গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
নবম পর্ব
ত্রিশ.
বিশাল কক্ষের মাঝে অবস্থান রাজা অক্টাইসের। তার আট বাহুর আয়তন বিস্তর জায়গা জুড়ে। কক্ষের এক-তৃতীয়াংশ কেবল ফাঁকা আছে। এতবিড় একটি কক্ষ তার দেহের অংশ দিয়েই পরিপূর্ণ! এতবড় কক্ষ হবার পরেও যেন তার কাছে নড়াচড়া করতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রবেশদ্বার খুলে কক্ষে একজন ছোটো অক্টোপাস প্রবেশ করে। রাজা অক্টাইসের সামনে উপস্থিত হয়ে মাথা কুর্নিশ করে সম্মাননা জানায়। অবশ্য তার কুর্নিশের কৌশলটা একটু ভিন্ন রকম। শুধু তার নয়, সমস্ত অক্টোপাসদের কুর্নিশ শৈলী এক জাতীয় বলা যায়। অন্যান্য প্রাণীরা দাঁড়িয়ে বা বসে রাজার সম্মানে কুর্নিশ করে। কিন্তু অক্টোপাসেরা তাদের আট বাহু চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। মাথাটা খানিক নিচু করে অতঃপর কুর্নিশ জানায়। রাজা অক্টাইস অক্টোপাস ডারলেনের কুর্নিশ দেখে একটি হাসি দিলেন।
‘ ডারলেন, রাজ্যের চারদিকের অবস্থা কেমন চলছে? ‘ কিঞ্চিৎ গম্ভীর স্বরে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি।
‘ জি মহারাজ। চলছে, তবে…’ বলতে নিয়ে থেমে যায় অক্টোপাস ডারলেন। তার এরকম অর্ধেক বচন মোটেও ভালো চোখে নিলেন না রাজা অক্টাইস। ভ্রু জোড়া কোঁচকে প্রশ্ন করলেন তিনি,
‘ তবে? কী তবে? ‘ প্রশ্নের মাঝে রয়েছে গভীর আগ্রহান্বিত ভাব। যেন না শুনতে পারলে তার মন শান্তি পাবে না।
‘ তবে, গত কয়েকদিন পূর্বে মারমেইড শহরের দিকে একসাথে সাতটি তিমি গমন করতে দেখা যায়। ‘ একদমে পুরো কথাটি শেষ করে ফেলল অক্টোপাস ডারলেন। কথা বলার সময় তার কন্ঠ বারংবার কেঁপে উঠেছে। যেন ভয়ে তার গলা ছেড়ে কথাগুলো বেরিয়ে আসছে না।
রাজ্যের গোয়েন্দা কার্য তাকে দিয়ে করানো হয়। কোথায় কী ঘটছে এবং তার পর্যবেক্ষণ ও সঠিক তথ্য তার কাছে পাওয়া সম্ভব! সপ্তাহে তিনবার এসে রাজা অক্টাইসের সাথে দেখা করে সে। অবশ্য রাজা অক্টাইস নিজেই তাকে সপ্তাহে তিনবার নতুন খবর নিয়ে দেখা করতে বলেছেন। একজন রাজার কাছে সরাসরি সকল খবরাখবর আসে না। তার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু গুপ্তচরদের। রাজ্যের সকল গুপ্তচরদের প্রধান হচ্ছে অক্টোপাস ডারলেন। তার কাছে বাকি গুপ্তচরগুলো দুদিনে যেসকল তথ্য জমা করে, তা নিয়ে সে সোজা উপস্থিত হয় রাজা অক্টাইসের দরবারে। অতঃপর রাজ্যের চারিদিকের সকল ঘটমান ঘটনাগুলো অবিহিত করে।
‘ সাতটি তিমি একত্রে মারমেইড শহরের দিলে পাড়ি দিয়েছে! ঘটনাটা আমার কাছে কেমন নড়বড়ে মনে হচ্ছে। ‘ উদ্বিগ্ন হয়ে কথাটি বললেন রাজা অক্টাইস। সন্দেহের দৃষ্টিতে নিলেন তিনি।
‘ শুধু সাধারণ তিমিরা নয়। তিমি রাজ এবং তার সৈন্যরা সাথে ছিল। ‘ কণ্ঠস্বর নিচু করে ডারলেন বলে উঠল। এবারে কণ্ঠে ভীতি কাতরতার চেয়ে উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে অধিক।
‘ তিমি রাজ! সাথে সৈন্যরা! ‘ আশ্চর্যান্বিত হয়ে রাজা অক্টাইস অক্টোপাস ডারলেনের উদ্দেশ্য করে বললেন। তার মস্তিষ্কে বিষয়টি নিয়ে একটা ঢেউ খেলে গেল! অবিশ্বাসের পাল্লার চেয়ে বিস্ময়ের পাল্লা ভারি হয়ে আছে।
‘ জি মহারাজ! ‘ পুনরায় নিচু স্বরে রাজা অক্টাইসের কথায় সম্মতি প্রদান করল অক্টোপাস ডারলেন।
চিন্তিত হয়ে মত ঘুরিয়ে নতুন প্রশ্ন রাখলেন রাজা অক্টাইস!
‘ রাজ্যের প্রান্ত দিয়ে যাবার সময় আমাদের সৈন্যরা তিমি রাজের উপর আক্রমণ করেনি? ‘ আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলেন তিনি। তার এরূপ প্রশ্নে লেগে আছে মিশ্রিত খানিকটা রাগ!
‘ আক্রমণ করেনি বলতে সাহস পায়নি। একসাথে সাত সাতটে তিমি! আর তাও কোনো সাধারণ তিমি নয়। তিমি রাজ এবং তার সৈন্যরা ছিল। যা আমাদের অর্ধেক সৈন্যদলের চেয়েও শক্তিশালী। যার বস্তুত তাদের কিছু বলতে বা আক্রমণ করার লক্ষে এগিয়ে যেতে সাহস হয়ে উঠেনি সৈন্যদের। ‘ মাথাটা নিচু করে কণ্ঠস্বরটা আগের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি করে কথাগুলো বলল গুপ্তচরদের প্রধান অক্টোপাস ডারলেন। তবে তার কথার মাঝে লুকিয়ে থাকা যুক্তিগুলো এবং ভয়কে খুব সহজেই আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন রাজা অক্টাইস।
বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলতে লাগলেন অক্টোপাস রাজা,
‘ তবে কি যুদ্ধে তিমি রাজ মৎস রাজা অরগাডকে সমর্থন করছে? কিন্তু তারা আমাদের যুদ্ধের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হলো কী করে? ‘ টনক নড়ে উঠল তার মস্তিষ্কে। চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলেন তিনি।
রাজা অক্টাইসের প্রশ্নের জবাবে মাথা নিচু করে বলতে লাগল ডারলেন,
‘ সে সম্পর্কে জানতে অক্ষম মহারাজ। ‘ কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল সে। জবাবের পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়।
‘ যত দ্রুত সম্ভব সেই গুপ্তচরকে পাকড়াও করা ব্যবস্থা করো। ‘ ক্রুদ্ধ হয়ে কথাটি সম্পন্ন করলেন রাজা অক্টাইস। রাগে তার কণ্ঠস্বর বদলের দেখা পাওয়া যায়।
‘ যথা আজ্ঞা মহারাজ। ‘ কথাটি বলে মাথা নিচু করে কুর্নিশ জানায় অক্টোপাস ডারলেন। দ্রুত চলে কক্ষের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হয়। প্রবেশদ্বারে টোকা দিলে ওপাশে উপস্থিত প্রহরীরা দ্বার খুলে দেয়। দ্রুত কক্ষ থেকে প্রস্থান করে অক্টোপাস ডারলেন। কক্ষ থেকে বের হয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে।
একত্রিশ.
‘ ভেতরে আসব যুবরাজ রন ইওহার্ড? ‘ রন ইওহার্ডের কক্ষে প্রবেশদ্বারের একটি পাল্লা খুলে মাথাটা ভেতর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি চাইল রাজকুমারী ডায়ানা। তার এমন পাগলাটে স্বভাব হাসতে বাধ্য করবে। কেবল তুলতুলে নরম বিছানার উপর আটঘাট বেঁধে শয়ন করার লক্ষ্যে উঠে বসেছিল যুবরাজ রন ইওহার্ড। কিন্তু রাজকুমারী ডায়ানার প্রবেশ অনুমতির আবদার শুনে সকল লক্ষ্য মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিয়ে বলতে লাগল,
‘ জি, জি আসুন রাজকুমারী। ‘ ব্যগ্র হয়ে বিছানা থেকে উঠে বসতে বসতে বলল সে।
রাজকুমারী ডায়ানা কক্ষে প্রবেশ করতেই প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা রক্ষীরা দ্বারের পাল্লা টেনে বদ্ধ কক্ষে পরিনত করে দেয়। ডায়ানা ধীর পায়ে হেঁটে এসে যুবরাজ রন ইওহার্ডের পাশে বিছানায় বসে যায়। রন ইওহার্ড যেন এতক্ষণ কোনো ঘোরের মাঝে বন্ধি ছিল। একটি মেয়ে এত সুন্দরী কী করে হতে পারে? অবশ্য সাধারণ কোনো মেয়েও নয়। মৎস্য রাজ্যের রাজকুমারী সে। অন্যান্য মেয়েদের থেকে একটু ব্যতিক্রম তো থাকবেই। তবে রূপের মোহে আটকে যাবার মত ছেলে নয় রন ইওহার্ড। রাজকুমারী ডায়ানা রন ইওহার্ডের পাশে বসা মাত্রই বলতে লাগল রন,
‘ প্রথমত আমাকে সম্মোহিত করা থেকে বিরত থাকুন। ‘ কিছুটা কঠিন স্বরে কথাটি বলল সে।
রন ইওহার্ডের এরকম কথায় ভড়কে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। আশ্চর্যান্বিত হয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ আপনি বুঝলেন কী করে, আমি আপনাকে সম্মোহিত করছিলাম?’ বিস্মিত ভাব নিয়ে প্রশ্নটি করল সে।
সামান্য হেসে জবাব দিল রন ইওহার্ড।
‘ এটা আমার ছোটোবেলা থেকে অদ্ভুত এক শক্তি বলতে পারেন। আমাকে যদি কেউ সম্মোহিত করার চেষ্টা করে,তবে আমার মস্তিষ্কে ধরা পড়ে যায়। অবশ্য এই কারণে একবার এক চোরকে আমার হাতে বেধড়ক মার খেতে হয়েছিল। ‘ প্রথম কথাগুলো গম্ভীর হয়ে বললেও শেষের কথায় একটি হাসি যুক্ত করে বলল সে।
‘ কী বলেন! আপনাদের মানুষের মাঝেও চোর আছে? ‘ বিস্ময়কর ভাব নিয়ে প্রশ্নটি করল রাজকুমারী ডায়ানা। যেন কথাটির উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে সক্ষম নন।
‘ হ্যাঁ, খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। আমাদের মানুষদের মাঝে সব প্রজাপতিই আছে। চোর,ডাকাত,ভদ্র,অভদ্র ইত্যাদি। কেন? আপনাদের এখানেও বুঝি আছে?’ প্রথমের কথাগুলো স্বাভাবিক স্বরে বলতে লাগল। শেষ প্রশ্নটি কিছুটা আগ্রহের সহিত জানতে চেয়ে প্রশ্ন করল রন ইওহার্ড। তার জবাব শুনে হতভম্ব হয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ হ্যাঁ! আমাদের মারমেইড শহরেও আছে। আমি তো ভেবেছিলাম, শুধু আমাদের মারমেইড শহরে এমনটা হয়ে থাকে। মানুষদের মাঝে এরকমটা নেই। সে যাইহোক!’ কথাগুলো বেশ অসন্তোষ ভাব নিয়ে বলল সে। তবে মানুষদের মাঝেও বিভিন্ন প্রজাতি আছে জেনে বিস্মিত হয়ে হয়েছে। কিছু সময় থেমে আবার প্রশ্ন রাখল রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ আচ্ছা আমার সাথে কথা বলতে অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে না?’ অধিক আগ্রহের সহিত জানতে চাইল রাজকুমারী ডায়ানা। যেন প্রশ্নের জবাবটা জানা তার জন্য অনেক জরুরি।
‘ নাহ। আমি আমার চারপাশে উপস্থিত লোকজন এবং পরিস্থিতির সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারি। যা আমার একটি মহৎ গুণ বলা যায়। ‘ নিজের প্রশংসা নিজে করতে বুকটা একটু চওড়া করে কথাগুলো বলল রন ইওহার্ড।
‘ হ্যাঁ, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু আপনি বুঝলেন কী করে আমি রাজকুমারী? ‘ পুনরায় কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল রাজকুমারী ডায়ানা। এবার বিস্ময়ের পরিমাণ খুব একটা না হলেও বেশ আছে।
‘ আপনাকে আমি রাজার বাম পাশে বসে থাকতে দেখেছি। ডান পাশে একজন মেয়ে বসে ছিল। রাজাদের স্ত্রীরা তার স্বামীর ডান পাশে বসে। সেই হিসেবে আপনি বাম পাশে যেহেতু, সেহেতু আপনি নিশ্চয় রাজকুমারী হবেন। ‘ স্বাভাবিক হয়েই কথাগুলো জবাব দিল রন ইওহার্ড। তবে যুক্তি উপস্থাপনে বেশ শক্ত স্বরে উপস্থাপন করল।
‘ বাহ! আপনি তো দেখছি বেশ বুদ্ধিমান! আমার এখনো পরিচয় দেয়া হলো না। আমি রাজকুমারী..। ‘ রাজকুমারী ডায়ানাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগল রন ইওহার্ড,
‘ আপনি রাজকুমারী ডায়ানা। ‘ একটি হাসি দিয়ে বলল সে।
রন ইওহার্ডের আচরণে হতভম্ব হয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। বিশ্বাস করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তার। আগ্রহী হয়ে জানতে চেয়ে রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখল রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ আপনি কী করে আমার নাম সম্পর্কে অবগত হলেন? ‘ প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিস্ময়কর ভাব। বিশ্বাস করতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে।
রাজকুমারী ডায়ানার প্রশ্নের জবাবে ছোট্টো একটি হাসি উপহার দিয়ে বলল রন ইওহার্ড,
‘ রাজসভায় যাবার পথে একজনের মুখে শুনেছিলাম রাজকুমারী ডায়ানা। এছাড়া যেহেতু বাম পাশে আপনি একাই ছিলেন। তবে রাজ্যের একমাত্র রাজকুমারী আপনিই। সে সূত্র অনুসারে আপনার নামই তবে ডায়ানা। ‘ স্বর স্বাভাবিক রেখে রাজকুমারীকে চমকিত করে দিল সে।
রন ইওহার্ডের ব্যাখ্যা শুনে চমকিত হয়ে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজকুমারী ডায়ানা। এভাবেই আরও কিছু আলাপনে কাটতে লাগল তাদের সময়।
বত্রিশ.
‘ সেনাপতি করডাল, আপনাকে খুব শীঘ্রই কারাগার জীবন থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আমার প্রতি আস্থা রাখুন।’ কালো কাপড়ে আবৃত একজন লোক, রাজা অক্টাইসের সেনাপতি করডালকে বন্ধি করে রাখা কারাগারে সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন।
‘ আর কতদিন লাগবে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করতে? সেই কবে থেকেই তে শুনতেছি আমাকে মুক্ত করতেছ!’ গম্ভীর স্বরে অন্ধকারের ভেতর থেকে কথাগুলো ভেসে এলো। ঘন আঁধারে আবৃত কারাগারের ভেতর থেকে কেবল লাল বর্ণের দুটো আলো দেখা যাচ্ছে। লাল বর্ণ দুটো উত্তপ্ত লাভার জ্যোতি থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ভেতর থেকে শুধু ফোসফাস শব্দ শোনা গেল। যদি এই মুহূর্তে কোনোভাবে এই অন্ধকারে আচ্ছাদিত কারাগার থেকে মুক্তি পেত, তবে চোখের উত্তপ্ত লাভার লাল আগুনে জ্বালিয়ে দিত মারমেইড শহর। জ্বালিয়ে সম্পূর্ণ ছাই করে দিত।
‘ দীর্ঘ ৭২০ দিন, ১০,৩৬,৮০০ ঘন্টা, ৬২,২০৪,৮০০ মিনিট, ৩৭,৩২,৪৮০,০০০ সেকেন্ড যাবত এই অন্ধকারে আচ্ছাদিত কারাগারে বন্ধি হয়ে আছি। কতদিন যাবত আলোর দেখা পাই না আমি! একটু খোলা হয়ে চলতে পারছি না। ভালো করে ভোজন করতে পারছি না! ‘ হতাশ কণ্ঠে কথাগুলো ব্যক্ত করলেন আঁধারে আচ্ছাদিত কারারুদ্ধ হয়ে থাকা অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের সেনাপতি করডাল। আচমকাই কঠিন স্বরে বলতে লাগলেন তিনি,
‘ এই, যত দ্রুত সম্ভব আমাকে এখান থেকে মুক্ত করো। তোমার যা চাই, আমি সব তোমাকে দেবো। কেবল আমাকে এখান থেকে মুক্ত করো। ‘ অন্ধকার কারাগারের ভেতর থেকে কথাগুলো ভেসে এলো। কথাগুলোর মাঝে প্রচন্ড রাগ মিশ্রিত। ছাড়া পেলেই ভস্ম করে দেবে সব।
‘ আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেছি সেনাপতি করডাল। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই মুক্তি মিলবে আপনার! ‘ কালো কাপড়ে আবৃত মুখ ঢাকা লোকটি সেনাপতি করডালকে আস্বস্ত করলেন।
‘ একবার শুধু ছাড়া পাই! রাজা অরগাডের বানানো সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিতে বেশি সময় নেবো না। ‘ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসল কারাগারের ভেতর থেকে।
‘ যতদূর শোনা যাচ্ছে, সাম্রাজ্যভার থেকে খুব শীঘ্রই পদত্যাগ করবেন রাজা অরগাড। রাজ্যভার চালানোর খুব শীঘ্রই নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক হবে। ‘ একদমে গড়গড় করে কথাগুলো বলল কালো কাপড়ে আবৃত মুখ ঢাকা লোকটি। অবাক বিষয় হলো লোকটির একটি লোম অবধি দেখা যাচ্ছে না।
‘ তবে তো আরও ভালো হবে! রাজ্যাভিষেকের কয়েকদিন পরপরই আমাকে মুক্তির ব্যবস্থা করো। নতুন রাজা হবে সে! সবকিছু বুঝে এবং গুছিয়ে উঠতে বহু সময়ের প্রয়োজন। আর সেই মোক্ষম সুযোগেই মৎস্য মানবদের সাথে যুদ্ধ করে খুব সহজেই জিত হাসিল করা সম্ভব হবে! আমাকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করো।’ গম্ভীর স্বরের সাথে ভাবনা যুক্ত কণ্ঠ মিলিত করে কথা সম্পন্ন করলেন সেনাপতি করডাল। আরও কিছু সময় অজ্ঞাত লোকটি সেনাপতি করডালের সাথে কথা বলে কারাগার থেকে প্রস্থান করেন তিনি।
তেত্রিশ.
আজ চারদিন পূর্ণ হয়ে গেল রিবন তার ভাইকে হারিয়েছে। শোকের ভার এখনো সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তার ভাই রন ইওহার্ডই ছিল একমাত্র সম্পদ। কিন্তু এভাবে তাকে হারাতে হবে, তা জানতেন না তিনি। কয়েকদিন যাবত কোম্পানিতে যাচ্ছেন না। তার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট তানভীরের উপর সমস্ত কাজের ভার দিয়ে দিয়েছেন। আপাতত তার কয়েকদিন বিশ্রামের প্রয়োজন। এতবড় একটি ধাক্কা সামলে ওঠা খুব বড় একটি কাজ। পুলিশ তাদের তদন্তের কার্যক্রমে অব্যাহত রেখেছে। চারদিন পূর্বে যা ছিল মিডিয়ার জন্য তোলপাড় তোলা একটি খবর! ধীরে ধীরে এখন তা এক কোনায় পড়ে যাচ্ছে। মানুষের মৃত্যুতেই যেন তার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়!
‘আপনার কি মনে হচ্ছে না এত অল্প সময়ে রন ইওহার্ডকে রাজ্যাভিষেক করা রাজ্যের জন্য দূর্গতি বয়ে আনবে? ‘ রাজা অরগাডের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন রানি নিয়ানো। জানাটা তার কাছে অধিক জরুরি।
‘ রন ইওহার্ডকে রাজ্যাভিষেক করানোর জন্য সঠিক সময় এটাই। এছাড়াও সমস্ত রাজ্যভার তার হাতে তুলে দিলেও কোনো দূর্গতি বয়ে আনবে না। ‘ দুই ঠোঁটের কোণে একটি মুচকি হাসি তুলে প্রত্যুত্তর দিলেন রাজা অরগাড। তবে হাসিটির রহস্যে ভিন্নতা আছে।
‘ কিন্তু আপনার এমনটা মনে হবার কারণ?’ কৌতূহলী হয়ে পুনরায় জানতে প্রশ্ন রাখলেন রানি নিয়ানো। তার কৌতূহল কোনোভাবেই দমিয়ে রাখতে পারছেন না।
‘ রাজসভায় তুমি ওর কিছু কথা কঠিন দৃষ্টিতে লক্ষ্য করেছ? ওর বুদ্ধির পরিক্ষার জন্য কিছু কথা একটু বাঁকা করা বলা হয়েছিল। অথচ সবগুলো প্রশ্নের সঠিক জবাব এবং কথার ভুল-ত্রুটি বুঝে নিয়েছে। এছাড়া রন ইওহার্ডের দেহে দুটি সত্তার বিরাজমান। ‘ শেষ কথাটি একটু গম্ভীর হয়ে ব্যক্ত করলেন রাজা অরগাড।
‘ দুটি সত্তা বলতে?’ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন রানি নিয়ানো। কোনো কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।
‘ হ্যাঁ, দুটি সত্তা! একটি মানুব সত্তা। অপরটি মৎস্য সত্তা। রন ইওহার্ডের মা ছিলেন একজন মানব সন্তান। তাই মানব সত্তা তার মাঝে মানব সত্তা বিরাজমান। এবং রন ইওহার্ডের পিতা প্রাসিয়ো ইওহার্ড ছিলেন একজন মৎস্য রাজা। তাই রন ইওহার্ডের দেহে মানব সত্তার পাশাপাশি মৎস্য সত্তাও বিরাজ করছে। ‘ প্রত্যুত্তরে খুব স্বাভাবিক স্বরে জবাব দিলেন রাজা অরগাড। যেন ছোটো বাচ্চাকে এতক্ষণ যাবত বুঝ দিচ্ছিলেন।
[– চলবে –]
• রাজা অক্টাইসের সাথে প্রতারণা করেছে? কে সকল গোপনীয় কথা ফাঁস করে দিয়েছে?
• সেনাপতি করডালের সামনে আসা অজ্ঞাত লোকটি কে?
• রানি নিয়ানোর সন্দেহের কারণ কী?