একটি_নির্জন_প্রহর_চাই। #WriterঃMousumi_Akter. #পর্ব_৪২

0
388

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই।
#WriterঃMousumi_Akter.
#পর্ব_৪২

রুম জুড়ে হাসির খিল খিল শব্দ।হাসি ছড়িয়ে পড়েছে রুমের প্রতিটা কোনায় কোনায়।আমি হেসেই যাচ্ছি।কিছুতেই এ হাসি থামছে না।ওনি কপাল টান টান করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমার এই অকারণ হাসি দেখে হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছে মানুষটা।প্যান্টের প্যাকেটে হাত গুঁজে এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এইদিকে হাসতে হাসতে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।ওনি গম্ভীর চাহনি নিক্ষেপ করে তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।ওনার ওই চাহনি দেখে আরও বেশি হাসি পাচ্ছে আমার।ওনি কি রে’ গে যাচ্ছেন!প্রবল হাসির মধ্য দিয়েও বলার চেষ্টা করছি স্যরি;কিন্তু সরি বলে উঠতেই পারছি না শুধু ‘স’বের হচ্ছে মুখ দিয়ে।ওনি আমাকে এত হাসতে দেখে এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, “আশ্চর্য!”
আমি তবুও হেসেই চলেছি।হাসতে হাসতে হাঁপিয়ে গিয়েছি।হাঁপাতে হাঁপাতে চেয়ারে বসলাম।ওনার দৃষ্টি একভাবে আমার দিকেই রয়েছে।চোখ দু’টো রা’ গ আর বিরক্তিতে ছেয়ে আছে।অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হলাম।ওনি বেশ কিছুক্ষণ গুরুগম্ভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে ভ্রু কুঁচকে বললেন, “এসব কীভাবে হল?বিছানায় পানি এলো কীভাবে?”
‘আপনি বসে ছিলেন আপনি জানেন,আমি কীভাবে জানব?’
ওনি দু’পা এগিয়ে এসে চোয়াল শক্ত করে বললেন,
‘‘আমার দোষ তাই না?এসব অদ্ভুত কাজ তোমার দ্বারাই সম্ভব!’’
‘আমার? মাথা খারাপ আপনার?নিজের দো’ষ আমার উপর চাপাইদিচ্ছেন কিন্তু!’
‘সিরিয়াসলি?আমি দোষ চাপাচ্ছি?তুমি হলে এসব কাজে এক্সপার্ট।সত্যি করে বলো পানি পড়ল কীভাবে?বিছানায় কীভাবে পানি এলো?’
‘আমি কীভাবে জানব?’
‘ওহ রিয়েলি! তুমি জানো না?’
‘নাহ।’
‘ওকে ফাইন। ‘

এটুকু বলেই ওনি বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, “গুড নাইট।”
বলেই পশ্চিম দিকে মুখ করে ফ্লোরে শুয়ে পড়লেন ।
হায়!হায়! ওনি কি আসলেই রেগে গেলেন!দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর আমিও একটা বালিশ নিয়ে পূর্বদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম।কীভাবে ওনার রা’ গ ভাঙানো যায় সেটা ভাবছি।ওনি ইউটিউবে সময় টিভির নিউজ দেখছেন।আমি ওনার মেসেঞ্জারে মেসেজ করলাম,

“রোশান স্যার?”
সাথে সাথেই রিপ্লাই করলেন,
“কে?”
‘আমি সারাহ!’
‘কোন সারাহ?’
‘আপনার বউ সারাহ!’
‘পাশে শুয়ে মেসেজ করার কারণ কী?’
‘উল্টো দিকে শুয়ে আছেন কেন?’
‘কোনো সমস্যা?’
‘শুনুন না……।’
‘??’
‘আমার দিকে ঘুরুন’
‘কেন?’
‘বুঝছেন না?’
‘কী বুঝব?’
‘আপনার বউ কেন মাঝ রাতে তার দিকে ঘুরে শুতে বলছে বুঝছেন না?এইটুকু কমনসেন্স নেই আপনার?’
‘না নেই।’
‘আমার ইয়ে পেয়েছে।’
‘ওয়াশরুমের দরজা তো খোলায় আছে।’
‘আরে ওসব ইয়ে নয়।’
‘অদ্ভুত!কোন সব ইয়ে?’
‘প্রেম।’
‘ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!ঘুম পাচ্ছে।গুড নাইট।’

এটুকু লিখেই ওনি ফোন অফ করে দিলেন।কীভাবে রা’গ ভাঙাতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।ওনার দিকে ঘুরে ওনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।ওনার কাঁধে মুখ গুঁজে ওনার পেটের উপর দিয়ে হাত দিয়ে গেঞ্জি সরিয়ে পেটে সুরসুড়ি দিচ্ছি আর নিঃশব্দে মৃদু হাসছি।ঘাড়ে নাক-মুখ ঘষে যাচ্ছি ক্রামগত। কী ধৈর্যশীল মানুষ! এখনও নড়ছেন না।আমিও হেরে যাওয়ার পাত্রী নই।আমি আমার মতো করে চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি।বেশ কিছুক্ষণ এরকম করার পর ওনি ওনার পেটের সাথেই আমার হাত চেপে ধরলেন।নিমিষেই আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে আমার দিকে ঘুরলেন।ডিম লাইটের কৃত্তিম মৃদু আলোয় ওনার মুখটা ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।এই যে মধ্য রাতে এই শ্যামসুন্দর পুরুষের মুখের অদলে তাকিয়ে মুগ্ধ হলাম আমি।ইদানিং ওনাকে দেখেই ঘন ঘন মুগ্ধ হচ্ছি।কী অদ্ভুত না ব্যাপারটা?মানুষটার এই চাহনি আমাকে পা**গ**ল করে তোলে।আমার চোখে-মুখে,ঠোঁটে মৃদু হাসি।ওনি ঘুরে আমার দিকে তাকাতেই আমি কেমন লজ্জা অনুভব করলাম।ভীষণ লজ্জা!ইচ্ছে করছে রুম ছেড়ে পালাই।ওনারও চোখে-মুখে অদ্ভুত এক পরিবর্তন।ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে!ওনি আস্তে করে মুখ এগিয়ে এনে আমার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বললেন, ”কী হয়েছে? এমন দুষ্টুমি করছ কেন হুম?”

ইশ!কী লজ্জা!কিছুক্ষণ আগে কী লজ্জাকর কাজ করছিলাম!আসলেই ওমন করছিলাম কেন আমি!লজ্জায় দ্রুত ওড়না টেনে মুখ ঢাকলাম।ওনি হালকা একটু উঠে আমার দিকে ঝুঁকে,মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে বললেন, ”এই মেয়েটা কখনোই আমাকে তার থেকে দূরে সরে থাকতে দিবে না।এমনি গতকাল যেভাবে মেসেজ করেছিলে!আমি ওখানেই শে” ষ হয়ে গিয়েছি।কিছুক্ষণ আগে খিলখিল করে হেসে আমাকে খু ”ন ক’ রে’ ছ।আর এখন যা করলে পুরো আমাকে এলোমেলো করে দিলে।মায়াবীনী তুমি।”

আমি লজ্জামিশ্রিত মুখে বললাম,
”আপনি রা”গ করেছেন কেন?আপনি রা”গ করলে আমার ভালো লাগে না।’
ওনি এবার পাশে শুয়ে পড়লেন।দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলেন।আমাকে টেনে নিয়ে ওনার বুকে আমার মাথা রেখে চুলে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ”জীবনে কোনো মেয়েকেই এত সহ্য করিনি আমি।ফ্রেন্ডরা বলত, আমি রোমান্টিক পার্সন না;তাই আমার বউ টিকবে না।সেই আমি নিজেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছি।আসলে এমনই হয়।কেউ যখন কাউকে সবটা উজাড় করে ভালবাসে তখন আপনা-আপনি পরিবর্তন চলে আসে।এখন কী হয় জানো?, ‘আমার দুপুর নামে তোমার নামে, সন্ধ্যা নামে তোমার নামে,তুমি ছাড়া নিশীও অপূর্ণ।এই জীবনের সব পূর্ণতা তোমায় ঘিরে।তুমি আমার নেশা,প্রিয় নেশা।মাদকতার নেশা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু তুমি নামক নেশা কখনোই ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’

ওনার বুকে মাথা গুঁজে আদুরে আলাপ শুনতে শুনতে মনে হল বিবাহিত জীবনের মতো সুন্দর জীবন নেই।জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার হলো বিয়ে।জীবনের সব চেয়ে সুখময় চ্যাপ্টার হলো নিজের স্বামীর বুকে মাথা গুঁজে ঘুমোনো।স্বামীর শুদ্ধতম ভালোবাসা জীবনের সব ডিপ্রেশন-মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে।তাই সবারই বিয়ে করা উত্তম।পারফেক্ট মানুষ না খুঁজে পার্মানেন্ট একটা মানুষ খোঁজা উচিত। যার কাছে সারাজীবন মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে।
এভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম।
__________________________
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।আজ লাস্ট এক্সাম।কেমন যেন ইদ-ইদ লাগছে।খুশিতে মনের মধ্যে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে ।তাছাড়াও আজ একটা বিশেষ দিন।তন্ময় আর ছোঁয়া বিয়ে করবে বলেছে।আমি আর মৃন্ময় সাক্ষী হব।জীবনে প্রথম কারো বিয়ের সাক্ষী হব।ভাবতেই ভালো লাগছে।ছোঁয়ার ফ্যামিলি থেকে তন্ময়ের মতো বেকারের সাথে এই মুহূর্তে বিয়ে দিতে রাজি নয়।ছোঁয়ার বাবা অনেক ধনী ব্যক্তি। ওনার ইচ্ছা ওনাদের মতোই কোনো ধনী ফ্যামিলিতে মেয়ে বিয়ে দিবে।তন্ময় আর ছোঁয়ার ইচ্ছা এখন বিয়ে করে রেখে তন্ময়ের জব হলে ফ্যামিলিতে জানাবে।তন্ময় যেমন স্টুডেন্ট নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। আর তখন মেনে না নিয়ে পারবে না।তবুও তন্ময় একটা বাসা নিয়েছে যেন ছোঁয়া মাঝেমধ্যে এসে তার কাছে থাকতে পারে।বাসাটা ইটের তবে উপরে টিনসেট।একরুমের একটি বাসা।তন্ময় লাস্ট ২ মাসে টিউশনির টাকা জমিয়েছে।বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ফেলছে।আগের কিছু টাকাও ছিল ওর কাছে।পাতলা একটা গোল্ড-এর রিং বানিয়েছে ৬ হাজার টাকা দিয়ে।এক আনা মতো সোনা হবে।আমাকে নিয়েই রিংটা বানিয়েছে।দুইটা শাড়ি কিনেছে,দুইটা থ্রী পিছ।কিছু কসমেটিক্সও।আসলে তন্ময়ের মন আছে।প্রিয়জনকে খুশি করতে নিজের সবটুকু চেষ্টা তন্ময় করেছে।ছাত্র জীবনে তন্ময়ের মতো হত দরিদ্র ফ্যামিলির ছেলের কাছে প্রেম-ভালবাসা,বিয়ে বিলাসিতার মতো।নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজে চালানো,মায়ের চিকিৎসা সব মিলিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ।অথচ একই বয়সে অন্যরা রেগুলার ফোন-বাইক চেঞ্জ করছে। মাসে মাসে শার্ট চেঞ্জ করছে।সেখানে তন্ময়ের জীবন কত কষ্টের!এত কিছুর মাঝেও নিজের ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

_______________
রোশান স্যার রেডি হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন,

”ভাংতি টাকা আছে তোমার কাছে?আমাকে ১০ টাকা দাও তো।”

‘আছে,কী করবেন?’

‘আমার কাছে এক টাকাও ভাংতি নেই।৫-১০ টাকা থাকলে দাও তো।’

‘ওহ! তো ধার চাইছেন?’

‘বউ-এর টাকা ধার কীসের?তোমার টাকা মানে আমার টাকা,আমার টাকা মানে তোমার টাকা।ইট’স রুলস।’

‘নো স্যার!নো নেভার!ইট’স নট রুলস।মাই মানি ইজ মাই মানি নট ইওর মানি।বাট ইওর মানি ইজ মাই মানি।’

‘ওহ আচ্ছা!নাইস ইওর রুলস।দারুণ! ভালো লাগল খুব।রেডি তুমি?’

‘হ্যাঁ।’

‘খেয়েছ?’

‘হু।’

‘কী খেয়েছ?’

‘কী যেন খেলাম!’

‘ডিম তো খাওনি?’

‘না,আমি ডিম খাব না।ডিম খেলে আন্ডা পাব পরীক্ষায়।’

ওনি বেশ অবাক হয়ে ঘুরে তাকালেন আমার দিকে।বেশ অবাক হয়েই বললেন, ‘সিরিয়াসলি?এসব বিলিভ করো তুমি?’

‘করি,সব করি বুঝেছেন?চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

ওনি আমাকে পরীক্ষার হলের সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজের কলেজে চলে গেলেন।তন্ময়, মৃন্ময় আর দ্বীপ দাঁড়িয়ে আছে।এদিক-সেদিক কোথাও ছোঁয়াকে দেখা যাচ্ছে না।ছোঁয়ার ফোনও অফ।সাড়ে আটটা বাজে,পরীক্ষার হলে ঢুকতে হবে।আমরা চারজন অপেক্ষা করতে করতে ৮;৫০-এ ভেতরে প্রবেশ করলাম।খাতা দিয়ে দিয়েছে অথচ ছোঁয়া আসেনি।তন্ময় তিনতলায় গ্রিল ধরে চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে।তন্ময়কে বললাম, ”ভেতরে চল।ও এসে যাবে।’

তন্ময় মলিন কন্ঠে বলল, ”ওর মুখ না দেখলে আমি পরীক্ষায় কিছু লিখতে পারব না।”

মানুষ এতটাও ভালবাসতে পারে!

চলবে?..

👉পরবর্তী পাট পড়তে পেজটি Follow করুন অবসর সময়ে হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here