গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে – পর্ব ২৫

0
500

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৫

“সাইকোর বাচ্চা! সর বলছি। ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করছে। অভি, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

অভিরূপকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল নোমান। তবে কে শোনে কার কথা। অভিরূপের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটেই গেছে। আবারও নাদিম সাহেব কল করছেন। অভিরূপ জোর গলায় বলল,
“তুই যদি না চাস তোর বউয়ের আগে আমিই সব দফারফা করে ফেলি তাহলে আমাকে হেল্প কর। হেল্প মি অ্যান্ড টেক ইউর ইজ্জত ফর ইউর ফিউচার বউ।”

নোমান ক্লান্ত প্রায়। হাত-পা ছেড়ে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকে। অভিরূপ তার এমন আচরণ দেখে টাওয়াল আরেকটু টেনে বলে,
“কী হলো? কী চাচ্ছিস?”

নোমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত উঠিয়ে বলে,
“দে। তোর ফোনটা দে আমাকে।”

বিশ্ব জয়ের হাসি ফোটে অভিরূপের মুখে। কী ঝলক তার হাসির! ফোনটা সেভাবেই হাত থেকে নোমানের হাতে তুলে দেয়। নোমান ফোনটা কোনোরকমে রিসিভ করতে যাবে সেই সময় এক চিৎকারে দুজনেই ঘাবড়ে দরজার কাছে তাকায়। দরজায় ট্রে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। সম্ভবত হোটেলের সার্ভেন্ট হবে। মেয়েটির রসগোল্লার মতো চোখ বলেই দিচ্ছে অভিরূপ আর নোমানের এই ভঙ্গি সে অন্য কিছুই ভেবে নিয়েছে। নোমান আর অভিরূপ দুজন দুজনের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকায়। তখনি মেয়েটির হাতে থেকে হুড়মুড় করে ট্রে সহ কাঁচের চায়ের কাপ ফ্লোরে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে যায়। বিকট শব্দ হয়। দ্রুত মাথা নিচু করে ফেলে মেয়েটি। কাঁপা এবং উত্তেজিত সুরে বলে,
“আই এম সরি, আই এম সরি। আমি বোধহয় ভুল সময় এসে পড়েছি। ক্ষমা করবেন।”

মেয়েটিকে আর পায় কে? ধড়ফড় করে বেরিয়ে যায় মেয়েটি। নোমান এবার এক পা আর দুটো হাত দিয়ে অভিরূপকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলে,
“হলো তো? মেয়েটা কি না কি ভেবে নিয়েছে গড নোজ! ছি! অভি, তোর জন্য কোনো আজব খবরে ফেঁসে যাই তাহলে কিন্তু সব মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থুথু মারবে, সাথে তোকেও!”

অভিরূপ তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ায়। মেয়েটাকে আটকাতে যায়। বাহিরে বেরিয়েই দেখে মেয়েটা করিডোরের শেষ মাথায়। একটু জোরেই অভিরূপ ডেকে ওঠে,
“ওহ হ্যালো!”

অভিরূপের ডাকে হাঁটা থামে মেয়েটার। পেছন ফিরে তাকিয়ে অভিরূপকে দেখে আরো জোরে হাঁটা ধরতেই অভিরূপ এবার আরো জোর সুরে ডেকে ওঠে,
“আই সেইড স্টপ!”

অভিরূপ চৌধুরী! তার জনপ্রিয়তা যে কত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই হোটেলে তার কথা অগ্রাহ্য করা মানে চরম সাজাও পেতে হতে পারে। তাই হয়ত মেয়েটা থামে। কাঁপতে কাঁপতে অভিরূপের দিকে ফিরে। অভিরূপ দূর থেকেই বলে,
“আপনি কিছু দেখেন নি ওকে? উই আর বেস্টফ্রেন্ড! জাস্ট কিডিং! সো প্লিজ আজগুবি কিছু ভেবে নিজের মাথা খারাপ করবেন না।”

মেয়েটা জোরে জোরে মাথা নাড়াতেই অভিরূপ আবারও বলে,
“আর যেসব ফেলে দিয়েছেন তা পরিষ্কার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। ডোন্ট প্যানিক! আই উইল পে। যা ভেঙেছে তার জন্য চিন্তা করবেন না।”

মেয়েটি এবারও মুখে কোনো কথা না বলে শুধু মাথা ঝাঁকিয়েই তড়িঘড়ি করে চলে গেল। অভিরূপ হাঁপ ছেড়ে রুমে ফিরে আসে। নোমানের দিকে চোখ পড়তেই খেয়াল করে নোমান টাওজার পড়ে নিয়েছে। অভিরূপকে দেখে বাঁকা হাসি দিল নোমান। তার হাসির অর্থ, অভিরূপ আর তার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতে পারবে না। কিন্তু অভিরূপ কি কম যায়? দুজনেই যেন আবারও ধস্তাধস্তি লেগে যায়। যে জিতবে সে ঠিক করবে নিজের দেশে ফিরবে কি না!

উপুড় হয়ে পেট ধরে মুখটা বালিশের সঙ্গে চেপে শুয়ে আছে কোহিনূর। নড়াচড়া করাও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পেটে পাথর রেখে দিয়েছে কেউ। মাঝে মাঝে হালকা করে ‘উহ’ করে শব্দ করে উঠছে সে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে একবার মাথা এদিক আর একবার ওদিক করছে। সামনেই ঠোঁট চেপে হেঁসে দাঁড়িয়ে আছে রাগিনী। একটু একটু করে পেটে সব খাবার ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে সে। এবার কোহিনূরের অবস্থা দেখে হাসিটা এসে যাচ্ছে বার বার। গত আধঘন্টা ধরে সে এভাবেই শুয়ে রয়েছে। আর মাঝে মাঝে পেট ধরে মোচড়াচ্ছে। রাগিনী মিটমিটিয়ে হেঁসে জিজ্ঞেস করল,
“আর ইউ ওকে?”

কোহিনূর ব্যথিত সুরে বলে,
“মানুষ কাউকে বি’ষ দিয়ে মা’রে। কাউকে রি’ভলবার দিয়ে মা’রে আবার কাউকে ছু’রি দিয়েও মারে। কিন্তু ভালো ভালো খাবার খাইয়ে কী করে কাউকে মা’রতে হয় সেটা তোমার থেকে শেখা উচিত।”

রাগিনী এবার হাসতে গিয়েও থামে। এখন হাসা মোটেও ঠিক হবে না। ঠোঁট কামড়ে হাসি নিবারণ করার চেষ্টা করে। কোহিনূরের চোখে এই দৃশ্য আঁটকায়। সে আগ বাড়িয়ে বলে,
“হাসো হাসো। আরো হাসো। এবার হাসির মাধ্যমেও খু’ন করে দাও। এটাই বাকি রেখেছিলে।”

এবার আশ্চর্য হয়ে হাসি থামায় রাগিনী। উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে,
“হাসিতে আবার কে খু’ন হয়? এবার বলবেন না আমার হাসিতে বি’ষ মিশিয়ে রেখেছি।”

কোহিনূর আধশোয়া হয়ে ধীরে মাথা ঝাঁকায়। উত্তরে বলে,
“এটার বি’ষের মারাত্মক কিছু। এটা হতে পারে আসক্তি। যেখানে আমি বাঁধা পড়েছি।”

“আপনার মনে কী এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অনুভূতির আগমন ঘটেছে আমার জন্য?”

বাঁধাবিহীন বলে ফেলা কথাগুলো এবার কোহিনূরকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় যেন। ঢক গিলে চোখ বন্ধ করে আবারও পেট চেপে ধরে ‘উহু’ বলে ওঠে। রাগিনীর বুঝতে সময় লাগে না যে এই ব্যক্তি হতে পারে তার কথার কিছুই বোঝেনি আবার হতে পারে বুঝতে চেয়েও সেটা এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সেও আর না ঘাঁটিয়ে নিজেকে সংবরণ করে বলে,
“আরো খাবেন না খাবার?”

“প্রশ্নই ওঠে না। পেট ব্যথা করা শুরু করে দিয়েছে। আমি এবার থেকে পারলে না খেয়ে থাকব তাও তোমার মতো বিপদজনক নারীকে খাবার আনতে বলব না।”

“আচ্ছা শুনুন। চলুন একটু সিটি হসপিটাল থেকে ঘুরে আসি। এই বাহানায় আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার জন্য চেক আপও করিয়ে নেওয়া যাবে!”

“তোমার সাথে গিয়ে আরো রিস্ক বাড়াতে পারব না সরি। বলা যায় না আবার গাড়ির ব্রেকফেল করিয়ে আমাকে মা’রার পরিকল্পনা করতে পারো!”

রাগিনী চোখমুখ জড়িয়ে বিরক্তির সুরে বলে,
“ধুর। আমি সিরিয়াস। আমাকে ওই বাচ্চা ছেলেকে দেখতে যেতে হবে। আমি ওকে কাল রেসকিউ করেছিলাম। আজকে দেখতে না গেলেই নয়। আপনিও যাবেন আমার সঙ্গে।”

কোহিনূর পেট ধরেই উঠে বসে। বাধ্য ছেলের মতো বলে,
“আপনি যখন বলেছেন তখন কোহিনূর যেতে বাধ্য। এখন সেটা হসপিটাল হক বা এভারেস্ট! রাগিনী তাজরীনের আদেশ শিরোধার্য!”

কোহিনূর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে যখন হাতে একটা টিশার্ট নিতে যায় তখন তার হাতের ব্যান্ডেজ এবার নজর এড়ায় না রাগিনীর। হুট করেই এমন ব্যান্ডেজে কিছুটা অস্থির ভঙ্গিতেই ছুটে এসে কোহিনূরের ব্যান্ডেজ করা স্থান আলতো স্পর্শ করে সে। অস্থিরতার সাথে বলে,
“কী করে এমন হলো?”

“তেমন কিছু না। হুট করেই কাঁচ লেগে কে’টে গেছে।”

রাগিনীর মুখটা নিমিষে বিষিয়ে যাওয়া লক্ষ্য করে কোহিনূর। মেয়েটা এতো নরম মনের কেন? সামান্য আ’ঘাতের কারণে বুঝি এতো ব্যাকুল হতে হয়? রাগিনী বলে,
“নিজের একটুও খেয়াল রাখেন না তাই না?”

ব্যাকুলতায় ভরা সেই কন্ঠ। মেয়েটা বুঝি জানে না তার এমন কন্ঠ কোহিনূরের অন্তর কাঁপিয়ে তোলে? কোহিনূর একটু মাথা ঝুকিয়ে ধীর গলায় বলে,
“খেয়াল রাখার জন্য যখন এতো সুন্দর একটা মানবী থাকে তখন আর নিজের খেয়াল রাখতে ইচ্ছে করে না।”

মুখটা ভেঙ্গিয়ে কোহিনূরের বাহুতে হালকা ধাক্কা মারে রাগিনী। বিষণ্ণ হয়ে বলে,
“সবসময় মজা করেন আপনি।”

“আর করব না। তাহলে কি আমরা যেতে পারি?”

রাগিনী কোহিনূরের দিকে একটু তাকায়। তারপর পায়ের গোড়ালি উঁচু করে একটু উঁচু হয়ে কোহিনূরের চুলে হাত দিয়ে চুলগুলো একপাশ করে দিয়ে বলে,
“এবার চলুন।”

অন্ধকার ঘর। ঠিক ঘর নয়। একটা গুমোট জায়গা। অদ্ভুত একটা গন্ধ। জায়গাটির চারিপাশে বস্তা সাজিয়ে রাখা। আলো বলতে শুধুমাত্র উপরে থাকা এক ফাঁকা জায়গা থেকে আলো প্রবেশ করছে। যা দিয়ে একটু ঝাপ্সা দেখাচ্ছে সবটা। মাঝখানে রাখা দুটো কাঠের চেয়ার। আর পাশে একটা টেবিল। দুটো চেয়ারই দখল করে বসে আছে এক কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তি। প্রসারিত তার দেহ। ঘাড় বাঁকিয়ে রাখা। পা দুটো অন্য চেয়ারে রেখে দিয়ে এক হাতে গ্লাস আর অন্যহাতে সিগারেট ধরিয়ে বসে আছে সে। চোখ দুটো বন্ধ। ঘাড় কাঁত করেই বসে থাকা সেই অজানা মানব চোখ বুঁজেই একবার সিগারেটে মুখ লাগাচ্ছে আর একবার হুইস্কি ভরা গ্লাসে। দরজায় একটু শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল নেত্রপল্লব। কড়া এবং ধারালো দৃষ্টি চলে গেল দরজার কাছে। ধীর পায়ে প্রবেশ ঘটল এক নারীর। স্বভাবতই মুখে মাস্ক আর মাথাটা স্কার্ফ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা। চোখে আজ সানগ্লাসও রয়েছে। সেখানে প্রবেশ করার সাথে সাথে সানগ্লাস খুলে হাত নিল সে। মাস্ক খুলল। দৃশ্যমান হলো তার ফ্যাকাশে, চুপসে যাওয়া মুখ। তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো সেই ধারালো দৃষ্টির দিকে চাইতেই। নিজের চোখ নামিয়ে নিল সে। না চাইতেও সেই মানবের সামনে এসে দাঁড়াতে হলো। লোকটির নিরবতা দেখে সে নিজেই বলে উঠল,
“আ…আসলে আমরা বু…বুঝতে পারিনি আমাদের প্ল্যানিং এভাবে ফেল করবে। স…সরি ডার্ক…”

অসম্পূর্ণ থেকে যায় মানবীর কথা। ডার্ক ম্যাক্স তার পা রাখা চেয়ারটা পা দিয়ে ঠেলে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,
“বস, লেডি বস।”

দাঁড়িয়েই রইল লেডি বস নামক নারী। আসলে তার বসতেও ভয় করছে। সে জানে এখানে ভালো কোনো কিছুর জন্যই ডাকা হয়নি। তার কোনোরকম হেলদোল না দেখে ডার্ক এবার কিছুটা চিৎকার করেই বলল,
“বস বলছি।”

এবার চমকে উঠল সে। চেয়ার টেনে নিয়ে আস্তে করে বসল। তার বসা দেখে সোজা হলো ডার্ক ম্যাক্স। সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধরে আবারও টান দিতেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হলো আশপাশ। মেয়েটি মাথা নত করে বসে রইল। এবার তাকে শান্তভাবে প্রশ্ন করা হলো,
“এবার বল। কেন প্ল্যানিং ফেল হলো?”

“আমাদের আ’ক্রমণের আশঙ্কা ধরতে পেরে হয়ত ইন্সপেক্টর রায়ান আগে থেকেই আমাদের বোকা বানানো শুরু করে। অভিরূপের যেই গাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল সেটা হাইড রাখা হয়। অন্য একটা গাড়িকে এতোটাই প্রায়োরিটি দেওয়া হয় আর বলা হয় সেই গাড়িতেই অভিরূপ যাবে। তাই আমি কথা অনুযায়ী সেই গাড়ির নিচে বো’ম ভর্তি ব্যাগ রেখে দিই। কিন্তু লাভ হয় না। অভিরূপের একটুও ক্ষতি হলো না। আমরা হা’মলা করি। অভিরূপের গাড়িটাকে আঁটকায়। ভেবেছিলাম, পরিস্থিতি আমাদের হাতেই আসবে। কারণ পসিবিলিটি আমাদেরই ছিল। কিন্তু হুট করে আরেক টিম এলো। পুলিশ টিম শক্ত হলো। আমরা পেরে উঠলাম না। আর আমাদের টিমের অনেকজনের মৃ’ত্যু হলো। কেউ কেউ এখন কাস্টারিতে।”

উঠে দাঁড়ালো ডার্ক ম্যাক্স। তা দেখে ধড়ফড়িয়ে মেয়েটিও উঠতে লাগল তবে তার কাঁধে হাত রেখে জোর করে বসিয়ে রাখা হলো। চমকে উঠল সে। সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল। ডার্ক তার চেয়ারের চারিপাশে হাঁটতে লাগল। সবশেষে তার সামনে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে তার চিবুক চেপে ধরে ডার্ক বলতে লাগল,
“এজন্যই তোকে আমি একটা আলাদা কাজ দিয়েছিলাম! ওই রায়ানকে শেষ না করতে পারিস। অন্তত একটু হসপিটালে কয়েকদিনের জন্য পাঠিয়ে দিতে পারতিস। সেটাও তুই পারিস নি।”

তার চিবুক জোরে চেপে ধরা হয়েছে। চোখমুখ খিঁচে রেখেছে সে। কথাটির উত্তর দিতে সে উদ্যত হচ্ছে তবে তার আগেই গলায় চলে গেল ডার্কের বলিষ্ঠ হাত। চেপে ধরা হলো গলা। শ্বাসরোধ হতে লাগল স্কার্ফ পরিহিতা মেয়েটির। ছটফটিয়ে উঠল। হাত-পা চারিদিকে ছুটতে শুরু করল। ছটফটানিতে মাথা থেকে পড়ে গেল স্কার্ফ। বেরিয়ে এলো তার ছোট সিল্কি চুল। খুব একটা বড় নয় তার চুল। স্ট্রেইট কাঁধ অবধি। একটা সময় ছিল যখন ডার্ক তার চুলও কেটে দিয়েছিল। তবে আজ সে বাঁচার আশা দেখতে পাচ্ছে না। চিৎকার করার চেষ্টা করছে তবে ব্যর্থ হচ্ছে। যখন তার সবটা অন্ধকার তখন তার গলা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ডার্ক। একটা হাত নিজের প্যান্টের পকেটে গুঁজে পিছন ফিরে হাতে কাঁচের গ্লাসটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে টেবিলে বাড়ি দিয়ে ভাঙতেই গ্লাসটা টুকরো হয়। তার অর্ধেকটা ভেঙে যায় আর অর্ধেকটা থেকে যায় ডার্কের হাতে। বিকট শব্দে চমকে গিয়েও মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করতে পারে না লেডি বস। চোখ বুঁজে বড় বড় শ্বাস নিতেই সে ব্যতিব্যস্ত। সেই সুযোগে গ্লাসের ভাঙা এবং ধারালো অংশ হুট করেই চেপে ধরা হয় লেডি বসের হাতে। প্রাণ ফিরে পেতেই যেন আবারও প্রাণ হারা’তে বসেছে সে। নিজের মুখ চেপে ধরেছে সে অন্যহাত দিয়ে। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পড়ে যাচ্ছে অশ্রু। চিৎকার করলে আরো ভয়াবহ কিছু দাঁড় করাবে ডার্ক তার সামনে। চলছে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা। কিন্তু ডার্ক ম্যাক্স হয়ে উঠেছে হিংস্র। চোখে স্পষ্ট নিষ্ঠুরতার ছাপ। পাগল হয়ে উঠেছে একপ্রকার।

মিনিট দুয়েক এভাবে চলে। লেডি বসের হাত থেকে গলগল করে র’ক্ত পড়তে থাকে। ডার্ক তাকে ছেড়ে দিয়ে গ্লাসের বাকি অংশও ছুঁড়ে মে’রে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিজের হাতটা দেখে নিজেই আঁতকে ওঠে লেডি বস। তার চাপা আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই। সে স্বেচ্ছায় এই দলে যুক্ত হয়েছে। তার মৃ’ত্যুও হবে এই ভয়ানক মানুষটির হাতেই। হাত দিয়ে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মুখে দেখা যায় লাল আভা। ব্যথিত দৃষ্টি! ডার্ক তার দিকে ফিরে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে,
“অভিরূপের মৃ’ত্যু না দেখে আমার শান্তি নেই। তোরও রেহাই নেই। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ। অভিরূপ চৌধুরীর মৃ’তদেহ যাবে এই দেশ থেকে। ভয় দেখতে চাই আমি। মানুষের চোখে ভয় আমার খুবই প্রিয়। কখন কীভাবে অভিরূপকে মারবি আমি জানি না। শুধু চাই র’ক্ত আর ভয়!”

গাড়ি থেকে নামল রাগিনী আর কোহিনূর। চোখমুখটা দেখার মতো হয়েছে কোহিনূরের। এতো খাবার পেটে রয়েছে যেন নড়তেও কষ্ট হচ্ছে। হাঁটতে গেলেই আগে বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। তা দেখে ক্ষণে ক্ষণে হাসছে রাগিনী। কোহিনূর আঁড়চোখে তাকাতেই হাসি আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। এভাবেই দুজন হসপিটালের ভেতরে চলে আসে। রিসেপশন পার হয়ে লিফটের কাছে আসতেই তাদের পাশেই তড়িঘড়ি করে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে। হাইটে রাগিনীর চেয়েও একটু ছোট। কোঁকড়া চুলগুলো সুন্দর করে ঘাড়ে পড়ে আছে। পরনে কিছুটা আধুনিক পোশাক। তাকে খেয়াল করে না রাগিনী এবং কোহিনূর। লিফট খুলতেই যখন দুজনেই প্রবেশ করতে যায় তখনি তাড়াহুড়ো করে তাদের ঠেলে মেয়েটিও প্রবেশ করতে চাইলেই রাগিনীর একটু ধাক্কা লাগায় কোহিনূর ফট করেই রাগিনীর হাতটা ধরে নেয় নিজের মুঠোয়। এবার বিরক্ত হয়ে তাকায় কোহিনূর। মেয়েটির দৃষ্টিও যখন কোহিনূরের দিকে পড়ে তখন যেন দুজনেই থ হয়ে যায়। মেয়েটির মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায়। কোহিনূরের কপাল কুঁচকে যায়। আশ্চর্য হয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটি বিস্ময় নিয়ে এক চিৎকার করে বলে ওঠে,
“বিগ ব্রাদার!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here