গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর অষ্টম পর্ব

0
129

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
অষ্টম পর্ব

ছাব্বিশ.
রন ইওহার্ডের প্রশ্নের জবাবে রাজা অরগাড বললেন,
‘ তুমি আপাতত আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রতলদেশে আছো।’ একটি গম্ভীর ভাব নিয়ে বাক্যটি উপস্থাপন করলেন তিনি।
‘ আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি, কিন্তু আপনি প্রশ্নের উত্তরে মজা করছেন কেন?’ সামান্য রাগ নিয়ে কথাটি বলল রন ইওহার্ড। এরকম কথা বললে রাগ করাটাই স্বাভাবিক।
‘ আমি কোনোরকম মজা করছি না। তুমি এখন সমুদ্র তলদেশের মারমেইড শহরে আছো। বলতে পারো মারমেইড শহরের রাজপ্রাসাদে। ‘ একটি হাসি উপহার দিয়ে রন ইওহার্ডের প্রশ্নের জবাব দেন রাজা অরগাড। কিন্তু প্রশ্নের জবাবটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শ্রবণ করে রন ইওহার্ড।
‘ মারমেইড শহর বলতে?’ ঈষৎ অবাক হয়ে প্রাশ্ন করল সে। তার কাছে এখন নিজেকেই বোকা মনে হচ্ছে!
‘ হ্যাঁ মারমেইড শহর। ‘ হাসিসহ প্রশ্নের জবাব দিলেন রানি নিয়ানো। রানি নিয়ানোর জবাবে যেন রন ইওহার্ডের মাথায় ঘুরপাক খাওয়া জিলাপির প্যাঁচ আরও জটিল হয়েছে।
‘ রূপকথার গল্প হিসেবে জলপরী এবং মৎস্য মানব নামে যা শুনে এসেছি, আপনি বলতে চাচ্ছেন তাদের অস্তিত্ব বাস্তবেও আছে? আর আমি এখন তাদের জগতে রয়েছি?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রন ইওহার্ড। পরপর এরকম প্রশ্নের উত্তরগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে। সাথে প্রশ্নের জবাবগুলো তার মস্তিষ্ক বিচলিত হবার উপক্রম।
‘ হ্যাঁ। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান রন ইওহার্ড। ‘ প্রত্যুত্তরে বললেন রাজা অরগাড। প্রশংসা করতে একটুও পিছু হটলেন না তিনি।
‘ আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? জলপরী এবং মৎস্য মানব কেবল মানুষের কল্পনা। বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই।’ সামান্য রাগ নিয়ে শেষ কথাটি বলল রন ইওহার্ড। নিজেকে এখন তার সবচেয়ে বড় বোকা মনে হচ্ছে। কী সব কথা বলছে তারা!
‘ তোমার নাম জানাতে পারটা খুন বড় কোনো বিষয় নয়। যার নাম ইতিহাসের পাতায় বহু পূর্বেই লেখা রয়েছে, তার নাম খুঁজে খুঁজে বের করতে হয় না। বুদ্ধিমান হয়েও বোকার মতো কথা বলা তোমাকে মানায় না রন ইওহার্ড। বাস্তব থেকেই কল্পনার সৃষ্টি। প্রথমে বাস্তবে দেখে,শোনে। পরবর্তীতে পরিবর্তন করে নিজ কল্পনা অনুসারে নতুনত্ব সৃষ্টি করে। তাই কল্পনার সৃষ্টি বাস্তবতা থেকেই। ‘ প্রবেশদ্বার দিয়ে রাজসভায় প্রবেশ করতে করতে জবাব দিলেন জ্যোতিষী জিয়াং।

উপস্থিত সবাই এতক্ষণ রাজা অরগাড এবং রন ইওহার্ডের কথোপকথন দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। যার হেতু রাজসভায় জ্যোতিষী জিয়াংয়ের উপস্থিতি টের পায়নি। তার কণ্ঠস্বর শোনামাত্রই সবাই রাজসভার প্রবেশদ্বারের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। মেঝে থেকে হাতখানেক উপরে কোনো বস্তুর সাহায্য ছাড়াই হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে রাজা অরগাডের সামনে এবং রন ইওহার্ডের পাশে এসে উপস্থিত হন। রাজা অরগাডকে কুর্নিশ জানিয়ে বলতে লাগলেন জ্যোতিষী জিয়াং,
‘ অভিবাদন মহারাজ। আমি আগেই বলেছিলাম, দু-একদিনের মাঝে আপনার জন্য চমক থাকবে। ‘ দুই ঠোঁটের কোণে খানিকটা ধূর্ত হাসি ফুটিয়ে কথাটি বললেন তিনি। এ হাসির আসল রহস্য কী তা জানা বেশ কঠিন!
‘ আমি আসলেও চমকিত। এতবড় একটি চমকের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ‘ মুচকি হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে বললেন রাজা অরগাড। তার হাসিতে লেগে নেই কোনো রহস্যের জট। না আছে কোনো ধূর্ততার ছোঁয়া

তাদের বাকবিতণ্ডার কোনো আদি বা অন্ত খুঁজে পাচ্ছে না রন ইওহার্ড। একবার রাজা অরগাডের মুখপানে তো আরেকবার জ্যোতিষী জিয়াংয়ের মুখ পানে তাকাচ্ছে। তাদের কথায় বিরক্তি অনুভব করে রাজা অরগাডের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল,
‘ আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ? তবে কি এখানে উপস্থিত সবাই মৎস্য মানব-মানবী?’ কণ্ঠে লেগে আছে বিস্ময়কর ভাব। এগুলো মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
রন ইওহার্ডের প্রশ্নের জবাবে বললেন জ্যোতিষী জিয়াং,
‘ হ্যাঁ। এখানে উপস্থিত সকলেই মৎস্য মানব-মানবী। সাথে তুমিও একজন মৎস্য মানব। ‘ হাস্যোজ্জ্বল মুখে জবাব করলেন তিনি।
‘ তুমিও একজন মৎস্য মানব বলতে?’ অবাক স্বরে প্রশ্ন করল রন ইওহার্ড। তার এই প্রশ্নের মাঝে লেগে আছে হাজারও বিস্মিত ভাব।
‘ তোমার দেহে বাস করছে মৎস্য মানবদের শ্রেষ্ঠ রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ড এবং তোমার মাতা রাইননের রক্ত। রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ড! যার বীরত্ব এবং রাজকার্য ছিল সমগ্র সমুদ্রের উপর। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি একজন মৎস্য মানব? তাই তো? ‘ একটু গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলেন জ্যোতিষী জিয়াং। শেষ কথাগুলোর মাঝে পূর্বের তুলনায় একটু জোর দিয়ে উপস্থাপন করলেন!
‘ নাহ, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ‘ সামান্যতম চিৎকার যুক্ত স্বরে বলল রন ইওহার্ড। তার মাথায় এতগুলো রহস্যের জট খোলা সম্ভব হচ্ছে না।
‘ তোমার মনে আছে, তোমার যখন ১৩ বছর ছিল, তুমি একদিন নদীর কিনারায় পড়ে যাও। কিন্তু তুমি পানির নিচে শ্বাস নিচ্ছিলে।
এবং তুমি এই মুহূর্তে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে আছ। তবু শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্য চালাতে এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে না। আরেকটি বিষয় বস্তু হলো, প্রত্যেক পূর্ণিমার রাতে ঘুমের ঘরে ভয়ানক স্বপ্ন দেখো। কেউ তোমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ডাকছে। ভুলে গেছ? এরপরেও কি তোমার মনে হয় তুমি একজন সাধারণ মানব?’ একদমে কথাগুলো বলে থামলেন জ্যোতিষী জিয়াং। এতগুলো কথা একসাথে বলে হাঁপিয়ে উঠেছেন।
‘ আপনি এতকিছু জানেন কী করে? আমি এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না, আমি একজন মৎস মানব। ‘ অবিশ্বাস ভঙ্গিমায় কথাটি বলল রন ইওহার্ড। বিশ্বাস না হবারই কথা। হুট করে কেউ কিছু একটা বললেই তো আর সেটা বিশ্বাস করা যায় না।

একটি হাসি দিয়ে রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন জ্যোতিষী জিয়াং,
‘ তোমার এমন অনেক কিছুই আমার জানা আছে। ‘ এই কথার পরে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
‘ কিন্তু আপনারা যে মৎস্য মানব-মানবী তা বিশ্বাস করব কী করে? আপনাদের কারোই তো মৎস্য মানবদের মতো দেহের গড়ন নেই। ‘ বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন করল রন ইওহার্ড। হাজার চিন্তা মাথায় থাকার পরেও সঠিক সময় সঠিক প্রশ্ন করতে এবং কাজ করতে সক্ষম।

রন ইওহার্ডের কথা শেষ হতেই রাজা অরগাড ও রানি নিয়ানো, রাজকুমারী ডায়ানা এবং জ্যোতিষী জিয়াং ব্যতীত উপস্থিত সকলেই তাদের মানব রূপ থেকে দৈত্যাকার মৎস্য রূপ ধারণ করলেন। সকলের দেহের উপরিভাগ মানুষের; এবং নিম্ন ভাগ মাছের লেজের মতো। নিম্ন ভাগের মাছের লেজের মতো অংশটি বড় বড় আঁশ দিয়ে ঢাকা। মানুষ রূপে তাদের দেহের পরিমাণ ছোটো হলেও মৎস্য রূপে তাদের দেহের পরিমাণ দৈত্যাকার। রাজা অরগাড তার দুই হাত উঁচু করে দুটি হাতে তালি দেয়া মাত্রই সঙ্গে সঙ্গে সকলে মৎস্য রূপ থেকে মানব রূপ ধারণ করে যে যার আসনে বসে যান। এ দেখে খানিক বিচলিত হয়ে জ্যোতিষী জিয়াংয়ের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় রন ইওহার্ড।
‘ তাদের দেহের গড়ন বদল হলো কিন্তু আমার দেহের গড়ন এখনো বদল হলো না কেন?’ পুনরায় আরেকটি যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন রাখল সে।
‘ তোমার দেহের গড়ন বদল হবার নয়। তোমার পিতা একজন বীরশ্রেষ্ঠ মৎস্য রাজা হলেও তোমার মাতা রাইনন ছিলেন একজন মানব সন্তান। মৎস্য মানব এবং মানব সন্তানের সংমিশ্রণ থেকে তোমার জন্ম। তোমার দেহে মৎস্য মানবের শক্তি এবং রক্ত চলাচল করার পাশাপাশি একজন মানব সন্তানের রক্ত চলাচল করছে। যার হেতু তোমার দেহে মৎস্য মানবের শক্তি থাকার পরেও তুমি মানুষ রূপেই আছো। কিন্তু দুই জাতির রক্ত তোমার দেহে বসবাসের হেতু তুমি সকল মৎস্য মানব এবং মানুষের থেকে শক্তিশালী। ‘ একদমে কথাগুলো বললেন জ্যোতিষী জিয়াং। এবারের কথায় কিছুটা জোশ দিয়ে বললেন তিনি। যা রন ইওহার্ডকে খানিকটা ভাবনায় ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

কিছু বলছে না রন ইওহার্ড। রাজসভায় মোটামুটি একটা নীরবতা পরবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আচমকাই রন ইওহার্ড প্রশ্ন করে,
‘ তবে আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ? আমাকে না পেয়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার ভাই রিবন ইওহার্ড হয়তো অস্থির হয়ে পড়েছে। আমার ফেরা উচিত! ‘ শেষ কথাগুলো একদম ক্ষীণ কণ্ঠে শোনা গেল। যেন তার বাকযন্ত্র তার সাথে সায় দিচ্ছে না।
‘ সমবেদনা রন ইওহার্ড। আপনাকে এখান থেকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আপনাকে মারমেইড শহরের পরবর্তী রাজা হয়ে রাজ কার্য পরিচালনা করতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। আপাতত আপনার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এছাড়া আপনাকে এখন পৃথিবীর মানব জগৎ ভুলে যেতে হবে। এবং নিজ রাজ্য পরিচালনার চিন্তাভাবনা আরম্ভ করে শুরু করা উচিত। ‘ শান্ত স্বরে কথাগুলো বললেন জ্যোতিষী জিয়াং। কিন্তু কথাগুলো রন ইওহার্ডের মনে তিরের মতো বিঁধল।
‘ না আমার রাজ্যভার চাই, না সিংহাসন। আমার কিছুর প্রয়োজন নেই। আমি এখনই আমার বাড়ি ফিরব। আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন। ‘ রাগান্বিত হয়ে বলল রন ইওহার্ড। রাগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এরকম হঠাৎ করে তাকে একটি স্থানে এনে রাজা বানিয়ে দেওয়া হবে। এবং তার পরিবারবর্গকে ভুলে যেতে বলবে। এমনটা মানার মতো নয়।
পুনরায় শান্ত স্বরে বলতে আরম্ভ করলেন জ্যোতিষী জিয়াং,
‘ আপনি না চাওয়ার পরেও আপনার পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে আপনারই রাজ্যভার গ্রহণ করতে হবে। এবং বাড়ি ফেরার চিন্তা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেন। ‘ প্রথম কথাগুলো স্বাভাবিক হয়ে বললেও শেষের কথাটি কঠিন জোর প্রয়োগ করে উপস্থাপন করেন।

উপস্থিত সবাই যেন কোনো সিনামা দেখছে। যদি এই মুহূর্তে ভূমিকম্প হয় তবুও হয়তো তাদের মাঝে কেউ টের পাবে না। সবাই রাজা অরগাড ও জ্যোতিষী জিয়াং এবং রন ইওহার্ডের কথাবার্তাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করছেন। কোনোদিকে ধ্যান-খেয়াল নেই।
জ্যোতিষী জিয়াংয়ের কথা শেষ না হতেই রাজা অরগাড বলতে লাগলেন,
‘ কাল প্রভাতের প্রথম কিরণ ফুটতেই তোমার রাজপ্রশিক্ষণ কার্য চালু হবে। তৈরি থেকো। ‘ এই বলে সিংহাসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। রন ইওহার্ডের দিক থেকে নজর সরিয়ে সভায় উপস্থিত সভাসদদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলতে লাগলেন, ‘ আজকের জন্য রাজসভার কার্যক্রম এখানেই স্থগিত করা হলো। আগামীকাল যথা সময়ে উপস্থিত হবার জন্য সবাইকে জানানো হলো। ‘ এই বলে উপস্থিত সভাসদদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পুনরায় রন ইওহার্ডের দিকে তাকান।
‘ তুমি, রন ইওহার্ড। তুমি তোমার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে যেয়ে আপাতত আরাম করো। আর আরেকটি কথা, কাল থেকেই আপনার প্রশিক্ষণ কার্য শুরু হবে। কথাটি ভালো করে মাথায় রাখবে। ‘ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য করে কঠিন স্বরে কথাগুলো বললেন তিনি। রন ইওহার্ড তার এমন আচরণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রাজসভা ত্যাগ করলেন রাজা অরগাড। কিছুই মাথায় ঢুকছে না রন ইওহার্ডের।
‘ কোথা থেকে কোথায় এসে পড়লাম! আর এই নতুন আপদেরই-বা আবিষ্কার হলো কী করে!’ নিজের সাথে নিজেই মনে মনে আওড়াতে লাগল কথাগুলো।

রাজা অরগাড রাজসভা ত্যাহ করতেই তার পিছুপিছু রাজসভা ত্যাগ করলেন রানি নিয়ানো এবং রাজকুমারী ডায়ানা। উপস্থিত বাকি সভাসদরাও যে যার মতো রাজসভা থেকে নিজের স্থান ত্যাগ করেন। সেনাপতি রিবিয়ান প্রবেশদ্বার দিয়ে রাজসভা ত্যাগ করতেই তার পিছুপিছু রাজসভা ত্যাগ করেন জ্যোতিষী জিয়াং। রাজসভায় এই মুহূর্তে উপস্থিত আছে কেবল রন ইওহার্ড এবং তার দুই পাশে দুজন করে চারজন দেহরক্ষী। যারা তার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে একটি করে বল্লম। এবং কোমড়ে ঝুলানো রয়েছে একটি করে তলোয়ার। পরনে আছে যোদ্ধাদের পোশাক।
‘ এত ভেবে কোনো লাভ হবে না রন। তুই সবসময় যে কোনো পরিস্থিতিতে সামাল দিতে সক্ষম। এ আর কী কঠিন কাজ! ‘ নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলল রন ইওহার্ড।
নতুন করে আর কিছু না ভেবে রাজসভার প্রবেশদ্বার দিয়ে বাহিরে বের হয়ে এলো সে। তার পিছুপিছু আসছে তার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত চারজন দেহরক্ষী। বারান্দা দিয়ে কিছু সময় হাঁটতেই নিজ কক্ষের কাছে এসে উপস্থিত হয় তারা। কক্ষের সামনে দুজন প্রহরীর হাতে আধুনিক বল্লম এবং কোমড়ে ঝুলছে। রন ইওহার্ডকে দেখে তারা দ্রুত প্রবেশদ্বারটা খুলে দেয়। রন ইওহার্ড কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতেই পুনরায় দ্বার টেনে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয় তারা। রক্ষক হিসেবে দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রক্ষীগুলো বল্লম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই রইল।

সাতাইশ.
নিজ কক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে যায় সেনাপতি রিবিয়ান। তার হাতের মুঠোয় থেকে এক এক করে সব কিছু ছুটে যাচ্ছে। প্রথম রাজ্য এরপরেই রাজ্যের রাজকুমারী। রাজ্যের জন্য কেবল গাঁধার মতো খেটে এসেছে তার পূর্বপুরুষগণ। কখনো রাজার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আবার কখনো রাজার সম্মানে পা ছুঁয়ে সালাম করতেন। সারাজীবন শুধু গোলামি করেই কাটিয়েছেন তার পূর্বপুরুষগণ। কখনোই রাজকুমারী বা রাজসিংহাসনের দিকে তাদের নজর অথবা লোভ জন্মায়নি। তবে এবার সেনাপতি রিবিয়ানের নজর বেশ করে পড়েছে। রাজ বংশের লোকেরাই শুধু রাজা হবার ক্ষমতা রাখে। বাকিরা প্রজা। সেনাপতিদের বংশধরদের ক্ষেত্রেও কিছুটা রাজ বংশের পরম্পরা অনুযায়ী। রাজা হয় যেমন রাজ বংশের লোকেরা,তেমনই সেনাপতি হয় সেনাপতি বংশের লোকেরা। তবে এবার এই নিয়মের ভিন্নতা আনতে চাচ্ছেন সেনাপতি রিবিয়ান। সেনাপতি থেকে রাজা হবার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। রাজ্যভার পরিচালনার স্বপ্ন দেখছেন।

আঠাশ.
রাজা অরগাড এবং রানি নিয়ানো নিজেদের কক্ষে চলে গেছেন। রাজকুমারী ডায়ানা তার কক্ষে। নরম বিছানায় শুয়ে শুয়ে কল্পনা করতে লাগল তার আর রন ইওহার্ডের জীবদ্দশা। গতদিন রন ইওহার্ডকে ভালো করে দেখা হয়নি তার। কিন্তু আজকে যখন তার থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে রাজা অরগাড এবং জ্যোতিষী জিয়াংয়ের সাথে যেভাবে জবান নাড়িয়ে কথা বলছিলেন! দেখে মুগ্ধ হয়ে কেবল রন ইওহার্ডের মুখয়ানেই তাকিয়ে ছিল। রাজসভায় আজ রন ইওহার্ড উপস্থিত হবার পর থেকে এক সেকেন্ডের জন্য নজর নাড়ায়নি রাজকুমারী ডায়ানা। তার কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য দৃশ্য ছিল রন ইওহার্ডের ঠোঁট নাড়িয়ে জবাব দেওয়া। আজ পর্যন্ত রাজা অরগাড এবং জ্যোতিষী জিয়াংয়ের সাথে কেউ বেশিক্ষণ জবান নাড়াতে পারেনি। আর উঁচু গলায় কথা তো দূরেই থাক। কিন্তু আজ যেন সকল নথিপত্র ভেঙে নতুন করে গলা উঁচু করে বীরের মতো কথা চালিয়ে গেছে সে। আসলেও রাজা হবার জন্য এমন কাউকেই দরকার, যার বীরত্ব দেখে শত্রুপক্ষের লোকজনও যাতে দুর্বল হয়ে যায়। শয্যা ত্যাগ করে উঠে বসে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। উঠে পা বাড়ায় প্রবেশদ্বারের দিকে।

ঊনত্রিশ.
চারদিকে ঘোর অন্ধকার। সামনে রয়েছে একটি মূর্তি। মূর্তিটির সামনে ভাসমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে একজন। চোখদুটি বন্ধ করে এক ধ্যানে দাঁড়িয়ে আছে। অজ্ঞাত লোকটির হাতে রয়েছে একটি জাদুর লাঠির মতো ছড়ি। অজ্ঞাত লোকটি তার সামনে থাকা মূর্তির উদ্দেশ্য করতে বলতে লাগলেন,
‘ হে ইশ্বর, আমাকে শক্তি দিন। দীর্ঘদিন পর আজ আমাদের কার্যের প্রথম ধাপ পার হয়েছে। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম হবো। আপনার সাহায্য চাই। হে ইশ্বর আমাকে শক্তি দিন।’

অজ্ঞাত লোকটির এরকম প্রলাপকে পাগলের প্রলাপ বলার সক্ষমতাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটি মূর্তির কাছে উপাসনা করা মোটেও ভালো কোনো কাম্য নয়।

[– চলবে –]

• রন ইওহার্ড কি রাজা হবার যোগ্যতা রাখে?
• সেনাপতি রিবিয়ান কি পারবে রাজ্য এবং রাজকুমারী দুটো নিজের করে নিতে?
• মূর্তির উপাসনা করা অজ্ঞাত লোকটি কে? আর কোন লক্ষের কথা বলছেন তিনি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here