কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড #পর্বঃ৪৪

0
434

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
#পর্বঃ৪৪
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন

মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে।সকাল সকাল ধরণীর বুকে বর্ষণ শুরু হয়েছে। অধরা আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলো। হালকা শীতের মধ্যেও ওর গরম লাগছে। ঘেমেঘেটে একাকার অবস্থা। কম্বলসহ জুবায়ের ওকে ঝাপটে ধরে রেখেছিলো। অধরা বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলল। বহু কষ্টে পাহাড় সমান ভারি লোকটাকে সরাতে পেরে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। গতকাল মারিয়ার বিষয়ে তেমন কিছু শোনা হয়নি। লোকটা ওকে বাচ্চাদের মতো ছেলে ভোলানো কি সব বলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে যেটা অধরার একদম পছন্দ হয়নি। দুমদাম কাজকর্ম করে ফেঁসে যাওয়া জুবায়েরের জন্মগত ত্রুটি যা হঠাৎ পরিবর্তন হবে না। অধরা কথাটা ভেবে বিছানা থেকে নেমে আসলো। বাইরে এখনো আঁধার কাটেনি। বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। বাইরে গিয়ে কাজ নেই ভেবে ও ফ্রেস হয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। এখান থেকে বাড়ির পেছনের দিকটা নজরে রাখা যায়। পেছনে দিকে ঘন জঙ্গল যেটা দিনের বেলাতেও কেমন অন্ধকার থাকে। অধরা সেদিকে তাঁকিয়ে সময়টা উপভোগ করছিলো হঠাৎ সবুজ রঙের তাতের শাড়ির আচলে ওর দৃষ্টি আটকে গেলো। অধরার বাংলাদেশ থাকতে শাড়ির বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। ডালিয়া হক শাড়ি কিনতে ওকে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখানে হঠাৎ কোনো বাঙ্গালী নারীর আগমন বিষয়টা ওর কেমন অদ্ভুত লাগছে। অধরা অপেক্ষা করলো না। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে ঘরে বসে থাকাটা ওর পক্ষে সম্ভব না।তাই দ্রুত ভেতরে এসে ছাতা হাতে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো। যখন ও পেছনে সিঁড়িতে পা রাখলো ঠিক তখনই বুঝলো মেয়েটা অলরেডি জঙ্গলের রাস্তা ধরে নিয়েছে। অধরা প্রায় দৌড়ে গেলো। তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে পায়ে জুতা পরা হয়নি। পা ফেলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। গোড়ালী পাথরের উপরে পড়ছে আর থেতলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। দীর্ঘদিনের অনাভ্যাসের জন্যই এমন হচ্ছে। অধরা সেসব পাত্তা দিচ্ছে না। ও বাড়ির পেছনের বাগান পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালো। বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। বড় বড় ফোঁটার পরিবর্তনে ফিসফিস করে বৃষ্টি হচ্ছে। ডালপালার মধ্যে ছাতা নিয়ে হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। অধরা চটজলদি ছাতা রাস্তার পাশে রেখে দিলো। মেয়েটা ওর থেকে বিশ কদম দূরে আবস্থান করছে। গায়ে টকটকে সবুজ রঙের শাড়ি।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কোমর ছাড়িয়ে গেছে। দুহাত ভর্তি স্বর্ণের চিকোন চুড়ি। পায়ের নূপুরের ছমছম আওয়াজে জঙ্গলটা কেমন রহস্যপূরী হয়ে উঠেছে। জনশূন্য আর অবছা অন্ধকারে গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অধরা ভয় পাচ্ছে না। মনের মধ্যে কৌতূহল কাজ করছে। একবার ভাবলো মেয়েটাকে ডাকবে তারপর ভাবলো না চুপিচুপি দেখে আসবে মেয়েটা কে আর ওর উদ্দেশ্য কি। কিছুদূরে এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ করে কটকট আওয়াজ করে গাছের ডাল ভাঙার শব্দে ও চমকে উঠলো। কাকতলীয়ভাবে পাশের একটা গাছের ডাল ভেঙে ধুপ করে পড়ে গেলো।। কিন্তু ইতিমধ্যে ঝামেলা একটা হয়ে গেলো। ডাল পড়ার শব্দে অধরা অজান্তেই ভয়ে ভয়ে পাশ ফিরে দেখতে গিয়ে সামনের মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলল। এতোটা দূরে এসেও মেয়েটাকে পাওয়া গেলো না। অধরা চোখ বন্ধ করে পেছনে ঘুরে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালো ঠিক সেই সময় মনে হলো ওর পেছনে কেউ একজন আছে। অধর থমকে গেলো। আড়চোখে আশেপাশে তাঁকিয়ে ভাবলো ধম করে পেছনে ফিরবে। ভয় যে করছে না এমনটা না। অধরা হাতের মুঠো শক্ত করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে। অধরার বুকের মধ্যে ধুকপুক করে উঠলো। দ্রুতগতিতে পেছনে ফিরে চমকে উঠলো। মেয়েটা একদম ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখের উপরে এলোমেলো চুলের অঘাত বিচরণের জন্য মুখটা দেখা যাচ্ছে না। গায়ে ভারি ভারি অলঙ্কার শোভা পাচ্ছে। উজ্জ্বল ফর্সা তকে সবুজ শাড়িটা ফুঁটে উঠেছে। দেখতে চমৎকার বলে মনে হচ্ছে তবে মুখমন্ডল অনাবৃত না করলে সিউর হওয়া মুশকিল। অধরা মিনমিনে কণ্ঠে হালকা আওয়াজ করে বলল,
> কে তুমি? এখানে কি করতে এসেছো?
নির্জনতা কাটিয়ে সেই আওয়াজ জঙ্গল জুড়ে সুর তুললো কিন্তু মেয়েটার কোনো ভাবান্তর হলো না। অধরা অধৈর্য হয়ে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও আবার থমকে গেলো। কারণ মেয়েটার হাতে চকচক করছে ধারা/লো খ/ঞ্জর। অধরা ভয়ে ঢোক গিলল। মেয়েটার উদ্দেশ্যে কি হতে পারে? অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। কণ্ঠ দিয়ে আওয়াজ আসছে না। সামনের মেয়েটা একপা দুপা করে ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুখের চুলগুলো এক সাইডে টেনে নিলো। অধরা বড়বড় চোখ তুলে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখটা চোখের সামনে আসতেই ও আরেক দফায় চমকে উঠলো। কারণ ওর সামনে মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ও এই প্রথমবার মারিয়াকে এমন পোশাকে দেখলো। কখনও ভাবতেও পারেনি মারিয়া এখানে থাকতে পারে। অধরা হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
> তুমি এখানে? মারিয়া তুমি ঠিক আছো? আমাকে চিনতে পেরেছো?
অধরার কথা শুনে মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে রিনরিনে আওয়াজ করে হাসলো। বেশ মিষ্টি লাগলো তবে হাসির পেছনে রয়েছে রহস্য সেটা অধরা ভালো করে বুঝেছে। মারিয়া একটু একটু করে খ/ঞ্জরটা তুলে ধরলো। অধরা বুঝলো এটা দিকে আ/ক্রমণ করলে ওকে বাঁ/চানো যাবে না। তাই ঢোক গিলে পিছিয়ে আসতে লাগলো। মারিয়া এবার আর ধীরগতিতে না তড়িঘড়িক ওর সামনে এসে খ/ঞ্জর চালাতে গেলো ঠিক সেই মূহুর্ত্তে পেছনে থেকে অধরাকে কেউ একজন টেনে নিলো। অধরার শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। ও লোকটার বুকের মধ্যে লুটোপুটি খাচ্ছে। পুরুষালী গায়ের গন্ধটা ওর চেনা আছে তাই দেখার চেষ্টা করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা তুলে তাঁকালো। জুবায়ের বিস্মিত হয়ে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। অধরা পেছনে তাঁকিয়ে দেখলো কাউকে পেলো না।মারিয়া নেই এখানে। মেয়েটা যেমন এসেছিলো তেমনিভাবে চলে গেছে। অধরা জুবায়েরকে ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে ভালো করে দেখলো জনমানবশূন্য কেউ কোথাও নেই। নীরবতা কাটিয়ে জুবায়ের বলে উঠলো,
> জঙ্গলে কি করছো তুমি ? ছাতা ফেলে এসেছো কি হচ্ছে এসব? বাচ্চাদের মতো আচরণ করছো। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা অথচ তোমার হেলদোল নেই।
অধরা ওর প্রশ্নের উত্তর দিলো না। সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে বলল,
> মারিয়াকে কোথায় রেখেছেন আপনি? ওকে লুকিয়ে না রেখে এখানে নিয়ে আসুন। আমার মনে হচ্ছে ওকে বশ করে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কি কাজে জানিনা মন বলছে ভয়ঙ্কর কিছু হচ্ছে।

জুবায়ের ওর কথার মানে বুঝলো না দেখে অধরা ওকে বিস্তারিত বলে দিলো। সেটা শুনে জুবায়ের ভ্রু কুচকে ফেলল। কিছুক্ষণ আগেও ফোন দিয়ে শুনেছে মারিয়া সেখানে আছে তবে এখানে কে ছিল? জুবায়ের আর অপেক্ষা করলো না। অধরার হাত ধরে টানতে টানতে এগিয়ে আসলো। মনের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। ও একটু লেট করলে আজ অধরাকে ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। হয়তো ইচ্ছা করে কেউ অধরাকে মা/রার পরিকল্পনা করেছে। অধরার মধ্যে তেমন ভয় নেই আছে শুধু কৌতূহল। জুবায়ের কিছুদূরে এগিয়ে এসে আবারও থমকে গিয়ে অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো। ওর কাধে থুতনি রেখে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। অধরা ওর পিঠে হাত রেখে বলল,
> আমি ঠিক আছি।ভয় কেনো পাচ্ছেন বুঝতে পারছি না। সুলতান জুবায়ের ফারুকী ভয় পাচ্ছে বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না? ডাইলগ দিতে গিয়ে লজ্জা পাবেন এভাবে ভয় পেলে।
অধরা ওকে ছাড়ানোর জন্য এতোগুলো কথা বলল কিন্তু জুবায়ের ওকে ছাড়লো না। আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> তুমি আর কখনও জঙ্গলে আসবে না। আফ্রিকার হানিমুনের ট্রিপ বাদ। কোনো জঙ্গলে যাওয়া চলবে না। তুমি সব সময় আমার চোখের সামনে থাকবা। কেনো এসেছিলে এখানে? আমাকে একা করে দিতে চাও তাইনা? পনেরো বছর একা রেখে শান্তি হয়নি যে আমাকে শাস্তি দিতে আবারও চক্রান্ত করছো? আমার একটু লেট হলে কি হতো বলো? এখানে আসার কি দরকার ছিল বলবে? আমি রেগেও থাকতে পারিনা তোমার উপরে। নিজের উপরে রাগ হচ্ছে এখন। কেনো এমন করলে বলো?
জুবায়ের ধরা গলাই কথাগুলো বলে থামলো। অধরা চোখ বন্ধ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জুবায়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> আপনি থাকতে আমার কি হবে? পাগলামি বাদ দিয়ে ফিরে চলুন। ভেজা কাপড়ে শীত করছে। ঠান্ডা লাগলে বিষয়টা খুব বাজে হবে।
জুবায়ের ওকে ছেড়ে দিয়ে একবার অধরার পা হতে মাথা পযর্ন্ত পর্যবেক্ষণ করে নিলো। গায়ের সঙ্গে ধুসর রঙের পোশাকটা কেমন লেপ্টে আছে। পায়ে জুতা নেই। ফর্সা পায়ের গোড়ালী লাল হয়ে আছে। জুবায়ের সোজাসুজি ওকে কোলে তুলে হাটা ধরলো। দূর থেকে একজন ওদের দিকে তাকিয়ে বক্র হেসে সরে গেলো।
********************
কহিনুরের জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। যেটুকু দুর্বল ছিল এখন আর নেই। পুরোপুরি সুস্থ আছে। জামসেদ আর সাঈদ ওর সামনে বসে আছে। পাথর কিচেনে নাস্তা তৈরী করছে। এখানে কাজের লোক পাওয়া কঠিন। নিজেদের রান্না নিজেদেরকেই করতে হবে। কহিনুর বালিশে হেলান দিয়ে আছে। গত দুদিনের ঘটনা সাঈদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেছে জামসেদের কাছে। সবটা শুনে ওর হতভম্ভ হয়ে আছে। চন্দ্রের খামখেয়ালীর জন্যই সুলতান পরিবারের উপরে অভিশাপ নেমে এসেছিলো। ভদ্রমহিলা ছিল লোভী। নিজের স্বার্থের জন্য কালো যাদু করে সুলতান বংশকে ক/লঙ্কিত করেছে। ভালোবাসা কখনও কি কালো যাদু দিয়ে অর্জন করা যায়? মেয়েটা ভালোবাসার জন্য না পিতামহের ধনসম্পদ দেখে এহেন কাজটা করেছিলো সেটা প্রমাণিত। জামসেদ চিন্তিত হয়ে বলল,
> চন্দ্র এসব কেনো করছে তুমি জানো নূর? ভদ্রমহিলার কি লাভ হচ্ছে এসব করে? তাছাড়া মৃ/ত্যুর পরে কি আবারও ফিরে আসা যায়?
কহিনুর মলিন হেসে বলল,
> উনাকে ভদ্রমহিলা বলোনা চাচু। যখন সামনে আসবে তখন বুঝবে উনি কেমন। চন্দ্রর মৃ/ত্যু এমনি এমনি হয়নি। সে সুই/সাইড করেছিলো। অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে উনার আত্মা ঘুরছিলো কালো শক্তি সেটাকে নিজেদের আয়ত্তে এনেছে। তাছাড়া আরও একজন উনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করেছে। আমাকে হ/ত্যা করতে বা বশে আনতে পারলে উনার লাভে লাভ। একটা সুন্দর শরীর যেখানে উনি অনায়াসে বসবাস করতে পারবেন সেই জন্যই আমাকে উনার দরকার বুঝলে? উনি হয়তো জানেন না আমার মৃ/ত্যুর পরে আমার শরীর দ্রুত ন/ষ্ট হয়ে যাবে। চোখের নিমিষে গলে পচে ছড়িয়ে যাবে। যায়ে কোনো খারাপ শক্তি যেনো আমাকে ছুঁতে না পারে। যতক্ষণ নিশ্বাস থাকবে ততক্ষণ আমাকে এমন ঝকঝকে লাবণ্যময়ী দেখাবে।
কহিনুর শেষের কথাগুলো তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভাবেই বলল কিন্তু জামসেদের কাছে খুব বিষাদের মনে হলো। ও দ্রুত কহিনুরকে আগলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> এসব বলতে নেই মা। আমি দুঃখ পাচ্ছি বুঝো না কেনো? বাবাদের আগে সন্তানের কিছু হয়নাকি পাগলি? কিছু হবে না। এমন বলো না আর। হার্ট দুর্বল হয়ে আছে এটাক করলে বুঝবা।
কহিনুর হেসে উঠলো। পাশে সাঈদ মন খারাপ করে আছে। ওর নিজের বলতে আম্মি ছিল যাকে হারিয়ে ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। কহিনুর হঠাৎ সাঈদের দিকে ফিরে বলল,
> চাচু তুমি জানো সাঈদের পরিচয় কি? বেচারা আমাদের ঝামেলায় নিজে জড়িয়ে পড়েছে। ওতো কিছুই জানে না।
সাঈদ ভ্রু কুচকে বলল,
> নূর তুমি জানো আমার আম্মি কথায় আছে? তুমি কি কি জানো আমার সম্পর্কে?
কহিনুর জামসেদের কাধে মাথা রেখে বলতে শুরু করলো,
> চাচ্চু কহিনুর রত্নটা কিন্তু একজন জ্বীনের ভস্ম থেকে তৈরী হয়েছিলো। অভিশপ্ত জ্বীনটা একজন ঈমানদার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। ভদ্রলোকের জমজ ছয় মেয়ের মৃ/ত্যুর কারণ ছিলেন উনি। আমাদের বংশে যে জোড়া জোড়া জমজ বেবি হয় এটা ওই পরিবারের জন্য। ভদ্রলোকের দেওয়া অভিশাপ আর জ্বীনের বাদশার শাস্তি পেয়ে ও পাথরে রূপান্তরিত হয়। আর সেই জমজ ছয় বোনের পবিত্র আত্মা থেকে উৎপন্ন শক্তি পাথরের সঙ্গে যুক্ত হয়। বহুকাল ওটা মানুষের ভালো কাজে ব্যবহার হয়েছিলো তবে খারাপ লোকেরা ওটার ভালো সত্তাটাকে নষ্ট করতে অনেক কিছুই করেছে। কালো শক্তি ওটার মাধ্যমে নিজের শক্তি বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। যাইহোক সাঈদের পিতামহ ছিলেন সেই দুষ্ট জ্বিনটা। উনার মৃত্যুর পরে জ্বীন রাজ্যে সাইদের পূর্বপুরুষেরা টিকতে পারেনি। মানুষের মধ্যে পরগাছা হয়ে আছে। ওর আম্মি চেয়েছিলেন অভিশাপ কাটিয়ে নিজেদের স্থানে ফিরে যেতে। তাছাড়া ওর দাদুর শেষ ইচ্ছা ছিল কলঙ্ক মোচন করে সবাইকে নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু হয়নি। সাঈদের বাবা রহস্যজনকভাবে মা/রা গিয়েছিলো। সাঈদকে নিয়ে ওর আম্মি পড়লেন মহা বিপদে। তাছাড়া উনি ভালো হাত গণণা করতে জানতেন। খান পরিবার উনার পেছনে পড়েছিলো। বাঁচা সহজ না। নিজের বিপদ দেখে সাঈদকে ওই বাড়িতে রেখে জান। উনি জানতেন আমি আসবো আর সাঈদকে সাহায্য করবো আর সাঈদ আমাদের বিষয়ে কাজে সাহায্য করবে। কিছু বুঝলে?
কহিনুরের কথা শুনে জামসের ঢোক গিলল। একটা ঘটনার সঙ্গে আরেকটা ঘটনা কিভাবে যুক্ত হয়েছে ভাবা যাচ্ছে না। ওদের কথার মধ্যেই পাথর খাবার নিয়ে হাজির হলো।হাসি মুখে বলল,
> সাঈদের আম্মিকে আমি খুঁজতে সাহায্য করবো। নূর আপাতত গৃহবন্দি। আঙ্কেল আপনার কি মনে হচ্ছে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি ভুল করেছি?
জামসেদ হেসে বলল,
> না ঠিকই বলেছো। এমন বিপদের মধ্যে ওর বাইরে গিয়ে কাজ নেই। ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
কহিনুর ওদের কথা শুনে বক্র হাসলো। নূর মৃ/ত্যুর আগ পযর্ন্ত লড়াই করবে। ওকে আটকে রাখা জাবে না। এবার আঁধারের সামনে ওকে দাঁড়াতে হবে। দেখতে হবে ওর ক/লিজায় কতটুকু সা/হস। আর চন্দ্র সেতো মরিচিকা। পেছন থেকে আঘাত করে ওকে হারিয়ে মজা নিয়েছে। এবার একে একে সকলের সামনে দাঁড়াবে কহিনুর।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here