বেলাদোনা (৮) #ফাতেমা_তুজ

0
293

#বেলাদোনা (৮)
#ফাতেমা_তুজ

একটা বদ্ধ ঘর। আলো বাতাসের প্রবেশ নিষেধ। সেই ঘরের এক কোনে বেঁধে রাখা হয়েছে জ্যাকি কে। মুখের বিভিন্ন জায়গায় লাল হয়ে আছে। চোখের নিচ টা কালো আভায় পরিপূর্ণ। চুল গুলো এলোমেলো। এমন টা হওয়া স্বাভাবিক। গত তিন ঘন্টা যাবত প্রচন্ড মা’র খেয়েছে যে। বলা যায় মা’র খেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে ব্যক্তি টা। লোক টার মাথার কাছ থেকে অনেকক্ষণ যাবত লাল তরল নির্গত হয়ে পুরো মুখ মেখে যাচ্ছে। গ্যাস লাইট জ্বালিয়ে সিগার ধরালো ইথান। চোখে মুখে নেই আগের সেই পবিত্রতা। এখন কেবলি রয়েছে হিংস্রতা। ধোঁয়া ছড়িয়ে তিরিক্ষি করে প্রশ্ন ছুড়লো–
” প্রথম বার মাফ করেছিলাম। দ্বিতীয় বার সাবধান করেছিলাম। তবু ও কেন গিয়েছিলি বেলার কাছে? ”

” আমি, আমি, গিয়েছিলাম–

নিরস হাসলো ইথান। ইশারা করতেই পর পর কয়েক টা আঘাত পরলো মাথা তে, মাটি তে লুটিয়ে পরলো লোক টার বিশাল দেহ। এক দলা থু থু মেরে চলে বাইরে চলে এলো সে। যাওয়ার পূর্বে বলে গেল জ্যাকির বডি টা নদী তে ভাসিয়ে দিতে।

বেলা এখন সুস্থ। মায়ের সাথে বেকারি তে আসা যাওয়া হয় নিয়মমতো। পথিমধ্যে ইথান কে ও দেখেছে আজ। চোখ দিয়ে ইশারা করে অনুনয় করেছে যাতে করে না আসে। তবে ইথান ঠিক ই এসে হাজির। আর হেবা অর্ডার নেওয়ার জন্য ওকেই পাঠালো। বিরক্তি ঠেলে আসলো বেলা। ফর্মাল ভাবে বলল–
” আপনার কি প্রয়োজন স্যার? ”

” তোমাকে। ”

” দুষ্টুমি করবেন না। বলুন কি নিতে চান। ”

” রেগে যাচ্ছো কেন। একটু বসো না। ”

” না বসা যাবে না। বলুন কি প্রয়োজন। ”

” সত্যিই তোমাকে প্রয়োজন। ”

” কেন? ”

” তুমি অসুস্থ ছিলে। সেটা নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। এখন শোনো, দেখে মনে হচ্ছে শরীর ভালো। তো নাম্বার দাও। ”

” আমার ফোন নেই। ”

” মিথ্যে বলবে না। কাল কেই নতুন ফোন পেয়েছো। ”

ফোঁস করে দম ফেললো বেলা। এই ছেলে দেখছি পিছুই ছাড়ছে না। কয়েক মিনিট তর্ক করে নাম্বার নিতে সক্ষম হলো ইথান। মুখে তাঁর বিশ্ব জয় করা হাসি। হেবা কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত। অন্যমনস্ক থাকায় হাতে থাকা বাটি গুলো পরে গেল সিরিয়াল মতো ধপধপ করে। ঝনঝন শব্দ করলো সেগুলো। হনহনিয়ে চলে গেল বেলা। ইথান সে দিকে তাকিয়ে থেকে উঠেই যাচ্ছিলো তবে কোথা থেকে যেন হেবা এসে ছেলেটার হাত চেপে ধরলো। ইথান কিছু বলবে তবে হেবা ইশারা করে বাহিরে নিয়ে এলো। বেকারি থেকে অনেক টা দূরে এসে বলল–
” কেন এসেছো এখানে? আমার মেয়ের কাছে কি। তোমার মতলব আমার ভালো ঠেকছে না। ”

” আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন আন্টি। আমি কোনো বাজে মতলবে আসি নি। ”

” শোনো ছেলে চুলে পাক ধরেছে এমনি এমনি না। বেলা কে পছন্দ করে থাকলে ভুলে যাও। তোমার জন্য সুখকর হবে। না হলে কি হবে তুমি নিজে ও জানো না। ”

হেবার কটাক্ষ বানী শেষ হতেই ইথান শুধালো–
” যদি সে ও আমায় পছন্দ করে? ”

” তাহলে আরো ভয়ঙ্কর হবে। ”

হেবার বলা কথা গুলো অনুধাবন হলো না ইথানের। তবে এটা নিশ্চিত যে আসন্ন প্রলয়ঙ্কারী ঝড়।

সারাদিনের কর্ম শেষে ফোন নিয়ে বসেছে বেলা। এর কারণ যদি ইথান কল করে। সে চায় না কোনো মতে হেবার চোখে এসব আসুক। যদি ও বয়সের দিক থেকে বেলা এখন নাবালিকা নেই। তবু ও হেবার প্রতি অগাত ভালোবাসা। না হলে নিজের ভালোবাসা কে কেউ ছেড়ে দেয়? যদি ও বা একপাক্ষিক অনুভূতি। তবে অনুভূতি জানানোর সুযোগ টুকু ও কেড়ে নিয়েছেন হেবা।

দেখতে দেখতে রাত তিনটের সময় কল করলো ইথান। ঘুমে আচ্ছন্ন বেলার ঘুম নিমেষেই উধাও। এলিজা কে সাথে নিয়ে ঘুমানোর দরুণ ফোন চেপে ধরে ব্যলকনি তে আসতে হলো।
” হ্যালো, এতো রাতে কল করেছেন কেন?”

বেলার মিনমিনে কন্ঠ। যে কেউ বুঝতে পারবে কতো টা গোপনীয়তা এই কলে। ইথান নরম গলাতে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর করলো।
” ইচ্ছে হলো। ভাবলাম একটু কথা বলি।”

” কথা বলা হয়েছে? এখন রাখছি আমি। ”

” মাত্র ই তো কল করেছি বেলা। তুমি কি আমার প্রতি বিরক্ত। ”

” অবশ্যই। আর সেটা বোঝা সত্তে ও আপনি আমাকে উত্ত্যক্ত করছেন। এটা কি উচিত হচ্ছে বলুন। ”

” একটু ও না। ”

” তাহলে কল করছেন কেন। আমি ঘুমাবো, বিরক্ত করবেন না। ”

” শোনো না একটু। ভালো লাগছে না তাই বিরক্তি করতে এলাম। ”

” তো আমি কি করতে পারি এতে? রাখুন কল টা। ”

” পারবো না আমি। ”

” তাহলে আমিই রাখছি। শুভরাত্রী। ”

” কেক, কেক পাঠাও, উহু পাঠাও না তুমি আসো কেক নিয়ে। শোনো আমি বেকারি তে অর্ডার করে দিচ্ছি কাল নিয়ে আসবে।”

” শুনুন, আমি যেতে পারবো না। ”

ইথান শুনে নি আর। কল কেঁটে দিয়েছে। বেলার ইচ্ছে হয় নি কল ব্যাক করার। বরং ফোন টা বালিশের নিচে লুকিয়ে ঘুমাতে গেল। বলা যায় না কখন কি হয়।

সকাল গড়িয়ে বিকেল হলো বেলা কেক নিয়ে আসে নি। মধ্যাহ্নে একজন এসে কেক ডেলেভারি দিয়ে গেছে।খুব সম্ভবত লোক টা কে ডেলিভারির জন্য রাখা হয়েছে নতুন এমপ্লয়ি হিসেবে। ইথান বেশ ক্ষুন্ন হলো তাঁতে। বেলা তাকে এভাবে অগ্রাহ্য করলো! ভীষণ ভাবে ব্যথিত হয়েছে সে। এখন তো বেকারির কাছে যাওয়া টা ও মুশকিল ঠেকে। হেবা দেখলেই ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেন। তবু ও গেল ইথান। মাঝে লুসি কে রেখে গেল বাসা তে। আজকাল লুসি বড় বিরক্ত করছে। প্রিয় হয়ে ও অপ্রিয় দের মতো কাজ করছে। এটা কে বোঝাতে হবে।

এডমিশন পরীক্ষা ছিলো বেলার। পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে বললে ভুল হবে তবে খারাপ হয়েছে এমন ও নয়। মাঝামাঝি তে এর অবস্থান। হাসি খুশি মনের বেলার মুখে লেগে থাকা হাসি কর্পূরের মতো উবে গেল, গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইথানের দর্শনে। ছেলিটার সাথে তাঁর প্রিয় সাইকেল। এই ভারসিটি তে মোটর বাইক চালানো নিষেধ। সাইকেল নয়তো কারে করো আসতে হয়। বেলা না দেখার ভান করে চলে গেল। কিছু টা অপমান হলো ইথান। তবে পিছু নিলো ঠিক ই।

না পেরে সাইকেল থামিয়ে দিলো বেলা। ঘেমে চুপচুপে। ইথান এগিয়ে এসে রুমাল বাড়িয়ে দিলো। ঘাম টুকু মুছে নিয়ে বেলা বলল–
” সমস্যা কি আপনার? ”

” কোনো সমস্যা নেই তো। ”

” পিছু নিচ্ছেন কেন। আপনি জানেন মা আমাকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে যাতে এখন বেকারি তে না যাই।”

” জানি তো। ”

” কে বলল? ”

” বলেছে কেউ একজন। তবে শোনো আমি ব্যক্তিগত কারনেই তোমার পিছু নিয়েছি। ”

” কি কারন? ”

” তোমার সাহায্য প্রয়োজন বেলা। ”

” আমার সাহায্য! আমি আপানকে কি করে সাহায্য করবো। ”

” শোনো তবে, আমার লুসি কে দেখা শোনা করতে হবে তোমায়। আই নো তুমি ওর সঠিক খেয়াল রাখতে পারবে। ”

” আমি!না না আমি পারবো না। তাছাড়া এলিজা কিংবা মা কেউ লুসি কে মেনে নিবে না। দেখুন আমি ভেজাল পোহাতে চাচ্ছি না। ক্ষমা করবেন। ”

” বেলা প্লিজ। তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। ”

বেফাঁস কথা নাকি ইচ্ছাকৃত তা বেলার বোধগম্য হয় নি। তবে বেলার পা দুটো মাটির সাথে লেগে গেছে। চেয়ে ও পারছে না ছাড়াতে। পা দুটো কেউ যেন আঁকড়ে ধরেছে। ইথান কাছে এসে দাঁড়ালো। কিছু টাকা দিয়ে বলল–
” আমার লুসির এক সপ্তাহের খরচ। ”

” আমি নিতে পারবো না। দেখুন এটা সম্ভব নয়। লুসি খুব দুরন্ত, আমি সমস্যা তে পরবো। ”

” বেলা প্লিজ, বারণ করো না। তুমি না সাহায্য করলে সত্যিই ক্ষতি হয়ে যাবে। ”

” কিন্তু– ”

” সরাসরি নয় শুধু মাত্র লুসি কে লুকিয়ে নিয়ে যাবে তোমার ঘরে। একটা ব্যাগের ভেতর থাকবে ও। নিয়ম করে খাবার দিলেই হবে। প্লিজ এইটুকু সাহায্য করো আমায়। ”

দু মন দু আশা নিয়ে বেলা রাজি হয়েই গেল। তবে কড়া করে বলে দিলো এক সপ্তাহের জন্য। ইথান হাসি মুখে সম্মতি প্রদান করলো। বেলা অন্যমনস্ক হয়ে বেঞ্চ এর উপর পরে যাচ্ছিলো। খপ করে মেয়েটির হাত ধরে নিলো ইথান। শাসনের সুরে বলল–
” কি করছো কি। একটুর জন্য বেঁচে গেলে বেলা। কাঠের তৈরি খাচ না এগুলো, লোহা দ্বারা তৈরি করা। এখানে পরে গেলে আর রক্ষা নেই। নিজের যত্ন তো নাও। এমন বেক্কেল হইয়ো না। ”

যারা গ্রুপে জয়েন করেছেন তাঁরা গল্প নিয়ে টুকটাক আলোচনা করলে খুশি হবো। 🖤
Fatema’s story discussion

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here