আমার তুমি – ২য় পর্ব

0
739

সামনের লোকটা তুলতুলের ফোস্কা পড়া হাতটাকেই শক্ত করে ধরেছে। ব্যাথায় তুলতুল আহহহ করে ওঠে। লোকটা এতখন তুলতুলের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। তুলতুলের আর্তনাদ শুনে টনক নরে সাথে সাথে লোকটা ছেড়ে দেয়। তুলতুল খানিকটা পিছনে গিয়ে হাতের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।

সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।

“আশিক এখানে কেনো এসেছিস?
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে করা প্রশ্নে ভরকে যায় আশিক। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে সায়ান। আশিক সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। সায়ানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো ঙ্গান আছে আশিকের। কিন্তু এটাই বুঝতে পারছে না হঠাৎ সায়ান রেগে কেনো গেলো? আশিক তো কিছু করে নাই।

তুলতুলের নাক টানার শব্দে একবার তুলতুলের দিকে তাকায় আশিক। চোখ আটকে যায় আশিকের। আগেও এই বাড়িতে অনেক এসেছে কই কখনো তো এই মেয়েটাকে দেখে নি। কে এই মেয়ে? ফর্সা শরীরে কালো থ্রি পিছটা দারুণ মানিয়েছে। ফর্সা হাতটা ফোস্কা পড়ে কালচে হয়ে গেছে। কান্না করার ফলে নাক লাল হয়ে গেছে৷ ঠোঁটে হয়ত লিপস্টিক নেয় নি কিন্তু তবুও ঠোঁটটা গোলাপি।
আপনাআপনি আশিকের হাত চলে যায় বুকে।

আশিক তুলতুলের দিকে এভাবে তাকানো দেখে সায়ানের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।

” আশিক
আশিকের কলার ধরে খানিকটা উচ্চ কন্ঠে বলে সায়ান। রাগে থরথর করে কাঁপছে সায়ান। ফস ফস করে নিশ্বাস দিচ্ছে। বারবার দাঁতপর সাথে দাঁতের স্পর্শ লেগে কচকচ শব্দ হচ্ছে
কেঁপে ওঠে তুলতুল। গুটিশুটি মেরে পিছিয়ে যায়। হাতের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়।

আশিকও বেশ চমকে যায়। বেশ ঘাবড়েও যায়।

“তুই আমার ঔষধ আনতে বলেছিলি। সেটাই তো দিতে এসেছি। এতো রেগে আছিস কেনো?
আশিক অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কোনোরকমে ঠোঁট মেলে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে। হাত উঁচু করে হাতে থাকা ঔষধ গুলো দেখায়।
সায়ান ছেড়ে দেয় আশিককে। আশিক হাফ ছেড়ে বাঁচে। সায়ান কটমট চোখে তুলতুলের দিকে তাকায়।
তুলতুল নিচের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় খেয়াল করে না সায়ানের সেই দৃষ্টি।

সায়ান আশিকের হাত থেকে ঔষধ গুলো নেয়।
” কার হাত পুরেছে বল আমায়৷ আমি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
আশিক বলে।
“এরপর থেকে আমার বাড়িতে আসলে বাড়ির গেটের কাছ থেকে ফোন করবি আমায়। হুটহাট আমার রুমে ঢুকে যাবি না। আর এদিকে সেদিক একদম তাকিয়ে থাকবি না। তুই তো জানিসই আমার জিনিসে নজর দেওয়া আমার পছন্দ না। (তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে কথাটা সায়ান)
এখন যা এখান থেকে।
আশিকের কলার ঠিক করে দিতে দিতে খুব ঠান্ডা গলায় বলে সায়ান।
আশিক বেশ অবাক হয়। কেনোনা সায়ান আগে কখনো এভাবে বলে নি।
” কেনো বল তো?
ভ্রু কুচকে বলে আশিক।
সায়ান জবাব দেয় না। আশিকের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকায়।
“না মানে ওনার হাত পুরেছে। ওনার জন্যই নিশ্চয় ঔষধ আনতে বলেছিস? তুই তো আর ডাক্তার না। ডাক্তার আমি। তো আমি ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছি।
একগাল হেসে বলে আশিক।
আশিক তুলতুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তুলতুল মাথা উঁচু করে।
সামনে আশিককে দেখে দু পা পিছিয়ে যায়।
“সরি আসলে আমি খেয়াল করি নি।
অপরাধীর সুরে মাথা নিচু করে বলে আশিক।

” কেনো খেয়াল করতে কি কোমর জড়িয়ে ধরতি?
সায়ানের প্রশ্নে আশিক ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে। সায়ান বরাবরই সব কথার উল্টো উওর দেই। সেটা নিজের হ্মেএে কিন্তু আজকে এই মেয়েকে প্রশ্ন করলেও সায়ান রেগে যাচ্ছে। তুলতুল এক পলক সায়ানের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হতে নেয়।

“আমি আশিককে বের হতে বলেছি তোকে না।
সোজাসাপটা বলে সায়ান। দাঁড়িয়ে যায় তুলতুল। এই মানুষটার কথা উপেক্ষা করা তুলতুলের পহ্মে অসম্ভব।

” আশিক কেনো যাচ্ছিস না?
“বললাম তো
সায়ান হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় আশিককে।
” আসছি
বলে মাথা নিচু করে চলে যায় আশিক। যাওয়ার সময় এক পলক তাকায় তুলতুলের দিকে।

আশিক বের হতেই সায়ান ফোঁস করে নিশ্বাস নেয়।
“এই তুলার বাচ্চা পাগল করে দেবে আমায়।
বিরবির করে বলে সায়ান।
“ওই তুলা এখানে বস।
সায়ান খাটে বসাক নিজের পাশে জায়গা দেখিয়ে বলে তুলতুলকে।
তুলা নামটা শুনে তুলতুল কটমট চোখে তাকায় সায়ানের দিকে। কিন্তু সায়ান সেই দৃষ্টি দেখে না। সায়ানতো এক মনে স্যাভলনে তুলা চুবাচ্ছিলো।

” ওই তুলা শুনতে পাচ্ছিস না?
থাপ্পড়ইতে থাপ্পড়াইতে বসাতে হবে না কি?
ধমক দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে সায়ানের পাশে বসে। চোখে এখনো পানি টলমল করছে। সায়ান বুঝতে পারে না এই মেয়ের চোখে ঠিক কি পরিমাণ পানি আছে? হয়ত একটা বিশাল সমুদ্র আছে। নাহলে কথায় কথায় এতো কান্না কিকরে করে। আর কান্না করার আগেই চোখে পানি চলে আসে।
আস্ত একটা স্টুপিট।

“হাত দে
সায়ান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
তুলতুল হাত দেয় না। কেনো দেবে? সব সময় লোকটা ধমকাবে, যা খুশি বলবে, এমন কি মারবেও। তাও কেনো তুলতুল লোকটার কথা শুনবে?
একদম লোকটার দয়া নেবে না তুলতুল।
“আমাকে না রাগিয়ে শান্তি পাস না তুই?
কর্কশ গলায় বলে সায়ান।
” লাগবে না। এমনিতেই সেরে যাবে। শুধু আপনি টাকা খরচ করে ঔষধ গুলো আনালেন। আমি এমনিতেই কৃতঙ্গ আপনার কাছে। বারো দিন যাবত আপনার বাসায় থাকতে দিয়েছেন খেতে দিয়েছেন। এর ঝণই আমি শোধ করতে পারবো কি না জানা নেই। তারওপর আবার ঔষধ
বাকি কথা শেষ করার আগেই ঠাস করে তুলতুলের গালে চর পড়ে। চরটা খুব জোরেই লেগেছে। মাথাটা ঘুরে ওঠে তুলতুলের। গালটা ব্যাথা করে ওঠে। গালে হাত দিয়ে সায়ান দিকে এক পলক তাকায় তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের দৃষ্টিতে পাত্তা না দিয়ে তুলতুলের পুরে যাওয়া হাতটা টেনে নিয়ে তুলা দিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে।

অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে থাকে তুলতুল।
অনেক হয়ে গেছে আর থাকবে না এখানে তুলতুল। কিছুতেই থাকবে না।

(গ্রামের মেয়ে তুলতুল। স্টুডেন্ট খুব ভালো। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে বাবার কাছে বায়না ধরে ছিলো ঢাকার কোনো ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার। একমাত্র মেয়ে। খুব আদরের। মেয়ের আবদার ফেলতে পারে নি তৌফিক রহমান। হাইস্কুলের টিচার তিনি। তবে তুলতুলকে একটা শর্ত দেওয়া হয় ও হোস্টেলে থাকতে পারবে না। ফুপির বাড়িতে থাকতে হবে। তুলতুল এক কথায় রাজি হয়ে যায়। কারণ এখানে সুমু আছে তুলতুলের ক্লাসমেট। তাছাড়া ফুপাফুফি খুব আদর করে তুলতুলকে)

“এখন নিশ্চয় ভেবে নিয়েছিস এখানে আর থাকবি না। এখনই গিয়ে বাবাকে কল করে কান্নাকাটি করে বলবি বাবা আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।
তাই তো?
একদম এই ভুলটা করতে যাবি না। মেরে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবো তোকে।
তুলতুলের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বলে সায়ান।

” ভাইয়া মা চলে এসেছে। তোদের খেতে ডাকছে।
সায়ানের ছোট ভাই সান বলে।
সায়ান এইবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। আর সায়ানের লেখাপড়া শেষ। বাংলদেশ ব্যাংকে উচ্চপদে চাকরি করে।

“তুই যা আমরা আসছি।
সায়ান সানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” তুলা তোর হাতে কি হয়েছে?
সান এগিয়ে এসে বলে। আর এভাবে কাঁদছিস কেনো?
তুলতুল চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। এতোখনে কথা বলার সাহস পেয়েছে। সান আর ফুপা ফুপিকে দেখলে তুলতুলের সাহস বেরে যায়। সানের সাথে খুব ভাব তুলতুলের)
“চলো আমার সাথে ফুপির কাছে তারপর বলছি।
নাক টেনে সাওনের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে সানের হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে শুরু করে তুলতুল। দরজা ওবদি গিয়ে তুলতুল দাঁড়িয়ে যায়।

” এই যে সাদা বিলাই। আপনিও আসেন। আমি কখনোই বাবাকে কল করে বলবো না আমাকে নিয়ে যাও। কেনোনা যাওয়ার জন্য আমি আসি নি। আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। এবার আপনাকে আমি মার খাওয়াবো।
বলেই সায়ানকে ভেংচি কাটে তুলতুল।
সায়ান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
“আবার তোমাকে হাতের নাগালে পাই তারপর ভেংচি দেওয়ার আর সাদা বিলাই বলার শোধ তুলবো। চিনিস না তো আমাকে।

” দেখ বোইন আমি আর কখনোই তোরে তুলা কমু না। প্লিজ মাকে কিছু বলিস না।
সান অসহায় ফেস করে বলে।
তুলতুল মিটমিট করে হাসে।

সাহেদা বেগম খাবার সার্ভ করছে। সুমু আর সোহেল মিয়া গল্প জুড়ে দিয়েছে। কাল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাবে তাই নিয়ে। মমতা বেগম (সায়ানের দাদিমা তজবি গুনছে)
তুলতুল সানের হাত ধরে ওখানে গিয়ে দাঁড়ায়। সাহেদা বেগম বুঝে যায়। কেনোনা এই বারো দিনে তুলতুল হাজার বার নালিশ করেছে তুলতুলকে তুলা ডাকার অপরাধে। আজকেও তাই এটা উনি বুঝে যায়।

“সান ওকে তুলার মতো দেখতে বলে তুই ওকে তুলা ডাকবি ইটস নট ফেয়ার বাবু।
সাহেদা বেগমের কথায় সবাই মিটমিট করে হাসে। তুলতুল গাল ফুলাই। সানও হাসতে থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় হাত পোরার কথা।

“মা দেখো না তুলতুলের হাত পুরে গেছে।
সান মন খারাপ করে বলে। সাথে সাথে সাহেদা বেগম সোহেল মিয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কিভাবে হয়েছে? ঔষধ দিয়েছে কি না? মমতা বেগম খুব কম কথা বলে। প্রয়োজন ছাড়া কখনোই তিনি মুখ খুলে না।

” তোমার বড় ছেলের জন্য হয়েছে সব। ও এই হাত নিয়ে লঙ্কা বেটেছে তোমার ছেলের জন্য।
সুমু চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
সাহেদা বেগম ভীষণ রেগে যায়।
ততখনে সায়ান চলে এসেছে।
“শুধু কি তাই আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। এই দেখো গাল ফুলে গেছে।
গাল দেখিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে তুলতুল। সাহেদা বেগম তুলতুলের গালে হাত বুলিয়ে দেয়।

সায়ান চোখের ইশারায় তুলতুলকে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু তাতে তুলতুল থামবে না। কারণ সময় এসেছে ওনাকে সায়েস্তা করার।

সাহেদা বেগম সায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” ওকে নিয়ে খুব পবলেম তোর?
চোখ মুখ শক্ত করে বলেন উনি।
মাকে ভীষণ ভয় পায় সায়ান।
“আমি তো তা বলি নি।
মাথা নিচু করে বলে সায়ান।
“এর পর যদি কোনো ভাবে আমি জানতে পারি তুলতুলকে নিয়ে তোমার ভীষণ সমস্যা হচ্ছে তাহলে সারাজীবনের মতো তোর গলায় ঝুলিয়ে দেবো ওকে। বলে দিলাম।
ফুপির কথা শুনে তুলতুলের চোখ দুটো বড়বড় হোয়ে যায়। ঠোঁটের মাঝখানে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। বলে কি?

” ওকে যখন মেরেছে তার শাস্তি তোকে পেতে হবে। হাঁটু মুরে কান ধরে বসে থাকবি। আর আমাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকবি।

বলে আবার নিজের কাজে যায় উনি। তুলতুল বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। সুমুও খুব খুশি। বেশ হয়েছে। সান তো হেসেই যাচ্ছে।

“তুই দাঁত কেলাস না। তুই ওকে তুলা বলেছিস তাই তুই যতখন খাবার সার্ভ করা শেষ না হবে ততখন কান ধরে হাঁটু মেরে বসে থাকবি।
এবার তুলতুল খিলখিল করে হাসে। সান অসহায় ফেস করে মায়ের দিকে তাকায়। এটা মা কি শক্র।

” এই হলো আমার বউ। সব সময় ঠিক বিচার করবে।
সোহেল মিয়া তরকারির মধ্যে থেকে এক টুকরো আলু মুখে পুরে বলে।

“তুমি আর এই তরকারিটা খেতে পারবে না। কতবার বলেছি হাত না ধুয়ে খেতে বসবা না। এটা তোমার শাস্তি।
সোহেল মিয়া অসহায় ফেস করে তাকায়। তাতে তার মিসেসের মন গলে না।
তুলতুল আর সুমু হেসেই যাচ্ছে।

তুলতুল চট করে রুমে গিয়ে নিজের ফোনটা নিয়ে এসে ভিডিও করে নেয় সায়ান আর সানের কান ধরার।

” এক মাঝে শীত যায় না তুলা থুক্কু তুলতুল। একবার তোমাকে হাতের নাগালে পাই যেই ঠোঁট মেলে হেসেছো ওই ঠোঁট কেটে গলার মালা বানাবো।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

চলবে❤️❤️❤️
গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here