গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখায়:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
তৃতীয় পর্ব
আট.
রাজপ্রাসাদে বিশ্রাম কক্ষে পরিবার নিয়ে প্রবেশ করে প্রবেশদ্বার আটকে দেন রাজা অরগাড। সময়টা এখন নিজেদের মাঝে আলোচনা করার। বিছানায় বসে যায় রাজা অরগাড এবং মৎস রানি নিয়ানো। তাদের সামনাসামনি একটা কেদারায় বসে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। আলোচনার প্রথম শুরু করলেন অরগাড।
‘ তোমাদের কী মনে হয়? অক্টাইসের কাছে খবর পৌঁছালো কী করে?’
রাজা অরগাডের প্রশ্নের জবাব রাজকুমারী ডায়ানা বলতে আরম্ভ করল,
‘ আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাদেরই মধ্য থেকে কেউ একজন বা একাধিকজন অক্টাইসের সাথে মিশেছে। ‘
রাজকুমারী ডায়ানার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে লাগলেন রানি নিয়ানো,
‘ আমিও মনে মনে এটাই ভাবছিলাম। ‘
রাজকুমারী ডায়ানা আবারও বলতে লাগল,
‘ প্রথমত অক্টাইসের সৈন্যদের এত সাহস হয়ে যায়নি, নিজেদের মৃত্যুর ফাঁদে তারা পা দেবে। এছাড়াও ঘরের শত্রু বিভীষণ। ঘরের শত্রু ছাড়া অক্টাইসের সৈন্যরা এতটা ক্ষমতাবান হতে সক্ষম নয়। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি আমি। আমার চোখের সামনে চারজন সেনা প্রাণ ত্যাগ করেছে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় সমুদ্রের পানি। আমাকে ধরার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সফলতা ছুঁয়েও অসফল হয়েছে। ‘
রাজকুমারী ডায়ানার কথা শুনে চিন্তামগ্ন স্বরে বললেন রাজা অরগাড,
‘ অবস্থা দেখছি তবে বেশ গুরুতর ছিল। এছাড়াও অক্টাইসের সেনাপ্রধান আমাদের কারাগারে বন্ধি। যে কোনো মুহূর্তেই অন্য কিছু ঘটে যেতে পারে। আমাদের আরও চৌকশ থাকতে হবে। আর মাত্র কয়েকদিন। খুব শীঘ্রই রাজ্যাভিষেক হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ানক রাজার। যার বীরত্ব দেখে সমস্ত সমুদ্রের প্রাণীরা তাকে দেবতা মানবে। তার যুদ্ধের কৌশল দেখে শত্রুপক্ষের লোকজন হতবাক হয়ে যাবে। যার ভবিষ্যদ্বাণী আরও ৫৪ বছর আগে করে গিয়েছিলেন রাজা রিওডাম। ‘
রাজা অরগাডের কথা শেষ হতেই রাজকুমারী ডায়ানা বলতে লাগল,
‘ তবে অক্টাইসের সৈন্যরা আমাকে পাকড়াও করার অন্যতম প্রধান কারণ, তাদের সেনাপ্রধানের মুক্তির উদ্দেশ্যে নয়তো?’
সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলেন রাজা অরগাড,
‘ আমারও তাই মনে হচ্ছে। তবে আমাদের আরও সাবধান হওয়া জরুরি। তবে এবার বলো, যে কাজের জন্য গিয়েছিলে, তা কি সফল হয়েছ?’
একটি মুচকি হাসি দিয়ে বলল ডায়ানা,
‘ যেহেতু আমি গিয়েছি, সেহেতু অসফলের প্রশ্ন আসছে না।’
আলোচনা পর্ব শেষ করে বিশ্রাম কক্ষ ত্যাগ করল রাজকুমারী ডায়ানা। পা বাড়াল নিজ কক্ষে যাবার জন্য। তবে মাছেদের মতো লেজে ভর করে নয়, মানুষের মত পা দিয়ে হেঁটে হেঁটেই।
নয়.
গল্প এবং কল্পনার জগত দুটোই এক বলা যায়। অবশ্য গল্প আসেই কল্পনার জগত থেকে। বিছানা ত্যাগ করে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে দৌড় দেয় রন ইওহার্ড। বাড়িতে আজ সে একা। গতকাল বিকেলে তার বড় ভাই রিবন ইওহার্ড বিজনেস মিটিংয়ের জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েছে। তাদের দুই ভাইয়ের জুরি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার উপযুক্ত। চেহারায় তাদের বদল হলেও আত্মার সম্পর্ক সম্ভবত একই। এক ভাইয়ের জন্য অন্য ভাই নিজের জান কোরবান করে দিতে সদা প্রস্তুত। তাদের নিজেদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে যে, বড়ভাই তাদের নিজেদের অফিস চালাবে। আর রন ইওহার্ড বাড়ির সব কাজ করবে। তাদের পিতামাতা উভয়ই দীর্ঘ ২০ বছর আগে একটি ট্যুরে বোর্ড দিয়ে সমুদ্রবিলাস করতে যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সেখানেই তাদের মৃত্যু ঘটে। অবশ্য মৃত্যুটা অস্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কী ঘটেছিল সেখানে? সেটা আজও রহস্য রয়ে গেছে।
ফরেনসিক তদন্তের ফলাফলের মাধ্যমে জানা যায়, তাদের দুজনের দেহের ভেতর দিকটা ঝলসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেহের ভেতরটা ঝলসে গেল কীভাবে? এছাড়া বোর্ড চালকের দেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্তের পর সবাই ভেবে নিয়েছে কোনোভাবে সে পানিতে পড়ে যায়। এবং ডুবে গিয়ে মারা যায়। অথবা তার সিথেও এমন দশা হয়েছিল। কিন্তু তার লাশটা আর ফিরে পাওয়া যায়নি।
রন ইওহার্ড ফ্রেশ হয়ে এসে নিচ তলায় চলে যায়। ফ্রিজ থেকে জেলির কৌটা এবং রুটির প্যাকেট বের করে টেবিলে রাখে। প্যাকেট থেকে চারটি রুটি বের করে ওভেনে রেখে দেয়। ক্ষণিক সময় পর বের করে জেলি লাগায়। চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায় দরজার সামনে। দরজার নিচে পড়ে থাকা পেপারটি হাতে তুলে নিয়ে, দ্রুত পায়ে হেঁটে পুনরায় চেয়ারে বসে যায়। জেলি লাগানো রুটি খেতে খেতে পেপারের দিকে দৃষ্টিপাত করে। পেপারের প্রথম পৃষ্ঠাতেই কালো কালির মোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে,
দশ.
” গত কাল তিনটার সময় সমুদ্র রিসার্চের কাজে নিয়োজিত দুটি জাহাজ রেডিয়েশন থেকে উধাও হয়ে যায়। আজ সারাদিন খুঁজেও আশানুরূপ কিছুই পাওয়া যায়নি। ”
‘ স্যার প্রাইভেট জেট এবং হেলিকপ্টার দুটোই প্রস্তুত আছে। আপনি চলুন। ‘ লম্বাটে কালো আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরিহিত লোকটির উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন তার সেক্রেটারি। লোকটি কোনোদিকে না দেখে হাঁটতে লাগল। তিন তলার একটি রুম থেকে কয়েকজন গার্ড এবং সাথে সেক্রেটারিকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। হাঁটতে থাকে বারান্দায়। বারান্দার কর্নারে আসতেই দেখা মিলল একটি লিফটের। বন্দুকধারী চারজন গার্ড তার সামনে ও চারজন গার্ড তার পেছনে এবং সেক্রেটারি তার পাশে হাঁটতে লাগল। লিফটের কাছে এসেই থেমে গেল সামনে থাকা গার্ডসগুলো। কালো আলখাল্লা পরিহিত লোকটি ইতোমধ্যে মাথায় কালো একটি হ্যাট পরিধান করে আছেন। একজন গার্ড লিফটের বাটনে চাপ প্রয়োগ করে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই লিফটের দরজা খুলে যায়। দরজা খুলতেই লিফটের ভেতরে দিকটা ফুটে ওঠে। বেশ বড়সড় একটি লিফট। ভেতরে কম করে হলেও ২০ জন দাঁড়ানো সম্ভব। লিফটে চারজন গার্ড চারকোণা দখলে নিয়ে নেয়। লোকটি লিফটের মাঝে দাঁড়ায়। তার পাশাপাশি স্থানে দাঁড়ায় তার সেক্রেটারি। বাকি চারজন গার্ড চারদিকে দাঁড়িয়ে যায়। সেক্রেটারি লিফটের ভেতরে থাকা সুইচগুলোর মধ্যে সবার উপরের সুইচে চাপ প্রয়োগ করে। একটি ঝাঁকুনি দিয়ে লিফট উপর দিকে চলতে লাগল। কয়েক সেকেন্ড পরেই মৃদু একটা শব্দ তুলে লিফটের দরজা খুলে যায়। চারজন গার্ড দৌড়ে লিফট থেকে বেরিয়ে লোকটির আগে দাঁড়িয়ে যায়। লোকটি লিফট থেকে বের হতেই তার পিছুপিছু তার সেক্রেটারি বের হয়। তাদের দুজনের পেছনে বাকি চারজন গার্ড বের হয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে। ছাদে উঠতে তারা দেখতে পায়, একটি হেলিকপ্টার রয়েছে। যার পাখা ঘূর্ণনরত অবস্থায়। হেলিকপ্টারের পাখায় সৃষ্ট বাতাসের ঝাপটা খুব কমও নয় আবার খুব বেশিও নয়। এর মাঝে দ্রুত পায়ে হেঁটে গার্ড চারজন হেলিকপ্টারের ভেতরে আগে প্রবেশ করে। এরপরই প্রবেশ করে কালো আলখাল্লা ও হেট পরিহিত লম্বাটে লোকটি। তার পর পরই ভেতরে প্রবেশ করে বাকি চারজন গার্ড। লোকটির সেক্রেটারি হেলিকপ্টারের পাইলটের পাশের সিটে বসেছে। পাইলট হেলিকপ্টার উড়ান দিয়ে চলতে লাগল। গতিপথ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
কয়েক মিনিটের মাঝেই হেলিকপ্টারটি সফলভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টেক অফ করতে সক্ষম হয়। হেলিকপ্টার থেকে প্রথমে বের হয় পেছনের চারজন গার্ড। ইতোমধ্যেই সেক্রেটারি হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে গেছে। তারপর পরই বের হয় কালো আলখাল্লা পরিহিত লোকটি। তার পেছনে বেরিয়ে আসে সামনে থাকা বাকি চারজন গার্ড। সামান্য দূরেই একটি রানওয়ে। উড্ডয়নের জন্য সেখানে রয়েছে একটি প্রাইভেট জেট বিমান। হেলিকপ্টার থেকে নেমে প্রাইভেট জেটের উদ্দেশ্য করে হাঁটতে লাগল তারা। বাকি রানওয়েগুলো খালি, তবে স্টেশনে কয়েকটি বড় বিমান রয়েছে। কিন্তু সেদিকে কেউ ধ্যান না দিয়ে প্রাইভেট জেটের কাছে এসে উপস্থিত হয়। লোকটি অবিলম্বেই বিমানের ভেতরে প্রবেশ করে। বেশ বড়সড় একটি কেবিন রয়েছে বিমানে। কেবিনে থাকা ভি.আই.পি সিটে বসে যায় লোকটি। তার সেক্রেটারি তার পাশাপাশি অবস্থানেই বসেছে। লোকটির আগে চারজন গার্ড চার সিটে বসে আছে, এবং বাকি চারজন গার্ড পেছনের চার সিটে বসে আছে। পাইলট স্থান দখল করেছে দুজন পাইলট। এছাড়াও বিমানে রয়েছে আরও দুজন কেবিন ক্রু। বন্দুকধারী সকল গার্ডসগুলোর হাতে একটি করে বিশ্বের উন্নত এবং ভয়ানক রাইফেল রয়েছে। যা লোকটির প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহৃত। পাইলট বিমান উড্ডয়ন করার জন্য প্রস্তুত। ইঞ্জিন ইতোমধ্যেই চালু হয়ে গেছে। রানওয়ে দিয়ে চলতে আরম্ভ করল প্রাইভেট জেট। শত মিটার চলার পূর্বেই বিমানটি শূন্যে ভাসতে সক্ষম। চলতে লাগল আটলান্টিক মহাসাগরের উদ্দেশ্যে।
এগারো.
‘ সেনাপতি লিওজকে যেয়ে বলো, অক্টাইস তাকে ডেকেছে। ‘ গম্ভীর কণ্ঠে আট বাহু বিশিষ্ট দানবীয় অক্টোপাস রাজা অক্টাইস একজন প্রহরী হাঙরকে ডেকে বললেন কথাটি। হাঙরটি অবিলম্বেই স্থান ত্যাগ করে সেনাপতি লিওজের খোঁজে বেরিয়ে যায়। কিছু সময় বাদে প্রহরী হাঙরটি সেনাপতি লিওজের সামনে উপস্থিত হয়। মস্ত বড় একটি দেহ তার। বেশ বড়সড় একটি হাঙর।
কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে প্রহরী হাঙরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন সেনাপতি লিওজ।
‘ হঠাৎ কী মনে করে আমার কাছে?’
উত্তরে প্রহরী বলতে লাগল,
‘ মহামান্য অক্টাইস আপনাকে যাবার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। ‘
গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলেন সেনাপতি লিওজ,
‘ তুমি যাও, আমি আসছি।’
প্রহরী দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। কিছু সময় বাদেই রাজা অক্টাইসের সামনে উপস্থিত হন সেনাপতি লিওজ।তৎক্ষণাৎ সেনাপতি রাজা অক্টাইসের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন,
‘ প্রণাম মহারাজ। হঠাৎ করে আমাকে ডেকে পাঠানোর কারণ?’
জবাবে রাজা অক্টাইস বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ গতকালের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত। যে কোনো মূল্যেই আমার পূর্বের সেনাপতি করডালকে মৎস রাজ অরগাডের কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। ‘
‘ তবে কি সেখানে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন?’ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন সেনাপতি লিওজ।
‘ এভাবে হামলা চালিয়ে বিজয়ী হওয়া খুব কঠিন হবে। এছাড়াও করডালকে ছাড়া কোনোভাবেই যুদ্ধ করা যাবে না। ‘ ভাবুক হয়ে বললেন রাজা অক্টাইস।
‘ তবে কী করতে চাচ্ছেন?’ পুনরায় ভাবনা চিত্তে প্রশ্ন করলেন সেনাপতি লিওজ।
‘ কোনোভাবে করডালকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। ‘ গম্ভীর স্বরে বললেন রাজা অক্টাইস।
‘ যথা আজ্ঞা মহারাজ। ‘ কুর্নিশ করে রাজা অক্টাইসের কক্ষ ত্যাগ করলেন সেনাপতি করডাল।
‘ আপনি মূলত কী করতে চাচ্ছেন? ‘ দুজন লোক একজন অজ্ঞাত লোকের সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল। অজ্ঞাত লোকটির চেহারা তেমন বুঝা যাচ্ছে না। তবে লোকটির দেহের গড়ন মোটামুটি বেশ ভালো। এছাড়াও পরিধান করা আছে কোর্ট-টাই।
‘ তোমাকে যেই ছবিটা দিয়েছি, সেই ছবিতে থাকা ছেলেটির মৃত্যু। আর মারতে পারলে উপহার স্বরূপ পাবে দুই কোটি টাকা। ‘ গম্ভীর স্বরে অজ্ঞাত লোকটি বলল।
‘ কাজের হালফ পেমেন্ট আগে করতে হয়। এছাড়া আমরা কাজ করি না। ‘ উপস্থিত দুজনের মাঝে অপরজন বলল কথাটি।
‘ আচ্ছা এখন এক কোটি ক্যাশ আর কাজ শেষ হবার পরে আরেক কোটি। ‘ একটি ব্রিফকেস এগিয়ে দিয়ে বললেন অজ্ঞাত লোকটি।
লোক দুটি হাতের বুড়ো আঙুল উঁচু করে বলল,
‘ ডিল ডান। ‘
[– চলবে –]
• কালো আলখাল্লা পরিহিত লোকটি আটলান্টিক মহাসাগরে কেন যাচ্ছে?
• কার ছবি নিয়ে মারতে বলার অর্ডার নেওয়া হচ্ছে?
• রন ইওহার্ড পত্রিকার কাগজ দেখে কী করবে?