মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৯

0
266

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৯

আব্বু…
বল।
একটা কথা ছিল।
মুবিন হাসান ভাতের লোকমা মুখে নিয়ে বললেন,বলে ফেল।
আসলে আব্বু…
তোর কথা পরে বলিস আগে আমার কথা শোন,মেঘলাকে বাঁধা দিয়ে মমতা হাসান বললেন।
আহা মমতা আগে ওকে বলতে দেও।মেঘলা বল কি বলবি।
আগে বলো আব্বু রাগ করবা না!
কি এমন বলবি যে রাগ করবো?
তুমিতো সব কথাতেই রাগ করো।
রাগ করার মতো কিছু হলেই রাগ করি।
না শুনেই রেগে যাচ্ছো?
আচ্ছা বল।
মমতা হাসান নীরব দর্শকের মত বাবা মেয়ের কথা শুনছেন।তিনি বুঝতে পারছেন না মেঘলা হটাৎ কি এমন বলবে!!তিনি মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছেন কি বলে শুনার জন্য।
আব্বু আমার এক…ক..ক…
কি এ এ!
একবার ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,আব্বু আমার না একটা মোবা….
কি বল?
আমার একটা মোবাইল লাগবে।(এক নিশ্বাসে কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে রাখলো।)
মুবিন হাসান হাসছেন।মমতা হাসানও স্বামীর দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
কারো কোন সাড়া না পেয়ে মেঘলা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালো।বাবা মাকে হাসতে দেখে খুব অবাক হল।এইরকম একটা আবদার শুনে তো আব্বুর রেগে যাওয়ার কথা কিন্তু রাগলো না কেন??একবার বাবার দিকে তো একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কি হলো বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছে।
মুবিন হাসান হাসি থামিয়ে বললেন,এইভাবে কি দেখছিস!
না মানে আব্বু আমি হাসির কিছু কি বললাম?
অনেকটা সেরকমই।
মানে?
এমন একটা জিনিস চাইলে যেটা কয়েকদিন পর তোকে এমনি কিনে দিবো।
আব্বু কয়েকদিন পর কেনো?
কারণ তখন তুই কলেজে ভর্তি হবি একটা ব্যাপার আছে না!বলেই হাসলেন।
কিন্তু আব্বু আমার এখনই লাগবে।
এখনই!!
হুমম….
কেনো?
আমার সব ফ্রেন্ডরা ফোন নিতেছে….সবার ফোন আছে…
রুদ্রর তো নেই..(মমতা হাসান বলে উঠলেন)
এইবার যেনো মেঘলার মাথায় বাজ পড়লো।প্রচন্ড ক্ষেপে গেলো।এক ঝটকায় চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে রেগে গজগজ করতে করতে বললো,
রুদ্র রুদ্র রুদ্র…সব ব্যাপারেই রুদ্রকে কেনো টানো?ওর সাথে আমার জোড়া নাকি?ওর নাই বলে আমারও থাকতে নেই??
আকস্মিক এমন কান্ড দেখে মুবিন হাসান ও মমতা হাসান থমকে যান।মেঘলার এমন আচরণের কোনো মানে বুঝতে পারছেন না।মমতা হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলবেন তার আগেই মুবিন হাসান ইশারায় থামিয়ে দিলেন যতটা সম্ভব ঠান্ডা গলায় বললেন,
মেঘলা বসো।কি বলতে চাও ঠান্ডা হয়ে বলো।
(কিছুটা চিৎকার করে)আব্বু আমার…
আগে নিজেকে সামলাও পরে বলো।
আব্বু আমার ফোন লাগবে।
বলছিতো কিনে দিবো।
এতদিন আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।এই শুক্রবারের মধ্যেই আমার লাগবে।
আমি এখন কিনে দিতে পারবো না।
কেনো পারবে না?আমি কিছু বললেই তোমাদের যত সমস্যা।কই আমার ফ্রেন্ডদের মা বাবারা তো এমন করে না।তাহলে তোমাদের সব ব্যাপারেই এত সমস্যা কেনো?
তোমাকে বলছি তো কিনে দিবো আর….
আর কয়েকদিন পর টর জানি না আমার এক্ষুনি লাগবে,বলেই টেবিলে থাকা খাবার প্লেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলল।
এতক্ষণ মমতা হাসান চুপ থাকলেও এবার আর পারলেন।উঠে এসে মেঘলার গালে কষে একটা চড় বসালেন।
এতে যেনো মেঘলার রাগে ঘি পড়ল।রাগের কারণে সারাশরীর তিরতির করে কাপছে।সে আর দাড়ালো না।দৌঁড়ে নিজের ঘরের ঢুকে প্রচন্ড শব্দে গেটটা লাগলো।

মেঘলার এহেন আচরণে মমতা হাসান ও মুবিন হাসান থমকে গেলেন।এতটা মেজাজ তো কোনদিন দেখেনি তবে আজ কি হলো??মেঘলার দরজা বন্ধ করার পর মমতা হাসান ডাকাডাকি করতে নিলেন কিন্তু মুবিন হাসান বাঁধ সাদলেন।ওকে একটু একলা ছেড়ে দেও মমতা।মাথা ঠাণ্ডা হলে বুঝিয়ে বলো আর কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করো।মমতা হাসান কিঞ্চিৎ মাথা নাড়ালেন।এখনো কি ঘটছে বুঝতে পারছেন না তিনি।

হ্যালো! রুদ্র?
জি আণ্টি। আস্সালামুআলাইকুম।
ওয়ালাইকুমসসালাম।কেমন আছো বাবা?
আলহামদুলিল্লাহ আণ্টি।আপনারা কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ আছি বাবা একরকম।
আণ্টি কোনো সমস্যা?
হ্যাঁ,একটু সমস্যা ছিল।
কি হইছে?
তোমার আর মেঘলার কি কিছু হইছে?
না আণ্টি তেমন কিছু না।ওকে একটু বেশি বকেছিলাম আসার আগে।
তাই হয়তো এত ক্ষেপে আছে।
বুঝলাম না আণ্টি!
আর বলো না হটাৎ করে বলতেছে ওর ফোন লাগবে।তোমার আঙ্কেল বলছে কয়েকদিন পর কিনে দিবে।কিন্তু না ওর তাতে হবে না ওর এখনই লাগবে।
আণ্টি ওরে বুঝাইয়া বলেন ও ঠিক বুঝবে।
চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু..
কিন্তু কি আণ্টি?
তার আগেই মেঘলা ওর আব্বুর সামনেই খাবার প্লেট ফেলে দিয়ে চিৎকার চেচামেচি করে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।রাতে লাগিয়েছে এখন সকাল গিয়ে দুপুর হয়ে গেছে কোনো সাড়াশব্দ নেই।কত ডাকাডাকি করছি কোনো কিছু বলছে না।রাতেও খায়নি এখন পর্যন্ত না খাওয়া।
কি বলেন আণ্টি,মেঘলাতো এমন না।
সেটাই তো বুঝতেছি না।হটাৎ মেয়েটা এমন কেনো করছে?
আণ্টি চিন্তা কইরেন না।মাথা ঠাণ্ডা হলে এমনি খুলবে।পেটের ক্ষুধা নিয়ে কতক্ষন ঘরবন্ধি হয়ে থাকবে!ও গেট খুললে আমাকে একটা কল করবেন।আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো।
হ্যাঁ একটু বুঝাইয়া বইলো।তোমার কথা ও ভালো বুঝে।
জি আণ্টি বলবো।
তা বাবা কবে আসছো তোমরা?
আসতে অনেক দেরি হবে আণ্টি।
কেনো ঝামেলা কি বেশি হইছে?
জি আণ্টি।আসলে আমাদের বাড়িটাতো তালা বন্ধ করে পড়ে থাকে তাই অনেকেরই নজর পড়েছে।তাছাড়া বাবার রেখে যাওয়া ওই শেষ একটা সম্বল বাড়িটা।অনেক শখ করে বানিয়েছে বাবা তাই মাও ছাড়তে চায় না।
বুঝতে পারছি।সবদিক সামলে রেখো।মায়ের দিকে নজর রাইখো।
জি আণ্টি অবশ্যই।
আচ্ছা বাবা ভালো থাকো।
দোয়া করবেন আর মেঘলা গেট খুললেই কল করবেন।
ঠিক আছে।
রাখছি আণ্টি।
হুমম।

ফোনটা টেবিলের উপর রেখে রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মেঘলা এতটা ডেসপারেট কেনো হয়ে গেল?আমার ওর সাথে রাগ করা একদম ঠিক হয়নি।ওর পুরো কথা শুনা উচিৎ ছিল।তারপর বুঝানো দরকার ছিল।এখন আমি যাওয়ার আগেই যদি কোনো ভুল করে ফেলে?না বেশি দেরি করা যাবে না।এদিকের কাজ শেষ হলেই ফিরে যাবো।মেঘলাকে বুঝাতে হবে।আর চোখেচোখে রাখতে হবে।মেঘলা বড্ড অবুঝ।আর সীমান্ত লোকটা কেমন কিছুই জানিনা।এত বড় একটা লোক নিশ্চয়ই মেঘলাকে ভুলবাল বুঝাবে না।কিন্তু যদি লোকটা খারাপ হয়…..তখনই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে আবার আতকে উঠে।কিসের একটা ছায়া ছিল।ছায়াটা কার ছিল?দূর স্বপ্ন তো স্বপ্নই।স্বপ্ন নিয়ে এত ভাবছি কেনো?কিন্তু এইরকম স্বপ্নই বা দেখলাম কেনো?আবার আজই মেঘলার এই খবরটা শুনলাম।এর মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই তো?ধেত স্বপ্ন নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবছি।তবে মেঘলার কিছু একটা হয়েছে।ও কোনো বিপদে পড়ার আগেই ওকে সামলাতে হবে।আচ্ছা আন্টিকে সীমান্তের কথাটা বলে দিবো?না থাক পরে যদি হিতে বিপরীত হয়?আর আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চাচ্ছে না।কিছু একটা তো ঘটেছেই।নাহ কোনোভাবেই আর দেরি করা যাবে না।আমাকে ফিরে গিয়েই কিছু একটা করতে হবে।আপন মনেই ভেবে নিল রুদ্র।

চলবে……….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here