গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর বিংশ পর্ব

0
130

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
বিংশ পর্ব

একষট্টি.
চারদিকে প্রভাতের কিরণ ছেয়ে গেছে। আলোয় আলোকিত সমগ্র মৎস্য রাজ্য। মিনারের উপরে একটি সিংহাসনে বসে আছেন একজন রাজা। মিনারের চূড়ায় সিংহাসন রাখা। তাছাড়া মিনারের চূড়া বেশ বিস্তৃত স্থান নিয়ে গঠিত। এবং উক্ত স্থানগুলোতো আরও আরও চারটি সিংহাসন রাখা আছে। মিনারের চূড়ায় বিস্তৃত স্থানে রাখা সিংহাসনে বসে আছেন কয়েকজন লোক। তন্মধ্যে দুজন পুরুষ এবং বাকি দুজন নারী। একজন পুরুষ রাজাএবং অপরজন রন ইওহার্ড। উপস্থিত বাকি দুজন নারীর মাঝে একজন মধ্যবয়সী রানি এবং অপরজন রন ইওহার্ডের সমবয়সী রাজকুমারী। রন ইওহার্ডের সিংহাসনটি চারজনের মধ্যস্থানে। তার ডান পাশে বসে আছেন রাজা। এবং বাম পাশে বসে আছে রাজকুমারী। এবং রাজকুমারীর বাম পাশে বসে আছেন রানি। সিংহাসন চারটি একত্রে না হলেও একসারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কেবল যুবরাজ রন ইওহার্ডের মাথায় মুকুট নেই। তাছাড়া সবার মাথায় রয়েছে রাজমুকুট। রাজকুমারী মাথায় রয়েছে রাজকুমারীদের তাজ। যা খুব স্বাভাবিক একটি রাজমুকুট। তাছাড়া রাজকুমারী খুব সহজে রাজকুমারী ভাবা যায়। এবং রানি মাথায় রয়েছে রানিদের মতো অলঙ্কার দিয়ে তৈরি রাজমুকুট। তবে তাদের সকলের মাঝে উন্নত এবং সবচেয়ে আলাদা রকমের তাজ মাথায় পরিধান করে আছেন রাজা।
সিংহাসনের সম্মুখ একটি মাঠের দিকে করে রাখা হয়েছে। সিংহাসনের পেছনে দেখা যাচ্ছে চার তলা একটি রাজপ্রাসাদ। মিনারের সম্মুখ মাঠে বিশাল জনসাধারণের সমাগম। সবাই রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন মিনারের উপর দিকে তাকিয়ে আছেন। রন ইওহার্ডের ডান পাশে বসে থাকা রাজা ব্যক্তিটি সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। চারদিকে মাদলের বাদিত ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে আছে। মাদলের শব্দের সাথে যুক্ত হয়েছে জনসাধারণের উৎফুল্ল উল্লাসিত চিৎকার। একটি উপভোগ্য মুহূর্ত হিসেবে গণনা করা যায়। রাজমুকুট পরিহিত লোকটি তার মাথা থেকে মুকুটটি খুলে দুই হাতে নিয়ে রন ইওহার্ডের মাথায় পরিয়ে দেন। সাথে সাথে শত মাদলের ধ্বনির সাথে যোগ দিয়ে বেজে ওঠে শত ঢোলের একত্রে ধ্বনি! চারদিকে উপস্থিত জনগণ ভীড় লেগে থাকা উপচে পড়ছে। সবার মুখে উচ্চারণ হচ্ছে কেবল রন ইওহার্ড। তারা যেন কত প্রতীক্ষার পর রন ইওহার্ডকে পেয়েছে! রাজ্যের সবার মুখে ফুটে ওঠেছে হাসি। তাদের হাসি দেখে বুঝা যাচ্ছে, রন ইওহার্ড তাদের রাজা হওয়ায় তারা যেন বড্ড খুশি হয়েছেন!

রন ইওহার্ড রাজমুকুট পরিহিত অবস্থায় সিংহাসন থেকে নেমে যায়। মিনারের চূড়ায় বিস্তৃত স্থানের খানিকটা কিনারায় এসে দাঁড়ায় সে। ডান হাত উঁচু করে রাজ্যের সকলের উদ্দেশ্যে শপথ গ্রহণ করে নেয়। লোক তার শপথ বাক্য পঠন দেখে কেবল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। শপথ বাক্য শেষ হতে রন ইওহার্ড মিনারের কিনারা থেকে পেছনে দিকে ঘুরে সিংহাসনের দিকে এগিয়ে যায়। কোনোদিকে দৃষ্টি না দিয়ে চুপচাপ সিংহাসনে বসে যায়। খানিক বাদে মিনারের চূড়ায় অবস্থান নেন একজন পুরোহিত ধাঁচের লোক। তিনি মিনারের চূড়ায় অবস্থান করতে একটু আগে যার মাথায় রাজমুকুট ছিল তিনি রন ইওহার্ড এবং তার পাশে বসে থাকে সমবয়সী মেয়েটির দুটি হাত একত্র করে ধরনের রাখেন। তা দেখে পুরোহিত ধাঁচের লোকটি তার কোমড় থেকে একটি বই বের করে পৃষ্ঠা খুলে মৃদুস্বরে কিছু পাঠ করতে লাগলেন। এ দেখে উপস্থিত জনতা সবাই খুশি হয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ছেন প্রায়। পুরোহিত লোকটির বই পাঠ করা শেষ হতেই উপস্থিত সকলে একসাথে করতালি দিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু আচমকা প্রাসাদের বারান্দার দিকে নজর যায় রন ইওহার্ডের। নজরে আসে তার, প্রাসাদের বারান্দা দিয়ে একজন সৈনিক আধো রক্তাক্ত এবং ক্লান্তিকর অবস্থা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

এমতাবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যান রিবন ইওহার্ড। ঘুম থেকে জেগে নিজেকে তার অফিসের নিজ কক্ষের ভেতরে সোফায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পান। নিজের এরকম অবস্থা দেখে খানিকটা বিচলিত হয়ে যান তিনি। তার মনে এবং মস্তিষ্কে শত প্রশ্নের জোয়ার খেলে যাচ্ছে। তন্মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি এখানে কীভাবে এলেন? ‘ কিন্তু প্রশ্নের জবাব তার কাছে ধোঁয়াশা ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরিস্থিতির বেগ পেতে চারদিকে চোখ বুলিয়ে কিছু অনুধাবনের চেষ্টা করলেন। বুঝতে সক্ষম হলেন, একটু আগে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন যে বাস্তবের মতো উপভোগ করা যায় এটা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। এমন সময় তার রুমে প্রবেশ করে তার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট তানভীর।

রিবন ইওহার্ড তার এসিস্ট্যান্ট তানভীরকে তার অফিস রুমে আসতে দেখে হতভম্ব হয়ে কৌতূহলী হয়ে তাকান। ভেবে পান না কী হচ্ছে এসব! সকল কিছুর অবসান ঘটাতে প্রশ্ন রাখলেন তানভীরের কাছে। ‘ আমি এখানে এলাম কী করে? আর এখানেই-বা শুয়ে কেন ছিলাম আমি?’ তার প্রশ্নের আড়ালে লুকায়িত হাজার প্রশ্ন!,
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তানভীর। শেষে একটি হাসি দিয়ে উত্তর করে সে, ‘ আপনি না সকালে অফিসে আসলেন? ঘুমের ঘোরে দেখছি সব কিছুই ভুলে গেছেন!’ একটি মুচকি হাসি তুলে কথাটি ব্যক্ত করে সে। তানভীরের কথা শুনে সকালের ঘটনা মস্তিষ্কে সৃতিচারণ হয়। মনে পড়ে যায় তিনি সকালে অফিসে এসেছেন। কিন্তু তিনি তো তার টেবিলের কাছে থাকা চেয়ারে বসে ফাইল চেক করছিলেন! তবে সোফায় এলে কখন? পুনরায় কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন রাখলেন তানভীরের কাছে।
‘ কিন্তু আমি তো চেয়ারে বসে টেবিলের উপর রাখা ফাইল দেখছিলাম। তবে সোফায় এলাম কী করে?’ হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি!
প্রত্যুত্তরে পুনরায় আরও একটি হাসি উপহার দিয়ে বলল তানভীর,
‘ সোফায় এনে শুইয়ে দিয়েছি আমি। আমি যখন সকালে আমার ডেক্স থেকে আপনার রুমে আসি। দেখতে পাই, আপনি টেবিলের উপর মাথা রেখে ফাইল দেখা অবস্থাতেই ক্লান্তি ভরা মুখে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু চেয়ারে বসে ঘুমোতে আপনার বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। তাই আপনাকে চেয়ারসহ টেনে এনে বেশি নড়াচড়া না করে সোফায় শুইয়ে দিই। বেশ অনেক্ষণ যাবত ঘুমোলেন আপনি। দুপুর গড়িয়ে বিকালের রূপ নিতে যাচ্ছে। ‘ এইটুকু বলে কথা শেষ করল তানভীর। তার এরকম কর্মকাণ্ডে লজ্জা পেলেন রিবন ইওহার্ড। তবে খানিকটা বিষন্নতা ভর করা কণ্ঠে উপস্থাপন করলেন,
‘ আসলে রাতে ঘুম হয়নি। তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে এই ঘুমের মাঝেও মজার একটি স্বপ্ন দেখেছি। যদিও স্বপ্নটা দেখার সময় আমার বারবার মনে হচ্ছিল আমি বাস্তবেও অনুভব করছি! ‘ এতটুকু বলে থামলেন রিবন ইওহার্ড। একটু সময় নীরবে অতিবাহিত করে পুনরায় বলতে লাগেন, ‘ চারদিকে প্রভাতের কিরণ ছেয়ে গেছে……!’ একটু আগে দেখা তার পুরো স্বপ্নটি খুলে বললেন তানভীরের কাছে। বেশ মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শ্রবণ করল তানভীর। আর এই জন্যই তানভীরকে রিবনের এত ভালো লাগে! একজন ভালো শ্রোতার কাছে নিজের দুঃখ প্রকাশ করলেও তা ক্ষণিক সময়ের জন্য মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

সবটা শুনে বলল তানভীর,
‘ তবে আমার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে রন মারা যায়নি। আর না রনকে কোনো প্রাণী খেয়ে নিয়েছে।’ তীক্ষ্ণ মনোভাব ফুটিয়ে বলে ওঠে সে।
তানভীরের এরূপ কথা শুনে চমকে যান রিবন ইওহার্ড। প্রত্যুত্তরে বললেন,
‘ তুমি কী বলতে চাচ্ছ? খুলে বলো।’ বাকহারা হয়ে হতভম্বর ন্যায় প্রশ্ন করলেন রিবন ইওহার্ড।
‘ একটু লক্ষ্য করে দেখুন, রন ইওহার্ড সাঁতারে পারদর্শী। এবং একবার আমাকে জানিয়েছিলেন বিশেষ কোনো এক শক্তির মাধ্যমে পানির মাঝেও রন ইওহার্ড শ্বাস নিতে পারে। সেই সূত্র অনুযায়ী হয়তো রন গাড়ি তলিয়ে যাবার পর গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। পানির খরস্রোতে অথবা যে কোনোভাবে অন্য কোনো এক স্থানে চলে গেছে। হতে পারে তা কোনো দ্বীপে। তবে আমার বিশ্বাস, সে ফিরে এসে সবাইকে চমকে দেবে! ‘ এতটুকু বলে থেমে গেল তানভীর। তার কথায় অবশ্য বেশ যুক্তি খুঁজে পান রিবন ইওহার্ড। তবে তানভীরের দিকে গভীর আগ্রহান্বিত এবং সম্মতিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি।

বাষট্টি.
সকাল থেকে রাজ্যে তোরজোর আয়োজন চলছে। রাজ্য এবং প্রাসাদ সাজানোর কাজ গতকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রায়। অধিক লোক নিয়োগের ফলে অতিদ্রুত রাজ্য এবং রাজপ্রাসাদ সুন্দর ও পরিপাটিভাবে সাজাতে সক্ষম হয়েছে সাজোয়ালরা। সকাল থেকে রাজ্যের লোকজনের আনাগোনা রাজপ্রাসাদের সামনে থাকা বিশাল বিস্তৃ মাঠে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া সবচেয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে প্রাসাদ সংলগ্ন মিনার এবং প্রসাদের সম্মুখদিক। মিনারটা বিশাল উঁচু নয়। রাজপ্রাসাদতুল্য উচ্চতা হলেও প্রাসাদের এক কর্ণারে প্রাসাদ এবং মিনারের মাঝে খানিকটা দূরত্ব রেখে তৈরি করা হয়েছে। মিনারের চূড়ায় অবশিষ্ট স্থানটুকু একটা ছোটোখাটো মাঠ বলে আখ্যায়িত করা সম্ভব! মিনারের উপরে চারটি সিংহাসন রাখা হয়েছে সম্মুখ দিকে মুখ করে। একটি বড় সিংহাসন এবং তার পাশাপাশি দুদিকে সিংহাসন ধাঁচের জতীয় আরও তিনটে আসন তৈরি করা হয়েছে। প্রভাতের কিরণ বহু সময় পূর্বেই দেখা দিয়েছে। সুরক্ষা কবচের শোষণকৃত আলোয় আলোকিত হচ্ছে মৎস্য রাজ্য! সুরক্ষা কবচের ওপারে সমুদ্রের পানির কলরব গভীর আগ্রহান্বিত হয়ে শোনার চেষ্টা করলে খানিকটা হলেও অনুভব করা সম্ভব! রাজ্যের উপরে বহু প্রাজতির মাছ বিচরণ করে বেড়ায়। কিন্তু রাজ্যের ভেতরে প্রবেশ করার সাহস পায় না তারা।

সূর্য কিছুটা কোনাকোনিভাবে কিরণ দিতে সাজগোছ করে রাজা অরগাড এবং রানি নিয়ানো মিনারের চূড়ায় অবস্থান নেন। তাদের সাথে কিছু দাসীও দুই হাতে পাত্র আবদ্ধ করে সেখানে উপস্থিত হয়। এবং তাদের উপস্থিতি ব্যতীতও মিনারে অবস্থান করেছে কিছু সৈন্য। যারা রাজা অরগাডের দেহ রক্ষার কাজে নিয়োজিত। রাজ্যের সকল মৎস্য মানবেরা ধীরে ধীরে রাজপ্রাসাদের সামনে খোলা মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করে। রাজা অরগাড এবং রানি নিয়ানো দুজন দুই কর্ণারের সিংহাসনে অবস্থান করলেন। দুজনের মাথার রয়েছে রাজমুকুট। রানি নিয়ানোর মাথার রয়েছে রানিদের জন্য তৈরি অলংকার দিয়ে মাথার তাজ।এবং রাজা অরগাডের মাথার রয়েছে ভিন্নধর্মী একটি রাজ মুকুট। যে মুকুট দেখলে যে কেউ চিনতে সক্ষম হবেন এটি একটি রাজমুকুট! তাদের দুজনের আসন গ্রহণের কিছু সময় অতিবাহিত হতে রাজপ্রাসাদের দিক থেকে আসা সিঁড়ি বেয়ে মিনারের চূড়ায় উঠতে থাকে রাজকুমারী ডায়ানা। আজ রাজকুমারী ডায়ানাকে দেখতে একদম ভিন্ন রকম দেখাচ্ছে! প্রতিদিনের থেকে আজকে আরও অত্যাধিক সুন্দরী মনে হচ্ছে তাকে। পরিধান করে আছে নীল রঙের একটি ফ্রক জাতীয় পোশাক। যা দিয়ে কাঁধ থেকে পা অবধি ঢেকে আছে। তাছাড়া মাথায় রয়েছে হিরা দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট মুকুট। এবং রাজকুমারী ডায়ানার চুলগুলো খোপা করে পেছন দিকে ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। দুই কানের পাশ দিয়ে কিছু চুল সামনে চলে এসেছে। যা কিঞ্চিৎ বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার! দেহের উজ্জ্বল সাদা বর্ণের সাথে নীল রঙের পোশাকে তাকে বেশ মানিয়েছে।

কয়েকজন রক্ষী পাশ থেকে মাদলের শব্দ তুলতে প্রাসাদ থেকে সিঁড়িতে পা রাখে যুবরাজ রন ইওহার্ড। তার আগমনে মাদলের শব্দের পাশাপাশি বাজছে ঢোল। এবং সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জনতার গর্জন। পরিস্থিতি বেশ মুখরিত বলা যায়। রাজা অরগাড মূল সিংহাসনের ডান পাশের কর্ণারে এবং রানি নিয়ানো মূল সিংহাসনের বাম দিকের প্রথম সিংহাসনের পরের সিংহাসনে আসন গ্রহণ করেছেন। এবং বাম দিকে থাকা প্রথম সিংহাসন গ্রহণ করেছে রাজকুমারী ডায়ানা।
যুবরাজ রন ইওহার্ডের মিনারের উপরে ওঠার জন্য সিঁড়িতে প্রতি চরণে এক নতুন করে অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে মিশে আছে, খানিকটা ভয়,খানিকটা জয়,খানিকটা সংশয় আর খানিকটা দায়িত্ববোধ! ধীরে ধীরে চরণ ফেলে মিনারের চূড়ায় অবস্থান করে যুবরাজ রন ইওহার্ড। তার উপস্থিতি দেখে জনতার গর্জনের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে গেল। সবার মুখে উচ্চারিত হচ্ছে কেবল রন ইওহার্ড। মৎস্য মানব-মানবী এবং তাদের ছোটো-ছোটো সন্তানগুলোও তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে। যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মূল সিংহাসনে আসন গ্রহণ করার জন্য ইশারা করলেন রাজা অরগাড।

যুবরাজ রন ইওহার্ড তার আসন গ্রহণ করতে কিছু সময় পর রাজা অরগাড তার আসন ছেড়ে উঠে গেলেন। সাথে সাথে মাদলের শব্দের সাথে ঢোল এবং বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার দিয়ে উঠল। পুরো রাজ্য এখন বাদ্যযন্ত্রগুলোর আওয়াজে গুঞ্জিত। যুক্ত হয়েছে জনতার অস্বাভাবিক চিৎকার! সেদিকে ধ্যান না দিয়ে রাজা অরগাড ধীর পেজ হেঁটে যুবরাজ রন ইওহার্ডের সিংহাসনের কাছে এসে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ সিংহাসন ছেড়ে উঠে যাবার জন্য ব্যগ্রতা দেখালে রাজা অরগাড চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলেন তাকে। অতঃপর রাজা অরগাড তার মাথা থেকে রাজমুকুটটি মাথা থেকে খুলে হাতে নিয়ে নেন। অন্যান্য দিন যে মুকুট তিনি মাথায় ধারণ কর‍তেন এটি সেই মুকুট নয়। এটি রাজবংশের পরম্পরায় সকল রাজাগণকে রাজ্যভার তাদের হাতে দেওয়ার সময় এটি সকলের মাথায় এসেছে। রাজা অরগাডের হাতে থাকা রাজমুকুটটি একটু ব্যতিক্রম ধরণের। পুরো রাজমুকুটটা নীল বর্ণের শিরস্ত্রাণ। এবং নীল বর্ণের হীরা দিয়ে তৈরি মুকুট। মুকুটের মাঝ বরাবর উপরে একটি হীরা চকচক করছে। তাছাড়া মুকুটের নিম্নাংশ থেকে ছয়টি বাহু একটু উপরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। শীর্ষক বিন্দুর উপরে গোলাকার একটি খাঁজ রাখা আছে। এবং উক্ত খাঁজের উপরে একটি বড় নীলাভ হীরা রাখা আছে। হীরার এবং খাঁজের মধ্যস্থানে চারটি চার রঙের পাথর রয়েছে। ডানদিকের প্রথম পাথরের রঙ সাদা। তার পরবর্তী পাথরের রঙ হলুদ। এর পরবর্তী পাথরের রঙ লাল। এবং অপর পাথরটির রঙ নীল। এছাড়া মুকুটের নিম্নাংশ থেকে উপরে ওঠা বাহুগুলোর মাঝে নীলাভ বর্ণের চোখা-চোখা আকৃতির হীরা দিয়ে বাঁধানো। যিনি এই রাজমুকুটের সৃষ্ট কর্তা। তার মাথায় নিশ্চয়ই মুকুট নিয়ে ভিন্ন কিছু করার উদ্দেশ্য ছিল!

রাজা অরগাড তার হাতে থাকা রাজমুকুটটি নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের মাথায় তুলে দেন। রাজমুকুট পরিধানের অর্থ হচ্ছে, এখন থেকে তিনি আর যুবরাজ রন ইওহার্ড নন। বরং রাজা রন ইওহার্ড! রাজা অরগাড রন ইওহার্ডের মাথায় মুকুট পরিধান করিয়ে দিতে বাদ্যযন্ত্রর আওয়াজ আরও জোড়ালো ধ্বনি তুলতে ব্যস্ত!উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়তে লাগলেন। আজ যেন তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিস নিজেদের হাতে পেয়েছেন। মিনারের উপরে একজন দাসী তার হাতে থাকা পাত্রটি নিয়ে পূর্ব রাজা অরগাডের কাছে এসে উপস্থিত হয়। পাত্রের উপরে খোলসে আবদ্ধকরণ করে রাখা আছে একটি রাজ তলোয়ার। পূর্ব রাজা অরগাড হাতে তলোয়ারটি নিয়ে বাম হাতে খোলস এবং ডান হাতে তলোয়ারের হাতল ধরে একটি টান দিয়ে সম্পূর্ণ তলোয়ারকে খোলস মুক্ত করে দেন। তলোয়ার থেকে সাদা সাদা আলোয় জ্বলজ্বল করছে। তাছাড়া তলোয়ারটির ধারালো অংশটুকু রঙ নীল বর্ণের। এবং হাতলটুকু হীরার সাথে তুলোর সংমিশ্রণ করে তৈরি। তবে হাতলের ডান পাশে চারটি ছিদ্র রয়েছে। সঠিকভাবে ছিদ্র নয় স্বল্প পরিসরে গর্ত। তাছাড়া মারমেইড শহরের অধিকাংশ জিনিস নীল বর্ণের। হয়তো তারা পানির রঙের সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিতে ভালোবাসে! রাজা রন ইওহার্ডের হাতে বংশগত পরম্পরা অনুসারে মহান রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ডের তলোয়ার তার ছেলেকে দেওয়া হলো। পূর্ব রাজা অরগাড বর্তমান রাজা রন ইওহার্ডকে তলোয়ার দিতে তিনি হাতে লুফে নেন। এছাড়া তাকে আরও কিছু অস্ত্রসস্ত্র উপহার এবং বংশগত পরম্পরায় দেন পূর্ব রাজা অরগাড। এতদিন পূর্ব রাজা অরগাড তার কাছে প্রত্যেকটি জিনিস আমানত হিসেবে রেখেছিলেন। আজ সকল আমানত মূল অংশীদারির কাছে হস্তান্তর করলেন তিনি। বিতরণ পর্ব শেষ হলে খোলসে তলোয়ার আবদ্ব করে নেন রাজা রন ইওহার্ড।

সিংহাসন থেকে নেমে খোলসে আবদ্ধ তলোয়ার কোমরে ঝুলিয়ে নেন রাজা রন ইওহার্ড। ধীর পায়ে হেঁটে মিনারের কিনারায় উপস্থিত হন। উপস্থিত জনতার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে শপথ বাক্য পাঠ করতে লাগলেন তিনি। ” আপনাদের সকলের ভালোবাসার মহান রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ডের পুত্র আমি রন ইওহার্ড। বংশগত দিক থেকে আপনাদের সকলের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা আমার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি শপথ গ্রহণ করিতেছি, আমার দেহে শেষ নিশ্বাস থাকা অবধি আপনাদের রক্ষা করে যাবার চেষ্টা করব। এবং আপনাদের মাঝে সুবিচারের ব্যবস্থা করব। ” এই বলে ডান হাত উঁচু অবস্থা থেকে নামিয়ে কোমরে রাখা খোলসে আবদ্ধ তলোয়ারের হাতল উক্ত হাতে বদ্ধ করে একটি টান দিয়ে খাপ মুক্ত করে নেন। অতঃপর তলোয়ারসহ ডান হাত উপস্থিত জনতার দিকে উঁচু করে দেখান। তার শপথ বাক্য পঠন এবং জোশ দেখে জনতার মুখে হাসির ঢল বয়ে যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্রের তাল যেন ক্রমেক্রমে বেড়েই চলেছে। পুনরায় ডান হাতে আবদ্ধ তলোয়ারটি কোমর অবধি নামিয়ে পূর্বের মতো খাপে বদ্ধ করে পেছন ফিরে আসেন। সিংহাসন পর্যন্ত পৌঁছে উপস্থিত জনতার দিকে মুখ করে বসে যান তিনি।

কিছু সময় পর মিনারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে এসে উপস্থিত হন একজন পুরোহিত ধাঁচের লোক। পরনে জামাকাপড়গুলো একটু ব্যতিক্রম ধরণের। তিনি মিনারের চুড়ায় উপস্থিত হয়ে সময় ব্যত্য না করে মনে মনে কিছু জপার পাশাপাশি গুনগুন আওয়াজ তুলে কিছু পাঠ করতে লাগলেন। রাজা অরগাড রাজা রন ইওহার্ডের হাত এবং রাজকুমারী ডায়ানার হাত মিলিত করে বন্ধন সৃষ্টি করেন। এবং তাদের দুজনের দুই হাত একত্র করেআবদ্ধ করে দেন তিনি। পুরোহিত ধাঁচের লোকটি তার কোমর থেকে একটি বই বের করে পাঠ করে লাগলেন। কিছু সময় পর তাদের দুজনের হাত ছেড়ে দিয়ে সামনের দিকে উপস্থিত হন রাজা অরগাড। রানি নিয়ানো সিংহাসন ত্যাগ করে এগিয়ে আসেন তাদের দুজনের দিকে। রানি ডায়ানার কাছে উপস্থিত হয়ে মাথা থেকে রাজমুকুটটি নামিয়ে হাতে নিয়ে নেন। অতঃপর হাত বাড়িয়ে রানি ডায়ানার মাথায় তাজটি পরিধান করে দেন তিনি। আচমকাই রাজা রন ইওহার্ডের দৃষ্টিপাত ঘটে যায় প্রাসাদের ভেতর দিকে। একজন সৈন্য আধো রক্তাক্ত এবং ক্লান্তিকর অবস্থায় বারান্দা দিয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে মিনারের উপরে আসার লক্ষ্যস্থির করেছে। রাজা রন ইওহার্ড পূর্ব রাজা অরগাডের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ যত দ্রুত সম্ভব এখানের এগুলো সামলিয়ে শেষ করুন। এবং সকল কার্যকলাপ দ্রুত শেষ করে ফিরে চলুন রাজপ্রাসাদে। আমি ওইদিকটা দেখে আসছি। ‘ সাবেক রাজা অরগাড রন ইওহার্ডের কথার আদি অথবা অন্ত কিছুই বুঝতে সক্ষম হননি। কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রাজা রন ইওহার্ড দ্রুত পায়ে হেঁটে মিনারের সিঁড়ি বেয়ে সোজা প্রাসাদের দিকে হাঁটতে লাগলেন।

[– চলবে –]

• রিবন ইওহার্ডের স্বপ্ন দেখার কারণ কী?
• রিবন ইওহার্ড কি আসলেও স্বপ্ন দেখেছেন নাকি পরিস্থিতিতে তার অবস্থান বিচরণ ছিল?
• আধো রক্তাক্ত সৈন্য কেন রাজপ্রাসাদে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here