অভিশপ্ত_জীবন পার্ট ৪,০৫

0
304

#অভিশপ্ত_জীবন
পার্ট ৪,০৫
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
০৪

মারতে মারতে আমাকে টেনে বের করে বাড়ি থেকে তারপর চুলের মুঠি এক হাতে ধরে অন্য হাতে নারকেলের কাচা ডাল দিয়ে হাটুতে জোরে করে মারে। আমিও চিল্লায় চিল্লায় বলতে লাগলাম দেবর ভাবির প্রেমলিলার কথা। এতে মুহিতের রাগ মনে হয় দশগুণ বেড়ে গেছে। যে দু চারজন এগোতে আসছিলেন তাদেরকে উপেক্ষা করে আমাকে লাত্থি ও কিল-ঘুষি মারে তারপর আমাকে ধাক্কা দেয় আর আমি পাশের পুকুরে পড়ে যায়। খুব উঁচু পুকুর পাড় ছিলো, পড়ার সময় একটা কিছুর সাথে বেঁধে পা কিভাবে যেন ঘুরে আমার শরীরের নিচে পরে আর হাটুতে মট করে শব্দ হয়। মনে মনে পা ভেঙে গেছে। চারিদিকের অনেক মানুষে ভীড় জমেছে। শাশুড়ী ছেলের পক্ষ নিয়ে আমার নানা রকম দোষ ত্রুটির জানান দিচ্ছে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রায় সবাই মুহিত ভাবি এবং ওর মা-কে ধিক্কার দিয়ে আমাকে নিয়ে উপজেলা মেডিক্যালে নিয়ে যায়। আমার পা মচকে গেছে, ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আগামী দুই মাস রেস্টে থাকতে হবে। মা বাবা আত্মীয় স্বজন সহ মুহিতের গ্রামের অনেকে বলেন আমি যেন নারী নির্যাতন মামলা করি। কিন্তু আমার প্ল্যান সম্পুর্ন আলাদা,, যা শুধু মনে মনে করে আছি।

মুহিত মামলার ভয়ে এবং লোক দেখানোর জন্য আমার খুব তদারকি করা শুরু করে। আব্বা নিয়ে যেতে চেয়েছিল আমাকে কিন্তু আমি যায় নি। বলেছি,, মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়। এখান থেকে যাওয়ার পরে তো আবারও আমাকে বিয়ে দেওয়া হবে,, ওই স্বামী এর থেকে বেশি খারাপ হবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে। মুহিত আমার এমন কথা শুনে মহা খুশি। আব্বা রাগ করে চলে গেছে। আমার সাথে আব্বা বা চাচারা, দেখা বা মোবাইলে কথাও বলে না। সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আমার সাথে। আমি শুধু সুযোগের সন্ধানে আছি। কেটে গেছে ৪ মাস।পা ভালো হয়ে গেছে। কেউ আমার সাথে কথা বলে না, দুটো ঈদ গেলো তাও বাপের বাড়ি যায় নি এইসব কথা বলে মাঝে মাঝে রাতে মুহিতের সামনে কান্না করতাম। মেঝো ভাসুর ভাবিকে নাকি তালাক দিবেন। কিন্তু সোনিয়া শিমলার জন্য এতো বড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আমি জানি মুহিত এখনো মেজো ভাবির সাথে যোগাযোগ করে।

আমার খালার নাম্বারে কল দিলাম আজ,, ভাবছিলাম রিসিভ করবে না । কিন্তু খালা কল রিসিভ করলে কিছুক্ষণ কথা বলি। এভাবে মাঝে মাঝে রাতে মুহিতের সাথেও খালা কথা বলতো,, দীর্ঘদিন কোথাও যায় নি তাই মুহিতের সাথে বায়না করি খালার বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মুহিত প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু আমার আকুল আকুতি মিনতিতে সে বাধ্য হয় যেতে। কিন্তু তার কথা, সে থাকবে না শুধু আমাকে রেখেই চলে আসবে। আমি ও আর কথা না বাড়িয়ে রাজি হয়ে গেলাম। আগামী কাল যাবো খালা বাড়ি। খালাকে কল দিয়ে সব কিছু বললাম এবং প্ল্যান অনুযায়ী ব্যাবস্থা করে রাখতে বললাম।

সকাল সকাল গোসল সেরে রেডি হচ্ছি। এই দিনের জন্য দীর্ঘ ছয় মাস অপেক্ষা করছি। সবুরে মেওয়া ফলে কথাটা সম্পুর্ন সত্য।যায়হোক এইমাত্র আমি আর মুহিত খালার বাড়ির পাশের রাস্তায়। মুহিত বাড়ির ভিতর যাবে না। কোন রকম ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলাম। চুপিচুপি বাইকের চাবি সড়িয়ে রাখলাম এবং খালা আব্বাকে আসতে বললেন। ১০ মিনিটের মধ্যে পরিবেশ পালটে গেলো। মুহিত বুঝতে পারছে কি হতে চলেছে। বুঝুক সে, ধোঁকা খেলে কেমন লাগে। আব্বা সহ অনেকে মুহিতের হাত পা ভেঙে দিতে চাইছিল কিন্তু তা দৃষ্টিকটু তাই আপাতত মোটরসাইকেল টা রেখে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।

আব্বা মোট টাকা দিয়েছিল ৬০,০০০ হাজার। কিন্তু গাড়ির দাম (২০০৮সালে) ৮০,০০০ হাজার। অনেক কষ্টের টাকা ছিলো আমার আব্বার। সেগুলো তো ওই দুশ্চরিত্র মানুষকে খেতে দিবো না।

আবারও স্কুলে ভর্তি হলাম। দুই বছর পরে ক্লাস নাইনে ভর্তি হলাম। মাঝে মাঝে লোক মুখে শুনি আমাকে তালাক দিয়েছে কয়দিন পরে তালাকের কাগজ আমার হাতে আসবে। কিন্তু এই কয়দিন আর এখনো আসেনি। রোকসানা আর নাহারের সাথে প্রতিদিন স্কুলে যায় প্রাইভেট পড়ি।মাঝে মাঝে প্রেমের প্রস্তাবও আসে।গ্রামের একটা ছেলে, নাম ইউসুফ। সব কিছু জানা সত্বেও পাগলের মতো আমার পিছনে ঘুরে। কোথাও ঘুরতে গিয়ে কিছু খেতে দিলে সেই খাবার ও আমার জন্য পকেটে করে নিয়ে আসে। আর প্রতিদিন চিঠি দেয় নাহারের মাধ্যমে। দুরন্ত মন আমার, অতীত ভুলে কেমন যেন আলাদা অনুভূতির প্রাদুর্ভাব হলো। এখন আর মুহিতের কথা মনে হয় না। সব সময় ইউসুফের করা বিভিন্ন পাগলামির কথা মনে করে মুচকি হাসি। ভালো লাগে ইউসুফ কে নিয়ে চিন্তা করতে।

ইউসুফের সাথে স্কুলে যাওয়া আসার সময় এবং পাড়ায় ঘুরতে ফিরতে দেখা হতো, দুই একটা কথাও হতো। মাঝে মাঝে নাহার কে পাহাড়ায় রেখে আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টা ও কথা বলতাম। জানি ইউসুফের পরিবার আমাকে মেনে নিবে না তবুও মন বোঝে না। সম্পর্ক টা ভালোই গভীর হয়েছে। আজ ইউসুফ একটা চিঠি দিয়েছে তাতে লেখা আছে,, আজ রাতে তার সাথে দেখা করতে হবে। বিষয় টা আমি সহজ ভাবে নিতে পারলাম না। রাতে একা একা দেখা করা টা তো সহজ কথা না। তাহলে কি ইউসুফ আমার সুযোগ নেওয়ার ধান্দায় আছে। আমি মনে হয় আবারও ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছি। রাতে ইউসুফ আমার জানালায় কড়া নেড়ে আমাকে ডাকে। পপি আর আমি এক সাথে থাকি। পপি জেগে যায় আর ভয়ে চিল্লায় উঠে। আব্বা ওই ঘর থেকে ছুটে আসে, ইউসুফের পালানোর সময় দৌড়ানোর শব্দ শুনতে পায় আব্বা মা। নতুন কোন বদনামের ভয় জপে ধরে তাদের। আমাকেও সন্দেহ করে। মা নানান ভাবে জিজ্ঞেস করে কে আসছিলো কেন আসছিলো আমি কিছু জানি নাকি এইসব বিষয়ে।
আমি সম্পুর্ন অস্বীকার করি।

দুইদিন পরে মা ইউসুফের দেওয়া সব চিঠি হাতে পায়। মনে হয় আমার অবর্তমানে ঘর চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছে। এখন আমার কোন কথা তারা বিশ্বাস করে না। খুব খারাপ ভাবা শুরু করে আমাকে। মা উঠতে বসতে বকাবকি করে এখন। নাহার পাড়ার অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করে। ছেলেটার নাম এনামুল। ইউসুফ নাকি এনামুলের সাথে গল্প করেছে,, যখন কোন মেয়ে বিয়ে হয় না তখন তার চাহিদা ভিন্ন রকম থাকে। পুরুষের স্পর্শ ছাড়া থাকা কোন ব্যাপার না। কিন্তু একবার পুরুষের স্পর্শ পেলে তার পক্ষে দূরে থাকা অসম্ভব। ডিভোর্সি মেয়েদের পটানো কোন ব্যাপারই না।
শুধু মজাই মজা,,,৷৷

এনামুল এইসব কথা নাহার কে বলে তাই নাহার আমাকে সতর্ক করে দেয়। আজ এই ইউসুফের লালসার দৃষ্টি পড়ার জন্য আমার ফ্যামিলি আর আমাকে বিশ্বাস করে না। অভিশপ্ত জীবনের কুল কিনারা সব শেষ।

বেশ কিছু দিন পরে শাশুড়ী আমার বড় ভাসুর মেঝো ভাসুর এবং দুই মামা শশুর সহ কয়েকজন মানুষ আসে আমাকে ফিরিয়ে নিতে। মুহিত নাকি উনাদের পাঠিয়েছেন। যেহেতু আমি ইউসুফের দেওয়া কলঙ্কে কলঙ্কিত তাই মা আব্বা আর তেমন বাধা দিয়ে আমাকে রাখলেন না। মেঝো ভাবি কে তালাক দিয়েছেন আমার ভাসুর। ভাবি নাকি বর্তমানে ঢাকা গার্মেন্টসে কাজ করে। এ বাড়িতে আসার পরে সবাই বলা শুরু করে একটা বাচ্চা নিলে এইসব ঝামেলা দূর হয়ে যাবে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যাবে।

তিন/চার মাস যেতে না যেতেই আবারও কন্সিভ করলাম। ভাবলাম এবার অন্তত সুখের দেখা পাবো। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখি ইউসুফ মিস কল দেয় মুহিতের নাম্বারে। মুহিত কল দিলে কথা বলে না, শুধু রিসিভ করে রেখে দেয় নয়তো গানের সামনে রেখে দেয়। মুহিত বলতো কার নাম্বার এটা, কেন এইভাবে জ্বালায়। আমি ভয়ে স্বীকার করি না কিছু। মাসুদের নাকি কি যেন চাকরির পরিক্ষা হবে রাজশাহীতে। থাকতে হবে দুইদিন কিন্তু টাকা নাই এদিকে আমার কাপড়, বাজার কিছুই নাই। তাই একটা এনজিও তে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়ে ২০,০০০ হাজার টাকা তোলে। কিছু মাছ তরকারি কিনে দিয়ে মুহিত রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। নামাযে বসে মুহিতের চাকরির জন্য এবং আমার সন্তানের জন্য দোয়া করলাম।

পরের দিন বিকালে পাড়ার একজন এসে বলে মুহিত কে নাকি ঢাকায় আটকিয়ে রাখা হয়েছে। উনার বোনও নাকি ভাবির পাশাপাশি বাসায় থেকে গার্মেন্টসে কাজ করে। মুহিতের সাথে বিয়ে হবে তাই গ্রামে কল দিয়েছে। এইসব শুনে বড় ভাসুর এবং চেয়ারম্যান কে সাথে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমাকে যেতে নিষেধ করছিলেন সবাই কিন্তু আমি শুনিনি। যেতে যেতে ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা যাওয়ার পরে যে বাসায় ভাড়া থাকে সেই বাসাওয়ালা সহ যারা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তাদের সাথে কথা বলি। কিন্তু যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তাই কোন কিছুই কাজে আসে না।

আমি ওদের ঘরে গিয়ে দেখি ভাবি বিছানা ঠিক করছে আর মুহিত আলনা থেকে শার্ট নিয়ে গায়ে দিচ্ছে। হয়তো ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছে। আমি তিরষ্কারের হাসি দিয়ে বললাম,, কি সুখ পাও এই দুই বাচ্চার মায়ের কাছে, যা আমি দিতে পারি না। কিভাবে পারলে গর্ভবতী বউকে রেখে মিথ্যা কথা বলে এখানে আসতে? সন্তানের জন্য কিছুদিন তোমার কাছে আসতে পারিনি তাই নিজের পুরুষত্বের আগুন নিভাতে এতো বাহানা। যে মেয়ে দুটি বাচ্চা স্বামী ছেড়ে তোমার সাথে এইসব করতে পারে, খোঁজ নিলে দেখতে পাবে তার আরো কতজন তোমার মতো ছেলেকে লাইন দিয়ে রেখেছে।

তারপর রাতের গাড়িতে বাড়ি আসলাম, ভাসুর এবং বড় জা খুব বোঝালেন, গ্রামের মানুষের মুখে একটা কথা খুব প্রচলিত আর তা হলো, ধান পানিতে ডোবালে তলিয়ে নিজের যায়গা তে-ই থাকে আর চিটা-ধান ভেসে চলে যায়। ধৈর্য্য ধরে থাকো মুহিতের ভুল ভেঙে গেলে ঠিকই ফিরে আসবে। ইচ্ছে করছে মুহিত কে তালাক দিয়ে আমিও গার্মেন্টসে চলে যায়। কিন্তু বাচ্চা পেটে তা সম্ভব না। বাচ্চার প্রতি আমার আলাদা মায়ার জন্ম হয়েছে এখনই।

কেটে গেলো দুইদিন,, রাত থেকে প্রচুর ব্যাথা করছে পেট,, এই অবস্থায় এতো দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে আসা যাওয়া মোটেও ঠিক হয় নি। আবারও শুরু হলো রক্তপাত। আব্বা খালু বড় ভাসুর উনারা আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে। নানান রকম চিকিৎসা দেওয়া হলো। শাশুড়ী পাট পড়া, পড়া পানি এবং নানা রকম তাবিজ এনে দিলেন। ব্লিডিং বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ব্যাথা কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। প্রায় ১৫ দিন চললো এমন অসহ্য যন্ত্রণা। পেটের নাড়ীভুঁড়ি মনে হয় কেউ চিপে চিপে খামছে ধরছে। গগন ফাটানো চিৎকার করি, মনে হয় চিৎকার করলেই এই বুঝি শান্তি মিলবে। গ্রামের অনেকে এসে বলেন ডাক্তার দেখাতে নয়তো মারা যাবে। বড় ভাসুর আর গুরুত্ব দেয় না, বিধবা শাশুড়ী কিস্তি পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা কিস্তি।

আমার দুটো খাসি(ছাগল) ছিলো। সেগুলো বিক্রি করে আব্বা আমাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যালে গেলেন। বাচ্চা নাকি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বের হতে পারছে না। এখন DNC করতে হবে নয়তো আমাকে বাঁচানো যাবে না। আবারও মুহিতের জন্য মা হতে পারলাম না। এই বাচ্চাকে অবলম্বন করে বাঁচার আশা করেছিলাম, কিন্তু তাও আল্লাহ কেড়ে নিলেন। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন কিন্তু এটা আমার কোন ভালো তার হিসাব এখনো মিলাতে পারিনি। DNC হয়েছে ৪ দিন হলো আজ আমাকে রিলিজ দেওয়া হবে। আব্বা মা-য়ের আর রাগ নাই আমার উপর। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে আর অতীত মনে করতে করতে দিন কাটতে লাগলো। ইউসুফ আবারও ঝামেলা করা শুরু করেছে। এবার আর কোন ভুল করলাম না। মা কে সব বলে দিলাম। মা ইউসুফের পরিবার কে বললেন তাদের ছেলে কে শাসন করতে। এতে ইউসুফের কোন পরিবর্তন হলো না। যদি তার কথা না শুনি তাহলে আমার দেওয়া আগের চিঠি গুলো সবাই কে দেখাবে বলে হুমকি দিতে লাগে। নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম কি জীবন আমার সবাই চোখের ক্ষুধা মেটায় আমাকে দেখে। আমি সবার চাহনি বুঝতে পারি। পাড়ার কিছু কিছু বড় ভাই যাদের বাচ্চারা প্রায় আমার সমবয়সী সেইসব ভাইয়েরাও ফাজলামোর সুরে বলেন, কিরে বন্দুকের বুলেটের মতো সাইজ তোর এমন বেলবাটম(গোলগাল) বউ রেখে কিভাবে অন্য মেয়ের কাছে যায় তোর বর। এইসব কথা দিয়ে কি বুঝাতে চাইতো তা বুঝেও না বুঝার ভান করে সেখান থেকে চলে আসতাম।

ইউসুফ মাঝে মাঝে আমাদের ঘরের চালে ঢিল দেয়, জানালায় টোকা দেয়। গ্রামের আরো দুষ্টু ছেলেও হয়তো ওর সাথে জরিত। এইসব পরিস্থিতিতে আমাকে খালার বাড়িতে পাঠানো হয়। খালার বাড়ি এসে ভালোই আছি। ৩/৪ মাস পরে মুহিত ভাবিকে রেখে চলে আসছে নাকি। বড় ভাবি মাঝে মাঝে আমার সাথে ফোনে কথা বলতেন। উনার মারফতে জানলাম, ঢাকায় আরো বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে ভাবি খারাপ সম্পর্ক ছিলো। মুহিতের সামনে ও নাকি অনেক কিছু ধরা পরেছে। তাই মুহিত এখন ওকে তালাক দিবে। কিন্তু দেন মোহর বেঁধেছে দেড় লাখ টাকা। চাইলেও তালাক দেওয়া সম্ভব না। মুহিত মাঝে মাঝে বড় ভাবির মাধ্যমে আমার সাথে কথা বলে। মেয়েদের মন আসলে বেহায়া,,এমন দুশ্চরিত্র বেঈমানের কাছে যাবো না বলে দৃঢ় সংকল্প করার পরে ও আবার তা ভঙ্গ করি। মন থেকে কাউকে যদি ভালো বাসি আর এই শরীরে যদি কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে থাকি সেটা একমাত্র মুহিত তাই সময়ের সাথে সাথে রাগ কমে যায়।

আমার পরিবারের কেউ আমাকে আর মুহিতের কাছে যেতে দিবে না। কোন ভাবেই না। কিন্তু আমার মন মুহিত কে ছাড়া কিছু বোঝেনা। খালার মোবাইল টা এখন আমার কাছে থাকে সব সময়। মুহিত একে ওকে দিয়ে আমাকে বোঝাতে লাগলো। রাজ্জাক নামের একটা বড় ভাই আছেন যিনি গণ্যমান্য একজন নেতা। উনিও আমাকে বোঝালেন। তিনি বলেন,, তুমি কাকে চাও, বাপ মা কে নাকি স্বামী কে? আমি বলি দুজনকেই চাই। ভাইয়া তখন সুন্দর করে বোঝালেন,, কিছু কিছু মুহুর্ত আসে যেখানে দুজনের আগমন ক্ষতিকর,, বাবা সারাজীবন তোমাকে কাছে রাখতে পারবে না কিন্তু স্বামী সাথে তুমি সারাজীবন থাকবে। দেখা যাবে কিছু দিন পরে তোমাদের সুখ দেখে তাদের রাগ ভেঙে গেলে আবারও ঠিক হয়ে যাবে সব।

এইসব কথা সহ আরো অনেক কিছু বোঝালেন, কেন যেন কথা গুলো খুব ভালো লাগছে আমার। মুহিত আমাকে বলে,, যেহেতু কেউ আমাদের মেনে নিবে না তাই আমরা পালিয়ে যাবো। আর সবার আগে ভাবিকে তালাক দিয়ে আমরা অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো।

অনেক ভেবে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম যে,,,,,,,,

চলবে,,,,,,

#অভিশপ্ত_জীবন
পর্ব ৫
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

অনেক ভেবে আমি ও সিদ্ধান্ত নিলাম যে, মুহিতের সাথে যাবো। তাই মুহিত আমাকে শিখিয়ে দিলো সে রাস্তায় থাকবে, যে কোন উপায়ে বাড়ি থেকে বের হতে হবে আর যদি বের হতে না পারি তাহলে দুইদিন পরে মুহিত রাতে আমাকে নিতে আসবে বাড়ির পিছনে। রাতে বাড়ি থেকে বের হওয়া অনেক রিক্স তাই আমি পরের দিন সকাল ১০ টাই রাস্তায় যাবো বললাম। রাতেই কাপড় সহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিলাম এবং সামান্য কিছু টাকাও। কাল সকালে মা-য়ের সাথে দেখা করতে যাবো আর বিকালে চলে আসবো। খালা আমাকে একা যেতে দিবেন না সাথে খালুকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু খালু গেলে তো হবে না। তাই আমি খালুর নানা কাজের কথা মনে করে দিলাম আর অভয় দিলাম একা তো এর আগেও যাওয়া আসা করেছি তাই কোন প্রব্লেম হবে না। যেহেতু সকালে গিয়ে বিকালে আসবো তাই জামা কাপড় এর ব্যাগ দেখলে সন্দেহ করতে পারে এজন্য আগেই বাড়ির পিছনে একটা খড়ির ঘর আছে সেখানে রেখে এসেছি।

এমন কাজ করবো তা চিন্তার বাইরে ছিলো, হয়তো এটাই শেষ বাবা মায়ের মুখে চুনকালি দেওয়া। আল্লাহ যেন আমার জীবন টা অন্য ৮/১০ জন মেয়ের মতো সুখী করে। নানা চিন্তা ভাবনা নিয়ে সামনে পা বাড়াচ্ছি কিন্তু পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছি না। মন একবার বলছে সামনে যেতে আর ১০ বার বলছে পিছনে যেতে। সিদ্ধান্ত এতো দূরে এসেছে যে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। মুহিত অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চুপচাপ অটোরিকশাতে উঠলাম আর সাথে সাথে চলতে শুরু করছে। মুহিত আর আমি পিছনের সিটে বসেছি। মুহিত মাঝে মাঝে আমাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে আমি শুধু সেগুলোর উত্তর দিচ্ছিলাম। পাশের বাস স্ট্যান্ড এসে দুটো ঢাকার টিকিট কেটে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। ১২ টাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমার খালাশাশুড়ির ছেলে তার বউকে নিয়ে এখানে থাকেন। প্রথমে আমরা তার কাছে উঠি। কিন্তু উনাদের রুম একটা তাই আমাদের থাকার সমস্যা হচ্ছে। রাত কোন রকম কাটছে,, সকাল হতে না হতেই উনারা যে যার কাজে চলে গেছেন। আমি আর মুহিত বর্তমানে একা ঘরে। মুহিত আস্তে আস্তে আমার খুব কাছে চলে আসছে, তাকে বাঁধা দেওয়ার মতো কোন ইচ্ছে আমার মধ্যে নাই। আমি ও চাইছি সে আরো কাছে আসুক। বিগত কয়েকটি মাসের অতৃপ্ত বাসোনা পুর্ন হোক। বদ্ধ ঘরে দুটো মানব মানবী তাও যদি তারা স্বামী স্ত্রী হয় এবং এক সাথে থাকলে যা ঘটে ঠিক তাই হলো মুহিত আর সুমির মাঝে। সুখের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া শেষে ক্লান্ত দেহে সুমি মুহিত কে বললো

শিমলার মা কে তালাক দিবে কবে?

তালাক দিবো কিন্তু এতো টাকা তো নাই। দুইজন চাকরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করার পরে তোমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে ওই ব্যা/শা কে তালাক দিবো। তোমার সাথে এতো দিন যে অন্যায় করেছি তার জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি বলেই তো আজ আমি আবারও তোমার কাছে এসেছি। দয়া করে আমাকে আর নতুন করে ধোঁকা দিও না। মা বাবা আত্মীয় স্বজন সবাই কে ছেড়ে আমি শুধু তোমার কাছে আসছি। আবারও যদি আমাকে ধোঁকা দাও তাহলে ফিরে যাওয়ার কোন যায়গা নাই একমাত্র মৃত্যু ছাড়া।

কেটে গেছে এক সপ্তাহ, নতুন বাসা নিয়েছি আমরা, মুহিত একটা গার্মেন্টসে চাকরি পেয়েছে আমি ও পেয়েছি। ইচ্ছে ছিলো দুজন একই অফিসে চাকরি করবো কিন্তু তা হয় নি। একজনের টাকা দিয়ে থাকা খাওয়ার খরচ চলবে আর অন্যজনের টাকা সঞ্চয় হবে।নতুন করে এমন হাজারো স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

এখানে আশার পর থেকে দুজনেই চাইছি একটা বাচ্চা নিতে। মুহিতের নাকি প্রতিদিন ৪/৫ ঘন্টা করে ওভার-টাইম কাজ করতে হয়। ছেলেটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কিছু দিন থেকে শরীর খারাপ লাগছে। মুহিতের কাল অফিস নেই। আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় মুহিত বারবার বলছিল সে বাবা হবে। ছোট ছোট হাত পা নিয়ে বাবু আসবে আমাদের ঘরে। মুহিতের এমন আনন্দ দেখে আমার ভিষণ ভালো লাগছিলো।

হুম আবারও আমি প্রেগন্যান্ট, খুশিতে আকাশে পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করছে । পরম যত্নে আমাকে আগলে রেখেছে মুহিত। প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য ফলমুল কিনে আনে, আমাকে আর চাকরি করতে দেয় না। কিন্তু ওইযে কথায় আছে,, অভাগীর কপালে সুখ সই না। প্রেগন্যান্সির খবর পাওয়ার পরে মুহিত ভাবি কে তালাক দিয়ে আসে। যেহেতু দেনমোহর শোধ করে নি তাই মুহিত এবং আমার নামে মামলা করে ভাবি। এদিকে ৫ মাস চলছে আমার, পেট ভারী হয়ে গেছে। গত দুই বার বাচ্চা নষ্ট হওয়ার কারণে এখন এমনই বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেলো। ভেঙে পড়লাম আবারও। মুহিত পাগলের মতো চলাফেরা করে সব সময়। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া বা ঘুমায় না। আমার সাথে ভালো করে কথা ও বলে না। কি থেকে কি হয়ে গেছে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলিয়ে উঠবো।

মুহিতের নামে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে। তাই মুহিতের গার্মেন্টসে কাজ করা সম্ভব না। এতো গুলো টাকা এক সঙ্গে জোগাড় করা সম্ভব না আমাদের। আমি অন্য গার্মেন্টসে কাজ নিই, আর মুহিত বিভিন্ন রকম কাজ রাজমিস্ত্রী, রিকশা, বা হোটেলের কাজ করে। এভাবে আর কত দিন,, তাই সবাই পরামর্শ দিলেন, মুহিত কে পুলিশের কাছে স্যালেন্ডার করতে। স্যালেন্ডার করার কয়েকদিন পরে জামিন নেওয়া যাবে তারপর দিনে দিনে দেনমোহর শোধ করা যাবে।

আমি আর মুহিত বাড়ি চলে আসছি। শাশুড়ীর কাছে আমাকে রেখে মুহিত স্যালেন্ডার করে। জমানো কিছু টাকা ছিলো তা দিয়ে মেজো ভাসুর এবং বড় ভাসুর মিলে ১০ দিন পরে জামিন করে নেই। মেঝো ভাসুর আবারও বিয়ে করেছেন। এই বউটা অনেক ভালো। মেয়ে দুটোর খুব যত্ন করে।

দুজন আবারও ঢাকায় চলে আসছি। দুই মাস পরপর হাজিরা ডেট পরে, প্রতি বার ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। এইসব টাকা পয়সার চিন্তা আর বাচ্চা না হওয়ার চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছি। এরইমধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ নিয়ে আসে ইউসুফ। মুহিত কে কল করে মাঝে মাঝে। আমরা কেমন আছি সেটা জানার জন্য নাকি আমার মা গোপনে ইউসুফের মোবাইল থেকে কল করে। মুহিত আমাকে বলে, তোমার মা তোমার সাথে কথা বলবে। তোমাদের পাড়ার একজনের মোবাইল থেকে কল করেছে। অনেক দিন পরে নানা অশান্তি ভেদ করে ভালো কোন সংবাদ শুনতে পেয়ে চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু প্রতিনিয়ত ঘটা ঘটনার মতো এটাও উধাও হয়ে যায় নাম্বার দেখার সাথে সাথে। আমি জানি ইউসুফ ওইসব মিথ্যা কথা বলেছে। মা কখনোই ইউসুফের কাছে যাবে না। সুযোগ বুঝে একদিন আমি ইউসুফের সাথে কথা বলি আর তাকে অনেক বুঝায় যেন আমার কোন ক্ষতি করে না।আর আমি ইউসুফের নাম্বার ব্লক করে দিই।

আমি বুঝতাম না কথা গুলো রেকর্ড করার অপশন চালু করে রেখেছে মুহিত। আমাদের কথোপকথন সব রেকর্ড থেকে শোনে ফেলে। এতো দিন বাপের বাড়ি থেকে ইউসুফের সাথে কি কি করছি এইসব নিয়ে চিল্লাচিল্লি করে আর প্রতিনিয়ত গায়ে হাত তোলে। যে মেয়ে গ্রামে ছেলে পটিয়ে ফসটি/নসটি করতে পারে সেই মেয়ে শহরেও কত কি করে তার হিসাব নাই, এইসব কথা বলে আর আমাকে সর্বক্ষণ সন্দেহ করে। কারো সাথে প্রয়োজন বিষয়ে কথা বলতে গেলেও মুহিত তাকে নিয়ে সন্দেহ করে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বিষ খেয়ে মরে যায় নয়তো গলায় দড়ি দিই কিন্তু সাহসে কুলোয় না। মুহিত আর আমার সাথে তেমন শারীরিক সম্পর্ক করে না। যদি কখনো আমি জোর করি তাহলে কাছে আসে।

দুই বার কেইসের হাজিরা মিস গেছে, টাকা নাই তাই। কোট থেকে নাকি জরুরি নোটিশ পাঠিয়েছে বাসায়। মুহিত আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে আবারও ওই বউ নিবে কারণ দুজনের চরিত্র একই। মাইরের আঘাত ভুলা যায় কিন্তু এইসব কথার আঘাত সহ্য করা যায় না। অফিস থেকে বাসায় আসার পরে মুহিত মোবাইল নিয়ে পরে থাকে। কার কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলে জানিনা। তবে বুঝতে পারছি মুহিত নতুন কোন মেয়ের সাথে কথা বলে। কার সাথে কথা বলে জিজ্ঞেস করলেই ইউসুফের কথা তুলে আমাকে মারতে শুরু করে। সেদিন পাশের রুমের এক মেয়ে বললো, ভাই ওই মোড়ের পাশে বসে কারো সাথে কথা বলছে। আমি আসার সময় বেশ কিছু কথা শুনতে পায়। ভাই বলছে,, মোবাইল তোমার বুকে রাখো তারপর ভাই চুমু দেওয়ার শব্দ করে। এটা দেখেই আমি বুঝতে পারছি ভাই কি কথা বলছে তাই তারাতাড়ি চলে আসে সেখান থেকে।

আমি জানতাম এমন কিছু হবে, তাই আগে থেকেই মনকে শক্ত করে রেখেছি,, আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বো। মুহিত আসলো কিছুক্ষণ পারে আর রাতে ওর ডিউটি। বাসায় আসার সাথে সাথে আমি জিজ্ঞেস করি আবারও কার সাথে এইসব করছো, মাথার উপরে একটা কেইস ঘুরছে নতুন করে কিছু করলে আমি ও আরেকটা দিবো লু/চ্চামির একটা লিমিট থাকে। সাথে সাথে মুহিত তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। আর আমাকে দুনিয়ার না-জবান কথা বলে গালিগালাজ করতে লাগে। আমি ও সমান ভাবে বলে যাচ্ছি। মোবাইল বুকের উপর রেখে চুমা না দিয়ে সরাসরি দিবে, কে মানা করেছে। মুহিত রাগে ঘরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে স্টিলের খাটের পাঁয়া খুলে বেধড়ক মারধর করে। মনে হচ্ছে আমাকে আজ মেরেই ফেলবে তার প্রতিযোগিতা
য় নেমেছে। জান বাঁচানোর তাগিদে আমি মুহিতের হাত পা ধরে জীবন ভিক্ষা চাইছি। বাইরে থেকে সবাই থামতে বলছে এবং দরজা ধাকাচ্ছে। বাড়িওয়ালা এসে বাইরে থেকে চিল্লাতে লাগছে । ঘরের মধ্যে থালাবাসন এর পাশে বটি(তরকারি কাটার যন্ত্র) দেখতে পাই। পায়ে মেরে মেরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই আমার, নিজের জীবন সবার আগে, তাই কোনভাবে নড়তে নড়তে বটি দিয়ে মুহিত কে এক কোঁপ মারি, কোথায় লেগেছে জানি না। সেকেন্ড কয়েক মুহিত নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। এই ফাঁকে আমি হামাগুড়ি দিয়ে দরজা খুলে দিই আর বাইরে থেকে সবাই এসে আমাকে নিয়ে যায়। ঘরে রক্ত দেখে সবাই মনে করে আমার রক্ত।কিছু কিছু মানুষ মুহিতের হাত বেঁধে দিচ্ছে (হাতে কোপ লেগেছে) আর কেউ কেউ আমার সমস্ত শরীরে পানি দিচ্ছে। ফর্সা শরীরে মাইরের আঘাত স্পষ্ট। ফেটে রক্ত বের হওয়ার অবস্থা হাত পা পিঠ সব গুলো লালচে হয়ে গেছে, মুখে থাপ্পড় মেরেছিল তাই ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে।

মুহিত বাসা থেকে চলে গেছে অনেক আগেই। পাশের রুমের দুজন মহিলা আর বাড়িওয়ালা মিলে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। আগের মচকানো পায়ে আবারও আঘাত লাগার জন্য গুরুতর অবস্থা হয়েছে। ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন আর মেডিক্যালে থাকতে হবে বেশ কিছু দিন। বাড়িওয়ালা চাচা আব্বার নাম্বার নিয়ে কল দিলেন। আব্বাকে সব কিছু বলে ঢাকায় আসতে বলে আজকে দিনের মধ্যে। সন্তান যতই অপরাধ করুক, বাবা মা সন্তানের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসে এবং ক্ষমা করে দেয়। আব্বা আর মা রাতেই চলে আসে। কেটে যায় আরো ১০/১২ দিন। মুহিত পালিয়েছে ওই মেয়ের সাথে। মেয়েটা মুহিতের অফিসের। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। জমানো কোন টাকা পয়সা আমার কাছে নাই। সব মুহিতের কাছে থাকতো। বাড়ি ভাড়া দেওয়া লাগে নি, বাড়িওয়ালা আমাদের কে বিদায় করতে পারলে বাঁচে। কোন রকম মেডিক্যাল বিল শোধ করে আমাকে গ্রামে আব্বার বাড়িতে নিয়ে আসে।প্রায় দুই বছর পরে আবারও বাপের বাড়ি আসছি।ছোট বোন পপি ক্লাস ফাইভে পরে আর শামিম নিউ টেন।

মায়ের আদর যত্ন ভালোবাসায় একা একা হাঁটাচলা করতে পারি। মুহিতের কেইসে আমি 2 নাম্বার আসামি ছিলাম। যেহেতু দুই-তিন টা হাজিরাতে মুহিত উপস্থিত হয় নি তাই কোট অবমাননার দায়ে আবারও ওয়ারেন্ট বের হয় আমার নামে সহ। এক আঘাত সহ্য করতে না করতে আরেক আঘাত আমার দুয়ারে করা নাড়ে। জীবন টা অতিরিক্ত তিতা লাগছে। আমার জন্য মা বাবা ভাই বোনের ও জীবন অশান্তিতে ভরে থাকে। এক রাতে পুলিশ এসে আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এতো দিনের এতো মাইর এতো কষ্ট এতো অপমানে যে পরিমাণ আঘাত পাইনি, পুলিশে ধরার পরে তার থেকে দশগুণ বেশি আঘাত পেলাম। মুহিত কোথায় আছে জানি না। পুলিশেও খুঁজে পাচ্ছে না। প্রায় দের মাস পরে আমার জামিন হয়। অনেক টাকা পয়সা লেগেছে আমাকে ছাড়ানোর জন্য।

মুহিত কে স্বামী তালাক করেছি জামিনের দিনেই।যেহেতু আমাদের দেনমোহর মাত্র দশ হাজার তাই কোন মামলা করি নি। আব্বা আমাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলেন। গ্রামের মানুষের জামা কাপড় সেলাই সব কাঁথা সেলাই করে ভালোই ইনকাম হতো বাড়ি থেকে প্রয়োজন ছাড়া তেমন বের হই না। এদিক সেদিক থেকে অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করে। কারো বউ মারা গেছে, কারো বউ বাচ্চা রেখে চলে গেছে কেউবা তালাক দিয়েছে এমন পাত্র। বিয়ের প্রতি আমার আর কোন অনুভূতি নাই। তাই আমি প্রতিটি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। ভাইয়ের এসএসসি পরীক্ষা শেষ এখন কলেজে যায়। পপিও বড় হচ্ছে। কোন ডিভোর্সি মেয়েকে বাড়িতে রাখলে ছোট ভাইবোন দের ভালো বাড়িতে বিয়ে হবে না। নিজেকে মানিয়ে নিলাম যে, মেয়েরা সব সময় কোন না কোন ছেলের উপর নির্ভরশীল। হয় সে বাবা,ভাই নয়তো স্বামী। তাই আমি আবারও নতুন করে জীবন সাজাতে মনস্থির করলাম।

মুহিতের অংশের কিছু জমি বিক্রি করে মুহিত শিমলার মায়ের দেনমোহর শোধ করে মামলা মিটিয়ে নিয়েছে। এখন ওই গার্মেন্টসের মেয়েকে নিয়ে বাসায় থাকে। মেয়েটা নাকি মুহিতের মায়ের সাথে দিন রাত ঝগড়া করে। মাঝে মাঝে মুহিত বউয়ের কথা শুনে মায়ের গায়ে হাত তোলে। কিছু দিন আগে মায়ের গায়ে হাত তোলার জন্য মুহিতের বড় ভাই মুহিত এবং ওর বউ কে মেরেছিলো। লোক মুখে সব কথায় আমাদের কানে আসে।

আজ একটা নতুন প্রস্তাব এসেছে। পাত্রের বউ মারা গেছে ক্যান্সার হয়ে। এক ছেলে এক মেয়ে আছে। বউ ছেলে বিয়ে করেছে মেয়ে নাকি ক্লাস টেনে পড়ে। বয়স আমার আব্বার থেকে দুই এক বছর বেশি হবে মনে হয়। উনার অনেক জমিজমা আছে সাথে মাছের হ্যাচারী আছে। টাকা পয়সা, খাওয়া দাওয়া, পোশাক আশাকে কোন অভাব হবে না। পুরুষ মানুষের বয়স নাকি কোন ব্যাপার না তাই আমাকে নানান জন নানান রকম ভাবে বুঝাতে লাগলো,,,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here