সি অফ মারমেইড। লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর। প্রথম পর্ব

0
617

গল্প:- সি অফ মারমেইড।
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর।
প্রথম পর্ব

এক.
চাঁদের মৃদু আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করছে সমগ্র সমুদ্রের তীর। আকাশে গোল থালার মত একটি বিশাল চাঁদ উদয় হয়েছে। সমুদ্রের পানিগুলো মৃদু ঢেউয়ে দোল খেয়ে চলেছে। চাঁদের আলো সমুদ্ররে প্রতিফলন ঘটায় চিকচিক করছে দোল খাওয়া মৃদু ঢেউগুলো। যেন মুক্তের ন্যায় নড়াচড়া করা হচ্ছে। রাত খুব একটা গভীর নয়। তবুও গভীর রাত মনে হচ্ছে। নেই কোনো কোলাহল। আর নেই কোনো জনমানবের চিহ্ন। চারদিকে বিভিন্ন প্রকৃতির গাছপালা দিয়ে সাজানো একটি আইল্যান্ড।

সমুদ্রের শান্ত পানিগুলোকে অশান্ত করে দিয়ে অদ্ভুত রকমের প্রাণী পানির উপরে ভেসে এলো। তাদের দেহের উপরিভাগ মানুষের মতো। কিন্তু নিচের অংশটা সম্পূর্ণ মাছের লেজের অনুরূপ। সমুদ্রের পানি অশান্ত করে দিয়ে এ ধরণের কয়েকটি প্রাণী তীরে উঠে এলো। আমরা কমবেশ সবাই এদের সাথে পরিচিত। তাদের আদৌ মানুষ বলা ঠিক হবে কি-না তা নিয়ে কিছুটা সংশয়। চাঁদের আলো তাদের দেহের মধ্যভাগ থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছে।

তীরে উঠে আসা অদ্ভুত প্রাণীগুলোর সবার গায়ের রঙ এক রকম হলেও তাদের মধ্যে থাকা দুজন ব্যক্তিটির দেহের রঙ কিছুটা ভিন্ন। একজনের দেহে ভিন্নধর্মী যুদ্ধের পোশাক একটু ভিন্ন রকমের। অপরজন হচ্ছে মৎস কন্যা। মাথায় রাজমুকুট থাকার কারণে তাকে চিহ্নিত করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি। মৎস রাজ কন্যার দেহে নীলাভ আভা ফুটে উঠেছে। চাঁদের ঝিকিমিকি আলোতে আরও বাড়িয়ে তুলছে মৎস কন্যার রূপ-লাবণ্য। মৎস কন্যার সুরক্ষার কাজে চারদিকে নিয়োজিত রয়েছে আটজন মৎস মানব। সবাই তীরে উঠে এসে তীব্র আক্ষেপ নিয়ে সমুদ্রের দিকে চেয়ে আছে। হয়তো কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে।

আকস্মিকভাবে মৎস কন্যার দেহের নিম্ন ভাগ মৎস রূপ থেকে মানুষের মতো দুই পায়ে রূপান্তর হলো। এছাড়া সাথে দেহেরও পরিবর্তন ঘটতে লাগে। মাথায় রাজমুকুট দেয়া। চুলগুলো মৃদু বাতাসে আলোতে পরশ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে আলিঙ্গন করে মাথার চুলগুলো পাল্লা ধরে দোল খাচ্ছে। দেহে মানুষ রূপ ফিরে আসতেই মৎস কন্যার গায়ে সাদা রঙের একটি বিস্তৃত পোশাকে আবর্তিত হয়ে যায়। দেখতে একদম সাদা পরীদের মতো মনে হচ্ছে। পেছনে ডানা নেই, কিন্তু তবুও পরীর মত দেখাচ্ছে। হোক না সে জলপরী। পরী তো!

মৎস্য কন্যার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সেনাগুলো নিজেদের দেহের নিম্ন ভাগ মানুষের দুই পায়ের মতো হতেই উভয়ে মানুষ রূপ ফিরে পান। এছাড়াও সকলের গায়ে একটি গেঞ্জি জাতীয় জামা এবং নিচে পরনে রয়েছে ধুতি জাতীয় পাজামা। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে একটি করে বল্লম। তবে আমাদের চিরচেনা সেই বল্লমের চাইতে বেশ ভিন্ন। বল্লমগুলো খুব সম্ভবত পানি দিয়ে তৈরি। তবে অত্যন্ত শক্ত এবং ধারালো। যা হয়তো হিরা কাটারও ক্ষমতা রাখে।

বেশ কিছু সময় যাবত অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিনিসটির দেখা এখনো পায়নি। যার নিমিত্ত উভয়েই আগ্রহান্বিত হয়ে সমুদ্রের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকাই চোখ দুটি বুজে নেয় রাজকন্যা। কিছু শোনার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু তেমন কিছুই অনুভব করতে সক্ষম হয় না। এবার কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে সেনাপতির উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে রাজকুমারী,
‘ আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে? এখনও তো সেনাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ‘
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন সেনাপতি,
‘ রাজকুমারী, সেনারা এতক্ষণে যাত্রাপথে থাকার কথা। কিন্তু এখনও এলো না কেন? বিষয়টা ভেবে সামান্য চিন্তা হচ্ছে।’
‘ কতদূর এসেছে তা জানাও।’
‘ যথা আজ্ঞা রাজকুমারী। ‘

এই বলে সকলের মাঝে ব্যতিক্রম ধরণের পোশাক পরিহিত মৎস মানবটি রাজকুমারীর সামনে থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যান। সমুদ্র তীর থেকে সামনে এগিয়ে পানির নিকটবর্তী স্থানে এসে দুই হাঁটু বালুচরে ভাজ কাছে বসে পড়েন। ডান হাত পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে চোখ দুটি বন্ধ করে কিছু অনুধাবনের চেষ্টা চালান। দপ করে চোখ দুটি মেলে যায়। দ্রুত পায়ে হেঁটে রাজকুমারীর কাছে এসে উপস্থিত হন। কৌতুহলী হয়ে সেনাপতির কাছে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করল রাজকন্যা,
‘ কী অনুভব করলে? সেনারা কতদূর এলো?’
‘ প্রায় চলে এসেছে বলতে পারেন রাজকুমারী। ‘
‘ আমার জানামতে এত সময় লাগার কথা ছিল না। তবে এত সময় কেন লাগছে?’
‘ আমার জানা নেই মহা মাননীয় রাজকুমারী। ‘

চুপ হয়ে যায় মৎস্যকন্যা। নীরবে ভাবতে লাগে সে। উপস্থিত বাকি সেনারা তেমন কিছু বুঝতে না পারায় চুপ করে যায়। সকল কিছু জানার দায়িত্ব তাদের নয় । তাদের দায়িত্ব কেবল রাজকুমারীকে সকল বিপদআপদ থেকে রক্ষা করা। মৎসরাজার একমাত্র কন্যা রাজকুমারী ডায়ানা। রাজ্যভার তার বাবা-মা উভয়েই পরিচালনা করেন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে কোনো কাজে তাকে পাঠায়। রাজকুমারী ডায়ানার রূপ দেখে যে কোনো পুরুষ বিমোহিত হতে বাধ্য। হোক তা মানুষ আর হোক তা মৎস মানব। এবার রাজকুমারী ডায়ানা বেশ বিরক্ত। কিন্তু কিছুই যে করার নেই। ডান হাতটি উঁচু করে বালুকণার দিকে তাক করে। চারদিক এবং মাটির নিচ থেকে পানি এসে হাতের নিচে জমাট হতে থাকে। পানি জমাট হতে হতে এক পর্যায়ে একটি চেয়ারে পরিনত হয়। পানি দিয়ে তৈরি চেয়ার। উপস্থিত সেনারা বিষয়টা তেমনভাবে আমলে নেয় না। এ বিষয়গুলো খুব স্বাভাবিক। একজন রাজকুমারীর কাছে এই সকল বিষয়গুলো ডাল-ভাতের মতো। রাজকুমারী ডায়ানা দ্রুত পানি দিয়ে তৈরি চেয়ারে বসে যায়। অবাক করা বিষয়, পানিগুলো যেন জমাট বেঁধে পাথর হয়ে গেছে। একটুও নড়াচড়া করল না পানিগুলো। অবশ্য এটা চেয়ার নয় সিংহাসনের প্রতিমূর্তি বলা যায়। মূল সিংহাসন না হলেও তার কোনো অংশে কম নয়। ডায়ানা সিংহাসনে বসে দুই হাতলে দুটি হাত রাখে। এবং পায়ের পা তুলে বসে যায়। সাময়িক সময় বাদেই সমুদ্রের পানি নড়তে দেখা যায়। সেদিকে একবার তাকিয়ে চাঁদের দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। তবে তার দুই ঠোঁটের কোণে ফুটে ছিল একটি রহস্যময় হাসি। তীরে উপস্থিত সেনাদের অনুরূপ আরো পাঁচজন সেনা পানির বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো। তবে তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে একটি করে জীবন্ত মানুষ। পানি থেকে বেরিয়ে তীরে আসতেই মানুষ রূপে ফিরে আসে সেনারা। অপরিচিত পাঁচজন মানুষকে ধরে এনে রাজকুমারী ডায়ানার সামনে সারিবদ্ধ ভাবে বসানো হয়।

তাদের দেখামাত্রই কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে দেয় রাজকুমারী ডায়ানা। তবে এ হাসি অজ্ঞাত পাঁচজন লোকের কাছে একটুও ভালো ঠেকছে না। তাদের দেহগুলো বেশ ক্লান্ত। বড়বড় শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্য সম্পাদনা করছে। কিন্তু কোনো কথা না বলেই রাজকুমারী ডায়ানা তার ডান হাতটা তাদের দিকে তাক করে। আকস্মিকভাবে চারদিক থেকে পানি এসে পাঁচজন লোকের সামনে জড় হয়। তারা সবাই বুঝে নেয়, তাদের মোলাকাত সাক্ষাৎ মৃত্যুর সাথে হতে যাচ্ছে। জড় হওয়া পানিগুলো একেকটা ছোটো সূঁচালো ছুরির আকার ধারণ করে। স্বাভাবিক ছুরি থেকে কিছুটা ভিন্ন রকম। পানি দিয়ে সৃষ্ট সূঁচালো ছুরিটির দুই প্রান্তেই ধারালো। তবে এ যে-সে ধার নয়। হীরার চাইতেও কঠিন হওয়া বিদ্যমান। আচমকাই ধারালো ছুরিগুলো উপস্থিত অজ্ঞাত পাঁচজন মানুষের বুকে আঘাত হানে। সাথে সাথে বুক ভেদ করে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় ছুরি। গগন বিদারক চিৎকার দিয়ে ওঠে লোকগুলো। রক্তে মেখে যায় তীর। সেদিকে তাকায় না ডায়ানা। তার চোখ-মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। ইতোমধ্যেই অজ্ঞাত মানুষ পাঁচজনের দেহগুলো বালুতে লুটিয়ে পড়েছে। এবং পারি জমিয়েছে পরপারে। সেনাপতির চোখ-মুখেও রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত খুশির আভা। তবে পরে আসা পাঁচ সৈন্যরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের প্রস্তুত আর অপ্রস্তুত হওয়ায় কিছু যায় আসে না। সেনাপতির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ আজ বহুদিন পর আবার তোমাদের বিশেষ ভোজন হতে চলেছে। যাও আনন্দ করো। খুশি থাকো।’
‘ যথা আজ্ঞা রাজকুমারী। ‘

দুই.
সমুদ্রের মাঝে ডুবে গেল রন ইওহার্ড। চারদিকে পানি আর পানি। কিন্তু অবাক করা বিষয়, তার দেহে একটি লোম পর্যন্ত ভিজতেছে না। তার নিজ দেহের প্রতি তারই নিয়ন্ত্রণ নেই। যেন আপনা-আপনিভাবেই পানি দিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে। দৃষ্টির গোচর হতে লাগল নানান রকমের সামুদ্রিক প্রাণী। ছোটো-বড় বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, তাকে দেখামাত্রই যে যার স্থানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তার দেহ উক্ত প্রাণীর সামনে থেকে প্রস্থান করতেই পূর্বের নিয়মে চলতে লাগে। এ রহস্যের জট মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু সমাধান কিছুতেই মিলছে না। আর দেহের উপরেই-বা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না! তাও একপ্রকার রহস্য। এছাড়াও আরও অবাক করা বিষয়, পানির ভেতরে থাকা অবস্থাতেই শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্য সম্পাদনা করতে সক্ষম সে। কিন্তু এটি কোনো মানুষের দ্বারা আদৌ সম্ভব কি-না তা তার জানা নেই। প্রতিনিয়ত সমুদ্রের গভীরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তার গন্তব্য জানা নেই। দেহ এখন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। দেহের ভেতরে যেন দ্বিতীয় আরেকটি সত্তার উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছে তার। সমুদ্রের গভীর থেকে গভীরে চলে এসেছে। কত হাজার ফিট পানির নিচে তার অবস্থান, তা তার অজানা। তার কাছে স্থান মাপার যন্ত্রও নেই যে, মেপে বলতে পারবে।

চারদিকে ঘোর অন্ধকার। তবুও আকাশে উদিত হয়েছে একটি থালার মত চাঁদ। চাঁদের আলো সমুদ্রের নিচ পর্যন্ত পৌঁছাতে অক্ষম। কিন্তু সে চারদিকে সকল কিছুর উপস্থিতি খুব ভালো করেই দেখতে পারছে এবং অনুভব করতে সক্ষম। এবারের পানিগুলো আগের চাইতেও অধিক নীলাভ। যেন পানির ভেতরে কেউ নীল রঙ গুলিয়ে দিয়েছে। দূরেই একটি রাজপ্রাসাদের মতো উঁচু টিবি দেখাচ্ছে। তা দেখে অবাক হয়ে যায় সে। সমুদ্রের এত নিচে রাজপ্রাসাদের মতো এটা কী হতে পারে? কিন্তু উত্তরটা তার জানা নেই। কিছুদূর অগ্রসর হতেই তার মনোভাব শতভাগ সত্য হলো। এটি একটি রাজপ্রাসাদ। তবে রাজপ্রাসাদের চারপাশে কারোই উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। এমন কি কোনো সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণীরও নয়! মনের মাঝে তার আরও কয়েকটি প্রশ্ন যোগ হয়ে ঘুরপাক খেতে লাগল। এই প্রাসদটি এখানে কেন? প্রাসাদটি কাদের তৈরি? এত গভীর পানির নিচে রাজ প্রাসাদ তৈরি করা আদৌ সম্ভব? এছাড়াও এখানে কোনো প্রাণীর দেখা মিলছে না কেন?

কিন্তু এসবের উত্তর আদৌ মিলবে বলে মনে হয় না। দেহ তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যেয়ে প্রাসাদের ভেতরে ঢুকতে আরম্ভ করল। আচমকাই তার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু কী কারণে? তা বুঝা বড্ড দায়। সে অনুভব করল ঘূর্ণন একটি জলরাশির মধ্যে পড়ে গেছে। তার দেহ এখন ঘূর্ণনে ঘূর্ণিত হচ্ছে। যেন এ জল ঘূর্ণিঝড়। আমরা আজীবন মাটির উপরে ঘুর্ণিঝড় দেখে অভ্যস্ত। তবে পানির নিচেও যে জল ঘূর্ণন ঘূর্ণিঝড় হয় তা তার অজানা ছিল। এছাড়াও সে হাজার চেষ্টা চালিয়েও চোখ খুলতে পারছে না। কিছু সময় বাদে সকল কিছু স্বাভাবিক যায়। যেন একটু আগে কিছুই ঘটেনি। পিটপিট করে চোখে মেলে তাকায় রন ইওহার্ড।

একটি চারকোণা আবদ্ধ অন্ধকার কক্ষে আছে সে। চারদিকে কী আছে তা অনুভব করতে অক্ষম। অন্ধকারের ঘনত্বের পরিমাণ এতটাই গভীর যে, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আচমকাই গম্ভীর স্বরে কক্ষের ভেতর থেকে ভেসে আসতে লাগল,
‘ এখানে আসতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি তো রন ইওহার্ড?’

আচমকাই এরকম কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। এছাড়াও চমকে গেছে। তার নাম তো জানার কথা নয়। কিন্তু তবুও কী করে জানে? বেশি কিছু না ভেবেই প্রশ্নের জবাবে বলল,
‘ নাহ। তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে জল ঘূর্ণন ঘূর্ণিঝড়টা বেশ বিরক্তিকর ছিল। ‘
রনের দেহটা এক স্থানেই স্থীর। তবে যেন শূন্য ভাসছে। কিছু সময় বদ্ধ ঘরে কারোই আওয়াজ পাওয়া গেল না। কিন্তু রুমের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে দিয়ে বলতে লাগল রন ইওহার্ড,
‘ আমাকে এখানে নিয়ে আসার উপযুক্ত কারণ?’
গায়েবিভাবে একটি হাসির সাথে জবাব ভেসে এলো,
‘ বাহ। তুমি তো দেখছি বেশ বুদ্ধিমত্তা। একজন রাজা হবার জন্য যেমন জ্ঞান এবং আচার-আচরণের প্রয়োজন। সবগুলোই তোমার মধ্যে ফুটে উঠেছে। ‘
এবার বেশ বিরক্ত কণ্ঠে বলতে লাগল রন ইওহার্ড,
‘ আমি আমার বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা এখনও দিইনি। প্রথমে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।’
পুনরায় আরেকটি হাসির শব্দের সাথে জবাব ভেসে এলো,
‘ খুব শীঘ্রই তোমার রাজ্যাভিষেকের কার্যসিদ্ধি সম্পাদনা করা হবে। তা জানাতেই নিয়ে আসা। এছাড়াও তোমার বিচক্ষণতার একটু পরীক্ষা নেয়া। এবং তোমার জন্য আরেকটি বিশাল উপহার রয়েছে। যা এখন নয়। সঠিক সময় নিজেই তা অর্জন করে নেবে।’

তিন.
দুজন লোক হন্তদন্ত হয়ে একটি কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করল। কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন একজন লোক। পরনে বেশভূষা ভালো পোষাক। যা উপস্থিত দুজনের চেয়ে ভিন্ন এবং উন্নত। উপস্থিত লোকটি তাদের দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। দৌড়ে আসা লোক দুটো মৃদু কাঁপছে। তাদের এরকম করতে দেখে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন উপস্থিত লোক,
‘ এভাবে কাঁপছ কেন? কী হয়েছে তা বলো।’
এই কথাটি যেন তাদের দুজনের কাঁপুনি আরও বাড়িয়ে দেয়। তবুও একজন মুখ খুলে বলতে আরম্ভ করল,
‘ সমুদ্রে পাঠানো জাহাজ দুটো এখন আর রেডিয়েশনের আওতায় দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও ধারণা করা যাচ্ছে জাহাজ দুটি সমুদ্রেই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে। ‘
উপস্থিত লোকটি হুংকার ছেড়ে বলে উঠলেন,
‘ এ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দ্রুত জাহাজ দুটি খুঁজতে লোক পাঠাও।’
কাঁপতে কাঁপতে অপরজন বলতে লাগল,
‘ জি স্যার। ইতোমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছি।’

[– চলবে –]

* রন ইওহার্ডকে কে কথাগুলো বলল?
* লোকগুলো কারা ছিল?
* অজ্ঞাত লোকটি কে?
* কীসের জাহাজ রেডিয়েশনের বাহিরে চলে গেছে?
* রেডিয়েশনের বাহিরে গেল কী করে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here