আমার তুমি অন্তিম পর্ব

0
566

সুমুকে আজকে পাএপহ্ম দেখতে এসেছে। পাএপহ্ম বলতে আশিক তার বাবা মা কে নিয়ে এসেছে। টানা এক সপ্তাহ গ্রামে কাটিয়ে কালকেই ওরা ঢাকায় ফিরেছে।
আর আজকেই আশিক বাবা মা নিয়ে হাজির। কিন্তু সুমু বেকে বসেছে কোনোভাবেই ওনাদের সামনে যাবে না। আর এই বিয়েও সে করবে না।
আশিককে তার পছন্দ না।
সাহেদা বেগম মেয়ের ওপর রেগে দু চারটা কথা শোনা তেও ভোলে না।
পরে তুলতুল সাহেদা বেগমকে শান্ত করে পাঠিয়েছে ওনাদের আপ্রায়ণ করার জন্য। তুলতুল সুমুকে বুঝিয়ে নিয়ে যাবে।

“তোর আশিককে পছন্দ না কেনো?

সায়ান প্রশ্ন করে।

” ঠিকি তো।
ছেলে ভালো ভালো জব করে। ভালো রাখবে তোকে।

শান বলে।

“আমার ভালো জব, ভালো ক্যারিয়ার চাই না। আমার এমন একজন মানুষ চাই যে তার সুখ দুঃখ সব আমার সাথে ভাগ করে নেবে। নিজের স্বপ্ন পূরণে আমাকে তার পাশে রাখবে।
আমি লোভী নই যে পকেট ভর্তি টাকা দেখলে গলে যাবো।

চিৎকার করে বলে সুমু।
সায়ান শান তুলতুল চমকে ওঠে৷ সুমুর গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
সুমুর বলা কথাগুলো ড্রয়িং রুম থেকেও স্পষ্ট শোনা যায়। আশিক মাথা নিচু করে ফেলে। আশিকের মা বাবা দুজনই উঠে দাঁড়ায়। সোহেল মিয়া আর সাহেদা বেগম বিচলিত হয়ে পড়ে। আশিকও ভয় পেয়ে যায়। এবার নিশ্চয় ওনারা চলে যাবে?

” বাবা প্লিজ যে

আশিক আকুতি ভরা দৃষ্টিতে বাবাকে বলতে যায়। উনি কড়া চোখে আশিকের দিকে তাকায়। চুপসে যায় আশিক।

সুমুর রুমের দিকে পা বাড়ায় উনি।
পেছনে আশিকের মা আশিক সোহেল মিয়া সাহেদা বেগমও আসে।

সুমু এক কোনে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। আশিকের সাথে যে ওর রিলেশন ছিলো একটা কেউ কখনো আঁচ করতে পারে নি।

আশিকের বাবা সুমুর মাথায় হাত রাখে। চমকে ওঠে সুমু। সামনে অচেনা মানুষটাকে দেখে বুঝতে পারে উনিই আশিকের বাবা। আশিকের সাথে চেহারার অনেকটা মিল আছে।
ওনাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে সুমু। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

“তোমাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার ছেলেটা এমনই। আমাদেরও কিছু জানায় নি। তুমিও যেমন ছটফট করেছো আমরাও এতোদিন ওমনই ছটফট করেছি।

এবার তুমি আমার বাড়িতে চলো একবার। তারপর পায়ে সিঁকল বেঁধে আটকে রাখবো ওকে। তখন দেখবো কি করে দুরে চলে যায়।

বেশ রসিকতা করে বলেন উনি। না চাইলেও মুচকি হাসে সুমু।

” আশিকের সাথে তোর সম্পর্ক ছিলো এটা ভুলে যা। তুই আশিককে চিনিসই না। আমাদের জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
আমার মেয়ে নেই। একটাই ছেলে। সেও কিছুদিন পরপর নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। দুই বুড়ো-বুড়ি কি করে থাকি সেটা আমরাই জানি।
তুই না হয় আমার মেয়ে হয়ে আমাদের বাড়িতে চল।

আশিকের মায়ের আবেগ ভরা কথায় আর ন করতে পারে না সুমু। মুখে যতযাই বলুক না কেনো? ভেতরে ভেতরে এখনো তো আশিককে বড্ড ভালোবাসে।

সুমু মুচকি হাসাতে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। আশিক লাফিয়ে ওঠে। আশিকের কান্ড দেখে সবাই মুখ টিপে হাসে। সুমু লজ্জা পেয়ে যায়।

সুমুকে শাড়ি পড়াতে গিয়ে তুলতুলের গা গুলিয়ে আসে। সকাল থেকেই এমনটা হচ্ছে। মাথাও ঘুরছে৷ কিন্তু এই মুহুর্তে কাউকে জানাতে চাইছে না তুলতুল। কেনোনা সবাই অযথা টেনশন করবে ডাক্তার ডাকবে ফলে সুমুর পাকা কথা আর হবে না।

তাই মুখে লেবু গুঁজে সুমুকে সাজিয়ে দিতে থাকে। ইশাকে ডেকেছিলো হেল্প করার জন্য। কিন্তু বেচারি এখানে এসেই শানকে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেছে।

তুলতুল আড়চোখে একবার তাকায় ওদের দিকে। দুটোই পাগল।

“শুনো না
ইশা শানের হাতের ভাজে হাত গলিয়ে দিয়ে বলে।

” হুমম বলো

“বাবাকে বলেছি আমাদের কথা।

” কি বললো?

“বলেছে এক্সাম শেষ হলে কাবিন করে রাখবে। তারপর অনার্সে উঠলে তোমার হাতে তুলে দেবে।

মন খারাপ করে বলে ইশা

” এতে তোমার মন খারাপ কেনো? ভালো কথা তো।

“আমি তো একটা দিনও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।

শানের দুই গালে হাত দিয়ে বলে ইশা।

” পাগলি আমি আছি তো সব সময়। তোমাকে আমার হাতে তুলে দেবে না। কিন্তু আমাকে তো তোমার হাতে তুলে দেবে?
আমি নাহয় তোমাদের বাড়ি গিয়েই থাকবে।

শান হেসে বলে।

“সত্যি হুমম সত্যি
তবে রাত দশটার পরে যাবো আর ফজরের আজানের সময় চলে আসবো। চলবে?

” দৌড়াবে।

তুলতুল সুমুকে লিপস্টিক লাগাতে বলে এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। এবার বমি হয়ে যাবেই।
রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকেই গড়গড় করে বমি করে দেয়। সায়ান বিছানায় বসে ফোন দেখছিলো।
তুলতুলকে এভাবে ওয়াশরুমে যেতে দেখে তুলতুলের পেছনে সায়ান যায়।

বমি করে তুলতুল অস্থির হয়ে গেছে। সায়ান তুলতুলের ধরে।

” কি হয়েছে?
চিন্তিত ভঙিতে বলে সায়ান। চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।
তুলতুল মুখ টিপে হাসে।

“রুমে নিয়ে চলেন তারপর বলছি।

সায়ান কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে। বিছানায় বসিয়ে দেয়।

” এবার বলো? ডাক্তার ডাকবো?
তুলতুলের দুই গালে হাত দিয়ে বলে সায়ান।

“নাহহ ঠিক আছি আমি।
তুলতুল সায়ানকে অস্বস্ত করে বলে।

” বললেই হলো? আমি দেখতে পারছি

সায়ানের ঠোঁটে আঙুল ঠেকায় তুলতুল। সায়ান চুপ করে যায়।

“আমাদের তিনি আসছে।

সায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে লজ্জায় সায়ানের বুকে মুখ লুকায় তুলতুল।
সায়ানের দুই মিনিট লাগে বুঝতে। যখন বুঝতে পারে তুলতুল কে আসার কথা বলছে তৃপ্তির হাসি হাসে সায়ান।

“শিওর?

” পাক্কা শিওর

তুলতুল প্রেগন্যান্সির কিট সায়ানের সামনে ধরে। সায়ান খুশিতে তুুলতুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

“ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি

” হয়েছে আর বলতে হবে না।
আমিও আপনাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।
আমি শুধুই আপনার তুমি

সায়ান তুলতুলের নাকে নাক ঘসে।

“#আমার তুমি

আবারও বুকের মাঝে তুলতুলকে আগলে নিয়ে বলে সায়ান।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here