শবনম( পর্ব ২৫) সায়লা সুলতানা লাকী

0
175

#শবনম( পর্ব ২৫)
সায়লা সুলতানা লাকী

দুই কামরার একটা বাড়ি, এক টুকরো উঠান একটু দূরে পাকা পায়খানাঘর তার পাশে হাউজ আর কল, একদম চিপায় দাঁড়িয়ে আছে একটা কাঠাল গাছ এই হল শবনমের নতুন বাড়ি। আশেপাশে এমনই অনেকগুলো বাড়ি। একটা রোডের দুইপাশে সারি বাঁধা বাড়িগুলোকে দেখে শবনমের মা কিছুটা স্বস্তি পেল। কিন্তু পুরোপুরি আনন্দিত হতে পারল না। ওর চাচার বাড়ি থেকে এটা অনেক দূরে। শুধু তাই না, শবনমের অফিসও অনেক দূর। দুই মেয়েকে ছমিরনে মায়ের কাছে দিয়ে কীভাবে নিশ্চিন্তে সারাদিন থাকবে শবনম তাই চিন্তা করছেন তিনি। প্রথম ধাক্কায় তিন ছন্দা আর স্বপ্নাকে এখানে রেখে যেতে রাজি হলেন না। শবনম বা সবুজ কেউই থাকবে না সারাদিন বাসায়, সেখানে ছমিরনের মা শহরের হালচাল বুঝে দুইটা বাচ্চাকে নিয়ে থাকবে তা যেন অস্বাভাবিক কিছু। শবনমও বুঝে বিষয়টা কিন্তু মেয়েদেরকে কাছে পেতেই ওর এত পরিশ্রম, সেই মেয়েদেরকেই যদি ও কাছে না পায় তবে যে ওর সব কষ্টই বৃথা যাবে। মা ঢাকায় যখন এসেছে কিছু দিনতো তাকে এখানে আটকানো যাবে। যদিও বা আগে জায়ের বাড়িতে আসত সুড়ুৎ করে আর ফিরে যেত ফুড়ুৎ করে। এখনতো থাকার জায়গাটা নিজেদের তাহলে আর সেখানে থাকতে সমস্যা কোথায়? মায়ের চলে যাওয়ার আবদার এলেই কী করতে হবে তা আগে থেকেই ভেবে রাখল শবনম।

নতুন ঘরে ঢুকতেই সবুজ তিনটা চকি, একটা মিটসেফ, একটা আলনা আর দুইটা চেয়ার কিনে আনল নিজের পয়সায়। শবনম ওইদিন পুরোটাই ব্যয় করল ঘর সাজাতে গিয়ে। মনের মধ্যে কেমনজানি একটা চাপা আনন্দের জোয়ার ওকে আলাদা শক্তি জোগাতে লাগল এই কাজে। ওর মা’কে কিছুই করতে দিল না। ওর বাবা খুঁজে খুঁজে বাজার বের করে নতুন সংসারের প্রয়োজনীয় রসদ যা লাগবে তা সবই নিয়ে এলেন। যদিও বা শবনমের রেশন রয়ে গেছে ওর চাচার বাসায়। শবনমের মা’ই মানা করলেন ওগুলো ফেরত আনতে। দিনটা জুম্মাবার বলে শবনমের খুব ইচ্ছে হল একটু নতুন বাসায় মিলাদ পড়াতে। এশার নামাজের পর সবুজ জিলাপি আনল সাথে ওর বাবা মসজিদে নামাজ পড়ে আসার সময় হুজুরকে সাথে করে নিয়ে এলেন মিলাদের জন্য। গ্রামের এক বাড়ি মিলাদ হলে শিন্নী বিলাতে গিয়ে যেমন হিমশিম খেতে হয় শহরে সেই সমস্যা নাই। উলটো গুনে গুনে যে কয়জন মানুষ তাতে ঠোঙার উপরেরটুকুই শেষ হল না। শবনমের মা কষ্টে কেঁদে ফেললন কারন পাড়াপ্রতিবেশিরা কেউ মিলাদ পড়ার শব্দ পেয়েও কেন এই বাড়িতে এল না তাই। পরে সবুজ বুঝাল যে এটা শহর, এখানে না ডাকলে কেউ কারো বাসায় আসে না। পরবর্তীতে কিনে আনা শিন্নী বাড়ি বাড়ি বয়ে গিয়ে দিয়ে এল আর পরিচিত হয়ে এল শবনম নিজেই ওর মেয়েদের সাথে নিয়ে। মেয়েদের সাথে নিয়ে খালি পথে হাটতেও যে এতটা আনন্দ লাগে তা আজ না বের হলে হয়ত শবনম কোন দিনও জানত না। আজ যে কী হয়েছে ওর ও বুঝতে পারছে না। বারবার ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বারবার শুধু দুলালের কথা মনে পড়ছে। বাড়ি ফেরার পথটুকুতে বারবারও মেয়ে দুইটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর মনে মনে বলছিল “ভয় পাইস না মা তোরা আমিই তোগো মা আমিই তোগো বাপ। কোনদিনও তোগো বাপের অভাব পাইতে দিমু না। তোগো বাপ তোগো লগই আছে, কই যাইব তোগো থুইয়া? বান্দাডার দিলতো আমি জানি। তোগোরে বুহুত ভালোবাসে। আছে বান্দায় তোগো লগই আছে, যেমন আমি টের পাই হেয় আমার লগই আছে। অহনও আমারে ছাইড়া যাইতে পারে নাই। যেই কোন সময় আইয়া কইব – বৌ, দৌর খোল, আমি আইছি।”
আঁচলে চোখ মুছে, স্বপ্ন ভাংগার কষ্টটা বড় পুড়ায় ওর অন্তরকে।
“মা কী অইছে আপনের? আপনে কান্দেন ক্যা?” অবুঝ ছন্দার কথায় স্থির করে নিজের উতলা মনকে, আবার পা চালায় নিজের নতুন ঠিকানায় ফেরার জন্য।

ভোর হতেই শবনমের মা চুলায় আগুন ধরায়।শবনম দুই মেয়েরে নিয়ে তখনও ঘুমায়। হঠাৎ সবুজের ডাকে তড়াক করে উঠে বসে। মিরপুর থেকে একাতো অফিসের পথ চিনবে না। তাই সবুজ আগে ওকে অফিসে দিয়ে আবার উল্টো পথে এসে নিজের অফিস টাইম মতো ধরবে। আর তাই সময়ের আগেই বের হতে হবে বাসা থেকে। শবনম দ্রুত সকালের কাজ গুছিয়ে নিজে রেডি হয়ে গেল। দুই ভাইবোন গরম ভাত নাকে মুখে খেয়ে বেরিয়ে পড়ল।
ইদানীং একটা জিনিস শবনম খেয়াল করেছে যে এখন আর বাসে চড়লে বমি বমি ভাবটা লাগে না। তবে আরামে ঘুম আসে। আজও সীটে বসে ঘুমিয়ে পড়ল। সবুজের ডাকে উঠে গন্তব্যে নেমে পায়ে হেঁটে অফিসে গেইটে এসে দাঁড়াল। এখনও ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় হাতে আছে অফিসের গেইট খুলতে। সবুজের তাড়ার জন্যই এই সময়টুকু এখানে অপেক্ষা করতে হবে। একবার ভাবল আহা! মেয়ে দুইটার পাশে আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলে কতই না ভালো লাগত। মেয়ে দুইটা যখন বুকে লেগে থাকে তখন মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ বুঝি ওর বুকেই জমা আছে । ওদের দুজনের চুলে ও এখনও দুলালের গন্ধ পায়। চোখটা বন্ধ থাকলে মনেই হয় না যে দুলাল ওদের পাশে শুয়ে নাই। স্বপ্নাকে যদি একবার দুলাল দেখে যেতে পারত তবে নিশ্চয়ই বলত “বৌ দেহো, মাইয়াতো পুরাই আমার মতো অইছে। তুমি বৌ এইবারও বাডে পড়ছো। দুইডার একটাও তোমার মতো অইল না।”
মনের অজান্তেই শবনম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে কোলের উপরে রাখতেই টের পেল গরম ভাতের বাটির অস্তিত্ব । তখনই মনটা খুশি হয়ে গেল। মা মানেই মা। কতটা নিশ্চিন্তে নিজের সব দায়িত্ব মায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে চলে এল। এখন মা আছেন বিধায় দুপুরের খাবারের কথা না বলতেও তিনি সুন্দর মতো গুছিয়ে দিলেন। ঠিকই সারাদিন তার মেয়েদেরকে ভালোমতোই দেখে রাখবেন কিন্তু যখন মা থাকবেন না গ্রামে ফিরে যাবেন তখন কীভাবে সব দিক সামলাবে সে কথাটা চিন্তায় আসতেই শরীর কেঁপে উঠল। আর ভাবতে পারল না। গনি চাচা এসে হাজির। আজ অফিসের কয়েকজনকে নতুন বাড়ির মিলাদের শিন্নী দিবে। গতরাতেই কিছু জিলাপি আলাদা করে রেখে ছিল। সকালে তাড়াহুড়ো করলেও সেই ঠোঙার ব্যাগটা আনতে ভুলেনি। চাচাকে সালাম জানিয়ে তার সাথেই অফিসে ঢুকে গেল।
বেশ কিছুদিন হয়ে যাওয়ায় এখন আর কেউ গায়ে পড়ে রেষারেষি করে না। যে যার কাজ করে। মাঝে মাঝে কাজের দরকারেই শবনম ওদের সাথে কথা বলে এছাড় আর ওদের দিকে ফিরেও তাকায় না। প্রথম প্রথম কিছু জিনিস দেখে ওর অস্থির লেগেছিল কিন্তু সবুজের বোঝানোতে পরে নিজেকে শান্ত করেছে। জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা যায় না। তাই এখন ওসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করে। একদিন ওর চোখের সামনেই শহিদ এক লোকের হাত থেকে টাকা নিল চা-পানি খেতে। তাও চুপ থাকল। সবুজের কথামতো এগুলো নাকি সব অফিসেই চলে। এসব বিষয়ে কথা বললে শবনমেরই বিপদ হবে। কে চায় আর নিজের বিপদ ডাকতে। তাই চুপই থাকে।

দিন শেষে বাড়ি ফিরতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। ছোট্ট দরজাটার পাশেই দুই মেয়ে বসে ছিল মায়ের ফেরার অপেক্ষায়। ঠিক কতক্ষণ যাবৎ ওরা বসে ছিল তা আর জিজ্ঞেস করল না, কিন্তু মা’কে দূর থেকে দেখেই দুজন দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল। সারাদিনের সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেল।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে মনটা আরও ভালো হল। আশেপাশের কয়েকজন মহিলা বসে আছেন সামনের উঠোনটায়। শবনমের মা কোন একজনের মাথায় তেল ঢলে দিচ্ছেন। দুজন মহিলা বসে পান চিবোচ্ছেন। শবনমকে দেখে ওর মা তার কাছে ডেকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ওর মায়ের হাসিমাখা মুখটা ওর মনে অনেকখানি শান্তি ঢেলে দিল। ঢাকায় এখানে তার একটা উপযুক্ত সঙ্গীসাথী মিলেগেলে আর বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়া দেখাবে না। এখানে তার মন লাগানোটা ওর জন্যই উপকার। আনমনে একবার ভাবল ও কি ইদানীং খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে? সব কিছুতেই কী নিজের স্বার্থটাই আগে দেখছে?
উত্তরের অপেক্ষা আপাতত করল না। এখন জীবন যুদ্ধে টিকে থাকাটাই মুখ্য অন্য সব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।

মায়ের উপস্থিতিতে বেশ ভালোই কেটে গেল কয়েকটা দিন। এবার শিউলীর শ্বশুরবাড়ি ফেরার সময় হয়ে এসেছে এখন আর মা’কে আটকে রাখার উপায় নেই। বাড়িতে জবা একা। তারা চলে গেলেন।
ইদানীং শবনম আর সবুজের জন্য অপেক্ষা করে না, অফিস ছুটি হতেই একা বাড়ি ফেরে। একদিন সাহস করে সবুজকে মানা করে দিল ওর জন্য আসতে পরে কয়েকজনের সাথে মিলে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াতই লাল রংএর দোতলা বাস পেয়ে গেল যার সামনে মিরপুর লেখা। আর সকালে নিজের অফিসের জন্যও বের হয় একটু দেরি করে। সবুজের মতো অত সকালে ওর যেতে হয় না। ভোর সকালে উঠে রান্নাবান্না সব করে নিজের খাবার নিয়ে অফিসের জন্য বের হয়। আর বাকিটা সময় ছমিরনের মায়ের কাছে থাকে ছন্দা আর স্বপ্না। খুব একটা কষ্ট হয় না ওদের থাকতে। ওরা বাড়ি থেকে বের না হলেও অন্য বাড়ির ছেলে মেয়েরা ওদের সাথে খেলতে চলে আসে। অন্য দের বাড়িতে খালি জায়গা তেমন একটা নাই। সবাই মোটামুটি ওই জায়গায় ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। তাই বাচ্চারা খোলামেলা জায়গা পেয়ে এখানেই খেলে। এতে শবনমেরই সুবিধা, মেয়েরা কান্নাকাটি করে না।
এখন বেলা থাকতে থাকতেই বাড়ি ফেরে।
মাঝে মাঝে বাস থেকে নেমে টুকটাক বাজারও করে সংসারের জন্য। শুক্রবার ছাড়া সবুজ সময় দিতে পারে না। তাই ওকে আর কষ্ট দেয় না টুকটাক যা লাগে নিজেই কেনাকাটা করে।

সবুজের আই এ পাশ করাটা খুব জরুরি ছিল। শুধু মাত্র মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির পদোন্নতি ভালো মিলবে না। ওর স্যাররা প্রায় সময়ই বলেন যেহেতু ওর পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যা নাই তাই ও যেন সময় থাকতেই পড়াশোনার এই সুযোগটা কাজে লাগায়। এই চাকরিতে ছুটিও পাওয়া যাবে পড়াশোনার জন্য।
তাই কয়েকদিন ধরে সবুজ শুধু শবনমের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে পড়াশোনাটা আবার নতুন করে শুরু করবে কি না বলে। শবনম জানে ভাইটা সাথে আছে বলে ও এখন রাতে কতটা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। ভাইয়ের ভালো কিছু হলে তাতে ভাইয়ের সাথে সেই সুফল ও নিজেও পাবে।তাই ভাইকে আশ্বাস দেয় ওর যতটুকু সম্ভব হবে ও সাহায্য করবে সবুজকে ওর পড়া চালানোর জন্য। বোনের আশ্বাস পেয়েই সবুজ বই খাতা কিনে শুরু করল পড়া। ভর্তিতো আগেই হয়েছিল, এখন শুধু পড়াটা মনোযোগ দিয়ে করে পরীক্ষাটা দেওয়া। আপাতত অফিস বন্ধ করল না, পরীক্ষার আগ দিয়ে লম্বা ছুটি নিবে তেমনটাই ঠিক করল।

শহর শহর বলে যে ভয়টা ছিল তা এইখানে নাই। পাড়াপ্রতিবেশিরা সবাই বেশ আন্তরিক। যার কারনে অল্প দিনের মধ্যেই বেশ সখ্যতা গড়ে উঠল সবার মধ্যে। বাড়ি থেকে যখন যা নিয়ে আসে ওর বাবা তা সবই মোটামুটি সবার বাড়িতেই অল্পস্বল্প করে পাঠিয়ে দেয় শবনম। অন্যরাও মাঝে মধ্যে এসে শবনমদের খোঁজ খবর নেয়।
ছন্দা আর স্বপ্নাকে পড়ানোর জন্য পাশের বাসার মেয়েটাকে ঠিক করা হল। ও এবার ক্লাস এইটে পড়ে। সন্ধ্যার পর আসে পড়াতে তখন শবনম ওদের পাশে বসে থাকে। মেয়েরা পড়ে আর ও তা চোখ বুঝে শুনে। মনে মনে বলে মেয়েদেরকে এমনভানে গড়ে তুলবে যাতে ওদের আর ওদের হক মেটে খাওয়ার আফসোস না করতে হয়। জীবনে কখনও যেন পেছনে ফিরে আর তাকাতে না হয়।

সারামাসের রেশন নিয়ে যেদিন বাড়ী ফেরে সেদিনই শুধু সবুজের সাহায্যের দরকার হয়। এছাড়া এখন শবনম নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারে। প্রথম দিকে মাছের বাজারে যেতে খুব অস্বস্তি লাগত, এখন আর লাগে না। ভীড়ের মধ্যে ধাক্কা ধাক্কিকেও এখন আর গায়ে মাখে না। ফেরার পথে বাসে কোন পুরুষ ধাক্কা দিলে এখন আর সাথে সাথে তার উপর ক্ষেপে উঠে না সুবিধা মত হলে নিজে উল্টো দুটো ধাক্কা দিয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখে। মেয়ে বলে যেন কেউ দুর্বল না ভাবে এখন সেই ভাবেই চলতে শিখে গেছে।

অফিসের সহকর্মীরা মাঝে মধ্যেই ওকে কোন এক ফাইল ধরিয়ে দিয়ে বলে এটা এখনই স্যারকে দিয়ে সাইন করিয়ে আনতে। প্রথম প্রথম বিষয়টা তেমন গায়ে মাখতো না, ওরা দেওয়ার পর ও ওর মতে করে রেখে আসত। ওদের কথায় যখন কাজ হল না তখন একদিন গনি চাচা সহ সবাই একত্রে বসে শবনমকে জানাল যে এই স্যারের আগের পিয়নই ভালো ছিল। তার সাথে মিলে কাজ করার একটা আনন্দ ছিল। এখন ও কোন কাজে হাত না বাড়ানোতে অর্থাৎ সাহায্য না করাতে তাদের সবার খুব অসুবিধা হচ্ছে । দেশের এখন যে অবস্থা তাতে সবার উপরি আয় কমে গেছে এই সবই ওর কারনে। ও অফিসিয়াল কাজকর্ম কিছুই বোঝে না।
নিজের উপর এত বড় দায় চাপানো হল যে ও কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না তা নির্ণয় থেকে সিটকে পড়ল মুহুর্তেই। প্রথমদিনেই স্যার বলেছিল আগে যে ফাইল আসবে সেটা থাকবে সবার উপরে, ও সেই ভাবেই রাখে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেভাবে রাখলে আর চাকরি বাঁচাতে পারবে না। ওদের সবার সুরে সুর না মিলাতে পারলে এখানে টিকা মুশকিল হবে তাই জানিয়ে দিল এখন থেকে ওরা যা বলবে ও তাই করবে।

বাড়ি ফিরে যখন সবটা সবুজকে বলল তখন সবুজও বলল এভাবেই না কি চলছে এখন সব অফিস। সব ক্ষেত্রেই এখন অনিয়ম চলছে ও একা এর বিপরীতে চলতে চাইলে বিপদে পড়বে। একা কিছুই করা সম্ভব না। শবনম বুঝল ওর এখানে কিছুই করার নাই। সব নিয়ম গুলোই এখন অনিয়ম হয়ে যাচ্ছে, এই ধারায় পরিবর্তন আনা ওর ক্ষমতার বাইরে।

হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে চিঠি এল। জবার কাঁচা হাতের লেখা। চিঠিটা পড়ে শবনমের চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারল না। গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুন। চিঠিটা যেদিন লিখেছিল তার আগের দিন পরিমল কাকা শবনমের সখি সাধনা রানীর দাদা পরলোগমন করেছেন না খেয়ে থাকতে থাকতে। বাড়ির যে সব কামলা গোমস্তাদের ওর মা বাদ দিয়েছিলেন তারা এখন প্রতিদিনই কাজের জন্য খাবারের জন্য বাড়িতে এসে বসে থাকে। তাদের অবস্থা দেখলে না কি বড় মায়া লাগে জবার। গ্রামে খাবারের বড় হাহাকার চলছে। এসব জেনে শবনম আর স্থির থাকতে পারল না অফিস থেকে দুই ভাইবোন ছুটি নিয়ে ঘরের মজুদ রসদের সাথে নতুন মাসের রেশন যোগ করে রওয়ানা হল গ্রামের উদ্দেশ্যে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here