একটি_নির্জন_প্রহর_চাই #writer_Mousumi_Akter #পর্ব_১৩

0
399

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
#writer_Mousumi_Akter
#পর্ব_১৩
#copyright_onwer_Mousumi_Akter

খুব বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে খা’বে’ন নাকি? তাতে একটা মানুষের ছবি।সে মুঠোভর্তি নুডুলস নিয়ে বিরাট বড় হা করে নুডুলস মুখে দিচ্ছে।তার পাশে আরেকটা মেয়ে বিরিয়ানির প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে।প্লেট ভর্তি মুরগির আটটা লেগ পিস।দেখেই জিভে জল চলে আসার উপক্রম।মুরগির লেগ পিস দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা আমার।তার উপর বিরিয়ানি হলে তো কথাই নেই।ক্ষুধার্ত পেটে আমাকে এখন এই বিরিয়ানি খেতেই হবে।এটা না খেতে পারলে আজীবন বিরিয়ানি খাওয়ার আফসোস আমার থেকে যাবে।

রোশান স্যার আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“ভেতরে প্রবেশ করো।খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে, না হলে বাকি পথ মুখ চালাবে কিভাবে?”
বলেই উনি ভেতরে প্রবেশ করলেন।ওনার সাথে সাথে বাকিরাও প্রবেশ করল।তরীকে রোশান স্যার বললেন,
“কী খাবে তরী?”
আমি কিছু খাবোনা ভাইয়া।
খাবেনা বললে তো হবেনা।তুমি বলো কী খাবে?
সাদা ভাত আর মাছ খাবো।
ওকে।
সবার লক্ষ্য সাদা ভাতের দিকে কেনো?এখন কী করা যায়?কিভাবে বিরিয়ানি খাওয়া যায় তাই ভাবছি।রোহান কে ইশারা দিয়ে কাছে ডেকে নিয়ে আসলাম।রোহানের কানে ফিসফিস করে বললাম,
‘রোহান বাবু তুমি গিয়ে বলো আমরা সবাই বিরিয়ানি খাবো।খুব ভাল ভাবে জেদ ধরবা বুঝলা?
ঠিক আছে নতুন আম্মা।
রোহান ছুটে গিয়ে তার বড় পাপ্পার হাতের আঙুল ধরে ঘ্যানঘ্যান করে বলল, বড় পাপ্পা আমি কিন্তু বিরিয়ানি খাবো।
রোশান স্যার রোহান কে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বললেন ব্যাটা এসব খেলে রাস্তায় গাড়িতে ব” মি হতে পারে।তুমি ইলিশের ডিম দিয়ে খাও।লেগ পিস খাও।
না আমি বিরিয়ানি খাবো পাপ্পা।
তরী একটু ধমক দিয়ে বলল, কী ব্যাপার রোহান? পাপ্পা কী বলছে তুমি শুনতে পাচ্ছোনা?
রোহান এবার জোরে ঘ্যান ঘ্যান করে উঠল না আমি বিরিয়ানি ই খাবো।
দুই দাদু এসে বললেন তোমরা যা খাবে খাও।আমাদের সাদা ভাত আর সবজি দাও খেতে।
তরী বলল, আমিও বিরিয়ানি খাবো না ভাইয়া।
রোহান বলল তোমরা কেউ ভালো না।আমার নতুন আম্মা আর আমি খাবো।
রোশান স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি কী খাবে?’
মিনমিন করে বললাম, ‘রোহান যখন বলছে আমি ওর সাথেই খাচ্ছি।’
টেবিলে গোল হয়ে বসে সবাই খাচ্ছি।বাকিরা মাছ, মাংস খাচ্ছে,আমি আর রোহান বিরিয়ানি খাচ্ছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই বাটি খাসির মাংস দিয়ে গেলো।দেখে ভীষণ অবাক হলাম।বাহ!এখানকার রেস্টুরেন্ট গুলো কি দারুণ! আমাদের ওদিকে তো ১৮০ টাকা নেয় মাটান বিরিয়ানি, আর মোরগ পোলাও ১৪০।আর এদিকে তো দেখছি ফুল প্লেট মাটান এর সাথে এক বাটি করে খাসির মাংস এক্সট্রা দিচ্ছে।ছোঁয়া,মৃন্ময়,আর তন্ময় কে এখানকার খোঁজ দিতেই হবে।ইচ্ছা করছে এখনি ডেকে নিয়ে আসি।জীবনে প্রথম এত লাভে কিছু খাচ্ছি।রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম কোক হলে ভাল লাগত।
উনি আমার দিকে চোখ তুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন বলেছি,দিচ্ছে।
ওয়েটার কোক দিতে আসলে রোশান স্যার বললেন
বিল টা হিসাব করোতো।
ওয়েটার দাঁড়িয়ে দঁড়িয়ে হিসাব করে বলল, বিরিয়ানি দুই প্লেট মাংস সহ ১০০০। আর আপনাদের ১০০০।
সাথে সাথে আমার মাথায় বজ্রপাত হলো।মাথার সেন্স হারিয়ে ফেলে চট জলদি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি?বিরিয়ানি ১০০০ কেনো?.ম্যাম খাসির বাটি ৩২০ করে, বিরয়ানির প্লেট ১৮০ করে।
এই দাঁড়ান।ফাইজলামি পাইছেন তাইনা?আপনারা বড় বড় অক্ষরে লিখে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাটান ১৮০ ফুল প্লেট। আমরা তো তাই দেখেই অর্ডার দিয়েছি।চেয়েছি মাটান বিরিয়ানির প্লেট সাথে এক্সট্রা মাংস কেনো দিয়েছেন?যে কেউ ই ভাববে আপনারা বিরিয়ানির প্লেটের সাথেই দিচ্ছেন।
আপা আমরা দিয়ে রাখি,যার পোষায় সে খায়,না হলে ফিরিয়ে দেয়।’
ধান্দাবাজি খুলেছেন রেস্টুরেন্টের নামে?মানুষ না বুঝে খে’য়ে ফে’ল’বে আর আপনারা পরে টাকা নিবেন।শুনুন আমি সারাহ আমার সাথে এসব করে জিততে পারবেন না।আমি মাংসের টাকা দিবোনা।আমি চেয়েছি বিরিয়ানি মাংস কেনো দিয়েছেন? আমার লাগলে চেয়ে নিতাম।
‘আপা আপনার না লাগলে ফিরিয়ে দিতেন।’
‘নিন ফিরিয়ে নিন আপনাদের মাংস।’
‘আপা এঁটো করেছেন ফিরিয়ে নেওয়া যাবেনা।’
‘মাত্র দুই পিস খেয়েছি এঁটো হয়ে গিয়েছে তাতে?নিন আগে আপনাদের মাংস।৪২০ রেস্টুরেন্টের কিছু না বলে।মানুষ কে ধোঁকা দিয়ে টাকা নেওয়া।

তরী হেসেই যাচ্ছে,দাদুরাও হাসতেছে।রোশান স্যার ওয়েটারের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন যাও তুমি।আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম টাকা দিলেন কেনো?ভুল ওদের ওরা টাকা পাবেনা।
আচ্ছা মানছি ওদের ভুল।চারদিকে মানুষ তাকিয়ে আছে খেয়ে নাও।তাছাড়া টাকা আমি দিচ্ছি।তুমি রাগ করছো কেনো?’
রাগ করব না?স্বামী হন আমার।
রোশান স্যার সাথে সাথে ঝলমল চোখে তাকালেন আমার দিকে।কাশি শুরু হলো উনার।নাকে ঝাল ঢুকে গেলো।আমার কথা কি উনার গলায় আটকে গেলো? আমি দ্রুত উনার মাথার তালুতে হাত রেখে পানি এগিয়ে ধরলাম উনার মুখে।উনি পানি খেয়ে বললেন,
“ধন্যবাদ।”
টেবিলে রাখা টিসু বক্স থেকে সবাই টিসু নিয়ে হাত মুখ মুছছে। আমার বরাবর অভ্যাস, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বক্স থেকে টিসু গায়েব করা।
বক্সের অর্ধেক টিসু এদিক—সেদিক তাকিয়ে ব্যাগে নিয়ে নিলাম। কেউ আমার দিকে খেয়াল না করলে রোশান স্যার ঠিকই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। আমার দিকে ঝুঁকে এসে ফিস ফিস করে বললেন, ‘টিসু যত লাগে আমি কিনে দিবো। এখান থেকে রাখো।’
আমিও ফিসফিস করে বললাম, ‘এর মাঝে একটা মজা আছে আপনি বুঝবেন না। আপনিও কিছু নিয়ে নিন।’
‘তুমি যে আসলে কী! বুঝতে পেরেছি। এসবই সারাজীবন সহ্য করতে হবে।’

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পেটের মাঝে কেমন যেনো খারাপ লাগছে। রোশান স্যারকে বললাম, ‘একটা পান খাওয়ান আমাকে। খারাপ লাগছে খুব।’
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
‘তুমি পান খাবে?’
‘হ্যাঁ, আমি তো পান খাই। তিনবেলা করেই পান খাই। ভাত খাওয়ার পরে সুপারি আর জিরা খাই আমি। খেলে ভাল লাগে। না খেলে বমি হয়। কেনো তা জানি না।’
‘আস্তে বলো। বিবাহিত মেয়ে এভাবে বমির কথা বললে মানুষ কী ভাববে?’
‘কী ভাববে শুনি!’
‘ভাববে, যা ঘটার তা ঘটে গিয়েছে।’
‘আশ্চর্যজনক কথা!’

গাড়ি চলছে, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। হাড়ি হঠাৎ হঠাৎ থেমে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খাচ্ছি বারবার।প্রচণ্ড অশান্তি লাগছে শরীরের মাঝে। চোখ—মুখ লাল হয়ে এসছে। মাথার মাঝে ঘুরছে। সাথে সাথে সুপারি মুখে দিলাম, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখুনি সব বেরিয়ে আসবে পেট থেকে।ওদিকে রোহান বমি করেই যাচ্ছে। তরী রোহানকে বকা দিয়ে বলল,
‘আমি জানতাম, এসব খেয়ে পেট খারাপ হবে।নিজে তো অসুস্থ হলেই। তোমার জিদের জন্য তোমার নতুন আম্মার ও অসুস্থ লাগছে।
এরই মাঝে রোহান কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘আমার কী দোষ? সব দোষ নতুন আম্মার।আম্মাই তো আমাকে শিখিয়ে দিলো, রোহান তুমি কিন্তু বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য বায়না ধরবা। এবং আমাকে সাথে নিয়ে খাবে। আম্মা না শেখালে কি আমি বলতাম? আম্মারই খেতে ইচ্ছা করছিল।তাই আমাকে দিয়ে বলিয়েছে।
তরী রোহান কে বলল, ‘আর একটাও মিথ্যা বলবি না কিন্তু আম্মার নামে।’
রোহান আমার ইজ্জতটা এভাবে নষ্ট করে দিলো! রোহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। এই বিচ্চু আমার ইজ্জত আর রাখল না। কী লজ্জার কথা! রোশান স্যার কী অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। এরই মাঝে হুড়হুড় করে বমি করে ভাষিয়ে দিলাম স্যারের গায়ের উপর। আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বমি যে কোথায় করছি; তার হিসাব নেই। রোশান স্যারের যে কী একটা অবস্থা! মুখের অদলে কী অদ্ভুত চাহনি! তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আল্লাহ জানে; উনার মনের অনুভূতি কী এই মুহুর্তে। কী অদ্ভুত উনার চোখের দৃষ্টি। ইতিহাসে রেকর্ড হওয়ার মতো ঘটনা।

চলবে?..

(আল্লাহ জানে আজ আবার পোস্ট ভ্যানিশ হয় কিনা)

পরবর্তী পাট পড়তে পেজটি Follow করুন!!হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here