কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৪০

0
481

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৪০
কলমে:ইয়াসমিন

আমি পিটার রাকেশ খান, অবশ্য পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে মুহাম্মদ ইব্রাহিম খান রাখা হয়েছিল। আমার পিতা পিটার রমেজ খান। আমার দাদাজান ইউরোপীয় উপমহাদেশের একটা অঙ্গ রাজ্যের একজন বিখ্যাত আর নিষ্ঠুর সামন্তরাজ ছিলেন। নবম শতকে সমান্তরাজের আবির্ভাব হয় ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থায়।সামন্তরাজ অর্থ সামন্ত ভূপতি। এসময় মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে প্রচুর পরিমাণ ভূমির মালিকানা চলে আসে। ধনীরা আরও ধনী আর গরীবরা আরও গরিব হয়ে যায়। তাছাড়া বেশ কিছু রাজা তাদের রাজত্ব হারিয়ে ফেলে। আমার দাদাজান পূর্বে ছিলেন সামন্তরাজার অধীনে সামান্য একজন জমিদার কিন্তু ভাগ্যক্রমে আর উনার কূটনৈতিক বুদ্ধির জন্য উনি রাজার একমাত্র মেয়েকে বিবাহ করে নিজে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন। উনি ছিলেন বহু নারীতে আসক্ত একজন পুরুষ। রাতে মদ আর নারী নিয়ে মেতে থাকতেন আর দিনে রাজ্য পরিচালনা করতেন। দাদিজান ছিলেন খুবই নরম মনের মানুষ। গোলাকার মুখশ্রি আর খাটো নাকের জন্য উনাকে খুব একটা সুন্দরী বলা যেতো না। যদিও অন্যরা পছন্দ করতোনা কিন্তু দাদাজানের কাছে তা বিরক্তের কারণ ছিল।দাদিজান ক্ষমতাসীন পরিবারের কন্যা ছিলেন বিধায় দাদাজান উনার সঙ্গে খারাপ আচরণ বা উনাকে কষ্ট দিতে পারতেন না। এড়িয়ে চলতেন। কাজের বাহানা দিয়ে অন্দরমহলের বাইরে দিনের পর দিন পড়ে থাকতেন। এভাবে বেশ কিছুমাস পার হলো। দাদিজান যখন গর্ভবতী হলেন তখন দাদাজান একেবারের জন্য আলাদা প্রাসাদে গিয়ে উঠলেন। দাদাজানের পিতার ছিল দুজন স্ত্রী। উনার পিতা আর সৎ মা তাদের একমাত্র মেয়ে এঞ্জেলিয়াকে নিয়ে দূরে থাকতেন। পূর্বে সৎ বোনকে দেখার সৌভাগ্য উনার হয়নি। পিতার দ্বিতীয় বিবাহের খবর শুনে উনার নিজের মায়ের মৃত্যু হয় সেই কষ্টে উনি পিতার মুখ দর্শন বন্ধ করেছিলেন। বহু কষ্টে নিজে বড় হয়েছিলেন। বাবা মা ছাড়া এতিম একজন মানুষ ছিলেন দাদাজান। তাই হয়তো এমন নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন। যাইহোক হঠাৎ এক দুর্ঘটনার ফলে উনার পিতা আর সৎ মায়ের মৃত্যু ঘটে ফলে উনাদের একমাত্র কন্যার দ্বায়ভার এসে পড়ে দাদাজানের কাধে। এঞ্জেলিয়ার রূপ ছিল চাঁদের টুকরোর মতো নজরকাড়া। দাদাজান মেয়েটাকে নিজের কাছে আনেন। সৎ বোনের এহেন রূপে উনি উন্মাদ হয়ে উঠেন। নিজের আপনার বোনের দিকে খারাপ নজরে তাকানোও যে পাপ। উনি ছিলেন খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত। যতই পর নারীর প্রতি আকৃষ্ট হোন তবুও নিজের বোনের প্রতি কিছুতেই অবিচার করতে মন সাড়া দিলো না। একদিকে পাপ বোধ অন্যদিকে রূপের মোহনা। কি করবেন মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো। ধর্মকর্মে উনি আরও অমনোযোগী হয়ে উঠলেন। মানুষ বলে যার শুরু আছে তার অন্ত নিশ্চয়ই আছে। লোকটা অল্প সময়ের ব্যবধানে ক্ষমতা আর রাজত্ব পেয়ে পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় পেয়েছিলেন। অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠেন। একসময় নিজের নায়েবের পরামর্শে এক ধর্মগুরুকে নিজের গোপন কক্ষে নিয়ে আসেন। আসলে উনি কোনো ধর্মগুরু ছিলেন না। উনি ছিলেন শয়তানের উপাসক। কালো যাদু করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালনা করে নিজের আখের গোছাতেন। দাদাজান সেই জালিমের খপ্পরে পড়ে গেলেন। লোকটা দাদাজনকে বোঝালেন পৃথিবীতে প্রেমের চাইতে সুখ কিছুতে নেই। শরীর আর মনের প্রতি অবিচার করা অন্যায়। পরকাল বলতে কিছু নেই। যা হবে ব্যক্তির ইহকালেই হয়ে যাবে। ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। মানুষ প্রাকৃতির সন্তান। সে পৃথিবীর অন্যান্য জীববের ন্যায় বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ম কোনো বিষয় না। যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছেতে ধর্ম পালন করছে। সৃষ্টির প্রতি সন্তুষ্ট থেকে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতেই পারো। ভদ্রলোকের কথা শুনে দাদাজান যেনো খুশী হলেন। কারণ সবটা তো উনার মন মতোই হচ্ছে। উনি ভূল পথে পরিচালিত হলেন। আর কঠিন এক পাপের পথে পা বাড়ানোর সাহস করলেন। বুঝলেন না পরবর্তীকালে কি হতে চলেছে। এঞ্জেলিয়া ছিলেন ধার্মিক টাইপের মেয়ে। কখনও নিজ ভ্রাতার এহেন প্রস্তাবের সমর্থন করবে না জেনে উনি ধর্মগুরুর থেকে কালো যাদুর তদবির নিলেন। না বুঝে নরবলি দিয়ে পাপের দুনিয়ায় পুরোপুরি প্রবেশ করলেন। যদিও উনি গায়ের শক্তিতে যা ইচ্ছা তাই করতেই পারতেন কিন্তু উনি লোকজন জানিয়ে কিছু করতে চাইছিলেন না। মেয়েটার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের করে নিতেই এই অভিনব প্রচেষ্টা। সেদিন আকাশে চাঁদ ছিল না মুক্ষম সুযোগ পেয়ে উনি বেরিয়ে পড়লেন একা। এঞ্জেলিয়া তখন নিজ কক্ষে ঘুমন্তাবস্থায়। দাদাজান প্রাসাদের লোকজনদেরকে কৌশলে বাইরে বের করে দিলেন। একদিকে দাদিজানের প্রসববেদনা অন্যদিকে উনার খারাপ উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা। গভীর রাতে ঠকঠক আওয়াজে এঞ্জেলিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। ফোলাফোলা চোখ মেলে দার খুলে অবাক হলো ভাইকে নিজের সামনে দেখে। মাথার ঘোমটা ভালো করে টেনে প্রশ্ন করলো,
> ভ্রাতা আপনি এতোরাতে?
ধর্মগুরু দাদাজানকে বিশেষ এক ধরনের ফুল দিয়েছিলো যেটার ঘ্রাণশক্তি ছিল প্রখর। ওর গন্ধে এঞ্জেলিয়া বশ হবে সতভাগ নিশ্চিত কিন্তু কেনো জানি সেই ঘ্রাণ ওর স্নায়ু দুর্বল করলো না। দাদাজন সোজাসুজি ওর কক্ষে প্রবেশ করে ভনিতা ছাড়াই প্রস্তাব দিলেন,
> এঞ্জেল আমি তোমাকে বিবাহ করতে চাই। তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আমার হৃদয়ে তোমার জন্য বিশাল এক অনুভূতির প্রাসাদ নির্মাণ হয়েছে। সেখানে তোমাকে ছাড়া আমি একা। প্লিজ না করোনা। আমি না শুনতে নারাজ। আমার শক্তি আর অর্থ আছে তোমাকে জোর করতেই পারি কিন্তু আমি তোমাকে হৃদয় থেকে চাই।
এঞ্জেলিয়া হতবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকলো উনার দিকে। কি বলা উচিত মাথায় আসলো না। একমন বলছে রাজি হতে কারণ উনার উপরে কালো শক্তির প্রভাব ছিল আর অন্য মন বলল না এসব পাপ অন্যায়। দাদাজান একপা দুপা করে এঞ্জেলিয়ার কাছে এগিয়ে গেলেন। হাত বাড়িয়ে দিলেন ওর দিকে। মেয়েটা ছিঁটকে গিয়ে উত্তর দিলো,
> এহেন পাপ আমি কিছুতেই করবো না।। এই লজ্জার কথা আমি কাউকে বলবো না আপনি ফিরে যান। কখনও আর এমন করিয়েন না।

দাদাজান ক্ষিপ্ত হলেন। মুখের উপরে না শুনে এগিয়ে গিয়ে এঞ্জেলিয়ার চুলের গোছাটা চেপে ধরলেন। পুরুষালী শক্ত হাতের মুঠোয় থাকা চুলের জন্য ও নড়াচড়া করতে পারল না। দাদাজন ওকে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে নিজেও লাফিয়ে বিছানায় পড়ার আগেই এঞ্জেলিয়া নেমে পড়লো। প্রচুর ধস্তাধস্তি হলো। এক সময় মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে গেলো দৌড়াদৌড়ি করে তবুও ধরা দিলো না। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু হলো। নিজের চরিত্রের উপরে দাগ লাগতে দেবেনা বলে মেয়েটা কৌশলে ফল কাটার খঞ্জ/রখানা নিজের পে/টে চালিয়ে দিলো। মূহুর্তে চারদিকে উষ্ণ রঙিন তরল ছড়িয়ে পড়লো। দাদাজান ঢোক গিলল। উনি রাগে ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়েটার গালে থাপ্পর লাগিয়ে দিলেন। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মেয়েটা চিৎকার করে বলল,
> যেই শক্তি আর বল প্রয়োগ করে আপনি আমার উপরে অবিচার করলেন একদিন এটাই হবে আপনার মৃত্যুর কারণ । চরিত্রহীন হবে তোমার বংশধরগণ। শান্তি পাবে না। যাকেই স্পর্শ করবে আমার মতো পরিণতি হবে। ধ্বংস হবেন আপনি। আমার মতোই কেউ এসে নিজ হাতে ধ্বংস করবে সবাইকে। জীবন্ত নরকবাস করবেন আপনারা।

কথা শেষ করতে পারলো না এঞ্জেলিয়া। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। দাদাজান হতভম্ব হয়ে গেলেন। নিজের ভূলে মেয়েটাকে ম/রতে হলো। উনি কষ্ট পেলেন তবে দমে গেলেন না। সেই নরাধম পাপি ধর্মগুরুকে নিজের হাতেই খু/ন করলেন তাঁতে কি আর পাপ বোধ কমে যায়? অভিশাপ যা লাগার সেতো লেগেই গেলো। ধর্মগুরুর কালো শক্তি তখন দাদাজনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে । উনার মধ্যে অন্য কিছুর অস্তিত্ব বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে উনি অর্ধমানব রূপ নিলেন। দাদাজান তখন আরও হিংস্র হয়ে উঠলেন। কালো যাদু আর নরবলি হলো উনার একমাত্র কাজ। ক্ষমতা বল আরও বাড়তে থাকলো কিন্তু ঝামেলা হলো অতিরিক্ত নারী আসক্ত হয়ে পড়লেন। দাদিজানের পুত্র সন্তান হয়েছে সেও অর্ধমানব হলো। সঙ্গে দাদিজান মারা গেলেন। সেই থেকে এই পরিবারেরর উপরে অভিশাপের ছায়া নেমে আসলো। এই পরিবারের প্রতিটা মৃ/ত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়না। দাদাজান আত্ম/হত্যা করে মারা গিয়িছালেন। মৃত্যুর আগে দাদাজান আমার পিতাকে আদেশ করেন কালো শক্তিকে যেভাবেইহোক খুশি করতে হবে। উনি তাই শুরু করলেন। কঠোর তপস্যার ফলে কালো শক্তি বাবাকে সাহায্য করলেন। অভিশপ্ত কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধলে এই বংসের ক্ষতি হবে না বলে জানালেন। একশোটা নর বলি নিয়ে কালো শক্তি সেই মাধ্যম খুঁজে দিলো। সুলতান পরিবারের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে দিলো। আরও কিছু পরিবারকে এরূপ বিপদে ফেলে খান বংশের বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে। ফলে খানদের অত্যাচার বাড়তে থাকে। শহর থেকে মেয়েদের নিখোঁজ তালিকা বৃদ্ধি হতে থাকে। ইতিমধ্যেয় রাজ পরিবারের পতন ঘটে তবুও তাদের ক্ষমতার দম্ভ কমেনা। সামাজিক তোপের মুখে হঠাৎ করে সব ছেড়ে ছুড়ে জার্মানিতে বসতি গড়ে খান পরিবার। ততদিনে খানদের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে বেশ। খানরা এতদিনে ধর্মকর্ম সব ত্যাগ করেছে। কিন্তু আমার কিশোর মনে তখন নানারকম চিন্তা ঘুরতে থাকে। খান পরিবারের সন্তানরা কিন্তু জন্ম থেকেই শয়/তান হয়না। সে শিশু ফেরেশ্তার সরূপ পবিত্র। দিন যায় কিশোর থেকে যৌবনে পা রাখতেই শুরু হয়ে এদের মধ্যে পরিবর্তন। আমিও এর বাইরের কেউ না। তবে কিশোর বয়সে আমার মধ্যে নতুন ভাবনার উদয় হতে শুরু করে। সৌভাগ্য গুণে আমি জ্ঞান লাভের জন্য একজন সিদ্ধ পুরুষের সঙ্গ পেয়েছিলাম। উনি ছিলেন ভীষণ জ্ঞানী একজন মানুষ। ধর্ম সম্পর্কে ছিল টনটনে জ্ঞান। আমাকে সব ধর্ম সম্পর্কেই মোটামুটি শিক্ষা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তোমাকে জোর করবোনা। তোমার বিবেক বিবেচনা বোধ থেকে যেই সিদ্ধান্ত নিবে আমি তোমাকে সেই ধর্মেই দিক্ষা দিবো। আমি অনেক ভেবে চিন্তা করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাম তবে সেটা গোপনে। আমার পরিবার তো কোনো ধর্মই মানেনা সেখানে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি শুনলে আমার গুরুর উপরে চটে যেতেন। আমার সিদ্ধান্তে আমার গুরু খুশী ছিলেন। শুরু হলো জ্ঞানগর্ভ পরিপূর্ণ করার সাধনা। গুরুর গৃহে আমি থাকতে শুরু করলাম। একদিন গুরু আমাকে আমার পরিবারের সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন। আমার ভবিষ্যৎ বর্ণনা করলেন যেটা শুনে আমি ভয় পেলাম। এহেন কার্জ আমি জীবন থাকতে পারবো না। অভিশাপ নেমে আসার আগেই কিছু করতে হবে। আমার দ্বারা কোনো নারীর অনিষ্ট সাধন হবে ভাবলেই আমার গায়ে কাটা দিতো। গুরু উপাই খুঁজতে শুরূ করলেন। উনি সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। যতি বিদ্যা জানতেন। তাই আমার ভাগ্য সম্পর্কে উনার মোটামুটি ধারণা হলো। যদিও সম্পূর্ণ ছিল না কারণ হয়তো আমার রব চাইনি সেটা। কঠিন তপস্যার পরে উনি বললেন,
> তোমার অভিশাপ কাটানো সত্যি সহজ না তবে তুমি চাইলে তোমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে পারো। এই বইয়ের এক পৃষ্ঠতে তুমি একজনকে অভিশাপ মুক্ত করার কথা উল্লেখ করতে পারবে। আমি পারলে তোমাকে এই পাপ থেকে মুক্ত করতে পারতাম কিন্তু সেটা তো সম্ভব হবে না। তুমি লিখে দাও তোমার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ একজন হবে সিদ্ধ পুরুষ আর তার সন্তানের হাত ধরেই এই বংশের বহুকালের পাপের জীবনের মুক্তি ঘটবে। আমি নিরুপায় হয়ে লিখতে বসেছি। আমি হৃদয় থেকে চাই এমন একজনের জন্ম হোক যার সন্তানের আত্মা হোক নির্মল আর পবিত্র। কাউকে উদ্দেশ্য করে বলতে নিষেধ আছে তাই বলতে পারছি না। জানিনা আমার এই ইচ্ছে কতদিনে পূর্ণ হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাপের পথে পা দেওয়ার আগেই আত্মহুতি দিবো নয়তো কখনও এই অভিশপ্ত জীবন থেকে হয়তো মুক্তি লাভের উপাই নেই।
কহিনুর লেখাগুলো বেশ মনোযোগ সহকারে পড়লো। বুঝলো এই ভদ্রলোক আত্মহয/ত্যা করেছেন। আর উনার ইচ্ছেতেই পাথরের বাবা খান পরিবারের বিপরীত চরিত্রের হয়েছিলেন। তবে বাকীটা তেমন জানা গেলো না। পাথরের বাবা মায়ের পরিচয় আর প্রণয় সম্পর্কে জানতে প্রচণ্ড ইচ্ছে হলো কহিনুরের। পাশ থেকে সাঈদ বলে উঠলো,
> নূর এই বইয়ের একটা পৃষ্টতে তুমি তোমার ইচ্ছে লিখতে পারো পূরণ হবে নিশ্চয়ই। তবে নিজের সম্পর্কে না অন্যকে নিয়ে। তুমি যেমনটা লিখতে মিলে যাবে। এটা অলৌকিক বই বুঝলে? বই বললে ভূল হবে এটা ডাইরি।
কহিনুর কিছু একটা ভেবে বলল,
> এই বইটা পাথরের বাবার কাছে কিভাবে এসেছিল আর কখন এসেছিল জানতে পারবে? তাছাড়া ভদ্রলোক এমন সুযোগ পেয়েও কিছু লিখলেন না কেনো? উনার কিছু লেখা উচিত ছিল তাইনা?
> ভদ্রলোক নিজেই এসবের উত্তর দিতে পারবে। উনি জীবিত নাকি মৃত্যু কিছু জানা সম্ভব হয়নি। আমার আম্মির মতো উনিও নিখোঁজ।
> বাইরের যিনি দাঁড়িয়ে আছেন উনি এই বইটা রক্ষা করতে চাইছেন কিন্তু এখানে কি এমন আছে যার জন্য উনি এতোটা মরিয়া অদ্ভুত। এই বইতে আরও কিছু আছে সাঈদ যেটা আমরা জানিনা। বাইরের ওই লোকটা আমাদের জন্য ভালো নাকি খারাপ সেটা ওকে বশে আনলে সবটা জানা যাবে। ওকে ভয় দেখাবো নাকি বশ করবো বলোতো?
সাঈদ কিছু একটা ভেবে বলল,
> জোর করলে কিছুই বলবে না বরং বশ করো তবে ওর উপরে এসব খাটবে না। যদি ও নিজ থেকেই সবটা মানে। তুমি বরং আপাতত বইটা গায়েব করো। ও নিজে থেকেই চলে যাবে। বইয়ের রহস্য পরে জানা যাবে।। তুমি সকালে যে জুস খেয়েছো ওতে ঔষধ ছিল। আমি কিছু করার আগেই খেয়ে নিলে এমন আর করো না। মালকিন তোমার দায়িত্ব আমার উপরে দিয়েছেন।
কহিনুর বই বন্ধ করে বিছানায় উঠতে উঠতে বলল,
> কিছু হবে না। তুমি ভেবো না। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছা করছে। সুলতান ভিলাতে আমার যাওয়া সম্ভব হবে না। তুমি খবর দাও বাবা যেনো বাইরে আসে। কতদিন দেখা হয়নি।
সাঈদ মাথা নাড়িয়ে জানালায় গিয়ে উঁকি দিলো সেখানে কেউ নেই। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কিছু বলতে চাইলো তার আগেই হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করলো পাথর।সাঈদ ওর থেকে নিজের অদৃশ্য করতে পারেনা তাই ধরা খেয়ে মুখ চুপসে গেলো। কহিনুর কম্বলের মধ্যে পা ছড়িয়ে বসে ছিল হঠাৎ পাথরের আগমনে চোখ বড়বড় করে ফেলল। পাথর সোজা গিয়ে সাঈদের সামনে দাঁড়িয়ে র/ক্ত চক্ষু মেলে বলল,
> এখানে কি তোমার? অভদ্রের মতো একজন মেয়ের বেডরুমে বসে আছো লজ্জা করছে না? এখুনি বের হবে নয়তো আমি তোমাকে সত্যি বোতলে পুরে সমুদ্র ফেলে দিবো।
সাঈদ ভয়ে ভয়ে বলল,
> মালকিন বলেছেন নূরের খেয়াল রাখতে। আমার কি দোষ?
পাথর কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
> এখুনি বাইরে যাও নূরের সঙ্গে আমার কথা আছে। নিশ্চিতই তুমি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে বাঁধা সৃষ্টি করবে না?
সাঈদ বুঝলো লোকটা ক্ষেপে গেছে তাই অপেক্ষা করলো না দ্রুত জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসলো। কহিনুর তখনও চুপচাপ। পাথর সোজাসুজি এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
> বডিগার্ড নিয়ে ঘুরছো ভালো কথা বেডরুমে কেনো জায়গা দিয়েছো? তুমি বাচ্চা মানুষ বুঝবে না ওদের বুদ্ধি। নারী হচ্ছে নিষিদ্ধ নেশার মতো। যদি তোমার প্রতি ওর ভালো লাগা তৈরী হয়ে যায় তখন কি হবে? ওর থেকে দূরে থাকো। প্রেমে পড়লে কারো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সেটা মানুষ হোক বা অন্যকিছু।
কহিনুর ঘনঘন চোখের পাতা নাড়িয়ে বলল,
> তাঁতে কি হয়েছে? আপনার থেকে দূরে আছি এটাইতো অনেক। আপনি থাকবেন না কিন্তু অন্যরাতো থাকতেই পারে তাইনা? সাঈদ আমার বন্ধুর মতো। তাছাড়া ওদের কিছু চিহ্ন আমি বহন করি।আমার জন্যই ওকে রাখা হয়েছে। আমার সঙ্গে ও সবখানেই যেতে পারবে সেখানে আপনি পযর্ন্ত পারবেন না। বুঝেছেন ওর গুরুত্ব?
পাথর নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। কথাগুলো ওর হজম হচ্ছে না। সোজা গিয়ে কহিনুরের দুবাহু টেনে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
> যা হয়ে যাক তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। আমার চোখের সামনে। তোমার সঙ্গে আমি ছাড়া কেউ থাকতেই পারেনা। তুমি শুনোনি স্বামীর কথা শুনতে হয়? তাহলে তুমি কেনো শুনবে না? আমি বুঝেছি তুমি এখানে শুধুমাত্র আমার জন্য আসোনি। উদ্দেশ্য আছে সেটা পূরণ হলেই চলে যাবে। এই পযর্ন্ত যা কিছু হয়েছে সেটা নিজ ইচ্ছেতে হয়নি। আমি জোর করে তোমাকে আটকে রাখতে পারবো না তবে ভালোবাসা দিয়ে আটকে দিবো। হৃদয়ের সব অনুভূতি দিয়ে তোমাকে আমি খুব ভালোবাসবো। ছেড়ে যাওয়ার আগে হাজার বার ভাববে।।
পাথর কথাগুলো বলে কহিনুরের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভেবেছিল মেয়েটাকে চলে যেতে বলবে কিন্তু সাঈদকে ওর প্রচণ্ড হিংসা হয়। কেনো হয় জানা নেই। নূরের সঙ্গে ওকে দেখেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল। নূর শুধুমাত্র ওর নিজের ওর সঙ্গে কোনো ভাগাভাগি চলবে না। ও চলে যেতেই কহিনুর চোখ বন্ধ করলো।
************

অফিসের একটা মিটিংয়ের জন্য বেলালকে নিয়ে কাজে এসেছিল পাথর। মন মেজাজ ভালো নেই। বারবার কহিনুরের মুখটা মনে পড়ছে। কাজে মনোযোগ আসছে না। যতই চেষ্টা করুক ওর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে ততই কিভাবে জানি রাগ এসে হানা দিয়ে সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে জানা নেই। রাত হয়েছে বাড়িতে ফিরতে হবে। ঝড়বৃষ্টির জন্য রাস্তায় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। অন্য দিকে যাবে কি ভাবতে পারলো না। গাড়ির অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পাথর চোখ বন্ধ করে নিলো। বেলাল কিছু একটা ভেবে বলল,
> স্যার আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। দেখি কোনো ব্যবস্থা হয়কি।
পাথর উত্তর দিলো না তবে চোখ বন্ধ করেই দরজা খোলার আওয়াজ পেলো। তারপর সবটা আবারও চুপচাপ। বিদ্রুৎ চমকাচ্ছে আলোক রশ্মি এসে গাড়ির কাচে এসে ঝলসে দিচ্ছে। প্রবল বর্ষণ কমে হঠাৎ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। পাথর দ্রুত উঠে বসে আশেপাশের বেলালকে পেলো না। ছেলেটা কোথায় গেশো দেখার জন্য গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গেলো। দূরে দুজন মানব মানবি দাঁড়িয়ে আছে দেখে ওর ভ্রু কুচকে গেলো। সামনে যতই এগিয়ে গেলো ততই চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। কাছাকাছি এসে ও হতভম্ব হয়ে গেলো। বেলালের সামনে ধা/রালো খঞ্জ/র হাতে দাড়িয়ে আছে কহিনুর। মেয়েটার চোখেমুখে কি হিংস্রতা,ওষ্ঠে বাঁকা হাসি যার অর্থ পাথরের জানা নেই। মেয়েটা কি বেলালকে মারতে চাইছে কিন্তু কেনো? এতো কিছু না ভেবে পাথর চিৎকার করে বলল,
> নূর ওকে মার/বে না। এতোটা নি/ষ্ঠুর কেনো তুমি? ওকে ছেড়ে দাও নয়তো ভালো হবে না। কেনো নিরীহ মানুষের প্রা/ণ নিচ্ছো?
কহিনুর পাথরের কথার উত্তর দিলো না চালিয়ে দিলো খঞ্জ/র কিন্তু হাওয়ার গতিতে পাথর গিয়ে ওর হাতটা ধরে ফেলল। সামান্য হলেও খঞ্জ/রটা বিধে গেলো বেলালের বুকে। পাথরের ছোঁয়াতে কহিনুর ততক্ষণে ছিটকে পড়ে জঙ্গলের দিকে দৌড়ে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। বেলল ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। পাথর চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভাবলো ওর নূর কিভাবে এমনটা করতে পারলো?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here