#অপেক্ষার_বৌ-০২
#Tahmina_Akther
-আজ এসময়ে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে এলে কেন,সিঁথি?
আফরোজ মেয়ের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
সিঁথি ওর মা’কে সবকিছু খুলে বলে। সব ঘটনা জানার পর সিথিঁর বাবা-মা দু’জনই ভয় পেয়েছেন সাথে আল্লাহ তাআ’লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন। উনাদের মেয়েকে এতো বড়ো দূর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
আফরোজ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে, নিচু হয়ে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-তোমার ঘরে যাও। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিবে।কিছুক্ষণ পর আমি এবং তোমার বাবা বিশেষ কাজে একটু শহরের বাইরে যাব। তুমি তোমার ফ্রেন্ড চৈতির কাছে চলে যেও বা ওকে বলো আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসতে।
-কিন্তু, তোমরা তো কখনও আমাকে একা রেখে কোথাও যাও না। তবে, আজ কি এমন কাজ মা, যার জন্য আমাকে একা রেখে তোমাদের যেতে হচ্ছে? কিছুটা অভিমানী কন্ঠে প্রশ্ন করে সিঁথি।
-তোমার খুব ভালো ভবিষ্যতের আশায় আমি আর তোমার বাবা, আজ তোমাকে একা রেখে যেতে বাধ্য হচ্ছি।তুমি অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে। আশা করছি আমার কথাটি বুঝতে পারছো?
সিঁথি একবার ওর বাবার মুখের দিকে তাকালো। মইনুল হোসেন মেয়েকে চোখের ইশারায় হ্যা বোধক শব্দ বলতে বললো ওর মায়ের কাছে। সিথিঁ বিনাবাক্য ওর বাবার কথা মেনে নেয় এবং ওর মা’কে জানায়, সে পারবে।
সিথিঁ চলে যায় ওর ঘরে। মেয়ে চলে যেতেই আফরোজ মইনুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-মেয়ে আমার কথা শুনে হয়তো আমাকে ভয় পায়, তাই না, মইন? কিন্তু, সিথিঁ তোমাকে এত ভালোবাসে কেন, মইন?
স্ত্রীর কথায় রাজ্য জয়ের হাসি মইনুলের মুখে ফুটে উঠলো। স্ত্রীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে মইনুল বলেন,
-কারণ, দুনিয়ার লোকের চেয়ে আমার মেয়ের কথার দাম আমার কাছে বেশি। তুমি মা হয়ে যে দায়িত্ব পালন করতে সেই আমি বাবা হয়ে দায়িত্ব পালন করছি।তাহলে,বুঝে নাও মেয়ে কাকে ভালোবাসবে?
মইনুলের কথার প্রেক্ষিতে জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেছে না আফরোজ। চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে আবার থেমে গিয়ে বললেন,
-ওয়াদা ভঙ্গকারীকে স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা পছন্দ করে না। তুমি না-হয় মেয়ের কাছে সেরা পিতা হলে কিন্তু ওপর ওয়ালার কাছে কি হবে একজনের আমানতের খিয়ানত কারী, সাথে ওয়াদা ভঙ্গকারী। মইন তোমার মেয়ে সিঁথিকে পাওয়ার জন্য আমার অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক অপেক্ষার ফল হচ্ছে সিঁথি। তুমি তোমার মেয়ের মনের কথা, কষ্ট বুঝতে পারো কিন্তু আমি ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হয়তো সেই কারনে সিঁথি বা তোমার আমার উপর অনেক আক্রোশ থেকে যাবে। তোমাদের আক্রোশের শিকার হয়েও অন্তত আমার সিঁথি যেন ভালো থাকে। এখন চলো বের হতে হবে আমাদের। নয়তো,আসার পথে দেরি হয়ে যাবে।
কথাগুলো বলে রান্নাঘরে গিয়ে মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে সিথিঁর ঘরের দিকে এগিয়ে যায় আফরোজ। মইনুল স্ত্রীর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,পুরনো কিছু ওয়াদা পূরণ করতে যেয়ে মেয়ের স্বপ্নকে না নিজ হাতে ভেঙে দিতে হয়?
মেয়েকে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলেন আফরোজ। তারপর, নিজের ঘরে এসে তৈরি হয়ে মইনুলকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে গেলেন ফ্ল্যাট থেকে। সিঁথির সঙ্গে চৈতি আছে, আফরোজ কল করে চৈতির মায়ের কাছে রিকুয়েষ্ট করার পর চৈতিকে চৈতির মা সিথিঁদের ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেয়।
উবার চলে এলে সেই গাড়িতে উঠে পরে আফরোজ এবং মইনুল হোসেন। গাড়িতে বসে নানান রকমের চিন্তা-ভাবনায় মশগুল আফরোজ-মইনুল দম্পতি।
দীর্ঘ একঘন্টার জার্নি শেষে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায় আফরোজ-মইনুল দম্পতি। আফরোজ মাথার হিজাব আরও একটু টেনেটুনে ঠিক করে মইনুলের পিছু পিছু হাঁটছেন। আজ সাত বছর পর এই এলাকার ধুলো পায়ে লেগেছে আফরোজ এবং মইনুলের। একদিকে যেমন ভালোলাগা অন্যদিকে অপরাধীবোধ।তবুও,আজ এইসব কিছুর সম্মুখীন হতে রাজী হয়েছে মইনুল।কারণ আজ উনার পাশে আছে আফরোজ।
বাড়িটা বেশ বড় বলতে অনেক বড়ো। ষাট শতাংশ জায়গার উপর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি।পাশে সুইমিংপুল।বাড়ির বাচ্চাদের খেলার জন্য বিভিন্ন রকমের খেলনা দিয়ে একপাশে পার্কের মতো ব্যবস্থা করা আছে।বাড়ির লোকেরা এই মফস্বল এলাকার প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে একজন।এই বাড়ির কর্তা শেখ আইয়ুব দাদা নাকি এই এলাকার আগেরকার আমলের জমিদার ছিলেন। সেই সুবাদে এই পরিবারের লোকেরা অধিক ধনবান।
আফরোজ মইনুল বাড়ির মূল ফটকের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন প্রহরী এসে জিজ্ঞেস করছে,
-আপনারা কি আইয়ুব স্যারের আত্মীয়?
-জি,জি। আপনারা জানেন কিভাবে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মইনুল।
-আইয়ুব স্যার বলেছেন, কিছু সময়ের মধ্যে নাকি দু’জন নারী-পুরুষ আসবে। তাদের দেখলেই যেন স্ব-সম্মানে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাই। চলুন, আপনাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাই।
দুজনের মধ্যে একজন প্রহরী আফরোজ আর মইনুলকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে চললো।বিশাল বাড়ির এলাহী সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ঢোক গিললেন মইনুল। এতবড়ো বাড়ির ছেলে কি-না সামান্য ব্যাংকে চাকরি করে এমন লোকের মেয়েকে বিয়ে করবে!
হলরুমে প্রবেশ করতেই একজন নারী এসে আফরোজকে জরিয়ে ধরলো।আফরোজ মুচকি হেঁসে জরিয়ে ধরে বললো,
-কেমন আছেন, আপা?
-ভীষণ ভালো আছি, তুই আর মইনুল ভাই কেমন আছিস?আফরোজকে ছেড়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো নারীটি।
-আলহামদুলিল্লাহ, আমরা দু’জন ভালো আছি। ফুপাজান, কোথায় আছে?দেখছি না যে।
-আব্বাজান,আছরের নামাজ আদায় করতে গিয়েছে মসজিদে।মইনুল ভাই আপনি সোফায় বসেন, আফরোজ তুই চল আমরা ভেতরের ঘরে গিয়ে বসি।
কথাটি বলে ওই নারী আফরোজের হাত ধরে
নিচতলার একটি ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে মুখের কাপড় সরিয়ে নারীটি আফরোজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-মইনুল ভাই রাগ করবে না তো?
-আরে না। কি যে বলো! উনি কি জানেন না এই পরিবারের নারীরা কতটা পর্দা করে চলে?বরং, ভালো হয়েছে এখন তোমার সাথে কিছু ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে পারব।
-তা ঠিক। তো বল কি নিয়ে আলাপ করবি?খাটের উপরে বসে প্রশ্ন করে নারীটি।
-কতদিন পুরনো সেই ওয়াদা কে এতদিন মনে রেখেছে, রমু আপা?
প্রশ্নটি শুনে থমকে যায় রমু। আফরোজের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললেন,
-আমাদের কারো মনে ছিল না। কিন্তু….
কথাটি আর সম্পুর্ন করতে পারেনি রমু তার আগে কে এসে দরজায় নক করে বলে,
-আইয়ুব সাহেব মসজিদ থেকে ফিরে এসেছেন। আফরোজ এবং মইনুলের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।
আফরোজ আর রমু মাথার কাপড় সুন্দর করে দিয়ে চেহারা উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলের ড্রইংরুমে।উনারা দেখলেন ড্রইংরুমের মধ্যভাগে পর্দা টেনে দেয়া। হয়তো পর্দার ওপারে নারীরা বসবে। আফরোজ আর রমু গিয়ে পর্দার এপাশে সোফায় গিয়ে বসলেন। তারপর, পর্দার আড়ালে থেকে আফরোজ আইয়ুব সাহেবকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেয়।আইয়ুব সাহেব সালামের উওর দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-তোমরা কাউকে না জানিয়ে চলে এলে ব্যাপারটা কেমন দেখাচ্ছে? ভাগ্যিস, তোমাদের হবু মেয়ের জামাই আমাকে একটু আগে কল করে বললো, তোমরা নাকি আমাদের বাড়িতে আসছো।প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম ওর কথা বিশ্বাস না করলে বরং পরে আমাকে পস্তাতে হবে।
-ও কি করে জানলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি?মানে ওর সাথে তো আমাদের কারো কথা হয়নি! আইয়ূব সাহবের পাশের সোফায় বসে থাকা মইনুল প্রশ্নটি করে বসে।
আইয়ুব সাহেব মইনুলের প্রশ্নের আলোকে মুচকি হেসে বললেন,
-দেশে আসার পর থেকে তোমাদের শহরে গিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে,ওখানে বসবাস করছে। আমাকে হুমকি দিয়েছে যতদিন পর্যন্ত সিঁথি এই বাড়িতে না আসছে ততদিন পর্যন্ত উনি এই বাড়িতে পা রাখবেন না। তাই তো এত তোড়জোড় করে সিঁথির সঙ্গে ওর বিয়ের শুভ কাজটা সেড়ে ফেলতে চাচ্ছি।
-সাতবছর পুরনো সেই ওয়াদা আমরা কেউ মনে রাখিনি। কারণ, আমাদের মতো এত নগন্য পরিবারের মেয়ে নিশ্চয়ই জমিদার পরিবারের বৌ হতে পারে না। তাই বলছিলাম কি ফুপা জান আপনি নতুন করে এই বিয়ের সিদ্ধান্তকে নিয়ে ভাবুন। আমার মেয়ে সিঁথির বয়স কত হলো, মাত্র পনেরো চলছে। তাছাড়া,মেয়ে আমার এই মূহুর্তে বিয়ে করতে রাজি নয়। যে এই ওয়াদা করে গেছে সে তো এই দুনিয়ায় বেঁচে নেই তবে কেন তার ওয়াদা পূরণ করার জন্য আমার মেয়েকে কষ্ট দেয়ার কি প্রয়োজন?
কথাগুলো কিছুটা নিচু কন্ঠে বলে উঠলো মইনুল। পর্দার ওপারে থাকা রমু আর আফরোজ আইয়ুব সাহেবের ভয়ে চুপ করে আছে। না জানি এখন মইনুলের ওপর কি ঝড়টি না যায়?
-তুমি একজন পিতা হিসেবে যে কথাগুলো বলছো, আমি তা একজন পিতা হিসেবে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু, মইনুল তুমি যে এখন ব্যাংকে চাকরি করছো, কার সুবাদে? আমার ছেলের সুবাদে। আমার ছেলে তোমাকে এই জন্য চাকরি দিয়েছিল যেন তার পুত্রবধু অর্থ্যাৎ সিঁথির ভরণপোষণের কোনো কষ্ট না হয়। সিঁথিকে আটবছরের দেখে আমার ছেলের মনে ইচ্ছে জন্মায় নিজের ছেলের বৌ বানানোর। তাই তোমাকে এবং আফরোজের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায়। সব কিছু শুনে তোমরা দুজন রাজিও হয়ে যাও। সিঁথির প্রাপ্ত বয়স হলে ওকে বিয়ে দিবে এটাও তোমরা বলেছিলে। মইনুল, তোমার তখন ব্যবসা লস হয় দেখে, আমার ছেলে শেখ আয়াত তার বন্ধুকে রিকুয়েষ্ট করে তোমার চাকরির ব্যবস্থা করে। সব কিছু পেয়ে এখন তুমি বলছো একজন মরে যাওয়ায় তার ওয়াদা পূরণ না করতে!একবারও কি সেদিনের উপকারের কথা তোমার মনে নেই, মইনুল?
আইয়ুব সাহেবের কথায় মাথা নিচু করে ফেললো মইনুল। আফরোজ পর্দার আড়ালে থেকে সকল কথা শুনে আইয়ুব সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-ফুপাজান,আমি সিঁথিকে বিয়ে দিতে রাজি আছি কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন উদয় হয়েছে। যদি আপনি উত্তরটা দিতেন?
আফরোজের এহেন কথায় আইয়ুব সাহেব বিচলিত না হয়ে বরং হাসিমুখে বললেন,
-আমি জানি তুমি কি বলবে?তোমার প্রশ্নের উত্তর দেয়া মালিকের সঙ্গে কথা বলে তার কাছ থেকে উত্তর জেনে নাও।আমি কল দিচ্ছি ওকে।
কথাটি বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করলেন উনার নাতীর কাছে।
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন, দাদাজান?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।দাদুভাই, তোমার সঙ্গে একজন কথা বলতে চায় তারই মেয়ের ব্যাপারে।নাও কথা বলো।
কথাটি বলে আইয়ুব সাহেব মোবাইল এগিয়ে দিলো পর্দার ওপারে থাকা আফরোজের কাছে। আফরোজ মোবাইল নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সালাম ভেসে এলো।আফরোজ সালামের উওর নিয়ে প্রশ্ন করে,
-তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো?
-জি, ফুপি। আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি এবং জানি। আপনি ভালো আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাক যেমন রেখেছেন।
-তুমি যথেষ্ট বড়ো হয়েছো।আমাদের অভিভাবকের করা ওয়াদা পূরণ করতে যেয়ে, আমরা চাইব না তুমি বা সিঁথি তোমাদের মনের বিরুদ্ধে যেয়ে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। তুমি কি চাও তোমার চেয়ে নয় বছর বয়সে ছোট মেয়েকে নিজের স্ত্রী রুপে গ্রহণ করতে?
প্রশ্নটা শুনে মোবাইলের ওপাশে থাকা ছেলেটা চুপ হয়ে যায়।আফরোজ অপেক্ষা করছে ওর মুখ থেকে উত্তর জানার জন্য। মিনিট দুয়েক অতিক্রম হবার পর ছেলেটা উত্তর দেয়।
-সিঁথিকে আমি ঠিক সেদিন থেকে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করেছি যেদিন বাবা মরে যাওয়ার আগে আমাকে বলে যায় সিঁথিকে বিয়ে করে এই বাড়ির পুত্রবধু বানিয়ে আনতে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেলে আজ দীর্ঘ পাঁচ ধরে অপেক্ষা করছি সিঁথি বড়ো হবার।
কথাটি বলে চুপ হয়ে যায় ছেলেটি। আফরোজ উত্তর পেয়ে মুচকি হেসে বললো,
-ভালো থেকো।আল্লাহ হাফেজ।
-আপনি ভালো থাকবেন ফুপি। আসসালামু আলাইকুম।
কল কেটে দেয়ার পর আফরোজ আইয়ুব সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আমি ওর কাছ থেকে উত্তর পেয়ে খুশি হয়েছি ফুপাজান। আপনি অনুমতি দিলে আজ আমরা ঢাকায় ফিরে যেতে চাই। সিঁথির কি সিদ্ধান্ত আমি জেনে আপনাদের জানিয়ে দিব।
-আফরোজ,আমি চাই আমার নাতবউ একটা শিক্ষিত মেয়ে হোক। কিন্তু, একটা সমস্যার কারণেই হোক সিঁথি রাজি হলে আমি ওদের আকদ করে রাখতে চাই। বাকি বিয়ের অনুষ্ঠান সিথিঁর এসএসসি পরীক্ষার পর করা যাবে।
-জি,ফুপাজান।
আফরোজ-মইনুল দম্পতি রমু এবং আইয়ুব সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো ঢাকার পথে ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সারাপথে মইনুল কোনো কথা বলেনি আফরোজের সঙ্গে।
ফ্ল্যাটে ফিরে এসে কলিং বেল বাজাতেই সিঁথি দরজা খুলে দিলে আফরোজ মইনুল ঘরে প্রবেশ করে। মিনিট দশেক পর চৈতির মা এসে চৈতিকে নিয়ে যায়।খাওয়াদাওয়া শেষ করে আফরোজ জানায় আজ তিনি সিঁথির ঘরে ঘুমাবেন।
মইনুল বুঝতে পারছে, কেন আজ মেয়ের ঘরে আফরোজ ঘুমাবে?যত বড়ো লোক হোক না কেন মইনুল আগে সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলবে, তার আগে কোনো বিয়ের কথা আগাবে না।আগামীকাল বিকেলে ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়, মইনুল।
আফরোজ আজ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে প্রশ্ন করে,
-সিথিঁ,এখন আর আগের মতো মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ভালো লাগে না?
-মা,আমি বড়ো হয়েছি না।
কিছুটা লজ্জিত মুখে হাসি দিয়ে বলে সিঁথি।
-তুমি কি মনে করো, আমি তোমার মা হিসেবে অনেক খারাপ?
– না, মা। কিন্তু, তুমি হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াতে আমার তোমার প্রতি অভিমান হচ্ছে।
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন আফরোজ জানালা দিয়ে চাঁদের আলো মেয়ের মুখের উপরে এসে পরছে। মেয়েটা উনার চাঁদের মতো সুন্দর।কি নেই ওর!হয়তো, এত সুন্দর দেখে এত বড়ো বাড়ির বৌ হবার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে সিঁথি।
-ধরো, কেউ তোমার সাথে ওয়াদা বদ্ধ করেছে।তার একটি দাবীকৃত খুব মূল্যবান জিনিস তোমার কাছে আছে। উপযুক্ত সময় এলে তোমাকে সেই জিনিস ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, উপযুক্ত সময় আসার পর তুমি সেই ওয়াদার কথা ভুলে গেলে, পাশাপাশি এটা জানালে তুমি সেই ওায়াদা পূরণ করতে ইচ্ছুক নও। এখন সেই ব্যক্তিকে ঠকানো উচিত হবে কি তোমার? নাকি তুমি আল্লাহর কাছে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেতে চাও?
-না, ওয়াদা করে ওয়াদা ভঙ্গ করা ঠিক নয়। কিন্তু, মা, সেই মূল্যবান জিনিসটা কি আমি?
মেয়ের প্রশ্ন শুনে খানিক সময়ের জন্য চুপ করে আছেন। অতঃপর, সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়েকে সবকিছু জানানো প্রয়োজন। সিথিঁর মাথায় হাত বুলিয়ে একে একে সব ঘটনা খুলে বললেন আফরোজ। সবটা শোনার পর এখন সিথিঁর কি প্রতিক্রিয়া আসে সেটা দেখার অপেক্ষা?
#চলবে