গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখায়:- যাবেদ খাঁন আবু বকর চতুর্থ পর্ব

0
137

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখায়:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
চতুর্থ পর্ব

বারো.
রাজকুমারী ডায়ানা তার কক্ষে প্রবেশ করেই দ্বারটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। দ্বারের বাইরে যদিও দুজন প্রহরী রয়েছে। দ্বার ছেড়ে বিছানায় আয়েশ করে বসে যায় সে। সমগ্র প্রাসাদ সমুদ্রের তলদেশে হলেও যেন একটি সুরক্ষা কবচে আবদ্ধ। যার মাঝে পানির অনুপ্রবেশ ঘটতে অসক্ষম। ফলে প্রাসাদ এবং সমগ্র মারমেইড শহরের মাঝে পানির ছোঁয়া নেই। পানির উপস্থিতি শূন্য অথবা নেই এমন নয়। পানির তলদেশে যেহেতু, সেহেতু পানির উপস্থিতি থাকবেই। তবে সুরক্ষা কবচের ভেতরের পানিগুলো স্বাভাবিক পানির চাইতে কিছুটা ভিন্ন। এবং মারমেইড শহরটা দেখতে বেশ সুন্দর। প্রাসাদ থেকে কিছুটা দূরে অগ্রসর হলেই কারাগার। যেখানে বন্ধি আছে অক্টাইসের সেনাপতি করডাল। কারগারটা বাম পাশে অবস্থিত। ডান পাশেই রয়েছে গোল করে ঘেরাও করা একটি বড়সড় ময়দান। যা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই চলে। এখানে প্রহরীরা নিজেদের আত্মরক্ষা এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কিছুদূর অগ্রসর হলেই একটি বাজার পাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের দোকান। বেশিরভাগ দোকানেই বিভিন্ন রকমের মাছ রয়েছে। এবং বেশ কিছু দোকানে ফলমূলও সংগ্রহ করা আছে। বাজারে মোটামুটি একটা ভীড় লেগেই থাকে। কেউ মাছ ক্রয় করছে, তো কেউ-বা ফল। এছাড়া কয়েকটি দোকানে রয়েছে সামুদ্রিক শৈবাল। যা মৎস্য মানব এবং মানবীদের রোজকার খাবার। সবচেয়ে অবাককর বিষয় হচ্ছে, শহরের চারপাশেই পানি। কিন্তু পানিগুলো একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আছে। কারো পানির প্রয়োজন হলে একটি পাত্র নিয়ে সেখান থেকে কলসি ভরাট করে নিয়ে আসে।

এখানের দুনিয়াটাই ভিন্ন। চালচলন মানুষের অনুরূপ হলেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। উপরে চারিদিকে নীল আর নীল। সমুদ্রের পানিগুলো গাড় নীল বর্ণের হওয়ায় মারমেইড শহরটাও যেন নীলাভ বর্ণ ধারণ করেছে। উপরে সূর্যটা এখনও অস্ত যায়নি। তা ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে। বাজার করে যে যার মতো ঘরে ফিরে যাচ্ছে। আবার কেউ পুনরায় বাজারে ফিরে আসছে কাজের উদ্দেশ্যে। এটাই তাদের জীবন-যাত্রার নিয়ম। রাজকুমারী ডায়ানা বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। অলিন্দে যাওয়ার দরজাটা খুলে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রাসাদটা চারতলা হওয়ার দরুন ব্যস্ত নগরীর লোকজনদের দেখা মিলছে খুব সহজেই। ব্যস্ত নগরীর দিকে চেয়ে অতীত স্মৃতি নিয়ে ভাবতে লাগল সে।

সেদিন পূর্ণিমা রাতে মৃত পাঁচজন মানুষের দেহ দুজন প্রহরীকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা ও সেনাপতি রিবিয়ান। আর তাদের সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত চারজন সৈন্য। কিছু সময় রাজকুমারী ডায়ানা চন্দ্র বিলাস করে সেখানেই। ক্ষণিক সময় পর ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হয়। আইল্যান্ড থেকে পানিতে নেমে তলদেশে যাবার কাজে লেগে যায়। মাঝামাঝি অবস্থানে আসতেই চারদিক থেকে বেশ কয়েকটি হাঙর এবং শার্কের দেখা মিলে। যারা তাদের দিকেই ধেয়ে আসছিল। তাদের অবস্থান থেকে মারমেইড শহর খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু তাদের আক্রমণাত্মক গতিবেগ দেখে হতভম্ব হয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা ও সেনাপতি রিবিয়ান। সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন সেনাপতি রিবিয়ান,
‘ সৈন্যরা প্রস্তুত হও। আমরা সংখ্যালঘু হওয়ায় তাদের সাথে পেরে উঠব না। এর চেয়ে এখানে আপাতত যুদ্ধ না করে সামনের দুটো শার্ককে মেরে আমাদের শহরে চলে যাই। ‘
সেনাপতি রিবিয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে বলল রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ হ্যাঁ সেটাই উত্তম। ‘
এই বলে নিচ দিকে থাকা শার্ক দুটোর মাঝে ফাঁকা স্থান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। রাজকুমারী ডায়ানা এবং সেনাপতি মধ্যস্থানে। সামনে ও পেছনে দুজন করে সৈন্য। সামনে থাকা সৈন্য দুজন এগিয়ে আসা দুটো শার্ককে আঘাত করতে যায়। হাতে থাকা বল্লমটি সোজা শার্ক দুটোর মাথায় গেঁথে দেয়। তাদের পাশে থাকা হাঙর দুটো দুজনকে নিমিষেই চিবিয়ে খেয়ে নেয়। মধ্যস্থান ফাঁকা হওয়ায় খুব সহজেই নিজেদের গতিবেগ বৃদ্ধি করে মারমেইড শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের পিছুপিছু আসতে থাকে শার্ক এবং হাঙরের পুরো দলটি। কিন্তু মারমেইড শহরের কাছাকাছি চলে আসতেই দলটি তাদের পিছু করা বন্ধ করে দেয়।

তেরো.
দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা বিমান জার্নি করে উপস্থিত হয় আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি অবস্থানে। যা সাউথ আটলান্টিক নামে পরিচিত। দূরেই একটি লম্বাটে জাহাজ দেখা যাচ্ছে। জাহাজের মধ্যখানে রয়েছে শত মিটারের একটি রানওয়ে। প্রাইভেট জেট বিমানটি রানওয়ের সোজা বরাবর নামতে আরম্ভ করে। পাইলট দুজন অতি দক্ষতার সাথে রানওয়ে দিয়ে জাহাজে সুন্দরভাবে টেক অফ করতে সক্ষম হয়। পরিবেশটা বেশ ঠান্ডা! তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই ৪° সেলসিয়াসে এসে নেমেছে। লম্বাটা লোকটি বিমান যাত্রার মাঝ পথে এসেই নিজের সাধারণ জামাকাপড় খুলে শীতের পোশাক পরিধান করে নিয়েছিলেন। তবে তার দেহে এখনো কালো আলখাল্লা ধরণের পোশাকটি জড়িত।
কিছু সময়ের অতিবাহিত হতেই জাহাজের রানওয়েতে ল্যান্ড হওয়া প্রাইভেট জেট বিমানের চারপাশে হাতে অস্ত্রধারী বেশ কিছু লোক জড় হয়। পাইলট ভেতর থেকে দরজা ওপেন হওয়ার সুইচ চাপ দিলে ধীরে ধীরে দরজাটা উপর থেকে খুলে সিঁড়ি হয়ে নিচে নেমে আসতে লাগে। যা রানওয়ে পর্যন্ত ঠেকেছে। লোকটি বের হবার পূর্বেই হাতে বন্দুককধারী চারজন গার্ড তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। এবং বাকি বন্দুকধারী চারজন গার্ড তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেছনে দাঁড়িয়ে যায়। সামনে থাকা গার্ড চারজন লোকটির আগে আগে বিমান থেকে নেমে তাকে নামার সুবিধা করে দেয়। আলখাল্লা ধরণের পোশাক পরিহিত লোকটি বিমান থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে জাহাজের উপর তৈরিকৃত রানওয়ের উপর দাঁড়াতেই দুজন লোক তার দিকে এগিয়ে আসে। একজন লোক তার সামনে উপস্থিত হয়ে সম্মান প্রাদন করে দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। অতঃপর বলতে লাগেন,
‘ হ্যালো ড. ব্রুস। এখানে আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?’
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি তুলে বলতে লাগলেন আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরিহিত মিস্টার ব্রুস।
‘ হ্যালো মিস্টার ক্যাপ্টেন বার্ক। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বিমানে বসে, শুয়ে ঘুমিয়ে এবং বাহিরের দৃশ্য দেখে এবং উপভোগ করে কাটাতে বেশ ভালোই লেগেছে।’
‘ তাহলে তো মনে হচ্ছে জার্নিটা বেশ ভালোই হয়েছে! ‘ একটি হাসি দিয়ে কথাটি বললেন ক্যাপ্টেন বার্ক। উৎসুক হয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলেন ব্রুস,
‘ কাজ কতদূর চলছে? এখনও জাহাজের কোনো সন্ধান পাওয়া গেছে?’
এরকম উপভোগ্য একটি পরিবেশে এমন প্রশ্নটা একদমই বেমানান। হতাশায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে ক্যাপ্টেন বার্ক বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ দুঃখিত স্যার! আমরা রেডিয়েশনে জাহাজের শেষ উপস্থিতি স্থান থেকে দীর্ঘ ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বহু যন্ত্র নামিয়ে খুঁজেছি। এছাড়াও ছয়টি হেলিকপ্টার দিয়ে হাজারখানেকবার সার্চ করেছি। কিন্তু আমাদের চোখে তেমন কিছুই ধরা দেয়নি। ‘
‘ কী কারণে এমন হয়েছে, তা বলা সম্ভব?’ উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন ব্রুস।
‘ সঠিক উত্তরটি আমার কাছে জানা নেই। ‘ হতাশ কণ্ঠে পুনরায় প্রত্যুত্তর করলেন ক্যাপ্টেন বার্ক।

চৌদ্দ.
কয়েকদিন যাবত ভ্রমণে যাবার চিন্তা করছে রন। কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠছে না। একা বাসায় বোর হওয়ার চেয়ে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা অধিক ভালো কাজ। কিছুক্ষণ ভেবে নির্ধারণ করল আগামীকাল দুদিনের জন্য কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসা যাক। এই ভেবে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে নিয়ে ব্যাগ প্যাক করে রাখে। বেশি রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে এই ভেবে, কাল তাকে ভোরে উঠতে হবে। জাগ্রত হবার জন্য ফোনে সকাল পাঁচটায় ওঠার জন্য ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখে।

ভোর পাঁচটা বাজতেই ফোনে এলার্ম বেজে ওঠে। দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে কোনো কিছু না খেয়েই ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। বাসা থেকে বের হয়ে তালা মেরে দেয়। গ্যারেজে প্রবেশ করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ইঞ্জিন চালু করে পথ চলতে শুরু করে। ইতোমধ্যেই সাড়ে পাঁচটার বেশি বেজে গেছে। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। ব্যস্ত নগরীতে এই ভোরবেলাতেও বেশ লোকজনের দেখা মিলছে তার। কেউ কাজের জন্য দৌড়াচ্ছে। কেউ কোথাও যাবার জন্য দৌড়াচ্ছে। অথবা কেউ দেহ সুস্থ এবং সুঠাম রাখতে মর্নিং ওয়াক করছে। আবার কেউ ডায়াবেটিস কমানোর তাগিদে ছুটছে। যে যার মত ছুটছে নিজেদের গন্তব্যে। গতকাল রাতেই কক্সবাজার হোটেলে রুম বুক করে রাখায় এখন আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না তার।

দীর্ঘ সাড়ে ছয়ঘন্টা কার ড্রাইভিং করে উপস্থিত হয় কক্সবাজার। যে হোটেলে রুম বুক করে রাখা হয়েছিল, সে হোটেলের গ্যারেজেই গাড়ি রেখে ভেতরে প্রবেশ করে সে। সকল ফর্মালিটিস পূর্ণ করতেই রুমের চাবি হাতে পায়। কোনো কিছু না দেখে বুক করা রুমের উদ্দেশ্যে চলতে লাগে। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ব্যাগটা ভেতরে রাখেই দরজাটা লাগিয়ে দেয়। এতক্ষণ গাড়ি চালিয়ে দেহের অবস্থা বারোটা বাজে। নিচে বলে এসেছে খাবার দিয়ে যাওয়ার জন্য। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই ওয়েটার একটি ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল। এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি। সাথে রয়েছে দুটি চিকেন ফ্রাই। পেট পুরে খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সাড়ে বারোটা বাজে। এই সময়ে সমুদ্র তীরে কঠিন রোদ। যা একদম অপছন্দ তার। বিছানায় শুতেই ক্লান্ত দেহে আসাড় নেমে এলো। ভর করল অলসতা। চোখে চেপে বসল ঘুম। হারিয়ে গেল অন্য রাজ্যে। যে রাজ্যে শুধুই শান্তি আর শান্তি।

প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পর ঘুম ভাঙে তার। ঘুম থেকে জাগ্রত হতেই নজরে আসে সমুদ্রেরর উপরে ছেয়ে আছে মৃদু তামাটে সূর্যা ভাব। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। রুম সংলগ্ন ওয়াশরুম হওয়ায় বেগ পোহাতে হয়নি তার। এছাড়া হোটেলের প্রতিটি রুমগুলোতেই এই সুবিধা রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে গোসল সেড়ে বের হয়। ব্যাগ খুলে একটি সুট বের করে গায়ে পরিধান করে নেয়। সাথে হাতে ব্ল্যাক কালারের ওয়াচ। প্রস্তুত হয়ে ডান হাতের তর্জনী আঙুলে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে রুমের দরজা লক করে বেরিয়ে যায়। পার্কিং-এ থাকা গাড়িতে চড়ে বসে। চাবি দিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করে। এবং পার্কিং প্লেস থেকে বেরিয়ে একটু সামান্য গতি বৃদ্ধি করে সমুদ্রপৃষ্ঠ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল সে। লোকজন তেমন একটা নেই। আবারও কমও নেই। যে যার মতো ব্যস্ত আছে। কেউ গোসলে ব্যস্ত। কেউ আরাম করতে ব্যস্ত। কেউ ডাব বিক্রি করতে ব্যস্ত। কেউ পানির বোতল। আবার চারিদিকে একটা মৃদু বাতাস বইছে। আশেপাশে থাকা গাছের পাতাগুলো ভালোই নড়ছে। এতে বুঝা যায় সমুদ্রের বাতাস প্রবাহমান। দূর সমুদ্রে বিশাল বিস্তৃত স্থান নিয়ে কালো কিছু একটা ভেসে উঠতেই তা রনের নজরে আসে। উক্ত স্থানের পানিসহ কালো বর্ণ ধারণ করেছে। তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে সেদিকে দৃষ্টিপাত করে। রন সেদিকে দৃষ্টিপাত করতেই কালো বস্তুটা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এবং কালো হওয়া পানির অংশটুকু নিমিষেই পূর্বের রূপ নেয়। কিঞ্চিৎ অবাক হয় সে। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে গাড়ি ছুটতে থাকে। তার সূচনা স্থান থেকে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে। গাড়ি চলতি অবস্থাতেই ঘড়ির দিকে চোখ তুলে তাকায়। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার পথে। গাড়ি ঘুরিয়ে পেছন দিকে আসত লাগল।

সন্ধ্যা প্রায় পড়ে এসেছে। চারদিকে সাদা,লাল,নীল রঙের আলোর বাহার। হোটেল থেকে আধ কিলোমিটারের থেকে একটু দূর পথেই তার অবস্থান। আচমকাই তার ডান পাশ তথা সমুদ্রের একদম উপরিভাগ থেকে একটি ট্রাক তারদিকে এগিয়ে আসছে। প্রথমে খেয়াল না করলেও ট্রাকের উপস্থিতি কাছাকাছি আসতেই দেখতে পায়। দ্রুত গাড়ির গতিবেগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ট্রাকটির গতিপথ ঘন্টায় ১৬০-১৭৫ কিলোমিটার। যার হেতু দ্রুত ট্রাকটি এসে তার গাড়ির পৃষ্ঠদেশে আঘাত হানে। ছিটকে উড়ে যায় রন ইওহার্ডের বিএমডব্লিউ গাড়িটি। প্রায় ১৫-১৭ মিটার দূরে উড়ে গিয়ে সমুদ্রের মাঝে গাড়িটি পড়ে। সমুদ্রের তীর ঘেষেই গাড়ি চালাচ্ছিল রন ইওহার্ড। যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গাড়িটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হতেই সমুদ্রের বেশ দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। ট্রাকের ভেতরে থাকা লোক দুটো দ্রুত ব্রেক কসে। কিন্তু অধিক গতি থাকায় সাথে সাথে একটা ঝাঁকুনি খেয়ে স্লিপ করে এগিয়ে যেতে থাকে। এতে করে বেশখানিকটা পানির মাঝে নেমে যায়। দ্রুত ট্রাকের ভেতর থেকে নেমে লোক দুটো উক্ত স্থান ত্যাগ করে।

আবদ্ধ গাড়ির ভেতরে রন ইওহার্ড আটকা পড়ে। ওজনের তালে ধীরে ধীরে পানির নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু রন ইওহার্ড ভেবে পাচ্ছে না তীরের মাঝেও এত গভীরতা কী করে সম্ভব? এছাড়াও গাড়ির দরজা খোলার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু ট্রাকের সাথে গাড়ি আড়াআড়িভাবে সংঘর্ষ হওয়ায় দরজা খোলা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই গাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে টাবুটুবু হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে রন ইওহার্ডের দম নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে না। এ ব্যাপারটি সম্পর্কে সে আরও কয়েকবছর আগেই অবগত। তবুও বদ্ধ গাড়ি থেকে বের হয়ে তীরে পৌঁছানো দরকার। দরজা বরাবর কয়কটি লাথি দিতেই দরজা ভেঙে খুলে যায়। অনুভব হচ্ছে রন ইওহার্ডের, কেউ গাড়িটি যেন সমুদ্রের আরও গহীনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিলম্ব না করেই দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে দ্রুত উপরে উঠে আসার চেষ্টা চালায়। ইতোমধ্যেই সে পানির প্রায় শত মিটার নিচে চলে গেছে। আকস্মিকভাবেই একটি কালো প্রাণী এসে তাকে গিলে নেয়। কালো প্রাণীটি খুব স্বাভাবিকভাবেই সমুদ্রের গভীরে যেতে থাকে। একপর্যায়ে প্রাণীটি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।

[– চলবে –]

• তবে কি ড. ব্রুসই গল্পের আসল শত্রু?
• কালো প্রাণীটি পেটেই কি রন ইওহার্ডের মৃত্যু ঘটবে?
• তবে কি কালো প্রণীটিই রন ইওহার্ডকে এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here