#শবনম (পর্ব ২৪)
সায়লা সুলতানা লাকী
সবুজ একটু আগেই এসে পৌঁছেছে শবনমের অফিসে। ও আসতেই শবনম এগিয়ে গেল ভাইয়ের কাছে। ফিসফিস করে জানাল যে ওর স্যার এখনও যায়নি। তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে। বাহিরে দাঁড়িয়েই ও আজকে হারিয়ে যাওয়ার কথা জানাল। সাথে শহিদের বিষয়টাও বলল। সবটা শুনে সবুজ কিছুক্ষণ চুপ থাকল। অপেক্ষা করল ওর স্যারের চলে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে সবুজ অফিসটা একটু ঘুরে দেখে এল। স্যার চলে যেতেই শবনমকে নিয়ে সবুজ লেগে গেল ডিপার্টমেন্ট গুলো ঘুরে ঘুরে বোনকে পথ চেনানোর কাজে। এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে হলে সহজ পথ কোনটা তা দেখাল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুম গুলি বোঝাটা খুব একটা কষ্ট না কিন্তু এগুলোর ভেতরে ঢুকলে সব একই রকম আগে। আগে কখনও এমন পথঘাট মাড়ায় নাই তাই তাল রাখতে কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারল সবুজ।
বাসায় ফেরার রাস্তায় সবুজ আরও জানল ইংরেজি নিয়ে দুর্বলতার কথাটা । তখনই পড়ল সমস্যায়, চাচার বাসায় সবুজ গিয়ে থাকে না কখনও। কেন থাকে না তা ও জানে না। ওর কাছে মনে হয় চাচার বাসায় থাকার চেয়ে মেস অনেক ভালো জায়গা। কিন্তু বোনের সেফটির কথা চিন্তা করলে আর ওকে মেসে নেওয়াটা সুবিধাজনক বলে হয় না। কিন্তু অন্য কোন উপায়ও এই মুহুর্তে মাথায় এল না কোথায় বসে বোনের এই দুর্বলতা দূর করবে।
শবনম বাসায় ফিরতেই সবুজ চলে যেতে চাইল কিন্তু শবনম যেতে দিল না। চাচি কী বলবে না বলবে এসব নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যথা নেই, যেহেতু চাচা ওদের প্রতি তার দায়িত্ব প্রকাশ করে আনন্দ পায় সেটাকেই ও বড় করে দেখে স্বস্তি পায় শবনম। জীবনে চাচির মত চরিত্র ওর কাছে নতুন না। এসব ও এখন গায়ে মাখে না।
ক্লান্ত শরীরটা একটু শুতে চাইল বিছানা পেয়ে। কিন্তু শবনম শরীরের কথা শুনল না। মুখহাত ধুয়ে একটু চা নাস্তা করে কাগজ কলম নিয়ে বসল সবুজের কাছে ইংরেজি শিখতে। ওর চাচি তা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছেন কিন্তু শবনম সেসব দেখেও না দেখার মতো করে নিজের কাজেই মনোযোগ দিল। রাতে ওর চাচা বাসায় ফেরার পর সবুজকে দেখে খুশি হয়ে বললেন রাতে থেকে যেতে কিন্তু ও থাকল না। শবনমও পরিস্থিতি বুঝে আর জোর করল না।
পরদিন সকালে অফিসের যাওয়ার আগেই শবনম দুপুরের জন্য খাবারের কথাটা তুলল। যদিও চাচির মুখটা সাথে সাথে হাড়ির তলার মতো কালো হয়ে গেল কিন্তু চাচার কথাতে খাবার গুছিয়ে দিতে বাধ্য হলেন। ডিম ভুনা দেখে একটা বেশি নিতে মনটা আকুপাকু করল গনি চাচার জন্য কিন্তু মুখে বলতে সাহস পেল না। নিজের টাকা দিয়ে আনিয়ে নেওয়ারও সাহস হল না। যদি চাচা জানতে পারেন তবে ভয়ংকর কেলেংকারী হবে। আপাতত শবনম কোন কেলেংকারী চায় না তাই চুপচাপ নিজেরটা নিয়েই বের হয়ে যায়।
অফিসে এসে শবনম যথারীতি চেষ্টা করল নিজের ভাষা থেকে আঞ্চলিকতা দূর করতে। সারাদিন যত লোক এল তাদের মুখের দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে থাকল আর তাদের ভাষা আয়ত্ত করতে লাগল। সকালে কাজের চাপ বেশি থাকে বিধায় কেউ কারো সাথে লাগালাগি করতে আসে না। সবাই সবার কাজে বেশি ব্যস্ত থাকে।
দুপুরে খাওয়ার সময় অফিস হঠাৎ করেই বেশ শান্ত হয়ে যায়। শবনম ভেতরে গিয়ে স্যারের খাবারটা তার টেবিলে গুছিয়ে দিয়ে এসে নিজের খাবার নিয়ে বসল। দ্রুত হাত চালিয়ে গপাগপ করে ভাত শেষ করে ডিমটা তুলে গনিচাচার বাটিতে দিয়ে এল খাওয়ার জন্য। শবনমের এই আন্তরিকতায় বুড়ো মানুষটা খুব খুশি হলেন। ভালোই ভালো দিনটা কেটে গেল।
এভাবে কদিন যাওয়ার পর একদিন গনিমিয়া শবনমকে নিয়ে গেল রেশনের কার্ডের কাজে। শবনম এই রেশন সম্পর্কে কিছুই জানত না। আর ওর স্যার বা অন্যরাও এ বিষয়ে কিছু জানায় নাই। চাচার সাথে দৌড়াদৌড়ি করে কার্ডটা রেডি করতে সময় লাগল ঠিকই কিন্তু শবনমের চাচার ভাষ্যে ও একটা কাজের কাজ করেছে এই কার্ডটা করে। বর্তমান দেশের যে অবস্থা তাতে খুব বেশি একটা সুবিধাজনক হবে বলে মনে হয় না সামনের দিনগুলোতে। দেশ স্বাধীন হলেও এর ভেতরকার অরজাগতা যেন শেষ হয় নাই বরং বেড়ে হেছে লাগামহীন ভাবে। সামনে ভয়ংকর দুর্দিন অপেক্ষা করছে এমনটাই তার ভাষ্য যা শুনে শবনম ভয়ে আঁতকে উঠল ।
অফিসের কাজে যখন কোন জটলার মধ্যে পড়ে তখন শবনম টের পায় পুরুষ সহকর্মীরা কারনে অকারনে ওর গায়ে ধাক্কা ধাক্কি করে। প্রথম প্রথম লজ্জায় চেপে গেলেও একদিন অফিসের পাশের এক হোটেল থেকে সিঙ্গাড়া আনতে গিয়ে রীতিমতো লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে গেল শবনম। পেছন থেকে পাশের রুমের করিম বারবার ওর পিঠের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। গরম নিঃশ্বাস ফেলছে অবিরত। একবার দুইবার দেখে তিনবারের সময় চিৎকার করে ধমক দিয়ে উঠল। ঘটনা এখানের এই ধমকে থেমে থাকল না। অফিস করিডোর পর্যন্ত ছড়ালো। সব পুরুষ সহকর্মীরা একসাথে শবনমের উপর চওড়া হল-
“শবনম তুই নতুন আসছোস তাই বইলা আমরা এতদিন চুপ ছিলাম কিন্তু আজকা তুই আমগোর একজনকে হোটেলের সবার সামনে অপমান করছোস। এখন বল কেন করছোস?” গলা চড়াইয়া জিজ্ঞেস করে শহিদ।
“ও আল্লাহ, চোরের মায়ের বড় গলা। করিম ভাই হুদাই আমার পিডের উপরে পড়ে, হের হাত লাগে মুখও লাগছে একবার, কী করিম ভাই লাগছে না কনতো? মাইয়া মাইনষের গায়ে যেমনে মাল্লা হেমনে হাত দিবেন আর মাইয়া মাইনষে হেইডা কইলে আবার আপনেরাই অপমান অইবেন? বাহ ভালোইতো কইছেন? আইচ্ছা হন, মন চাইলে অপমানই হন। আমার লগে এডি করলে আমি এমনই করুম। মান রাখতে চাইলে আমার লগে এডি করবেন না। বুঝলেন?”
“তোর এত্ত বড় সাহস! তুই আমগো লগে এমনে কতা কস। তুই জানোস আমরা কারা? আমগো লগে তালডি বালডি কইরা এই হানে কামে থাকতে পারবি? ”
শবনমও গলা উচাইয়া কিছু বলবে ঠিক তখন খেয়াল করল গনিচাচা দূর থেকে ইশারা করছেন আর কথা না বাড়াইতে। তাই ও নিজেকে সামলিয়ে নিল। তাদের কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কাজে ভিতরে চলে গেল।
কিছু সময় পর আবার বের হয়ে গনি মিয়ার কাছে যেতেই তিনি বললেন
“মাইয়া তোরতো চাকরিডা দরকার, তুইতো আর শখে চাকরি করতে আসোস নাই, তাই কইকি ওগো লগে লাগিস না।ওরা এমনই ওগো সমান সমান হইয়া কোন মাইয়া মানুষ এইহানে কাম করব তা মানতে পারতাছে না। অহন নিত্যি নতুন গেঞ্জাম কইরা স্যারগো কাছে তোর নামে রিপোর্ট দিয়া তোর চাকরি ডিসমিস করনের ফন্দি আঁটছে। তুই ওগো ফান্দে পা দিস না।”
শবনম চুপ করে তার কথাগুলো শুনল আর ভাবল “তাই বইল্যা এডিও সহ্য করন লাগব জীবনে?”
কিন্তু মুখে আর কিছু বলল না। চাচারে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শবনম আবার নিজের জায়গায় ফিরে এল।
এরপর কয়দিন ও চুপচাপই থাকল। শহিদ করিমরা সব এক জোট হয়ে ওরে নিয়ে নানান সময় নানান মশকরা করলেও ও আর কোন জবাব দেয় না। চলতে ফিরতে একটু আধটু ধাক্কা খাওয়া এখন ওর গা সয়ে যেতে লাগল।
এদিকে বাড়িতে ছন্দা আর স্বপ্না আবার সেই মা হীন জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করল। প্রথম দিনই যতটুকু মায়ের জন্য কেঁদেছিল এরপর আর কাঁদেনি। মা ছাড়া থাকলে বরং ছন্দার দায়িত্বটা বেড়ে যায়। নিজের কাজের সাথে সাথে স্বপ্নারটাও করে। জবার স্কুলের বই সিলেট চক নিয়ে মাঝে মাঝে আঁকাআঁকিও করে। ছন্দার আগ্রহ দেখে ওর নানা গঞ্জে থেকে একটা আদর্শলিপি এনে দেয় ওর পড়ার জন্য। নিজের বই পেয়ে ছন্দার আনন্দ যেন আরও বেড়ে যায়।
ইদানিং শিউলীর মেজাজ আরও বেশি রুক্ষ হয়ে উঠে। কেনজানি নিজের মেয়েকেই সহ্য করতে পারে না তার উপর স্বপ্না ছন্দার কোন তান্নাই ও নিতে চায় না। শবনমের মা বাড়ি থেকে কয়েকজন সাহায্যকারী ছাটাই দিয়েছেন। যা আয় হয় তা দিয়ে এখন আর যেন তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেন না। বাড়িতে খাওয়ার যা রসদ আছে তা দিয়ে নিজেদের চলাই যেন দুর্সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লোকবল কমে যাওয়ায় এখন আর একেবারে গা ছেড়ে পড়ে থাকতে পারে না শিউলী, অন্তত নিজের মেয়ের কাজগুলোও করতে হয়, তখন যদি স্বপ্নারটাও করতে বলা হয় তখনই লাগাম ছেড়ে বাচ্চাগুলোকে গালাগালি করতে শুরু করে “অভাগার গোষ্ঠী”, “কপালপোড়া মাইয়ার দল” এসব বলা যেন ওর জন্য কেন ব্যাপারই না।
শবনমের মা শুনেও না শোনার মতো করেই চলে যায়, এতসব ধরলে আর তার মাথা ঠিক রাখা সহজ হয় না এখন। সারাদিন গৃহস্থালির কাজে ছোটাছুটির পাশাপাশি দুই মেয়ের ভারবহন করা অতটা শক্তি সাহস বুঝি এখন আর তার নাই।
এমনই একদিন শিউলীর কোল জুড়ে আসে জমজ দুই ছেলে সন্তান। হঠাৎ ওদের আগমনে কেমন জানি একছটা আনন্দ খেলে গেল সৈয়দ বাড়ির উঠানে। জমজ ছেলেদের দেখতে সেদিন গ্রামবাসীও একে একে এসে ভীড় করল। শবনমের মা সেদিন গাইয়ের দুধে ঝোলাগুড় ঢেলে বিন্নি ধানের ক্ষীর রান্না করল। পুরো বাড়ি রসের ক্ষীরের মৌ মৌ ঘ্রানে মেতে উঠল। ছন্দা আর স্বপ্নার মনেও যেন সেদিন আনন্দের রং লাগল।
গঞ্জে জমজ ছেলে হওয়ার খবরটা পৌঁছাতেই দেখা গেল পরদিন সকালেই শিউলীর শ্বশুর শাশুড়ি কয়েক হাড়ি মিষ্টি নিয়ে সাথে নিশিকে নিয়ে হাজির হলেন সৈয়দ বাড়িতে। তাদের উপস্থিতিতে শিউলী আনন্দে কেঁদে উঠল মেয়েকে এতদিন পর কাছে পেয়ে। নিশির জন্য ওর ভেতরটায় এতদিন যে হাহাকার ছিল তা যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেল। কি যে এক চাপা কষ্ট বুকে চেপে ছিল মেয়ের জন্য তা বোঝাতে পারেনি কাউকে । বারবার মনে হত, ও বুঝি আর কখনওই নিশিকে কাছে পাবে না। ওর স্বামীর সাথে সাথে বুঝি ও ওর মেয়েকেও হারাল সবসময়ের জন্য। জমজ ছেলের দিকে এখন আর ওর খেয়াল নেই ওর সব আদর আর খেয়াল আটকে রইল নিশিতেই।
সবই ঠিক ছিল শুধু শবনমের মায়ের মনের ক্ষোভটাই ঠিক থাকল না। অতিথি মেহমানের বালাইও মানল না একটা সময়ের পর। কীভাবে যেন তা শিউলীর শ্বশুর শাশুড়ির সামনে ফেটে পড়ল—-
“বিয়াই বিয়াইন আপনারা আসছেন তাতে খুবই খুশি অইছি। আমার আবার মাইয়া ভাগ্য খুবই খারাপ। শুনছেনতো আমার বড় মাইয়ার ভাইগ্যে যে কত কী ঘটল? এত ভালো জামাইডা কেমনে কেমনে অমন অল্প বয়সে মইরা গেলোগা। আর পিছামারা শ্বশুরডা মরন কালে আমার এতিম নাতনীগুলির হক মাইরা গেল। ওগো এক কানাকড়িও দিয়া গেলো না। না গিয়া এই জনমে পার পাইলে কী অইব ওই জমানায় আর পাড় পাওনের সুযোগ নাই। এতিমের হক বইল্যা কতা। গিল্লা খাইতাছে যারা তাগো বেবাকগোই জার্রাজার্রা হিসাব দেওন লাগব।”
“হ হুনছিতো! দুলালের সব সম্পত্তি বলে ওর বাপে ওর সৎভাইগো দিয়া দিছে। কাজটা খানসাব বড়ই অন্যায় করছে বড়ই বেইনসাফী কাজ করছে। আপনের নাতনীগো হকটা বুঝায় দেওন দরকার আছিল”
“আলহামদুলিল্লাহ, বিয়াইন বুঝছেন যহন তহন আপনেরেও একটা কতা কই, আপনেরাও কিন্তু আমগো লগে ভালো কামডা করেন নাই। বেইনসাফী কিন্তু আপনেগোও অইছে। আপনের এমন ভাদাইম্মা পোলাডার লগে আমার মাইয়াডার জীবনডা জুড়ান ঠিক অয় নাই। পোলায় আপনের ঘরে চুরি করছিল তারে আপনে শাস্তি দিবেন কিন্তু তারে আবার আমার ঘরে পাডাইছেন ক্যা আমার ঘরে চুরি করতে? শরমে মইরা যাই, দুলালের মায়ের অত শখের জিনিসগুলা চুরি কইরা ব্যাপারীগো পোলা ভাগছে। এই কতা কেমনে কারে কই? পোয়াতি মাইয়া আমার শরমে গলায় ফাঁস দিতে যায়। এমন পোলারেতো ঘরে আটকাইয়া শায়েস্তা করন দরকার আছিল নাকি বাড়ি বাড়ি চুরি করতে পাডানডা ঠিক অইল কাম?”
“বিয়াইন আইজ আপনের বাড়িতে আমি আইছিলাম বড় মুখ কইরা নাতি দেখতে। আর আপনে আমার মুখে এমনে চুন কালি লেইপ্যা দিলেন?”
“কতাডা ভুল কইলেন৷ আমি লেপি নাই। আপনের পোলায় লেপছে, শুধু আপনেগো মুখে না লগে আমগো মুখেও। অহন এই মুখ আর কাউরে দেহাইতে পারি না। তয় অহন যেইডা পারি হেইডা অইল এই ঘরের নাতি নাতনিগো হকের লেইগ্যা লড়তে পারি। ছন্দাগো মতো যেন ওরাও বঞ্চিত না অয় বাপের কুকর্মের লেইগ্যা। ”
“না বিয়াইন শিউলী আমারে বংশের বাত্তি দিছে, ওরা ছাড়া যে আমার ঘর আন্ধার। ছডিঘর উডলেই আমি শিউলীরে নিয়া যামু আমার বাড়ি। তার আগই ওই কুজাতের ভাগে যা পড়ব তা শিউলীর পোলাপানের লেইগ্যা শিউলীর নাম কইরা দিমু। আপনে এত চিন্তা কইরেন না। এইবার আর ভুল করুম না। ”
শিউলীর শাশুড়ির কথায় শিউলী সহ ওর মায়ের মনেও শান্তি ফিরে এল।
এরই মধ্যে একদিন সবুজ এক পরিত্যক্ত বাড়ির খবর এনে দেয় ওর চাচাকে। চাচাও নিজের কাজ ফেলে বেশ কয়েকদিন লাগিয়ে সেই বাড়ির খোঁজ খবর নেয়। পরবর্তীতে সবুজ বাড়ি গিয়ে ওর বাবাকে নিয়ে আসে বাড়িটা কেনার জন্য।
পরিশেষে সব কিছু ঠিক করে বাড়ি কেনার জন্য যখন সব ঠিক তখন শবনমের চাচা প্রস্তাব দিলেন বাড়িটা সবুজের নামে কিনবে কি না তা ভেবে দেখার জন্য । ও সরকারি চাকরি করে ওর নাম নিয়ে দাঁড়ালে দলিল করতে সুবিধা হবে। ভাইয়ের কথায় এবার শবনমের বাবা তাতে বাঁধ সাধলেন, বললেন এই বাড়ি শবনমের নামেই হবে ওওতো সরকারি চাকরিই করে। এই কথায় সবুজের মনটা একটু খারাপ হল। ও বাড়ির জন্য এত খাটাখাটুনি করল আর বাড়িটা বাবার টাকায় কেনা হবে শবনমের নামে, ছেলে সামনে থাকার পরও মেয়েকে বেশি অধিকার দিয়ে ফেলছে বাবা এই জায়গাতে গিয়ে ও বেশ মনক্ষুন্ন হল। শবনমও বিষয়টা বুঝতে পারল। প্রথম ধাক্কায় ওর মনে হল সম্পত্তি আর সম্পদের জন্য ভাই বোনের সম্পর্ক নষ্ট হইলে জীবনটাই ওর বৃথা। তাই জোর গলাতেই ওর বাবার কথার প্রতিবাদ করল। বলল বাড়িটা ওর বাবার নামেই কেনা হোক।
কিন্তু পরক্ষণেই ওর বাবা বিষয়টা পরিস্কার করে বললেন
“বাড়িডা যদি আমার নামে কিনি তয় এইহানে আমার অন্য পোলাপানেও আইয়া ভাগ বসাইব। আর তোর নামে অইলে এইডা শুধু তরই থাকব আর ছন্দা স্বপ্নার একটা ভবিষ্যৎ অইব। আর শোন এই বাড়ি কিনোনের টেকাও আমার না। এইডা দুলালের গঞ্জের দোকান থেইক্যা পাওয়া টেকা। এর মধ্যে শুধু ওর মাইয়াগোই হক, আর কারো না।”
এই কথার পর আর সবুজের কোন ক্ষোভ থাকল না। শেষে বাড়িটা সৈয়দা শবনম বানুর নামেই রেজিষ্ট্রেশন করা হল।
নতুন বাড়িতে যাওয়ার আগে গ্রাম থেকে শবনমের মা তার দুই নাতনী সহ ঢাকায় এসে হাজির হলেন। সবার চোখে মুখে এক অনাবিল আনন্দ দেখা গেল সেই সময়টাতে।
চলবে