সাধসকালে সোহেল মিয়া আর সাহেদা বেগমের তমুল ঝগড়া বেঁধে গেছে। ঝগড়ার মূল টপিকটাকে হচ্ছে সোহেল মিয়া দাঁত ব্রাশ না করেই চা পান করেছে।
এখন ব্রেকফাস্ট করতে দেবেন না সাহেদা বেগম তাকে। সোহেল মিয়া অসহায় ফেস করে মায়ের দিকে তাকায়। মমতা বেগম ফজরের নামাজ পড়েই তছবি নিয়ে বসেছেন। সব সময় কপাল ঔবদি ঘোমটা থাকে তার। প্রয়োজন ছাড়া কখনোই তাকে কথা বলতে দেখা যায় না। ছেলে আর ছেলের বউয়ের ঝগড়ায় বেশ বিরক্ত উনি। ভ্রু পেকে সাদা হয়ে গেছে। সাদা ভ্রু জোড়া কুচকে ছেলের বউয়ের দিকে তাকায় উনি। সাহেদা বেগম চুপসে যায়। কখনো একটা ধমক পর্যন্ত দেয় নি সাহেদা বেগমকে। তবুও খুব ভয় পায় শাশুড়ী কে। আসলে এটা ভয় না প্রচন্ড শ্রদ্ধা করেন তাকে।
সাহেদা বেগমকে চুপচাপ থাকতে দেখে সোহেল মিয়া গোটা কয়েক পরোটা হাতে নিয়ে ভৌ দৌড় দেয়। একদম মায়ের পেছনে গিয়ে লুকায়।
সাহেদা বেগম খুন্তি হাতে চোখ পাকিয়ে তাকায়। শাশুড়ী না থাকলে এগিয়ে দিয়ে কয়েক কথা শুনাতো। শাশুড়ীকে দেখে থেমে যায়।
সারা রাত ঘুম হয় নি সায়ানের। ছটফট করতে করতে রাত পার করেছে। তুলতুলের সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু মা আর বোনের জন্য যায় নি তুলতুলের সাথে কথা বলতে।
বাবা মায়ের ঝগড়ার শব্দ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে সায়ান। আজকে অফিস আছে। সারাদিন অফিসে থাকতে হবে। তুলতুলের সাথে কথা বলার সুযোগ থাকবে না এখনই কথা বলতে হবে।
চাকরির ওপর ভীষণ বিরক্ত সায়ান। কেনো যে চাকরি করতে গেলো?
দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে তুলতুলের রুমের উদ্দেশ্য ছোটে সায়ান।
ফোন কাঁপার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তুলতুলের। বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকাায়। এতোদিন বন্ধ করে রেখেছিলো ফোন। আজকেই অন করেছে। এখন ফোনটাও বিরক্ত লাগে তুলতুলের।
ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। ভ্রু কুচকে ফেলে তুলতুল। বাড়ির লোক ছাড়া কেউ তুলতুলের নাম্বার জানে না তাহলে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো কি করে?
হয়ত বাড়ির কেউ ই কল করে।
ফোন রিসিভ করে কানের পাশে রাখে তুলতুল।
চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে হ্যালো বলে।
ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা হয়ত মৃদু হাসে।
“কেমন আছে আমার তুলতুল পাখি?
শীতল শান্ত কন্ঠ কানে আসতেই চমকে ওঠে তুলতুল। এক লাফে উঠে বসে। বুক টিপটিপ করছে। কান থেকে ফোন নামিয়ে একবার স্কিনে তাকায়।
জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” শুনতে পাচ্ছ?
ওপাশ থেকে প্রশ্ন করে। তুলতুল অনিচ্ছা থাকা স্বতেও ফোনটা কানে নেয়।
“হুমমম
ছোট করে উওর দেয়।
” তোমার ঘুম ঘুম কন্ঠটা আমাকে মাতাল করে দেয় জানো? ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি। কতদিন পর শুনলাম বলোতো?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তুলতুল। এই ছেলে কখনোই জানতো না কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। এর কথাতেই তুলতুলের ভালো লাগা খারাপ লাগা কোনটাই আসে না।
“এই তুলতুল আমার আর তার সইছে না। বাবাকে বলেছি এই মাসের বিয়েটা করে ফেলবো। পড়ালেখা দিয়ে করবে টা কি? আমি তো কষ্ট করে পড়লাম। এবার তোমাকে পড়তে হবে না। মন দিয়ে আমার সাথে রোমাঞ্চ করবে এটাই এনাফ।
ঠোঁট চওড়া করে হেসে বলে ইফাদ।
সারা শরীর রি রি করে ওঠে তুলতুলের। দাঁতে দাঁত চেপে সয্য করে নেয়। একটা মানুষের কথা বলার ধরণই বলে দেয় তার মানসিকতা কেমন।
” অলওয়েজ মিস ইউ বেবি। আই লাভ ইউ সো মাচ
ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ইফাদ। মাতাল করা ছিলো ভয়েসটা। তবে ভালোবাসার মাতাল না হয়ত বিষাক্ত মাতাল।
তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।
“ভালোবাসেন আমায়। তাই তো?
আপনি কি জানেন ইফাদ ভালোবাসার মানুষটির ইচ্ছে অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হয়? সম্মান করতে হয়?
হয়ত জানেন না। কাউকে কল দিলে আগে জিজ্ঞেস করতে হয় কেমন আছো? দেন কি করো? শরীর ঠিক আছে? এসব।
আমি একটু শান্তিতে থাকতে এখানে এসেছি। প্লিজ একটু একা ছেড়ে দিন আমায়।
কর্কশ গলায় বলে তুলতুল।
” বিয়ের কিন্তু আর বেশি দিন দেরি নেই সুইটহার্ট।
“জানি
ফোনটা কেটে দেয় তুলতুল।
ভীষণ রাগ হচ্ছে। এই লোকটাকে বিয়ে করতে হবে ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
” ভালোই তো রোমাঞ্চ চলছিলো? খুব রোমান্টিক একজন জুটিয়েছিস দেখি?
চমকে ওঠে তুলতুল। বিচলিত চোখে দরজার দিকে তাকায়। সায়ান বুকে হাত গুঁজে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে হাত পা শীতল আসে তুলতুলের।এবার নিশ্চয় গালে থাপ্পড় পড়বে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে দুই গালে হাত দেয় তুলতুল। গাল লাল হয়ে থাকে। এবার থাপ্পড় মারতে আসলে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেবে সায়ানকে।
তুলতুলের কান্ড দেখে সায়ান হেসে ফেলে।
এক পা এক পা তুলতুলের দিকে এগিয়ে আসে। ধাপ করে বসে তুলতুলের পাশে।
“হবু বর?
ফোনের দিকে ইশারা করে বলে সায়ান।
তুলতুল ফোঁস করে শ্বাস নেয়। মাথা নিচু করে মাথা নারায় মানে হ্যাঁ
সায়ান মুচকি হাসে।
” থাপ্পড় দিবো না হাত নামা।
তুলতুলের গাল থেকে হাত নামিয়ে দিতে দিতে বলে সায়ান।
“কি কি বাজে কথা বলেছে তোকে বল?
সায়ান চোখ মুখ শক্ত করে বলে। তুলতুলের চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। মাথা নিচু করে থাকে।
” বল?
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল কেঁপে ওঠে। সাথে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়।
“ইডিয়েট শুধু পারবি কাঁদতেই।
সায়ান চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
” এখন আংকেলকে কল দিয়ে বলবি তুই আমায় ভালোবাসিস। তুই এই বিয়েটা করবি না।
সায়ান নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
তুলতুলের কান্না থেকে যায়। গোলগোল চোখ করে তাকায় সায়ানের দিকে।
“কি হলো নে?
সায়ান আবার ধমক দিয়ে বলে।
তুলতুল হাত গুটিয়ে নেয়।
” বলবি না?
সায়ান আবার বলে।
তুলতুল মাথা নারায়। মানে বলবে না।
“কেনো বলবি না?
তুলতুল চুপ করে থাকে।
” কথা বলতে হবে আমার সাথে। নাহলে থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দেবো।
সায়ান আবারও ধমকে বলে।
“আমার বিয়েটা করতে কোনো পবলেম নেই। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চায় না। কারণ ইফাদ আর পড়তে দেবে না আমায়। তাই কষ্ট হয়।
তুলতুল ফুঁপিয়ে বলে।
সায়ানের বুকের বা পাশটা চিনচিন করে ওঠে। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। রাতে শরীর কাঁপছে। মুহুর্তেি চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
তুলতুলের পাশ থেকে ওর ফোনটা নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারে। মুহুর্তেই ভেঙে গুড়িয়ে যায় ফোনটা। দুই হাতে কান চেপে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তুলতুল। ভয়ে বুক টিপটিপ করছে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চোখ থেকে অনবরত পানি গড়াচ্ছে।
ফোনটা ভেঙেও শান্ত হয় না সায়ান। উঠে দিয়ে দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। জোরে জোরে ঘুসি দিতে থাকে দেয়ালে।
আতঙ্কে ওঠে তুলতুল।
” কি করছেন আপনি? থামুন
চিৎকার করে বলে তুলতুল। কিন্তু সায়ান থামে না। অনবরত আঘাত করতে থাকে হাত দিয়ে দেয়ালে।
বাম হাতটা থেঁতলে গেছে সায়ানের।
তুলতুল তারাহুরো করে বিছানা থেকে নামে। এক পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সায়ানের কাছে গিয়ে সায়ানের হাতটা ধরে।
“প্লিজ এমন করবে না।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল। জোর করে তুলতুলের কাছে থেকে হাতটা সরাতে যায় সায়ান। তুলতুল নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে।
সায়ানের হাতের রক্তের তুলতুলের হাত দুটো মাখিয়ে গেছে।
সায়ান হাঁটু মুরে বসে পড়ে তুলতুলের কোমর জড়িয়ে ধরে সায়ান। তুলতুল সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে কেঁদেই যাচ্ছে তুলতুল। এখনো থরথর করে কাঁপছে। এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি তুলতুল।
” আমি ১০০% শিওর দিয়ে বলতে পারি তুই আমারই হবি। বিয়েটা তোর আমার সাথেই হবে। দুনিয়া উল্টে ফেলতে হলে তাই করবো তবুও তোকে ছাড়বে না।
কিন্তু তবুও কেমন কষ্ট হয় আমার।
জানিস সারা রাত ঘুমতে পারি নি আমি।
তুই শুধু আমার তুলতুল।
আরও একটু শক্ত করে ধরে বলে সায়ান।
তুলতুল কিছু বলতে পারছে না।
“আপনি আমাকে থাপ্পড় দিয়েন রেগে গেলে। কিন্তু নিজের হ্মতি করবেন না প্লিজ।
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তুলতুল।
সায়ান প্রশান্তির হাসি হাসে। কিছু বলে না।
” উঠুন হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে তো।
তুলতুলের কথা মতো সায়ান উঠে। তুলতুল সায়ানের হাত ধরে বিছানায় বসায়।
আশেপাশে খুঁজে নিজের ওড়নাটা চোখে পড়ে তুলতুলের। ওড়নাটা দিয়ে বেঁধে দেয় সায়ানের হাত।
হঠাৎ সায়ানের কি হয় এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে।
চলবে
গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। এই পর্বে একটা নেক্সট আর নাইস দেখলে দুই দিন গল্প দেবো না বলে দিলাম।😊