গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর সমাপ্তি পর্ব

0
464

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
সমাপ্তি পর্ব

সাতষট্টি.
ঘুম থেকে জাগ্রত হতে দ্রুত শয্যা ত্যাগ করেন অরগাড। নিয়ানো এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন। তা দেখে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সাজঘরে প্রবেশ করেন তিনি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যুদ্ধের পোশাক পরিধান করে নিজেকে পরিপাটি করে তুলেন। সাজঘর ত্যাগ করে কক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজা প্রাসিয়োর কাছ থেকে উপহার পাওয়া তলোয়ারটি কোমরে ঝুলিয়ে নেন। প্রস্তুত হবার পরেও নিয়োনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে জাগ্রত করার বোধ করলেন না তিনি। দ্রুত পায়ে হেঁটে কক্ষের প্রবেশদ্বারে উপস্থিত হন। দ্বারে টোকা দিলে পাল্লা খুলে দেয় প্রহরী। তাকে দেখে মাথা নিচু করে সম্মানসূচক কুর্নিশ জানায়। অরগাড তা পাত্তা না দিয়ে কক্ষ থেকে প্রস্থান করে এগিয়ে যান। বারান্দা দিয়ে হাঁটতেই নজরে আসে রাজা রন ইওহার্ড যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করছেন। মৃদু শব্দে হাঁক দিলেন তিনি, ‘ রন..!’

আটষট্টি.
নিজের নাম ধরে সম্মোধন শুনে উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে যান রাজা রন ইওহার্ড। কণ্ঠটা তার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মাঝে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে থাকা সিনান্সগুলো জাগ্রত হয়ে মনে করিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ‘ আরে, এ তো রাজা অরগাডের কণ্ঠস্বর! ‘ নিজের সাথে আলাপনে ব্যস্ত হলেন তিনি। পেছন দিক ঘুরে দৃষ্টিপাত করতে নজরে আসে, যুদ্ধের পোশাক পরিধান করে একজন সৈনিকের চেয়ে একটু ভিন্ন ভঙ্গিমা দেহে এনে এগিয়ে আসছেন পূর্ব রাজা অরগাড! হাঁটতে হাঁটতে তার সামনে এসে উপস্থিত হন তিনি। সময়ের সংকীর্ণতা দেখে বাক্য ব্যয় না করে উভয়ে চুপচাপ হাঁটতে লাগেন। কিছু সময় হাঁটার পর নীরবতাকে বিদায় জানিয়ে প্রথম বক্তব্য রাখলেন পূর্ব রাজা অরগাড, ‘ তোমাকে তো যুদ্ধের পোশাকে বেশ মানিয়েছে!’
মন্তব্যে পাত্তা না দিয়ে উলটো প্রশ্ন রাখলেন রাজা রন ইওহার্ড, ‘ আপনি যুদ্ধে যাচ্ছেন যে? আপনার যুদ্ধে যাওয়া কাম্য ছিল না! ‘ কণ্ঠে তার হতভবের ভাব প্রকাশিত।
প্রত্যুত্তরে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন অরগাড, ‘ কোনো কোনো বিষয় কাম্য না থাকার পরেও হয়ে যায়! এটাও সেই হিসেবে নাহয় ধরে নাও।’

পুনরায় নীরবতা নেমে আসে তাদের দুজনের মাঝে। কিন্তু নীরবতাকে বরদাশ কর‍তে পারছেন না অরগাড। তাই পুনরায় প্রশ্ন রেখে দেন রাজা রন ইওহার্ডের কাছে, ‘ তোমার কী মনে হয়? যুদ্ধে কারা জয়ী হবে?’
গম্ভীরমুখে জবাব দিলেন তিনি, ‘ কর্মের আগে সাফল্য কাম্য আমি করি না। ‘ রাজা অরগাডের বাক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেন তিনি। অরগাড আর কোনোরকম বাক্য ব্যয় না করে চুপচাপ হাঁটতে লাগেন। কিছু সময় হাঁটার পর প্রাসাদ অতিক্রম করে ময়দানে উপস্থিত হন তারা।তাদের দুজনকে একত্রে দেখে ময়দান থেকে এগিয়ে আসেন উপ সেনাপতি হিতাম। তাদের দুজনের সামনে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগেন, ‘ আপনারা দুজন একসাথে এসেছেন! দেখে ভালো লাগছে। চলুন!’ এগিয়ে নিতে আসেন তিনি। ময়দানের মধ্যস্থানে তারা অবস্থান নিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর রাজা রন ইওহার্ডের নজরে আসে, দূর থেকে কেউ একজন কোমরে তলোয়ার ঝুলিয়ে তাদের দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসছেন! কিছু সময় পর দৃষ্টিগোচর হয় দৌড়াতে দৌড়াতে ময়দানে ছুটে আসছেন সেনাপতি রিবিয়ান। দৌড়ে এসে পূর্ব রাজা অরগাডের সামনে এসে দাঁড়ান তিনি। জিজ্ঞাসাসূচক বাক্য বিনিয়োগ করে বলতে লাগেন,
‘ যুদ্ধে যাচ্ছেন। অথচ, আমাকে কিছুই জানাননি! ‘ অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় অতিক্রম করেছেন। তার কথার প্রেক্ষাপটে জবাব দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন অরগাড। তার আগেই সেনাপতি রিবিয়ানের কথার জবাব দিলেন রাজা রন ইওহার্ড।
‘ আমাকে প্রশ্ন করুন সেনাপতি রিবিয়ান। আপনাকে জানাতে আমিই বারণ করেছি। কেননা আপনাকে আমি একটু আশ্চর্যান্বিত করতে চেয়েছিলাম। এমনিতেও আপনি লোকমুখে শুনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে ছুটে আসবেন। তাই আলাদা করে তলব করার প্রয়োজনবোধ করিনি। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এবারের যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ ভার আপনাকে নয়, উপ সেনাপতি হিতামকে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি যুদ্ধে অবশ্যই অংশগ্রহণ করবেন। ‘ একটি দমে সমস্ত কথন ব্যক্ত করেন তিনি। রাজা রন ইওহার্ডের বক্তব্য শুনে বাক শূন্য হয়ে পড়েন সেনাপতি রিবিয়ান। তার এই মুহূর্তে কী বলা উচিত তা মাথায় আসছে না। এমতাবস্থায় একজন সৈন্য হাতে লম্বাটে আকারের একটি বস্তু হাতে তুলে নেয়। লম্বাটে বস্তুর এক প্রান্ত চিকন এবং অপর প্রান্ত খানিক মোটা। সৈন্যটি চিকন প্রান্তে চোখ লাগিয়ে দূর বস্তু দেখার চেষ্টা করতে লাগলেন। হঠাৎ করেই সৈন্যটি উপ সেনাপতি হিতামের উদ্দেশ্যে বলতে লাগে, ‘ মহামান্য উপ সেনাপতি, দূরে বিশাল বড় একটি জলজ প্রাণীর বাহিনী এদিকেই ধেয়ে আসছে। সামনে উপস্থিত রয়েছে অক্টোপাসের বিশাল একটি দল। এরপরই আছে হাঙরদের একটি দল। তারা একত্রে মিলে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। মনে হচ্ছে তারা রাজা অক্টাইসের সৈন্য। ‘ আশ্চর্যান্বিত হয়ে কথাগুলো উপস্থাপন করে সৈন্যটি। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে লম্বাটে বস্তুটি নিজের হাতে নিয়ে নেন উপ সেনাপতি হিতাম। অরগাড যেন কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছেন না। রন ইওহার্ডের কথা এরকম হুবহু মিলে যায় কী করে তা তার বুঝে আসে না। অন্য দিকে রন ইওহার্ডের চেহারায় ফুটে উঠেছে গর্বিত অনুভবের ছাপ। সেনাপতি রিবিয়ান পুরোপুরি শঙ্কিত হয়ে গেছেন! আচমকা চোখ থেকে লম্বাটে বস্তুটি নামিয়ে উপ সেনাপতি হিতাম উপস্থিত কয়েক হাজার মৎস্য সেনাদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগেন,’ সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনো। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে দ্রুত রাজ্যের উপরে থাকা সুরক্ষা কবচ পাড় করে দলবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকো। এক্ষুণি!’ ব্যগ্রতা দিয়ে সকল সৈনিকিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন তিনি।

সুরক্ষা কবচ পাড় করার লক্ষে আগে উপর দিকে উঠতে লাগলেন রাজা রন ইওহার্ড। তার পাশাপাশি উপরে আসছেন অরগাড। তাকে দেখে উপরে ওঠা অবস্থায় খানিকটা গম্ভীর ভাব কণ্ঠে আবহমান করে বলতে লাগলেন, ‘ আপনি চলে যান। রাজ্যের ভেতরেই থাকুন। রানি ডায়ানা এবং নিয়ানোকে দেখেশুনে রাখুন। ‘
তার কথার প্রেক্ষিতে জবাব দেন অরগাড, ‘ আমি পূর্ব রাজা ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা আমি রাজ্যের একজন সৈনিক। তবে কেন আমি যুদ্ধে যোগদান করব না?’ পালটাভাবে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি।

এরকম পালটা প্রশ্ন শুনে আর কিছু বলেননি রাজা রন ইওহার্ড। হাওয়ায় ভেসে সুরক্ষা কবচ অতিক্রম করলেন দুজন। তাদের পেছনে দলবদ্ধ হয়ে সুরক্ষা কবচ অতিক্রম করে পানিতে অবস্থান করছে অসংখ্য সৈন্য। সৈন্যদের দলে যোগদান করেছেন সেনাপতি রিবিয়ান। সকলের সামনে পানি দিয়ে ছুটে চলেছেন রাজা রন ইওহার্ড। তার পেছন পেছন ছুটে চলেছেন অরগাড এবং উপ সেনাপতি হিতাম। তাদের পেছনে রয়েছে বিশাল সৈন্যদল। রাজা রন ইওহার্ড ব্যতীত প্রত্যেকের দেহের পরিবর্তন ঘটেছে। সৈন্যদের মাঝে কারও হাতে তলোয়ার তো কারও হাতে বল্লম। আবার কারও হাতে বল্লম এবং কোমরে খোলসে আবদ্ধ তলোয়ার ঝুলছে! স্বল্প সংখ্যক তীরন্দাজ রয়েছেন। যাদের কোমরে ঝুলছে খোলসে আবদ্ধ তরবারি। হাতে রয়েছে ধনুক এবং পিঠে ঝুলছে তীর!

সৈন্যদল নিয়ে পানি দিয়ে কিছু সময় চলতে অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের সৈন্যদল এবং মৎস্য রাজা রন ইওহার্ড উভয় পক্ষের সম্মুখ দৃষ্টিপাত ঘটে। তাদের উভয় পক্ষের অবস্থান খোলা সমুদ্রের তলদেশে। তাদের মধ্যকার দূরত্ব খুব বেশিও নয়, আবার খুব কমও নয়। মোটামুটি একটা দূরত্ব বজায় রেখে রাজা অক্টাইস এবং রাজা রন ইওহার্ড উভয়ে তাদের নিজেদের সৈন্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা রন ইওহার্ডকে দেখে উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য স্বরে জ্ঞাপন করলেন রাজা অক্টাইস,
‘ তুমিই সেই মহান রাজা প্রাসিয়োর পুত্র রন ইওহার্ড!’ এতটুকু বলে আবারও হাসতে লাগেন তিনি। কিছু সময় হেসে আবার বলতে লাগেন, ‘ তোমাকে দেখে আমার হাসি পারছি না! তোমার মতো এক বাচ্চা ছেলে যার এখনো দুধদাঁত পড়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ! আর সেই নাকি তুমি রাজা হয়ে গেছ। অরগাড, মৎস্য রাজ্যে কি রাজা হবার মতো লোকের এতটাই আকাল লেগেছিল! আমাকে জানালেই তো পারতে।’ আবার খিলখিলিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগেন। আচমকাই কণ্ঠে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে ব্যক্ত করেন, ‘ আর সেই দুধদাঁত না পড়া বাচ্চা শিশু হয়ে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছ। তোমার সাহস তো বেশ ভারি হয়েছে দেখছি! ‘
রাজা অক্টাইসের এরকম মন্তব্য শুনে হাসতে লাগলেন রাজা রন ইওহার্ড। তার হাসি দেখে খানিকটা বিচলিত হয়ে যান তিনি। তবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলেন। হাসিমাখা মুখেই বলতে আরম্ভ করেন রাজা রন ইওহার্ড, ‘ আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, আমার মাঝে মহান প্রাসিয়োর রক্ত বইছে। সেক্ষেত্রে আমার সাহসের উৎসের কথাটা নাহয় ব্যক্তই নাই-বা করি! আর রাজ্য চালাতে হলে প্রবীণ হতে হবে এমনটা ক্ষুণ্ণমনার ক্ষুদ্র জ্ঞানের প্রভাব। কিন্তু বাস্তবিকে এমনটা নয়। রাজ্য চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞান এবং দক্ষতা। যা আমার মাঝে যথেষ্ট রয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও একই বিষয় উপস্থিত থাকা জরুরি। যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবার জন্য জানা প্রয়োজন হয় যুদ্ধের কলাকৌশল এবং বিচক্ষণ বুদ্ধির। তো চলুন! দেখা যাক কার ক্ষমতা কতদূর! ‘
এই বলে পুনরায় একটি হাসি দিলেন রাজা রন ইওহার্ড। তার হাসি দেখে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে রাজা অক্টাইসের। নিজের এরকমভাবে অপমান বরদাস্ত করতে পারলেন না। আলাপনে যুক্ত হলেন সেনাপতি করডালের সাথে। রাজা রন ইওহার্ডও কম যান না। তিনিও তার উপ সেনাপতি হিতামের সাথে আলাপনে মশগুল। কীভাবে আক্রমণ করতে হবে এবং কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে সে সকল বিষয়াদি বলে দিতে লাগলেন। ‘ সেনাপতি হিতাম, সৈন্যদের বলবে, অক্টোপাসদের শক্তি হচ্ছে তাদের বাহুদ্বয়। বাহুদ্বয়গুলো একে অপরের সাথ আটকে গেলে তাদের শক্তি কমে যায়। যখন তাদের আট বাহু পরস্পরে আটকে যাবে, তখন সৈন্যদের আক্রমণ করতে বলবে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজে অক্টোপাসদের সাথে লড়াই করে সফল হওয়া যাবে।’ তার কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি প্রদান করেন উপ সেনাপতি হিতাম। রাজা রন ইওহার্ড আবার বলতে লাগলেন, ‘ এ ছাড়া হাঙরদের সাথে লড়াই করতে হবে কৌশলে। তারা মূলত হা করে মুখ দিয়ে আক্রমণ চালায়। এবং তাদের ভয়ানক দাঁতগুলোই তাদের মূল শক্তি! কিন্তু যদি আমদের সৈন্যরা যদি তাদের সামনে অথবা পৃষ্ঠদেশে আক্রমণ না করে বরং তাদের তলদেশে আক্রমণ করে! অর্থাৎ, পেটের দিকটায় বল্লম অথবা তরবারি দিয়ে আঘাত করে তাদের খুব সহজে দুর্বল করে দেওয়া সম্ভব। আশা করছি আমাদের সৈন্যরা খুব ভালোভাবে বিষয়গুলো আয়ত্ত করে নেবে।’
রাজা রন ইওহার্ডের কথায় সম্মতি জানালেন উপ সেনাপতি হিতাম। ‘ যথা আজ্ঞা মহারাজ।’

উপ সেনাপতি হিতাম উপস্থিত সকল সৈন্যদের যুদ্ধের কলাকৌশল জানিয়ে দিতে লাগলেন। অরগাড কেবল চেয়ে আছেন রাজা রন ইওহার্ডের দিকে। কিন্তু কেন তাকিয়ে আছেন সে প্রশ্নের জবাব মেলা দুষ্কর! তবে রন ইওহার্ডের যুদ্ধের কলাকৌশলগুলো আসলেও প্রশংসার দাবিদার! পূর্বে এরকমভাবে কোনো রাজা এতটা দক্ষতা এবং কলাকৌশল মেনে যুদ্ধ করেনি। যার দরুন হারাতে হয়েছে বহু সৈন্য।

দুই দলের সৈন্য যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে অবগত হলে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে গঠন করা হয়। রাজা অক্টাইসের সৈন্য অক্টোপাসগুলো আচমকা তাদের আট বাহু থেকে কালো বৃত্তাকার প্রকৃতির গোলাবর্ষণ শুরু করে মৎস্য সৈন্যদের উপর। বর্ষণকৃত গোলাগুলোর রঙ মোটেও ভালো দেখাচ্ছে না। বর্ষিত গোলার এগিয়ে আসা দেখে মৎস্য সৈন্যদের মাঝে সকলের মুখের খানিক তটস্থতার ছোঁয়া লেগে আছে। বর্ষণকৃত কালো বর্ণের গোলাগুলো তীব্র গতি ধয়ে আসছে তাদের দিকে। এ দেখে মজা লুটে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগে অক্টোপাস সৈন্যগুলো। কেননা তারা জ্ঞাত আছেন কতটা ভয়ানক এই বর্ষিত গোলা। তাদের তাচ্ছিল্যের হাসিগুলো সৈন্যরা তটস্থ এবং ভয়ে থাকা মনোভাবে নিলেও রাজা রন ইওহার্ড তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কিছু একটা অনুধাবনের চেষ্টা করছেন তিনি। বর্ষিত গোলা মৎস্য সৈন্যদের থেকে দুই হাত দূরে অবস্থান করেছে এমতাবস্থায় সামনের দিকে হাত নিয়ে এলেন রাজা রন ইওহার্ড। হাত দুটো একটি ঝাঁকুনি দিয়ে সামনের দিকে ধাবিতে করতে সমুদ্রের পানিগুলো ঝংকার দিয়ে তার হাতের সামনে বিস্তৃত অংশ নিয়ে সমগ্র মৎস্য সৈন্যদের সামনে উঁচু একটি পানির পাঁচিল তৈরি হয়ে যায়। বর্ষিত কালো বর্ণের গোলাগুলো এসে পানি দিয়ে সৃষ্টি পাঁচিলে আঘাত হানে। বুদ্ধি খাটিয়ে সৃষ্ট পানির পাঁচিলটি অক্টাইসের সৈন্যদের দিকে ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেন রাজা রন ইওহার্ড। অর্ধপথ অবধি তীব্র গতিবেগ সহকারে পানি দিয়ে সৃষ্ট পাঁচিলটি এগিয়ে গিয়ে আচমকা সমুদ্রের সমগ্র পানির সাথে স্বাভাবিকভাবে মিলিয়ে যায়। কিন্তু অক্টোপাসদের বাহুদ্বয় থেকে নির্গত হওয়া গোলাগুলো ধেয়ে যেতে থাকে তাদের দিকে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রথম সারিতে থাকা অক্টোপাস সৈন্যদের দেহে গোলাগুলো আঘাত হানে। তাদের দেহে ভয়ানক কালো বর্ণের গোলাগুলো লাগতে চিৎকার করতে থাকে তারা। কোনোরকম সময় ব্যয় না করে সমুদ্র তলদেশে লুটিয়ে পড়ে থাকে আঘাতপ্রাপ্ত দেহগুলো। যে যে স্থানে গোলাগুলো আঘাত হেনেছে উক্ত স্থানগুলো ইতোমধ্যে কালো আকার ধারণ করে পুড়ে গেছে। গোলাগুলোর এতটা ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখে ভড়কে যায় যুদ্ধে অবস্থান করা সকল মৎস্য সৈন্য। রাজা রন ইওহার্ড বড় বাঁচা গেছেন! যদি না তিনি তখন একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এরকমটা না করতেন! তবে হয়তো এতক্ষণে বহু মৎস্য সৈন্য খোয়াতে হতো তাদের। এবং অধিকাংশ সৈন্যরাই হতাহত হয়ে যেত! অরগাড বাকহারা হয়ে কেবল রাজা রন ইওহার্ডের কর্মকাণ্ড দেখছেন! নিজের সৈন্যদের এভাবে হারাতে দেখে রাগান্বিত হয়ে যান রাজা অক্টাইস। সাথে সাথে সকল সৈন্যদের একত্রে হামলা করার আদেশ দেন।

তা দেখে সৈন্যদের মাঠে নেমে পরস্পরে লড়াই করার জন্য উপ সেনাপতি হিতামকে আদেশ করেন রাজা রন ইওহার্ড। তবে অবশ্যই যেন তার বলে দেওয়া কলাকৌশল মেনে যুদ্ধ করে তারা সে ব্যাপারেও কঠিনভাবে বক্তব্য রখেন তিনি। সেনাপতি হিতাম অবিলম্ব না করে সৈন্যদের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আদেশ করেন। সৈন্যরা তার আদেশ পাওয়া মাত্র হাতে থাকা বল্লম এবং তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধের জন্য সামনের দিকে ছুটতে থাকেন। শুরু হয় সমুদ্রের মাঝে ভয়ংকর প্রলয়। উভয় দিক থেকে ধেয়ে আসছে উভয় দলের সৈন্যরা।

উভয় দলের সৈন্যদের সম্মুখ মোলাকাত হতে সর্বপ্রথম আক্রমণের প্রচেষ্টা করে অক্টোপাস সৈন্য! তারা তাদের বাহুদ্বয় দিয়ে মৎস্য সৈন্যদের আঘাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবারএ আঘাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। মৎস্য সৈন্যদের আঘাতপ্রাপ্ত না করতে পারলেও নিজের একবাহুর সাথে অন্য বাহুর অনায়েসে জট পাঁকিয়ে যাচ্ছে। অক্টোপাস সৈন্যদের সাথে যোগ দেয় হাঙরের দল। হাঙর বাহিনী তাদের ধারালো দাঁতের সাহায্যে মৎস্য সৈন্যদের কামড়ে আঘাত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু অক্টোপাসদের মতোই ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কিন্তু এবার আর থেমে নেই মৎস সৈন্যরাও। তাদের শিখিয়ে দেওয়া কৌশল অবলম্বন করে আক্রমণ করতে লাগল। অক্টোপাস সৈন্যরা মৎস্য সৈন্যদের আঘাত করতে যেয়ে নিজেদের আট বাহুই একটি অপরটির সাথে আবদ্ধ করে দিচ্ছে! দুর্বল হয়ে যেতে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে পালটা আক্রমণ করছে মৎস্য সৈন্যরা। তাদের হাতের থাকা বল্লম কিংবা তরবারি দিয়ে অক্টোপাসদের মাথায় আঘাত করে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়ে দিচ্ছে। এভাবে করে একেরপর এক অক্টোপাস সৈন্য মৃত্যু কোলে ঢলে পড়তে লাগে। অপর দিকে হাঙরগুলো হা করে মৎস্য সৈন্যদের আক্রমণ করতে নিলে হাতে রাখা তরবারিটি উঁচু করে অধর চোয়ালের নিচে চলে যায় তারা। অতঃপর হাতে থাকা তরবারি দিয়ে তলপেট থেকে সামান্য উপরে তীব্র জোরে আঘাত করে। তরবারির অর্ধেক দেহের ভেতরে ঢুকে গেলে ছোটাছুটি শুরু করে দেয় হাঙর। কিন্তু না থেমে পেটের ভেতরে প্রবেশ করা অর্ধের তরবারিটি জোরে টেনে দেহের নিম্নভাগে নিয়ে আসে তারা। তলোয়ারের তীব্র সানের কারণে তলপেট থেকে শুরু করে দেহের নিম্নভাগ অবধি সম্পূর্ণ চিঁড়ে গেছে! সৃষ্টি হয়েছে গভীর এবং বিশাল ক্ষতের! দেহের ভেতরে থাকা বহু নার্ভ কেটে গেছে। অধিক রক্তপাত এবং নার্ভ দুভাগ হয়ে যাওয়াতে সামান্য পানির মাঝে গড়াগড়ি খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে। ইতোমধ্যে সমুদ্রের তলদেশে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত স্থানটি রক্তে পানির রঙ নীল থেকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে!

একজন সৈন্য হিসেবে নিজেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন অরগাড। সেনাপতি রিবিয়ান এবং উপ সেনাপতি হিতাম অক্টোপাস সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে গেছেন ইতোমধ্যে। কেবল দাঁড়িয়ে আছেন রাজা রন ইওহার্ড। তাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আক্রমণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন সেনাপতি করডাল। তার দিকে আক্রমণে উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে চোখমুখে হাসি ফুটে ওঠে রন ইওহার্ডের। সেনাপতি করডাল বিশাল আকারের হা করে রন ইওহার্ডের উপর আক্রমণ করতে সরে যান তিনি। যার হেতু সেনাপতি করডাল তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে ব্যর্থ হন। কয়েকবারই আঘাতের লক্ষ্যে আক্রমণ করেন সেনাপতি করডাল। কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হন তিনি। তা দেখে রাজা রন ইওহার্ড তার উদ্দেশ্যে খানিক উপহাস করে বলেন, ‘ এই তোমার শক্তি! আমাকে সামান্যতমভাবে ছুঁয়ে দিতে পারোনি। অথচ, একেকটা বিশাল বড় বড় প্রবচন ছাড়তে।’ এই বলে পুনরায় হাসতে লাগেন রাজা রন ইওহার্ড।

রাজা রন ইওহার্ডের মুখে এ সকল কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে যান সেনাপতি করডাল। চেহারায় রাগী ভাব ফুটিয়ে আক্রমণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এবার আর আক্রমণের সুযোগ দেননি রাজা রন ইওহার্ড। ডান হাতে কোমর থেকে তলোয়ার খাপ মুক্ত করে তুলে নেন। সেনাপতি করডাল তার কাছাকাছি আসতে তার মাথা থাকে সামান্য উপরে উঠে দুই হাতে তলোয়ার আবদ্ধ করে দেহের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করেন সেনাপতি করডালের মাথায়। আঘাত করার সময় তলোয়ারের সাথ দিয়েছে পানি। পানি তলোয়ারের সাথে যোগদান করে ধারালো ফলা আকৃতি ধারণ করেছে। রাজা রন ইওহার্ডের এক আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে গেলেন রাজা অক্টাইসের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন সেনাপতি করডাল। মাথায় তলোয়ারের ধারালো ফলা অংশটুকু আঘাত লাগা মাত্র সাথে সাথে সম্পূর্ণ মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। আঘাতের তীব্রতা দেখে যুদ্ধরত অবস্থায় থাকা সকল সৈন্য হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। পরক্ষণেই শুরু হয় তাদের ভয়ংকর প্রলয় তুলে আক্রমণের কার্যক্রম! সেনাপতি করডালের বিশাল দেহটি দুটো ঝাঁকুনি দিয়ে পতিত হয় সমুদ্র তলদেশ তথা মাটিতে। আঘাতপ্রাপ্ত মাথার অংশ থেকে রক্ত ছড়িয়ে নীল বর্ণের পানি লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সেনাপতি করডালের অকস্মাৎ মৃত্যুতে চমকে যান রাজা অক্টাইস। ভেবে পাচ্ছে না কী হচ্ছে এসব! যাকে দুর্বল ভেবেছিল! আজ সেই দুর্বল ছেলে এত বড় এক ভয়ানক যোদ্ধাকে এক আঘাতে যমদণ্ড দিয়ে দিলেন!

রাজা অক্টাইস দিকবিদিকশুন্য হয়ে তার সামনে লড়াই করতে থাকা অরগাডের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন চিন্তা নিয়ে তাকান। তার তাকানোর উদ্দেশ্য ভালো ঠেকল না রাজা রন ইওহার্ডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। সে যা ভেবেছিল ঠিক তাই! রাজা অক্টাইস তার এক বাহু অরগাডকে লক্ষ্য করে কালো চক্রাকার গোলাবর্ষণ করেন। পানির বুক চিঁড়ে তীব্র বেগে ধেয়ে যাচ্ছেন রাজা রন ইওহার্ড এবং চক্রাকার বর্ষিত ভয়ানক গোলা। অরগাড সেদিকে কোনোরকম ধ্যান নেই। তিনি শত্রুপক্ষের সৈন্যদের কতল করায় ব্যস্ত! রাজা রন ইওহার্ড অরগাড অবধি পৌঁছাতে পৌঁছাতে কালো চক্রাকার বলটি অরগাডের দেহে আঘাত করে ফেলবে! কিন্তু তিনি তা কোনোভাবে হতে দেবেন না! মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে বুদ্ধি বের করেন। তার অবস্থানে থেমে দুই হাত সামনে নিয়ে আসেন তিনি। হাত সামনে আনতে সৃষ্টি হয় একটি বড় জলরাশির!অপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ সময়ে হাত দুটো সামনের দিকে ধাক্কা দিতেই সৃষ্ট জলরাশি তীব্র বেগে তার অক্ষ বরাবর চলতে থাকে। তার এরকম কার্যকলাপ কঠিন দৃষ্টি নিয়ে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন রাজা অক্টাইস! তীব্র জলরাশিটি গিয়ে অরগাডের দেহে ধাক্কা লাগা মাত্র অরগাডের দেহ নড়ে যায়। যার হেতু তার একদম পাশ দিয়ে রাজা অক্টাইসের ছোঁড়া কালো চক্রাকার বলটি চলে যায়। কিন্তু তার বাম হাতের কবজির উপর দিকে মৃদু সংস্পর্শ ঘটে চক্রাকার বলটির! তবুও এবারের মতো বেঁচে যান অরগাড। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাজা রন ইওহার্ড। অরগাড নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছেন!

রাজা রন ইওহার্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করতে ঠোঁট নাড়িয়ে তার উদ্দেশ্যে কিছু নেন অরগাড। তার বাকযন্ত্র থেকে ঠোঁট কম্পিত করে ধ্বনি নির্গত হবার পূর্বে আচমকা রাজা রন ইওহার্ড তার দাঁড়ানো অবস্থান থেকে খানিকটা ডান দিকে চেপে যান। তিনি ডান পাশে চেপে যেতে পেছন দিক থেকে আগত বাম পাশে গোচর হয় একটি ধারালো তলোয়ার! যা দিয়ে তার পেছন দিক থেকে আঘাত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল! সঠিক সময় তিনি ডান পাশে না চেপে গেলে হয়তো এতক্ষণে তলোয়ারটি তার পিঠ ভেদ করে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে যেত।
‘ তোমার উপস্থিতি আমি বহু আগেই টের পেয়েছি সেনাপতি রিবিয়ান! পিঠ পেছনে আক্রমণ করার স্বভাব তোমার!’ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে পেছন দিকে ঘুরলেন রাজা রন ইওহার্ড। তলোয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন সেনাপতি রিবিয়ান। এখনো তার হাতের মুঠোয় ধরা তলোয়ার ধরা অবস্থায় আছেন তিনি। কঠিন স্বরে রাজা রন ইওহার্ড আবারও বলতে লাগলেন, ‘ তোমার প্রতিটি কার্যকলাপ আমি আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে লুফে নিই। রাজা হবার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে আমার ছিল না! কিন্তু আমার সাথে তোমার প্রথম কথা এবং আক্রমণ দুটোই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তুমি! স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজ্যের শত্রুর সৈন্যকে মুক্ত করে দিয়েছ! তোমার মতো একজন বিশ্বাসঘাতকের হাতে একটা রাজ্য চলে যাওয়া মানে প্রজাদের সুখের অন্তিম ও দুঃখের আদি শুরু! ‘ অরগাড কিছু বুঝতে পারছে না সেনাপতি রিবিয়ানের সাথে এত কী কথা বলছেন রাজা রন ইওহার্ড। আচমকা তিনি তার দেহ ঘূর্ণন করে ডান পা দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আঘাত করেন সেনাপতি রিবিয়ানের ঘাড়ে। পালটা আক্রমণ করে ওঠার সময় পাননি তিনি। সাথে সাথে চৈতন্য হারিয়ে নিচ দিকে লুটিয়ে পড়েন। হয়তো আগামী কয়েকদিনের মাঝে দেহে চৈতন্য ফিরে পাবে না। অরগাডসহ আরও কয়েকজন সৈন্য এরকম আঘাত দেখে বাক শূন্য হয়ে পড়েন! একজন সৈন্যকে ডাক দিলেন রাজা রন ইওহার্ড। সৈন্যটি তার কাছে উপস্থিত হতে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগেন, ‘ সেনাপতি রিবিয়ানের চৈতন্যহীন দেহটা রাজের দ্বারে নিয়ে যাও। এবং তাকে একটি কারাগারে বন্ধি করে রেখো। ‘ রাজার আদেশ অমান্য করার সাধ্য তার নেই। বিনাবাক্য ব্যয় করে সৈন্যটি রাজা রন ইওহার্ডের কথামতো সেনাপতি রিবিয়ানের দেহ কাঁধে করে নিয়ে যেতে লাগল রাজ্যের উদ্দেশ্যে। দুই পক্ষের সৈন্যদের লড়াই এখনো বিদ্যমান। রাজা অক্টাইসের বহু সৈন্যর প্রাণ হারিয়েছে। তবে মৎস্য সৈন্যদের মাঝে খুব হাতেগোনা কয়েকজন সৈন্য ব্যতীত তেমন কারও প্রাণনাশ ঘটেনি এখনো। তা ছাড়া হতাহত হয়েছেও খুব কম সংখ্যক সৈন্য!

রাজা রন ইওহার্ড অক্টাইসকে ডাক দিয়ে হাসি ভরা মুখে তাচ্ছিল্যের সুর তুলে বলতে লাগেন, ‘ রাজা অক্টাইস, এখনো কি থেমে থাকবেন? চলুন না, হয়ে যাক দুইয়ে দুইয়ে মোকাবেলা। দেখি আপনার শক্তি বেশি নাকি আমার। আপনার এতবড় দানবীয় দেহের সাথে আমি লড়াই করে আমি বিজয়ী হই, নাকি আপনি আমার মতো চুনোপুঁটিকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়ী হন! ‘ এইটুকু বলে ক্ষ্যাপিয়ে দিলেন তিনি। রাজা অক্টাইস রাগান্বিত হয়ে ক্রোধ ভরা চেহারায় তার দিকে তাকিয়ে রইলেন! তার সম্মানে আঘাত করেছেন রন ইওহার্ড। তার মতো একটা বাচ্চা ছেলে তার মতো দানবীয় দেহের অধিকার অক্টাইসকে প্রতিযোগিতায় আহ্বান করেছে! নিজ মনকে কঠিনভাবে বলতে লাগেন, ‘ অক্টাইস, ওর মতো বাচ্চা আজ তোকে প্রতিযোগিতার আহ্বান করেছে! এতটাই নিচে নেমে গেছিস তুই?’ মন তার জবাব দেননি। ক্রোধ ভরা মস্তিষ্ক নিয়ে আক্রমণ করতে এগিয়ে গেলেন তিনি। উভয় দলের সৈন্যরা তাদের যুদ্ধ করা অবস্থাতেই দুই রাজার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তাদের কার্যকলাপে লক্ষ্য রাখছেন! রাজা অক্টাইস এগিয়ে এসে রাজা রন ইওহার্ডকে তার আট বাহুগুলো দিয়ে আঘাত করছেন! কিন্তু প্রতিবার আঘাত করায় ব্যর্থ হচ্ছেন। তা দেখে আরও রাগান্বিত হয়ে যান তিনি। চাল চেলে রাজা রন ইওহার্ডের দিকে তার আট বাহুর কেন্দ্রবিন্দু তথা মুখ নিয়ে পেটের ভেতর দিকে পানি শুষে নিতে লাগলেন। তীব্র বেগে জলরাশি পেটের সাথে অবস্থান করে। পানির সাথে ভেতর দিকে চলে যেতে লাগলেন রন ইওহার্ড। কোনো কিছু করার আগে অক্টাইস তার আট বাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরে মুখের ভেতর চালান করে দেন!

রাজা রন ইওহার্ডকে মুখের ভেতরে গিলে নিতে মৎস্য সৈন্যরা তাদের চেতনা হারিয়ে ফেলেন! অরগাড নিজেও তার দুই চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ভেবে পাচ্ছেন না কিছু। তার এখন কী করা উচিত তাও বুঝতে পারছেন না! কেবল চেয়ে চেয়ে দেখছেন ঘটনাগুলো! রন ইওহার্ড এখন রাজা অক্টাইসের পেটের ভেতর! এত দ্রুত রাজা অক্টাইসের হাতে ধরাশায়ী হয়ে যাবেন রাজা রন ইওহার্ড তা ভাবতে পারেননি অরগাড! অক্টাইসের পেটের ভেতরে যাওয়া মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু। ‘ তবে কি রাজা রন ইওহার্ডের নাম এখানেই মুছে যাবে? অক্টাইসের হাতেই কি তবে রন ইওহার্ডের মৃত্যু হবে?’ নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন রাখেন অরগাড। কিন্তু মন তার প্রশ্নের জবাব দিতে নারাজ। তাতে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লেন তিনি। রাজা রন ইওহার্ড ব্যতীত যুদ্ধে জয়ী হওয়া অসম্ভব! এভাবে একজন রাজাকে হারাতে ভাবতে পারছেন না আর! মৎস্য সৈন্যরাও বাকহারা হয়ে গেছে প্রায়। উপ সেনাপতি হিতাম পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়েন!

আট বাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরার কারণে রন ইওহার্ডের ডান হাতের কবজির উপরে খানিকটা আঘাতপ্রাপ্ত হন! আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে মৃদুভাবে রক্তপাত হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে সামনের দিকে তাকান তিনি। রাজা অক্টাইসের মুখের ভেতরে তার বর্তমান অবস্থান! চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার হবার পরেও দেখায় বিন্দু পরিমাণ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করতে নজরে আসে তার, তার থেকে সামান্য দূরে বড় বড় ধারালো দাঁত। কিন্তু রাজা রন ইওহার্ড দিকবিদিকশুন্য না হয়ে বরং এটাকেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করলেন। আঘাতপ্রাপ্ত ডান হাতটি সামনের দিকে তুলে আনতে সামনে সৃষ্টি হয় বড়সড় একটি জলরাশির। তীব্র বেগে ছুটে গিয়ে সৃষ্ট জলরাশিসহ ডান হাত দ্বারা একটি দাঁতের উপর মুষ্ট্যাঘাত করেন। সাথে সাথে মুষ্ট্যাঘাতের আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে দাঁতটি ভেঙে গুড়িয়ে যায়। ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠেন রাজা অক্টাইস। অপেক্ষা না করে মুখের ভেতরে নিজে নিজে অবস্থান করেন রাজা রন ইওহার্ড। রণক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতা বিরাজমান। অকস্মাৎভাবে রাজা অক্টাইসের চিৎকারের কারণ উপস্থিত উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝে খুঁজে পাচ্ছে না কেউ! মৎস্য সৈন্যরা কঠিন দৃষ্টিতে রাজা অক্টাইসের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঠে এখনো লড়াই চলছে, তবে ধীরস্থিরভাবে!

রাজা অক্টাইসের পেটের ভেতরে অবস্থান করতে বিভিন্ন ধরণের হাজারো নার্ভের দেখা পান। হতভম্ব হয়ে যান তিনি! এই মুহূর্তে তার কী করা উচিত তা ভাবতে লাগেন। ইতোমধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে রক্তপাত ঘটে ডান হাতের তালু রক্তাক্ত হয়ে গেছে! কিছু সময় ভেবে উপায় খুঁজে বের করলেন তিনি। বাম হাত দিয়ে তলোয়ারের হাতল ধরে একটা টান দিয়ে কোমরে খাপে বদ্ধ অবস্থায় থেকে মুক্ত করে হাতে নিয়ে নেন। পরবর্তীতে হাত পরিবর্তন করতে রক্তাক্ত ডান হাতে তলোয়ার তুলে নিতে দেহের মাঝে ঝংকার দিয়ে ওঠে তার! অনুভব হয় তার, যেন লক্ষ ভোল্টের তড়িৎ তাত দেহে প্রবাহিত হচ্ছে। আচমকা এরকম অনুভূতি হবার কারণ খুঁজে পান না তিনি। আকস্মিক ঘটনায় থমকে গেছে তার মন। কিছু ভেবে ওঠতে সক্ষম হচ্ছেন না। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতে পূর্বের মতো সকল কিছু স্বাভাবিক। দেহের মাঝে বিন্দু পরিমাণ ঝাঁকুনি অনুভব হচ্ছে না। তবে পূর্বের তুলনায় দেহে আরও শক্তি অনুভব হবার পরেও দেহ দুর্বল মনে হচ্ছে। ইচ্ছা না থাকলেও চোখ দুটি আপনা-আপনিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। চারদিকে ঘোর অন্ধকারের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ! অনুভব কেউ তার নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করছেন! কান দুটো সজাগ করে শোনার চেষ্টা করলেন তিনি। দূর থেকে খুব ক্ষীণ কণ্ঠে ভেসে আসছে, ‘ রন ইওহার্ড, বিশেষ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী তলোয়ার ইয়ামোটোর তিন ভাগের একভাগ শক্তি নিজের করে নিতে পেরেছ! তুমি তোমার শক্তি ব্যবহার করে দেখতে পারো রন ইওহার্ড! ‘ বলতে বলতে ক্ষীণ কণ্ঠটি মিলিয়ে গেল! রাজা রন ইওহার্ড খানিক তটস্থ হয়ে যান! ভেবে পাচ্ছেন না কে ছিল! আর কী বলে গেল? তাকেই-বা চেনে কী করে?

কিন্তু এত সকল প্রশ্ন মন সায় না দিয়ে বারবার তাকে আদেশ দিতে থাকে নিজের শক্তি ব্যবহার করার! একটু ভাবুক হয়ে তলোয়ারের দিকে তাকালেন তিনি। নীল বর্ণের চিকন তলোয়ারের গা থেকে সাদা রঙের তীব্র আলোর ঝলকানি নির্গত হচ্ছে! তলোয়ারের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে অন্ধকার স্থানটি। ভাবনা চিত্ত থেকে নিজেকে বের করে দিয়ে ব্যবহার করার ইচ্ছে জাগল তার। নিজে নিজে আওড়াতে লাগলেন তিনি, ‘ তলোয়ারের নাম কী যেন বললেন অজ্ঞাত লোকটি? ‘ ভাবুক হয়ে প্রশ্ন রাখলেন নিজের কাছে। কিছু মুহূর্ত বাদেই একা একা বলতে লাগেন, ‘ ইয়ামোটো! হ্যাঁ, ইয়ামোটো! ‘ খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেলেন তিনি! ডান হাতের তালুতে আবদ্ধ করে রাখা ইয়ামোটো তলোয়ারের হাতলের দিকে দৃষ্টিপাত হতে নজরে আসে তার, হাতের তালুতে জমা হওয়া রক্তগুলো এখন আর দেখা যাচ্ছে না। রক্তগুলো উধাও হয়ে যাবার রহস্যের চেয়েও বড় রহস্য হচ্ছে হাতের কবজির উপরে ক্ষত স্থানটি এখন আর দেখা যাচ্ছে না! যেন হাতে কোনোরকম ক্ষত সৃষ্টি হয়নি! কী হচ্ছে তার সাথে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তবে এই মুহূর্তে তার আর কোনোকিছু ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ইয়ামোটো তলোয়ারটি হাতের মুঠে নিয়ে শক্ত করে আবদ্ধ করে ধরে মাথার উপরে তুলে নেন। হাতের সাথে সাথে ইয়ামোটোকে একবার চক্রাকারে ঘূর্ণন করেন। অনুভব হলো তার, ইয়ামোটোর গা থেকে আলোর ঝলক বেরিয়ে ছড়িয়ে গেল চারদিকে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আকারে চিৎকার দিয়ে ওঠেন রাজা অক্টাইস। সাথে সাথে দেহে কয়েকবার কাঁপুনি দিয়ে আট বাহু চলাচল বন্ধ করে দেন। নিস্তব্ধ দেহ হয়ে ঢলে পড়তে লাগেন সমুদ্র তলদেশে। রাজা রন ইওহার্ড চারপাশে তাকিয়ে বাকহারা হয়ে সম্পূর্ণ রূপে বোকা বনে যান। রাজা অক্টাইসের পেটের মাঝে হাজারো নার্ভগুলো কেটে টুকরো হয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে আছে চারদিকে! যুদ্ধের ময়দানে অবস্থানকৃত সকল সৈন্যরা বাকহারা হয়ে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে রাজা অক্টাইসের দেহের দিকে। ভেবে কূল পাচ্ছেন না তারা! সবাই যুদ্ধ করা বন্ধ করে দিয়ে ঘটমান পরিস্থিতি দেখায় ব্যস্ত। কী হচ্ছে? তা বুঝার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েই যাছে। কিন্তু ফলপ্রসূ কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

রাজা অক্টাইসের পেটের মাঝে অবস্থান নিয়ে দুই হাতে ইয়ামোটোর হাতল আবদ্ধ করে বুক অবধি উঠিয়ে পানিকে অনুভব করতে শুরু করেন রাজা রন ইওহার্ড। তার অনুভবে পানি সারা দিয়ে রাজা অক্টাইসের পেটের ভেতরে অবস্থান নিতে থাকে। রাজা রন ইওহার্ড ইতোমধ্যে তার চোখ দুটো বদ্ধ করে পানি অনুভবের মাঝে ডাকায় ব্যস্ত। সমুদ্রের পানি অক্টাইসের পেটের ভেতরে সুড়সুড় করে প্রবেশ করছে! পানি দিয়ে অক্টাইসের পেট কানায় কানায় ভরতি টইটম্বুর। পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের ধারণ ক্ষমতার একটা মাত্রা আছে। মাত্রাতিরিক্ত হলে বস্তুটির বিস্ফোরণ ঘটে! রাজা অক্টাইসের পেটের মাঝে পানিতে টইটম্বুর হবার পরেও কোথা দিয়েও পানি বাহিরে নির্গত হচ্ছে না। যেন তারা ঠাই গেড়ে বসেছে। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পানি জমাটবদ্ধ হবার কারণে রাজা অক্টাইসের পেটসহ সমগ্র দেহ মৃদু বিস্ফোরণ ঘটে! এবং অক্টাইসের পেটের মাঝে জমাটবদ্ধ পানিগুলো মৃদু বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে যায়। জমাটবদ্ধ পানিগুলো সমুদ্রের পানির সাথে সংস্পর্শ হতেই সৃষ্টি হয় সংঘর্ষ! এবং সংঘর্ষ থেকে সৃষ্টি হয় প্রলয়ঙ্কারী বিস্ফোরণ! বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই প্রখর যার দরুন সমগ্র পৃথিবীর ভূমি কেঁপে ওঠেছে। পানিগুলো সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্পের পাশাপাশি ফুলেফেঁপে উঠছে। সমুদ্রের নিচ থেকে পানিগুলো উপরে উঠে তীরের দিকে আছড়ে পরার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে! তাছাড়া রাজা অক্টাইসের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারিদিকে! সৃষ্ট পানি বিস্ফোরিত হবার নিমিত্তে সমুদ্র তলদেশে পানির ধাক্কা সৃষ্টি হয়। যে ধাক্কায় যুদ্ধরত অবস্থায় নড়বড়ে হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে উভয় পক্ষের সৈন্যরা! রাজা রন ইওহার্ড এখনো তার দুই হাতে ইয়ামোটোর হাতল আবদ্ধ অবস্থায় চোখ বন্ধ করে সমুদ্র তলদেশ থেকে বেশ উপরে ভাসছেন। আলোর ঝলক চোখের পাতায় প্রতিফলিত হয়ে পড়তে পিটপিট করে মৃদু কম্পন তুলে চোখ মেলে তাকান তিনি। নিজেকে সমুদ্রের পানিতে পেয়ে চারদিকে চোখ বিলিয়ে দেখতে লাগেন। নজরে আসে তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে অস্বস্তিবোধ করছেন তিনি।

রাজা রন ইওহার্ডকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পুনরায় দেখতে পেয়ে সকল মৎস্য সৈন্যদের মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। অরগাড কেবল তার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছেন! যেন তাকে বুঝতে পারা এখনো সক্ষম হয়ে ওঠেনি তার! উপ সেনাপতি হিতাম কোনো কিছু না বলে কেবল হা হয়ে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। অপর দিকে মন খারাপ করে অশ্রুপাত করতে থাকেন অক্টাইসের সৈন্যরা! তা দেখে কণ্ঠস্বর খানিকটা বৃদ্ধি করে তাদের সকলের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগেন, ‘ শোনো অক্টাইসের সৈন্যদল! তোমাদের সাথে মৎস্য রাজ্যের লোকেদের সাথে কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু তোমাদেরকে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছেন সেনাপতি করডাল এবং রাজা অক্টাইস। তোমাদেরকে মাফ করে দিলাম। তবে মনে রাখবে, কোনো মৎস্য মানবদের উপর যেন চড়াও হয়ে আক্রমণ করা না হয়! যদি তোমরা আক্রমণ করো তবে তোমাদের মাঝে আক্রমণকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে! ‘

রাজা অক্টাইসের মুক্তি বাণী শুনে অক্টাইসের সকল সৈন্যরা খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেছেন! তাদের মধ্য থেকে একজন চিৎকার তুলে বলতে লাগলেন, ‘ জয় মহারাজ রন ইওহার্ডের জয়’। তার সাথে তাল মিলিয়ে যুদ্ধের ময়দানে অবশিষ্ট সকল সৈন্যরাও বলতে লাগে ‘ জয় মহারাজ রন ইওহার্ডের জয়।’

স্লোগানের মাঝেও হন্য হয়ে রাজা রন ইওহার্ডের কাছে ছুটে আসেন উপ সেনাপতি হিতাম। দিশেহারা হয়ে বলতে লাগেন, ‘ মহারাজ, সমুদ্রের উপরে বিশাল আকারের সুনামির সৃষ্টি হয়েছে। এবং তীব্র বেগে ধেয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে! যদি তটে আছড়ে পড়ে তবে কয়েকটি দেশ পানির তলদেশে চাপা পড়ে ধূলিসাৎ হয়েছে যাবে! ‘ আরও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে কিছু বলতে নেন তিনি। কিন্তু তার আগেই তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন রাজা রন ইওহার্ড। ইশারা পেয়ে চুপ করে যান তিনি। কোনোকিছু না বলে পানির উপর দিকে উঠতে থাকেন রাজা রন ইওহার্ড। পানির উপরিভাগ থেকে কয়েকশত মিটার নিচে অবস্থান করেন। কোমরে রাখা খাপে আবদ্ধ ইয়ামোটোর হাতল ডান হাতের তালুতে আবদ্ধ করে নেন তিনি। দুই হাত আবদ্ধ করে চোখ দুটো বন্ধ অবস্থায় পানিকে ডাক দেন। তার ডাকে সারা দিয়ে মুহূর্তের মাঝে শত ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সুনামি পানির সাথে মিলিয়ে যায়! পানির পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক! কারও বুঝার ক্ষমতা নেই একটু আগে কতটা ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল মানব সন্তানেরা!
ইয়ামোটো কোমরে রাখা খোলসে আবদ্ধ করে রেখে দেন রাজা রন ইওহার্ড! অতঃপর দ্রুত গতিতে পানির উপরিভাগ থেকে তলদেশে ছুটে যেতে লাগেন! দূর থেকে রাজা রন ইওহার্ডকে এগিয়ে আসতে দেখে পুনরায় খুশি হয়ে যান সকল সৈন্যরা! দীর্ঘ সাত ঘন্টা যুদ্ধের পর বিজয় অর্জন করেন মৎস্য রাজ্যের সৈন্যরা! সৈন্যরা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন প্রায়। মৎস্য সৈন্যদের মাঝে নিহতদের সংখ্যালঘু হলেও আহত সৈনের সংখ্যা বেশ। নিহত এবং আহত উভয় সৈন্যদের নিয়ে রাজ্যের দিকে ফিরে যাচ্ছেন সকলে। সাথে বিজয়ী খুশি!

উনসত্তর.
সারা পৃথিবীতে একই ধরণের খবর প্রচারিত হচ্ছে। সকল দেশের মিডিয়াগুলো একজোট বেঁধে খবর প্রচার করায় ব্যস্ত!
” বিগিত ১৪ দিনের মাঝে দুইবার ভয়ংকর ভূমিকম্পের দেখা যায়! কিন্তু সবচেয়ে অবাককর বিষয় হচ্ছে, ভয়ংকর দুই ভূমিকম্পতেই কোনো দেশ বিন্দু পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্তর সম্মুখীন হয়নি। কিছুক্ষণ পূর্বে ভূমিকম্প হবার সাথে সাথে আচমকা জলবায়ুর পরিবর্তন ছাড়াই সমুদ্রে বিশাল সুনামির দেখা মিলে। যার উচ্চতা শত ফুটের অধিক হবে বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিকেরা! সবচেয়ে অবাক করা খবর তীরের খুব সন্নিকটে এসে ভয়ংকর প্রলয় তোলা সুনামি শান্ত পানিতে রূপ নেয়! সমুদ্রের পানির পরিবেশ দেখলে বুঝার কোনো সক্ষমতা নেই যে একটু আগে সমুদ্রে এত ভয়ংকর একটি প্রলয় তোলা সুনামি এগিয়ে আসছিল! তাছাড়া বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, যদি ভয়ংকর সুনামিটি তীরে আছড়ে পড়ত, তবে সমুদ্র সংলগ্ন দেশগুলো মুহূর্তের মাঝে পানির তলদেশে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যেত!

এই ছিল আপডেট নিউজ। আরও তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।’ এতটুকু খবর পাঠ করতে রিমোট চেপে টিভি অফ করে দেন অজ্ঞাত লোক। হাতে একটি ট্যাব নিয়ে ভিডিও দেখছেন তাতে। একজন মানব হাতে একটি চিকন তলোয়ার নিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু করছেন। কিছু সময় বাদে কোমরে তলোয়ার গুজে রেখে পানির তলদেশে হারিয়ে যান! ভিডিও ফুটেজটি দেখে অজ্ঞাত লোকটির দুই ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে! যে হাসির রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়!

[– সমাপ্ত –]

কিছু কথা:- যারা ভাবছেন গল্পটি এখানেই শেষ, তাদের জন্য জানাই সমবেদনা! গল্পের ডালপালা বাড়তেই আছে! সাথে এই গল্পের মাঝে সকল রহস্যের সমাধান হয়নি! খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে পরবর্তী রহস্যের সমাধান নিয়ে। সাথে নতুন করে আরও রহস্য যোগদান করার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই। আর সাথেই থাকবেন। খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে গল্পের সাথে! হারিয়ে যাবেন না কোথাও!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here