গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর একবিংশ পর্ব

0
157

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
একবিংশ পর্ব

তেষট্টি.
হন্তদন্ত হয়ে রাজা অক্টাইসের কক্ষে প্রবেশ করলেন অক্টোপাস ডারলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে তিনি বেশ খুশি। এসেই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ তুলে ব্যক্ত করতে আরম্ভ করলেন, ‘ মহারাজ..! মহারাজ..! মহারাজ..! ‘ অত্যাধিক আপ্লুত বোধ করে প্রয়োজনের চাইতে অধিক আওয়াজ তুলে ব্যক্ত করতে নিলেন। বিরক্তিবোধ করে খানিকটা ধমকের সূরে বললেন রাজা অক্টাইস,
‘ এই চুপ কর তো। কী হয়েছে তা তো বলবি? আর তোকে আর এত খুশি দেখাচ্ছে কেন?’ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ডারলেনের মুখপানে তাকিয়ে আছেন তিনি।
‘ মহারাজা…! সেনাপতি করডাল ফিরে এসেছে। ‘ ধমক খাবার পরেও অধিক আপ্লুত হয়ে পুনরায় ব্যক্ত করেন কথাটি। তার ব্যক্ত করা আওয়াজ চিৎকারের ন্যায় শোনা যাচ্ছে প্রায়!
‘ কী বললি? করডাল ফিরে এসেছে! ‘ আশ্চর্যান্বিত হয়ে প্রশ্নসূচক বাক্য রাখলেন রাজা অক্টাইস। তার কাছে এ যেন এক অসম্ভব কার্যক্রম! কোনোভাবে তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
‘ জি মহারাজ। সেনাপতি করডাল ফিরে এসেছে। ‘ প্রফুল্ল মুখে উত্তর করলেন অক্টোপাস ডারলেন।
‘ সে এখন কোথায়? তাকে দ্রুত আমার সাথে দেখা করতে আসতে বলো!’ অবিশ্বাসের ভঙ্গিমায় কথাটি বললেন রাজা অক্টাইস। তিনি কোনোভাবেই ডারলেনের কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না।
তার প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে অক্টোপাস ডারলেন নন্দিত হয়ে বললেন,
‘ সেনাপতি করডাল এদিকেই আসছেন। ‘ দুই ঠোঁটোর কোণে একটি মুচকি হাসি লেগে আছে।

কিছু সময় অতিবাহিত হতেই আকস্মিকভাবে প্রবেশদ্বার খুলে গেল। প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বিশাল এক দৈত্যাকার হাঙর। দেহের উপরিভাগ ঘন কালোয় আচ্ছাদিত। তবে দেহের নিম্ন ভাগ উজ্জ্বল সাদা। পিঠের উপর বেশ বড় একটি উঁচু ঢিপি! মাথা থেকে একটু পেছনে দুইপাশের উভয় দিকে বেশ বড়সড় একটি ডানা রয়েছে।ধারালো দাঁতের চোয়ালের উপরে দুটো ডাগরডাগর চোখ। চোখ দুটো রক্তিম লাল বর্ণ ধারণ করেছে। যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। রাজা অক্টাইসের অবস্থানকৃত কক্ষটা এতটাই বড় যে, এত বড় একটি হাঙরের উপস্থিতিতেও বিন্দু পরিমাণ সমস্যার সৃষ্টি হলো না। রাজা অক্টাইস এতদিন পর তার সেনাপতি করডালকে দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেলেন। তার চোখমুখে ফুটে উঠল হাসি। রাজা অক্টাইস এতদিন অধির আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলেন সেনাপতি করডালের অপেক্ষায়। আজ কাঙ্ক্ষিত সময় এবং কাঙ্ক্ষিত জিনিস তার কাছে উপস্থিত। সেনাপতি করডালের দুই চোখে রয়েছে প্রতিশোধের স্পৃহা। এখনো তাকে আটক করার স্মৃতি মস্তিষ্কে আসলে থমকে যান। কোনোভাবে ভুলতে পারছেন তিনি। হাজার চেষ্টার পরেও অক্ষম। দীর্ঘ দুটি বছরের অধিক সময় একটি অন্ধকারে আবৃত্ত কক্ষের মাঝে এক অবস্থাতে জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। একটু আলোর সংস্পর্শ পায়নি তার দেহ। এই দুই বছরের মাঝে তাকে একটি দিনও ভালো খাবার দেওয়া হয়নি। অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে এখন তিনি প্রস্তুত।

প্রবেশদ্বার দিয়ে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে রাজা অক্টাইসের সামনে উপস্থিত হয়ে থেমে যান সেনাপতি করডাল। মাথাটা সামনের দিকে নিচু করে কুর্নিশ জানান। আপ্লুত হয়ে ব্যক্ত করতে আরম্ভ করতে লাগলেন রাজা অক্টাইস,
‘ করডাল, তুমি জানো আজ আমি কতটা খুশি! আমার খুশি আজ ব্যক্ত করে শেষ করা যাবে না। ‘ আপ্লুত কণ্ঠে উপস্থাপন করলেন।
‘ আমিও আজ অনেক খুশি মহারাজ। আজ দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় কারাবাসে জীবন অতিবাহিত করার পর আজ মুক্ত হলাম। আমি যেন আজ প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছি। এতদিন মনে হচ্ছিল আমি শ্বাস নিতে সক্ষম হতে পারছি না। এই দীর্ঘ সময়ের মাঝে এক বিন্দু নড়তে পারিনি। আমাকে এক বিন্দু পরিমাণ নড়তে দেওয়া হয়নি। ঐ আবদ্ধকরণ কারাগারের চারপাশে নড়ার মতো এক বিন্দু জায়গা অবশিষ্ট ছিল না! আমাকে একটা বদ্ধ অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখেছিল মৎস্য রাজা অরগাড। একটু ভালো খাবার অবধি দেওয়া হয়নি আমাকে। প্রতি এক মাস পর পর কী একটু ঘাসপাতা খেতে দিত। আর সারা মাস না খেয়ে কাটাতে হতো আমাকে! ‘ কথাগুলো বলতে বলতে ক্রন্দনরত হয়ে পড়লেন সেনাপতি করডাল। তার কান্না দেখে রাজা অক্টাইসের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। এরকম প্রফুল্ল সময় হবার পরও সেনাপতি করডালের প্রতি এত অন্যায় অবিচারের কথা শুনে মনটা তার বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। আচমকা কঠিন কণ্ঠস্বর সৃষ্টি করে বলতে লাগলেন সেনাপতি করডাল, ‘ এর মূল্য দিতে হবে অরগাড! খুব ভালো করে দিতে হবে।’ রাগ গা উপচে পড়ার উপক্রম!
‘ মহামান্য সেনাপতি! আপনার উপর করা অন্যায় ও অবিচারের কথা শুনে, এখনই আমার দেহে প্রবাহিত রক্তগুলো টগবগ করতেছে। ইচ্ছে হচ্ছে অরগাডের রাজ্য এখন ধূলিস্যাৎ করে দিই।’ কণ্ঠে রাগী ভাব ফুটিয়ে মনের অব্যক্ত কথনকে জাহির করলেন অক্টোপাস ডারলেন।
‘ ডারলেন, আমার প্রতি করা অত্যাচারের প্রতিটি প্রতিশোধ আমি অবশ্যই নেব। অরগাডকে তো আমি কোনোভাবে ছাড়ছি না। আর ওর মেয়ে ডায়ানার জন্য দুই বছরের অধিক সময় নষ্ট করা হয়েছে আমার। এত কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে! তাকে তো আমি দেখে ছাড়ব। চিবিয়ে চিবিয়ে মনের স্বাদ মিটিয়ে খাব তাকে। ‘ প্রথম কথাগুলো রাগী সূরে বললেও শেষ কথাটি কণ্ঠে তৃপ্ততা ভাব মুখে ফুটিয়ে বললেন সেনাপতি করডাল।
‘ তবে আক্রমণ কি আজকেই করবেন মহারাজ? ‘ উৎসুক হয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলেন অক্টোপাস ডারলেন। যেন প্রশ্নটা জানা তার অত্যাধিক জরুরি!
‘ নাহ! আজ নয়। এমনিতে প্রায় দিবার শেষ প্রহর খুব সন্নিকটে। সেনাদের প্রস্তুত করতে করতে বেশ সময়ের প্রয়োজন হবে আমাদের। সেনাদের প্রস্তুত করে যুদ্ধে রওনা দিতে দিতে দিবার শেষ প্রহর পেরিয়ে রাত্রির আঁধার নেমে আসবে। যামিনীতে আক্রমণ করলে আমরা অধিক লাভবান হতে পারছি না। আর যদি তার পালটা আক্রমণ চালায়! তবে ফলাফল ভালো হবে না! যামিনীর কারণে চারদিকে অন্ধকারের ফলে আমাদের সেনারা হতাহত হবার শংকা রয়েছে। এতে করে সৈন্য হারানো যেতে পারে। এমন কি পরাস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। ‘ যুক্তি খাটিয়ে কথাগুলো ব্যক্ত করলেন রাজা অক্টাইস। তার কথায় সম্মতি জানিয়ে বললেন সেনাপতি করডাল,
‘ ঠিক বলেছেন মহারাজ। আমাদের কোনো সৈন্য হতাহত না হতে দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধে হারিয়ে দিতে হবে। ‘ সম্মতি দিয়ে নিজের যুক্তি উপস্থাপন করলেন সেনাপতি করডাল।
‘ হ্যাঁ! ধৈর্য্যের ফল অতি মিষ্টি হয়। আমরা যদি তার পরের দিন আক্রমণ করি। তবে দিনের আলোতে তাদের সৈন্যদের অবস্থান সম্পর্কে আমরা খুব সহজে অবগত হতে পারব। যার নিমিত্তে খুব সহজে তাদের পরাস্ত করতে সক্ষম হব আমরা। এছাড়া নতুন রাজা হয়েছে রাজা প্রাসিয়োর ছেলে। অন্তত একটা দিন রাজশাসন করতে দেওয়ার উচিত। অতটা খারাপ আবার আমি নই।’ এই বলে হাহা করে হেসে দিলেন রাজা অক্টাইস। একটু ভাবুক হয়ে পুনরায় বলতে লাগেন, ‘ আমি ছেলেটির কথা ভাবি কেবল! ছেলেটি আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে কী? এখনো তো পুরো বাচ্চাই! আমাদের সাথে যুদ্ধে টিকার মতো শক্তি আছে বলে তো মনে হয় না! ‘ প্রথম কথাগুলো গম্ভীর মনোভাব নিয়ে বললেও শেষ দুটি কথা একেবারে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ব্যক্ত করলেন তিনি।
‘ মহারাজ, শত্রু পক্ষকে আমাদের দুর্বল ভাবা যাবে না। আমার মনে হয় না ছেলেটি এতটা বীরত্বহীন! গতকয়েকদিন আগে কারাগারের কাছে দুজন সৈনিক নিজেদের মাঝে বলাবলি করতে শুনেছিলাম, ” মৎস সেনাপতি রিবিয়ানকে বেশ গুরুতরভাবে আঘাত করে আহত করেছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। দুদিন পর্যন্ত রিবিয়ানের দেহ একেবারে চেতনাশূন্য ছিল। ” এরকমটা তারা বলাবলি করছিল। ‘ চিন্তিত মনোভাব পোষণ করে মনের অব্যক্ত কথাকে উপস্থাপন করলেন সেনাপতি করডাল।
‘ তবে তো ছেলেটির জন্য একটু আলাদাভাবে বিশেষ চমক দিতে হয়। যাক সেসকল কিছু ময়দানেই বুঝা যাবে। এখন সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তাদের সকলকে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অবগত কর। প্রভাতের কিরণ দেখা দেওয়া মাত্র আমরা রওনা দেব। ‘ খানিকটা রাগী ভাব কণ্ঠে উপস্থিত করে অক্টোপাস ডারলেনের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন রাজা অক্টাইস।
‘ এখন সব কিছু দূরে রাখুন। প্রথমে আমার খাবারের ব্যবস্থা করুন। কতদিন যাবত আমার এই দানবীয় পেটটা ক্ষুধার্ত হয়ে আছে! খুব বেশি খাবারের প্রয়োজন নেই। স্বল্প খাবার হলেই চলবে। যাতে বহুদিন পর একটু মাছ-মাংসের স্বাদ পাই। পুরো পেট পুজো নাহয় আগামীকাল করব মৎস্য সৈন্যদের দিয়ে।। ‘ খানিকটা লোভনীয় কণ্ঠে উপস্থাপনে উপস্থিত রেখে ব্যক্ত করলেন সেনাপতি করডাল।
রাজা অক্টাইস অক্টোপাস ডারলেনকে আদেশসূচক বাক্য বিনিময় করলেন, ‘ ডারলেন, প্রথমে তুমি করডালের জন্য ভালোমন্দ খাবারের ব্যবস্থা কর। তারপর যেটা বলেছি সেটা কর। আর যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ কর। ‘
রাগী ভাব সামান্য ফুটিত! রাজা অক্টাইসের আদেশ মোতাবেক মান্য করার লক্ষে তাদের সামনে থেকে প্রস্থান করলে তিনি। উপস্থিত হলেন প্রবেশদ্বারের কাছে। টোকা দিতে ওপাশ থেকে প্রহরী সৈন্যগুলো প্রবেশদ্বার খুলে দেন। দ্রুত চলে কক্ষ ত্যাগ করলেন।

চৌষট্টি.
রাজশয্যায় শুয়ে আছে আহত সৈনিক। তার পাশে বসে চিকিৎসা করছেন রাজ বৈদ্য। বিছানার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অরগাড। তার থেকে একটু দূর দাঁড়িয়ে সৈন্যটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আছেন রাজা রন ইওহার্ড। অরগাডের পরিয়ে দেওয়া রাজমুকুট এখনো তার মাথায় আছে। শয্যার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় আছে আরও একজন সৈন্য। যে গতদিন আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় প্রশিক্ষণ প্রান্তরের প্রবেশদ্বারের কাছে উবুড় হয়ে পড়ে ছিল। কক্ষে তার অবস্থান অবশ্য তার নিজ মর্জিতে নয়। রাজা রন ইওহার্ডের আদেশে কক্ষে এসে উপস্থিত হয়েছে। তারা ব্যতীত কক্ষে আরও উপস্থিত আছেন নিয়ানো এবং নতুন রানি ডায়ানা। কক্ষের প্রবেশদ্বার ভেতর এবং বাহির উভয় দিক থেকে আটকানো।

রাজা রন ইওহার্ড তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যটির কাছে উপস্থিত হয়ে তার মুখপানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান। তা দেখে ঢোক গিলে সে। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে প্রথম প্রশ্নসূচক বক্তব্য রাখে তার কাছে, ‘ গতকাল তোমার উপর আক্রমণ করেছিল কে? আর প্রান্তরের প্রবেশদ্বার বন্ধ করেছিল কে? ‘ স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করা হলেও প্রশ্নের মাঝে কাঠিন্যতার ছোঁয়া উপস্থিত।
সৈন্যটি প্রশ্ন শুনে ভয়ে পূর্বের চেয়ে অধিক কাঁপতে লাগে। তার করুণ অবস্থা দেখে ভড়কে যান অরগাডসহ কক্ষে উপস্থিত বাকিরাও। কিন্তু সৈনিকের কাঁপুনি দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন রাজা রন ইওহার্ড। অভয় দিয়ে তাকে বলে উঠলেন, ‘ তোমার ভয় নেই। তুমি সাচ্ছন্দ্যে বলতে পারো। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। ‘ তার অভয় যুক্ত বাক্যে ভরসা খুঁজে পাওয়ার অনুভব!
রাজা রন ইওহার্ডের এরকম ভরসা যুক্ত বাক্য শুনে মনে খানিকটা উৎসাহিত বোধ করল সৈন্যটি। ‘ সেনাপতি রিবিয়ান। ‘ আচমকাই বাকযন্ত্রের কার্যক্রম চালু হয়ে দুই ঠোঁট কম্পিত করে ধ্বনি আকারে উচ্চারিত হলো দুটি শব্দ। এই দুটি শব্দই রাজা রন ইওহার্ড ব্যতীত কক্ষে উপস্থিত বাকি সকলের কানকে সজাগ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। অরগাড সাথে বলে উঠলেন, ‘ কীহ! মিথ্যে কেন বলতেছ?’ চড়াও হয়ে বাক্য প্রকাশ করলেন তিনি। অরগাডকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন রাজা রন ইওহার্ড। চোখের ইশারায় সৈনিককে পুরো ঘটনা খুলে বলার আদেশ করেন তিনি।
‘ আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজ দায়িত্ব পালন করছিলাম। এমতাবস্থায় আচমকাই আমার মাথার পেছনে পানিরকণার গুচ্ছ দিয়ে আঘাত করেন কেউ একজন। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। কিন্তু তখনো আমার চোখ আধো আধো খোলা ছিল। যার কারণে আমি দেখতে পাই, কেউ একজন আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়ে প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হয়। এবং দ্বারটির খিল ভালো করে আটকে দেন। অজ্ঞাত লোকটি যখন সেখান থেকে প্রস্থান করার লক্ষ্যে পেছন ঘুরে দাঁড়ান। এতক্ষণ তার চেহারা না দেখা গেলেও তখন দেখতে পেয়েছিলাম। দেখতে পাই, সেনাপতি রিবিয়ান প্রবেশদ্বার আটকে প্রাসাদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে যান। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।’ একসাথে মনের সমস্ত কথন ব্যক্ত করে সৈন্যটি।

মুখ ফুটে কিছু বলতে নেন অরগাড। কিন্তু ঠোঁট নাড়ানোর পূর্বে হাতের ইশারায় তাকে পুনরায় থামিয়ে দেন রাজা রন ইওহার্ড। এবার খানিকটা চটে যান তিনি। পরপর দুইবার তাকে কথা বলতে বাধা প্রয়োগ করেছেন রন ইওহার্ড। নিজের আত্মসম্মানে আঘাত হানার মতো অনুভব করলেন। কক্ষে উপস্থিত নিয়ানো কিংবা রানি ডায়ানা উভয়ে কিছু বুঝে উঠতে সক্ষম হতে পারছেন না। ‘ তুমি দেখতে পারছ না সে সেনাপতি রিবিয়ানের নামে মিথ্যা বলতেছে। আর সেগুলো তুমি শুনতেছ! ‘ রাগী ভাব কণ্ঠে ফুটিয়ে উপস্থাপন করলেন অরগাড। চোখকান রক্তিম লাল হয়ে আছে। সেনাপতি রিবিয়ানের নামে মিথ্যে অপবাদ শুনতে তিনি নারাজ!
‘ একটা প্রবাদ বাক্য আছে, ” ভক্ত হওয়া ভালো, তবে অন্ধভক্ত হওয়া ভালো নয়।” আপনার কৃতিত্ব অন্ধভক্তদের মতোই শোনাচ্ছে! আপনার অগোচরে সেনাপতি রিবিয়ান কত কী যে করে! আপনি টেরও পান না। আর সিপাহীটি যা বলেছে তা শতভাগ সত্য। আমি..!’ উপস্থিত সকলে বাকহারা হয়ে দুজনের তর্ক দেখছে। নিয়ানো চোখমুখ শক্ত করে রাজা রন ইওহার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। অরগাডকে উদ্দেশ্য করে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন রাজা রন ইওহার্ড। এমতাবস্থায় রাজ বৈদ্য কিঞ্চিৎ উৎফুল্ল হয়ে ডেকে উঠলেন, ‘ মহারাজ ‘। তার ডাক শুনে উপস্থিত সকলে ধ্যান তার দিকে নিয়ে নেন। একটু সময় অতিবাহিত করে বলতে লাগেন, ‘ সৈনিকের দেহে চৈতন্য ফিরে এসেছে। ‘ এতটুকু শুনতে রাজা রন ইওহার্ডের চোখমুখ উজ্জ্বল চাকচিক্যের জ্যোতি ছড়াচ্ছে!

রাজা রন ইওহার্ড দ্রুত পায়ে হেঁটে রাজশয্যায় শুয়ে থাকা সৈনিকের মাথার কাছে বসে যান। তার এরকম আচরণে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছেন নিয়ানো। সৈনিকটি ধীরে ধীরে চোখের পাতা নাড়িয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। প্রথম দৃষ্টিপাত ঘটে তার রাজা রন ইওহার্ডের মুখপানে। খানিক চমকিত চেহারা নিয়ে চেয়ে রইল সৈন্যটি। এতসব কিছু পাত্তা না দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে আগ্রহান্বিত হয়ে প্রথম প্রশ্ন রাখলেন রাজা রন ইওহার্ড, ‘ তোমাদের উপর হামলা করেছে কে? অক্টাইসের সেনাপতি করডাল কারাগার থেকে মুক্ত হলো কী করে? কে করেছে এই কাজ?’ পরপর তিনটি প্রশ্ন রাখলেন তিনি। প্রশ্নের ওজনের চেয়ে তার গম্ভীর্যতার ওজন অত্যাধিক। এতগুলো প্রশ্ন একত্রে শুনে কী জবাহ দেবে সে এই ভেবে সৈনিকটি কিছু সময় চুপ করে থেকে। ইতোমধ্যে সারা রাজ্যে থমথমে ভাব আবহমান। করডালকে কেউ মুক্ত করে দিয়েছে এ ঘটনা সারা রাজ্যের উপর উপদ্রব অদৃশ্য হন্যতা সকলের মাঝে বিরাজ করছে প্রায়! সৈনিকটি কিছু সময় নিয়ে একটা বড় শ্বাস গ্রহণ করে কম্পিত কণ্ঠে ভয় ভয় ভাব চেহারায় ফুটিয়ে রাজা রন ইওহার্ডের প্রশ্নের জবাবে বলতে শুরু করে, ‘ রাজ্যের উৎসব দেখে আমরা আমাদের কর্মে আরও জোরদারভাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হুড়োহুড়ির মাঝে অক্টাইসের লোক সুযোগ খুঁজবে তা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। তাই অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝ দিয়ে সবাই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত। আমাদের কার্যক্রম দেখতে সেখানে সেখানে উপস্থিত হন সেনাপতি রিবিয়ান। বিষয়টা আমরা সবাই স্বাভাবিকভাবেই নিই। কিন্তু আচমকা কোনো বার্তা আদান-প্রদান না করে কোমর থেকে তলোয়ার খাপ মুক্ত করে অতর্কিত আক্রমণ চালান। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাইকে আঘাত করে হত্যা করে ফেলে। আমার পেটে তেমন তীক্ষ্ণ আঘাত না লাগায় আহত হবার পরেও জ্ঞান হারাইনি। সেনাপতি রিবিয়ান যখন সবাইকে মেরে কারাগারের চাবি খুঁজতে থাকে, আমি একটু কিনারে থাকার ফলে খুব সহজে তার দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাই। কৌশল খাটিয়ে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করি। তবে চলে আসার আগে দেখেছিলাম, তিনি কারাগারের চাবি রক্ষীর কোমর থেকে চাবির গোছাটা হাতে নিয়ে কারাগারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আমি আর সেখানে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে দৌড়ে রাজপাসাদের দিকে আসতে থাকি। শরীর থেকে রক্তপাত ঘটার কারণে ক্লান্ত হয়ে পথিমধ্যে বেশ কয়েকবার পড়ে যাই। কিন্তু না দমে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকি। প্রাসাদের কাছে উপস্থিত হতে বিশাল জনতার ভীড় নজরে আসে আমার। শেষে উপায় না পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পেটে হাত দিয়ে জনগণের মাঝে ধাক্কাধাক্কি করে ফাঁকফোকড় দিয়ে ক্লান্ত হয়ে রাজপ্রাসাদের ভেতরে এসে উপস্থিত হই। নিচে প্রহরীরা যখন আমার এ হাল দেখছিল, তখন সবাই চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল! কিন্তু আমি সেগুলো পাত্তা না দিয়ে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে প্রাসাদের চতুর্থ তলায় অবস্থান নিই। আচমকা দেহের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এরপর কী হয়েছে আর কিছু মনে নেই। ‘ রোদন ভরা কণ্ঠে পুরো ঘটনাটি দেহের সর্বশক্তি ব্যয় করে উপস্থাপন করে।

তার কথাগুলো শুনে উপস্থিত সবার চোখ বড় বড় হয়ে আছে। কিছুতে তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না। কী বলল সে? সেনাপতি রিবিয়ান এরকম জঘন্য কাজটি করেছে! কিন্তু তাদের কারও অনুভূতি কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে কক্ষের প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হন রাজা রন ইওহার্ড। দ্বারের তালা খুলে দুটো টোকা দেন তিনি। আওয়াজ পেয়ে ওপাশ থেকে প্রহরী দ্বার খুলে দেয়। রাজা রন ইওহার্ড দুই কদম এগিয়ে যেতে প্রহরীর দৃষ্টিগোচর হন তিনি। তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে কুর্নিশ জানায়।
সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে প্রহরীদের মাঝে একজনের দিলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠ ফুটিয়ে বলতে লাগেন, ‘ এক্ষুণি উপ সেনাপতি হিতামের কাছে যাও। তাকে গিয়ে জানাও মহারাজ রন ইওহার্ড তাকে অতিসত্বর দেখা করতে বলেছেন। ‘ চেহারায় রাগী ভাব প্রকাশমান।
প্রহরীদের মাঝে একজন মাথা নিচু হয়ে কুর্নিশ করে সম্মতি জানিয়ে বলে ওঠে, ‘ যথা আজ্ঞা মহারাজ।’ এই বলে প্রহরীটি রাজার আদেশ মান্য করতে ছুটলেন তার গন্তব্যে। রাজা রন ইওহার্ড কক্ষে পুনরায় ফিরে যেতে সবাই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। যেন তারা কোনো ভীনদেশী প্রাণী দেখছেন। শেষে অস্বস্তি অনুভব করে প্রশ্ন রাখলেন তিনি, ‘ আমার দিকে সবাই এরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কারণ?’
প্রত্যুত্তরে অরগাড জবাব দিলেন, ‘ সেনাপতি রিবিয়ানকে ডাকার পরিবর্তে উপ সেনাপতি হিতামকে ডাকার কারণ মাথায় অনুপ্রবেশ করছে না। ‘ রগের পাশাপাশি হতভম্বর ছাপ লেগে আছে কণ্ঠে।
কঠিন স্বরে প্রশ্নের জবাব প্রদান করলেন রাজা রন ইওহার্ড,
‘ সে প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি আপনাদেরে কাছে বাধ্য নই।’ খানিকটা দাম্ভিকতার সাথে জবাব দেন তিনি। এ কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সবাই বাকহারা হয়ে যান। রাজা রন ইওহার্ডের এরকম রূপ আগে কেউ কখনো দেখননি। ভয় পেয়ে পরবর্তীতা আর কেও বিন্দু পরিমাণ আওয়াজ তুলেনি।

কিছু সময় বাদে কক্ষের প্রবেশদ্বারের পাল্লা খুলে যায়। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন উপ সেনাপতি হিতাম। দ্রুত পায়ে হেঁটে উপস্থিত হন রাজা রন ইওহার্ডের সামনে। সম্মান জানাতে মাথার অগ্রভাগ খানিক নিচু করে কুর্নিশ জানান তিনি। আওয়াজ না তুলে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুভব করার চেষ্টা করলেন। বুঝতে সক্ষম হলেন পরিবেশ পরিস্থিতি খুব গম্ভীর। শব্দ করে প্রশ্ন না করে চোখের ইশারায় জানতে চাইলেন তাকে এত জরুরি তলব করার গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী!
প্রত্যুত্তরে রাজা রন ইওহার্ড বলতে লাগেন,
‘ তোমাকে তলব করার বিশাল কারণ আছে। এতদিন রাজা অক্টাইস যুদ্ধ করার জন্য সুযোগ খুঁজতেছিলেন। আজ তার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র সেনাপতি করডালকে পেয়ে গেছেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত, আগামীকাল প্রভাতের কিরণ দেখা দিতে তারা রাজ্য আক্রমণ করার লক্ষ্যে আসবেন। রাজা অক্টাইসের সেনাপতি করডাল তার উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে তো অবশ্যই আক্রমণ করবেন! ‘ সবাই রাজা রন ইওহার্ডের কথা শুনে থ হয়ে গেছেন। এতক্ষণ যাবত কী বললেন তিনি! কারও বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু তাদের অনুভূতিকে পাত্তা না দিয়ে রাজা রন ইওহার্ড আবার বলতে লাগলেন, ‘ এখন তোমার করনীয় হচ্ছে, সেনাপতি রিবিয়ান ও তার ব্যক্তিগত সৈন্যদের ব্যতীত রাজ্যের জন্য নিয়োজিত প্রত্যেক সৈন্যদের আজ রাতের মাঝে অস্ত্রসস্ত্রসহ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা। এবারের যুদ্ধ পরিচালনা করার দায়িত্ব তোমাকে দেওয়া হলো। সম্পূর্ণ যুদ্ধ পরিচালনা করবে তুমি। আজকে রাতের মাঝে সবাইকে প্রস্তুত করাও। আগামীকাল প্রভাতের কিরণ দেখা দিতে যুদ্ধের জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে। এখন যাও, আর তোমার দায়িত্ব নেভাও।’ প্রথম কথাগুলো কঠিন স্বরে বললেও শেষ বাক্য দুটি আদেশসংবলিত অনুভূতি মিশিয়ে ব্যক্ত করলেন তিনি।

দ্রুত পায়ে হেঁটে রাজা রন ইওহার্ডের সামনে থেকে প্রস্থান করে প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হন উপ সেনাপতি হিতাম। টোকা দিতে ওপাশ থেকে প্রহরী দরজা খুলে দিলে বিনাবাক্য ব্যয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন তিনি। রাজ বৈদ্য নিজেও ইতোমধ্যে কক্ষ থেকে বিদায় নিয়েছেন। রাজা রন ইওহার্ড কক্ষ ত্যাগ করতে তার পিছুপিছু হেঁটে আসেন রানি ডায়ানা। দুজন মিলে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে অবস্থান নেন। অরগাড এবং নিয়ানো তাদের কক্ষে আছেন তারা। শয্যায় শয়ন করতে করতে রাজা রন ইওহার্ডকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন রানি ডায়ানা, ‘ আচ্ছা, সত্যিই কি কাল যুদ্ধ হবে? ‘ অবিশ্বাসের ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করলেন তিনি। কোনোভাবে এরকম সংকোচিত বাক্যের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বরং উলটো রাগ দেখিয়ে জবাব দেন রাজা রন ইওহার্ড, ‘ তো কী হবে? প্রভাতের কিরণ দেখা দেবার আগে শয়ন থেকে জাগ্রত হতে হবে। তাই এখন একদম চুপচাপ ঘুমোও। ‘ রাগীভাবে বলার কারণ খুঁজে পেলেন না রানি ডায়ানা। তবু দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে চুপচাপ শয্যায় শয়নরত অবস্থায় চোখ বুজে গেলেন তিনি।

[– চলবে –]

• সেনাপতি রিবিয়ানের এরকম কর্মের কারণ কী?
• আসলেও কি যুদ্ধ হবে?
• রানি নিয়ানো কি তবে যুদ্ধের পক্ষ দেবেন? নাকি বিপক্ষে যাবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here