#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৬
হাতে খবরের কাগজ নিয়ে ঘরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকল কবীর। সময়টা দিন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তবে ঘরটাতে রীতিমতো অন্ধকার ছাড়া কোনো আলো নেই। দিনের কোনোরকম আলো পৌঁছায় না সেই ঘরে। জানালা থাকা সত্ত্বেও তা সবসময় বন্ধ রাখা হয়। অগোছালো ঘর। মাকড়সা জাল বুনেছে। শুধু টিমটিম করে কোনো রকমে লাল রঙের একটা ল্যাম্পশিট জ্বলে। আর কখনো কখনো মাথার উপর হালকা লাইট। সেখানেই অবস্থান করে কবীরের পুরো টিমের লেডি বস। কবীরের দরজা দিয়ে ভেতরে আসার শব্দ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় সেই নারীটি। ডাগরডাগর দুটো আঁখি ভয়ানক রূপ ধারণ করে। চোখ দুটো ফুলে রয়েছে তার। সোফায় কোনোরকমে কাঁত হয়ে ছিল সে। চোখটা লেগে এসেছিল। কবীরের এমন প্রবেশে দাঁত কটমট করে উঠে বসে দ্রুত তার সামনে থাকা নেশা রেখে দেওয়া গ্লাসটা ধরে কবীরের দিকে ছুঁড়ে মারে সে। মূহুর্তেই তরল হুইস্কি কবীরের গা ভিজিয়ে দেয়। সৃষ্টি হয় এক বিশ্রী গন্ধের। নেশাময় গন্ধ। কবীর কাঁচুমাচু হয়ে তার বসের দিকে তাকাতেই নারী কন্ঠে হিংস্রভাবে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“ব্লাডি বিচ! কি এমন তাড়াহুড়ো লাগছে তোর? দরজায় হালকা টোকা দিয়ে আসতে পারিস না? ভুলে যাস নাকি আমি তোর বস?”
“মাফ করে দেন। আমি আসলে উত্তেজনা ধরে রাখতে পারিনি। তাই…”
কবীরের কথার মাঝখানে বাগড়া দিয়ে তার বস সন্দিহান হয়ে বলে,
“এতো কীসের উত্তেজনা জাগছে তোর?”
কবীর খবরের কাগজ এগিয়ে দেয়। যদিও তা অনেকটা ভিজে গিয়েছে। তবুও হাত দিয়ে ধরে বিরক্তি নিয়ে খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজের দিকে তাকাতেই বিরক্তিকর দৃষ্টি উধাও হয় সেই রাগান্বিত নারীর। ঠোঁটের কোণে হাসির ফোয়ারা দেখা যায়। খবরের কাগজটা আবার কবীরের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে ওঠে,
“খুশির খবর। আমাদের কার্যক্রমের কথা অলরেডি খবরের কাগজ ছাপতে শুরু করে দিয়েছে। এটা তো সবে শুরু। এখন এমন একটা দিনও বাদ যাবে না যেখানে আমাদের কথা লিখা থাকবে না।”
কবীরও তাল মিলিয়ে হাসে। তার বসকে এবার প্রশ্ন করে,
“বস, আমাদের নেক্সট টার্গেট কি?”
“এবার খুব একটা ঝামেলা করব না। ওইযে সবথেকে বড় যেসব ফ্যাক্টরি আছে তার মধ্যে দুটোকে টার্গেট করব। সেই দুটো আমি ভেবেও রেখেছি। আর এই কাজটা আমি নিজহাতে করব। যা বাকিদের গিয়ে বল জিনিসপত্র রেডি রাখতে। আজ সন্ধ্যায় বের হবো আমি।”
কবীর মাথা ঝাঁকায়। তারপর যেখান থেকে যেতে ঘুরে দাঁড়ায়। পিছু ডাকে সেই ভয়া’নক মানবী। শান্ত তার কন্ঠস্বর। কাঁচের বাটির নিচ থেকে পাঁচশ টাকা বের করে কবীরের দিকে উড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।
“সন্ধ্যে না। আমি এখনি বের হচ্ছি। এই নে। বস খুশি হয়ে তোকে দিল। এতো পারফেক্ট কাজ করেছিস কিছু পাওনা থাকে তোর। আর শোন, কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দে। বাহিরের কেউ যেন তোকে খুঁজে না পায়। মাইন্ড ইট।”
বলেই হাতে একটা পার্স নিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সেই মানবী। কি ভয়ানক তার রূপ! সেই সাথে কথাবার্তার ধরণ মহা ভয়ংকরী!
বিকেলের আকাশ। রঙবেরঙের মেঘের ভেলা মুক্তভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে সীমাহীন আকাশে। নেই কোনো বাঁধা। মাঝে মাঝে একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। ব্যস্ত শহরের এক প্রান্ত থেকে ছুটে আবারও সেই হসপিটালে ছুটে এলো রাগিনী। এলোমেলো লম্বা চুলগুলো কোনোরকমে বেঁধে রাখা। তাও অর্ধেক খুলে গিয়েছে। যেন খুব তাড়াহুড়োয় বেরিয়েছে। গলার ওড়নাটা খুব ভালোভাবে জড়িয়ে দ্রুত মেইন গেট দিয়ে ঢুকে পড়তেই বড় গার্ডেনে অনেক পেশেন্টকে চোখে পড়ল তার। কেউ বাচ্চাদের মতো খেলছে। কেউ একজন আরেকজনের সাথে নিজেদের মাথায় যা আসে তা গল্প করছে। বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করছে কেউ কেউ। রাগিনীর মনে হয় সে কোনো মেন্টাল হসপিটাল নয় একটা শিশুদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। সে তাদের কর্মকান্ড দেখে মুচকি হাসে আর ধীরে ধীরে এগোয়। আচমকা কারোর দৌড়ে আসায় আকস্মিকভাবে ধাক্কা লাগে রাগিনীর। একটুর জন্য নিজেকে সামলে নেয় সে। খেয়াল করে তার ওড়নায় আবারও টান পড়েছে। চোখ পিটপিট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা কোহিনূরকে। সে হতাশ হয়ে বলে,
“আপনি আবারও?”
কোহিনূর ওড়না থেকে মাথাটা বের করে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। রাগিনী ওড়নাটা টেনে নেয়। কোহিনূরের দিকে ফিরে তাকিয়ে একটা হাত কোমড়ে রেখে মুখচোখে রাগ এনে বলে,
“কীসের থেকে লুকাচ্ছেন এখন শুনি?”
কোহিনূর আগের মতোই ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“আমি এখানকার খাবার খাব না। কিন্তু ওরা আমাকে জোর করছে। আমার পেছন পেছন আসছে খাওয়াতে।”
বলেই হাতটা তুলে আঙ্গুল দিয়ে পেছন দিকে ইশারা করে কোহিনূর। রাগিনী সেই অনুযায়ী লক্ষ্য করে দেখে হসপিটালের কেয়ার টেকার পলাশ হাতে খাবার নিয়ে কিছুটা দূরত্বে কোহিনূরকে খুঁজছে। রাগিনী হেঁসে উঠে হাত একহাতে থাকা টিফিনবক্স দেখিয়ে বলে,
“এখানকার খাবার না হয় খাবেন না। কিন্তু রাগিনী তাজরীনের হাতের খাবার তো খাবেন নাকি?”
কোহিনূরের মুখেও রাজ্যের সকল খুশিরা যেন প্রবেশ করে। ভুবন ভোলানো হাসি দেয় সে আর খপ করে রাগিনীর অন্যহাত ধরে বলে,
“আমার খুব খিদে পেয়েছে। চলো চলো!”
রাগিনীর হাতটা ধরে টেনে হাঁটতে শুরু করে কোহিনূর। পিছু পিছু কোহিনূরের সোজা রাগিনীও হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে রাগিনী হঠাৎ বলে ওঠে,
“মেয়েদের ওড়না টেনে ধরতে নেই এভাবে। আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে আপনাকে…”
এবার রাগিনীকে ছেড়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় কোহিনূর। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে জানতে চায়,
“তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে কি?”
রাগিনী কথা খুঁজে না পেয়ে বলে উঠল,
“দিয়ে দিতো কয়েকটা চর থাপ্পর ফ্রীতে!”
“আমি তো তুমি ছাড়া তুমি ছাড়া অন্যেদের সাথে এমন কিছু করব না!”
বিস্মিত চোখে তাকায় রাগিনী কোহিনূরের হাসোজ্জল চেহারার দিকে। তখনি কোহিনূর শব্দ করে হেঁসে ওঠে। যেন রাগিনীর এমন অবাক হওয়ায় সে মজা পেয়েছে। রাগিনী দৃষ্টি নামিয়ে নেয় আর হাঁটার দিকে মন দেয়। মেইন বিল্ডিং এর পেছনে বড় গাছের নিচে থাকা একটা বেঞ্চে এসে ধপ করে বসে পড়ে কোহিনূর। তার পাশে কিছুটা দূরত্বে রাগিনী বসে হাতে থাকা টিফিনবক্স খুলে কোহিনূরের সামনে ধরে বলে,
“ধরুন আপনার জন্য। বিকেল হয়ে গেছে। চটপট খেয়ে নিন।”
কোহিনূর দ্রুত টিফিনবক্স ধরতে যাবে তৎক্ষনাৎ খাবার নিয়ে এসে হাজির হয় পলাশ। তাকে দেখামাত্র আবারও একহাতে রাগিনীর মেরুন রঙের ওড়না চেপে ধরে কোহিনূর। রাগিনী হকচকিয়ে ওঠে। পলাশ রূঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
“সেই তখন থেকে তোর পেছন দৌড়াইতেছি খাবার নিয়ে। গায়ে লাগে না? এখানে এসে ভদ্র লোকের মতো খেয়ে নেয়। স্যার বলছে সময় মতো খেতে দিতে। নয়ত মেন্টালি ফিট থাকতে পারবি না।”
কোহিনূর চরম বিরক্ত হয়। রাগিনীর পাশ ঘেঁষে বসে তার এক কাঁধে যেন শক্তি দিয়ে চেপে ধরে কর্কশ গলায় বলে,
“আমি এগুলা খাবার খাব না। যত্তসব বাজে খাবার তোমরা খাও। আমি রাগের রানীর হাতের খাবার খাব।”
পলাশ আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় রাগিনীর ইশারায়। রাগিনী বলে ওঠে,
“আমি উনার জন্য খাবার এনেছি। আপনাকে খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনি বরং উনার জন্য পানি আর যেসব মেডিসিন লাগে সেসব নিয়ে আসুন।”
পলাশ আর কথা না বাড়িয়ে কোহিনূরের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরবির করতে করতে খাবার নিয়ে ফিরে যায়।
অন্যদিকে যেন ক্ষুদ্ধ হয়ে রাগিনীর কাঁধ চেপে ধরেছে কোহিনূর। যেন রাগিনীই পলাশ সেটা ভেবেই ইচ্ছে মতো শক্তি প্রয়োগ করছে কাঁধে। না জানি কখন মটমট করে কাঁধ ভেঙে পড়ে। রাগিনী কোহিনূরের হাতের উপর হাত রেখে দূরে সরে যেতে গিয়েও থেমে যায়। তার ওড়নায় টান পড়েছে। যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে বলে,
“পলাশ চলে গেছে। আপনি আমাকে ছেড়ে খেতে শুরু করুন। এভাবে কেউ কাউকে জড়িয়েও ধরে না কোহিনূর। আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে গেলে দায় কি আপনি নিবেন?”
“তো কিভাবে জড়িয়ে ধরে? শিখিয়ে দাও। পরের বার থেকে তোমাকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরব।”
খুব সহজেই কথাটা বলে দিল কোহিনূর। তবে কথাটা শুনে বিষম খেলো রাগিনী। গলা খাঁকারি দিয়ে দৃষ্টি নিচে নামিয়ে বলল,
“আপনাকে শিখতে হবে না। আপনি খেতে নিন। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
কোহিনূর কিছু না বলে খেতে শুরু করে। আর খেতে খেতে বলে ওঠে,
“প্রতিদিন আমার জন্য খাবার আনবে তুমি। নয়ত না খেয়ে বসে থাকব।”
রাগিনী কিছু না বলে হেঁসে ওঠে নিঃশব্দে। আসলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীরা কত সরল এবং সহজ হয়। তাদের কথার ধরনই সরল। তারা মনে যা আসে তাই বলে। যেমন একটু আগের জড়িয়ে ধরার ব্যাপারটা! ভাবতেই কান গরম হয়ে গেল রাগিনী। চুপচাপ একমনে কোহিনূরের খাওয়া দেখতে লাগল গালে হাত দিয়ে। তাকে সূক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। লোকটার মাঝে যেন অদ্ভুত কিছু লুকায়িত। চুলগুলো কেমন যেন বেশি এলোমেলো। সামনের চুলগুলো বেশিই বড়। হঠাৎ করে তার মনে হয় চুলগুলো কিছুটা স্টাইল নিয়েই কাটা। সামনের দিকটা বড় আর পেছনের দিকটা ছোট। চোখ দুটো বেশ গভীর। উপরের পাপড়িগুলো বেশ ঘন আর যেন সুন্দর করে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে পাপড়ি। বেশ লাগে তার। একারণেই তার চাহনি বুঝি এতোটা সুন্দর এবং মন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো হয়? খোঁচা দাড়িগুলো বড় হয়েছে কিছুটা। নাকের নিচে কিছুটা দূরত্বে চিকন ঠোঁটগুলোর রঙ গোলাপী বললে ভুল হবে। খানিকটা ধূসর মাখা রঙ এবং গোলাপী রঙ মেশানো। হঠাৎ করেই কোহিনূর খেতে খেতে রাগিনী মুখের কাছে খাবার ধরাতে ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় রাগিনীর। সোজা হয়ে বসে সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই কোহিনূর তাকে আরেকবার অবাক করে দিয়ে বলে ওঠে,
“বুঝতে পারছিলাম না তোমার এই সুগভীর নয়নের দৃষ্টি দ্বারা কোহিনূর রত্মকে খাচ্ছিলে নাকি খাবার খাচ্ছিলে। আমাকে তো আর সত্যিই খেতে পারবে না তাই খাবার এগিয়ে দিলাম।”
শূন্য অনুভূতি হয়ে যায় রাগিনীর মনের অভ্যন্তরে। দৃষ্টিটা নিমিষেই নামিয়ে নেয়। মাথা নুইয়ে যায়। ভাবতে থাকে, এই মূহুর্তে ছুটে পালিয়ে গেলে কি তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করা হবে? আর এই সময়েই কেন কোহিনূরকে আগের রূপে ফিরতে হবে? চোখটা লজ্জায় খিঁচে বন্ধ করে মাথা নুইয়ে ফেলে সে।
“কি হলো? আর ইউ অলরাইট?”
চোখমুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে আসে রাগিনীর। সে কোনোমতে মাথা নাড়ায়। চোখটা আগের মতোই মতোই বন্ধ রাখে। কোহিনূর খাবারটা মুখে নিয়ে ব্যস্ত সুরে বলে ওঠে,
“আমার একটা কথার ইফেক্ট তোমার এই অবস্থা করছে? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাগিনী নামের মতোই ধমকে উঠবে।”
এবার চোখটা খোলে রাগিনী। আধো চোখে কোহিনূরের দিকে তাকায়। লোকটা খেতে ব্যস্ত। কোহিনূর একটা রত্মের নাম হলেও তাকে ঝড়ের সাথে তুলনা করা যায়। সে যখন আগের মতো হয়ে ওঠে তখন রাগিনীর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। হয়তবা রাগিনীর মনের উপর দিয়েও ঝড় বয়ে গিয়েছে কখনো কখনো! সে কি তা টের পেয়েছে?
“হ্যালো স্যার!”
মেন্টাল হসপিটালের ঠিক বাহিরে থেকে ফোনে কথা বলছে এক লোক। তবে রয়েছে কিছুটা দূরত্বে। রাস্তার পাশে এক বড় গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে। অপর পাশ থেকে কথা শুনতে পেয়ে সে বলে ওঠে,
“ইয়েস স্যার আমি বাহিরেই আছি। মিস. রাগিনী তাজরীন বের হলেই তাকে ফলো করতে শুরু করব।”
সে আবারও থামে। অপর পাশ থেকে কথা শুনে উত্তর দেয়,
“ইয়েস স্যার। চোখের আড়াল হবে না সে।”
বলে ফোনটা কেটে দেয়। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সতর্ক হয় সেই কাঙ্ক্ষিত লোক। ফোনটা পকেটে ঢুকায়। সম্ভবত কোনো মেয়ে মানুষ আসছে। কারণ জুতার আওয়াজ তীব্র। পায়ে হাই হিল। তাই তাকে দেখার জন্য দৃষ্টি দিতেই একটা মাস্ক পড়া মেয়েকে দেখতে পায় সে। চুলে খোঁপা করা উঁচু করে। সামনের চুল ছোট করে স্টাইল করে কাটা। বেরিয়ে রয়েছে শুধু চোখ দুটো। লোকটির পাশ কাটিয়েই চলে যায় সেই মেয়েটি। দ্রুত লোকটি তার পকেট থেকে একটা ছবি বের করে। ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখে। অতঃপর ভড়কে যায় সে। এটাই তো সে। দ্রুত পিছু নেয় তার। বেশ তাড়াতাড়ি হাঁটা দেয় মেয়েটির পিছু পিছু।
দিনের আলো নিভে অন্ধকার হয়ে এসেছে। সন্ধ্যে হয়েছে। অর্ধ চাঁদকে আকাশের বুকে দেখা যাচ্ছে। খুব একটা দেখা যাচ্ছে না কিছু ভালো করে। তবুও মাঝে মাঝে স্ট্রিট লাইটের আলোয় হাঁটা যাচ্ছে। বেশ কিছুদূর হাঁটতে হাঁটতে থেমে যায় মেয়েটি। সে হয়ত কিছু আন্দাজ করেছে। পিছু ফিরে তাকাতেই একটা বাড়ির দেয়ালের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে সেই লোক। কিছুক্ষণ পর উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই কাঙ্ক্ষিত মেয়েটিকে না পেয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সে। আশেপাশে পাগলের মতো তাকায়। দ্রুত সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। দরদর করে ঘামতে থাকে তাকে না পেয়ে। চিন্তার চোটে বলে ওঠে,
“কোথায় গেল এই রাগিনী তাজরীন!”
অনেকটা দূর হেঁটেও যখন তাকে পায় না তখন এক সময় দাঁড়িয়ে পড়ে সে। একটা ফ্যাক্টরির সামনে এসে পড়েছে। অনেকটা হাঁটা হয়ে গিয়েছে। এদিকে কাজ ছাড়া তেমন কোনো লোক আসে না। ফ্যাক্টরিতে যেসব লোক কাজ করে তারা ভেতরেই রয়েছে। এবার হতাশ হয় লোকটি। ফিরতে হবে। স্যার হয়ত তাকে কথা শোনাবে। তবে কিছু করার নেই। এই ভাবনা নিয়ে যখন সে ফিরতে উদ্যত হবে তখনি কেউ তার উপর আক্রমণ করে। মাথায় শক্ত কিছুর আঘাতে গলগল করে র’ক্ত বেরিয়ে আসে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ে। টের পায় কোনো নারী অবয়ব। কেউ তার কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে রেখেছে। এক নারী এবং হিংস্র কন্ঠ ভেসে আসে কানে,
“আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া এতোটা সহজ হবে না।”
যন্ত্রণা সহ্য করে হাতিয়ে নিজের কাছে থাকা রিভলবার বের করতে যায় লোকটি। তবে লাভ হয় না। তার মাথায় ঠেকিয়ে রাখা রিভলবার তার কাজ করে দেয়। মাথার চামড়া ভেদ করে ঢুকে যায় গু’লি। নিস্তেজ হয়ে পড়ে পুরো শরীর। গলগল করে বেরিয়ে আসে লাল র’ক্ত। র’ক্ত দেখে আনন্দিত হয় সেই নারী। হাসিটা আগের মতোই ফুটে ওঠে।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। অনেকেই রহস্য ক্লিয়ার করতে বলছেন। আমি কি এখনো সব রহস্য ক্লিয়ার করে দিব? তাহলে কালকের মধ্যে গল্পের ইতি টানা হয়ে যাবে আমার। এক পর্বেই সব বলে দিলে হবে কি করে? ধৈর্য রাখুন। কোনো রহস্যই বাদ থাকবে না। সবই জানবেন।]