#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুৃমা_রাহা
#পর্বঃ২৯
বিছানা ভর্তি খেলনা আর ছোট ছোট জামা কাপড়ের দিকে বিষ্ময়ভরা লেচনে তাকিয়ে আছে তপা। আশ্চর্য হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সবগুলো খেলনা, জামা দুটো করে রয়েছে। একই রঙের কয়েক জোড়া জুতোও উঁকি দিচ্ছে ভীড়ের মাঝে। সিঁদুর লাল রঙা দু’জোড়া জুতো তপা হাতে তুলে নিল। মখমল কাপড়ের তৈরী। লাইটের আলোয় কাপড়ের উপরিভাগ ঝিকিমিকি করছে। আলতো হাতে ধরে সম্মুখে তাকাল তপা। সিজান, পৃথা, প্রান্ত মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে তার পানেই।
তপা পৃথার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কুটনামি করতে শিখেছিস আজকাল?”
পৃথা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। বলল,
“কি কুটনামি করেছি আমি? তুই আমাকে এই অপবাদ দিতে পারিস না।”
তপা শক্ত গলায় বলল,
“আমি তোকে বলেছিলাম সবাই কে টুইন বেবির কথা বলে বেড়াতে? বেয়াদব মহিলা। আর কাকে কাকে জানিয়েছিস? পলক কে বলেছিস?”
পৃথা কিছু বলার আগেই প্রান্ত বলল,
“তুই আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখতে বলেছিলি?”
তপা মিয়িয়ে গেল। নরম গলায় বলল,
“তা নয় ভাইয়া। আমি নিজে বলতে চেয়েছিলাম। সারপ্রাইজড হতো না ব্যাপারটা?”
প্রান্ত হাসল। বলল,
“আমরা যে তোকে সারপ্রাইজ দিলাম ভালো লাগল না? আরও বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোর জন্য। কিছুক্ষণের অপেক্ষা।”
তপা বাচ্চাদের মত বায়না করে বলল,
“কি সারপ্রাইজ ভাইয়া বলো না।”
প্রান্ত ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। তপার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আমার বাচ্চাটার বাচ্চা হবে। তাও আবার দুটো। আমার স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছেরে আপুনি।”
তপা স্নেহাবিষ্ট হয়ে পড়ল। পেটের উপর একহাত ছুঁয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“আমারও স্বপ্নই লাগে ভাইয়া। মনে হয় এই বুঝি ঘুম ভেঙে যাবে। আবার সব অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে। কিন্তু জানো ভাইয়া গত কয়েকমাস ধরে স্বপ্নটা বিরতিহীন ভাবে চলছেই।এ স্বপ্ন আর কখনো ভাঙবার নয় তাই না ভাইয়া?”
প্রান্ত বুঝতে পারল মেয়েটা ইমোশনাল হয়ে পড়ছে। অতীত নিয়ে এখনো হয়তো মনের ভেতর ভ*য় রয়ে গেছে।
“এটাই বাস্তব। এটাই নিয়তি। দুঃখের পর তো সুখের সূর্যোদয় হয়। তোর জীবনে দুঃখের সময়গুলো শেষ হয়ে সুখের সূর্যোদয় হয়ে গেছে। আর কোনো দুঃখ তোকে ছুঁতে পারবে না। আল্লাহ চাইলে এবার থেকে সব ভালই হবে। ইনশাআল্লাহ।”
বেলা বাড়তেই পলকের শুনশান নীরবতায় ঘেরা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটটি পরিণত হলো উৎসবমুখর পরিবেশে। একা থাকা তপার সঙ্গ দিতে এলো আয়েশা, হাজেরা বেগম ও মোর্শেদুল হক। তপার খুশিতে ম*রে যাই যাই অবস্থা। মামাকে পেলে তপা এমনিতেই পৃথিবী পাওয়ার আনন্দ হয়। কিন্তু আজ সেই আনন্দের মাত্রা বেড়ে গেল শতগুণ। কারনটা হাজেরা বেগম। তিনি এসেছেন একজন মা হয়ে। কড়া চোখের মামি হয়ে নয়। যিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত। অনুশোচনায় ভুগছেন বহুদিন ধরে।
হাজেরা বেগম খালি হাতে আসেন নি। নিয়ে এসেছেন তপার প্রিয় কিছু খাবার। তারমধ্যে অন্যতম আমড়ার আচার,ভাজা চিংড়ি শুটকি গুড়ো এবং ঢ্যাপের নাড়ু। তপা নাড়ু দেখে মামির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার জন্য?”
হাজেরা বেগম মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন। তপা বিনা দ্বিধায় মুখে পুরে নিল। তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুলল ঠোঁটের কোণে।
“মামি তুমি এই নাড়ুটা কি যে ভাল বানাও না। ঠিক আগের মতই। ছোটবেলার স্বাদ এখনো মুখে লেগেছিল। এতবছর পর সেই স্বাদ পুনরায় ফিরে পাচ্ছি। কিন্তু এখন তুমি এসব কোথায় পেলে মামি? অনেক বছর ধরে তো বানাও না। হঠাৎ বানালে?”
হাজেরা বেগম কিছু বলার আগেই সিজান বলল,
“তোর জন্য বানিয়েছে। জানিস কত কষ্ট করে ঢ্যাপের চাল যোগাড় করতে হয়েছে আমাকে। আজকাল কি এসব পাওয়া যায়। তারপর ভেজে নাড়ু বানিয়ে নিয়ে এসেছে। জানিস আমাকে একটা ছুঁতে পর্যন্ত দেয় নি।”
তপা অবাক হলো না। হাজেরা বেগমের চোখমুখ বলে দিচ্ছে তিনি অনুতপ্ত নিজের ব্যবহারের জন্য। শুধু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাল মামির পানে।
হাজেরা বেগম বললেন,
“ছোট বেলায় আর খেতে পারতিস কোথায়? আমি তো তোকে দেই নি খেতে। কি করে এত পাষণ্ড ছিলাম আমি। একরত্তি মেয়েটার সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেছি আমি। কেবল নিজের ছেলেকে বসিয়ে বসিয়ে খায়িয়েছি। তোর এত পছন্দের জেনেও তোকে ছুঁতেও দেই নি একটুখানি।”
তপা খাওয়া বন্ধ করে ফেলল। ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। হাজেরা বেগমের হাত ধরে বলল,
“অতীতটা ভুলে যাও না মামি। দেখো বর্তমান কত সুন্দর। কালো অতীত ভুলে না গেলে তো আমরা বাঁচতে পারব না। আর নাড়ুর কথা বলছো তো? তুমি না দিলেও ভাই লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়ে আসতো আমার ঘরে। চুপিচুপি আমিও খেয়ে নিতাম। কখনো লুকিয়ে বৈয়াম থেকে নিয়ে দিতো। আবার কখনো নিজের ভাগ থেকে দিতো।”
হাজেরা বেগম ছেলের দিকে তাকালেন। নিজের নাড়ীছেড়া ধন। তারই পেট থেকে জন্মেছে। অথচ সে কতটা মায়া দিয়ে ভরা। কতটা দায়িত্বশীল ছোট বেলা থেকে। অথচ তিনি? চোখে পর্দা লাগিয়ে বসে ছিলেন। শুধু মামুনের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তার নিজেরও দোষ কিছু কম না।সেটা তিনি বোঝেন। তপা নেহাৎই ভালো মেয়ে। তাই তাকে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে।
তপা পুনরায় বলল,
“আমার এই দুটো ভাই আমার জীবনে মহামূল্যবান মামি। দুজনেই বুক দিয়ে আগলে রেখেছে আমাকে। নয়তো কবেই ভেসে যেতাম।”
“আমি তোমাকে মাত্রারিক্ত ভালবাসি পলক। ঠিক যতটা ভালবাসলে তোমাতে বিলীন হওয়া যায়। ঠিক যতটা ভালবাসলে তোমাতে নিঃশেষ হওয়া যায়।”
মেসেজটা সেন্ড করে তপা চোখ বন্ধ করে রইল।
বাসা ভর্তি আপন মানুষ পেয়ে তপার মনটা আপ্লূত হয়। সেই সাথে ইচ্ছে হলো পলক কে খুব করে ভালবাসার। সেই মানুষটার জন্যই আজ এত ভালবাসা এসে জুটেছে ওর চার আঙুল কপালে। নয়তো কিছুদিন আগেই সে এই সুখগুলোকে কেবল মরিচীকাই ভাবত। পলক আসার পরেই না পাল্টে গেল জীবনের অধ্যায়। ভয়ঙ্কর ম্যাথমেটিক্যাল টার্মের পর এলো প্রেমের রসায়ন।
পলক ফোন হাতেই বসে ছিল। ফোন হাতে তার মনটাও আকুপাকু করছিল একটু কথা বলার তৃষ্ণায়। মেসেজ দেখে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম তার। তার কৃষ্ণময়ী তাকে ভালবাসি বলেছে! সেটাও আবার নাম বলে তুমি সম্বোধনে। অনতিবিলম্বে প্রিয় নাম্বারটা ডায়াল করল। এপার থেকেও তপার বিলম্ব হলো না ফোনকলটা গ্রহণ করতে।
পলক ধীর গলায় বলল,
“মেসেজে কি লিখেছো?”
তপা নমনীয় গলায় বলল,
“আমি তোমাকে ভালবাসি পলক। ঠিক যতটা ভালবাসলে তোমাতে বিলীন হওয়া যায়। ঠিক যতটা ভালবাসলে তোমাতে নিঃশেষ হওয়া যায়।”
পলক চকিতে বলল,
“তুমি সত্যি সত্যি তুমি সম্বোধনে কথা বলছো আমার সাথে?”
“কেন? আপনি কি ভেবেছিলেন সারাজীবন আপনি করে বলব? তুমি বলাতে খারাপ লাগছে?”
পলক ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
“তুমি যাই বলো তাতেই আমি সুখ খুঁজে পাই কৃষ্ণময়ী। যেই মানুষটাই আমার। যার প্রতিটা স্পন্দনে আমি। তার সম্বোধনে কি আসে যায়?তুমি আমার সাথে কথা বললেই হলো। আপনি, তুমি, তুই কোনো ব্যাপার না।”
তপা ঈষৎ হেসে বলল,
“আচ্ছা! তাহলে তুই করেও বলা যায়?”
পলক শব্দ করে হেসে বলল,
“আই ডোন্ট মাইন্ড।”
তপা প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“শুনুন না। আমার না খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে। মাখো মাখো ভালবাসায় মাখামাখি করতে ইচ্ছে করছে।”
পলক মৃদু হেসে বলল,
“হঠাৎ আমার বউ এত রোমান্টিক হয়ে গেল কি করে? আগে তো ধরতে গেলেই পালাতে। কি হয়েছে বলোতো? সবই কি আমার বাচ্চাদের কামাল?”
তপা চমকাল। বাচ্চাদের মানে কি? পলক কি তবে জেনে গেল?
বিস্মিত গলায় বলল,
“বাচ্চাদের মানে কি? বলুন বাচ্চার। বাচ্চার জন্য কিছুই না। আমার আপনার জন্য প্রেম প্রেম পাচ্ছে পলক। একটু জড়িয়ে নিন না প্লিজ। অনেক দিন আপনার ঘ্রাণ পাই না। হৃদয়টা তপ্ত মরুভূমি মনে হচ্ছে।”
পলক মলিন কণ্ঠে বলল,
“কেন পাগল করছো আমাকে? আমি তো পারছি না তোমাকে আস্টেপিস্টে বেঁধে নিতে দু’হাতে। তোমার উষ্ণতা ধারণ করতে পারছি না এই বক্ষঃস্থলে।বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। চিনচিনে ব্যথাও হচ্ছে। আমি কি হার্ট অ্যাটাক করব কৃষ্ণময়ী? কেন এই যন্ত্রণা? এটা কি তোমার বিরহের তীব্র বিষাদময় অনূভুতির সাক্ষ্য?”
তপা মিয়িয়ে গেল। কণ্ঠনালীর গোঁড়ায় এসে আঁটকে রইল না বলা বহু প্রেমালাপন। বক্ষঃস্থলে বয়ে গেল হিম শীতল সমীরণ। অন্তরীক্ষের ন্যায় বিশালতায় ঘেরা হৃদয়টা সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ। শুধু একজনের ভালবাসার অনূভুতির গন্ডিতে।
“চোখ বন্ধ করে কল্পনায় তোমার পলক কে সাজাও তুমি কৃষ্ণময়ী। অনুভব করো। দেখতে পাবে। ভিডিও কলে তো আসবে না। না নিজে দেখবে আর না আমাকে দেখতে দেবে।”
পলকের গম্ভীর কণ্ঠে সহসা কথাগুলো শুনে তপা মৃদু কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলে নিল।
“আপনাকে দেখতে হলে চোখ বন্ধ করতে হয় না। আমার রুমে ঢুকলেই দেখতে পাই আমি।”
পলক ভাবুক হলো। বলল,
“তোমার রুম? তুমি কোথায়? তাজমহলে না?”
তপার কণ্ঠটা এবার কঠিন শোনালো।
“কেন তাজমহল কি আমার নয়? আমি কি অতিথি এখানের? যে মানুষটার পা থেকে মাথা অবধি আমার। যার শরীরের রক্ত, মাংশ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,শিরা-উপশিরা, দমনী, অস্থিমজ্জা সব আমার। তার ফ্ল্যাটের একটা রুমও আমার বলতে পারব না?”
পলক ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
“রাগও কেন? আগে তো কখনো বলো নি এভাবে।তাই হজম করতে পারছি না। একটু তো রয়েসয়ে অ্যাটাক দাও। কি হয়েছে বলো তো তোমার?”
তপা দুদণ্ড জিরিয়ে নিল। গভীর স্বরে বলল,
“আমার তোমাতে পিষ্ট হতে ইচ্ছে করছে তো।”
পলক কণ্ঠে আকুলতা মিশিয়ে বলল,
“আর মাত্র কিছুদিন সোনা। তারপর আর কাছ ছাড়া করব না। একদম হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকিয়ে রাখব।একটু ধৈর্য রাখো। আমি ফিরব। খুব শিগগিরই।”
তপা মৃদুস্বরে বলল,
“সেই সুমধুর দিনের অপেক্ষায়।”
আতিথেয়তা শেষে সবাইকে বিদায় জানালো তপা। কেবল রয়ে গেল হাজেরা বেগম। দুদিন থাকবেন তিনি। প্রান্ত মায়ের সাথে নিজের বাড়ি এবং পৃথা সিজানও মোর্শেদুল হকের সাথে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। হাজেরা বেগম একা তপা কে সঙ্গ দিতে দুদিনের সময় নিয়েছেন। পুনরায় নীরবতায় ছেয়ে গেল ফ্ল্যাটের ভেতরের পরিবেশ। হাজেরা বেগম মাগরিবের নামাযের পর একটু শুয়েছেন। শরীরটা তারও ঠিক নেই। তবুও একা, এতিম মেয়েটির একাকিত্ব ঘুচাতে রয়ে গেলেন। একসময় করা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তিনি এভাবেই। তপার সঙ্গ দিয়ে। তাকে ভাল রেখে।
তেল হাতে বিছানার উপর বসে দেয়ালে টাঙানো বিশালাকৃতির ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে তপা। ছবিটির ব্যক্তি পলক হলেও মালিক তপা। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত পলক সদা হাসোজ্জল মুখে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। ঠোটের সাথে সাথে হাসছে তার চোখও। সামনের কোনো মানুষ অথবা দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে অমায়িক এই হাস্যজ্জল ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছে প্রান্ত। তপা আসার মাস খানেক আগের আলেখ্য এটা। ভার্সিটির কোনো এক অনুষ্ঠানে দুবন্ধু একত্রিত হয়েছিল। তখনই সুযোগ বুঝে এই মোখ্যম কাজটা করে ফেলেছে প্রান্ত।
তপা পলকের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগ্রহ করেছে ছবিটা। পলক সিংগাপুর যাওয়ার কয়েকদিন পর সিজান কে দিয়ে বাঁধিয়ে আনিয়েছে ছবিটা। উদ্দেশ্য সারাক্ষণ চোখের সামনে পলকের মুখাবয়ব উপস্থিত রাখা। উঠতে, বসতে সবসময় পলকের সুশ্রী মুখটা চোখের মণিতে ফুটে ওঠা। শুধু উঠতে বসতে নয়, তপা শুয়ে থেকেও স্পষ্ট দেখতে পায় দেয়ালে সেঁটে দেওয়া ছবিটি। বোধহয় তখন আরও ভালো করে দেখা যায়।
হাজেরা বেগম তপা কে তেল হাতে বসে থাকতে দেখে পাশে বসলেন। মলিন কণ্ঠে শুধালেন
“আমি দিয়ে দেব?”
তপা খুশি হলো ভীষণ। ইচ্ছে করছিল না এখন এই চুলের ঝক্কি সামলাতে। কিন্তু না সামলেও উপায় নেই। এমনিতেই চুলের যত্নে অভাব হচ্ছে। তেলটুকুও না দিলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই নিজের উপর জোর খাটিয়ে হলেও চেষ্টা করে যত্নে রাখার। পলকের পছন্দ যে। শুধু পছন্দ নয়। মারাত্মক পছন্দ। ভালবাসাটাতো চুলের ওপরই প্রথম এসেছিল।
পলকের ভাবনায় মশগুল তপা টেরই পেল না, কখন চুলে তেল দেয়া শেষে লম্বা বিনুনি পাকিয়েছেন হাজেরা বেগম। বুঝতে পারল তখন যখন হাজেরা বেগম চিরুনী দেখিয়ে বললেন,
“চুল পড়ছে তো। যত্ন নিচ্ছিস না? সারাক্ষণ কি এত ভাবিস?”
তপা চকিতে তাকাল। কিছু বলল না। আবার মশগুল হলো আকাশ কুসুম ভাবনায়। যেন তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সবার ভাবনা ভেবে দেওয়ার। বাস্তব ভুলে তাইতো সে মত্ত নিজের ব্যক্তিগত মানুষটার ভাবনায়।
রায়হান তাজওয়ার শারীরিক ভাবে বেশ খানিকটা সুস্থতা অনুভব করছেন আজকাল। মনটাতো তার বরাবরই সুস্থ। যদিও শরীরের অসুস্থতায় মনটাও খানিকটা আক্রান্ত হয়েছিল। তবে তা কেটে গেছে কিছুকাল আগেই। এখন কেবল শারীরিক সুস্থতায় আরেক ধাপ উন্নতি বাকি। তবেই ফিরে যেতে পারবেন নিজ মাতৃভূমিতে। মনটা দেশের জন্য উচাটন করে আজকাল। কিন্তু সে জানেন না তার থেকে অধীর আগ্রহে দিন গুনছে পলক। তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনাতিপাত করছে সে। চাইছে সময়ের চাকা আলোর গতিতে ঘুরিয়ে দিতে। কিন্তু সময় যে নিজ গতিতে চলে। এই অমোঘ সত্যটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আর না আছে তা উপেক্ষা করার ক্ষমতা।
চলবে….