গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখায়:- যাবেদ খাঁন আবু বকর দ্বাবিংশ পর্ব

0
182

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখায়:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
দ্বাবিংশ পর্ব

পঁয়ষট্টি.
প্রভাতের কিরণ দেখা দেবার পূর্বে অক্টোপাস রাজ্যের সকল সেনারা যুদ্ধে যাবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়েছে। গতকাল যামিনীতে অক্টোপাস ডারলেনের বচন তথা রাজা অক্টাইস হুকুম করেছেন শোনা মাত্র সকল সৈন্যরা নিজেদের প্রস্তুত করতে লেগে গেছেন। সেনাপতি করডাল যুদ্ধের মূল নিয়ন্ত্রক। সকল সৈন্যরা যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে রাজা অক্টাইসের আগমনের অপেক্ষা করছে। তাৎক্ষণিক সময়ে আচমকাই সমগ্র অক্টোপাস রাজ্য কাঁপতে আরম্ভ করল। ভূমির কম্পন পানিতেও তার প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। নড়বড় করতে শুরু করেছে বিস্তৃত স্থান নিয়ে সৃষ্ট অক্টোপাস রাজ্য। তবে রাজা অক্টাইসের সৈন্যদের চেহারায় বিন্দু পরিমাণ অস্থিরতার দেখা মিলছে না। যেন সবাই খুব স্বাভাবিক হয়ে পরিস্থিতি উপভোগ করছেন! এরকম একটা পরিস্থিতি তারা উপভোগ্য মনে করার কারণ আসলেও রহস্যময়। তবে মাঝে-মাঝে ফুসুরফাসুর গুঞ্জনের শব্দ শোনা যাচ্ছে কানে! রাজ্য কাঁপিয়ে প্রাসাদের ভেতর দিক থেকে বেরিয়ে এলেন রাজা অক্টাইস। আট বাহু বিশিষ্ট দানবীয় আকারের বিশাল একটি দেহ। তার দানবীয় আকৃতির বিশাল দেহের সাথে যুক্ত আট বাহু দেখে শত্রু পক্ষের যে কেউ ভয় পেতে বাধ্য হবে। রাজা অক্টাইসের নাম সর্বত্র শোনা গেলেও তাকে সৈন্যদের মাঝে কয়েকজন ব্যতীত আর কেউ স্ব চোখে দেখেছে এমন প্রাণি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! তাছাড়া কেউ তার মুখোমুখি হবার আগে মৃত্যুর ভয়ে পালাবে। তার দেহ এবং বাহুদ্বয়ের বিস্তৃত অবস্থান সকলের ভাবনার বাহিরে। সৈন্যদের মাঝে কেবল কয়েকজন পূর্বে তার দেখা পেয়েছে। এছাড়া বাকি সৈন্যরা কেবল নাম শুনেই রাজা অক্টাইসের পক্ষ হয়ে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। ইতোপূর্বে যারা রাজা অক্টাইসকে স্ব চোখে দেখেনি তাদের আজ হুশ উড়ে যাবার উপক্রম। উপস্থিত সৈন্যদের মাঝে কেবল হাতেগোনা কয়েকজন বাদে বাকি সবাই চোখ বড়বড় করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজা অক্টাইসের দিকে।

রাজা অক্টাইস তার দেহের চার বাহু দ্বারাই একটি মধ্যমা আকৃতির তিমিকে ধরাশায়ী করে ফেলতে সক্ষম। সৈন্যরা এতবড় দেহ পূর্বে দেখেছে বলে মনে করতে পারছে না। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে সেনাপতি করডাল আদেশ করেন, ‘ অক্টোপাসদের সৈন্য দলটি সামনের অবস্থান করতে। এবং তাদের পেছনে অবস্থান করবে হাঙরদের বিশাল দল। ‘
সেনাপতি করডালের আদেশ অনুযায়ী সকলে নিজেদের অবস্থান গঠন করে নেন। সেনাপতি করডালের আদেশে পথ চলতে লাগেন সবাই। রাজা অক্টাইস তার বিশাল আকৃতির দানবীয় দেহ নিয়ে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে ছুটে যাচ্ছেন। বিশাল এক বাহিনী নিয়ে যুদ্ধের জন্য আগুয়ান তারা। তাদের চলনের নিমিত্তে সমুদ্রের পানি কাঁপনের সৃষ্টি হয়েছে এখনই। কালবৈশাখী ঝড় আগমনকালিন সময়ে সমুদ্রে যতটা ঢেউয়ের তীব্রতা দেখা যায়, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ ঢেউয়ের তীব্রতা দেখা যাচ্ছে।

সমুদ্রে বসবাসরত সাধারণ মাছগুলো দূর থেকে রাজা অক্টাইসের বিশাল বাহিনী দেখে আগেভাগেই সেখান থেকে কেটে পড়েছে। তাদের কোনো ইচ্ছে নেই এত দ্রুত কারও পেটের ভোজন হবার! তবে তাদের মনে আজ সংশয়ের পাশাপাশি ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো এখন থেকে আর তাদের আজাদ ঘোরাফেরা করা হবে না। আবার খুব সহজেই নিজের জীবন বিপন্ন করে দিতে হতে পারে! এতদিন যদিও সমুদ্র শাসন করতেন মৎস্য রাজা অরগাড, তবুও সকল ছোটোবড় মাছ এবং জলজ প্রাণীদের মাঝে একটি স্বাধীনতা ছিল। কি অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের এতবড় সৈন্য বাহিনীর কাছে মৎস্য বাহিনী তুচ্ছতাচ্ছিল্যর মতো। রাজা অক্টাইস এ যাবতকাল মৎস্য রাজ্যে আক্রমণ করেনি কেবল সেনাপতি করডালের জন্য। আজ সেনাপতি করডাল তার সাথেই আছেন। তবে আর বসে থাকার প্রশ্নই আসে না।

রাজা অক্টাইস তার বিশাল বাহিনী নিয়ে মৎস্য রাজ্যের দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছে। সামুদ্রিক পরিবেশ মুহূর্তেই শান্তশিষ্ট থেকে গম্ভীর ভাব আবহমান। আজ সমুদ্র নিজেও দেখতে চাইছেন শক্তি কাদের বেশি! মৎস্য মানবদের নাকি অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের?

ছেষট্টি.
প্রভাতের কিরণ পূব গগনে দেখা দেবার পূর্বে মৎস্য রাজ্যের ময়দানে যুদ্ধসাজে সজ্জিত করে হাতে অস্ত্রের সাথে সকল সৈন্যদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উপ সেনাপতি হিতাম। ঘটনাক্রমে যুদ্ধের বিষয়টি রাজ্যের সকলের নিকট জানাজানি হলে সবাই পুরোপুরি থমকে যায়। আগামীতে কী হতে যাচ্ছে তা সবাই ভালো করেই জানেন। রাজা অক্টাইসের সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠা হবে না সে সম্পর্কে সকলে অবগত। প্রভাতের লগ্ন লাগতে ঘুম শয়ন থেকে জাগ্রত হয়ে যান রাজা রন ইওহার্ড। তৎক্ষণাৎ কোনোরকম সময় ব্যয় না করে শয্যা থেকে দ্রুত নেমে যান। আলাপ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েন রানি ডায়ানা। সেদিকে কর্ণপাত না করে শয্যা ত্যাগ করে দ্রুত সাজঘরে অবস্থান নেন তিনি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সাজঘর ত্যাগ করে কক্ষে অবস্থান করেন। মুখভার করে বিছানায় খুটি মেরে বসে রইলেন রানি ডায়ানা। কক্ষে অবস্থান করে দ্রুত পায়ে হেঁটে পাঁচিলে ঝুলন্ত যুদ্ধের পোশাকটি নিজের গায়ে চাপিয়ে নেন। কোমরে ঝুলিয়ে দেন গতকাল উপহার পাওয়া তলোয়ার। নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রানি ডায়ানার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে উপস্থিত হন। দুটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবদ্ধ করে নেন রানি ডায়ানার দুটি ফুলে থাকা নাদুসনুদুস গাল। দরদর করে চোখের পানি ছেড়ে দেন রানি। মুসকিলে পড়ে যান রন ইওহার্ড। তবু নিজেকে উদ্ধার করে রানি ডায়ানাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ কাঁদতেছ কেন সোনাপাখি? তোমার কি আমার উপর ভরসা নেই?’
এ কথা শুনতে কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন রানি ডায়ানা, ‘ ভরসা আছে তো মহারাজ। কিন্তু আপনি যুদ্ধে না গলে হয় না?’ করুণ কণ্ঠস্বর ফুটিয়ে প্রশ্নটি করলেন।
‘ তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী! কিন্তু এ মুহূর্তে বোকার মতো এগুলো কী বলা শুরু করলে ডায়ানা? আমি রাজ্যের রাজা! অর্থাৎ রাজ্যের সকল দায়ভার আমার উপর। আর একজন রাজা ব্যতীত রাজ্যের যুদ্ধ হয় কখনো?’ একটি মুচকি হাসি দিয়ে বুঝিয়ে প্রশ্নের জবাব দিলেন রাজা রন ইওহার্ড।
‘ তবুও! না গেলে হয় না?’ পুনরায় করুণ কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন রানি ডায়ানা। কোনোভাবে রাজা রন ইওহার্ডকে যেতে দিতে রাজি নন।
‘ ডায়ানা, বাচ্চামো করো না সোনা। ‘ কণ্ঠে মিষ্টি ভাব ফুটিয়ে কথাটি বললেন তিনি।
‘ আচ্ছা, তাহলে আমাকে যুদ্ধে নিয়ে চলুন! দয়া করে মানা করবেন না! ‘ ক্রন্দন করতে করতে মৃদু হাঁকি তুলে প্রস্তাবটি রাখলেন রানি ডায়ানা।
‘ শত্রুপক্ষ যখন হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন সৈনিকের দুর্বলতায় আক্রমণ করে দমিয়ে দিতে চায়। সেক্ষেত্রে তোমাকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে গেলে শত্রুপক্ষ আমাকে দমিয়ে দিতে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। কেননা তুমি আমার দুর্বলতা। আমি চাই না তোমাকে ব্যবহার করে আমাকে দমিয়ে দেক। দয়া করে যাবার মর্জি তুলিও না। তোমাকে কথা দিতে পারছি না যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিরব কি না। কিন্তু তোমার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব! ‘ মিষ্টি ভাব কণ্ঠে ফুটিয়ে উপলব্ধি করিয়ে প্রথম কথাগুলো উপস্থাপন করলেও শেষ বাক্যটি অনুরোধসূচকভাবে উপস্থাপন করেন রাজা রন ইওহার্ড। কিছু সময়ের জন্য চুপ করে যান রানি ডায়ানা। ক্ষণিক সময় নীরবে অতিবাহিত হতে ব্যগ্রতা দিয়ে কিছু বলতে নেন রাজা রন ইওহার্ড। কিন্তু বাকযন্ত্র থেকে কোনো ধ্বনি বেরিয়ে আসার পূর্বে তাকে থামিয়ে দেন রানি ডায়ানা। আবদার করে বলেন, ‘ অন্তত আমাকে একবার আলিঙ্গন করে যাবেন? ‘ করুণ কণ্ঠে প্রশ্ন শুনে সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ সময়ে নিজের দুই বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেন রানি ডায়ানাকে। নিজের ঠোঁট দুটি রানি ডায়ানার কপালদ্বয়ে প্রথমবারের মতো আলতোভাবে ছুঁয়ে দেন। পরবর্তীতে দুজনের ওষ্ঠাধর পরস্পর সম্মিলিত করে নেন। রানি ডায়ানা এরকম পরিস্থিতির জন্য মোটোও প্রস্তুত ছিলেন না। তবু নিজেকে মিলিয়ে নেন রাজা রন ইওহার্ডের সাথে। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হতে আলতোভাবে পরস্পরে মিলিত ওষ্ঠাধর থেকে ছাড়িয়ে নেন রাজা রন ইওহার্ড। অতঃপর বাহুডোর থেকে আলিঙ্গন মুক্ত করে দেন। মৃদুস্বরে বলতে লাগেন তিনি, ‘ আমার এখন যাওয়া দরকার সোনা পাখি। সবাই অপেক্ষা করছেন আমার। ‘
বাধা প্রদান না করে অনুরোধসূচক বাক্য ব্যয় করে বলে ওঠেন রানি ডায়ানা, ‘ যান। নিজের খেয়াল রাখবেন। অন্তত আমার জন্য হলেও!’ কণ্ঠে কাঁদোকাঁদো ভাব প্রকাশমান। রাজা রন ইওহার্ড আর কোনো কথা না বাড়িয়ে পেছন দিকে ঘুরে প্রবেশদ্বারের উদ্দেশ্যে পা বাড়ান। পেছন দিকে ঘুরে গিয়ে কান্না করে দেন রানি ডায়ানা। রোদিত শব্দ কান অবধি স্পর্শ করছে রাজা রন ইওহার্ডের। কিন্তু মায়া বাড়াতে একটিবারের জন্য পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হয়ে দুটো টোকা দিতে ওপাশ থেকে একজন প্রহরী দ্বারের পাল্লা খুলে দেয়। তাকে দেখে প্রহরীগুলো মাথা নিচু করে কুর্নিশ জানায়। কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গম্ভীর হয়ে কক্ষ ত্যাগ করলেন। প্রবেশদ্বার রক্ষীগুলো বন্ধ করে দিতেই রানি ডায়ানার চোখের বাঁধ ছিঁড়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগে।

[– চলবে –]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here