একটি_নির্জন_প্রহর_চাই #Writer_Mousumi_Akter #পর্ব_১২

0
704

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
#Writer_Mousumi_Akter
#পর্ব_১২
#copyright_owner_Mousumi_Akter

সূর্যের তে*জ* স্ক্রীয় উত্তাপ চারদিকে, ঝলমল করছে ধরণী।সবুজ প্রকৃতির শিশির বিন্দু কণা শুকিয়ে গিয়েছে।সতেজ, প্রাণবন্ত লাগছে প্রকৃতি ।আকাশের বুকে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সারি সুপারি গাছ।গাছের নিচ টা সাদা চুনে ডিজাইন করা,দেখে মনে হচ্ছে কোনো পার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছি।সাদা রঙের প্রাইভেট কারটা দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে এই সারিবদ্ধ গাছের পাশ দিয়ে।তরী খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।শীতল বাতাস, আর মুক্ত পরিবেশ তরী ভীষণ ভাবে উপভোগ করছে।মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের পিপাসিত হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে,শীতল করেছে হৃদয় কে।মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব কিছু।তরীর ফর্সা শরীরে নীল রঙা শাড়িতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।মেয়েটার ভেতরে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে ছিলো, কেউ কোনদিন খেয়াল ই করেনি।এরা হলো আসল সুন্দরী, যার গায়ে নেই কৃত্তিম প্রসাধনীর কোনো অংশ,ন্যাচারাল ই নজরকাড়া রুপের অধিকারী।রোহান তরীর কোলে বসে চিপ্স খাচ্ছে।তরীর পাশে রোশান স্যারের দাদু বসে আছেন।ড্রাইভারের পাশে বসে আছেন আমার দাদু।আমি আর রোশান স্যার পেছনের সিটে বসে আছি।রোশান স্যার জানালার পাশে বসেছেন,এক হাত জানালায় কনুই ঠেকিয়ে আরেক হাত দিয়ে ফোন স্ক্রল করছেন।ওনার পরণে আকাশি রঙের পাঞ্জাবি। শ্যামবর্ণের শরীরে সুন্দরের কোনো কমতি নেই।আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।পাঞ্জাবীর হাতা ঘোটানো,কালো ফিতার ঘড়িটার দিকে নজর গেলো।হাতের লোমকূপের মাঝে ঘড়ি টার জন্য হাতের সৌন্দর্য্য যেনো বহুগুন বেড়ে গিয়েছে।এই শ্যামসুন্দর পুরুষ আমার স্বামি ভেবেই এক শিতল অনুভূতি হৃদয়ে নাড়া দিলো।সারাহ তুই অনেক ভাগ্যবতী, জীবনে যাকে ভাল লেগেছিলো তাকেই স্বামি হিসাবে পেয়েছিস।ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ছোটাছুটি করছে যেনো এক্ষণি বড় আকারে প্রকাশ পাবে।ভেতরের ভাল লাগা ভেতরে চেপে রাখতে ভীষণ ক*ষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে ইচ্ছে একটা খোলা জিপে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে পাখির মত ডানা মেলে বলি রোশান স্যার আপনার ব্যাক্তিত্ত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিলো,আমার কিশোরী মনে প্রমান্দোলনের ঝড় তুলেছিলো,আপনি সেই পুরুষ যাকে দেখে বারেবারে মুগ্ধ হয়েছি আমি,নিজ যত্নে আপনার জন্য ভালবাসার ঘর বানিয়েছি হৃদয়কোণে।সেই ঘরে আপনার বসবাস।আমি রোজ যত্ন করি সেই ঘরের।রোশান স্যার ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন।কি ভ* য়া* ন* ক সেই চাহনি,কি স’*র্ব*’না’*শা সে চাহনি।সাথে সাথেই চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের।আমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম,উনিও দৃষ্টি ঘুরালেন।মিনিট খানিক পরে আমি আবার তাকালাম তাকিয়ে দেখি উনি ও তাকিয়েছেন আমার দিকে।আবার ও চোখে চোখ পড়াতে লজ্জা পেয়ে গেলাম।ইশ!কি লজ্জাটায় না পাচ্ছি।আমার না হয় উনাকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু উনি কেনো তাকিয়ে আছেন।এরই মাঝে উনি ভ্রু উচিয়ে তাকালেন,বাম ভ্রু নাচালেন।ভ্রু উচিয়ে বুঝালেন, ‘ তাকিয়ে আছো কেনো?’
ইশ!কি সাং *ঘা*তি*ক লজ্জা।কি বলব ভাবছি।উনি আবার ও ভ্রু ইশারা করলেন।কি বলব বুঝতে না পেরে বললাম, ‘ব”#মি আসছে।’
কথাটা শুনেই উনি অতি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, ‘হোয়াট।’
‘হ্যাঁ,আমি এসব মাইক্রো তে উঠতে পারিনা।মাথা ঘুরায় ব”@মি আসে।’
‘আগে বলবে না তুমি।ব”@মি’র ওষুধ নিতে পারতাম।’
‘ওসব এ ও কাজ হয় না আমার।সাং@ঘা@তি@ক ব’* মি হয়।’
‘পৃথিবীর কততম আশ্চর্যজনক ওমেন তুমি বলতে পারো।’
‘দেখুন আজে বা* জে কথা বললে কিন্তু আপনার উপর ক**রে দি*বো।’
‘এর চেয়েও নি*কৃ*ষ্ট কাজ বাসর ঘরে করেছো,এটাও পারবা তুমি।তোমার পক্ষে সব ই সম্ভব।’
‘আপনি কেমন স্বামি বলবেন?’
‘কি করলাম আবার।অভিযোগ বলা হোক।’
‘সকালে দেখলেন কিছুই খেলাম না।একবার ও জিজ্ঞেস করলেন না আমার ক্ষু-দা লেগেছে কিনা।আমার কষ্ট হচ্ছে কিনা।আমার বান্ধবীর হাজবেন্ড সেদিন কি পরিমান কাঁন্নাটায় না করল।শুধু মাত্র বান্ধবী না খেয়ে এসছিলো বলে।নিজেও না খেয়ে ছিলো।আবার ফোন করে বেসামাল কাঁন্নায় ভেঙে পড়ল।’
‘বউ না খেলে তার জন্য কাঁন্না করাটা সহজ নাকি বউ এর রান্না অখাদ্য খে* য়ে হ*জ*ম করা সহজ সারাহ সিদ্দিকী।’
এটুকু বলেই উনি ড্রাইভার কে বললেন,
‘ভাই বড়বাজারে গাড়ি থামান।’
‘ভাই আমার মনে আছে, আপনি তো প্রথমেই বলেছিলেন ভাল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়াতে।’
রোশান স্যার এর কথায় ভেতর টা কেমন আ*ত*কে উঠল।বউ এর রান্না অখাদ্য মানে।উনি সকালের সেই জ*ঘ* ন্য খাবার খেয়েছিলেন।কিন্তু কেনো?আমি শ্যামসুন্দর পুরুষটির দিকে আবার ও তাকালাম।সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।গুরুগম্ভীর মানুষ কথা কম বলেও কেমন করে যেনো শ্রেষ্ঠ অনুভূতির জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।এই মানুষটাকে কি সৃষ্টিকর্তা বিশেষ কিছু দিয়েছেন।না আমার সাথে এখনো ভাল কথা হয়েছে না অন্য কিছু তবুও আমার রান্না খা*রা*প খাবার খে*য়ে হ*জ*ম করল। অথচ আমাকে ইমপ্রেস করতে একবার ও বলল না যে তোমার রান্না মানেই অমৃত আমার কাছে।
একটা শপিং মলের কাছে যেতেই রোশান স্যার বললেন, ‘ভাই গাড়ি থামান।’
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,
‘কেনো?’
‘তরীর শপিং করতে হবে বাড়ি থেকে একশ বার বললে টাকা বেশী করে নিন।আর এখন ভুলে গেলে।’
‘ওহ হ্যাঁ তাইতো।’
গাড়ি থেকে নামার সময় গাড়ির দরজা একশ বার টানাটানির পর ও খুলতে পারছি না।নিজের কাছে ল*জ্জা লাগছে যে উনি ভাববেন সামান্য গাড়ির দরজা ও খুলতে পারিনা।ড্রাইভার এসে বলল, ‘আপা দরজা লক ওভাবে খুলবেনা।আমি খুলে দিচ্ছি।’
ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই ওরা সবাই নামার পরে আমি নামলাম।পেছন থেকে মনে হচ্ছে শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছেন রোশ্যান স্যার।শুনেছি মানুষ বিয়ে করলে দারুণ বে-হা-য়া হয়ে যায়।লাজ ল*জ্জা সব বিসর্জন দিয়ে দেয়।যতই কঠিন পুরুষ হোক সুযোগ পেলেই বউ এর সাথে রোমান্টিকতা করতে চায়।উনিও কি পরিবর্তন হয়ে গেলেন।তাই বলে রাস্তাঘাটে এসব করবেন।দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
‘কি হচ্ছে কি এসব, অ*স*ভ্য*তা*র একটা লিমিট আছে।আপনি রাস্তা ঘাটে শাড়ির আঁচল ধরে টানাটানি করছেন।ছা*ড়ু*ন বলছি।’
এরই মাঝে দেখি রোশ্যান স্যার আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন মুখভর্তি বি-র-ক্তি নিয়ে।চোখে মুখে বি*র*ক্তি*র ছড়াছড়ি।ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ বি*র*ক্ত মুখে তাকিয়ে থেকে সামনে হাঁটা দিলেন।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখিয়ে আমার শাড়ির আঁচল গাড়ির দরজায় আটকে আছে।অতঃপর আরেক টি বাঁ#শ খাওয়ার গল্প।

গাড়ির দরজা থেকে শাড়ি বের করে নিয়ে উনার পেছনে হাঁটতে শুরু করলাম।ভেতরে যেতেই প্রত্যোক টা দোকানদার ডাকছে।এমন ভাবে ডাকছে যেনো ভিআইপি গেস্ট তাদের।যেনো কত আপ্যায়ন করবে।বিষয় টা আমার ভীষণ বি*র*ক্ত লাগছে।একজন পাঞ্জাবীর দোকানদার করুণ সুরে ডাকছে, ‘আপা, ও আপা। আসেন ভেতরে আসেন।’
প্রচন্ড বি*র*ক্ত হয়েই ভেতরে প্রবেশ করলাম আর বললাম, ‘বলুন কেনো ডেকেছেন?’
‘কি লাগবে আপা।’
‘শাড়ি আর থ্রী পিছ দেখান।’
‘সরি আপা।এটা শাড়ি-থ্রী পিছ এর দোকান না।’
তে** ড়ে গিয়ে বললাম, ‘এটা যখন শাড়ি-থ্রী পিছ এর দোকান না তাহলে ওভাবে কা*ঙা*ল এর মতো একজন মহিলাকে ডাকছিলেন কেনো?মহিলাদের কালেকশন নেই যখন মহিলাদের কেনো ডাকবেন।আমার কি সময়ের মূল্য নেই, আপনি আমাকে ডেকে আমার সময় নষ্ট করালেন।এখন আপনি যে জায়গা থেকে হোক শাড়ি এনে দিন।আমি শাড়ি না নিয়ে যাবো না।’
এরই মাঝে রোশান স্যার এসে থমথমে মুডে আমার হাত ধরে টেনে বললেন, ‘এসো আমার সাথে।’
দোকানদের কে বললেন, ‘ভাই সরি!কিছু মনে করবেন না।’
‘ভাই আল্লাহ জানেন আপনার সাথে কি করেন।’
দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে তরী আর দুই দাদু হেসে যাচ্ছেন।
অন্য একটা দোকানে গিয়ে শাড়ি দেখছি।শাড়ি সব পছন্দ হয়েছে।তরীর জন্য কতগুলো থ্রীপিছ আর শাড়ি নিলাম।এরই মাঝে দোকানদার বলে উঠল,
‘আরে আপা আপনি তো আর নতুন না।আমাদের দোকানে তো নিয়মিতই আসেন।দাম তো জানেন ই।’
সাথে সাথেই বলে উঠলাম,
‘আপনি কবে দেখেছেন আমাকে আপনাদের দোকানে।আমার জীবনে আজ প্রথম ই এসছি।এসব কি আপনাদের কমন ডায়লগ নাকি যে আসবে তাকেই এসব বলবেন।’
দোকানদার দারুণ লজ্জা পেয়ে বলল,
‘মনে হচ্ছে আপনি এর আগেও এসেছেন।’
‘না আসিনি,আপনাদের মনে হলে তো হবেনা ভাই।’
রোশান স্যার আড়চোখে আবার ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পরখ করে মুচকি হেসে দোকানদের কে টাকা দিয়ে বেরোনোর সময় বললেন,
‘ভাই নতুন কিছু চালু করেন।এখনের মেয়েরা বুঝে গিয়েছে আপনারা সবাইকেই সেইম কথা বলেন।’
হঠার একটা দোকানে টাঙানো মেরুণ কালারের পাঞ্জাবীর দিকে নজর গেলো।দোকানে গিয়ে পাঞ্জাবীর দাম দর ঠিক করার পর বলল,
‘আপা বিক্রি করি ৪০০০ টাকা আপনার জন্য ৩০০০ টাকা।কেনা দামেই দিচ্ছি।’
আবার ও মেজাজ খারাপ হল।আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এসব বলবে ঝ*গ*ড়া করব।তেজস্রী মুডে বললাম,
‘কেনো আমার জন্য কম কেনো?আমি কি বিশেষ কেউ।আপনার আত্মীয়, আপনার পরিচিত,আপনার বন্ধু না অন্য কিছু।কেনো কেনা দামে দিবেন সেই কইফত দিন।’
‘না আপা সবার সাথে তো ব্যবসা করা যায় না।কিছু কাস্টমার স্পেশাল। ‘
‘আমি স্পেশাল ওকে ফ্রিতে দেন।’
দাদু বললেন, ‘ভুলেও আর যাকে তাকে এসব বলে ব্যবসা করোনা ভাই।’
পাঞ্জাবীর টাকাটা রোশান স্যার দিতে গেলেও নিষেধ করলাম।নিজের টাকাতেই কিনলাম।রোশ্যান স্যার বললেন, ‘কার জন্য এটা।’
‘আমার প্রেমিকের জন্য।’
উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।

চলবে?
(গল্প পোস্ট করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।পোস্ট ভ্যানিশ হচ্ছে।সবাই রেসপন্স করবেন একটু।)

পরবর্তী পার্ট পড়তে পেজে Follow দিয়ে রাখুন!
👉👉 অবসর সময়ে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here