তুলতুল মিষ্টি করে হাসে। সায়ান তুলতুলের গলায় হাত ডুবিয়ে দেয়। তুলতুল সায়ানের চোখের দিকে তাকায়। লোকটার চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। হয়ত মনে পড়ছে সেই সব দিনের কথা। তুলতুল জানতো এটাই হবে। তাই ভয় পায় নি।
তুলতুল সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
“ভাইয়া আর কতোখন দাঁড়িয়ে থাকবো বলেন? পেছনে তো পাখি মেডাম দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখিয়ে এটলিস্ট একটা কিসও করে ফেলেন। আর কিছু না হয়
তুলতুলের ফিসফিস করে বলা কথায় সায়ান বড় বড় চোখ করে তাকায়। এক ঝটকায় তুলতুলের থেকে দুরে সরে আছে।
” পাখি শো
বলতে বলতে পেছনে তাকিয়ে দেখে পাখি নেই।
তুলতুল এই ফাঁকে এক দৌড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। খিলখিল করে হেসে ওঠে তুলতুল। সায়ান দাঁত কটমট করে তাকায় তুলতুলের দিকে।
“পাখি নামটা আপনার মুখ থেকে না মুছে আমি নাতিনাতনি মুখ দেখবো না।
বুজলেন মিস্টার অন রোমান্টিক। বাংলা ভাষায় যেটাকে বলে বেরসিক।
ঠাস করে ওয়াশরুমে দরজা বন্ধ করে দেয় তুলতুল।
” দরজা খোলো।
সায়ান দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে। তুলতুল দরজার পাশে বসে হাসতে থাকে।
“কতোখন থাকবো ওয়াশরুমে?
সায়ান দাঁত কটমট করে বলে।
” যতখন না আমার শাড়ি পড়া শেষ হচ্ছে। এটাই হচ্ছে তুলতুলের পেছনে লাগার শাস্তি।
গলা উঁচু করে বলে তুলতুল।
“ইডিয়েট
লাস্ট বার বলছি দরজা খোলো।
” খুলবো না।
“খুন করে ফেলবো তোমায়।
” আগে ওয়াশরুম থেকে তো বের হন তারপর নাহয় খুন করিয়েন।
সায়ান আর কিছু বলে না। সুস্থ সবল মানুষদের বোঝানো যায়। পাগলদের বোঝানো যায় না। একে ডাকাডাকি করলে শুধু শুধু নিজের এনার্জি নষ্ট হবে।
“আস্ত একটা পাগল
স্টুপিট
তুলতুল শাড়ি পড়তে জানে না। শাড়িটা উল্টেপাল্টে দেখছে শুধু। কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতেই পারছে না।
অবশেষে মাথায় আসে ইউটিউব মামার কথা। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে শাড়ি পড়তে থাকে তুলতুল।
ভালোই পেরেছে। কিন্তু পবলেম হচ্ছে শাড়িটা পাতলা হওয়াতে পেট দেখা যাচ্ছে। এটার কি করবে?
আবার ইউটিউবে সার্চ দেয় কিভাবে পেট ঢেকে শাড়ি পড়তে হয়।
এটাও পেরে যায়।
মনের মতো করে সেজে নেয়। সাজতে তো হবেই। ওই পাখির থেকেও বেশি কিউট দেখাতে হবে তো।
ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক চোখে মোটা করে কাজল মুখে পাউডার।
সব শেষে কয়েকটা সেলফি তুলে নেয় তুলতুল।
সায়ান ওয়াশরুমে পায়চারি করছে। ইচ্ছে করছে তুলতুলকে গিলে খেয়ে ফেলতে। কতো বড় ইডিয়েট হলে এভাবে ওয়াশরুমে আটকে রাখতে পারে?
একবার বের হতে পারলে তুলতুলকে সত্যি সত্যি এই বিল্ডিংয়ের ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।
এবার পবলেম হচ্ছে তুলতুল হাঁটতে পারছে না। ইউটিউব এ শাড়ি পড়ার ভিডিও থাকলেও শাড়ি পড়ে কিভাবে হাঁটতে হয় এটার কোনো উওর নেয়। গুগলেও সার্চ দিয়েছিলো তুলতুল কিন্তু ফলাফল শূন্য.।
কি আর করার শাড়ি উঁচু করে ব্যাঙের মতো লাফাতে হবে। এটাই একমাত্র উপায়।
তুলতুল দুই হাতে শাড়ি উঁচু করে ওয়াশরুমের দরজা ওবদি এসে দরজা খুলে দেয়।
হুরমুর করে বের হয়,সায়ন। সায়ানকে দেখে তুলতুল দৌড়ে পালাতে গিয়ে ধাপ করে পড়ে যায়৷ কোমরে বেশ ব্যাথা পায়। সায়ান বুকে দুই হাত গুঁজে ভ্রু কুচকে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে। বুক ফুলিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। ভয় পাওয়া যাবে না।
“খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না? আমাকে ওয়াশরুমে আটকে রেখেছিলি? সায়ান মাহমুদকে?
আঙুল তুলে নিজেকে দেখিয়ে বলে সায়ান
” আআআমি সসরি।
ভুল হয়ে গেছে।
তুলতুল থেমে থেমে বলে।
“আজকে তোকে আমি খুন করবোই।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
তুলতুল বিরক্ত হয়৷
” হ্যাৃ হ্যাঁ জানি তো খুন করবেন। এটা ছাড়া আর পারেন বা কি? যতসব
বিরবির করে বলে তুলতুল জোরে বলার সাহস নেই।
“ওই কি বিরবির করছিস?
সায়ান ধমক দিয়ে বলে। তুলতুল কেঁপে ওঠে।
তুলতুল ভেবেছিলো সায়ান হয়ত ওকে টেনে তুলবে। কিন্তু নাহহহ। এর চেহারার যে হাল তাতে টেনে ওঠানো দুর পারলে ছাঁদ থেকেই ফেলে দিলো।
তুলতুল নিজেই উঠে দাঁড়ায়।
সায়ান এবার ভালো ভাবে খেয়াল করে তুলতুলকে। এরকম সাজ দেখো রাগটা তরতর করে বেরে যায়।
” জঙ্গলি বিড়াল কেনো সেজেছিস? এটা তোর পারসোনাল রুম না৷ এখানে তুই একটা ছেলের সাথে রুম শেয়ার করছিস।
তুলতুল মুখ বাঁ কায় কিছু বলে না।
“কথা বলছিস না কোনো?
তুলতুল চুপ করে থাকাতে বিরক্ত লাগছে সায়ানের।
” কথা বললেই তো ধমক দিবেন।কিন্তু আমি এখন ধমক খেতে চাইছি না।
নরম সুরে বলে তুলতুল।
“ড্রামা করতে ভালোই শিখেছিস?
” তাতে আপনার কি?
সায়ান তেরে আছে তুলতুলের দিকে।
“আই হেইট ড্রামা।
তুলতুল সায়ানের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে যায়। ভয়ে কলিজাটা শুকিয়ে গেছে।
পিছতে পিছতে তুলতুল খাটের ওপর বসে পড়ে।সায়ান ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তুলতুলকে। চোখ বড়বড় করে তাকায় তুলতুল।
সায়ান আশেপাশে খুঁজে একটা বালিশ নেয়। তারপর বালিশটা তুলতুলের ওপর রেখে তাতে ভর দিয়ে তুলতুলের দিকে ঝুঁকে।
” এমন করেন কেন ভাইয়া?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তুলতুল।
“সাট আপ
আবার ধমক দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল ছিটকে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
সায়ান তোয়ালে দিয়ে তুলতুলের লিপস্টিক মুছে দেয়। সাথে সাথে তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
তারপর তুলতুলের মাথায় চাটি মারে সায়ান সাথে সাথে ব্যাথা পেয়ে আহহহ শব্দ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে তুলতুল।
সায়ান তোয়ালের এক আংশে থুথু শব্দ করে তুলতুলের চোখ মুছিয়ে দেয়।
” ইয়াকুব” নাক মুখ সিঁটকে ফেলে তুলতুল। সায়ান বাঁকা হাসে।
কাজ শেষ করে সায়ান উঠে বসে।
“এটা কি করলেন?
তুলতুল ও লাফ দিয়ে উঠে বসে। রাগী গলা বলে সায়ানকে।
” এখনো কিছুই করি নি। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী। বলে সায়ান।
চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে তুলতুল। এতো দামি লিপস্টিক মুছে দিলো থুথু দিয়ে কাজল মুছে দিলো আর বলছে এখনো তো কিছুই করি নি। আর কি করার বাকি আছে?
তুলতুলের ভাবনার মাঝেই সায়ান কুঁচি ধরে টান দেয়৷ সাথে সাথে সব গুলো কুঁচি এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যায়।
অবাক হয়ে যায় তুলতুল। দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তাকায় সায়ানের দিকে।
“চেঞ্জ করে আয়।
সায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে তার ছিপি খুলতে খুলতে বলে।
তুলতুল রাগে ফুঁসছে।
” জঘন্য একটা লোক আপনি। আমি চাইছিলাম আপনার সাথে মানিয়ে নিতে। কিন্তু ইম্পসিবল। আপনার মতো একজন বেরসিক খুতখুতে লোকের সাথে থাকা অসম্ভব।
দুই হাজার টাকা দিয়ে লিপস্টিকটা কিনে ছিলাম। পঞ্চাশ টাকার লিপস্টিক আজকেই ঠোঁটে দিলা আর আপনি নষ্ট করে দিলেন?
হনুমান এএকটা। জীবনেও বউ পাবেন না অভিশাপ দিলাম।
তুলতুল রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
সায়ান এক মনে পানি খেয়ে যাচ্ছে। তুলতুলের কথা কানেই তুললো না।
চলবে
ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছি। কালকে এইটুকু লিখে রাখছিলাম। তাই দিয়ে দিলাম।
আগামী কাল সুস্থ থাকলে বড় করে পর্ব দেবো ইনশাআল্লাহ।