মেঘলার কোমড় ধরে একদম ওর কাছে নিয়ে আসলো।ওদের মাঝে দুরত্ব বলতে মোটে ৪” ও হবে না।মেঘলার চোখ আপনাআপানি বুজে এলো।সীমান্ত মেঘলার গালে হাত রাখলো।
আজতো গালে চুমু খেয়েছি,কয়েকদিন পর…..(সীমান্তর কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে ঘোরে আছে)
ঠোঁট জোড়া কাপছে।
মেঘলার ঠোঁটে আলতো করে আঙ্গুল ছুঁয়ে বলল,এরপর এর স্বাদ নিব….
মেঘলার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল কিছু অনুভূত হতে লাগলো।
তারপর….হাতটা ঠোঁট থেকে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নিতে লাগলো।
সীমান্তর হাত ঠোঁট থেকে গলা অব্দি নেমে আসতেই মেঘলা হাতটা চেপে ধরে আটকাল।
সীমান্ত হাসলো।
মেঘলা তখনো কাপছে।
সীমান্তের মুখটা একদম মেঘলার বরাবর এনে আবেদনময় কণ্ঠে বলল,ভালোবাসতো??
এতক্ষণে মেঘলা চোখ খুললো।খুলেই দুজনে চোখাচোখি হয়ে গেল।মেঘলা লজ্জায় আবার চোখ বুজে নিল।
কি হলো?ভালোবাসতো আমায়??
মেঘলা সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল।
সীমান্ত যেনো বাঁকা হাসলো।কোমরের হাতটা আলগা করে ধরলো।তাহলে এত ঘাবড়ে গেলে যে??
কোমরের বাঁধন আলগা হতেই মেঘলা জানি না বলে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।
ইসসসসসস!আজ কি লজ্জাটাই না পেলাম।

সেই যে বিকেলে বাসায় ডুকেছে এরপর থেকে সে নিজের ঘরেই বসে আছে।এক আধবার খাওয়ার জন্যে বের হয়েছে কিন্তু সে বের না হলেও পারতো।খাবার নাড়াচাড়া করে চলে এসেছে।সারারাত ঘুমায়নি পর্যন্ত।ঘুরেফিরে একই ভাবনা মাথায় আসছে আর লজ্জায় মিয়ে যাচ্ছে।

সীমান্ত আর মেঘলাকে তখন আটকাল না।ওর কাজ হয়ে গেছে।মেঘলা যে ওর উপর দুর্বল হয়ে পড়েছে বেশ ভালোই বুঝে গেছে।ওর আপাদত কিছু না করলেও চলবে।ভেবেই আবার বাঁকা হাসলো।হাসির ধরনটা ছিল বড্ড কুৎসিত।মেঘলা যদি একবার পিছন ফিরে দেখতো তখন তাহলে…..

উচু এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে মেঘলা আর রুদ্র।পাহাড়ের নামটা জানা নেই তাদের।পাহাড়টা যেমন উচু তেমনি খাড়া।খুব ভয়ংকর দেখতে।তবুও দুজন উঠছে সে পাহাড়ে।যেনো ওদের কোনো ভয় নেই নির্ভীক।পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।যে করেই হোক ওদের সেখানে পৌঁছাতে হবে।মাঝামাঝি পৌঁছে মেঘলা বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।তাই বারবার পিছিয়েও পড়ছে আর রুদ্র থেমে থেমে ততবারই টেনে তুলছে।মেঘলাও পরম ভরসায় রুদ্রর বাড়িয়ে দেয়া হাতটা চেপে ধরছে।রুদ্রর লক্ষ্য স্থির কিন্তু মেঘলা ওর লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পড়ছে।ওকে তুলতে গিয়ে রুদ্র খানিক পিছিয়ে পড়লেও মেঘলার থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে।এই মেয়েটা সবসময় সবকিছুতেই খামখেয়ালী থাকবেই।বারবার পিছিয়ে পড়ছে দেখে রুদ্র এবার রাগ করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো।আর কত ওকে টেনে তুলবে যদি ওর ইচ্ছেটাই না থাকে???রুদ্র তরতর করে বেয়ে চলেছে পাহাড়ের ধার ধরে।আর মেঘলা তখনও স্থির হয়ে আছে।যেনো ওর লক্ষ্য কি সেটাই ভুলে গেছে।খানিক উপরে উঠে আবার পিছন ফিরে তাকালো।এবারও সে হতাশ হয়ে মেঘলার কাছে আসতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই মেঘলার পেছন থেকে কারও একটা হাত দেখতে পেলো।মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না,তবে তার ছায়া দেখতে পাচ্ছে রুদ্র।মেঘলা খুব আগ্রহ নিয়ে সে হাত ধরে আছে।রুদ্র সেটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না।কিছুটা পিছিয়ে গেলো রুদ্র।তবুও মেঘলার কাছাকাছি রইলো।যদি মেঘলার প্রয়োজন হয়।মেঘলা টুকটুক করে হাঁটছে।কিন্তু মেঘলার ধরে থাকা হাতটা বারংবার ওকে পিছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আর মেঘলাও হাসতে হাসতে পিছাতে লাগলো।রুদ্র যতই কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছে মেঘলা ততই পিছিয়ে পড়ছে।আচমকাই মেঘলার হাতটা ছেড়ে দিল ছায়াটা।মেঘলা পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছে।বাঁচার জন্য প্রাণপণে চিৎকার করছে।রুদ্রও সমান তালে চিৎকার করে এগিয়ে যাচ্ছে।মেঘলা পাহাড়ের গায়ের এক নড়বড়ে ডাল ধরে ঝুলে আছে।রুদ্র চাইছে মেঘলার হাত ধরে তুলতে কিন্তু না কোনোভাবেই সে মেঘলার হাত ধরতে পারছে না।আর ডালটাও প্রায় ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থায়।যেকোনো সময় ডাল ভেঙ্গে মেঘলা পড়ে যেতে পারে গভীর খাদে।যেখান থেকে বাঁচানো অসম্ভব।

চলবে……………

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here