অপেক্ষার_বৌ-০৩

0
569

#অপেক্ষার_বৌ-০৩
#Tahmina_Akther

—মা,আমার কাছে তোমাদের ওয়াদা দেয়া-নেয়া ব্যাপারটা উইয়ার্ড লাগছে। সবচেয়ে বড়ো কথা আমি এত ছোট থাকতে তোমরা কেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে ওয়াদা বদ্ধ হলে যে, আমি বড়ো হলে তার ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে?আমার পছন্দ-অপছন্দ বা তার ছেলের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে, তাই না? সবচেয়ে বড়ো কথা উনার ছেলে না আমাকে দেখেছে না আমি তাকে দেখেছি। সেই আদিকালের যুগ এখন নেই যে, কেউ কাউকে না দেখে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে “কবুল” বলবে।

—আস্তে, আস্তে। একসাথে এতগুলো কথা না বলে ধীরে ধীরে বলো। তুমি আসলে কি চাও?তুমি যা বলবে আমরা তাই করব। দরকার হলে ওয়াদা ভঙ্গ করে হলেও তোমার ইচ্ছেতে সব করব।

আফরোজের কথায় সিঁথি দম নিয়ে চুপ করে আবারও বলতে শুরু করে,

—আমি ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

সিঁথির মুখ থেকে ওমন শক্ত কথা শুনে আফরোজ দমে গেলেন। কারণ, সিঁথি এমনই ; ও যেহেতু বলেছে ছেলের সঙ্গে কথা বলবে তবে কথা না বলিয়ে দেয়া পর্যন্ত সিথিঁর কাছ থেকে কোনোপ্রকার জবাব পাওয়া যাবে না। আফরোজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললেন,

—ঠিক আছে। আগামীকাল বিকালে ওই ছেলের সঙ্গে তোর দেখা করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি আমি। এরপর,তোর যা সিদ্ধান্ত আসবে আমি মেনে নিব।

সিথিঁ ওর মায়ের বুকে মাথা গুঁজে চুপটি করে আছে। কান্নাগুলো যেন গলায় দলা পাকিয়ে আছে। বাবা-মায়ের সামনে কখনো সিঁথি কাঁদে না তাহলে আজ কি করে মায়ের সামনে কাঁদবে সে?এত কষ্ট হচ্ছে কেন ওর? বুকের ভেতর শ-খানিক কষ্টরা এসে হানা দিয়ে যাচ্ছে। এতদিনের লালন করে আসা স্বপ্ন কি বিয়ে নামক ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে?যদি তাই হয় তবে সিঁথি আর কখনো মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে না। চোখের দেখা স্বপ্নকে এভাবে বিয়ে নামক কুয়াশার আঁধারে বিলিন হতে দিবে না সিঁথি। এর জন্য যা যা করার দরকার ও তাই করবে।

পরদিন সকালে রোজকার নিয়ম অনুযায়ী সিঁথি স্কুলে চলে যায়। আফরোজ আজ কলেজে যায়নি। মইনুল হোসেনও আজ ব্যাংকে যায়নি। নিজের ঘরে দরজার খিল এঁটে বসে আছেন।আফরোজ মইনুলকে একবার ডাক দিয়েছিলেন তখন মইনুল ভেতর থেকে জবাব দিয়েছিলেন, এগারোটার আগে যেন উনাকে কেউ ডাক না দেয়। ব্যস কি আর করার আফরোজ ড্রইংরুমে এসে একা বসে রইলেন। মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিলেন শেখ আইয়ুব সাহেবকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে আফরোজ সালাম দিয়ে বললেন,

—ফুপাজান, আসলে সিঁথি আয়াত ভাইয়ের ছেলের সাথে দেখা করতে চাইছে। বলতে পারেন সিঁথি ওর সঙ্গে দেখা করার পর ওর সিদ্ধান্ত জানাবে তার আগে নয়।আজ বিকেলে দেখা করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো।

—সমস্যা নেই। এটা তো আরও ভালো কথা। আফরোজ, তোমাকে আমি একটু পর কল করে জানাচ্ছি কখন, কোথায় দেখা করবে তোমরা?

—জি, ফুপাজান।

কল কেটে দেয়ার পর আফরোজ অপেক্ষা করছে কখন কল আসবে। মিনিট পাঁচেক পর কল এলো। আইয়ুব সাহেব জানালেন আজ বিকেল পাঁচটার পর কুটুম্ববাড়ি রেস্টুরেন্টে দেখা করতে। উনার নাতি আসবে সেখানে সিঁথির সঙ্গে দেখা করতে।

আফরোজ এখন কিছুটা শান্তি পাচ্ছে। আফরোজ খেয়াল করে দেখলো মইনুল দাঁড়িয়ে আছে। আফরোজ হাসিমুখে মইনুলকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—আজ বিকেলে তুমি সিঁথিকে নিয়ে কুটুম্ববাড়ি রেস্টুরেন্টে চলে যেও। তোমারও কথা হবে সাথে আমাদের সিঁথির কথা হবে।

—সিঁথিকে আমি রেস্টুরেন্টে অব্দি দিয়ে চলে আসব। আমার একটু জরুরি কাজ আছে আমি দুপুরের খাবার বাইরে খেয়ে নিব। তুমি অপেক্ষায় থেকো না আবার, চললাম।

কথাটি শেষ করে মইনুল আফরোজকে সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেলো। আফরোজ এতটা গুরুত্ব না দিয়ে ঘরের কাজ করতে শুরু করে।

বৃহস্পতিবার হওয়া আজ স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায় সিঁথির। বাড়িতে ফিরে আসার পর গোসল সেড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুম দেয়। বিকাল চারটা বেজে গেলে আফরোজ এসে মেয়েকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো। সিঁথি ঘুম থেকে উঠতেই আফরোজ বললেন,

—তোমার না একজনের সাথে দেখা করার খুব প্রয়োজন ছিল , সিঁথি? একটু পর তোমার বাবা এসে তোমাকে সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য নিয়ে যাবে। এখন চটজলদি তৈরি হয়ে নাও।

সিঁথি বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। তারপর, যখন ওর বোধগম্য হয় যে ওর মা কার কথা বলছে?হুট করে এবার সিঁথির পুরো শরীর কেমন অস্বস্তিতে ভরে উঠেছে। মনে হচ্ছে, দেখা না করলে বরং ভালো হতো। কিন্তু, এখন মা’কে না করলে, মা ঝাঁটা পেটা করবে। তারচেয়ে বরং দেখা করে আসুক ওই লোকের সাথে।

সিঁথি হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখলো ওর মা ওর জন্য গাঢ় সবুজ রঙের গাউন,লেগিংস এবং সবুজ রঙা হিজাব খাটের উপর রেখে দিয়েছে। সিঁথি বিনাবাক্য গাউন আর লেগিংস পরে নিলো।ড্রেস পরা শেষ হলে দরজায় নক পড়লো ওর মা এসেছে।সিঁথি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আফরোজ মেয়ের মাথা থেকে পা অব্দি একবার নজর বুলিয়ে ছোট করে বললেন, “মাশা-আল্লাহ”।সিথিঁ লজ্জায় ওর মায়ের মুখের দিকে না তাকিয়ে বললো,

—মা,গাউন পরেছি এই অনেক। কোনো মেকআপ করিয়ে দিবে না আমায়।

—জানি আমি। আয় তোকে হিজাব পরিয়ে দেই।

আফরোজ মেয়ের মাথায় খুব সুন্দর করে হিজাব পরিয়ে দিলেন। বাহ্,মেয়ের মুখের দিকে তাকালে চোখে কেমন শান্তি লাগছে! সবুজ রঙে মেয়ের গায়ের রঙটা যেন আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।

মইনুল হোসেন মেয়ের ঘরে এসে দেখলেন মেয়ে তার সবুজ রঙে মাঝে ফুলের মতো ফুটে আছে। মইনুল হোসেনের মুখে আজ দুদিন পর হাসির রেখা মিললো।হাসিমুখে মেয়ের কাছে এগিয়ে গেলেন। সিঁথি ওর বাবা দেখে বললো,

—বাবা,কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?

-ঠিক আমার মায়ের মতো। তুই তো একেবারে তোর দাদির মতো দেখতে হয়েছিস।

মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো মইনুল। সিঁথি খুশি হলো ওর বাবার কাছ থেকে প্রশংসাবাক্য শুনে।অতঃপর, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেলো সিঁথি আর ওর বাবা মইনুল হোসেন।

সিএনজিতে চড়ে কুটুম্ববাড়ি রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আধঘন্টা পর গন্তব্যেস্থলে পৌঁছে যায় সিঁথি আর ওর বাবা। সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে মইনুল মেয়ের হাত ধরে এগিয়ে চললো রেস্টুরেন্টের ভেতরে। দোতলায় গিয়ে মেয়েকে নিয়ে একটি টেবিলের সাড়িতে বসে পড়লো মইনুল। মোবাইল বের করে কল করলো ওপাশে থাকা ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলো,কখন আসবে? উত্তর আসে,কিছু সময়ের মধ্যে চলে আসবে।

কল কেটে পকেটে মোবাইলে রেখে মইনুল মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

—তোমার জীবন গুছিয়ে নেয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র তোমার।আমি এবং তোমার মা শুধুমাত্র তোমাকে সাহায্য করতে পারব এর থেকে আমরা আর কিছু পারব না। কারণ, তোমার জীবনের সুখের অনুভূতিটুকু শুধুমাত্র তুমি উপভোগ করতে পারবে। দুঃখটা শুধুমাত্র তুমি উপভোগ করতে পারবে আর কেউ না এমনকি আমি, তোমার মা’ও পারবে না। কারণ, তোমার দুঃখ-সুখ শুধুমাত্র একান্তই তোমার। তাই, আমি চাইব তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তুমি কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়া নিবে।খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবে যেন পরবর্তীতে তুমি এটা বলতে না পারো বাবা-মায়ের করা ওয়াদাকে পূরণ করতে যেয়ে তুমি তোমার জীবন নষ্ট করে ফেলেছো।তুমি আমাদের কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে, সিঁথি। তুমি ঠিক আমাদের জগত ঠিক।তুমি ভালো না থাকলে আমাদের জগতটা ভালো থাকবে না। কারণ, তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে অনেক দামী, মূল্যবান। আশা করছি, তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো, সিঁথি? আমি নিচে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।

কথাগুলো বলে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে যায় মইনুল হোসেন। সিঁথি আতংক এবং অস্বস্তি দুটো নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে শক্ত হয়ে । মনে মনে “লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ যোয়ালামিন” বিপদের দোয়া পড়ছে। সিঁথির কাছে এই ছেলের সঙ্গে দেখা করাটা এখন অনেক বিপদের চেয়েও সমতুল্য।

দুমিনিট অতিক্রম হবার পর সিঁথির মনে হলো কেউ এসে টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে আছে। সিথিঁ একচোখ খুলে দেখলো,সত্যি সত্যি ওদের টেবিলের সামনের চেয়ারে আনুমানিক চব্বিশ বছর বয়সী একটি যুবক মাথা নিচু করে বসে আছে। সিঁথি এবার দুচোখ পুরোপুরি খুলে উৎসাহী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

—আপনি কি সে? যার জন্য আমি এখানে বসে অপেক্ষা করছি?

সিঁথির কন্ঠ পেয়ে যুবকটি মাথা উঁচু করে সিঁথির চোখে চোখে রেখে উত্তর দেয়,

—জি, আমি সে। যার জন্য আপনি এত সময় ধরে অপেক্ষা করেছেন। এতক্ষণ অপেক্ষার করানোর জন্য আমি অনেক অনেক দুঃখিত।

কিছুটা নম্রতা সহকারে যুবকটি উত্তর দেয়। সিঁথি নিশ্চুপ হয়ে যায়। কি বলবে? এতক্ষণ ভেবেছিল দেখা হলে বলে দিবে আমি আপনাকে বিয়ে করব না। কিন্তু, কথা যেন গলার নিচে আটকা পড়েছে! কি বলবে সিঁথি?

দশমিনিট ধরে টেবিল জুড়ে পিনপতন নীরবতা। সিঁথি মাথা নিচু করে মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নিচ্ছে কি বলবে এই লোককে? কিছু সেকেন্ড পর ছেলেটার কথায় সিঁথি মাথা উঁচু করে তাকাতে বাধ্য হয়।

—আমি এই মূহুর্তে বিয়ে করতে রাজি নই। গতকাল রাতে মা আমাকে বৃত্তান্ত সব ঘটনা জানায়। সবটা জানার পর আমার মনে হয়েছে, আমি কারো ওয়াদা পূরণ করতে চাইলে নিজের উপর অন্যায় করব। তাই সবটা ভেবে বলছি আপনি প্লিজ আমাকে বিয়ে করবেন না। কারণ, আমি এই বয়সে আপনাদের বাড়ির বৌ, আপনার স্ত্রী হবার জন্য প্রস্তুত নই।

সিঁথি মাথা নিচু রেখে কথাগুলো বলে। কারণ, অচেনা ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে সিঁথির অস্বস্তি হচ্ছে। সিঁথি যখন দেখলো ছেলেটি এখনও ওর করা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না তখন কিছুটা রেগে হোক মাথা উচু করে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—আপনি আসার পর থেকে দেখছি কেমন চুপ করে আছেন? আমি আগ বাড়িয়ে কথা বললে কথা বলছেন।আমি যে কথাগুলো বলেছি আপনি শুনতে পেয়েছেন?

সিথিঁর কথায় ছেলেটা এবার মুখ তুলে তাকায়। সিথিঁ এই প্রথমবারের মতো ছেলেটার মুখ দেখতে পায়।শ্যামবর্ন মুখটায় অজস্র বর্নের দাগ, জোড়া ভ্রু-যুগল,কালচে ঠোঁট, চুলগুলো একেবারে ছোট ছোট। হুট করে কেউ হেয়ারস্টাইল দেখলে বুঝবে ডিফেন্সে জব করে এই লোক। কিন্তু, লোকটা এভাবে শীতের মধ্যে ঘামছে কেন?শরীর খারাপ?

—কি হয়েছে,আপনার? এভাবে ঘামছেন কেন?

সিথিঁ ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো। ছেলেটা পানির জন্য ইশারা করলে সিঁথি পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় কিন্তু ছেলেটার হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকায় দরুন হাত থেকে গ্লাসটা পরে ভেঙে যায়। ছেলেটা সরি বলে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দেয়। সিঁথি কি করবে বুঝতে পারছে না? এত বড়ো লোকটা হুট করে এত অসুস্থ হয়ে গেলো কি করে? সিঁথি এবার জিজ্ঞেস করলো,

—আমার বাবাকে কল করে আসতে বলব?আপনি বাড়িতে ফিরে যাবেন?

সিঁথি ভেবেছিল হয়তো ওর বাবাকে আসতে বলবে কিন্তু লোকটা এবার যা বললো সিঁথি স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনতে থাকে কিছু বলে না।

—কিশোরী বয়সে এসে কাউকে ভালোবেসেছো, সিথিঁ? এই বয়সটা নাকি আবেগের বয়স। হৃদয় নাকি হুটহাট ভুল মানুষের কাছে নিজেকে সমর্পিত করে দেয়?

—না, আমি কাউকে পছন্দ করি না।

আড়ষ্ট গলায় জবাব দেয় সিঁথি। এইমাত্র না লোকটা অসুস্থ ছিল এখন কি সব প্রশ্ন করছে!

লোকটা তখনো অনর্গল নিজের সম্পর্কে বলে যাচ্ছেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা হয়ে তার এক একটি শব্দ শোনার চেষ্টা করছি।

—আমি আবেগের বয়সে গিয়ে ভুল করেও কাউকে মন দেইনি। কারণ, হচ্ছে আমার বাবা না-কি কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করে গিয়েছে। সে থেকে হোক কলেজ,ভার্সিটির দিনগুলোতে আমি শুধু বলেছি কেউ একজন আছে আমার জন্য সঠিক সময়ে সে শুধু আমার হবে।একদিন হুট করে মন চাইলো দেশে গিয়ে আমার সেই বৌকে দেখে আসতে, যার জন্য রোজ নিয়ম করে আমি অপেক্ষা করি। দাদাজান আমাকে তার স্কুলের ঠিকানা দেয় সঙ্গে একটি ছবি যেন তাকে দেখলে সহজে চিনতে পারি। স্কুলে গিয়ে রোদ উপেক্ষা করে তার জন্য অপেক্ষা করি। স্কুল ছুটির পর সে বের হয় এত ভিড়ের মাঝে তাকে চিনতে আমার চোখ ভুল করেনি। ছবির চাইতে বাস্তবে তাকে আরও সুন্দর দেখায়।সেদিন বাড়ি ফিরে গেলাম জ্বর গায়ে নিয়ে। তাকে দেখে আমার গায়ে কিসের জ্বর এলো আমি বুঝতে পারিনি।খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করতে পারি না। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। এরপর দিন তাকে একপলক দেখার জন্য আবারও স্কুল গেটের কাছে চলে গেলাম। এভাবে রোজ যেতে লাগলাম। একদিন, না দেখলে আমার রাতের ঘুম, খাওয়াদাওয়া কমে যায়।সমস্যার সমাধানের জন্য গেলাম ডক্টরের কাছে। ডক্টর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন আমার ইনসমনিয়া হয়েছে। এরপর, নিজের ভালো থাকার জন্য হোক আমি রোজ তাকে এলপলক দেখার জন্য হাজার ব্যস্ততার মাঝে ছুটে যাই।তাকে একপলক দেখার অসুখ আমার মাঝে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। সিঁথি, এই যে এখানে এসে প্রথমবারের মতো এত সামনে থেকে তোমাকে দেখছি, তোমার গলা থেকে উচ্চারিত একটি একটি শব্দ আমার জন্য উচ্চারিত এগুলো ভেবে আমার গা কাঁপিয়ে জ্বর আসছে। আমি স্বাভাবিক হয়ে তোমার সাথে কথা বলতে পারব না দেখে চুপ ছিলাম। আমি ইমতিয়াজ মাহতাব সাজিদ যে কিনা দাদুর সঙ্গে মিলে একহাতে দুটো ফ্যাক্টরি পরিচালনা করি সেই আমি তোমার সামনে স্বাভাবিক হয়ে কথা বলতে পারছি না।

সিঁথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাজিদ নামক যুবকের মুখের দিকে। কি বলছে সে?সাজিদ জোড়ে শ্বাস নিয়ে ফের বলতে শুরু করে,

—আমি লজ্জায় কাউকে বলতে পারি না। আমি আমার চেয়ে বয়সে নয় বছরের ছোট মেয়েকে…। তবুও, কি একবার এই সিদ্ধান্তকে ভেবে দেখা যায় না সিঁথি? আমি শুধু তোমার নামের সাথে জড়িয়ে রাখতে চাই নিজেকে।

—আমাকে বিয়ে করতে হবে আপনার?আর কাউকে করা যায়, না ?

সিঁথির প্রশ্নের উত্তরে সাজিদ মাথা নাড়িয়ে না সূচক জানায়। সিঁথি তাকিয়ে দেখে লোকটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে। কি বলবে সিঁথি? এইসময়টাতে ওর কিছু ফ্রেন্ড রিলেশনে আছে। বয়সের এই সময়টাতে নাকি এই পৃথিবীর সবকিছুকে রঙিন লাগে। কই সিঁথির কাছে তো মনে হয়নি। প্রেমের সম্পর্ক শুরুর চেয়ে নিজের স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে গেছে। কিন্তু, আজ এই লোকটার কথা শুনে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে যার যার নিজস্ব স্বপ্ন আছে। আর সেই স্বপ্নকে পূরণ করতে তাদের হাজার হাজার চেষ্টা চলতে থাকে। যেমন সাজিদের স্বপ্ন সিঁথিকে পাওয়া ঠিক তেমনি সিথিঁর চাওয়া পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হবার।

সিথিঁ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাজিদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here