মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১০
বিকেলের দিকে মেঘলা গেট খুললো।বিছানা থেকে উঠে গেট পর্যন্ত আসতেই যেনো জীবন যায় যায়।মাথাটা শূন্য শূন্য লাগছে,শরীর কাপছে।এক্ষুনি পরে যাবে যেনো।তবুও না পারতে গেট খুললো।রাগের রেশ কমতেই পেটে জানান দিচ্ছে ক্ষুধার নাকি ক্ষুধার তাড়নায় রাগের রেশ কমে এলো মেঘলা জানে না।এখন শুধু জানে ওর খাওয়া দরকার।গলা দিয়ে শব্দও যেনো বের হচ্ছে না।দুর্বল গলায় মাকে ডাকার চেষ্টা করলো কিন্তু পারছে না উল্টে মনে হচ্ছে এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মমতা হাসান দ্রুত মেঘলার ঘরের দিকে ছুটে এলেন।এসে দেখেন মেঘলা টলছে।তিনি তাড়াহুড়া করে মেঘলাকে ধরে খাটে শুইয়ে দিলেন।মেঘলার চোখ মুখ বসে গেছে এইটুকু সময়েই।
মেঘলা দুর্বল গলায় বলল,আম্মু ক্ষুধা লাগছে।
মমতা হাসান মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন,বোকা মেয়ে আমার খাবার এর উপর রাগ কিসের হুমম…এখনই নিয়ে আসছি।
মমতা হাসান প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে আসলেন।তারপর নিজ হাতে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন।তিনিও আজ সারাদিন খাননি।কি করে খাবেন মেয়ে না খেয়ে থাকলে মায়ের গলা দিয়ে কি খাবার নামে!!
ভাত খাইয়ে মুখ মুছে দিলেন।তারপর এটো প্লেটটা পাশে রেখে বললেন,এইটুকু বিষয়ে এতটা রাগ কেউ করে??
মেঘলা নিশ্চুপ।
এই যে না খেয়ে ছিলি, কার কষ্ট হইছে বল?
……….
তোরই তো!তাহলে এমন কেনো করলি?
………
তোর আব্বু কত কষ্ট পেলো।
………
কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে?তাহলে এখন শুয়ে থাক কিছু বলতে হবে না।
………
মমতা হাসান উঠে প্লেটটা নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।তখনই আবার ফিরে এসে বললেন, শোন রুদ্র বলছে তোর সাথে কথা বলবে।এখন কি কথা বলতে পারবি??
আম্মু আমি ওর সাথে কথা বলবো না।
ঠিক আছে কথা বলতে হবে না।শুয়ে থাক।
মমতা হাসান চলে গেলেন।
মেঘলা কপালে একটা হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।আর ভাবছে সীমান্তর কথাই ঠিক।এই রুদ্রর জন্যই যত ঝামেলা।ও আমার ভালো দেখতে পারে না।আমার মা বাবাকেও বশ করে রাখছে।তাই জন্যই তো আব্বু আম্মু আমার কথার কোনো গুরুত্ব দেয় না।আমি নাকি ছেলেমানুষ।রুদ্র হলো সব জানতা,সব বুঝে।রুদ্রও তো আমার বয়সী।তাহলে আমার আর রুদ্রর মধ্যে এত তফাৎ কেনো??
মুবিন হাসান বাড়ি ফিরে যখন শুনেছে মেঘলা গেট খুলেছে এবং খাবার খেয়েছ তখন তিনি একটু নিশ্চিত হলেন।তিনি হাত মুখ ধুয়ে মেঘলার ঘরে গেলেন।কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে।একদিনেই কি অবস্থা করেছে নিজের।খুব সন্তর্পনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর মেঘলার পাশে বসে ওর মাথায় হাত রাখলেন।কারো স্পর্শ পেতেই মেঘলা চোখ খুলে তাকালো।বাবাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করলো।কিন্তু মুবিন হাসান উঠতে দিলেন না।
শুয়ে থাক উঠতে হবে না।
হুম।
এখন শরীর কেমন লাগছে?
ভালো।
ঠিক আছে।আমি এখন তোমাকে কয়েকটা কথা বলবো।মন দিয়ে শুনবে।
মেঘলা মাথা নাড়ল।
ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো না।কিন্তু এখন বলতে হচ্ছে।
কি কথা আব্বু?
মুবিন হাসান ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,গত কয়েক মাস ধরে কলেজের কিছু সমস্যার জন্য স্যালারি দেওয়া হচ্ছে না।
মেঘলা চমকে উঠলো,কি বলছো আব্বু!
হুম ঠিকই বলছি।
তাহলে এতদিন আমাদের খাওয়া পড়া কিভাবে চালাচ্ছ?
কিছু জমানো টাকা ছিল আর তোমার আম্মুর কাছে কিছু টাকা ছিল ঐভাবেই চালিয়েছি।
মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না।চুপ করে রইলো।
মুবিন হাসান আবার বললেন,আমি আর তোমার আম্মু ভেবেছিলাম এই শুক্রবার তোমাকে নিয়ে বের হবো সারাদিন বাসায় থাকো হয়তো অনেক বোর হচ্ছো।তাই ভেবেছিলাম।কিন্তু এখন ডিসিশন পাল্টাতে হলো।
মেঘলা কপাল কুচকে তাকালো।ওর খুব খারাপ লাগছে।বাবার এই অবস্থায় ও কি করে পারলো এমন করতে!!
আমি ঠিক করেছি শুক্রবার কোথাও যাবো না।ওই টাকার সাথে আরো কিছু ম্যানেজ করে তোমাকে একটা মোবাইল কিনে দিবো।এই মুহূর্তে দামী মোবাইল কিনা আমার পক্ষে সম্ভব না।
মেঘলার খুব অনুতাপ হচ্ছে।মাথা নিচু করে আছে।
মেঘলাকে নিরব থাকতে দেখে মুবিন হাসান উঠে চলে যেত নিল।কিন্তু পিছন থেকে মেঘলা বাবার হাত চেপে ধরে,ফুপিয়ে কাদতে লাগলো।
মুবিন হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, বোকার মত কাদছিস কেনো?
আব্বু আমার মোবাইল লাগবে না।
মুবিন হাসান স্মিত হাসলেন,সেটা না হয় আমি বুঝবো।
কিন্তু আব্বু….
আর কথা না শুয়ে থাক।সারাক্ষণ একা একা থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিস তাই নারে?
হুমম আব্বু।
চিন্তা করিস না আমি রুদ্রর সাথে কথা বলবো যেনো তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।
মেঘলার মাথায় যেনো আবার বাজ পড়লো,না আব্বু তার কোনো দরকার নেই।
মুবিন হাসান ব্রু কুচকে তাকালেন।কিন্তু কিছু বললেন না।
পাশাপাশি হাঁটছে মেঘলা আর সীমান্ত।পাশাপাশি হাঁটছে ঠিকই কিন্তু মেঘলার মনে বিষাদ।সীমান্ত ও চুপ করে আছে।মেয়েটা বোকা কিন্তু তাই বলে একসাথে বেশি বুঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।তাই ভেবেচিন্তে এগুতে হবে।এইভাবে রাস্তায় না আজ কোথাও একটা বসতে হবে।
মেঘলা চলো কোথাও একটা বসি।
মেঘলা একবার তাকালো সীমান্তর দিকে।
চলো না।সামনেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে….
কেউ যদি দেখে ফেলে?
রাস্তায় হাঁটছি এইটাও তো কেউ না কেউ দেখছে।
তবুও….এখন তো বলতেই পারবো তুমি আব্বুর পরিচিত দেখা হইছে তাই কথা বলতেছি।
এত ভয় পেয়েও না তো কেউ দেখবে না।
মেঘলা অনিচ্ছা স্বত্বেও গেলো।
মেঘলা টেবিলে হাত রেখে সীমান্তের মুখোমুখি হয়ে বসলো।সীমান্ত খাবার অর্ডার করে মেঘলার হাত ধরে মেঘলার চোখ বরাবর তাকালো।
কি হইছে আমার জানটার?
কিছু না।
আমাকে বলবে না?
আব্বু মোবাইল কিনে দিবে।
এইটা তো ভালো কথা।তাহলে মন খারাপ কেনো??
আসলে আব্বুর এখন স্যালারি অফ।
কি বলো।
হুম,সেজন্যই মন খারাপ।এই অবস্থায় আমি আব্বুকে প্রেসার দিচ্ছি ফোন কিনে দেওয়ার জন্য।ঠিক হচ্ছে না।
আচ্ছা তোমার আব্বু কি তোমাকে আগে এই কথা বলছে নাকি যখন ফোন কিনার কথা বলছ তখন?
আগে বলেনি যখন বলছি তখনও বলেনি।
তাহলে কখন?
ফোন কিনে দেওয়ার কথা রাতে বলছি আর আব্বু আমাকে পরেরদিন বিকেলে বাসায় এসে বলছে।
হুমম বুঝলাম।
কি?
স্বাভাবিক একটা বিষয় তুমি বুঝো না?এত বোকা কেনো?
তোমার আব্বু ইচ্ছে করে এইসব বলছে।
কিহহহ..
হ্যাঁ,না হয় উনি হটাৎ এই কথা বলবে কেনো?আর তুমি এই কয়েকদিনের মধ্যে একবারও বুঝেছ তোমাদের এমন একটা ক্রাইসিস হচ্ছে?
না বুঝি নাই।
বুঝবা কেমনে….হলে তো বুঝবা।তোমাদের এত সমস্যা তাহলে তোমার আব্বু টিউশন করে না কেনো?তাহলে সংসার চলে কেমনে??
মেঘলা তাকিয়ে আছে।কিছু বুঝছে না।
সাবিবাকে কত রিকোয়েস্ট করে পরানোর জন্য রাজি করাতে হলো।তাহলে কেমনে বলবে প্রবলেম??
আমিওতো বুঝতেছি না।কিন্তু আমাকে এইসব বলবে কেনো?
গিয়ে দেখো তোমার বেস্টফ্রেন্ড বুদ্ধি দিছে।
দূর কি বলো!
বিশ্বাস না হলে বাসায় গিয়ে তোমার আব্বু আম্মুর ফোন চেক করে দেখ কাল দুজনই রুদ্রর সাথে কথা বলছে।আর ওরা সবাই মিলে প্ল্যান করছে।তোমার বেস্টফ্রেন্ডই আঙ্কেল আন্টিকে ভূলবাল বুঝাচ্ছে।
এতে কি লাভ রুদ্রর?
সিম্পল সবার চোখে ভালো হবে,বাহবা পাবে,হিরো হবে আর তুমি একটা হবে একটা বিগ জিরো।এইটাও বুঝ না?
মেঘলা এইবার কেদেই ফেলবে।ওর এইসব শুনতেই কষ্ট হচ্ছে আর যদি সত্যি হয়….না না হতেই পারে না।
সীমান্ত ওর জায়গা থেকে উঠে মেঘলার পাশে বসলো।মেঘলার মাথাটা আস্তে করে নিজের কাধে রেখে নরম সুরে বলতে শুরু করল,
এখনই এত মন খারাপ করছো কেনো?আমিতো জাস্ট অনুমান করছি।আমার ধারণা মিথ্যাও হতে পারে।
এইটা সত্যি হলে আমার না বিশ্বাস শব্দটার উপরই আর বিশ্বাস থাকবে না।
আমিও চাই মিথ্যা হোক।রুদ্র সুবিধার না আমি বুঝি কিন্তু ওর সাথে তোমার আব্বু আম্মু… নাহ ভাবাই যায় না।তুমি আগে বাসায় যাও দেখ ফোন কল তাহলেই বুঝবে।
মেঘলা শুকনো হুমম বলল শুধু।
চলবে………….
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)